খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প | কষ্টের ভালোবাসার গল্প

 অনেক কষ্টের ভালোবাসার গল্প

অনেক কষ্টের ভালোবাসার গল্প

---" তোর জামাই বিদেশ থাইক্যা আরেকটা বিয়ে করে বউ আনছে। দ্যাখ, কি সুন্দর বউ নিয়ে আসতেছে। আর তুই রান্নাঘরে বসে কাজ করতাছোস? তাড়াতাড়ি বাহিরে আইয়া দেইখে যা।"


কড়াইয়ে তেল দিচ্ছিলাম,হঠাৎ সাহেদা ভাবীর কথা শুনে চমকে গেলাম। হাত থেকে তেলের বোতল টা পড়ে গেলো, কড়াই থেকে দু ফোটা তেলের ছিঁটকা এসে হাতে পড়লো। সাথে সাথে আমার হুশ ফিরে আসলো।গ্যাস স্টোভ বন্ধ করে, ভেসিনের ট্যাপ ছেড়ে হাতে পানি দিতে লাগলাম। ওদিকে দরজার পাশে দাড়িয়ে ভাবী আমাকে তাড়া দিয়ে যাচ্ছেন। 


ভাবী আমারর সাথে মজা করছেন সেটা আমি বুঝে গেলাম, কারন দীর্ঘ ৬বছর পর আজ আমার স্বামী বিদেশ থেকে আসবেন। উনি হয়তো এসে গেছেন তাই ভাবী দুষ্টুমি করছেন। কিন্তু তবুও মনে কিছু টা শঙ্কা কাজ করলো। একবার ভাবলাম, ভাবীকে বলি,--'ভাবী এসব কি ধরনের মজা?'

পরক্ষণেই বাতিল করে দিলাম।


বাহিরে আসতে দেখলাম সত্যি সত্যি আমার স্বামীর পাশে এক সুন্দরী মহিলা বসে আছেন, দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি বাংলাদেশী নন। ভাবীর কথা টা মাথায় আসলো,পর আবার ভাবলাম হয়তো উনার কোনো ফ্রেন্ড। 


উনি মাথা নিচু করে বসে আছেন, আমি উনাদের নাস্তা দিচ্ছি। বাড়ীর আশেপাশে ভীড় জমে গিয়েছে, এখানে সেখানে ফুসুর ফুসর চলছে। 

আমার শশুড়বাড়ীর প্রত্যেক টা মানুষ খুব স্বাভাবিক ভাবেই আছেন। আশেপাশে যে এত কথা চলছে উনারা কেউ জবাব ও দিচ্ছেন না। আমি বেশ অবাক হলাম। কিছুটা রাগ ও হলো মানুষের উপরে এসব আজেবাজে কি বলে?


আমি পানি নিয়ে কিচেন থেকে আসতেই দেখলাম আমার স্বামী, আমার শশুড়বাড়ীর লোকদের কে ওই ধলা নারীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। ও যখন সবাইকে বলে,--" আর মা, ও হচ্ছে এলিনা। আমার বউ!"


 তখনই আমার হাত থেকে পানি ভর্তি জগ টা পড়ে গেলো। সবাই আমার দিকে তাকালো। 


মেয়েটি ইংরেজী ভাষায় পটপট করে বলে,--" হু ইজ সি?" (ও কে?)


 রাজু তখন ধীর আওয়াজ করে আমাকে দেখিয়ে বলে,--" সি ইজ মাই ফার্স্ট ওয়াইফ।"( ও আমার প্রথম স্ত্রী)


মেয়েটি মাথা নাড়ালো এরপর আমাকে বলে,'হ্যালো।' 


আমি চুপ করে রইলাম। মেয়েটাকে কোনো জবাব না দিয়ে আমি রাজুর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম,--" আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন?"


সে খুব ছোট আওয়াজ করে বলে,--" আসলে লন্ডনে লিগ্যাল হওয়ার জন্য আমি ওকে বিয়ে করেছিলাম।"


কথাটা আমার পুরো পৃথিবী নাড়িয়ে দিয়েছে। আমি মৃদু হাসলাম। আমার বিয়ের সময় ওকে এতগুলো টাকা দিয়েছে যাতে বিদেশে গিয়ে রোজকার করতে পারে। আমাকে যেনো শান্তিতে রাখতে পারে সেজন্য আমার বাবা মাঠের জমি টা বিক্রি করে দিয়ে উনাকে টাকা টা দিয়েছিলো। সেই টাকা দিয়ে বিদেশ গিয়ে আরেকটা বিয়ে করে ফেললো?


আমি কম্পমান কন্ঠে বললাম,--" কত মাস হলো?"


সে নির্লিপ্ত গলায় বলে,--" সাড়ে চার বছর। দেড় বছরের একটা বাচ্চা ও আছে।"


ওর কথায় পাশে তাকালাম, দেখলাম বিদেশি ট্রলিতে ফুটফুটে সাদা সুন্দর একটা বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে। চোখে জল চিকচিক করে উঠলো। 


আমার শাশুড়ি এগিয়ে এসে বলে,--" তুমি চিন্তা করো না বউ মা। ওরা শুধু এক সপ্তাহের জন্য এসেছে। ওরা চলে যাবে, তোমার সংসার তোমারই থাকবে।"


--"মানে বলতে চাচ্ছেন যে, এখানে আসলে আমার সাথে থাকবে আর ওখানে গেলে উনাদের সাথে। "


শাশুড়ি মাথা নাড়ালো। আমি এবার হালকা দাত বের করে হাসলাম। শাশুড়ি তাহলে জানতো সব।  


কোনো কথা না বলে চুপচাপ রুমে চলে আসলাম। রুম টা আজ খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছিলাম। বিছানার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বুঝলাম না হাসি আসছে কেনো? চোখে তো জল স্পষ্ট চিকচিক করছে তাও হাসি আসছে কেনো মুখে?

আমার জামাকাপড় গুলো বের করে ব্যাগে ভরে নিলাম। রুম থেকে বের হতেই রাজু এসে ডুকলো। আমি সাইডে সরে গেলাম। 


--"কোথায় যাচ্ছো ব্যাগপত্র গুছিয়ে?তুমি কি বাড়ী ছেড়ে চলে যাচ্ছো?"


-- " না। আপাতত রুম ছাড়ছি। আপনারা হয়তো ক্লান্ত বিশ্রাম করবেন। আমাকে আগে বলে দিলে আমি আরো কিছু জিনিস ব্যবস্থা করে রাখতাম। "


--" দেখো, তুমি যদি বলো যে তোমাদের টাকারর বিষয় টা বলতে চাও তাহলে বলো আমি এখনই দ্বিগুন টাকা দিয়ে দিবো তোমার পরিবারকে।"


আমি চোখ তুলে ওর মুখপানে চাইলাম। কত সহজ তার বাণী। ও কি জানে যে ওর এত ছোট আর স্বাভাবিক কথা টা আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে? রাতের পর রাত, দিনের পর দিন ওর অপেক্ষায় বসে ছিলাম আমি। আর আজ ও এসব বলছে? এই কি সে, যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম।


সমাপ্ত...