বাছাইকৃত সেরা রহস্যময় গল্প | রহস্যময় গল্পের লিংক

 রহস্যময় গল্প

রহস্যময় গল্প

রাত প্রায় ১ টা আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা অদ্ভুত রকমের নাম্বার থেকে কল আসলো। নাম্বারটা ছিলো +০৭৫১৮। ভাবলাম হয়তো সিম কোম্পানী থেকে কলটা এসেছে। ফ্রিতে কোন গান শোনায় কিনা। কলটা ধরতেই বেশ অবাক হয়ে যাই। ঐ পাশ থেকে একটা মেয়ের কাঁদো কাঁদো কন্ঠ। মেয়েটা আমাকে বললো:


-হ্যালো! আপনি কী সাকিল হাসান ?

-হ্যাঁ বলুন। আপনি কে?

-আপনি আমায় চিনবেন না। আমার একটা সাহায্য চাই আপনার কাছ থেকে।

-এতো রাতে!! কি সাহায্য?

-সাহায্যটা কাল সকালে করলেও চলবে।

-আচ্ছা আগেতো বলুন কি সাহায্য।

-বলছি। হয়তো আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন না বা ভাববেন মজা করছি। 

আমার নাম জান্নাতুন অরিন । আমি সুলতান নগরে থাকি। রোজ সকালে পাশের এলাকায় একটা টিউশনি পড়াতে যাই। রোজকার মতো আজকে সকালেও টিউশনি শেষ করে বাড়িতে ফিরছিলাম। রাস্তাটা বেশ ফাকা ছিলো। হঠাৎ কিছু অপরিচিত ছেলেদের দেখলাম রাস্তায় মাতলামো করছিলো। আমি তাদের দেখে ভয় পেয়ে যাই । আমি ভয়ে ভয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তাদের মধ্য থেকে একটা ছেলে আমার সামনে এসে দাড়ায়। আমি কিছু বলার আগেই ছেলেটা আমার মুখ চেপে ধরে। বাকি ছেলেগুলো আমাকে জোর করে ধরে একটা গাড়িতে তোলে। তারা আমার মুখ আমার ওরনা দিয়ে বেঁধে

দেয়। আমি চাইলেও চিৎকার করতে পারছিলাম না। আমি নিজেও জানতাম না তারা আমাকে কোথায় আর কেনো নিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর তারা আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে জোর করে একটা পুরাতন জমিদার বাড়িতে নিয়ে যায়। জমিদার বাড়িটা আমি আগে থেকেই চিন্তাম তবে এর আগে কখনো এখানে আসা হয়নি। ওরা ৫ জন ছিলো।


এতক্ষনে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তারা আমাকে কেনো ধরে এনেছে। তারা আমাকে একটা ঘরের ভেতর নিয়ে যায় এবং নরপশুর মতো আমার উপর ঝাপিয়ে পরে এবং জোর করে একের পর এক আমাকে রেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি যখন একজনকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি তখন তাদের মধ্যে একজন একটা ছুরি এনে আমার গলায় চালিয়ে দেয়। আমি সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পরে যাই এবং কিছুক্ষন পরে মারা যাই। এরপর তারা আমার লাশটাকে জমিদার বাড়ির পাশেই একটা ঝোপে ফেলে চলে যায়।

-কী বললেন? আপনি মারা গেছেন!! আর আপনার লাশ ঝোপে ফেলে গেছে তারা? এতো রাতে আপনি কল দিয়ে আমার সাথে মজা করছেন? আপনি যদি মারা গিয়ে থাকেন তাহলে আমার সাথে কথা বলছেন কিভাবে!!?


-সেটা আমি আপনাকে পরে বলবো। প্লিজ আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমার লাশটা ঝোপে পরে রয়েছে। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার বাবা আমাকে অনেক খুচ্ছে। সে থানায়ো জিডি করেছে। তারা পুরো এলাকা আমায় খুজে পাগল হয়ে যাচ্ছে। আপনি প্লিজ একবার আমার বাবার কাছে গিয়ে বলুন যে আমার লাশটা জমিদার বাড়ির ঝোপে পরে রয়েছে। তারা যাতে দ্রুত আমার লাশটাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।

-আপনি আসলেই একজন সাইকো। এতোরাত্রে আমার সাথে মজা নিচ্ছেন? ফোন রাখুন!


এই বলেই রেগে কলটা কেটে দিলাম। ভাবলাম এতোরাতে এই ধরনের মজার কোন মানেই হয় না?! মেয়েটা কী উল্টাপাল্টা কথা বলছিলো। মেয়েটা মারা গেলে আবার আমার সাথে কথা বলছে কিভাবে!


কিন্তু মেয়েটা কে ছিলো!? আর আমার নামই বা জানলো কিভাবে?!! তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু এতো সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে কোন মেয়ে কেনো আমার সাথে মজা করবে এটাও বুঝলাম না। এরপর ভেবেই নিলাম হয়তো পরিচিত কোন বন্ধু মজা করেছে। তাই এটা নিয়ে আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।


পরের দিনটা পুরোটাই স্বাভাবিক ভাবে কাটিয়ে দিলাম। দিনে একবারো কলটার কথা মনেও পড়েনি। আবার রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় ১ টা বেজে গেলো। হঠাৎ আবার সেই +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে কল আসলো। প্রথম বারে ধরলাম না। পরে আবার আরেকটা কল আসলো একই নাম্বার থেকে। এইবার অনেকটা রেগেই কলটা ধরলাম। আর বললাম:

-কী সমস্যা আপনার? আজকে আবার কল দিয়েছেন কেনো?!


-আপনাকে না বললাম আমাকে একটু সাহায্য করতে। আপনি আজকে দিনে আমার বাবার কাছে কেনো জাননি?? আর আমার কথা কেনো বলেননি? জানেন আজ আমি মারা গেছি দুইদিন হয়ে গেলো। দুই দিন ঝোপটাতে কতো কষ্টে পরে রয়েছি। আমার বাবাও আমায় খুজতে খুজতে অনেক অসুস্হ্য হয়ে পড়েছেন। প্লিজ একবার অন্তত আমার বাবার কাছে গিয়ে সব কথা তাকে খুলে বলুন।

-আপনি এতো মানুষ থাকতে আমার সাথে কেনো মজা নিচ্ছেন? প্লিজ এসব বন্ধ করুন।

-দেখুন আমি মজা করছি না। আপনি অন্তত একবার আমার বাড়িতেতো গিয়ে দেখুন। সব বুঝতে পারবেন। আমার বাড়ি আপনার বাড়ি থেকে খুব একটা দুরে না। সুলতান নগর বাজারের নিকটে ১০৭ নাম্বার বাড়িটাই আমার প্লিজ একটু সাহায্য করুন।


এরপর আমি কলটা কেটে দিলাম। মেয়েটার কথাগুলো বিশ্বাস করার মতো না। কিন্তু মেয়েটা এমনভাবে আমার সাথে কথাগুলো বলেছিলো যে আমার মনে হলো মেয়েটা মিথ্যা কথা বলছে না। আর মেয়েটা আমার নামও জানে। অর্থাৎ আমাকে চিনে।


আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আমার কী করা উচিত। মেয়েটা এমন সব কথা বলেছিলো যে এটা কারো সাথে শেয়ার করলে, সেও আমায় পাগল ভাববে।


তবে আমি এতোটা বুঝতে পারছিলাম যে একটা মেয়ে এইসব ব্যাপার নিয়ে অন্তত আমার সাথে মজা করবে না।


সবার প্রথমে তাহলে কাল আমাকে সুলতান নগরের ১০৭ নাম্বার বাড়িটাতে যেতে হবে। তারপরেই সব কিছু বুঝতে পারবো। আর যদি কেউ মজা করে থাকে তাহলেও হয়তো তার বাড়ি ঐখানেই রয়েছে।


সুলতান নগর আমাদের এলাকা থেকে খুব একটা দুরে না। তাই পরের দিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠেই সুলতান নগরের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। সুলতান নগরে পৌছানোর পর সেখানকার মানুষদের কাছে ঠিকানা জেনে ঠিক ১০৭ নাম্বার বাড়িটার সামনে গেলাম।


বাড়িতে পৌছে দেখলাম বাড়িটাতে বেশ ভীর। এরপর একজন লোকের কাছে ভীরের কারন জানতে চাইলাম। লোকটা আমাকে যাহ বললো আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। লোকটা বললো:

-গত দুই দিন ধরে এই বাড়ির মেয়েটাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়েটা দুইদিন আগে পাশের এলাকায় টিউশনি করাতে গিয়েছিলো এরপর থেকে আর বাড়ি ফিরেনি। পুলিশ সহ এলাকাবাসী ২দিন ধরে পুরো কয়েকটা এলাকা খুজেও মেয়েটাকে পায়নি। সেই টেনশনে মেয়েটার বাবা অনেক অসুস্হ্য হয়ে পড়েছে ।


মেয়েটা আমাকে ফোনে যা যা বলেছিলো তা যে এইভাবে সত্যি হবে ভাবতে পারিনি।


এরপর আমি লোকটার কাছে মেয়েটার নাম জানতে চাই। লোকটা বললো:

-জান্নাতুন অরিন।


এরপর আর আমার কিছুই বলার ছিলো না। আমি অবাক হয়ে বাড়িটার সামনে দাড়িয়ে ছিলাম। তার মানে মেয়েটা কল করে যাহ বলেছিলো সব সত্যি। কিন্তু একজন মেয়ে মারা জাওয়ার পর কিভাবে ফোনে কথা বলতে পারে তা আমার মাথায় আসছিলো না।


মেয়েটার বাকি কথাগুলোও যদি সত্যি হয় তাহলে মেয়েটার লাশ এখন জমিদার বাড়ির ঝোপে পরে রয়েছে। আর এই কথাটা শুধু আমি জানি। আমি ভাবছিলাম মেয়েটার বাবাকে বা পুলিশকে কিভাবে বলবো যে মেয়েটার লাশ জমিদার বাড়ির ঝোপে পরে রয়েছে।


কারন তাদের যদি বলি যে মেয়েটার লাশ ঐ ঝোপে পরে রয়েছে তাহলে তারা আমার কাছ থেকে জানতে চাইবেন যে এটা আমি কী করে জানলাম। আর আমি যদি বলি যে মেয়েটা মারা জাওয়ার পর আমাকে কল দিয়ে এইকথা গুলো বলেছে তাহলে তারা আমার কথা বিশ্বাসতো করবেই না উল্টা আমাকে আরো সন্দেহ করবে। তাই ভাবলাম তাদের কিছু বলার আগে প্রথমে সেই জমিদার বাড়ির ঝোপে গিয়ে দেখি কোন লাশ পাই কিনা।

তবে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিল যে আমি ঝোপে লাশটা পাবো না।


এরপর আমি একজন লোকের কাছ থেকে জমিদার বাড়িটার ঠিকানা জেনে জমিদার বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর সেই পুরোনো জমিদার বাড়িতে পৌছালাম। দেখলাম আসলেই বাড়িটা বেশ নির্জন একটা জায়গায়। এখানে মানুষ খুব একটা আসা-জাওয়া করে না। মেয়েটার কথা মতো আমি বাড়িটার আশেপাশে ঝোপ খুজে বেড়াচ্ছিলাম। প্রথমে কোন ঝোপ না দেখলেও কিছুক্ষণ পর বেশ কিছুটা দুরে একটা ঝোপ দেখতে পেলাম। ঝোপটা দেখেই ভয়ে ভয়ে ধীরে ধীরে ঝোপটার দিকে এগোতে লাগলাম। এরপর ঝোপটাতে তাকিয়ে যাহ দেখলাম আমি পুরো ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। মেয়েটা যাহ বলেছিলো তাই ঠিক হলো। ঝোপে একটা মেয়ের অর্ধনগ্ন অবস্থায় লাশ পরেছিলো। লাশটা থেকে বেশ দূরগন্ধও বের হচ্ছিলো।


আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই ভয়ে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে জমিদার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম। এরপর আশেপাশের লোকদের চিৎকার করে ডাকলাম। তারা আসলে তাদেরকে বলি যে ঐ বাড়ির ঝোপটায় একটা মেয়ের লাশ পরে রয়েছে। তারাও অবাক হয়ে দৌড়ে যায় ঝোপটার কাছে এবং লাশটা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায়।


আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার সাথে কি হচ্ছে। মেয়েটা যাহ বলেছিলো ঠিক তাই হলো। তার মানে মেয়েটা মিথ্যা বলেনি। সে আসলেই মারা জাওয়ার পর আমাকে কল দিয়েছিলো। আমি ভয়ে চুপচাপ মাটিতে বসে পড়লাম। একটু পর এলাকার লোকেরা পুলিশকে কল করলো এবং পুলিশ আসলো।


পুলিশ এসেই লাশটাকে দেখে চিনতে পারলো যে এই মেয়েটাই ২ দিন আগে সুলতান নগর থেকে নিখোজ হয়েছিলো। এরপর তারা মেয়েটার বাবাকে কল করে এখানে আসতে বলে। পুলিশ সবার কাছ থেকে জানতে পারে যে সবার আগে লাশটা আমিই দেখেছিলাম। তাই তারা আমাকে প্রশ্ন করে যে আমি কিভাবে এখানে আসলাম আর লাশটাকে দেখলাম! আমি আসল কারণটা তাদের বলতে পারছিলাম না। কারন তারা আমার কথা বিশ্বাস করবে না। তাই তাদের বললাম যে আমি এখানে এমনি হাটাহাটি করতে করতে চলে এসেছিলাম আর লাশটাকে দেখতে পাই। তারা আমার কথা বিশ্বাসো করে নেয়। এরপর একজন মহিলা কন্সটেবল এসে পুলিশ অফিসারকে বলে:


-স্যার লাশটাকে দেখে মনে হচ্ছে গনধর্ষণ করা হয়েছিলো এবং পরে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। আনুমানিক মেয়েটা দুই দিন আগে মারা গেছে।


এরমানে এখন আমি নিশ্চিত যে মোবাইলে কল করে কেউ আমার সাথে মজা করেনি। মেয়েটা যা যা বলেছিলো তার পুরোটাই সত্যি।


এরপর আমি পুলিশ অফিসারের কাছে অনুমতি নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে ফিরতে ফিরতে প্রায় অনেক রাত হয়ে যায়।


আমি নিজের ঘরেই চুপচাপ বসে ভাবছিলাম যে একটা মৃত মেয়ে কিভাবে কল দিয়ে তার মৃত্যুর কথা বলতে পারে। আর পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে মেয়েটা আমাকেই বা কেনো কল দিলো। মেয়েটাতো তার বাবাকেও সরাসরি কল দিয়ে সব বলতে পারতো।


এগুলো ভাবতে ভাবতে আবার মোবাইলের স্ক্রীনে সেই অদ্ভুদ নাম্বারটা ভেসে উঠলো, "+০৭৫১৮"। ভয়ে পেয়ে গেলাম মেয়েটা আজ আবার আমাকে কেনো কল দিয়েছে।

টেনশন আর ভয়ের মাঝে হঠাৎ ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো আবার সেই (+০৭৫১৮) কলটি। আমার  কিছুতেই মাথায় আসছিল না যে মেয়েটা আমার কাছে কী চায়! একটা অশরীরি মৃত মেয়ে আমাকে কল দিয়েছে এটা ভেবেই শরীরটা ভয়ে শিউর উঠলো। যদিও আগেও মেয়েটা আমাকে কল দিয়েছিলো কিন্তু তখন তো বিশ্বাস হয়নি যে মেয়েটা মৃত। তাই ভয়ে কলটা কেটে দিলাম এবং মোবাইলটা বন্ধ করে রাখলাম যাতে মেয়েটা আর যেন কল দিতে না পারে।


হঠাৎ তারপর আবার আমার বন্ধ মোবাইলেই কল বেজে উঠলো ঠিক একই নাম্বার থেকে। এরপর ভয়ে ভয়ে কলটা ধরেই ফেললাম। কলটা ধরেই ভয়ে ভয়ে আমি বললাম:


-আপনি যে সাহায্য চেয়েছিলেন আমি করেছি। তারা আপনার লাশটা পেয়েছে।আবার কেনো কল দিয়েছেন?

-হ্যাঁ। এর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমার আরেকটা সাহায্য চাই।


-দেখুন প্লিজ আমাকে আর কিছু করতে বলবেন না। আমি নিজেই বুঝতে পারছি না আমার সাথে এসব কী হচ্ছে! আপনি আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলেছেন। আপনি আর আমাকে কল দিবেন না।

-আপনি ছাড়া আর কেউ আমাকে সাহায্য করতে পারবে না। প্লিজ না করবেন না।


-আচ্ছা আপনি তো সরাসরি আপনার বাবার কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন। আর সত্যি আমি আপনাকে চিনি না। আপনি আমাকে কি করে চিনেন! বিশ্বাস করুন এর আগে আপনাকে কখনোই দেখিনি। আপনি কেনো শুধু আমাকেই কল দিচ্ছেন।

-এর উত্তর আপনাকে সময় হলে দিবো।

-সময় হলে মানে কি?

-যেদিন আপনার সাথে আমি দেখা করবো সেদিন আপনাকে সব বলবো।

-দেখা করবেন মানে? আপনিতো মারা গেছেন। তাহলে আর আমার সাথে দেখা করবেন কিভাবে?

-যেভাবে আমি মারা জাওয়ার পরেও আপনার সাথে কথা বলি সেভাবেই দেখা করবো।

-কী বললেন!?! নাহ! আপনার সাথে দেখা করার কোন ইচ্ছাই আমার নেই। আর দেখা করলেতো আমি ভয়ে মরেই যাবো।


- কিন্তু আপনি যদি আমাকে সাহায্য না করেন তাহলে তো আমাকে আপনার সামনে আসতেই হবে।

-আচ্ছা শেষ বারের মতো সাহায্য করছি। বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে। এর পর আর আমাকে কল দিবেন না।

-শেষ বার না । এর পরেও আপনি আমাকে সাহায্য করবেন। না হলে আমি আপনার সামনে আসতে বাধ্য হবো। এবং আমি যদি আপনার সামনে আসি তাহলে আপনি সহ আপনার পুরো পরিবারকে একরাতেই শেষ  করে দিবো।

-দেখুন এইভাবে কথা বলবেন না। আচ্ছা বলুন আমি কি করতে পারি?


-আপনি এখন সুলতান নগরে আমার বাড়িতে যাবেন। সেখানে আমার বাবা একা রয়েছে। আমার লাশ পাওয়ার পর থেকে বাবা একটানা কান্না করছে যাচ্ছে। আর বাবা অনেক্ষন কান্না করার কারণে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেছে। এখন দ্রুত তাকে হাসপাতালে না নিয়ে গেলে সে মারা যাবে। আপনি দ্রূত সেখানে যান এবং আমার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করুন।


-কিন্তু এতো রাত্রে আমি আপনার বাড়িতে যাবো কিভাবে?! প্লিজ এমন কাজ করতে বলবেন না।

-আমার বাবার কিছু হলে আপনার পরিবারকেও আমি শেষ করে দিবো। আপনি যেভাবেই পারেন এখন আমার বাড়িতে যান।


এরপর মেয়েটা কলটা কেটে দেয়। আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই আর চিন্তায় পরে যাই। এতো রাত্রে এখন আমি বাড়ি থেকে বের হবো কিভাবে এটা ভেবে!! আর চিন্তা হতে থাকে যদি আমি সুলতান নগরে না যাই তাহলে মেয়েটা নিশ্চই আমার পরিবারের ক্ষতি করবে।


আর কোন উপায় না দেখে আমি বাবা-মাকে মিথ্যা কথা বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলাম। তাদের বলেছিলাম যে আমার এক বন্ধু এক্সিডেন্ট করেছে তাই যেতে হবে।


রাতে বহু কষ্টে গাড়ি পেলাম। তারপর সুলতান নগরের সেই বাড়িটাতে পৌছালাম। পৌছে সত্যিই দেখলাম মেয়েটার বাবা অসুস্হ্য হয়ে মাটিতে পরেছিলো। আমি দ্রুত তার চোখে মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করি কিন্তু তার জ্ঞান ফিরে না। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। লোকটা কী মারা গেলো নাকি! এরপর পালস চ্যাক করে দেখলাম এখনো বেঁচে আছে। এরপর আমি প্রতিবেশীদের ডাক দেই এবং তারা এসে লোকটাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় আর আমি বাড়িতে ফিরে আসি।


পরের দিন লোকটা সুস্থ আছে কিনা তা দেখতে হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি লোকটা অনেকটাই সুস্থ রয়েছে। আমাকে দেখে একজন লোক আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন এবং মেয়েটার বাবাকে বললেন যে

-আমিই প্রতিবেশীদের উনার অসুস্থতার খবর দিয়েছিলাম।


এরপর সেই লোকটা চলে গেলো। মেয়েটার বাবা আমাকে বললো:

-ধন্যবাদ, বাবা। তোমার জন্যই আজ আমি বেঁচে গেলাম। কিন্তু তুমি কোথায় থাকো আর আমি যে অসুস্হ্য হয়ে পরেছিলাম সেটাই বা জানলে কিভাবে?


আমি তাকে কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। এরপর সাহস করে বলেই ফেললাম:

-আপনার মেয়ে আমাকে কল দিয়ে জানিয়েছে যে আপনি অসুস্থ।


লোকটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো:

-আমার মেয়ে মানে? তুমি মজা করছো? সেতো ৩ দিন আগেই মারা গেছে।


এরপর আমি মেয়েটার বাবাকে সব কথা খুলে বললাম। যে আমিই তার মেয়ের লাশের খবর প্রথমে দিয়েছিলাম। এর আগে মেয়েটা মারা জাওয়ার পরেই আমাকে কল দিয়ে সব কথা বলেছিলো। মেয়েটাকে কারা কিভাবে হত্যা করে তা মেয়েটাই আমাকে কল দিয়ে বলেছিলো। এরপর গতরাতে মেয়েটাই কল দিয়ে আমাকে বলেছিলো যে লোকটা অসুস্থ।


এইসব কথা আমি মেয়েটার বাবাকে বললাম। মেয়েটার বাবা আমার কথাগুলোতো বিশ্বাসই করলো না উল্টো রেগে বললো:


-আমার মেয়ে মারা গেছে আর তুমি মজা করছো?

আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পরেও তোমার সাথে কথা বলেছে? বেড়িয়ে যাও এখান থেকে। মেয়ে হারানোর কষ্ট তুমি কি বুঝবে!!

মজা নিতে এসেছো আমার সাথে।


আমি জানতাম যে লোকটা আমার কথা বিশ্বাস করবে না। কিন্তু আমারতো আর কিছু করার ছিলো না। যাহ সত্য তাই বলেছি মাত্র


হঠাৎ একটা কথা মাথায় আসলো। আমার মোবাইলে তো অটো কল রেকর্ডার আছে। তার মানে হয়তো মেয়েটার সাথে বলা সব কথা গুলো সেভ করা আছে। এই কথাটা এর আগে আমার মাথায় কেনো আসেনি! মেয়েটার বাবাকে কথাগুলোর রেকর্ড শুনিয়ে দিলেইতো সে বিশ্বাস করবে।


এরপর মোবাইলের সেভ করা কল রেকর্ডিং এ ঢুকে খুঁজতে লাগলাম সেই কল গুলোর রেকর্ড। তবে যাহ দেখলাম আমি পুরাই অবাক হয়ে গেলাম। গত কয়েক দিনের সব কলগুলোর রেকর্ডই রয়েছে শুধু রাতে আসা সেই মেয়েটার নাম্বারের কোন কলের রেকর্ড এখানে নেই।


আমি অবাক হয়ে আমার কল লিস্টে ঢুকি নাম্বারটা চেক করার জন্য। তবে পুরো কল লিস্ট খুজেও "+০৭৫১৮" নাম্বারটা খুজে পাই না। তার মানে মোবাইলের মতে গত কয়েকদিন ধরে রাত ১২ টার পরে আমার কোন নাম্বারের সাথেই কথা হয়নি। কিন্তু মেয়েটাতো রোজ রাতে আমাকে কল দিতো +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে।


আমার মাথা পুরো উলটপালট হয়ে গেলো। আমি মেয়েটার বাবাকে আর কিছু না বলেই সেখান থেকে বেড়িয়ে চলে আসি।

এরপর রাস্তায় দাড়িয়ে ভাবতে থাকি মেয়েটা কেনো শুধু রাতেই আমাকে কল দেয় আর

কেন শুধু আমার কাছেই সাহায্য চায়।


মেয়েটা যাহ যাহ বলে তাই হয়। তার মানে মেয়েটার আত্মা নিশ্চই আশেপাশেই রয়েছে। কিন্তু মেয়েটার আত্মা এখনো মুক্তি পায়নি কেনো তার উত্তর আমার কাছে নেই।


দিন শেষে রাতে আমি ঘরে শুয়ে ছিলাম। আজ বাড়িতে আমি একা। বাবা আর মা , মামা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভাবছিলাম আজকে রাতেও কী মেয়েটা আমাকে কল দিবে?! কিন্তু আজ কেনো কল দিবে। মেয়েটাকেতো আর কোন সাহায্য করার প্রয়োজন নেই। মেয়েটা আমাকে যা বলেছিলো আমি তাই করেছি।


এরপর হঠাৎ আবার সেই +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে কল। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। কেনো আবার কল দিলো মেয়েটা। এরপর মেয়েটার কলটা ধরলাম ওপাশ থেকে মেয়েটা কাঁদো কন্ঠে বললো:

-আমার বাবা মারা গেছে। আমি আপনার বাড়ির বাহিরে দাড়িয়ে আছি। আপনি দয়া করে একটু বাহিরে আসবেন।


এই বলেই কলটা কেটে দিলো। আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। মেয়েটা আবার আমার সাথে দেখা করতে কেনো আসলো!? আর মেয়েটার বাবা ইবা কিভাবে মারা গেলো।! তাকে তো সকালেও সুস্থ্য দেখেছিলাম। এরপরেই হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে যাই। আসলেই কী মেয়েটা বাহিরে আসছে?নাকি।


এরপর আমি ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। এই ভেবেই ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো যে এতো রাত্রে একটা মৃত মেয়ের আত্মা আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। তাও আবার আমি এখন বাড়িতে একা। তাই আত্মাটা আমার সাথে যেকোন কিছু করতে পারে।


এরপর কিছুটা ভয় কাটিয়ে দরজাটা খুলেই ফেললাম। দরজাটা খুলে ঘর থেকে বাহিরে এসে চারিদিকে খুজতে লাগলাম কে কলিং বেল বাজালো! অরিনের আত্মা কি এখানে এসেছে!! তবে আশেপাশে আমি কাউকেই দেখতে পেলাম না। কিছুটা অবাক হয়ে আমি বলতে লাগলাম:

-এখানে কী কেউ আছে? কে কলিং বেল বাজালো? অরিন? আপনি কী এখানে আছেন?


এরপর বাতাসে ভাসা ভাসা একটা কন্ঠের উত্তর আসলো:

-হ্যাঁ মনির। আমি এখানেই আছি। তবে আমি মৃত আত্মা। তাই আপনি আমায় দেখতে পারবেন না।

-তাতো বুঝলাম কিন্তু আপনি এতো রাতে আমার বাড়িতে আসলেন কেনো? ফোনেই তো কথা বলতে পারতেন। আর আপনার বাবাইবা মারা গেলো কিভাবে?


-আমার হঠাৎ মৃত্যু বাবা কিছুতেই সহ্য করতে পারেনি। আপনি তাকে হাসপাতালে দেখে আসার পরেই বাবা কিছুটা সুস্থ্যতা বোধ করে এবং বাড়িতে চলে আসে। এর পরে তিনি আবার আমার কথা ভেবে কাঁদতে থাকে এবং এক পর্যায়ে হার্ট এটাক করে মারা যায়।


-কি বলছেন?! এর জন্য আপনি এখানে এসেছেন? আমাকে কী আপনার বাবার দাফনে সাহায্য করতে হবে? মানে প্রতিবেশীদের এই কথাটা জানাতে হবে যে আপনার বাবা মারা গেছেন!!?

-নাহ। আমার আত্মীয় স্বজনেরা এর মধ্যেই চলে এসেছে। আমার অন্য আরেকটা সাহায্য চাই।


-অন্য সাহায্য?! আচ্ছা এর আগে আপনি আমার ঘরে আসুন। এখন তো রাত প্রায় ২টা বাজে। কেউ যদি দেখে এতো রাতে আমি বাহিরে দাড়িয়ে একা একা কথা বলছি তাহলে সবাই আমাকে পাগল ভাববে।


-আপনার ঘরে আমি যেতে পারবো না। আপনার ঘরে পবিত্র কোরআন শরীফ রয়েছে আর আমি এক অভিশপ্ত আত্মা। তাই চাইলেও আমি আপনার ঘরে প্রবেশ করতে পারবো না। আপনাকে আগে সেটা সড়াতে হবে।

-দুঃখিত এটা আমি কিছুতেই সড়াতে পারবো না। চলুন তার চেয়ে ভালো আমরা ছাদে যাই।

-চলুন।


এরপর আমি সিড়ি দিয়ে ছাদে উঠছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম একটা মৃত মেয়ের আত্মার সাথে আমি এখন ছাদে দাড়িয়ে থাকবো! এর চেয়েতো নিচেই ভালো ছিলো। একটা মৃত মেয়ের আত্মা আমার সাথে এতো রাতে ছাদে যাচ্ছে এটা ভেবেও প্রচন্ড ভয়ে আমার পুরো শরীর শিহরে উঠছিলো।


এরপর আমরা দুজনেই ছাদে উঠলাম। আমি ভয়ে ভয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম:

-অরিন? আপনি এসেছেন? কী যেনো সাহায্যের কথা বলেছিলেন?


-হ্যাঁ। একমাত্র আপনিই আমায় সাহায্য করতে পারেন। আমাকে এই সব কিছুর প্রতিশোধ নিতে হবে। আপনি আমায় সাহায্য করবেন?!

-প্রতিশোধ! কিসের প্রতিশোধ?

-যারা আমাকে হত্যা করেছে আমি তাদের খুজে বের করে তাদের রক্তে স্নান করতে চাই।

-মানে কী?! তাদের শাস্ত্রী একদিন ঠিকই

হবে। আপনি মারা গেছেন। এখন আপনার এপার দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে ওপার দুনিয়ায় চলে জাওয়া উচিত।


-হ্যাঁ। আমি অবশ্যই যাবো। তবে এর আগে ঐ নরপশুদের হত্যা করে যাবো। আপনিই বলুন আমার কী অপরাধ ছিলো? তারা আমাকে কেনো হত্যা করেছে? শুধু শারীরিক চাহিদা পুরণের জন্য?


 আমার জন্মের পরেই আমার মা মারা যায়। তাই সবাই আমাকে অপয়া বলতো। কিন্তু আমার বাবা নিজের থেকেও আমাকে বেশি ভালোবাসতো।

তার স্বপ্ন ছিলো আমাকে ডাক্তার বানাবে। তাই শত অভাবের মাঝেও বাবা আমার লেখাপড়া কখনো বন্ধ হতে দেয়নি। আমি এইবার এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিতাম। একটা সরকারী মেডিকেলে ভর্তি হওয়ারো প্রস্ত্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার জীবনটা পুরো বদলে দিলো সেই নরপশুগুলো। কী দোষ ছিলো আমার!? আর কী দোষ ছিলো আমার বাবার!! আমরাতো সুখেই ছিলাম কিন্তু কেনো আমার সাথে তারা এমন করলো। আমাকে তাদের খুন করে প্রতিশোধ তো নিতেই হবে।


-দেখুন আপনি যাহ খুশী তাই করুন। কিন্তু আমাকে এর মধ্যে টানছেন কেনো? আর আপনি আমাকে কী করে চিনেন সেটাতো আগে বলুন।

-সেটা বলার সময় এখনো হয়নি। আপাতত আপনি আমাকে সাহায্য করুন।

-আমি আপনাকে আর কোন সাহায্য করতে পারবো না। আপনি চলে যান।


-আমি যদি এখান থেকে চলে যাই তাহলে বুঝে নিন আপনার পরিবারের সাথে এমন কিছু খারাপ ঘটবে যেটা আপনিকল্পনাও করতে পারবে না।

-আপনি সব কিছুর মাঝে কেনো শুধু আমার পরিবারকে টেনে আনো?

-আপনাকে তো বললাম যে শেষ বারের মতো আর একবার আমাকে সাহায্য করুন। কথা দিচ্ছি এরপরে কখনো আপনাকে আর বিরক্ত করবো না।

মুক্ত করে দিবো আপনাকে।


-আচ্ছা বলুন আপনার কী সাহায্য চাই?

-আমার একটা শরীর চাই। যেই শরীরে আমি আমার আত্মাকে প্রবেশ করাতে পারবো। আমি সেই শরীরকে নিজের আয়ত্তে আনবো। তখন আর আমার অন্য কারোর সাহায্যের প্রয়োজন হবে না। নিজেই নিজের প্রতিশোধ নিতে পারবো । কথা দিচ্ছি সেই শরীরটা পেলেই আমি আপনাকে মুক্ত করে দিবো।

-আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন?! আপনাকে আমি শরীর দিবো কোথা থেকে? আপনি কী কোন ভাবে আমার শরীরে আপনার আত্মা প্রবেশ করাতে চাইছেন?!


-সেটা পারলে কী আর এতক্ষন আপনার সাথে দাড়িয়ে কথা বলতাম! কখন আপনার শরীরে ঢুকে যেতাম। আমি কোন জীবিত শরীরে ঢুকতে পারবো না। আমার একটা মৃত লাশ লাগবে।

-কিসের লাশ ? আমি এখন আপনার জন্য লাশ পাবো কোথা থেকে? আর আমি লাশইবা আনবো কিভাবে?


-সেটা আপনি জানেন। কিন্তু কাল আমাবস্যা রাত। কালকের মধ্যেই আমার একটা মেয়ের লাশ চাই। না হলে কিন্তু আমি আপনার বাঁচা মুশকীল করে দিবো।

-বিশ্বাস করুন, আমার পরিচিত কোন হাসপাতাল নেই। যেখান থেকে আমাকে একটা লাশ কেউ জোগাড় করে দিবে। আমি এমন কাজ করতে পারবো না।


আপনি অন্য কোথাও চেষ্টা করেন।

-হাসপাতালের কী দরকার? আপনার বাড়ি থেকে কিছুটা দুরেই তো একটা কবরস্হান রয়েছে। সেখানে শুনেছি রোজ ২-৩ টা লাশ দাফন দেওয়া হয়।

-হ্যাঁ। তো?

- আপনার বাড়িতেতো কোদাল আছে তাই না? কবরস্হানে চলে যান আপনি। সেখান থেকে একটা নতুন কবর খুরে একটা মেয়ের লাশ নিয়ে আসবেন আমার জন্য।

পারবেন না?

-আমি এতো জঘন্য কাজ কিছুতেই করতে পারবো না। আপনি চলে যান এখান থেকে।

-নাহ। আপনাকে এই কাজটা করতেই হবে।

আমার কালকের মধ্যেই একটা মেয়ের তাজা লাশ চাই।


মৃত মেয়েটার আত্মার এইসব কথা শুনে আমার মাথা পুরো গরম হয়ে

গেলো। যেই আমি কবর দেখলে দিনের বেলায়ই সেই রাস্তা দিয়ে হাটতাম না। আর সেই আমাকেই এই মেয়েটার আত্মা রাতের বেলায় কবরস্হানে গিয়ে কবর খুরে লাশ আনতে বলছে!! আমার পক্ষে এটা করা কিছুতেই সম্ভব না। সে চাইলে যেকোন কিছু করুক আমি আর তার কোন কথা শুনতে পারবো না। ভাবতে লাগলাম তাকে কী করে এখন এখান থেকে তাড়িয়ে দিবো।


হঠাৎ মনে পড়লো মেয়েটার আত্মাতো অভিশপ্ত। তাই আমার ঘরে কুরআন শরীফ থাকাতে সে প্রবেশ করতে পারেনি। তারমানে আমি যদি এখন কুরআনের কিছু আয়াত তাকে পড়ে শুনাই তাহলে সে ভয়েই চলে যাবে।


এরপর আমি কুরআনের কিছু আয়াত পড়তে শুরু করি। এরপর যাহ ভেবেছিলাম তাই হলো মেয়েটার আত্মা জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে লাগলো আর বলতে লাগলো:

-নাহ! তুমি এটা করতে পারো নাহ! তুমি এটা ঠিক করলে না! আমাকে এখান থেকে তাড়িয়ে তুমি ঠিক কাজ করলে না। এর ফল তোমাকে ভোগ করতেই হবে। তোমার পরিবারকে ভোগ করতে হবে।


এই বলেই মেয়েটার আত্মা চিৎকার করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলো। আমি যেনো হাফ ছেরে বাঁচলাম। এরপর দৌড়ে এসে নিজের ঘরে প্রবেশ করলাম।


অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। এরপরে আবার পুরো বাড়িতে আমি একা রয়েছি। তাই তারাতারি ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপরে হঠাৎ একটা অদ্ভুত ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙে গেলো আমার।


স্বপ্নে দেখলাম," আমি একটা কোদাল হাতে নিয়ে বাড়ির পাশের সেই কবরস্হানের দিকে হেটে যাচ্ছিলাম। এরপরে হঠাৎ একটা নতুন কবরের সামনে এসে দাড়ালাম। কবরটা কোদাল দিয়ে খুরতে লাগলাম। কবরটা খুরার পর একটা কাফনে মোরা লাশ দেখতে পেলাম। লাশটার মুখটা থেকে কাফনের কাপড়টা সরালাম লাশটার মুখ দেখার জন্য। ঠিক তখনি দেখলাম একটা অচেনা মেয়ের লাশ এটা। মেয়েটা বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে আর ভয়ংকর ভাবে হেসে চলেছে। আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই। হঠাৎ কবরের উপর থেকে কতগুলো টুপি পড়া লোক কবরের ভেতরে আমার উপরে মাটি ফালাচ্ছিলো। এরপরে আমি কবর থেকে উঠে আশার চেষ্টা করি কিন্তু মেয়েটার লাশটা শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে। এরপরে আমি চিৎকার করতে থাকি। কেউ আমাকে বাচাও।

কেউ আছো!??"


এর পরেই আমার ঘুমটা ভেঙে যায়। মাঝরাতে বাড়িতে একা ছিলাম। একে বিদ্যুত ছিলো না তার উপর বাহিরে টানা বৃষ্টি আর বজ্রপাত হচ্ছিলো। তার উপর আমি আবার এতো ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমার মনে হচ্ছিলো যে আমি এখন ভয়েই মারা যাবো। আমার মনে হচ্ছিলো আমার ঘরে কেউ হাঁটাচলা করছে। কিন্তু এটা তো অসম্ভব কারণ আমার বাবা-মা বাড়িতে নেই আর ঘরে পবিত্র কুরআন শরীফ রয়েছে যাতে করে ঘরে কোনো অভিশপ্ত আত্মা প্রবেশ করতে পারবে না।


এরপরে অনেক কষ্টে কাঁথার ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে ভয়ে ভয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।


সকাল বেলা মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। বুঝলাম যে মা আর বাবা, মামা বাড়ি থেকে ফিরেছে। যাক কিছুটা সঃস্তী পেলাম।


এরপর ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলেই দেখি মা আমার দিকে

রাগান্বীত ভাবে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।


এরপর মা যাহ বললো:

-তোর এটা করা উচিত হয়নি। মেয়েটা বিপদে পরে তোর কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিলো। তোর ওকে সাহায্য করা উচিত ছিলো।


আমি মায়ের কথা শুনে এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলাম আর ভাবতে লাগলাম আমিতো মা কে কিছু বলিনি মেয়েটা সম্পর্কে তাহলে মা মেয়েটার কথা জানলো কিভাবে!!

?

এরপর দরজার সামনে আমার বাবা আসলো। সেও বললো:

- বাবা! তোর এই মৃত মেয়েটার আত্মাকে সাহায্য করা উচিত ছিলো।


আমি আমার বাবা আর মায়ের কথা শুনে আৎকে উঠলাম। এরা এসব কী বলছে?! এরা মেয়েটা সম্পর্কে কিভাবে জানলো?


........


আমি আমার বাবা আর মায়ের কথা শুনে আৎকে উঠলাম। এরা এসব কী বলছে?!

আমার বাবা আর মায়ের সাথেও দেখা করেছে নাকি?!


এ ভেবেই আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে যাই। এরপর আমি ভয়ে ভয়ে আমার মাকে বলি-

-কী বলছো তোমরা? এসব তোমরা জানলে কিভাবে?

এরপর মা যাহ বললো আমি পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।

-কী বললাম মানে? তোকে খাবার টেবিলে গিয়ে খাবার খাওয়ার কথা বললাম। আর তুই পাগলের মতো এইভাবে লাফিয়ে উঠলি কেনো? কোন স্বপ্ন দেখছিলি নাকি?

বাবা বললো

-কিরে? এইভাবে চিৎকার করলি কেনো?

আমি কিছূই বুঝলাম না। তারাতো আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছিলো। তাহলে নিশ্চই আমিই ভুল শুনেছি। ভাবলাম হয়তো সারারাত মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা করার কারণে সকাল বেলা বাবা-মায়ের স্বাভাবিক কথাটাই অস্বাভাবিক লেগেছে।


তারপর আমি বাবা-মাকে বললাম যে আমি তাদের সাথে মজা করছিলাম এবং এরপর পরিবেশটাকে তাড়দের সামনে স্বাভাবিক করে ফেলি।

আমি নিজেও ঘটনাটা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম।

ভাবলাম হয়তো আমার শুনায় ভুল ছিলো।


এরপর নাস্তা করে বাড়ির বাহিরে বের হলাম একটু হাঁটাহাঁটি করার জন্য। পথেই দেখা হয় বাল্য বন্ধু নাঈমের সাথে। নাঈম বললো

-চল দোস্ত। আজ এলাকাটা একটু ঘুরে আসি। অনেকদিন একসাথে ঘুরা হয়না।


এরপর আমরা একসাথে হাঁটতে থাকি। হঠাৎ সেই কবরস্হানের পাশের রাস্তায় এসে দাড়ালাম আমরা। কবর স্হানে বেশ ভীর দেখতে পেলাম আমি। তাই বন্ধু নাঈমের কাছে জানতে চাইলাম

-কিরে নাঈম ? এতো মানুষ কেনো কবরস্হানে? কেউ মারা গেছে নাকি?

-হ্যাঁ। কেন তুই জানিস না?

-নাহ। কে মারা গেছে?

-গতকাল রাতেই একটা মেয়ে আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছে। মেয়েটা তাদের সাথে এখানে থাকতো না। ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করতো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। হঠাৎ পরিবারের লোকদের সাথে তার অনেক ঝগড়া হয়। এরপর সে ঢাকাতেই তার রুমে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। 

আজ সকালে লাশটা এখানে আনা হয়েছে আর এখন দাফন দেওয়া হচ্ছে।

-ওহ । আমি কী মেয়েটাকে চিন্তাম?

-মনে হয় না। কারণ মেয়েটা খুব একটা এখানে থাকতো না। কয়েক মাস পর পর আসতো আর সেই দিনেই চলে যেতো। আচ্ছা দাড়া মেয়েটার ছবি আমার মোবাইলে আছে। তোকে দেখাচ্ছি ।

-থাক! মৃত মানুষের ছবি দেখলে রাতে ঘুম হবে না।

-ভীতুর একটা। আমি কী তোরে লাশের ছবি দেখাবো!!আমার সাথে মেয়েটার ইনস্টাগ্রামে ফলো দেওয়া  ছিলো। সেখান থেকে ছবি দেখাচ্ছি।

-আচ্ছা দে।


এরপর নাঈম মোবাইলটা বের করে আমাকে, যে মেয়েটা মারা গেছে তার ছবি দেখালো।

আমি মেয়েটার ছবি দেখে আৎকে উঠলাম।

আরে! এইটাতো সেই মেয়েটা আমি গত রাতে স্বপ্নে দেখেছিলাম কবরে। আমি গতরাত স্বপ্নে, নতুন কবর খুঁড়ে কাফনের কাপড় সড়িয়ে যে অচেনা একটা মেয়ের চেহারা দেখেছিলাম সেই মেয়েটা আর এই মেয়েটার ছবি একই।

তার মানে এই মেয়েটার লাশই গতরাতে স্বপ্নে আমি দেখছিলাম!!


কিন্তু আমি গতরাতে স্বপ্নে হঠাৎ এই মেয়েটাকে কেনো দেখেছিলাম বুঝতে পারছিলাম না। নাঈম আমার আৎকে উঠা দেখে অবাক হয়ে বলে

-কিরে, মনির? কী হয়েছে!?

-কিছু না। চল এখান থেকে অন্য কোথাও যাই।

আমি নাঈমকে কিছুই বলিনি। কারণ সে কথাগুলো বিশ্বাস করবে না এবং ব্যাপারটা নিয়ে আমার সাথে মজা করবে।


এরপর আমি আর নাঈম একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। আমি চা খাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম এইগুলো আমার সাথে কী হচ্ছে?! একটা মৃত মেয়ে কল দিয়ে আমার সাথে কথা বলে! আবার আরেকজন মেয়ে যে রাতে মারা গেলো সেই রাতেই কেনো তাকে স্বপ্নে দেখলাম?!


আমি এইগুলা চিন্তা করছিলাম হঠাৎ একটা ভিক্ষুক আসলো আমার সামনে। ভিক্ষুকটা আমার দিকে ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসতে হাসতে বললো:

-কিরে কী ভাবছিস এতো? মেয়েটাকে তোর অবশ্যই সাহায্য করা উচিত ছিলো। তোর এখনো সময় আছে মেয়েটাকে সাহায্য কর। না হলে পরে বিপদে পড়ে যাবি।


আমি ভিক্ষুকটার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। ভিক্ষুকটা কী করে জানলো আমি কী ভাবছি?! আমি অনেকটা রেগেই ভিক্ষুককে বলি

-কে আপনি? আর এসব কথা আমায় কেনো বলছেন?

আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন??!

এরপর নাঈম আমাকে বললো

-কিরে পাগল হলি নাকি? ভিক্ষুকটার সাথে এমন ব্যবহার করছিস কেনো?


-পাগল হবো মানে! তুই শুনলি না ভিক্ষুকটা আমাকে কী বললো?

-কী বললো মানে? লোকটা তোকে বললো যে লোকটার মেয়ে অসুস্থ আর লোকটা ২ দিন ধরে কিছু খায়নি। তাই সাহায্য চাইলো। আর তুই এতো রেগে গেলি কেনো?

আমি নাঈমের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে যাই। আমিতো ভিক্ষুকটার মুখে অন্য কোন কথা শুনেছিলাম। দেখলাম আশেপাশের লোকগুলোও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এরপর নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেই ভিক্ষুকটার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করলাম।


এরপর নাঈম আমাকে বললো

-তোর কী হয়েছে বলতো? আজ এতো অস্বাভাবিক ব্যবহার করছিস কেনো?

-কিছু না রে । আজ ভালো লাগছে না। তুই থাক আমি বাড়িতে গেলাম।


তারপর নাঈমকে সেখানে রেখে একা একা বাড়ির পথে রওনা দেই। আর ভাবতে থাকি আমি কি পাগল হয়ে গেলাম! মানুষ আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে আর আমি অদ্ভুত কথা শুনি। তাহলে কি সেই মেয়েটাকে সাহায্য না করার কারণে মেয়েটার অভিশপ্ত আত্মা আমায় পাগল করে দিচ্ছে!?


কিন্তু আমি এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

এরপর বাড়িতে এসে পৌছালাম। জানতাম ভেতরে মা আর বাবা রয়েছে। তাই কলিং বেল বাজালাম। তবে ভেতর থেকে কেউ দরজা খুললো না। এরপর কয়েকবার কলিং বেল বাজালাম কিন্তু ভেতরে কারো সাড়া শব্দ পেলাম না।


কিছুটা অবাক হলাম আমাকে না বলেতো তারা কোথাও যায় না! আর দিনের বেলা তাদের ঘুমানোরও অভ্যাস নেই। তাই মনে কিছুটা ভয় ও জেগে উঠলো।


আমি ভয়ে ভয়ে মোবাইলটা বের করে বাবা আর মাকে কয়েকবার কল দিলাম। তবে তারা কেউই আমার কলটা ধরলো না। এরপর আমি দরজায় যেই হালকা করে ধাক্কা দিলাম দেখলাম দরজাটা ভেতর থেকে খোলাই ছিলো। তারপর আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকে দেখলাম পুরো ঘর অন্ধকার করা রয়েছে। আমি ভয়ে ভয়ে লাইট টা চালু করলাম। চালু করে যাহ দেখলাম আমি ভয়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।


আমার বাবা-মা দুজনেই মেঝেতে পড়েছিলো। আমি মা-বাবা বলে চিৎকার করতে করতে তাদের কাছে গেলাম। এরপর দেখলাম দুজনেই অজ্ঞান হয়ে পরে রয়েছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম নাহ। তাদের চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতে লাগলাম। কিন্তু তাদের জ্ঞান ফিরলো না।এরপর মামাকে কল দিয়ে বললাম যে বাবা মা অজ্ঞান হয়ে বাড়িতে পরে রয়েছে আর বাড়িতে আমি এখন একা । তাই দ্রুত তাকে আসতে বললাম। আমার মামার বাড়ি আমাদের পাশের এলাকাতেই।


একটু পর মামা আসলো। মামা বাবা আর মাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে অনেক অবাক হয়। এরপর বাবা-মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার যাহ বললো তা শুনে আমি আর মামা দুজনেই আকাশ থেকে পরলাম। ডাক্তার আমাকে বললো:-

-দুঃখিত । আপনার বাবা-মা দুজনেই প্যারালাইসড হয়ে গেছে।


এরপর আমি আর মামা দুজনেই অবাক হয়ে ডাক্তারকে বললাম যে:-

-তারাতো আজকে সকালেও সুস্থ ছিলো। আর তাদের কোন অসুখও ছিলো না। আর তাদের বয়সো এতোটা বেশি হয়নি। তাহলে তারা প্যারালাইসড হলো কিভাবে?


ডাক্তার বললো:

-সেটা আমিও দেখেছি কিন্তু কারণটা বুঝতে পারছি না। যতটুকু মনে হলো কোন কিছু দেখে প্রচুর ভয় পেয়েছ তারা। তাই প্যারালাইসড হয়েছে। আপনারা অপেক্ষা করুন। প্যারালাইসড থেকে কেউ এক সপ্তাহে মুক্তি পায়। কেউ এক মাসে আবার কেউ এক বছরেও পায় না। আমরা চেষ্টা করবো বাকিটা আল্লাহর কাছে।


এরপরেই ডাক্তার চলে গেলো। আর আমি বাবা মায়ের জন্য কাঁদতে থাকি। মামা আমাকে শান্তনা দেয় যাতে আমি ভেঙে না পড়ি। আমার মনে হতে থাকে বাবা-মা কী দেখে এতোটা ভয় পেতে পারে! হঠাৎ আমার মাথায় সেই কল দেওয়া অভিশপ্ত মেয়েটার কথা মনে পড়লো। মেয়েটা জাওয়ার আগে আমাকে বলেছিলো যে আমার পরিবারকে সে শেষ করে দিবে। তাহলে কি সেই মেয়েটার আত্মাই এই কাজ গুলো করেছে?! এর উত্তর পেতে হলে আমাকে আগে বাড়িতে যেতে হবে। কারণ হয়তো মেয়েটার আত্মা সেখানেই রয়েছে।


এরপর মামাকে বলে আমি বাড়ির চাবি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। মামা কিছুটা অবাক হলো যে আমি বাবা-মাকে এই অবস্হায় রেখে বাড়িতে যেতে চাইছি। কিন্তু আমার আর কিছুই করার নেই । আমাকে বাড়িতে যেতেই হবে। আর সব কথা মামাকে বলাও যাবে না।


বাড়িতে পৌছে সব কিছু স্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো। আমি ঘরে ঢুকলাম। হাতে মোবাইলটা নিয়ে সেই মৃত মেয়ের কথা ভাবছিলাম। কিন্তু আসলেই কি মেয়েটার আত্মা এসব করছে নাকি কাকতলীয় ভাবে এসব ঘটছে তাও নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। তবে

আমার মনে হচ্ছিলো সেই মেয়েটার আত্মাই আমার বাবা আর মাকে প্যারালাইসড করেছে। তাই বুঝলাম যে মেয়েটা যাহ বলেছে তাই আমাকে করতে হবে। না হলে মেয়েটা আরো খারাপ কিছু করতে পারে।

তবে মেয়েটার আত্মার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। কারণ মেয়েটা যে অদ্ভুত নাম্বার থেকে আমায় কল করেছিলো বাস্তবে এর কোন অস্তিত্বই নেই।


এর পর আমাকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ আবার সেই +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে কল আসলো। আমিতো এর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমি কিছুটা ভয় পেলেও দ্রুত কলটা ধরলাম। ঐ পাশ থেকে মেয়েটার কন্ঠে শুনলাম:


-কেমন আছেন? গতরাতের স্বপ্নটা কেমন ছিলো আপনার? সকালে আপনার বাবা আর মায়ের অদ্ভুত আচরণ কেমন লেগেছিলো ? রাস্তায় সেই ভিক্ষুকের কথাগুলো কেমন লেগেছে? আর বাবা-মা কে প্যারালাইসড অবস্থায় হাসপাতালে রেখে আসতেই বা কেমন লেগেছে? অনেক ভালো তাই না??!


-তার মানে এসব কিছু আপনিই করেছেন? আমার বাবা-মা আপনার কী ক্ষতি করেছিলো? তাদের সাথে এমন করলেন কেনো??!

-আপনাকেতো আগেই বলেছি। শেষ বারের মতো একটা উপকার করতে। না হলে আপনার পরিবারকে কবরস্হানে পাঠানোর দায়িত্ব আমার।

-কিন্তু কবর খুঁড়ে লাশ আনা আমার পক্ষে সম্ভব না।

-তাহলে আপনার বাবা-মাকেও ভুলে যান। তাদেরকে প্যারালাইসড করেছি আমি। আমি চাইলেই তাদের অভিশপ্ত প্যারালাইসড জীবন থেকে মুক্তি দিতে পারি। কিন্তু আমি যদি এখন তাদের মেরে ফেলি তাহলে তাদের ফিরিয়ে

আনার উপায় আমারো জানা নেই। তখন কেঁদেও লাভ হবে না।


-নাহ! প্লিজ। আপনি এমনটা করবেন না। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। তবে তাদের কোনো ক্ষতি করবেন না।

-তাহলে যান। আজ আমাবস্যা রাত। আজকের মধ্যেই আমার একটা তাজা মেয়ের লা*শ

তাহলে এতোদিন পর মেয়েটা আবার কেনো কল দিয়েছে?!!!

√√

প্রশ্নটার উত্তর কিছুতেই আমার মাথায় আসছিলো না। তবে এর আগে মেয়েটা কখনো দিনে কল করেনি আমায়। এখন কী তাহলে নতুন শরীর পেয়ে দিনেও আমাকে জ্বালাতে চলে এসেছে!! বুঝলাম কলটা ধরা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তাই ভয়ে ভয়ে কলটা ধরলাম। ঐ পাশ থেকে মেয়েটাই প্রথমে বললো


-হ্যালো!? কেমন আছেন ?

-এতোদিন ভালোই ছিলাম কিন্তু আপনার কল দেখে মনে হচ্ছে আর ভালো থাকা হবে না।

-ভয় পাবেন না। আমি আপনাকে আর কিছু করতে বলবো না।

-তাহলে কল দিয়েছেন কেনো?


-আমাকে যে ছয় জন মিলে হত্যা করেছিলো তাদের সবাইকে আমি খুজে পেয়েছি। এরা শহরের একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এরা সেদিন একটা পার্টি শেষ করে ফিরছিলো। সবাই ড্রিংক করা অবস্হায় ছিলো। এরপরেই তারা আমাকে ধরে নিয়ে সেই জমিদার বাড়িতে যায় এবং আমাকে রেপ করে আর হত্যা করে। এদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয়ই আমি পেয়ে গেছি। একজনের নাম রায়হান। সে একজন নামকরা ব্যবসায়ী আসাদ চৌধুরীর 

 ছেলে। আরেকজনের নাম আবির। সে ডাক্তার করিম   খানের ছেলে। আর আরেকজনের নাম রবিন । সে একজন প্রভাষকের ছেলে। 


অনেক কষ্টে আমি তাদের খুজে পেয়েছি। এখন প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। একের পর এক এই ছেলেগুলোকে খুন করেই তৃপ্তি পাবো আমি।


-কিন্তু এসব কথা আপনি আমায় বলছেন কেনো? আপনিতো বলেছিলেন যে আমায় মুক্তি দিয়ে

দিয়েছেন। তাহলে আবার কল করেছেন কেনো!!

-কী করবো বলুন? কথা যে রাখতে পারলাম না! এই পৃথিবীর একমাত্র আপনার সাথেইতো আমি মন খুলে কথা বলতে পারি, আর কারো সাথেতো আমি যোগাযোগ করতে পারিনা।

-কিন্তু আপনার সাথে কথা বলতে আমার অনেক ভয় করে। কারণ আপনিতো অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছেন।


-তাই! কিন্তু আমার আত্মারতো এখনো মৃত্যু হয়নি। আপনি জানেন এই নতুন শরীর পাওয়ার পর থেকে কতো কষ্টের সম্মুখ্খীন হতে হয়েছে আমার। কতো কষ্টে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের ঠিকানা বের করেছি। এখন শুধু রাতের অপেক্ষায়।

-রাত! রাতে কী করবেন?

-আজ রাতই তাদের জীবনের শেষ রাত। 


আজকে রাতেই তাদের আমি খুন করবো। আচ্ছা মানুষের রক্ত, হৃদপিন্ড আর কলিজা খেতে কেমন হয়??!

-কী বলছেন এসব!??

-ভাবছি ছেলেগুলোকে খুন করার পর তাদের শরীরের এই অংশগুলো খেয়ে দেখবো যে স্বাদ কেমন!


মেয়েটার মুখে আবার এরকম অদ্ভুত পিশাচিনী কথা শুনে ভয়ে আমার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো। তাই কলটা কেটে দিলাম। মেয়েটার এইসব কথা শুনলে দিনের বেলাতেই গাঁ শিহরে উঠে!


এরপর মেয়েটা দিনে আর কল দেয়নি আমাকে। বাকি দিনটা স্বাভাবিক ভাবেই কাটলো আমার।


ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত প্রায় ১ টা বেজে গেছে। ভাবলাম এখন ঘুমাতে হবে।


যেই ঘুমানোর প্রস্ত্তুতি নিচ্ছিলাম আবার সেই +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে কল আসলো।


তবে ঘটনাটা আমার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলো তাই কলটা দেখে আজ আর এতোটা ভয় লাগেনি। কিন্তু বেশ বিরক্ত লাগলো আর রাগ উঠলো। এতো রাতে আবার কেনো কল দিয়েছে?!


প্রথমবার কলটা ধরলাম না। এরপর মোবাইলটা সাইলেন্ট করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কেনো জানি মোবাইলটা কিছুতেই সাইলেন্ট হচ্ছিলো না। এরপর রেগে মোবাইলটা বন্ধ করে রাখলাম। তবে ঘটনাটা ঠিক আগের বারের মতোই ঘটলো। বন্ধ মোবাইলেই কলটা বেজে উঠলো আবার। বুঝলাম যে এবার কলটা ধরতেই হবে। না হলে রিং এর শব্দে বাবা-মা ঘুম থেকে উঠে যাবে।


কলটা ধরে রাগান্বীত কন্ঠে আমিই বললাম:

-কী হয়েছে? এতো রাতে আবার কল দিয়েছে কেনো?

-আপনি জানেন এখন আমি কোথায় আছি? আমি এখন ৩ টা তাজা লাশের উপর বসে আছি।

-মানে?! [কিছুটা আৎকে উঠে ভয় পেয়ে বললাম]

-আপনাকে যে আজ দুপুরে যে ৩ টা ছেলের নাম বলেছিলাম। আজ তাদের একসাথে কিছুক্ষন আগে রাস্তায় হাঁটতে দেখেছিলাম। আজো তারা নেশাগ্রস্থ অবস্হায় ছিলো। তাই তাদের খুন করার পুরো নকশা করে ফেলি। 


এরপর আমি তাদের সামনে গিয়ে দাড়াই। এরপর কামনা দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকাই এবং পরে আবার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করি। ওরা বোকার মত আমার পিছু পিছু আসছিলো। আমিতো এটাই চেয়েছিলাম।

তারপর আমি একটা ঝোপের ভেতর ঢুকে লুকিয়ে পড়ি। ওরা আমাকে পাগলের মতো খুজতে থাকে চারিদিকে। এরপর আগে থেকেই এনে রাখা ছুরিটা ঝোপ থেকে বের করলাম আমি আর ছুরিটা হাতের পেছনে নিয়ে তাদের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। তারা নেশাগ্রস্থ ছিলো তাই কিছু বুঝতে পারলো না। তারা অবাক ললাট দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এরপর তারা কিছু বুঝে উঠার আগেই ছুরিটা বের করে এক এক করে ৩ জনের গলাতেই চালিয়ে দিলাম এবং এরপর তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।


 তারপর এখন তাদের লাশ টেনে ঝোপের ভেতর নিয়ে এসেছি আর তাদের লাশের উপর বসে আছি।

-আমার আজ কেমন যেনো একটা অন্যরকম তৃষ্ণা পাচ্ছে! আমার মনে হচ্ছে এই তৃষ্ণা একমাত্র মানুষের তাজা রক্তই মেটাতে পারবে। তাই আমি এখন তাদের লাশ গুলো থেকে রক্ত খাচ্ছি চুসে চুসে। আহ! রক্তের স্বাদ যেনো অমৃত! মানুষের রক্তের স্বাদ যে এতোটা ভালো হতে পারে তা আগে জানা ছিলো না। এরপর এখন আমি ছুরি দিয়ে তাদের বুক ছিদ্র করে তাদের কলিজা আর হৃদপিন্ড খাবো।


এ ভয়ানক কথা শুনার পরই আমি ভয়ে কলটা কেটে দিতে চাইলাম। কিন্তু কলটা কিছুতেই কাটছিলো না। ঐ পাশ থেকে শুধু কিছু ভয়ংকর শব্দ কানে আসছিলো। মনে হচ্ছিলো কেই কিছুর হাড় কামড়ে খাচ্ছিলো।

আর চিৎকার করে করে বলছিলো। আহ! তাজা মাংসের কী স্বাদ!!


এরপর প্রচন্ড ভয়ে আমি মোবাইলটা ছুরে মারি ঘরের দেয়ালে। এরপর কাঁথার নিচে মাথা ঢুকিয়ে ভয়ে ভয়ে শুয়ে পড়ি। ভাবতে লাগলাম এতো রাতে এই ধরনের কথার কোন মানেই হয় না। এইরোকম কথা শুনার পর রাতে কেউ ঘুমাতে পারে কিনা তা আমার জানা নেই !


তারপর আমি অনেক কষ্টে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে

 ঘুম থেকে উঠে ঘরের মেঝেতে মোবাইলটা খুজতে লাগলাম। কিন্তু মোবাইলটা দেখলাম আমার বিছানাতেই পরে রয়েছে। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। গতকাল রাতেতো মোবাইলটা দেয়ালে ছুরে মেরেছিলাম কিন্তু মোবাইলের কিছুই হয়নি। মোবাইলের কোথাও একটা দাগও নেই। কিছুই বুঝতে পারলাম না।


এরপর হাত-মুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা করে নিলাম। নাস্তা করার পর একটু টিভির ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখলাম বাবা টিভির দিকে তাকিয়ে হা করে খবর দেখছে। আমিও টিভির দিকে তাকিয়ে অনেকটা হা হয়ে গেলাম।


-আজ সকালে রাজধানীর পাশেই একটা ঝোপের কাছ থেকে ৩ টা ছেলের ক্ষত বিক্ষত ছিন্ন ভিন্ন লাশ পাওয়া গেছে। তাদের লাশের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো কোন হ্রিংস প্রানী তাদের ছিড়ে খেয়েছে। এছাড়া তাদের পুরো শরীর রক্ত শুন্য ছিলো। কিন্তু শহরের ভেতর এইরকম একটা ঘটনা কিভাবে ঘটলো তার উত্তর এখনো মিলেনি। যে ৩ জন ছেলের লাশ পাওয়া গেছে তারা ৩ জনেই শহরের একটা নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো।


আমিতো টিভিতে খবরটা দেখে পুরোই অবাক হয়ে গেলাম। এবারো মেয়েটা যা যা বলেছিলো তাই হলো। তার মানে মেয়েটা গতকাল রাতে সত্যি সত্যিই এই পৈশাচিক কাজটা করেছে!! সেই তাজা মানুষগুলোকে জানোয়ারের মতো করে খেয়েছে !!!?


এটা ভেবেই আরো একবার পুরো শরীর শিহরে উঠলো। তার মানে মেয়েটা তার হত্যাকারীদের এই নির্দয় ভাবে হত্যা করে প্রতিশোধ নিচ্ছে। তাহলে মেয়েটার কথামতো সে আরো ৩ জনকে এইভাবেই খুন করবে!! কারণ মেয়েটাকে মোট ৬ জন মিলে হত্যা করেছিলো। কিন্তু এই বাকি ৩ জন কারা বা কোথায় থাকে এটাই আমার মাথায় আসছিলো না।


এইগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে একটা কল আসলো।

আমি এবার আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলাম কলটা দেখে। আমার মনে হচ্ছিলো যে মেয়েটা আমাকে ভয় পাইয়েই মারবে। এরপর ভয়ে ভয়ে কলটা ধরলাম ধরেই কাঁপা কন্ঠে তাকে বললাম:


-কী ব্যাপার?! এসব আবার কী শুরু করেছেন আপনি ?!

-সবেতো ৩ জনকে মারলাম আরো ৩ জন তো বাকিই রয়ে গেলো।

বাকি ৩ জনের ঠিকানাও পেয়ে গেছি আমি। এখন শুধু রাতের অপেক্ষা। এদের ৩ জনের মধ্যে  একজন আছে যে তাকে আপনি খুব ভালো করেই চিনেন। সে আপনার অনেক পরিচিত একজন মানুষ!

-মানে কী?! আমার পরিচিত মানে? আমার পরিচিত কে? নাম কী তার? আমার পরিচিত কোন মানুষতো এই রকমের কাজ করতে পারে না! আর তুমি তাকে মারতেও পারো না!


আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে আমার পরিচিত কে হতে পারে যে এই কাজটা করতে পারে!!?


এরপর মেয়েটার যার নাম বললো তা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম।

মেয়েটা বললো:শেষ যে খুন টা করবো সে আপনারই পরিচিত, আপনারই একজন প্রিয় বন্ধু। যার নাম নাঈম।


আমি নামটা শুনে খাড়া থেকে বসে পড়লাম। নাঈম  মানে?! আমার বাল্য বন্ধু নাঈম! তাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। আমরা সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে   একসাথে আছি। সে কখনোই নেশা করতো না। আর রেপ করে কাউকে খুন করবে এটারতো প্রশ্নেই আসে না! আমি অনেকটা রেগেই মেয়েটাকে বললাম:


-এটা কিছুতেই হতে পারে না! নাঈম কিছুতেই এই কাজ করতে পারে না। আপনার নিশ্চই কোথাও ভুল হচ্ছে! আপনি আমার বন্ধুর কোন ক্ষতি করতে পারেন না।

-ভুল মানুষের হয় কিন্তু আত্মাদের হয় না। আপনার বিশ্বাসে-অবিশ্বাসে আমার কিছু যায় আসে না। আমি আপনাকে সব কিছু জানাই তাই এটাও জানালাম। এখন শুধু রাতের অপেক্ষায়। আর ৩ টা খুন করলেই আমার কাজ শেষ। এরপর আমি মুক্ত আর ওপারের দুনিয়ায় চলে যাবো।


এইটুকু বলেই মেয়েটা কলটা কেটে দেয়। আমি অবাক হয়ে চুপচাপ সেখানেই বসে ছিলাম। আমার বন্ধু নাঈম এইরকম কাজ করতে পারে তা আমি বিশ্বাস করি না। অবশ্য মেয়েটা এই পর্যন্ত আমাকে একটাও ভুল বা মিথ্যা কথা বলেনি। মেয়েটা যা বলেছে ঠিক তাই হয়েছে। আর মেয়েটা যা বলে তাই করে। তার মানে গতরাতের মতো আজকেও সে ৩ টা পৈশাচিক খুন করবে। আর তার মধ্যে একজন আমার প্রিয় বন্ধু নাঈম। তাই তাকে আমার বাঁচাতেই হবে।


কিন্তু আগে আমাকে জানতে হবে যে নাঈম সত্যিই এই অপরাধটা করেছিলো কিনা! নাঈমের সাথে ব্যাস্ততার কারণে আজকাল খুব একটা মেশা হয় না। শুনেছি সে শহরের একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। হয়তো খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে নাঈম এই জঘন্য কাজটা করলেও করতে পারে! কারণ মেয়েটার মিথ্যা বলার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সব কথা পরিষ্কার হবে তখনি যখন আমি নাঈমের সাথে দেখা করে তার কাছ থেকে সব কিছু জানতে পারবো।


এরপরেই নাঈমকে একটা কল দিলাম। বললাম যে খুব জরুরী একটা কথা আছে, তাড়াতাড়ি চলে আসতে। সে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল এরজন্য বলার সাথেই রাজি হয়।

আমি বাড়ির বাহিরে একটা চায়ের দোকানে নাঈমের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বেশ কিছুক্ষন পর নাঈম আসলো। এসে আমাকে বললো:

-কী কথা বলবি? চল আগে আমাদের শিশু কালের স্কুলের মাঠের দিকে যাই।


তারপর আমরা হাঁটতে হাঁটতে মাঠের দিকে যাই। আমি কেমন যেনো একটা বিছ্রি গন্ধ পাচ্ছিলাম নাঈমের শরীর থেকে। হয়তো মদের গন্ধ। কিছুটা বিস্মিত হলাম। আমি কিছুটা অবাক হয়ে তাকে বললাম-

-আচ্ছা দোস্ত। তুই কি নেশা করিস?

নাঈম একটু মুচকি হেসে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো:

-আরে রোজ করি না। আজ হঠাৎ এক বন্ধু জোড় করে এক প্যাক খাইয়ে দিলো। আমি অনেক না করেছিলাম।


তারপর কোন কথা না বলে আমরা মাঠে গিয়ে বসলাম। আমি কিছুক্ষন নীরব থেকে আবার নাঈমকে বলি

-আচ্ছা আজ টিভিতে নিউজ দেখেছিস? শহরে ৩ টা ছেলেকে হ্রিংস্র ভাবে কারা যেনো খুন করেছে! তুই তাদের চিনিস?!

-কী বলছিস? আমি চিনবো না মানে! ওরাতো আমার সাথে একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। ইভেন ওরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। গতকালো আমরা কথা বলেছি। কিন্তু কী করে যে কী হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না।


নাঈমের কথাগুলো শুনে আমার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না যে, মেয়েটা সত্যি কথাই বলেছিলো। নাঈম নিশ্চই ওদের সাথে মিলে ঐ জগন্য কাজটা করেছিলো। এরপর আমি অনেকটা স্বাভাবিক ভাবেই নাঈমকে বলি

-আচ্ছা তোরা ইউনিভার্সিটির বন্ধুরা একত্রে মিলে কী কোনদিন কোন খারাপ কাজ করেছিলি?

-খারাপ কাজ মানে? খারাপ কাজ করতে যাবো কেনো?

-নাহ মানে! কোন রেপ বা খুন?


কথাটা শুনে নাঈম কিছুটা চমকে উঠে। থতোমতো খেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আমায় বলে:

-কী বলছিস এসব! আমি এসব করতে যাবো কেনো?!

তার কন্ঠস্বর শুনেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সে আমার থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছে। তার চোখে অপরাধবোধের চিহ্ণ দেখতে পেলাম। এরপর সে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে আবার আমায় বললো:

-আজ একটা কাজ আছেরে! আমাকে উঠতে হবে। অন্য একদিন কথা হবে।


এরপরেই সে চলে যেতে চাইলো। আমি বসে থেকেই তাকে ডাক দিয়ে বললাম:

-নাঈম? শুন! আজ থেকে কয়েক মাস আগে কি তোরা নেশা করে একটা পার্টি শেষ করে ফিরছিলি? আর মাঝপথে একটা মেয়েকে দেখে তাকে জোড় করে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে জমিদার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গ্যাংরেপ করেছিলি? আর এরপর তাকে হত্যা করে তার লাশটাকে ঝোপে ফেলে চলে এসেছিলি?


আমার কথা শুনে নাঈম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো 

-তুই এসব কী করে জানলি?

-সেটা পরে শুন। তার মানে কি সত্যিই তুই এসব করেছিস?

-বিশ্বাস কর দোস্ত আমি এমনটা করতে চাইনি। সেদিন আমরা সবাই নেশা করে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম। আমাদের মধ্যে খারাপ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। এরপর আমাদের চোখে মুখে একটা মেয়ের নেশা জেগে উঠে। ঠিক তখনি রাস্তা দিয়ে একটা বোরখা পরা মেয়েকে দেখতে পেলাম আমরা। তখন আমাদের মাথায় মেয়ের নেশা ছাড়া আর কিছুই আসছিলো না। তাই আমরা জোড় করে মেয়েটাকে ধরে নিয়ে সেই পুরোনো জমিদার বাড়িতে যাই। আমরা ভেবেছিলাম যে মেয়েটাকে রেপ করে ছেরে দিবো। কিন্তু মেয়েটা হঠাৎ পালানোর চেষ্টা করে তাই আমি একটা ছুরি এনে সোজা তার গলায় চালিয়ে দেই এবং খুন করি তাকে।

-ছি! এতোটা জঘন্য কাজ তুই করতে পারলি।

-বিশ্বাস কর! তখন আমি জ্ঞানে ছিলাম না। নেশাগ্রস্হ অবস্হায় যা মন চেয়েছিলো তাই করেছি। এরপর মেয়েটাকে খুন করার পর নিজেদের ভুল বুঝতে পারি কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর আমাদের এই অপরাধের কোন প্রমানই আমরা রাখিনি। কিন্তু তুই জানলি কিভাবে?!


-একটা মেয়ে আমায় কল করে সব কথা বলেছে।

-মেয়ে?! কে?

-তোরা যে মেয়েটাকে খুন করেছিস সে মেয়েটাই বলেছে সব কথা। সে যেদিন মারা গেছে সেদিন রাতেই আমাকে কল দিয়ে সবটা বলেছে যে, কে তাকে কিভাবে রেপ করে হত্যা করছিস!! আর তোর বাকি ৩ জন বন্ধুকেও সেই খুন করেছে।


-মানে কী!!? মজা করছিস আমার সাথে? মেয়েটা মারা যাওয়ার পর তোকে কি করে জানালো এসব !!?

এরপর আমি নাঈমকে সব কথা খুলে বলি। সেদিনের সেই মেয়েটার +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে কল আসার পর থেকে তার বন্ধুর রহস্যময় খুনের কথা। এগুলো বলার পরে আমাকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো আরো রেগে যায় আর বলে।


-তুই কী পাগল হয়ে

গেছিস? একটা মেয়ে মারা জাওয়ার পর আবার তোকে কল দেয় কিভাবে? তুই আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে মজা করছিস?

-মজা কেনো করবো? আচ্ছা তুইই বল যদি মেয়েটা আমাকে এই কথাগুলো না বলে থাকে, তুই আমাকে না বলে থাকিস তাহলে আমি এই কথাগুলো জানলাম কিভাবে?


-হয়তো তুই অন্য কোন ভাবে জেনেছিস। কিন্তু তুই এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার সাথে মজা করে ঠিক করছিস না।

-বিশ্বাস কর আমি মজা করছি না। এই মেয়েটাই গতরাতে তোর ৩ জন বন্ধুকে খুন করেছে আর আজ তুই সহ বাকি ২ জনকে খুন করবে সে।

-কী বললি? একটা মৃত মেয়ে আমাকে খুন করবে? হাহাহা! আবার আসুক আজ। আবার পটল ডাঙায় পাঠিয়ে দিবো। আমার প্রথম ৩ জন বন্ধু অন্য কোন কারণে মারা গিয়েছে। এর সাথে ওর কোন সম্পর্ক নেই। আর এই রেপ আর খুনের কথা যদি তুই ছাড়া আর কেউ জানে তাহলে আমি ভূলে যাবো যে তুই আমার বন্ধু।


তারপর একরকম রেগেই সেখান থেকে চলে যায় নাঈম। নঈমের কথা শুনে আমি অনেক কষ্ট পাই। যাকে আমি জীবনের এতো ভালো একটা বন্ধু ভাবলাম সেই আমাকে বিশ্বাস করলো না।


এরপর আমি নিজের বাড়িতে এসে চুপচাপ বসে থাকি। মনে কেমন যেনো নাঈমকে হারানোর একটা ভয় কাজ করছিলো! আর ভাবছিলাম নাঈম কেনো আমার কথা শুনলোনা। তাহলে কি সেই মেয়েটা সত্যি সত্যিই নাঈম এবং তার ২ বন্ধুকে আজ রাতে খুন করবে!!?


রাত  যখন প্রায় ২ টা বাজে। হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বাজার শব্দ পেলাম। আমি উঠতে না উঠতেই ৩-৪ বার কলিং বেল বেজে উঠলো। সাথে সাথে আবার দরজায় জোড়ে জোড়ে ধাক্কা দেওয়ার শব্দ। বুঝলাম বাহিরে কেউ আমাকে দ্রুত দরজা খুলতে বলছে। কিন্তু এতোরাতে আমার বাড়িতে কে আসবে? আর আমি এখন ঘরে একা রয়েছি। বাবা-মা আজ এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেছে। অনেক ভয় পেয়ে পেয়ে গেলাম। এরপর কিছুটা ভয় কাটিয়েই সাহস করে দরজাটা খুললাম।


দরজাটা খুলে যাকে দেখলাম আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। আমার বন্ধু নাঈম এসেছে এতো রাতে।আমি দরজা খুলতেই সে হাঁপাতে হাঁপাতে আমায় জড়িয়ে ধরলো।তার চোখে মুখে শুধু আতংক আর ভয় দেখলাম। সে আমায় জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে করতে বলে:-


-বাঁচা দোস্ত আমায়! মেয়েটা আমায় মেরে ফেলবে! বাঁচা। একথা বলার পরই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আমি নাঈমকে কোন রকম করে ধরে আমার ঘরের বিছানায় নিয়ে শুয়ালাম। এরপরে তার চোখে মুখে পানি দিয়ে তার জ্ঞান ফিরালাম। তার জ্ঞান ফেরার পরেও সে ভয়ে কাপছিলো। আমি অবাক হয়ে বলি

-কী হয়েছে তোর?

এরপর নাঈম কিছুটা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আমায় বলে:

- আমায় মাফ করে দে মনির! তুই যা বলেছিলি তাই ঠিক। মেয়েটার আত্মা আবার ফিরে এসেছে। আমি আর আমার ঐ দুইজন বন্ধু  আমরা ৩ জন কিছুক্ষণ আগে একসাথে রাস্তা দিয়ে হেটে আসছিলাম। হঠাৎ আমার খুপ প্রসাব পায়। আমি একটা ঝোপের ভেতরে যাই প্রসাব করতে। তারা ঝোপ থেকে কিছুটা দূরে আমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। 


প্রসাব শেষে ঝোপ থেকে যেই বের হয়ে ওদেরকে খুজতে লাগলাম ঠিক তখনি দেখলাম দুরে তারা মাটিতে পরে রয়েছে। আমি এটা দেখে ভয়ে আৎকে উঠলাম। তাদের সামনে একটা মেয়ে ছুরি হাতে দাড়িয়ে রয়েছে। আমি মেয়েটাকে চিনি না। আমি ভয় পেয়ে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে যাই। এরপর ঝোপে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে থাকি মেয়েটা কি করছে।


মেয়েটা ছুরি দিয়ে কেটে তাদের মাথা শরীর থেকে আলাদা করলো। সাথে সাথে চারিদিকে রক্ত ছিটে ভরে গেলো। এরপর মেয়েটা পাগলের মতো তাদের শরীর চুসে চুসে রক্ত খাচ্ছিলো। এরপর ছুরি দিয়ে তাদের দুজনের বুক ছিদ্র করে বুকে হাত ঢুকিয়ে হৃদপিন্ড বের করে হিংস্র প্রানীর মতো তা ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছিলো। এরপর তাদের কিছূ হাড় আর মাংসও ছিড়ে ছিড়ে খেতে লাগলো। ভয়ে আমার পুরো শরীর ঠান্ডা হতে লাগলো।


 এরপর দেখলাম মেয়েটা লাশদুটো রেখে চারিদিকে কি যেনো খুচ্ছিলো। আমার মনে হলো মেয়েটা আমাকে খুচ্ছিলো মারার জন্য। এরপর আমি ভয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে তোর কাছে চলে আসলাম। মেয়েটা মনে হয় তাদের মতো আমাকেও মেরে ফেলবে।

কিন্তু আমি এইভাবে মারা যেতে চাই না। আমাকে বাঁচা প্লিজ।


আমি বুঝতে পারলাম সব ঘটনা। আমিও চাইনা নাঈমের কোন ক্ষতি হোক। কিন্তু তাকে বাঁচানোরও কোন উপায় আমার মাথায় আসছিলো না।এরপর অনেকটা কেঁদে দিয়েই নাঈম আমাকে বললো:

-কিছু একটা কর দোস্ত। আমি এখন কী করবো? আমার বাঁচার কী আর কোন উপায় নেই?


আমি কিছুক্ষন ভেবে তারপর বললাম:-

-হ্যাঁ। একটা উপায় রয়েছে তোকে বাঁচানোর আর মেয়েটার আত্মাকে এই পৃথিবী থেকে চিরো বিদায় করার।


#নিশি_রাতের_কল

#অন্তিম_পর্ব


নাঈম আমার কথাটা শুনে কিছুটা আশা পেলো আর বেশ কিছুটা কৌতুহল পেলো এটা জানার জন্য যে কী উপায়?!!


এরপর আমি নাঈমকে বললাম:

-আজ রাতটা বরং তুই আমার বাসাতেই থেকে যাহ। মেয়েটার আত্মা কিছুতেই আমার বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না কারণ আমার ঘরে পবিত্র কোরআন শরীফ রয়েছে। আর তুই কাল সকালে বাড়ি থেকে বের হবি। কারণ দিনের বেলায় মেয়েটার আত্মাকে আর দেখা যায় না। এরপর আমরা এক জায়গায় যাবো।

-কোথায় যাবো?

-একটা আশ্রমে যাবো। সেটা অনেক পবিত্র একটা জায়গা। সেখানে আমার পরিচিত এক কবিরাজ রয়েছে। তিনি প্রেতাত্মায় বিশ্বাস করেন। আমার মনে হয় সেই আমাদের সাহায্য করতে পারবে। এখন ঘুমিয়ে পর।


আমাদের দুজনের কারোই সহজে ঘুম আসছিলো না। এরপরেও অনেক কষ্টে আমরা ঘুমালাম।


ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল প্রায় ৯ টা বাজে। এরপর আমি নাঈমকে ডাক দিলাম।সে এখনো ভয় পেয়ে রয়েছে। এরপর আমরা হাত-মুখ ধুয়ে কিছু নাস্তা করে নিলাম। এরপর নাঈম আর আমি বাসা থেকে আশ্রমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। নাঈম বাসা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছিলো। আমি বললাম যে, দিনের বেলায় কোন সমস্যা নেই। আত্মাটা দিনের বেলায় আর আসবে না।


এরপর আমি আর নাঈম দুজনেই আশ্রমে পৌছালাম। আশ্রমের ভেতরের পরিবেশটা বেশ ঠান্ডা এবং নির্জন। এরপর আমরা সেই কবিরাজের কাছে গেলাম। কবিরাজকে সব কথা খুলে বললাম আমরা। মেয়েটার কল দেওয়া থেকে এই পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব ঘটনাই সাধুকে বললাম। কিছু লুকালাম না।


কবিরাজ আমাদের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। এরপর বলে:


-ঘটনাটা বুঝতে পারলাম। মেয়েটার সাথে খুব খারাপ কিছু হয়েছে। তাই মেয়েটা মৃত্যুর পরেও অভিশপ্ত হয়ে রয়েছে। মেয়েটা শুধু তার হত্যার প্রতিশোধ নিবে বলে এখনো মুক্তি পায়নি।


এরপর নাঈম কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বিনয়ের সাথে কবিরাজকে বললো:

-আপনি যে করেই হোক আমাকে বাঁচান। না হলে মেয়েটা আমাকে মেরে ফেলবে।


এরপর কবিরাজ কিছুটা গম্ভীর ভাবে বললো:

-মেয়েটা অভিশপ্ত আত্মা। তাই তাকে কোন ভালো কিছু বোঝালে সে বুঝবে না। তাই আমাদের তার আত্মার মুক্তির ব্যবস্হা করতে হবে। তাহলেই কেবল তুমি বাঁচতে পারবে। এ ছাড়া মনে হচ্ছে মেয়েটার আত্মা অনেকটা পৈশাচিক হয়ে উঠেছে।


আমি কিছুটা কৌতুহল নিয়ে কবিরাজকে প্রশ্ন করলাম:

- আত্মাটাকে মুক্তি দেওয়ার কী কোনো উপায় নেই ?

-হুম আছে। দুইটা উপায় রয়েছে।

এক : মেয়েটার আত্মার অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ হলে সাথে সাথেই সে মুক্তি পেয়ে যাবে। এর মানে মেয়েটা যদি তোমার বন্ধুকে খুন করতে পারে তাহলে সে মুক্তি পাবে। তবে এটা আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না। তাই আমাদের অন্য উপায় অবলম্বন করে আত্মাটাকে মুক্তি দিতে হবে। আচ্ছা মেয়েটার লাশ এখন কোথায়? এখনো কী দাফন দেওয়া হয়নি?


আমি প্রশ্নটা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। কারণ এর সঠিক উত্তর আমার জানা নেই। এরপর কিছুক্ষন ভেবে বললাম:

-হয়তো এখনো দাফন দেওয়া হয়নি। হাসপাতালের মর্গেইতো লাশটার থাকার কথা। কারণ মেয়েটার লাশ নেওয়ার আগেই তার বাবা মারা যায়। তাই হয়তো এখনো লাশটা মর্গেই পুলিশের তদ্বাবধায়নে রয়েছে।


-হুম এবার বুঝলাম। মেয়েটার আত্মা কেনো এখনো মুক্তি পায়নি। মেয়েটাকে যতক্ষন না পর্যন্ত দাফন দেওয়া হবে ততক্ষন তার অভিশপ্ত আত্মা মুক্তি পাবে না। তাই আমাদের প্রথমে মেয়েটার লাশটাকে দাফন দিতে হবে। তাহলেই তার আত্মা মুক্তি পেয়ে চলে যাবে এবং তোমার বন্ধুও বেঁচে যাবে।


-কিন্তু মেয়েটার লাশতো পুলিশের কাছে। সেটা আমি এখানে আনবো কিভাবে!!?

-সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। এটা ভাবার দায়িত্ব আমার। এখানকার থানার পুলিশের সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমি তাদের বললে আমাকে লাশটা দিয়ে দিবে। মেয়েটাকে আমার ধ্বংস করতেই হবে। নাহলে অকাল নেমে আসবে।


-কিন্তু মেয়েটা সব কিছু কেমন করে যেনো বুঝে যায়। যদি লাশটা আনার সময় মেয়েটা বুঝে যায় যে তার লাশ সড়ানো হচ্ছে তখন কী করবেন!!?

-বোকা ছেলে। আমার কাছে এমন এক অলৌকিক শক্তি রয়েছে যার মাধ্যমে মেয়েটার আত্মা কিছু বোঝার আগেই আমরা তার দাফন শেষ করে দিবো।

তুমি এখন বাড়িতে যাও।


-কিন্তু নাঈম কী করবে?

-লাশটা দাফন হওয়ার আগে পর্যন্ত ও এখানেই নিরাপদ। লাশটা দাফনের পর তোমার বন্ধুকে পাঠিয়ে দিবো। মেয়েটার আত্মা বা কোন অলৌকিক শক্তিই আশ্রমের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। তোমার বন্ধু নিরাপদ তুমি নিশ্চিন্তে চলে যাও।


এরপর নাঈমকে আশ্রমে রেখেই বাড়ির পথে রওনা দেই। তামীম কে বললাম যে কোনো চিন্তা না করতে। সব ঠিক হয়ে যাবে ।


এরপর কিছুটা নিশ্চিন্ততা বোধ করছিলাম যে হয়তো এবার মেয়েটার লাশ দাফন দেওয়ার সাথে সাথেই মেয়েটার আত্মা মুক্তি পেয়ে ওপারের দুনিয়ায় চলে যাবে এবং নাঈমকে আর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।


এরপর আমি আমার বাড়িতে চলে এলাম। বাড়িতে আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। ঘরে ঢুকে যেই মাত্র বসেছি ঠিক তখনি আবার +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে আরেকটা কল আসলো। ভাবলাম হয়তো নাঈমকে খুজে না পেয়ে আবার আমাকে কল দিয়েছে। কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে মেয়েটা বললো:-


-মনির? আমি তোমার বাসার ছাদের উপরে রয়েছি। একবার আসবে?


আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই। প্রথমে ভাবলাম যাবো না। এতো রাতে আবার যদি একা পেয়ে কোন ক্ষতি করে দেয়! পরে ভাবলাম, না থাক! উপরে গিয়েই দেখি মেয়েটা কী বলে! এতদিন যেহেতু কোনো ক্ষতি করে নি তাহলে আজো করবেনা। এতক্ষনে মনে হয় মেয়েটার অজান্তেই লাশ দাফনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আর কিছুক্ষন পরেই হয়তো মেয়েটার আত্মার চিরোবিদায় ঘটবে যেটা মেয়েটা নিজেও জানে না। আর এখন শেষ বারের মতো একবার মেয়েটার সাথে কথা বলেই আসি। আর মেয়েটাকে কথায় ব্যাস্ত রাখলে সে আসলেই কিছু বোঝার আগেই তার দাফন কাজ শেষ হয়ে যাবে।


এরপর আমি মনে কিছুটা ভয় আর কৌতুহল নিয়ে ছাদে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সেই মেয়েটাই উল্টোদিকে ঘুরে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমার পায়ের শব্দ পেয়েই আমার দিকে ঘুরে তাকালো। আমি কিছুটা ভয় নিয়েই তাকে প্রশ্ন করলাম:


-আবার কেনো এসেছেন এখানে?

-আপনার সাথে শেষ বারের মতো দেখা করতে।

- শেষ বারের মতো? মানে?!


-মানে আমি তোমার বন্ধু নাঈমকে খুন করার সাথে সাথেই আমার প্রতিশোধ নেওয়া পুর্ণ হবে আর আমি মুক্তি লাভ করবো এবং ওপারের দুনিয়ায় চলে যাবো।

-নাঈমকে কোন ক্ষতি  করতে পারবেন না!!


-এটা কিছুতেই হতে পারে না । আপনার বন্ধুকে আমি খুন করবোই। সে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই লুকিয়ে থাকুক না কেনো!

-প্লিজ চুপ করেন তো?

-আচ্ছা আপনি আজ একটা কথা জানতে চাইলে না। যেটা বলার জন্য আমি আজ এখানে এসেছি।

-কী কথা?


-আমি কিভাবে আপনাকে চিনি। আপনার  নাম্বারই বা কোথায় পেলাম।

-হ্যাঁ। প্লিজ বলেন। এটা জানার জন্যই আমি অপেক্ষায় ছিলাম। আপনি কি করে আমায় চিনো??!

-শুধু আমি না। আপনিও আমায় চিনেন। আমাদের প্রথম দেখা হয় সাজাকে।


-সাজেকে? কবে?! আমার তো ঠিক মনে পড়ছে না।

-আপনার মনে আছে? আজ থেকে কয়েকমাস আগে যখন সাজেকে গিয়েছিলেন তখন একটা বোরখা পরা মেয়ে তার হোটেল হারিয়ে ফেলে কিছুতেই খুঁজে পায় না। এরপর আপনি তাকে সাহায্য করেছিলেন?!


-হ্যাঁ! মনে তাহলে আপনি কি সেই বোরখা পরা মেয়েটা??!

-হ্যাঁ।


মেয়েটার কথা শুনে যেনো মনে হুট কর মোচড় দিয়ে ওঠলো। তাহলে কী এই আমার সাথে পরিচিত হওয়া সেই মেয়েটা যার সাথে আমার সাজেকে পরিচয় হয়েছিলো! 


আজ থেকে কয়েক মাস আগের ঘটনা।সেবার ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম সাজেকে। সেদিন আমি সাজেকের অপরূপ ঘন সবুজ পাহাড় দেখছিলাম। হঠাৎ কিছুটা দুরে একটা বোরখা পরা মেয়ের দিকে নজর গেলো। মেয়েটাকে দেখে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। যেখানে সব মেয়েরা সেজেগুজে ছবি তোলায় ব্যাস্ত সেখানে এই মেয়েটা এতো গরমের মাঝেও বোরখা পরে একা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে! মেয়েটার চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না শুধু চোখগুলো দেখা যাচ্ছিলো। 


আমি বেশ কিছুক্ষন তার চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। তার চোখে যেনো শুধু কৌতুহল আর ভয় দেখতে পেলাম।

 মেয়েটার আশেপাশে কেউই ছিলো না। হাতে শুধু একটা কাগজ ছিলো। অনেক কষ্টে দেখলাম যে কাগজটাতে কী লেখা ছিলো। সেখানে শুধু একটা হোটেলের নাম আর রুম নাম্বার লেখা ছিলো। বুঝলাম মেয়েটা তার হোটেল হারিয়ে ফেলেছে। এই সুযোগ তার সাথে কথা বলার। মেয়েটার পাশে গিয়ে বললাম:


-আচ্ছা আপনি কী আপনার হোটেল হারিয়ে ফেলেছেন? কোন সাহায্য লাগবে?

এরপর কাগজটার উল্টো দিক আমার দিকে ধরলো। সেখানে লেখা ছিলো, প্লিজ হেল্প মি।


এরপর আমি তাকে বললাম:

-এখানে যে হোটেলের নাম লেখা রয়েছে তার পাশের হোটেল টাতেই আমি থাকি। আমি এখন সেদিকেই যাবো। আপনি চাইলে আসতে পারেন। এরপরে আমি হাঁটতে থাকি। মেয়েটাও আমার পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। কিছুক্ষন পরপর আমার দিকে কেমন যেনো একটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো। বুঝলাম অপরিচিত ছেলে তাই এখনো আমাকে বিশ্বাস করতে পারেনি।


এরপর মেয়েটাকে নিয়ে তার হোটেলের সামনে পৌছে দিলাম। মেয়েটা মুখে কিছু বললো না। একটা কাগজে কি যেনো লিখে আমাকে দিয়ে চলে গেলো। কাগজটা পড়ে দেখলাম শুধু একটা ধন্যবাদ লেখা। আমি ভাবলাম এটাতো সে মুখেই বলতে পারতো তাহলে কাগজে লেখার কী দরকার ছিলো?! তাহলে কী মেয়েটা বোবা! হতে পারে।


তবে মেয়েটাকে বেশ ভালো লাগে আমার। পরের দিন সকাল বেলায় হটেলের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করার সময় আবার সেই বোরখা পরা মেয়েটাকে দেখতে পেলাম। দৌড়ে তার কাছে গেলাম। গিয়ে তাকে বললাম:

-কেমন আছেন?


মেয়েটা তার ব্যাগ থেকে একটা ডায়েরী বের করে তাতে লিখলো:

-ভালো। আপনি?


আমি কিছুই না বুঝে বললাম:

-হ্যাঁ। ভালো আছি। কোথায় যাচ্ছেন?


মেয়েটা আবার লেখলো:

-এইতো একটু হাঁটাহাঁটি করতে সামনে যাচ্ছি। ভালো থাকবেন। খুদা হাফেজ।


এই বলেই সে চলে যাচ্ছিলো। আমি বিয়াক্কেলের মতো কিছু না বুঝে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। মেয়েটার লিখে কথা বলার মানেটা এখনো বুঝতে পারলাম না। মেয়েটা কি কথা বলতে পারে না!!? হয়তো বোবা। কিন্তু এটাও ভেবে পাচ্ছিলাম না মেয়েটা বোবা হলে কথা শুনে কিভাবে!! আর এতো সুন্দর লিখেই বা কিভাবে।!


এরপর আবার দৌড়ে মেয়েটার কাছে গেলাম আর বললাম:

-আচ্ছা! আমার কোন কাজ নেই। আমি কী আপনার সাথে যেতে পারি?

মেয়েটা আবার লিখে উত্তর দিলো:

-ঠিক আছে চলুন। তবে বাচালদের মতো বেশি কথা বলবেন না।


এরপর আমরা দুজন সাজেকে অনেকগুলো সুন্দর পয়েন্ট ঘুরে দেখলাম। তবে আমি অপ্রয়োজনে কোন কথাই বলছিলাম না। আর মেয়েটাতো প্রয়োজনেও কোন কথা বলছিলো না। অতিরিক্ত প্রয়োজনিয় কিছু হলে তা লিখে আমায় বলে। সেই দিনটাও বেশ ভালোই কাটলো আমার মেয়েটার সাথে।


এরপরের দিনো সকাল বেলা হাঁটতে বের হলাম। পথে দেখলাম মেয়েটার একটা ভ্যান থেকে ডাবের পানি খাচ্ছে একা দাড়িয়ে। আমি দৌড়ে তার কাছে গেলাম আর তাকে বললাম:

-একাই খাবেন? আমাকে দিবেন না?


এরপর মেয়েটা ডাবওয়ালাকে চোখের ইশারা দিয়ে বললো আমাকেও একটা ডাব দিতে। এরপর আমি যেই অর্ধেক ডাবের পানি খেয়েছি। হঠাৎ মেয়েটা ডাব ওয়ালাকে প্রশ্ন করলো:

-দুইটা ডাব কতো টাকা?


মেয়েটার কন্ঠ শুনে আমার হাত থেকে ডাবটা পরে যায়। তার মানে মেয়েটা বোবা না। কথা বলতে পারে। কিন্তু আমার সাথে বলেনা। আমার হাত থেকে ডাব পড়তে দেখে ডাবওয়ালা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এরপর মেয়েটা টাকা দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। আমি পেছন থেকে তাকে ঢেকে বললাম:

-আপনার কন্ঠটা বেশ মধুর। তাহলে মুখে কথা না বলে লিখে কথা বলেন কেনো?


এরপর মেয়েটা কাগজে কিছু একটা লিখে আমায় দিয়ে চলে যায়। কাগজে লিখা ছিলো:

-আমি অপরিচিত মানুষদের সাথে অপ্রয়োজনে কথা বলিনা।


এরপর মেয়েটার প্রতি ভালোলাগাটা প্রচন্ড ভালোবাসায় পরিণত হয়। শুনেছি মেয়েটা নাকি তার বাবার সাথে এখানে এসেছে তবে তার বাবাকে একবারো দেখিনি।


এরপর ভাবলাম মেয়েটাকে যখন ভালোবেসেই ফেলেছি তাহলে ভালোবাসার কথা বলেই ফেলি। তাই একটা কাগজে প্রথম দেখা থেকে এই পর্যন্ত মেয়েটার প্রতি ভালোবাসার প্রত্যেকটা কথা লিখে খামে বন্ধী করলাম। লেখার শেষে আমার মোবাইল নাম্বারটা লিখে দিলাম। এরপর বিকেলে খামটা মেয়েটার হাতে দিয়ে চলে আসলাম। আর বলে আসলাম যে যদি উত্তরটা হ্যাঁ হয় তাহলে যাতে আমাকে এই নাম্বারে একটা কল দেয়।


ভেবেছিলাম রাতে কল আসবে তবে কোন কল আসেনি। পরের দিন সাজেকের অপরূপ দর্শনিয় পয়েন্ট-এ অনেক খুজেও মেয়েটাকে পেলাম না। এরপর বাধ্য হয়ে তার হোটেলে গিয়ে জানতে পারি যে মেয়েটা নাকি তার বাড়িতে চলে গেছে। আমি বেশ কষ্ট পাই । যাওয়ার আগে একবার দেখাও করলো না । এরপর আমিও আমার বাড়িতে চলে আসি। মেয়েটা আর আমাকে কখনো কল দেয়নি।


কিন্তু আজ এই অভিশপ্ত মেয়েটাই আমার সেই ভালোবাসার মেয়েটা কে জানতো!!

আমি কাঁদতে কাঁদতে অরিনকে বলাম:

-তাহলে এরপরে আপনি আর আমাকে কল দেননি কেনো?

-আমার পৃথিবীতে একটাই ছেলে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। সেটা হলো আমার বাবা। এরপরে যদি আমি কাউকে ভালোবেসে থাকি বা বিশ্বাস করে থাকি সেটা আপনি। আমি ভেবেছিলাম এইচ.এস.সি পরীক্ষার পর কোন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আপনাকে কল দিয়ে নতুন সম্পর্কে জড়াবো। কিন্তু এর আগেইতো নরপশুগুলো আমার জীবনকে বদলে দিলো।


-আমি আজো আপনাকে ভালোবাসি।

-আমিও আপনাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের দুনিয়া আজ ভিন্ন। আর কিছুক্ষন পর নাঈমকে খুন করেই হয়তো আমি মুক্তি পেয়ে যাবো।

-না অরিন।তুমি এর আগেই মুক্তি পেয়ে যাবে।

-মানে?

-তোমার লাশের এতোক্ষনে হয়তো দাফন হয়ে গেছে। এখন তুমি মুক্তি পেয়ে ওপারের দুনিয়ায় চলে যাবে।

-নাহ। এটা কিছুতেই হতে পারে না। নাঈমকে না মেরে আমি কিছুতেই মুক্তি পেতে পারবো না।


এরপরে অরিন আমার সামনে চিৎকার করতে করতে বাতাসে মিলিয়ে গেলো। বুঝলাম হয়তো তার লাশের দাফন এতক্ষনে হয়ে গেছে। আর তার আত্মা এখন ওপারের দুনিয়ায় চলে গেলো। অরিনের জন্য অনেক খারাপ লাগছিলো। তবে এটাইতো প্রকৃতির নিয়ম। অন্যদিকে বন্ধু নাঈম এখন বিপদ মুক্ত তাই কিছুটা ভালোও লাগছিলো।


এরপর আশ্রম থেকে নাঈম কল দিলো আর

বললো যে মেয়েটার লাশের দাফন কাজ ভালো মতই শেষ হয়েছে। আমিও তাকে বললাম যে আমার সামনেই মেয়েটার আত্মা শুন্যে হারিয়ে গেছে। আর কোন বিপদ নেই।


এরপরে নিজের ঘরে এসে চুপচাপ বসে ছিলাম। শুধু অরিনের কথা মনে পড়ছিলো আর কান্না পাচ্ছিলো। আর ভাবছিলাম যাই হোক নাঈম আর নাঈমের বন্ধুরা মোটেও ভালো কাজে করেনি।


এরপর ঘরের নিরবতা কাটিয়ে আমাকে নির্বাক আর আরো বেশি অবাক করে দিয়ে আবার সেই +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে কল আসলো।


এইটা কী হলো?! অরিনের এখন ওপারের দুনিয়ায় থাকার কথা তাহলে আবার কল দিলো কিভাবে। কলটা ধরতেই অরিন হাসতে হাসতে বললো:

-বলেছিলাম না নাঈমকে না খুন করলে আমার মুক্তি মিলবে না। এখন নাঈমের রক্তের স্বাদ নেওয়া শেষ। তাই আমি মুক্ত। ভালো থেকো। ওপারে দেখা হবে।


এরপরেই কলটা কেটে দিলো। আমি ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম। এটা কী হলো!! নাঈমকে অরিন কিভাবে খুন করলো।


এরপর আশ্রম থেকে একটা কল আসলো:

-মনির? আমাদের একটা বড় ভুল হয়ে গেছে। আমরা ঐ মেয়েটার বদলে অন্য একটা মেয়ের লাশকে দাফন দিয়ে দিয়েছি। ঐ মেয়েটার লাশ মর্গ থেকে উদাও হয়ে গেছে। আর তোমার বন্ধু নাঈমের লাশ ক্ষত-বিক্ষত অবস্হায় রাস্তায় পরে আছে নিয়ে যাও।


এরপর আমার আত্মা যেনো আমার শরীর থেকে বের হয়ে যেতে চাইলো। এটা কী হলো আমার সাথে নাঈমকে বাঁচাতে পারলাম না। অরিন তার প্রতিশোধ সমাপ্ত করলো।


এরপরে দেখতে দেখতে এক বছর চলে গেলো। অরিনের লাশটা আজো খুজে পাওয়া যায়নি। আমার মোবাইলেও আর +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে কল আসেনি। আমার জীবনটা ঠিক আগের স্বাভাবিক হয়ে গেলো।


                    -----সমাপ্ত-----

(বি:দ্র-প্রিয় পাঠকগণ আপনাদের একটি শেয়ারও ভালো মন্তব্য লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।  গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ। )