না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প | ভালো বাসার কষ্টের গল্প

 ভালোবাসার কষ্টের গল্প

ভালোবাসার কষ্টের গল্প

মিলি আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো, " আবিদ আমারও মা হতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু এই বা/জে অবস্থায় তা আর কি করে সম্ভব বলো?"


- এসব ভাবতে হবে না। তুমি ড্র/য়া/র থেকে ঔষধ নিয়ে আসো। খেয়ে ঘুমাই।


- আবিদ ভালোবাসা যেমন সুন্দর, ভালোবাসার শেষটা আরো হাজার গু/ন কষ্টের।


- ঔষধ নিয়ে পাশে এসে শোও।


ঔষধ আমার হাতে দিয়ে মিলি আমার মাথার কাছে এসে বসলো। মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কপালটা চেপে দিচ্ছে। আমার মুখের দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে। আমি হেসে দিয়ে মিলিকে বললাম..


- আমাদের বাচ্চা তোমার কোলে আসলে এমন আদর কি করতে পারতে? বাচ্চা নিয়েই থাকতে। আমার ভালোবাসায় ভা/গ বসাতো। আমার দিকে তোমার খেয়াল'ই থাকতো না।


- আচ্ছা শোনো না, আমি কি আমার বাবা মাকে আসতে বলবো? অনেকদিন হলো তাদের দেখি না।


- আরে নাহ, এসবের কি দরকার। এভাবেই ভালো আছি। 


মিলির মনটা হঠাৎ করে খা/রা/প হয়ে গেলো। মিলির বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ নেই প্রায় দুই বছর। আমরা ভালোবেসে পরিবারের বি/রু/দ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছি।

মিলির বাবা আমার বড় মামা হন। আমার বাবা প্র/চ/ন্ড রাগী মানুষ তার চেয়ে বড় কথা হলো তার কাছে আগে সন্মান। আমরা বিয়ে করলে নাকি তাদের মান সন্মান ন/ষ্ট হয়ে যাবে। সেই জন্য তাদের কাছ থেকে আমরা দুজন মানুষ অনেক দূরে।


যদিও পালিয়ে বিয়ে করার আগে থেকেই আমি ভালো একটা কো/ম্পানি/তে চাকরি করেছি। যার কারণে বেশি বে/গ পেতে হয়নি। বিয়ে করেই আলাদা বাসা নিয়ে দুজনে থাকছি। হয়তো বাবা মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে আছি। কিন্তু আমাদের দুজনের একেঅপরের ভালোবাসা একটুও কমেনি। বরং অনেক বেড়েছে। 


আমার মা মাঝে মাঝে আমার সাথে যোগাযোগ করে। কান্নাকাটি করে। ছোট বোনটাও বায়না ধরে ওর কাছে যেতে। কিন্তু বাসায় গেলে বাবা তো মেনেই নিবে না। বরং আমি এবং মিলি দুজনেই বি/পদে পড়ে যাবো।


আর তাছাড়া যেখানে বাবা তার সন্মানের জন্য আমাদের মেনে নেয়নি, আর একটাবার ফোনও দিতে পারলো না, সেখানে তার সন্মান নিয়েই থাকুক। আমার মত সন্তান দিয়ে আর কি হবে। ভালোবেসে বিয়ে করাটা তার কাছে খুবই খা/রা/প। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে অনেক রিকোয়েস্ট করেছি। মামা এবং বাবার পা ধরেছি আমি আর মিলি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি।


কয়েকদিন ধরে মা এবং ছোট বোনের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। ইচ্ছা করেই ফোন অফ করে রেখেছি। তাদের সাথে কথা বললে কষ্ট অনেক বেড়ে যায়। সন্তানদের মায়ের প্রতি মায়া,টান থাকবে স্বাভাবিক। যে মায়ের হাতে খাবার না খেলে পেট ভরতো না। সেই মাকে ছাড়া আজ কতদূরে আছি। কতদিন দেখিনা তাদের। 


মিলি হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। সমস্ত ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে দিলো। আমি মিলির হাতটা ধরলাম। কি জবাব দিবো বুঝে উঠতে পারছি না। ক্র/মা/ন্ব/য়ে মিলির কান্না বেড়েই চলছে। আমি ওর হাতটা ধরলাম...


- মিলি তুমি যদি এমন করো এতে তো আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাবো। যেখানে তুমি আমাকে সাহস দিবে সেখানে তুমি আমাকে ভে/ঙে দিচ্ছো। এটা কি ঠিক?


- আবিদ তুমি ছাড়া আমার কেউ নাই। সেখানে তোমার এই অবস্থায় আমি কিভাবে ঠিক থাকি বলো?


- আল্লাহের উপরে ভরসা রাখো। আর আমার জন্য দোয়া করো। দেখবে একদিন ঠিকই স্বাভাবিক হয়ে উঠবো।


- হুম।


মিলি আমার জন্য প্রায়ই নামাজ পড়ে দোয়া করে। মিলির আল্লাহের কাছে একটাই চাওয়া। তা হলো আমাকে ওর জীবনে সারাজীবনের জন্য রাখা। সুস্থ্য স্বাভাবিক হয়ে যেনো উঠতে পারি। 


কিন্তু বিধাতা হয়তো তা চায়নি। বিচ্ছেদ কপালে লিখে রাখছিলাম। তিনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন। হয়তো মিলির জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে নয়তো খা/রা/প।


হাসিখুশিতে থাকতে থাকতে দেহে কখন যে

ম/র/ণব্যা/ধি রোগ বাধিয়ে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।


হঠাৎ করে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিছুদিন বাসায় বসে রেস্ট নিচ্ছিলাম, আর ফার্মেসী থেকে ঔষধ এনে খাচ্ছিলাম। কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং আস্তে আস্তে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছি। শেষমেশ বাধ্য হলাম মেডিকেলে যেতে। ডাক্তার চেকাপ করে বললেন ভালো কোনো মেডিকেলে যেতে। ক্লিয়ারলি কিছুই বললেন না। শুধু বললেন খুবই তাড়াতাড়ি ভালো কোথাও যেতে। তখন আমার শারীরিক ক/ন্ডি/শন আরো খারাপ। 


একটা ব্যাংকে আমরা কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম ভবিষ্যতের চিন্তা করে। আমাদের সন্তানের কথা চিন্তা করে। কথায় আছে ভাগ্য কোনদিকে টা/র্ন করবে কেউই বলতে পারবে না। সব মিলিয়ে দেড়লাখ টাকার মত ম্যানেজ করলো মিলি। ভালো মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরে ডাক্তার জানিয়ে দিলো আমার লিভার ড্যা/মেজ। এবং শেষ স্টেজে গিয়ে পৌঁছেছে। এখান থেকে আর ব্যাক করার সময় নেই। 

মেডিকেলে ভর্তী হলাম। 


মিলি চেয়েছিলো আমাদের দুই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে এবং জানাতে। আমি না করে দিয়েছি। যেখানে আমাদের কোনো মূল্য দেয়নি,সেখানে এই সময়ে এসে কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করছি না। আমার মত সন্তান ম/রে গেলে তাদের কিছুই হবে না। আমার নিষেধ করায় মিলি আর যোগাযোগ করলো না।


আমার হাতে আর সময় নেই। অল্প সময় এই পৃথিবীতে আছি। যতটুকু সময় আছে ততটুকু সময়ে মিলিকেই পাশে চাই। 


আমার খুব বাঁচতে ইচ্ছা করছে। ফুটফুটে সন্তানের বাবা হতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু তা আর সম্ভব না। আমার যতটা কষ্ট হচ্ছে তা মিলিকে একটুও বুঝতে দেই না। মিলির জন্য দোয়া করছি ও যেনো ভালো থাকতে পারে। স্মৃতিগুলো সহজেই যেনো ভুলে যেতে পারে।

গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু না গল্পটা এখানেই নতুন করে শুরু হচ্ছে। একটা ভালোবাসার গল্প, একটা সুখে থাকার গল্প। আবিদের লিখে যাওয়া ডায়েরি থেকে এতক্ষণ পড়লাম ওর ভালোবাসার গল্প। 


আবিদ পৃথিবী থেকে চলে গেলো। এম্বু/লে/ন্স

সা/ই/রেন বাজিয়ে আবিদদের বাসার গেইট থেকে ঢুকলো। সাইরেনের শব্দ পেয়ে সবাই ভীড় করে ফেললো। গাড়ি থেকে দুইটা লোক সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা লাশ উঠানে নামিয়ে রাখলো। আবিদের বাবা হেটে এসে সামনে দাঁড়ালো। কার লা/শ এখন পর্যন্ত কেউই শিওর না।

একটু পরে আরেকটা লা/শ নিয়ে আবিদের পাশে রাখা হলো। হ্যা পরেরটা মিলির লা/শ। আবিদের চলে যাওয়া মিলি মেনে নিতে না পেরে হস্পিটালে বসেই হার্ট অ্যাটাক করে কিছুক্ষণের মধ্যে প্রানটা চলে গেলো।


অল্প সময়ের মধ্যে একটা ভালোবাসার গল্প সমাপ্তি ঘটলো। ভালোবাসা ভালোবাসাকেই কেড়ে নেয়। হস্পিটালে এড/মি/ট করার সময় আবিদের বাবার বাড়ির ঠিকানা দেওয়া ছিলো। সেখান থেকেই লা/শ নিয়ে আসছে।


দুজনের মাথার কাছে ডায়েরিটা রেখে হস্পিটালে মানুষ চলে গেলো সব বুঝিয়ে দিয়ে। 


দুইটা লাশ কবরে পাশাপাশি শুয়ে আছে। ডায়েরি শেষ পাতায় কয়েকটা লাইন আবিদ লিখে রেখেছিলো।


" ভালোবাসা পেয়েছি এবং ভালোবাসা হারিয়েছি। সব ভালোবাসার শেষটা সুন্দর হয় না। কারো কারো জন্য ভ/য়ং/কর বেদনারও হয়ে থাকে। তবে পরিবারের ভালোবাসাটা আসলেই অনেক সুন্দর ছিলো। যে ভালোবাসা সন্মানের কাছে ভি/ত্তি/হীন। ভালোবাসা সুন্দর। ভ/য়ং/কর সুন্দর। মিলির আবিদ হয়েই থেকে গেলাম।"

-সমাপ্ত

মিলির_আবিদ

লেখাঃ Md. Nazmul Huda