যদি সুখে শান্তিতে থাকতে চান | শিক্ষামূলক গল্প ও ঘটনা | ধর্মীয় শিক্ষামূলক গল্প

 ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প pdf

ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প pdf

যার বিয়ে হয়েছে, সে বলছে 'বিয়ে করাটাই তার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। কেন যে করতে গেলাম!' আর যারা বিয়ে করেনি, তারা দিনরাত বিয়ে নিয়ে মহাস্বপ্নের জাল বুনে চলেছে। 

.

.

যার বাচ্চা আছে, সে 'বাচ্চাদের জালায় অস্থির হয়ে যাচ্ছি' বলে দিনরাত অভিযোগ করছে। যার বাচ্চা নেই, সে একটা বাচ্চার জন্য দিনরাত কেঁদেকেটে মরছে।

.

.

যার চাকরী আছে সে বলতেছে, চাকরি করা পেইন। প্রতিদিন এক জায়গায় যাওয়া আর একই কাজ করা কি যে বোরিং! আবার, যার চাকরি নাই সে বলতেছে চাকরির অভাবে অনেক কষ্টে আছে।

.

.

.

যার সন্তান পড়াশুনা করতে বিদেশ চলে যাচ্ছে, সে ভাবছে অমুক সাহেব আর যাই হোক, অন্তত সন্তানদের চাইলেই দেখতে পাচ্ছে। আর আমি আমার সন্তানকে চাইলেও দেখতে পারছিনা। আবার যারা সন্তানকে সবসময় কাছে পাচ্ছে, তাদের আফসোস হলো সন্তানগুলোকে এত কষ্ট করে পড়াশুনা করালাম! অমুকের মাথামোটা ছেলেটা পর্যন্ত স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে গেলো, আর আমার ছেলেটা কিনা এখনো দেশেই পড়ে আছে! বিদেশ যাওয়ার কোন ইচ্ছাই নাই! হায়রে কপাল! এত কষ্ট করে এজন্য পড়াশুনা করালাম?

.

যে ইন্ড্রাস্টিয়াল চাকরি করতেছে, সে বলতেছে টিচিং প্রফেশানই ভালো। অল্প পরিশ্রমেও অনেক টাকা কামানো যায়। যে টিচার সে বলতেছে, কেন শুরুতে ইন্ড্রাস্টিতে ঢুকলাম না, এতদিনে লাখ টাকা বেতন হতো। সারাদিন চিল্লায়ে চিল্লায়ে কথা বলতে বলতে গলা শেষ হয়ে গেলো। 

.

যে বিদেশে আছে সে বলতেছে, দেশে একটা কোনমতে একটা চাকরি করে পরিবারের সাথে আরামে থাকতে পারতাম, হুদাই আসছি বিদেশে। যে দেশে আছে, সে বলতেছে অমুক অমুক বিদেশে গিয়ে কত মর্যাদার জীবন যাপন করতেছে, জীবনের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতেছে, আর আমি হতভাগা কোনমতে ছোটখাট একটা জব নিয়ে বসে আছি।"

.

.

যার একটা নুন্যতম মাথা গুঁজার জন্য বাসা আছে, সে ভাবছে, 'ধুর! একটা ফ্ল্যাটবাড়িই করতে পারলাম না! অমুক অমুক পর্যন্ত করে ফেললো! আর আমি এই এক পুরানা আমলের ঘর নিয়েই পড়ে থাকলাম সারাজীবন। আবার যে ফ্ল্যাটবাড়ি বানিয়েছে, সে একটা রাত শান্তিতে ঘুমানোর জন্য ছটফট করছে। অন্তরে একটু সুখ পাবার আশায় কত ব্যর্থ চেষ্টাই না করছে! মুভি, গান-বাজনা, সিরিয়াল, জোকস, ফানি ভিডিও কত কিছু! কিন্তু কোনটাই মনকে ভালোভাবে প্রশান্ত করতে পারেনা। সবগুলোই কিছুক্ষণ পর বিরক্তিকর হয়ে যায়। কোনটা দিয়েই অন্তরের অভাব দূর হয়না। লাখ টাকার বিছানায় শুয়ে একটু ভাল করে ঘুমাবে- সেটাও আসেনা। রিক্সাওয়ালার রিক্সায় ঘুমানো দেখে সে কেবল আফস্যোস করতে থাকে। ইশ! একটু যদি সুখ করে ঘুমাতে পারতাম!

.

.

আসলে প্রকৃত সুখে আছেটা কে? 

.

কেউ নেই। দুনিয়া সুখে থাকার যায়গা না। 

দুনিয়া হচ্ছে অনন্ত সুখের পাথেয় সংগ্রহ করার যায়গা। লবনাক্ত পানি দিয়ে পিপাসা মেটাতে চাইলে সেটা যেমন তৃষ্ণা না কমিয়ে উল্টা বাড়িয়ে দিবে, তেমনি দুনিয়াতে কেউ চিরসুখী হতে চাইলে সে কষ্টে-যন্ত্রনায় জর্জরিত হবেই। 

.

দুনিয়াতে কেবলমাত্র সেই সুখে আছে, যে সাধ্যমত নিজেকে জীবনের সবক্ষেত্রে আল্লাহর দাসে পরিণত করতে পেরেছে। পরকালের জন্য সত্যিকারভাবে কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্তরের অভাব মেটাতে রব্বে কারীমের কাছে নিজেকে সঁপে দিচ্ছে। সুখের মালিকের কাছে, তার দেয়া সকল বিধি বিধানের কাছে নিঃশর্ত আত্নসমর্পণ করাতেই আছে আসল সুখ।

.

বারবার পা পিসলে যায়, কিন্তু তবুও রব্বে কারীমকে সন্তুষ্ট করার জন্য অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া মানুষেরাই প্রকৃতভাবে সুখে আছে। যেটাকে ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (র) "দুনিয়ার জান্নাত" হিসেবে অভিহিত করেছেন।

.

.

বাদবাকি সবাই কমবেশি কেবল অন্যদেরকে সুখী মনে করে আফসোস করে আর ভেতরে ভেতরে জলেপুড়ে মরে। আর এই আফসোস, একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এই প্রতিযোগিতা মৃত্যু পর্যন্তই। রুহটা চলে গেলেই সব খ ত ম।

.

.

"যেদিন তারা এটা(বিচার দিবস) প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে একটি সন্ধ্যা অথবা একটি সকালের অধিক অবস্থান করেনি"- 

(সূরা আন নাজিয়াতঃ ৪৬)

.

.

যারা একটি সন্ধ্যা বা একটি সকাল সুখে থাকার মোহে অনন্ত আখিরাতের জীবনের ব্যাপারে গাফেলতি করবে, পাথেয় সংগ্রহ করবেনা, তারা দুনিয়াতেও সুখ পাবেনা। আখিরাতেও না। 

.

আর হাজার মাথাকুটে মরলেও রিযিকে যা আছে তার চেয়ে একচুলও বেশি পাবেনা, ইন শা আল্লাহ্‌। বরং অন্যান্য সবকিছু বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। 

.

আর যারা কেবল আল্লাহকেই প্রায়োরিটি দিবে, কেবল তারাই আল্লাহর প্রায়োরিটি পাবে, অল্পেও সন্তুষ্ট থাকতে পারবে, ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ তাদের সবকিছু গুছিয়ে দিবেন। এবার সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা আমার আপনার।