ভাই বোনের ভালোবাসা মধুর চেয়েও মিষ্টি | ভাই বোনের ভালোবাসা

 ভাই বোনের ভালোবাসার গল্প

ভাই বোনের ভালোবাসার গল্প

দুপুরে খাওয়ার সময় প্লেটে ভাত নিয়ে আপুকে বললাম,

-- তরকারি দে তো

আপু বিরক্ত হয়ে বললো,

-" তোর সামনেই তো তরকারির বাটি। নিজে নিয়ে খেতে পারিস না?"

আমি নিজ হাতে তরকারি নিয়ে যখন খেতে যাবো তখন আপু চেচিয়ে বললো,

-" রাক্ষসের মতো পুরো বাটির তরকারি নিয়েছিস কেন? আমার জন্য তো একটুও রাখলি না।"

আমি রেগে গিয়ে বললাম,

-- এজন্যই তোকে বলেছিলাম তুই তরকারি দে। আমি নিলেই তো তোর চোখে শুধু বেশি বেশি হয়


আপু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, 

-"এইতো আর ৬দিন। ৬দিন পর যখন আমার বিয়ে হয়ে যাবে তখন কলিজা ভুনা, সিনা, ফেপসা সব একা একা রাক্ষসের মতো খাস"


আমি আর কিছু বললাম না। এখন কিছু বললেই আপু ড্রামা শুরু করে দিবে তারপর মা এসে আমায় বকাবকি করবে..


রাত ১টার দিকে বার্সার খেলা দেখছি। এমন সময় আপু নারিকেল তেলের বোতল হাতে নিয়ে আমার কাছে এসে বললো,

-" মাথাটা খুব ব্যথা করছে রে। মাথায় একটু তেল দিয়ে দে তো"

আমি টিভির স্কিনের দিকে তাকিয়ে বললাম, 

-- এখন সামনে থেকে যা, খেলা দেখছি। আমি কারো মাথায় তেল দিতে পারবো না


আপু আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, 

-" আর তো মাত্র ৫দিন। ৫দিন পর তোকে আর কেউ বলবে না মাথায় একটু তেল দিয়ে দিতে।তখন সারারাত আরাম করে খেলা দেখিস"


আমি রাগে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

--আমাকে কি তোর মেয়ে মনে হয়? আমায় দিয়ে যতসব মেয়েলি কাজ করাস। মাথায় তেল দেওয়া, মাথা থেকে উকুন আনা, আঙুলে নেলপলিশ লাগানো সব আমাকে দিয়ে করাস


আপু হেসে বললো,

-"সত্যি বলতে তোর মাঝে একটা মেয়েলি মেয়েলি ভাব আছে।"

--তুই কিন্তু বেশি ফাইজলামি করছিস

-"তাহলে আমায় ঠিক মতো তেল দিয়ে দে,আর ফাইজলামি করবো না"  


আমি কিছু না বলে আপুর মাথায় তেল দিতে লাগলাম। আপু হুট করে বললো,

-"আমার বিয়ে হয়ে গেলে আমায় মিস করবি?"

আমি টিভির স্কিনের দিকে তাকিয়ে বললাম, 

-- কিসের মিস? তোর বিয়ে হলে আমি বাঁচবো

আপু কিছু না বলে শুধু একটু হাসলো.....


পরের দিন সকালে বিছানায় বসে একমনে ফোন টিপছি। এমন সময় আপু রুমে ঢুকে আমার মুখের উপর একটা নতুন পাঞ্জাবিটা ছুড়ে মেরে বললো,

-" তাড়াতাড়ি এই পাঞ্জাবিটা পরে তৈরি হয়ে নে। তোকে নিয়ে একজায়গায় যাবো"


আমি বিরক্তিকর চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

-- আমি কোথাও যেতে পারবো না।শুধু শুধু বিরক্ত করিস না


আপু মুখ গোমড়া করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

-" আর তো মাত্র কয়েকটাদিন। কয়েকদিন পর যখন আমার বিয়ে হয়ে যাবে তখন তো তোকে আর কেউ বিরক্ত করবে না। বিয়ের পর চলে যাবো জামাইয়ের সাথে দেশের বাহিরে। চাইলেও আমার এই মুখটা তুই কখনো দেখতে পাবি না"


আমি পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে বললাম,

--দয়া করে আর ড্রামা করিস না। আমি তৈরি হচ্ছি


নীল পাঞ্জাবিটা পরে তৈরি হয়ে আপুর রুমে এসে দেখি আপুও নীল শাড়ি পড়েছে। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

--আপু তোকে খুব সুন্দর লাগছে । মনে হচ্ছে তুই হিমুর রুপা

আপু হেসে বললো,

-" তোর মনে আছে তুই যখন ছোট ছিলি বাবা যে রঙের জামা আমায় কিনে দিতো তোকেও সেই রঙের শার্ট-গেঞ্জি কিনে দিতে হতো। তা নাহলে তুই কান্নাকাটি শুরু করে দিতি। 

আমি আপুর কথা শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম,

-- কোথায় যাবি এখন?


আপু আয়নার দিকে তাকিয়ে কপালের টিপটা ঠিক করতে করতে বললো,

-"তোকে নিয়ে আজ রিকশায় ঘুরবো, নৌকায় ঘুরবো আর অনেক অনেক ছবি তুলবো যাতে পরবর্তীতে তুই সেই ছবি গুলো দেখে আমায় একটু-আধটু মিস করতে পারিস"


রিকশায় উঠে রিকশাওয়ালাকে বললাম,

--মামা, আপনার রিকশা ১ঘন্টার জন্য ভাড়া নিলাম। আপনি আপনার পছন্দমতো জায়গায় নিয়ে যান। 


রিকশায় বসে আমি আর আপু একমনে কি যেন বলছিলাম। হঠাৎ রিকশাওয়ালা একটা আবাসিক হোটেলের সামনে রিকশা থামালো। আমি অবাক হয়ে রিকশাওয়ালে বললাম,

-- এইখানে কেন রিকশা থামিয়েছেন?

রিকশাওয়ালা হেসে বললো,

-" মামা, এটা নিরাপদ জায়গা। এইখানে পুলিশের কোন ভয় নাই। আপনারা ভিতরে গিয়ে কাজ করেন আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি।"


আপু কথাটা না শোনার অভিনয় করে রিকশা থেকে নেমে অন্য দিকে হাটা শুরু করলো। আমি রিকশাওয়ালাকে টাকাটা দিয়ে বললাম,

--এখন যদি আপনাকে দুইটা থাপ্পড় মারি তাহলে মানুষ ভাববে গরীবের উপর অত্যাচার করছি। মেয়েটা আমার আপন বড় বোন হয়...


নৌকার মাঝি মাঝ নদীতে বৈঠা উপরে তুলে আমায় বললো,

-" মামা, কিছু করার ইচ্ছে থাকলে ভিতরে গিয়ে করতে পারেন। নৌকা এখন পাড় থেকে অনেক দূরে। কোন রিস্ক নাই"


আমি কিছু বলার আগেই আপু মাঝিকে বললো, নৌকা পাড়ে নিয়ে দিতে....


পার্কে যখন আপুর ছবি তুলছিলাম তখন একজন লোক দূর থেকে বারবার আমায় ইশারায় ডাকছিলো। আমি লোকটার কাছে গেলে লোকটা আমায় কানে কানে বললো,

-" রুম লাগবে? "


কেন জানি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। লোকটার গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললাম,

-- আপনারা পেয়েছেন কি? পার্কে কি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকেরা নোংরামি করতে আসে? ভাই-বোন কি আসতে পারে না?


লোকটা গালে হাত রেখে বললো,

-" পারেন শুধু গরীবকে মারতে। মেয়েটা আপনার বোন হলে একই রঙের শাড়ি পাঞ্জাবি পরে পার্কে এসেছেন কেন? আপনাদের দেখে তো যে কেউ ভাববে আপনারা প্রেমিক-প্রেমিকা


এমন সময় আপু এসে লোকটাকে বললো,

-"আপনি যান "


আমি যখন মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আপু তখন আমার মাথায় হাত রেখে বললো,

-" আমি এইখানে রিকশাওয়ালা, মাঝি কিংবা পার্কের এই লোকটাকে পুরোপুরি দোষ দিবো না। রিকশাওয়ালার মনে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এইরকম চিন্তা একদিনে সৃষ্টি হয় নি। আমাদের আগেও এই রিকশায় অনেক ছেলে-মেয়ে বসে ঐ হোটেলে গিয়েছে। তাই রিকশাওয়ালা ভেবেছে আমরাও সেখানেই যাবো। নৌকার ভিতর অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা এমন করেছে তাই মাঝি এমন কথা বলার সাহজ পেয়েছে। আর পার্কের অই লোকটা অনেক প্রেমিক প্রেমিকাদের এমন ব্যবস্থা করে দিয়ে নিজে কিছু ইনকাম করেছে তাই সে এই কথাটা বলেছে। প্রকৃত দোষ ঐসব প্রেমিক-প্রেমিকাদের যারা ওদের মনে এই ধারণাটা সৃষ্টি করেছে। 

মানুষ আজকাল মনে করে একই রঙের শাড়ি পাঞ্জাবি শুধু প্রেমিক প্রেমিকারা পরতে পারে কোন ভাই-বোন পরতে পারে না, রিকশায় কিংবা নৌকায় প্রাপ্ত বয়স্ক সমবয়সী কোন ভাই-বোন ঘুরে বেড়াতে পারে না। পারে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকারা।" 


বাসায় ফেরার জন্য রিকশা ডাকলাম। আপু রিকশায় উঠে চোখের জলটা আড়ল করে আমায় বললো,

-"পিয়াস, তুই অন্য রিকশা দিয়ে আয়। মানুষের চিন্তা ভাবনা নষ্ট হয়ে গেছে"


আমার মতো হয়তো অনেক ভাই আছে যারা বড় হবার পরে একই রঙের জামা কাপড় পরে বোনকে নিয়ে বাহিরে কোথাও ঘুরার সাহস পায় না। সমাজে নানা মানুষের নোংরা কথার ভয়ে একই রিকশা কিংবা নৌকায় ভাই-বোন একসাথে একটু ঘুরে-বেড়াতে চায় না

 

-নষ্ট_ভাবনা

-আবুল_বাশার_পিয়াস