ভালোবাসার কষ্টের গল্প | না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প

 না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

বাসররাতে আমার স্বামী তার বুকের সাথে আমার হাতটা চেপে ধরে বললো


--" আমি কি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি? কখনো তোমার কাছে তোমার অতীত জানতে চাইবো না। শুধু তোমার ভবিষ্যৎটা সম্পূর্ণ আমার। 


আমি মুচকি হেসে বললাম ঃ- হুম আপনি পারেন আমাকে বিশ্বাস করতে।  আমি আপনার হক কাউকে দিবো না। আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি? 


--" হুম পারো। আমি তোমার বিশ্বাসে মর্যাদা রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। 


কথাগুলো বলার সময় আমাদের দুইজনের চোখ পানিতে ভিজে যাচ্ছিলো। সে আমার চোখ মুছে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।  কিছু সময় পর আমি জানতে চাইলাম আপনি চোখের পানি মুছুন। 


সে হেসে বলেছিলো ঃ- এই চোখের পানি মোছার দ্বায়িত্ব তোমার। 


--" আমি কখনো আপনার চোখে আমার জন্য পানি আসতে দিবো না। 


--" আমিও দিবো না। 


সেদিনের পর থেকে রোজ রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার স্বামী বলতো --" আমি বিশ্বাস করি তোমায়। আমিও তার কথায় মুচকি হাসি দিতাম। 

একদিন খেয়াল করলাম সে কয়েকটা কাগজ নিয়ে পড়ে আর মুচকি মুচকি হাসে।  কিন্তু এই মোবাইল ফোনের যুগে কি কেউ লাভলেটার দেয় নাকি? আমি আসলেই কাগজগুলো লুকিয়ে ফেলে। কেমন একটা সন্দেহ তৈরী হলো। তাহলে কি এখন চিঠির মাধ্যমে প্রেম করেন উনি। তাই যদি না হয় তাহলে আমায় দেখলেই কেন সে কাগজগুলো লুকিয়ে রাখবে। লুকিয়ে খেয়াল করে দেখলাম সে কাগজগুলো ম্যানিব্যাগে রেখে দেয়৷

গোসল করতে বাথরুমে গেলে লুকিয়ে কাগজগুলো বের করতেই আমার চোখ কপালে উঠলো। কি সুন্দর প্রেমের বানী লিখে রেখেছে। রাগের থেকে কষ্টই বেশি হচ্ছিল।  হঠাৎ খেয়াল করলাম হাতের লেখাটা আমার৷ একমিনিট এইগুলো তো আমার ডাইরির পেজ। তার মানে উনি আমার ডাইরি থেকে সব পেজ ছিড়ে নিয়েছে। দৌড়ে গিয়ে ডাইরি বের করে দেখলাম তাতে একটা লেখা পেজও আর নেই। সব ছিড়ে নিয়ে গেছে। বাথরুম থেকে বের হয়ে সে এই অবস্থা দেখে কি করবে বুঝতে পারছিলো না। আমি ততো সময় রেগে ফুলে বেলুন হয়ে গেছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো


--" আসলে এতো সুন্দর কথা আমাকে নিয়ে লেখেছো যে সবসময় পড়তে ইচ্ছে করে তাই ছিড়ে নিয়েছি তুমি রাগ করো না৷ সবসময় তো তোমার সাথেই থাকতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারি না তাই নিয়েছি তুমি রাগ করো না সোনাবউ আমার৷ 


আমি রাগ দেখিয়ে চলে গেছিলাম।  বিকালে অফিস থেকে ফেরার সময় ফুচকা চটপটি আইসক্রিম চকলেট গোলাপফুল আর বেলিফুলের মালা নিয়ে এসেছিলো৷ বোকা হাসি দিয়ে বললো


--" তোমার কি পছন্দ তাতো জানি না তাই সব নিয়ে এলাম। তুমি আবার পছন্দ জানি না বলে রাগ করো না কিন্তু। তাহলে এখন আমি কিন্তু কান্না করবো। 


তার কথাশুনে আমি ফিকফিক করে হেসে দিলাম। সে মুগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুদিন পর আমার ফোনে অচেনা একটা নম্বর দিয়ে কল আসলো সে পাশেই বসা ছিলো। আমি অনেক দ্বিধা নিয়ে কলটা রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিয়ে রাখলাম। ওপাশ থেকে মা কথা বলছে।  কথা শেষে সে মুচকি হেসে বললো


--" আমি পাশে থাকলে লাউডস্পিকারে দিয়ে কথা বলার দরকার নেই। আমি বিশ্বাস করি তোমায়। 


--" সবাই ভালোবাসি বলে আর আপনি বিশ্বাস করি বলেন কেন?


--" ভালোবাসার রং বদলে যেতে পারে কিন্তু বিশ্বাস বদলায় না হয়তো ভেঙে যায় নয়তো অক্ষত থাকে। আর ভালোবাসি কথাটা প্রমাণ করা অনেক কষ্টের আর বিশ্বাস করা প্রমাণ করা কিছুটা সহজ। ভালোবাসার প্রথম স্তর হলো বিশ্বাস।  বিশ্বাস না থাকলে কখনো ভালোবাসা থাকে না৷ তোমাকে যদি অন্য ছেলে বলে ভালোবাসে তোমায় তখন তোমার মনে হবে আমি বিশ্বাস করি তোমায়। কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হতে গেলেও এটা মনে পড়বে। 


আমি তার কথা শুনে আবেগে চোখের পানি ফেলেছিলাম। সে ব্যস্ত হয়ে পানি মুছতে লাগলো আর বলতে লাগলো তোমাকে কি কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমি? আমি মাথ নেড়ে না বলে তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। 


সময়ের সাথে আমার সুখের সংসার পর হচ্ছিল।  কিন্তু সুখ সবার কপালে সহ্য হয় না। একদিন দুইজনে ঘুরতে গিয়ে একটা গাড়ি আমাকে চাপা দিতে এগিয়ে এলো আমাকে বাঁচাতে গিয়ে মানুষটা গাড়ির নিচে পড়ে গেলো। আমি তার মাথাটা কোলে তুলে নিলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো


--" আল্লাহ চাইলে আমাদের জান্নাতে দেখা হবে আর তুমি আমার জন্য দোয়া করো। একটা কথা বলবো আমি অনেক হিংসুটে তোমার ভাগ কাউকে দিতে চাই না। আমি সত্যিই চাই না ওপারে কেউ তোমাকে দাবী করুক। আমি বিশ্বাস করি তোমায়।  


--" তোমার কিছু হবে না। ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি সবাই চলে আসলো বলে।


লোকটা সেদিন আর কথা বলেনি। বিদায় নিয়ে চলে গেছে দুনিয়া থেকে। সেদিনের পর আরো পনেরোটা বছর পর পার হয়ে গেছে। আমার মা বাবা শশুর শাশুড়ী সকলে আমার জন্য পাত্র খোঁজে। আশেপাশের লোকজন বলে তোমার বয়সই বা কত আর একটা বিয়ে করে নেও। কিন্তু কাউকে নিয়ে কিছু ভাবতে গেলে আমার কানে একটাই কথা বাজে--" আমি বিশ্বাস করি তোমায় "


সমাপ্ত


আমি_বিশ্বাস_করি_তোমায় 

ফারহানা_কবীর_মানাল