বেকার ছেলের কষ্টের গল্প | বেকার ছেলেদের স্ট্যাটাস

বেকার জীবনের স্ট্যাটাস|বেকার জীবনের গল্প । শিক্ষিত বেকার

 সত্য ঘটনা অবলম্বন। এক ভাইয়ের জীবন থেকে নেওয়া।


"শুধু ডাল দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না। একটা ডিম ভেজে দেও না আম্মা।"


"ডিম ঘরে বসে শুধু জন্ম হয় নাকি? সুয়ে বসে তো তিন-বেলা শুধু বাপের ঘাঁ'ড়ে বসে খাচ্ছিস। আবার মজা না হলে গলা দিয়ে খাবার নামে না। নবাব'জা'দা জন্ম হয়েছে ঘরে!

অ'ক'র্মা! এতো বড় হয়েছে তাও কোনো কাজে খাঁ*টে না!"


বেকার ছেলের একটা ডিমের আবদারের বিপরীতে মা এতো গুলো কথা শুনিয়ে, রাগে গজগজ করতে করতে জায়গা ত্যাগ করলো। খাবার টেবিলে মায়ের এমন কথা শুনে খাবার গলা দিয়ে নামলো না অভির। ভাতের প্লেটটা রেখে হাত ধুয়ে ফেললো।

মা চাইলে ভালো ভাবেই বলতে পারতো "ডিম নেই"।

আজ সে বেকার বলে উঠতে বসতে মুখের উপরে খাবারের খোঁটাও শুনতে হচ্ছে। নিজেকে আজকাল একটা বো'ঝা মনে হচ্ছে।

ভারি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো ছেলেটা।

.

রাত পেরিয়ে সকাল হলো কেউ একটিবার খেতে ডাকেনি তাকে। এক বুক চা" পা কষ্ট নিয়ে না খেয়েই চলে গেলো টিউশনি করাতে। এটা দিয়েই হাত খরচ চালায় ছেলেটা।


আজ চাকরি ওয়ালা বড় ছেলে বাড়িতে এসেছে। 

যে ঘরে বেকার ছেলের জন্য একটা ডিম ছিলো না, সেই ঘরে আজ বাহারী আয়োজন করছে মা। দুপুরে বড় ছেলেকে যত্ন করে খেতে দিলো। ওই সময় অভিও এসেছে বাড়িতে। মা তাকে একটি বার এখন অবধি খেতে ডাকলো না। 

 পেটের ক্ষুধা জানে, এক প্লেট ভাতের জন্য কত ক*টু কথা সহ্য করে নিতে হয়।

অভিও সকল কষ্ট চা*পা রেখে নির্লজ্জের মতো ভাইয়ের পাশে এসে খেতে বসলো। মা - ভাই বোধহয় একটু বিরক্ত হলো তার আগমনে।

মা দুই ছেলেকে ভাত দিলো, তবে বড়-বড় মাছ মাংসের টুকরো গুলো চাকরি ওয়ালা ছেলের থালাতেই উঠলো।

অভি মাথা নিচু করে এক থালা কথা নামক খাবার হজম করছে। আর সেই ফাঁকে মা বড় ছেলের ভাতের নিচে বড়সড় কয়েকটা চিংড়ী ও গুঁজে দিলো। যা চোখ এড়ালো না অভির। কে বললো, বাবা-মায়ের ভালোবাসা সব সন্তানের জন্য সমান। এই যে মায়ের ভালোবাসায় ও কত ব্যবধান! এই কষ্ট গুলো না কাউকে বলা যায় আর না সহ্য করা যায়।

 আজ তার ও একটা চাকরি হলে, মা তাকেও নিশ্চয়ই এভাবে এ'ক্স'টা খা'তি'র- য'ত্ন নিতো। কথায় কথায় ম*ন্দ বলতো না। হঠাৎ চোখের কোণে দু'ফোঁটা জল চিকচিক করছে ছেলেটার। সাথে সাথে খুব গোপনে তা লুকিয়ে প্লেটের খাবারটা চুপচাপ খেয়ে নিলো। 


 বিষন্ন মনটায় নিয়ে অভি সুয়েছে খানিকক্ষণ। এরিমধ্য মুঠোফোনটা বেজে উঠলো। "অনু" কল দিয়েছে। ভালোবাসার মানুষটির নামটা দেখে মুখে হাসি ফুটলো অভির। রিসিভড করার সাথে সাথে অনু ব্যস্ত কন্ঠে বললো,


"অভি তোমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছি বিকেল চারটায়। আমি নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো,জরুরী কথা আছে।"


অভির হাসি মুখটা চুপসে গেলো। পকেটটা একেবারে শূন্য। টিউশনির বেতন পেতে আরো দশদিন বাকি। নিজের কাছে গাড়ি ভা'ড়া'টা' ও নেই আজ। তবুও মৃদু হেসে অনু'কে বললো, 


"আচ্ছা ঠিকাচ্ছে। আমি আসছি।"

.

অভি সাথে সাথে রেডি হয়ে নিলো। ভয়ে ভয়ে বাবার রুমে গিয়ে ভিত কণ্ঠে বললো, 


"আব্বা?"


"হ ক'ন সাহেব। গায়ে বাতাস লাগাইতে যাচ্ছেন বুঝি?"


বাবা'র ঠে'শ মা'রা কথা গায়ে মাখলো না অভি। বরং অনুনয় করে বললো, 


"আমায় একশত টাকা দিবেন আব্বা? খুব আর্জেন্ট দরকার।"


"টাকা তো গাছের ধরে আর তোরে ছিঁ'ড়ে ছিঁ'ড়ে দিমু। নিজে কামাই করতে পারোস না? মানষের ছোট ছোট পো'লা-'পা'ন ও কত টাকা কা'মা'য়, পুরো সংসার চালায়। আর এতো বড় দা*ম*ড়া হয়েও বাপের কাছে টাকা চাও। এ্যাই লজ্জা করে না তোর?

তুই সারাদিন গায়ে বাতাস লাগাইয়া বেড়াবি আর তোরে নিত্য টাকা দিমু আমি? 

অনেক তো বসাইয়া বসাইয়া খাওয়াইছি আর না। আমার সোজা-সাপটা কথা শোন? তোরে এতো পকট খরচ দিতে পারমু না আমি। এখন থেকে নিজে নিজে কামাই করে খা, না পারলে আমার ঘর থেকে বাহির হইয়া যা।এতো ঝামেলা সহ্য হয় না আমার। তুই চোখের সামনে দিয়ে দূর হ।"


বাবা'র এতো গুলা কথা শুনে বুকটা মো'চ'ড় দিয়ে উঠলো ছেলেটার। ভারি কয়টা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিঃশব্দে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। এদিকে অনু বারবার কল দিয়ে তা*ড়া দিচ্ছে। 

নিজেকে সামলে নিলো অভি, বাগান থেকে প্রিয়তমা'র জন্য একটি গোলাপ ছিঁ*ড়ে নিলো বুক পকেটে। অতঃপর পায়ে হেঁটেই গেলো যথার্থ জায়গায়। অনু আগেই এসে বসে আছে। অভি'কে দেখে উঠে দাঁড়ালো, বিরক্ত কণ্ঠে বললো, 


"এতো দেরী করলে যে? জানো কতক্ষণ ধরে বসে আছি আমি।"


"স্যরি! স্যরি আমার অনুরাগী! রাগ করো না প্লিজ! একটু ঝা..।


"হয়েছে চুপ থাকো। নিশ্চয়ই টাকা ছিলো না পায়ে হেঁটে এসেছো।"

 

অভি মাথা নিচু করে ফেললো। অনু তার হাতে একটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো, 


"সারপ্রাইজ!"


"কি এটা অনু? কিসের কার্ড!"


"আমার বিয়ে'র, ফাস্ট তোমাকেই দিলাম। এসো কিন্তু। "


"মা.. মানে কি বলছো অনু?"


"সত্যিই বলছি।"


অভি কাঁপা কাঁপা হাতে কার্ডটি খুলে দেখে নিলো। তার বুকের বাঁ-পাশটায় চিনচিন ব্যাথা করছে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জানতে চাইলো,


"তিনটা বছরের সম্পর্কের তবে আজই ইতিকথা অনু?"


"হ্যাঁ।"


"আচ্ছা ভালোবাসতে না আমায় কখনো? তুমি এতো স্বাভাবিক, কষ্ট হচ্ছে না তোমার অনু? কি করে পারবে আমি ছাড়া, অন্য কাউকে বিয়ে করতে? প্লিজ এমন করো না অনু! বলো এসব মিথ্যে? আমি তোমায় ভালোবাসি অনু! তোমায় ছাড়া কি করে থাকবো আমি বলো?"


"দেখো আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। কমতো অপেক্ষা করিনি তোমার জন্য। আমি আর বাবা-মা'কে কষ্ট দিতে পারবো না। চললাম।"


"আমার হয়ে থেকে যাও না অনু!"


"রাখতে পারবে তুম?"


"আমাকে আর কয়েকটি দিন সময় দেও না প্লিজ।"


"রাখতে জানলে এক্ষুনি না হয় আঁটকিয়ো ও না অভি।"


অভি হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো মাটিতে। কি করে আগলে রাখবে নিজের ভালোবাসা। সে তো নিজেই বেকার। বাসায় নিজেরই জায়গা হয় না, তার উপরে অন্য কেউ তো নয়ই। অতঃপর মনের বিরুদ্ধে গিয়ে মাথা নিচু করেই বলতে হলো,


"স্যরি অনুরাগী! তোমাকে রাখার সাধ্য যে আমার নেই। চলে যাও। তবে, সুখী হও স্বামীর ঘরে ! ভালো থেকো আমার না হওয়া প্রিয়তমা! বিদায় আমার অনুরাগী!"


অতঃপর তিন বছরের ভালোবাসা'র দা'ফ'ন হলো বেকারত্বের কারণে। এভাবে প্রতিনিয়ত হাজারো বেকার ছেলে হারায় তার প্রিয়তমা।

 অভি টলতে টলতে নদীর কিনারায় বসে পড়লো। নিজেকে পা'গল পা"গ"ল লাগছে। প্রিয় হারানো'র য'ন্ত্র'ণা এতো তীব্র কেনো? এতো ব্যথা কেনো? এইতো মনে হচ্ছে এই বুঝি দ'মটা বেরিয়ে যাবে তার। বুকের বাঁ-পাশটা ঝ'ল'সে যাচ্ছে ছেলেটার। চোখ দিয়ে ঝড়ছে নিরব অশ্রু। বেকারদের এই নিরব অশ্রু লোকচক্ষু'র আড়ালেই রয়ে যায়।

 আহ! বুক পকেটে'র শখের গোলপটা আর দেওয়া হলো না প্রিয়তমা'কে। অভি উঠে দাঁড়ালো। নদীর জলে ছুঁড়ে ফেললো গোলাপটা। অতঃপর বিড়বিড় করে বললো, 


"বেকারত্বের মানেই হলো,রোজ হাজারো স্বপ্নের ব'লি'দা'ন! 

বেকারত্বের মানেই হলো, রোজ বা'স্ত'ব'তা'র অ'ন'লে পো*ড়া!

বেকারত্বে'র মানেই হলো, জ্যা*ন্ত কতগুলো লা*শ!

বেকারত্বে'র মানেই হলো, জীবনের খাওয়া সেরা বাঁ*শ!"


~সমাপ্ত 


অণুগল্পঃ বেকারত্বের আত্মকথন

লেখনীতেঃ সুমাইয়া আফরিন ঐশী 

বেকার ছেলে পরিবারের বোঝা

[ আচ্ছা শুনুন? ওই যে আপনাদের বাসায় যে বেকার ছেলেটা আছে না? যাকে সারাদিন বাসা থেকে বের করেন, খাবারের খোঁ'টা দেন।

হ্যাঁ তার কথাই বলছি। বিশ্বাস করেন, এই মানুষ গুলো ভিতরে ভিতরে প্রতিনিয়ত এমনিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এদের'কে কথা'র আ'ঘা'তে প্রতিনিয়ত কষ্ট না দিয়ে, তাদের বো'ঝা না মনে করে, বরং এদের পাশে থেকে মনোবল মজবুত করতে সাহায্য করুন। পারলে একটা কাজ জোগাড় করে দিন। মানসিক শান্তি দিন। এদের ও একটু বুঝার চেষ্টা করুন। শুনুন? একটা পরিবার থেকে মানসিক সাপোর্ট পেলে একটা মানুষ সারা বিশ্ব'কে জয় করতে পারে।

 আচ্ছা, এরা তো আর এমনিতে বেকার থাকছেনা তাই না? জানেনই তো, এই শহরে আজকাল চাকরির বড়ই অভাব।"]