বউ শাশুড়ির সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত | বউ শাশুড়ির সম্পর্ক

 বউ শাশুড়ির ঝগড়া

বউ শাশুড়ির ঝগড়া

ওয়াশরুম থেকে বের হতেই হঠাৎ দেখলাম, আমার শ্বাশুড়ি আমার ঘরের আলমারি থেকে টাকা চুরি করছেন। মাথায় একেবারে রক্ত চড়ে গেলো। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলাম। বললাম,


"কী ব্যাপার? এই সময় আপনি আমার রুমে? আলমারিতে কী করেন?"


শ্বাশুড়ি বললেন,


"নাহ! মানে, মা, আমার শরীর টা খুব খারাপ। তোমার শ্বশুরেরও শরীর ভালো না। ওষুধ লাগবে। আমার কাছে টাকা নাই। তাই এখানে আসছি।"


"আমাকে বললেই হতো। আপনি কোন সাহসে আমার আলমারিতে হাত দিছেন?"


"আমি তো তোমারে সকালে বলছিলাম। তুমি তো কিছু বললা না।"


"তাই আমায় না বলে টাকা চুরি করছেন, না?"


"ছি, ছি, চুরি করবো কেনো? তোমাকে কোথাও দেখি নাই। তাই নিজে নিচ্ছিলাম। মাহিন তো অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে। তাই নিজেই দোকানে যাবো এখন।"


"হইছে। বুঝছি। বুঝছি৷


আর আপনাদের শরীর এতো খারাপ হয় কেন? একটু কাজ করলেই হয়রান হয়ে যান কেনো? এখন কী বাড়ির বাকি কাজ আমি করবো? আপনাদের বুড়া বুড়ি কে নিয়ে হইছে আমার যতো সমস্যা।"


 "এইভাবে বলো না, মা। নিতে পারি না।"


"ঢং! এতো ঢং দেখে বাঁচি না। কতো টাকা নিছেন দেখি? সংসার খরচ তো আমার করতে হয়। আপনাদের মতো বসে বসে খেলে তো আমার সংসার চলবে না।"


"৬০০ টাকা নিছি, মা!"


"ইশ! এত্তগুলা টাকা পানিতে পড়লো!"


 স্বগতোক্তি করলাম আমি।


আর একদিন। শ্বাশুড়ি ২ দিনের জন্য বেড়াতে গেছে উনার বোনের বাড়িতে। জানালা দিয়ে দেখি, আমার শ্বশুর কে আমার ৬ বছরের মেয়ে মারিয়াম মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। আবার মাথা গরম হয়ে গেলো। আমি তড়িঘড়ি করে গিয়ে বললাম,


"কী ব্যাপার, আব্বা? আপনার হাত নেই? আপনি নিজে খেতে পারেন না? এতোটুকু একটা মেয়েকে দিয়ে খাইয়ে নিচ্ছেন? রোগ জীবাণুর শরীর আপনার! কখন কী থেকে কী হয়, বলা যায়? এইটুকু কমনসেন্স নেই! অদ্ভুত! আর তাছাড়া তো রাতেই আপনাকে খাবার রুমে দিয়ে গিয়েছি।"


শ্বশুর অসুস্থ কণ্ঠে বললেন,


"জ্বর আসছে, মা। শরীরে কোন শক্তি নাই। কালকে রাতে খাবার দিছ। আজ বাসি হয়ে গন্ধ হয়ে গেছে। সারা রাত না খাওয়া। নিজে খেতে পারছি না। তাই বাচ্চা মেয়েটা একটু কেক খাইয়ে দিলো।"


দেখলাম, উনি চোখ থেকে পানি মুছছেন। কিন্তু এসব দেখে আমার বিন্দুমাত্র খারাপ লাগলো না। আমি মারিয়ামকে নিয়ে চলে এলাম। আসার আগে বললাম,


" আর কতো অজুহাত দিবেন, বলেন তো? ধ্যাৎ, এইসব মরা মানুষ নিয়া টানা হ্যাঁচড়া আর ভালো লাগে না।"


কিছু দিন পর আমি মারিয়ামকে স্কুলে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ মারিয়াম তীব্র পেটের ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো। প্রথমে ভেবেছি সে স্কুলে না যাবার জন্য অযুহাত তৈরি করছে। কিন্তু পরে দেখলাম, না, সে সত্যি অসুস্থ। মারিয়ামের বাবা অফিসিয়াল কাজে চট্টগ্রাম গেছে গত রাতে। মাসের শেষ। খুব বেশি টাকা পয়সাও হাতে নেই। কিন্তু মারিয়ামকে দ্রুত ডক্টরের কাছে নিতে হবে। সে কান্না করেই চলেছে। 


ঘর থেকে আমার শ্বাশুড়ি তড়িঘড়ি করে বের হয়ে এলেন। আমার শ্বশুরও অসুস্থ শরীরে আমার রুমে এসে উপস্থিত হলেন। উনারাও মারিয়ামের জন্য অস্থির বোধ করছেন। আমার শ্বশুর দ্রুত এম্বুলেন্স কল করলেন। আমার শ্বাশুড়ি সান্ত্বনা দিচ্ছেন আমায়। আমি হাউমাউ করে কান্না করছি। 


নামকরা এক হাসাপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে মারিয়ামকে। ডাক্তার জানালেন, মারিয়ামের এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা উঠেছে। দ্রুত অপারেশন করতে হবে। আজই টাকা জমা দিতে হবে। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এতো টাকা আমি কোথায় পাবো? 


এগিয়ে এলেন আমার শ্বশুর। একটা চেক দিলেন আমার হাতে। ১ লাখ টাকার চেক। আমার হাত ধরে বললেন, 


" মা গো, খুব বিপদে জরুরি দরকার এর জন্য ২ লাখ টাকা আমার একাউন্টে রেখেছিলাম। আজকের চেয়ে বড়ো বিপদ আমার আর হবে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, মেয়েটা যেনো খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। "


আমি শুধু চোখ মুছছি। আমার শ্বাশুড়ি এসে বললেন, মা, চিন্তা করো না। আল্লাহকে ডাকো। আমরা তো আছি। টাকার আরো দরকার হলে আমার গয়নাগুলো তো আছেই। দেখবা, মারিয়াম ভালো হয়ে যাবে।


আমি কৃতজ্ঞ কণ্ঠে শুধু বললাম, আম্মা! আব্বা!

যাদেরকে আমি এতোদিন তুচ্ছ বোধ করেছি, ন্যুনতম সম্মান টুকু দেই নি তারা আজ আমার বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। এই প্রথম তাদেরকে আমি আমার মন থেকে আব্বা আম্মা ডাকলাম। আমি আমার শ্বাশুড়ি কে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম, 


" আম্মা ভুল হয়ে গেছে আমার। ক্ষমা করে দেন। আপনাদের আর কষ্ট দিবো না, আম্মা। প্লিজ, ক্ষমা করে দেন।" 


আম্মা আব্বার দিকে তাকিয়ে পরম স্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, মা, তুমি তো আমার আর এক সন্তান। আমাদের শুধু একটু ভালোবেসো। আর কিছু চাই না। বয়স হইছে তো! একটু ভালো ব্যবহার শুধু আশা করি তোমাদের কাছ থেকে। বুঝছো, মা?


আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম।


আসলে শ্বশুর বাড়িতে বউ কে নির্যাতন বা বউ কর্তৃক শ্বশুর শ্বাশুড়ির উপর অত্যাচার খুবই স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মোড় নিয়েছে আমাদের সমাজে। যদি সবাই একটু কম্প্রোমাইজ করে, যার যার প্রাপ্য সম্মান তাকে দেয়া হয় আর পরস্পরের মধ্যে একটু ভালোবাসা থাকে তবে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায় সহজেই। 

গল্পঃ ভালোবাসা 

নুসরাত_জান্নাত

গল্পটা মন দিয়ে পড়েছেন তো ? কী বুঝলেন ?