বাস্তব জীবনের গল্প
কুরবানী ঈদ ২০২৩বাসা থেকে বের হতেই পাসের বাসার ভাবি এসে জিঙ্গেস করলো, কি খবর রিয়াদ গরু কত নিছে?
----জি ভাবি, ৯০ হাজার টাকা নিছে।
----আমাদেরটা মাত্র ১ লক্ষ্য ৫০হাজার টাকা। তোমার ভাইয়াকে বলে ছিলাম বড় দেখে একটা কিনতে। এতো ছোট গরু দিয়ে কোরবানি দিলে কেমন দেখায় না?
------বেশি ছোট হয়ে গেলো নাকি ভাবি?
-----না, তবুও বড় গরু দিয়ে কোরবান দিলে ভাবটাই অন্য রকম থাকে না?
-----আচ্ছা তাহলে আমি এখন আসি।
রাস্তার একপাস দিয়ে হাটছি আর নিঝুমের সাথে ফোনে কথা বলছি। এমন সময় একটা পিচ্ছি মেয়ে ৯ থেকে ১০ বছর হবে। দেখি কিছু ফুলের তৈরিকৃত মালা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
----- ভাইয়া একটা মালা নিবা?
----- না আপু লাগবে না।
-----নেওনা ভাইয়া, মাত্র ৫০ টাকা।
-----বলছি না লাগবে না যাও তো।
-----ভাইয়া নিজের হাতের তৈরি মালা, সকাল থেকে একটাও বেচতে পারিনি।
মেয়েটার প্রতি একটু মায়া হলো তাই ফোনটা রেখে মেয়েটাকে বললাম, এগুলো তোমার হাতের তৈরি?
-----হ্যা আমি নিজে বানিয়েছি।
-----বেশ সুন্দর হয়েছে।
------আমি ফুল অনেক পছন্দ করতাম তাই বাবা আমার জন্য ফুল নিয়ে আসতো আর সেগুলো দিয়ে আমি মালা বানাতাম। সেখান থেকে আস্তে আস্তে শিখেছি।
----- নাম কি তোমার?
----- মিষ্টি।
-----বাড়ি কোথায় তোমার?
----- বাজারের পাসের গলিতে ঢুকতে প্রথম ঘরটাই।
----- বাবা কি করে তোমার?
বাদ ভাঙা জোয়ারের মতো আস্তে আস্তে করে ভিজে যাচ্ছে মেয়েটার চক্ষু জোরা।
-----বাবা রিক্সা চালাতো। মাস ছয়েক আগে একটা এক্সিডেন্টে বাবা আর হাটতে পারে না। অচল হয়ে যায় বাবার পা দুটি। মা অনেক আগেই আমাদের ছেরে চলে গেছি। বাবার এক্সিডেন্টের পর থেকে আমি এভাবে ফুল বেচি। বাবার কাছে আগে ঈদের সময় অনেক আব্দার করতাম। বাবা সব সময় আমার সব আব্দার পূরণ করতো। কিন্তু এখন আমার সেই আব্দার পূরণ করার শক্তি বাবার আর নেই। দুই দিন পর ঈদ। বাবা আমার জন্য প্রতি ঈদে মাংস নিয়ে আসতো। তাই আমি এই কয়দিন একটু বেশি মালা বিক্রি করার চেস্টা করি। মাংস কিনতে না পারলেও বাবার জন্য একটা বড় দেখে মুরগি কিনে নিয়ে যাবো।
মেয়েটার কথা শুনে চোখের এক কোনে পানি জমে গেলো আমার। জিবনে কি করলাম বাবার জন্য, এই আঠারো বিশ বছর সুধু বাবারই কাধের উপর বসে আছি। সরি বাবা আজও তোমার গর্বের কোনো কারণ হতে পারলাম না।
বললাম, তোমার এখানে কয়টা মালা আছে।
মেয়েটি এবার হাস্যজ্জল মুখে বললো, ভাইয়া দশটা আছে।
----সবগুলো আমাকে দাও।
----এতো মালা দিয়ে কি করবেন?
----আমার এক বন্ধুকে দিবো।
---- হাসি মুখে বললো, নিন ভাইয়া।
----আমি পকেট থাকে এক হাজার টাকা দিয়ে বললাম, নাও।
---- ভাইয়া আমার কাছে ভাংতি নেই।
---- ভাংতি লাগবেনা তুমি রেখে দাও।
---- না ভাইয়া আমি কারো কাছ থেকে কিছু নিই না। যেটা পাওনা সেটা দিলেই হবে।
---- ৫০০ টাকা দিয়ে বললাম, আচ্ছা এই নাও।
---- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ফুল গুলো তাকে দিয়ে বললাম এই নাও এগুলো তোমাকে আমার ছোট্ট বন্ধু হিসেবে উপহার দিলাম। আমি এখন আসি।
আসার পথে ভাবলাম এই ফুল গুলো বিক্রি করে আরো কিছু টাকা পাবে হয়তো সে তার আাসা পুরণ করতে পারবে।
,
,
,
ঈদের দিন সকল কাজ শেষে হটাৎ সেই মেয়েটির কথা মনে পরলো।
টিপিন বাটি করে কিছু রান্না করা মাংস আর কিছু রুটি নিয়ে গেলাম সেই ছোট্ট বন্ধুটার জন্য। সাথে কিছু কাচা মাংস।
একটা ছোট বাড়ি, মিষ্টি ভিতরে তার বাবাকে খাইয়ে দিচ্ছে।
সে আমাকে দেখেই একটা হাসি দিলো।
---- এগুলো তোমার জন্য, বন্ধু হিসেবে আনলাম।
---- আমার হাত ধরে আসো ভাইয়া ভিতরে আসো।
,
,
তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসার সময় হটাৎ কিছু শুকনো মালার দিকে চোখ পরলো।
---- সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এগুলো তোমার দেওয়া সেই উপহার গুলো।
---- তুমি এগুলো বিক্রি করনি?
---- তুমি আমাকে বন্ধু বলে এগুলো উপহার দিলে। আমি কি সেই বন্ধুর দেওয়া উপহার বিক্রি করে দিতে পারি? তাই যত্ন করে রেখে দিলাম।
সমাপ্ত
গরু বড় হোক আর ছোট হোক লাজ্জা বা গর্বের কোনো বিষয় নয়। আমাদের আসে পাসের প্রতিবেশি যারা কোরবানি দিতে পারছেনা তাদের পাসে দারানোটাই বড় বিষয়।
গল্পঃ ছোট্ট বন্ধুর ঈদ।