বাবাকে নিয়ে স্ট্যাটাস | বাবা মানে হাজার বিকেল

 মা বাবাকে নিয়ে স্ট্যাটাস

মা বাবাকে নিয়ে স্ট্যাটাস

মা , আমাকে পাঁচশো টাকা দাও তাহলে তোমাকে বাবার সম্পর্কে একটা গোপন কথা বলবো।


মা আমার কথা শুনে খুশিতে গদগদ করতে করতে বললো,


- পাঁচশো না, তোকে এক হাজার টাকা দেবো। তার আগে বল কি গোপন কথা বলবি?


- আগে দাও তারপর বলছি। খুব গোপন কথা মা। তুমি শুনলে টাসকি খেয়ে যাবে। 


মা আমার, আলমিরা থেকে তার ব্যাগটা বের করে এক হাজার টাকার একটা নতুন নোট বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো,


- বল বাবা বল কি গোপন কথা? 


- মা, তুমি তো বাবাকে খুব ভালোবাসো তাই না?


- এটা কি আবার জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি?


- হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি জানি তুমি বাবাকে খুব ভালোবাসো। এজন্যই আমাকে ভালোবাসো না। 


এই কথা শুনতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,


- আমি তোকে আর তোর বাবাকে দুইজনকেই খুব ভালোবাসি। এবার বল গোপন কথাটা কি?


- মা, তুমি মনে হয় জানো না, বাবা আজকাল গার্লস কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে!


- সে কি রে! কেন দাঁড়িয়ে থাকে?


- বাবা মনে হয় তার মেয়ের বয়সী কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছে! নাহলে প্রতিদিন গার্লস কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি?


- তুই কি শিওর?


- হ্যাঁ মা, আমি পুরপুরি শিওর। ওই কলেজেরই একটা মেয়ের পিছেও কয়েকদিন যেতে দেখেছি বাবাকে। তুমি হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবে না!


- না না, আমি বিশ্বাস করেছি।


- শুধু কি তাই! বাবা আজকাল ওই মেয়েকে গিফটও দেয়। অথচ তুমি কিছু কিনে আনতে বললে বলে টাকা নেই! এটা কোনো কথা মা? দেখেছো বাবা কতো বড় লুচ্চা! ঘরে বউ থাকতেও নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে! 


- তুই দাঁড়া আমি ভিতর থেকে ঝাড়ুটা নিয়ে আসি। আজকে খবর আছে। তলে তলে এসব করে বেড়ায়!


মা ভিতরে গেল ঝাড়ু আনতে। আজকে মনে হয় বাবার খেল খতম করে ছাড়বে। বাবার কথা মনে করতেই কষ্ট লাগছে। বেচারা বাবার আজ কি হবে কে জানে! 


ভিতর থেকে ঝাড়ু হাতে বের হয়ে আসলো। আমার সামনে এসেই,


- হারামির বাচ্চা কোথাকার। টাকা লাগবে সেটা ভালো করে বললেই পারতি। বাবার নামে কেউ এইধরনের নোংরা কথা বলে! আজকে তোকে মেরেই ফেলবো। 


কথাগুলো বলেই ঝাড়ু দিয়ে উরাধুরা বাড়ি শুরু করলো আমাকে। মনে হচ্ছে পিঠে ঝাড়ুর বাড়ি না, কোনো দানব এসে আছাড় দিচ্ছে আমাকে। একেকটা বাড়ি পাঁচশো টনের চেয়েও বেশি ওজন হবে। শরীরের কোনো অংশ বাদ রাখলো না। সবখানেই কমবেশি ঝাড়ু দিয়ে পেটালো, মা। মেরে টেরে এক হাজার টাকাও রেখে দিলো। উপায় না পেয়ে দৌড়ে পালালাম। বাসা থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তায়। এমন পেটানোই পিটিয়েছে বাপরে। ব্যাথায় হাত-পা নাড়াতে পারছি না। ঝাড়ুর বাড়িতে এতো ব্যাথা আগে জানতাম না। 


মায়ের পিটানি খেয়ে বাসার সামনে একটা খালি জায়গায় গাছের নিচে বসে আছি। বসে বসে মোবাইল টিপছিলাম, হুট করে কেউ জিজ্ঞেস করলো,


- অভি, এই ভরদুপুর বেলা এখানে বসে বসে মোবাইল টিপছিস কেন? বাসায় চল। 


কথাটা আমার বাবা বলেছে। বাবাকে দেখেই বসতে বললাম আমার পাশে। বাবা আমার পাশে বসলো। কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর এসেছে কি-না! তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো, 


- এভাবে এখানে বসে আছিস কেন? বাসায় চল।


- বাসায় গেলে মা আজকে আমাকে মেরে ফেলবে।


- কেন, আবার কী আকাম করেছিস?


- তোমার নামে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলেছি। কিন্তু গুছিয়ে না বলার জন্য ধরা খেয়ে গেছি।


- কী মিথ্যে বলেছিস?


- বলেছি তুমি গার্লস কলেজের সামনে গিয়ে নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের সাথে প্রেম করো। 


- হা হা হা, ভালোই করেছিস। টাকা লাগবে তাই না?


- তুমি এতো ভালো কেন বাবা? না বলতেই বুঝে গেলে আমার টাকা প্রয়োজন। আর এতো বিশ্রী মিথ্যা বলার জন্য তোমার রাগ লাগছে না?


- মোটেই না। আমার ছেলে আমার নামে মিথ্যা বলেছে। অন্য কেউ তো বলেনি। রাগের কি আছে?


জড়িয়ে ধরলাম বাবাকে। বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, 


- কি করবি টাকা দিয়ে? 


- বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবো কক্সবাজার। 


- কতো টাকা লাগবে?


- পাঁচশো। 


- আবার মিথ্যে বলছিস। পাঁচশো টাকা দিয়ে কেউ কক্সবাজার যেতে পারে? 


- বাদবাকি আমার কাছেই আছে বাবা। পাঁচশো টাকা হলেই হয়ে যাবে। 


বাবা আমাকে দুই হাজার টাকা দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,


- ওইখানে গেলে অনেক বাড়তি খরচ হয়ে যায়। মেপে টাকা নিয়ে গেলে হয় না। এগুলো দিয়ে হালকা পাতলা খরচ করিস। আর সিগারেট খেলে কিন্তু তোর মাকে দিয়ে আবারো মার খাওয়াবো। 


আবার জড়িয়ে ধরলাম বাবাকে। আসলেই বাবা'রা খুব ভালো হয়। কেন এতো ভালো হয় জানি না। হয়তো আল্লাহ প্রদত্ত একটা নেয়ামত এটা। সব বাবাদের মনে হয় আল্লাহ এভাবেই সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। 


সমাপ্ত। 


গল্পঃ বাবা