খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প | কষ্টের ভালোবাসার গল্প

হঠাৎ বিয়ে ভালোবাসার গল্প

হঠাৎ বিয়ে ভালোবাসার গল্প

 (গল্পটা একটু সময় নিয়ে পরুন আশা করি অনেক ভালো লাগবে)

আজ আমার আনস্মার্ট স্ত্রীর জন্য এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে যাচ্ছি। পাগলিটা গোলাপ খুব পছন্দ করে।


গ্রামে বন্ধুর বাসায় ঘুরতে গিয়ে তার সাথে আমার পরিচয়। এদিকে আমার মা ও চাচ্ছিলনা কোনো আনস্মার্ট মেয়ে তার ঘরের বউ হয়ে আসুক। এমন এক বড় ঘরের মেয়েকে তার পূত্র বধু বানাবে যাকে নিয়ে সে মাথা উচু করে বলতে পারবে এটা আমার পূত্রবধু।

মায়ের অনিচ্ছা থাকার সত্তেও তাকে বিয়ে করে নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিলাম। মেয়েটার নাম জোনাকি। 

বউয়ের সাথে শাশুরির আন্ডার্স্টেনিং টা ঠিক না থাকলে যা হয় আর কি। 


জোনাকিকে যখন বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসলাম, তখন মা হয়তো বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি। বিয়ের কয়েকদিন পরে কাজের মেয়েটাকেও কাজে আসতে মানা করে দিয়েছে মা। 

সেইদিন জোনাকির সামনেই মা আমাকে বললো, বাসায় আনকার্লচার বউ থাকলে কাজের মেয়ের প্রয়োজন কি? সেইদিন অনেক কষ্ট লেগেছিলো আমার। বুকের বাম পাশে যেনো একটা ভারি হাতুরির আঘাত করেছে মা আমাকে। কিন্তু জোনাকি বিষয়টা হেসে উরিয়ে দিলো।

জোনাকি সবসময় মা কে নিজের মায়ের মতো সেবা করলেও, মা সবসময় জোনাকির সাথে কাজের মেয়ের মতো আচরণ করতো। কিন্তু জোনাকি প্রতিউত্তরে মাথা নিচু করে হ্যাঁ, জ্বি বলে দাড়িয়ে থাকতো। 

আমি ওকে জিগ্গেস করলাম মায়ের আচরনে তুমি কষ্ট পাও না? সে বললো, মায়েরা তো বাচ্চাদের শাসন করবেই এতে কষ্টের কি আছে? 


একদিন বন্ধু রাতুলের প্রথম ইউনিভার্সারি পার্টিতে আমাদের ইনভাইট করলো। কিন্তু জোনাকি তাতে আপত্তি করলো, পার্টিতে যাওয়া নাকি হারাম। 

তারপর আমি একাই গেলাম বন্ধুর সেই পার্টিতে। অনেককেই দেখলাম তাদের সুন্দরি বউদের নিয়ে পার্টিতে নাচানাচি করছে। সেখানে নিজেকে একদম বেমানান লাগছিলো। তাই একটা নিরব জায়গায় বসে আছি। হটাৎ খেয়াল করলাম রাতুলের স্ত্রীর কোমরে একজন হাত দিয়ে বললো, ওয়াও ভাবি আপনাকেতো জোস লাগছে। প্রতি উত্তরে সে বললো থ্যাংক ইউ ভাইয়া। বিষয়টা দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছি। 

রাতুল আমার কাধে হাত দিয়ে বললো, 

কিরে এখানে একা বসে আছিস কেনো? ওখানে সবাই পার্টি ইনজয় করছে। আর ভাবি কোথায়?  

-ও আসেনি।

-এখানে একা বসে আছিস কেনো চল ওদের সাথে তোকে পরিচয় করিয়ে দিই।


রাতুল আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, ও হচ্ছে আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড রিয়াদ, ভালো একটা কোম্পানিতে জব করে, আরো কত কি। 

একজন বলে উঠলো ভাইয়া আপনি বিয়ে করেন নি? 

আমি কিছু বলার আগেই রাতুল বলে উঠলো, একটা গ্রামের ক্ষেত মেয়েকে বিয়ে করে বন্ধুর জীবনটাই তেজ পাতা হয়ে গেছে। তাই কোনো জায়গায় নিতে পারেনা।

তার কথাটা শুনে মাথাটাই গরম হয়ে গেলো। তবুও নিজেকে একটু কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করলাম।

একজন ভাবি বলে উঠলো, ভাইয়া যাকে নিয়ে কোনো যায়গায় চলতে পারেন না, তাকে রেখেছেন কেনো? ডিভোর্স দিয়ে দিন।

তার সাথে অনেকেই তাল মিলিয়ে বলছে, হ্যা ভাইয়া ডিভোর্স দিয়ে দিন আপনি এখনো অনেক উচু বংশের মেয়ে বিয়ে করতে পারবেন।

হটাৎ একটা মেয়ে আমার গায়ে হাত দিয়ে বলে, ইউ আর সো বিউটিফুল।

এবার মেজাজ টাকে কোনো ভাবেই কন্ট্রোল করতে পারিনি। 

হাতটা হেচকা মেরে ফেলে দিয়ে বললাম, আপনার সাথে কি আমার হাতা হাতির সম্পর্ক?

রাতুলের দিকে তাকিয়ে, আর তুই একটু আগে কি বলেছিলি? গ্রামের ক্ষেতকে বিয়ে করে আমার জীবন তেজপাতা হয়ে গেছে? আর যদি তাই হয় তাহলে তেজপাতা জীবনটাই আমার কাছে অনেক ভালো। পার্টিতে একজন আরেক জনের কোমরে হাত দিয়ে বাজে কমেন্ট করার পরও যদি ধন্যবাদ শব্দটা উপহার হিসেবে পায়, না জানি সুজুগ পেলে আরো কতো কি করতে পারে। আর যদি এটা ফ্যাশন হয়ে থাকে তাহলে আই ডোন্ট লাইক ইস স্টাইল এন্ড ফ্যাশন। 

তোদের মতো আমার স্ত্রী নিজের শরীল অন্যকে উপভোগ করতে দেয়না, তার জন্যই কি সে ক্ষেত? পাপকে ভয় করে নিজেকে হেফাজত করতে সে পার্টিতে আসেনি, তার জন্যই কি সে ক্ষেত? যদি সে এগুলোর কারনে ক্ষেত হয়ে থাকে তাহলে এই ক্ষেতকে নিয়েই আমি অনেক গর্বিত।

রাতুলের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললাম, নিজের ইজ্জতটা একটু ঠিক রাখার চেষ্টা করবেন। নিজেকে ওপেন রেখে অন্যের বাজে কমেন্টেই আনন্দের পরিসমাপ্তি নয়। জীবনটা একটু পবিত্র করে গরে তুলুন, দেখবেন অন্য রকম একটা শান্তি পাবেন। আমরা আজকাল একটু আধুনিক হতে গিয়ে ভুলে যাচ্ছি আমরা মুসলিম। 

আমার কথা শুনে সবাই মাথা নিঁচু করে দাড়িয়ে আছে। 


প্রিয় কবি নজরুল বলেছিলো, মরিতে চাইনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিতে চাই। 

কোথায় গেলো আজ আমাদের এই সুন্দর ভুবনটা। না কি তাও আজ আধুনিকতার নিচে চাপা পরে আছে?


একদিন জোনাকি বাসার প্লেট গুলু ধুয়ে নিয়ে আসার সময় মায়ের শখের প্লেট টি ভেঙে ফেললো। তার কাছে গিয়ে দেখলাম প্লেটা নিচে ভাঙা অবস্থায় পরে আছে। জোনাকির শরিলটা দেখছি থরথর করে কাঁপছে, হয়তো মায়ের বকা খাওয়ার ভয়ে। আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

মা এসে দেখলো তার পছন্দে প্লেট টা ভেঙে গেছে তখন জোনাকির দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি তখন বললাম, আসলে মা প্লেট টা ও ভাঙেনি, এটা আমার হাত ফসকেই পরে গেছে। মন খারাপ করোনা আজ তোমাকে এরোকম এক সেট প্লেট এনে দেবো।

মা আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। তৎক্ষনাত জোনাকি এসে আমায় জরিয়ে ধরলো।

-আরে পাগলি এতো ভয়ের কি আছে একটা প্লেটইতো ভেঙেছে মাত্র।


আর কয়েক মাস পরে হয়তো আমার ঘর আলো করে একটা নতুন অতিথির আগমন ঘটবে। সেই খুশিতে আমি আত্বহারা। তাই জোনাকিকে সবসময় সাহায্য করার চেষ্টা করি। ওর কাজগুলু নিজে করে ওকে বিশ্রাম নেওয়ার সময় দেই। 


এদিকে মায়ের শরিলও দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। একদিন দেখলাম মায়ের শরিল খুবই খারাপ। তাই মাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। ডাক্তার বললো, আমরা নাকি অনেক দেরি করে ফেলেছি। মাকে নাকি বাঁচাতে হলে ২ ঘন্টার মধ্যে একটা কিডনির ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এতো কম সময়ে কিডনির ব্যাবস্থা করতে আমি সক্ষম হলাম না। 

হতাশ হয়ে ফিরে আসতেই ডাক্তার আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, অপারেশন সক্সেসফুল। 

-আমিতো ব্যাবস্থা করতে পারিনি, তাহলে কিভাবে সম্ভব হলো?

-আপনার স্ত্রী কিডনি দিয়েছে।

- ডাক্তারের কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

-আমারা অনেকবার নিষেদ করেছি এই অবস্থায় এ কাজটা করা ঠিক হবে না। কিন্তু ওর জোরাজোরিতে আর রোগির অবস্থাও খারাপ দেখে আমরা বাধ্য হলাম। সত্যি এই যুগে এরকম স্ত্রী সবার ভাগ্যে জুটেনা।


ডাক্তার যাওয়ার পর নিজেকে নিজের কাছে অপরাধি মনে হচ্ছে। আমি ছেলে হয়ে মায়ের জন্য যেটা করিনি আর ও.....

.

.

জোনাকিকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম। আমার ঘর আলো করে একটা কন্যা সন্তান এসেছে ঠিকই কিন্তু জোনাকি আমায় ছেড়ে চলে গেলো অনেক দুরে। যেখান থেকে কেউ কখনো ফিরে আসে না। সেইদিন মাকে দেখলাম প্রথম জোনাকির জন্য এইভাবে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে। আমার কথাতো নাই বললাম।


আজ আমার সেই আনস্মার্ট স্ত্রীর জন্য একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে যাচ্ছি, সাথে আমার মেয়ে জয়া।

 সে থাকা কালিন সবসময় আমার কাছে আবদার করতো গোলাপ নিয়ে আসার জন্য। যার কারনে বাড়ির চারপাস জুড়ে সুধু গোলাপের গাছ ই ছিলো।

হ্যাঁ, আজ আমার সেই আানস্মার্ট স্ত্রীর ৫ম মৃত্যু বার্ষিকি। ফুলগুলো তার কবরের পাশে রেখে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কেনো আমায় এভাবে একা ফেলে চলে গিয়েছিলে তুমি? 

        তুমি প্রথম আমার জীবনে আসা

               হ্যা তুমি সেই আনকার্লচার মেয়ে,

        অসহায় ফেলে চলে গেল আমায়

               একবারো দেখলেনা চেয়ে।

       ভালোবাসা কখনো হাসায় কখনো কাঁদায়

              কখনো বা রেখে যায় কিছু স্মৃতি,

     অন্ধ প্রেমে জড়িয়ে আবার হারিয়ে ফেললে

          তখন বুঝা যায় মায়া কত ছিলো তার প্রতি।


গল্প: বুকের বাম পাসে এখনো তোর ছবি আঁকা।