মেয়েদের কষ্টের গল্প
- মারে তোকে অনেক দিন হলো দেখিনা। একটু আসবি এখানে ?
- বাবা , তোমার জামাইয়ের অফিসে ছুটি নেই কিভাবে আসবো বলো ?
- ও আচ্ছা ঠিক আছে । ছুটি হলে একটু এসে দেখে যাস। গাছে কিছু পেয়ারা পেকে আছে তোর জন্য রেখেছি, তুই তো খুব ভালোবাসিস। আর তোর মা সেই কবে থেকে মোরগ টা রেখে দিয়েছি তোর জন্য তুই আসলেই মোরগ পোলাও করবে । দিন দিন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে মোরগ টা তবু ও তোর মা ওটা জবাই করছে না ।বলছে আমার মেয়ে এলে ওর জন্য নিজের হাতে আমি রান্না করবো।
- বাবা তোমার শরীর ভাল তো ?
- হ্যা রে মা আমি ভাল আছি। কিন্তু তোর মা ভাল নেই। প্রেসারটা খুব বেড়েছে ।
- মাকে বলো আমি খুব তাড়াতাড়ি আসবো । চিন্তা না করতে এখন রাখি বাবা ।
- ঠিক আছে মা রাখ।
,,
বাবার ফোন রেখে খুব কান্না পেল। কতোদিন হলো বাবা মাকে দেখিনা। যখন ছোট ছিলাম বাবা রোজ আমাকে নিজের হাতে পেয়ারা পেরে খাওয়াতো। সব থেকে পাকা পেয়ারাটা আমি পেতাম । ভাইয়া মাঝে মাঝে বলতো - তোমাদের ওই মেয়ে সব । আমি কিছু না।
মা হেসে দিয়ে বলতো ,- ছি বাবা হিংসে করতে নেই। ও যখন পরের ঘরে চলে যাবে তখন তুই পাকা পেয়ারা গুলি খাস। এখন ওকে দে। ভাইয়া চোখের পানি আড়াল করে বলতো - আমি জানি তোমরা ওকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসো। এই কথা শুনে বাবা মা মুখ টিপে হাসতো।
,,
ছোট বেলা থেকেই আমার মোরগ পোলাও ভিষন পছন্দ । বাবা বাজারে গেলেই সব সময় খোঁজ করতো কোথাও
মোটা তাজা মোরগ কোথায় আছে কিনা। কিনে এনেই আমাকে ডেকে বলতেন - এই দ্যাখ মা কি এনেছি ।
তারপর মাকে বলতেন - শোন আজ খুব ভাল করে মোরগ পোলাও করো আমার মেয়েকে আমি পাশে বসিয়ে খাওয়াবো। বাবা আমাকে আর ভাইয়াকে নিজের হাতে মুখে তুলে খাওয়াতো। তিন বেলা মোরগ পোলাও চলতো ,আমি ভাত খেতে চাইতাম না বলে বাবা বলতো - আমার পেটটা ভাল না। এ খাবার খেতে পারবো না। ওদের দাও আমার ভাগের টাও।
,
আজ কতোদিন হলো বাবা মাকে দেখিনা। বুকটা কষ্টে নীল হয়ে যাচ্ছে । পৃথিবীতে কেন এতো নিষ্ঠুর নিয়ম বাবা মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ।
,
আজ বাসায় মোরগ পোলাও রান্না হচ্ছে । আমার বর ইয়া বড়ো মোরগ এনে বললো এটা আজকে রান্না করো খুব সুন্দর করে আমার দুজন মেহমান আসবে ।
রাতে সবাই এক সাথে ডিনার করবো।
এই বলেই অফিসে চলে গেল ।
আমি মোরগ টাকে কেটেকুটে সুন্দর করে রান্না চড়ালাম। কিন্তু আমার মন রয়েছে সেই পুরনো দিনে । বার বার বাবা মায়ের মুখটা মনে পড়ছে । মা আমার জন্য নিজের হাতে পোষা মোরগ নিয়ে অপেক্ষা করছে পথ চেয়ে ।
,
দুপুরে খেতে গিয়ে পারলাম না। চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার । ওভাবে রেখে উঠে গেলাম ।
রাতে আমার বর এলো বাসায় । এসে বললো খাবার রেডি করো আমি তাদের নিয়ে আসছি।
,
খাবার রেডি করে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম। এখনও ওর ছুটি পেতে পঁচিশ দিন বাকি। বাবা মাকে কবে দেখতে পাবো। চোখ থেকে অজান্তে পানি গড়িয়ে পড়লো। এমন সময় পিছনে কেউ আমার মাথায় হাত দিলো। চমকে উঠে পিছনে ফিরে দেখলাম বাবা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে । মা ও পাশে দাঁড়িয়ে হাসছে । আমি অবাক হয়ে গেলাম । মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম । বাবা বললো ,- জামাই আজ অফিস ছুটি দিয়ে আমাদের আনতে গিয়েছিল । তুই নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদিস? বোকা মেয়ে একটা আমরা ভাল আছি ।
,
দুরে দাড়িয়ে আমার বর হাসছে । ওর হাসি দেখে মনটা ভরে গেল । চোখের পানি মুছে বললাম - বাবা আমার ভিষন খিদে পেয়েছে চলো আমাকে খাইয়ে দিবে। তোমার হাতে কতোদিন খাইনা। বাবা চোখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে পানি মুছলো।
আমি হুহু করে কাঁদতে লাগলাম ।
এমন সময় আমার বর বললো - এখন খেতে দাও ভিষন খিদে পেয়েছে । আমি সবাই কে খেতে দিলাম । বাবা আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে ।মনে হচ্ছে সেই ছোট্ট আমি । আমার প্লেট থেকে এক টুকরো মাংস বাবার মুখে দিতেই বাবা বললো - জানিস মা আমি যখন ছোট্ট ছিলাম আমার মাও ঠিক এভাবে মাংসের টুকরো আমার মুখে তুলে দিতো। আমি আমার মায়ের চেহারা তোর মাঝে দেখতে পাই। তুই যে আমার মা আমার জননী ।
,
সমাপ্ত