সংসার জীবনের কষ্ট গল্প | স্বামীর সংসার

 সংসারের গল্প

সংসারের গল্প

আমার বিয়ের ১বছর ৩মাস চলে।বিয়ের পর পরই একবার কন্সিভ করি।কত খুশি ছিলাম মা হবো প্রথম বাচ্চা।হাজবেন্ডও খুশি।যা খাইতে মন চাইতো এনে দিতো।


আনতো ঠিকই কিন্তু আমি আর খাইতে পারতাম না।আমার শাশুড়ি সব নিজের ঘরে নিয়ে রাখতো। আর পাড়ায় গল্প করে আমি কেজি কেজি ফল খাই ডিম খাই তাদের দেই না।🙂


এসব শুনে হাজবেন্ড লুকিয়ে আনতো। দিনের বেলায় আমি ঘুমালে আমার ঘর খুঁজতো।৩বেলা শুধু যতটুকু পারছি ভাত সবজি এসব খাইছি।ফল কেমন ৪মাসের পর আর চোখে দেখি নাই।🙂


ঘর ঝাড়ু দেওয়া, উঠান ঝাড়ু দেওয়া, থালাবাটি ধোয়া,রান্না করা সব করছি।ধানের সময় ধান মাড়ায়,উড়ানো,ভেজানো, সিদ্ধ করা,শুকানো সবই করছি।সাথে শাশুড়ি ছিলেন। 


এরপর আসে পেঁয়াজের সময়। পেট উপরে।আমি বসতে পারিনা দাড়াতে পারিনা।তাও যতটুকু পারি করেছি।তার জন্যও শশুড় বলেছে জমিদারের বাচ্চা কোনো কাজ পারেনা খালি খাই আর ঘুমায়।🙂


পেঁয়াজের সময় আমার শাশুড়ি আমারে ৮মাসের প্রেগন্যান্ট অবস্থায় রেখে মেয়ের বাড়ি গিয়ে মেয়ের পেঁয়াজ কেটে দিয়ে আসছে।🙂


আমি সমস্ত কাজ একা করছি আর কা'ন্না করছি।গরুর ঘাস পর্যন্ত আমার শশুর আমারে দিয়ে কাটাইছে।৯মাস পর্যন্ত তাদের বাড়িতেই ছিলাম তারা আসতে দিবে না।পরে আমার আব্বু ইদের ১০দিন আগে গিয়ে জোর করে নিয়ে আসে।


খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো না হওয়ায় আমার বাবুর ওজন আসে দেড় কেজি।মায়ের কাছে এসে এই ১মাসে ১কেজি বাড়ে।গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে পেইন উঠে।ব্যা'থা আস্তে ছিলো পরে ভোর ৪টা থেকে বেশি হয়।আব্বু জেলা শহরে নিয়ে যায়।হাজবেন্ড আর তার মা আসে।তার মা কিছুতেই সিজার করতে দিবে না।বলে বাচ্চা ছোট নরমালে হবে।হাসপাতালের নার্সরাও আর জোর না করে নরমালে চেষ্টা করতে থাকে। দুপুর ২টার দিকে আমার আব্বু সিজার করতে বললে আমার হাজবেন্ড বলে সিজার করলে কাজ করতে পারবেনা।নরমালে চেষ্টা করেন।🙂


আমার শাশুড়ী আমি মৃ'ত্যু পথযাত্রী তখনও মানুষের সাথে তুলনা করে যে অমুকের ৩দিন পর নরমালে হয়েছে তমুকের ৫দিন পর হয়েছে ওরো হবে। এরকম করতে করতে আমার বাবুটা পেটের ভিতরেই পায়খানা করে দেয়।তার পরে মা'রাও যায়।যখন ব্লা'ড ভাঙা শুরু হয় তখন সিজারের জন্য ওটিতে নেয়।ওটিতে যাওয়ার পর পরই বাচ্চা নরমালে হয়ে যায়।কিন্তু আমার সাইড ছিঁড়ে যায়।সেলাই লাগে।😭😭


আমি তখনও জানিনা আমার বাবু আর দুনিয়াতে নেই।বেডে দেওয়ার পর আমার মা যখন বললো আল্লাহ তোমারে আবার বাবু দেবেন শক্ত হও তখন জানলাম আমার মেয়েটা নেই।আমি আমার বাবুরে একটা নজর দেখতেও পারলাম না।তার আগেই প্যাকেট করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।😭😭


আজ ৫দিন হলো আমি আমার বাবুরে হারায়ছি।কত কষ্ট করলাম কত অত্যা'চার সহ্য করলাম শুধু বাবুটার মুখে মা ডাক শুনার জন্য।আর আল্লাহ আমার কাছ থেকে সব কেড়ে নিলেন।আমার মেয়ে আমারে সারাজীবন কাজ করার জন্য দুনিয়ার বুকে রেখে ফাকি দিয়ে আল্লাহর কাছে চলে গেলো।😭😭😭