ভালোবাসার কষ্টের গল্প কাহিনী | ভালোবাসার কষ্টের গল্প

 ভালো বাসার কষ্টের গল্প

ভালো বাসার কষ্টের গল্প

তোমাকে যখন বিয়ে করে আমার ঘরে আনলাম......

তখন তোমার মাত্র ১২ বছর বয়স....আর আমি সদ্য কুড়িতে পা দিয়েছি কি দেই নি।

.

প্রথম রাতেই তুমি আমাকে দেখে খাটের নিচে গিয়ে লুকিয়েছিলে...

আম্মাকে ডেকে ডেকে সেকি কান্না.....

আমার খুব হাসি পেয়েছিল সেদিন।

.

.

এরপর থেকে তুমি আম্মার ঘরেই ঘুমাতে..

মাঝে মাঝে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার জানলায় উঁকি দিতাম...চেয়ে দেখতাম মায়াভরা একটা বালিকাবধূর মুখ।

সেদিন হয়তো বুঝতাম না ভালোবাসা কি...তবে তোমায় দেখে বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে উঠতো...।

.

.

তোমার মনে আছে, আমাদের বাড়ির বাগানের প্রত্যেকটা আম গাছে তুমি চড়ে বেড়াতে...

আম পেড়ে আম্মার কাছে জমা রাখতে।

নেয়ার সময় একটা কম হলে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে। ফুঁপাতে ফুঁপাতে যখন আব্বার কাছে নালিশ করতে তখন চোখ, নাক লাল হয়ে যেতো....

.

তখন যে তোমাকে কি অপরূপ লাগতো!!!

আমি সে সৌন্দর্য দেখতাম আর মুচকি মুচকি হাসতাম।

সে হাসি যদি তুমি একটু খানি টের পেতে তাহলে আর রক্ষা নেই...

.

.

তোমার ছেলেমানুষি আর খুনশুটিতে আমার বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ মেতে থাকতো।

.

আর আমি দূর থেকে দেখতাম ছোট্ট একটা বধূ। যার চোখে মুখে উপচে পড়ছে আনন্দের ঝিলিক।

.

.

তোমার মনে পড়ে, সেদিন আমার ঘরে এসে তুমি মেলায় যাওয়ার বায়না করেছিলে.....কত করে বুঝিয়ে ছিলাম বাড়ির বউরা মেলায় যায় না...

কিন্তু তোমার কাছে আমার হার মানতেই হয়েছিলো.....

.

.

মেলায় মানুষের পা লেগে এতো কাদা ছিলো যে তুমি হাঁটতেই পারছিলে না।

তাই পুরো মেলা তোমাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হয়েছিলো...।

.

.

সামান্য টিপ,,, চুড়ি,,আর মাটির কয়েকটা পুতুল তোমাকে যে খুশি করেছিলো....

সে খুশির কলরবে আমার পুরো বাড়ি মুখোরিত হয়েছিলো।

.

.

আমিও তোমার অজান্তেই এক জোড়া নূপূর কিনেছিলাম,তোমাকে দেবো বলে।

যেদিন নূপূরগুলো তোমার পায়ে পড়িয়ে দিয়েছিলাম তুমি খুশিতে ছুটে ছুটে সবাইকে দেখাচ্ছিলে...

.

আমি তোমার নূপূরের প্রত্যেকটা ধ্বনি শুনছিলাম আর শিহরনে হারিয়ে যাচ্ছিলাম অন্য কোন এক জগতে.....।

.

.

.

হঠাৎ একটা ঝড়ে যেন সবকিছু বদলে গেলো...

আম্মা মারা গেলেন। বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এলো।

.

.

এই শোক যেনো বদলে দিয়ে গেলো তোমাকে। তুমি চুপচাপ হয়ে গেলে...

আস্তে আস্তে বুঝতে শিখলে আমি তোমার স্বামী আর এইটা তোমার শ্বশুরবাড়ি।

.

.

.

সবাইকে অবাক করে তুমিই বাড়ির হাল ধরলে...আস্তে আস্তে আম্মার শূন্যতাটা কেটে যেতে লাগলো।

.

.

সবাই ভুলতে পারলেও তুমি পারোনি আমি জানতাম।

যখন সে শূন্যতা তোমায় ঘিরে ধরতো তখন তুমি আমার বুকে মুখ লুকাতে।

.

.

আম্মা বুঝি চুপিচুপি তোমাকে তার পরের আস্রয়টার ঠিকানা দিয়ে গেছে।

আমিও নিরব ভাষায় তোমাকে সান্তনা দিতাম।

কেউ না বুঝলেও তুমি ঠিকি বুঝতে পারতে।

.

.

.

আমি আজো বুঝতে পারি না.... এই ছোট্ট তুমি আমাকে পড়তে পড়তে কি করে মুখস্ত কিরে ফেল্লে.....!!!

আমার প্রত্যেক ইন্দ্রিয়তে তোমার ভালোবাসার পরশ মাখিয়ে দিলে....!!!

আমার প্রত্যেকটা প্রয়োজনে তুমি মিশে গেলে.........!!!

কি করে পারলে.....???

.

.

.

বাড়ির মানুষগুলো যেন তুমি বলতেই নিশ্চিন্ত....

.

.

চোখের সামনে তুমি নামের কিশোরীটা নারীতে রূপ নিলো...তা যেন কয়েকটা মুহূর্তের ব্যবধানে...।

.

যে মেয়েটা একটা পুতুল ভেঙে গেলে পা ছাড়িয়ে কাঁদতো সে আজ দেখতে দেখতে তিন পুত্রের জননী......।

.

.

.

সব কিছু ভালোই যাচ্ছিলো...কিন্তু কি যে এক কালাজ্বর আসলো.... তোমাকে একেবারে নিয়ে চলে গেলো।

কোথায় যে নিয়ে চলে গেলো আমি আর পেলাম না।

.

.

.

আমার সারা বাড়ি শ্মশান হয়ে গেলো।

সবাই কাঁদলো... ... চাকর বাকর সহ কাঁদলো কিন্তু কাঁদতে পারলাম না আমি..

.

.

.

কারন তোমাকে দেয়া শেষ কথাগুলো তো আমায় রাখতে হবে।

ভেঙে পড়লে চলবে কি করে।

কাঁদলেও কাঁদতে হবে লুকিয়ে....ওরা দেখলে তো আরো ভেঙে পড়বে...

.

.

.

তুমি বলেছিলে,,,তোমার সাধের সংসার যেনো তুমি না থাকলেও এমনি থাকে....

আমি এমনি রেখেছি,,,প্রান দিয়ে আগলে রেখেছি তোমার সংসার।

.

.

.

তুমি বলেছিলে,,, তোমার সন্তানদের যেনো মানুষের মতো মানুষ করি..

তাও করেছি.......

.

.

.

সব ভাবলে কিন্তু আমার কথা ভাবো নি..

আমাকে একা রেখে চলে গেলে.....

.

.

জানো রেনু,,, আজো এ সংসারের প্রত্যেকটা দেয়ালে তোমার গন্ধ লেগে আছে.....

.

.

সব করেছি,, কিন্তু তুমি হারানোর যন্ত্রনায় যখন জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গেছি তখন ডুকরে,, হাতরে মনের আগুন নেভাতে পারি নি......

.

আমি যদি ভেঙে পড়তাম তোমার কথা রাখতাম কি করে???

.

.

.

তাই অন্ধকারে খুব লুকিয়ে দূরের কোন তারকায় তোমায় খোঁজে খোঁজে চোখ থেকে কত শত জল যে গড়িয়ে গেছে....

তার হিসেব মেলাতে মেলাতে আজ আমি ক্লান্ত...।

.

.

.

আমি বড্ড ক্লান্ত।যে ক্লান্তিতে চামড়ায় ভাঁজ পরে গেছে।আর চলতে পারি না...

.

.

.

জানো রেনু,,, আমি বুড়ো হয়ে গেছি।

আয়নায় মাঝে মাঝে দেখি আমার সাদা চুল দাড়ির মধ্যে এখনো কোন কাঁচা দাড়ি বেঁচে আছে কিনা....

.

কিন্তু পাই না.....

.

.

আজ যদি তুমি থাকতে,,, তোমার চুলেও পাঁক ধরতো...

কেমন লাগতো তখন তোমায়???

খুব ইচ্ছে করে জানতে....

.

.

তাই চোখ বন্ধ করে আঁকতে চেষ্টা করি তোমার সে ছবি......

কিন্তু ভেসে উঠে..."এক বালিকা বধূয়ার চিত্র "........😥

.

.

.

বালিকা_বধূয়া🤍

সমাপ্ত