স্বামী স্ত্রীর বাসর রাতের গল্প
রাত ১১ টা বাজে।আমি সোফার এককোণে চুপ করে বসে আছি। একটু পর খেয়াল করলাম ভাবী কি যেন কাজ করছে। আমি ভাবীকে ইশারা করলাম কাছে আসার জন্য। ভাবী কাছে আসতেই আমি আস্তে করে ভাবীকে বললাম,
-- ভাবী প্লিজ, সবাইকে বলো না একটু রুম থেকে বের হয়ে যেতে।
ভাবী মুচকি হেসে বললো
~সবে বাজে ১১ টা। তোমার ভাইকে তো আমার কাছে পাঠিয়েছিলে রাত ২ টার পরে। এখন বুঝতে পারছো বেচারার কত কষ্ট হয়েছিলো?
একটু ধৈর্য ধরো ব্যবস্থা করছি।
একটু পর আমার বন্ধু আমার হাতে লুকিয়ে একটা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে বললো,
~ দোস্ত সব ফার্মেসি বন্ধ হয়ে গেছে তাই পাশের মুদি দোকান থেকে এই পলিথিনটা এনেছি। আপাতত আজকের রাতটা পলিথিন দিয়ে কাজ চালা...
বন্ধুদের এমন ফাইজলামিতে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।আজ আমার বাসর রাত। এমনিতেই খুব চাপে আছি। বুঝতে পারছি না কিভাবে কি শুরু করবো। আমার বিবাহিত কয়েকজন বন্ধু আমায় নানা ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে। আর ওদের এইসব কথা বার্তা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে...
রুমে ঢুকে দেখি শ্রাবণী(আমার স্ত্রী) জানালার গ্রীল ধরে বাহিরে তাকিয়ে আছে। আমি রুমে ঢুকেছি সেদিকে ওর খেয়াল নেই। আমি একটু হালকা কাশি দিলাম। আমার কাশি শুনে শ্রাবণী দৌড়ে খাটের অপর উঠে মাথায় ঘোমটা দিলো তারপর কি একটা মনে করে আমার কাছে এসে সমানে সালাম করতে লাগলো। তারপর কি একটা চিন্তা করে টেবিলের পাশে রাখা গরম দুধ অর্ধেকটা খেয়ে আমায় দিলো বাকিটা খেতে। তাড়াহুড়ো করে দিতে গিয়ে দুধ আমার পাঞ্জাবিতে ফেলে দিলো। আমি পাঞ্জাবি পরিষ্কার করতে রুমাল বের করার জন্য পকেটে হাত দিতেই শ্রাবণী চোখ বন্ধ করে সমানে বলতে লাগলো,
-প্লিজ প্লিজ এখনি এইসব বের করেন না যে,
আমায় একটু সময় দেন। আমি এখনো মানসিক ভাবে প্রস্তুত না...
আমি শ্রাবণীর হাত ধরে বললাম,
--একটু শান্ত হও। কি হয়েছে তোমার? এমন তাড়াহুড়ো করছো কেন?
শ্রাবণী মাথাটা নিচু করে বললো,
-আসলে আমার বিবাহিত কিছু বান্ধবীরা আমায় এইসব শিখিয়ে দিয়েছে। আরো অনেক কিছু বলেছে এইসব শুনে আমার মাথা ঘুরছে
শ্রাবণীর কথাগুলো শুনে মনে মনে ভাবলাম, শয়তান শুধু ছেলেদের বন্ধু গুলোই হয় না মেয়ের বান্ধবী গুলোও হয়...
কিছু কথাবার্তা বলার পর যখন আমি আর শ্রাবণী একটু স্বাভাবিক হলাম তখন আমি শ্রাবণীকে বললাম,
-- জানালা দিয়ে বাহিরের আকাশ দেখছিলে না কি?
শ্রাবণী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
- সত্যি বলতে বাবা মাকে ছাড়া আমি কোনদিন একটা রাত কোথাও গিয়ে থাকি নি এমনকি ময়মনসিংহ মেডিকেলে যখন আমি চান্স পাই তখনও আমি ভর্তি হই নি বাবা মাকে ছাড়া থাকতে হবে বলে। অথচ আজ বাবা মাকে ছেড়ে চলে আসলাম। বাবা নিশ্চয়ই আজও প্রেসারের ঔষধটা খেতে ভুলে গেছে। এইসবি দাঁড়িয়ে থেকে চিন্তা করছিলাম...
রুমের হালকা আলোতে আমি বুঝতে পারছিলাম শ্রাবণী কান্না করছে। আমি শ্রাবণীর হাত ধরে বললাম,
-- চলো যাই..
শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,
- কোথায় যাবো?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-- তোমার বাবার কাছে....
|
|
বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আমি বাইকের চাবিটা নিয়ে চুপিচুপি শ্রাবণীকে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম
শ্বশুর বাড়ি আসতেই শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাদের দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো। শ্রাবণীর দাদী আমার কাছে এসে বললো,
~কি রে ভাই, তোরা এইখানে কেন?
আমি দাদী শ্বাশুড়ির কানে কানে দুষ্টামি করে বললাম,
-- তোমার নাতনি খেলোয়াড় হিসাবে খুব কাঁচা তাই তোমার মত অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ খেলোয়াড় নিতে এসেছি...
আমার কথা শুনে দাদী শ্বাশুড়ি হাসতে লাগলো আর ঐ দিকে শ্রাবণী তার বাবাকে সমানে বকে যাচ্ছে প্রেসারের ঔষধ খেতে ভুলে গিয়েছিলো বলে। আমি ভাবতে লাগলাম একটা মেয়ে জন্মের পর থেকে যে পরিবারে বড় হয় একটা সময় সেই পরিবারটাকে ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবারে চলে যেতে হয়।এই কষ্টটা হয়তো শুধু মাত্র একটা মেয়েই বুঝতে পারে। আমরা ছেলেরা হয়তো সেই কষ্টটা কখনো বুঝতে পারবো না....
শ্রাবণীকে নিয়ে যখন চলে যাবো তখন শ্বশুরের কানে কানে বললাম,
-- বাবা, আপনি এখনো যথেষ্ট ইয়াং। আপনি এখনও চাইলে আমি শা'লার দুলাভাই হয়ে যেতে পারি।
আমার কথা শুনে শ্বশুর আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকালো আর আমি শ্রাবণীর হাত ধরে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম...
|
|
অর্ধেক রাস্তা আসার পর বাইকের তেল শেষ হয়ে গেলো। খোলা রাস্তায় মাঝ রাতে সোডিয়ামের হলুদ আলোর নিচে আমি মোটর সাইকেল ঠেলে নিয়ে যাচ্ছি আর আমার পাশে শ্রাবণী হাটছে। নববধূ বেশে শ্রাবণীকে অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগছে
আমাদের দেখে একটা পুলিশের গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে ওসি সাহেব বের হয়ে বললো,
~ আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?
আমি হাসি মুখে ওসি সাহেবকে বললাম,
-- শ্বশুরবাড়ি থেকে বউ নিয়ে নিজের বাড়ি যাচ্ছি। আজ আমার বাসর রাত
কনস্টেবল ওসি সাহেবের কানে কানে বললো,
~স্যার, ব্যাটার কথাবার্তা সুবিধার মনে হচ্ছে না। নিশ্চয়ই বিয়ের আসর থেকে মেয়ে নিয়ে পালিয়েছে। দেখেননা মেয়ের শরীরে বিয়ের সাজ
|
|
এই মুহূর্তে আমি আর শ্রাবণী থানায় ওসি সাহেবের সামনে বসে আছি। আমি ওসি সাহেবকে বললাম,
-- স্যার, সকাল হয়ে যাচ্ছে আমাদের একটু প্রাইভেসি দরকার ছিলো। বুঝতেই তো পারছেন আজ আমার বাসর রাত
ওসি সাহেব আমার কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর শ্রাবণী মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসছে আর আমার হাতে চিমটি দিচ্ছে
একটু পর শুনি ফজরের আযান দিচ্ছে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
ইসস আজ আমার বাসর রাত ছিলো..