অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস
চোখ ফেটে কান্না আসবে.......
plz........plzz.............plzz........
গল্প টা একবার পড়েন চোখের পানি ধরে রাখতে পারবেন না!!!!
*********
আমি একদিন নিকোপার্ক এ বসে আছি
হঠাত এক টা বাচ্চা মেয়ে এসে বলে
-ভাইয়া এগুলো নেবেন? নিন না, মেডাম কে গিফট দিলে খুশি হবে। দেখলাম একটা আধা ময়লা ফ্রক পরে, ফুটপাতের ভিখারিদের মত দেখতে বাচ্চা মেয়ে আমার চোখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাতে একগোছা গোলাপ।
এরা খুব একটা বোকা হয়না। না হলে, এতো ছোট বয়সে গার্লফ্রেন্ডকে রপ্ত করার কৌশল, জানত না। কিন্তু গোলাপ কি শুধু
গার্লফ্রেন্ডকে দিতে হয়? মাকে দেওয়া যায়না? পকেট থেকে একশো টাকা বের করে বললাম, -এই নাও। কতো দাম এগুলোর ? ও দাম হিসেব করতে যাবে, ঠিক এমন সময় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এল। কাছাকাছি একটা ঝুপড়ি মতো জায়গায়
দৌড়ে আশ্রয় নিলাম। দেখি ঐ মেয়েটাও,
আমার পিছু পিছু এসে পাশে বসেছে।
এদিকে মুশলধারে বৃষ্টি। এক কাপ চা হলে
বেশ হতো। রাস্তার ওপাশে চায়ের দোকান।
কিন্তু আনবে কে?,-নাম কি তোমার আরহি ।-আচ্ছা আরোহী ,তোমাকে একটা কাজ দেবো পারবে?-বলুন দাদা । পকেট থেকে ২০ টাকা বের করে বললাম, -ঐ দোকান থেকে এককাপ চা আনতে পারবে? আর যদি তুমি কিছু খাও খেতে পারো । অবশ্য ওখানে যেতে যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে। দেখলাম নিঃশব্দে মেয়েটি আমার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে, এক দৌড়ে চা নিয়ে এলো। আরোহী তুমি কিছু
খেলেনা কেন? -এমনি ভাইয়া। এই নিন
বাকি টাকা। -তুমি স্কুলে যাও? -না। তবে খালা মেয়েরা পুরোনো বই ফেলে দিলে, সেগুলো নিয়ে মাঝে মাঝে পড়ি। -ও! তুমি স্কুলে যাওনা, তোমার বাবা-মা বকেনা
বুঝি? -বাবা মা নেই ভাইয়া । -নেই মানে?
-আগে একটা মা ছিল। কিন্তু এখন তাকে
দেখিনা। -মানে? এখন দেখনা কেন? তোমার মা মারা গেছেন?-না। আমার আসল বাবা-মা ঐ যে ঐখানে যে ময়লা গুলো আছে, সেখানে ফেলে রেখে গিয়েছিল ছোটবেলায়।তারপর একটা মা এসে আমায় বড় করেছে। তার নিজেরও তিনটে ছেলেমেয়ে। বাবা আমায় নিয়ে ঝগড়া করতো মায়ের সাথে। তাই ঐ মা
টা আবার আমাকে ঠিক ঐখানেই রেখে কোথায় যেন চলে গেছে? আর দেখিনা। -তাই তুমি ফুলগুলো বিক্রি করে বেঁচে থাক? -না ভাইয়া। এই ফুলগুলো
ঐ সামনে একটা ফুলের দোকান আছে তার সব ফুল বিক্রি করলে তিনি আমাকে
দুপুরে খেতে দেন। -দুপুরে খেতে দেন মানে? আর রাতে, সকালে কি
খাও? -খাইনা ভাইয়া। পানি খেয়ে থাকি।
কখনো কখনো ডাস্টবিনে ভালো শুকনো খাবার খুঁজে পেলে, তাই খাই। চোখ ফেটে কান্না এল। ধরে রাখতে পারলাম না।
এই চোখের পানি কি শুধুই আরোহির জন্য
নাকি,??? এদিকে বৃষাটি কমেছে। ওর নোংরা মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, -দু'বেলা না খেয়ে থাকিস কি করে? চল সামনের রেস্তরাঁতে কিছু খাবি। দেখলাম আরোহীর মুখে শহস্র শতাব্দীর লুকিয়ে থাকা হাসিটা । বেরিয়ে আসলো! -আরোহী ! কি খাবি বল? - দাদা অনেক দিন মুরগির গোস্ত খাইনি। যদি দিতেন.....?????? আবারও চোখের বাঁধ
ভাঙল। কত সীমিত চাহিদা এদের।
-অত কথা বলিস কেন ? যা ইচ্ছে খা ।
সেবার আরহি কে খাইয়ে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, লক্ষ টাকাদিয়ে ও এই
আনন্দ কেনা যাবে না। পরদিন বাইরে বেরিয়েছি, দেখি ও একটা কমলা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরহি। ফুল বিক্রি করে কিছু টাকা বাঁচিয়েছে। আর সেটা দিয়ে ও এটা কিনেছে। আরহি । খবরদার, এসব আর কখনো করবি না। আমি এসব প্রচুর খেয়েছি। তোর খিদে পেয়েছে? -নিন না ভাইয়া। না হলে আমি কষ্ট পাব। -ঠিক আছে। আজ নিলাম। কিন্তু আর কিনবি না, ঠিক আছে? তোর মুখ ভীষণ শুকনো
দেখাচ্ছে। কিছু খাসনি সকাল থেকে, না !!চল, কিছু খাবি। এরপর থেকে প্রতিদিনই ওকে খাওয়াতাম। সে তৃপ্তি ভাষায় বলা
কঠিন। আর ও প্রতিদিনই বারণ করতো।
শেষমেশ আমার চাপে পরে খেতে হত।
দেখতাম ও আমার জন্যও, একটা কমলালেবু, কিম্বা পেয়ারা নিয়ে আসতো।
বড্ডো ভালোবেসে ফেললাম আরহি
কে। মানুষের জীবনে কত ভাবেই ভালোবাসা আসে মা বাবার ভালোবাসা টা
এক প্রকার, ভাই বোনের ভালোবাসা
টা আরেক প্রকার, আর আমি আরহি কে আমার বোনের মতো করে ভালোবাসতে শুরু করেচি!!!!! একসময় উপলব্ধি
করলাম, ওকে না দেখতে পেলে আমার হৃদয় যেন ব্যাকুল হয়ে উঠছে। আমি যেন
কোথাও একটা কিছু হারিয়ে পেলছি!!!! ৩১ ই ডিসেম্বর। রাত তখন ন'টা বাজে।
হঠাৎ মায়ের ফোন। -হ্যাল....................... আমার পরিচয় নাই বা দিলাম!!!!!!!! বিপদ হয়েছে রে বাবা। তোর বাবা অফিস
থেকে বাড়ি ফিরছিল। একটা বাস এসে তোর বাবাকে ধাক্কা দিয়েছে। পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে। এখন আমরা হসপিটালে।
তুই শিগ্গিরি চলে আয়। খবরটা শুনে খারাপ লাগলো। কিন্তু আরহি ? ওকে তবে দেখতে পাবোনা কিছুদিন ! যাবার আগে একবার দেখা হলে ভালো হত। কিন্তু খুঁজি
কোথায়? সকাল সকাল বাড়ির উদ্ধেশ্যে রওনা হলাম, বাহিরে বৃষ্টি পরছে! জামা কাপড় কিছুটা বিজে নিয়েই মেইন,রাস্তাতে উঠেছি। বাবা কতটা ভালো আছেন, কে জানে?বাসের অপেক্ষায় আছি। এমন সময়ে দেখি, আরোহী দূরে দাঁড়িয়ে। হাতে একটা চকোবার আইসক্রিম। আমার কাছে এসে, মায়াবী দৃষ্টিতে চোখের দিকে
তাকিয়ে, আমায় নিতে বললো। -নাও ভাইয়া। জিঙ্গেস করলাম কোথাথেকে এনেছে,! শুনলাম, আমারই মতো একজন পাগল ওকে এটা খেতে দিয়েছে। আর সেটা ও আমায় দিতে চায়। আরহির ময়লা গালে একটা চুমু খেয়ে বললাম, পাগল কোথাকার। তোর মতো এমন একজন থাকতে, দুনিয়াতে আর কিছুর প্রয়োজন হয় না!!!! আমি এসব প্রচুর খেয়েছি তোকে ভালোবেসে উনি দিয়েছেন, তুই ই খা। কিন্তু শুনল না আরহি। ওটার পাশ থেকে এক কামড় দিয়ে বললাম, -শোন আরহি । আমার বাবার শরীর খারাপ
বুঝলি তো।তাই পাঁচ- সাত দিন আসতে
পারব না। তুই এই তিনশো- টাকা রাখ। কিছু কিনে খাস। পরে ১২ই জানুয়ারি আবার পিরে এলাম আগের শহরে!!! কিন্তু চার-পাঁচ দিন হয়ে গেলো আরহির
দেখা নেই। খোঁজ নিতে গেলাম। ঐ ফুলের দোকানে। জিজ্ঞাসা করলাম -এখানে আরহি নামে একটা মেয়ে থাকে না দোকানী আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, -তুমি কি আরহির সেই........ সাহেব? -হ্যাঁ। কোথায় ও দেখলাম দোকানী হাও মাও করে কাঁদছে।
-সহেব গো, আরহি যে আর নেই। গত ৯ তারিখ ও বাস এক্সিডেন্টে মারা গেছে এবার আমার কান্না পেল না। বমি পেল গলগল করে বমি করলাম রাস্তায়।
মনে হচ্ছিল বুকের রক্তে তীব্র কোন বিষাক্ত বিষ কেউ ঢেলে দিয়েছে। চিৎকার করে পৃথিবী ফাটাতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু পারিনি। -সাহেব একটু বসুন সুস্থ হয়ে। এই নিন। আরহি আমাকে বলেছিলো, ' আমি যদি কখনও হারিয়ে যাই তবে এটা................ ভাইয়া কে দিও।' দেখলাম একটা লাল ডাইরি। সেখানে আবুল তাবুল ভাবে দিনলীপি লেখা। চোখ গিয়ে ৮ই জানুয়ারি ঠেকলো, আজ ভাইয়া চলে গেলেন। মনটা বড় খারাপ। যাওয়ার আগে উনি আমায় তিনশো টাকা দিয়েছেন। ওপাশে রফিক কাকুর মা অনেক দিন ধরে ভালো-মন্দ খেতে চেয়েছেন। বুড়ি হয়েছেন বলে, ওনাকে এখন কেউ ভিক্ষা দেয়না।তাই এই টাকাটা তাকে দিয়ে এলাম। কাল থেকে আমি আবার ফুল বিক্রি করব। আর......ভাইয়া এলে তাকে বলব,
........ভাইয়া আমিও তোমার মতো ভালোবাসতে শিখেছি। এ যে তোমারই দান...
-সমাপ্ত