ভালোবাসার নামে নষ্টামি | ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার গল্প

 মেয়ে :প্লিজ ভিডিও করো না, যা দেখার এমনি দেখ।

ছেলে : আরে নাহ, ভিডিও না, একটা পিক তুলতেছি।

মেয়ে :না কোন পিক তুলবানা সুভন। কি করবা তোলে এগুলা

ছেলে : না এমনি দেখতেছি এভাবে কেমন আসে ক্যামেরাই।

মেয়ে :না তুলবানা, ডিলিট করো।

ছেলে: আচ্ছা্ছা।

সোহানা ওয়াশরুমের পানি ছেড়ে একটু সাবান লাগিয়ে পায়জামার দাগ তুলার চেষ্টা করতেছিল, ছোপ রক্তের দাগ।


কাপড়টা ফ্যানের বাতাসে শুকানোর আগ পর্যন্ত এভাবেই থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। সুভন কোটি পতি বাবার দ্বিতীয় সন্তান।


যেমন তার চেহারা, বডি ফিগার তেমন লম্বা। শহরের নাম করা এক প্রাইভেট ভার্সিটির ৩য় বর্ষের ছাত্র সুভন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ফান, রাজনীতি, আর সুন্দরী মেয়েদের তার বাইকের পেছনে বসানো যার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ।


চেহারার মাধুর্যতা আর বাবার টাকা, যৌলস সুন্দরীদের ক্রাসের অন্যতম কারন সুভন। সেবার রমজানেরর ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেট গুলোতে যখন ভিড় লাগা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে তখন সুন্দরী মেয়েদের আনাগুনায় ভরপুর শপিংমলগুলো।


সুভন আর তার বন্ধুদের মার্কেটে আগমনও বেড়ে গেছে। হঠাৎ সেদিন বিকেলবেলা রহমান শপিং মলের সামনে বন্ধুদের সাথে আড্ডার ফাকে চোখ পড়লো এক মায়াবিনী অপ্সরী অপরুপা এক ললনার দিকে।


মেয়েটি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে সাথে একজন মহিলা আর একটা বাচ্চা মেয়ে। সুভন তার বন্ধুদের নিয়ে তাদের গতিবিধি লক্ষ করে পিছু নিলো।


পুরো মার্কেট একসাথে পাশা পাশি কেনা কাটার ছল করে হালকা দুষ্টোমি চলতে থাকলো। কেনাকাটা শেষে মেয়েটি চলে যাওয়ার জন্য সি.এন.জি


তে উঠে বসে আছে সি.এন.জি টা এই ছাড়লো বলে হঠাৎ কেও একজন হাতে একটি চিরকোট বাড়িয়ে দিল।


: কি এটা


: নিন, প্লিজ...ওমনি গাড়িটা ছেড়ে দিল।

: আপনার অপেক্ষায় থাকবো.....কাগজটি পড়ে আছে সোহানার পায়ের কাছে।

হাতে নিয়ে খুলতেই সুভনের নামটি তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো সাথে তার কন্ট্রাক্ট নাম্বার। ভ্যানিটি ব্যাগের সাইড পকেটটাই রেখে দিল নাম্বারটা।


ঈদের কেনাকাটা দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেল, ঘুমুতে যাওয়ার আগে মনে পড়তে লাগলো ছেলেটির কথা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে নাম্বারটা হাতে নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো কি করবে, ছেলেটাকে ফোন দেবে কি দেবে না।


অনেক্ষন মনের সাথে বুঝা পড়া করে মুঠোফোনে নাম্বারটা উঠিয়ে কল দিয়ে আবার কি মনে করে কেটে দিল। সাথে সাথে কল ব্যাক, রিং বাজতে লাগলো।


: হ্যালো।

: ম্যানি ম্যানি থেংক্স।

: মনে হচ্ছে আপনি খুব খুশি।

: অবশ্যই। আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি জানতাম আপনি ফোন দিবেন।


: তাই নাকি

: হ্যা।

:তা কি বলবেন বলুন।

: আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

: স্টপ স্টপ স্টপ। শুনুন মিষ্টার.....

: সুভন।

: শুনুন মিষ্টার সুভন, এসব ভালোবাসা টালোবাসা আমার এক দম পছন্দ না। কোন লাভ নেই। এসব আমার দ্বারা অসম্ভব।


: আচ্ছা্ছা ভালোবাসা দিতে হবে না, বন্ধু হয়ে তো থাকতে পারি...এভাবেই কথার পর কথা বন্ধুত্ব চলতে থাকলো। সুহানা গ্রামের সম্মানীত ব্যক্তির একমাত্র বড় মেয়ে তার বাবার দাপটের প্রভাবে আজ পর্যন্ত কোন দিন কোন ছেলে তার ধারে কাছে ঘেষার সাহস পায়নি।


এ বছর ফ্যাশান ডিজাইনে ২য় সেমিষ্টার চলছে সোহানার, পাশাপাশি কিছু শর্ট ফিল্মে মডেল হিসেবে কাজ শুরু করে দিয়েছে। যদিও পড়ালেখার চাপে বাসা থেকে এসব নিষেধ তবু তার একান্ত ইচ্ছায় কেও কোনদিন বাধা দেয় নি।


সুভন আর সুহানার বন্ধুত্ব খুব বেশিদিন টিকে নি, কারন একটা সমবয়সি ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো বন্ধু হয়ে থাকতে পারেনা একটা সময় তাদের মাঝে ভালোবাসার ফুল ফোটে, সুভন আর সোহনার বেলাতেও ভিন্ন কিছু ঘটলো না।


শুরু হলো মধুমাখা সময়। নতুন নতুন গিফট, কেনা কাটা কসমেটিক্স, ফুসকা, কফিসপ, বি.এফসি, কে এফসি, বাইকে লংড্রাইভ, রাত জেগে কথা বলা ওফফ জীবনটাই স্বর্গ।


সুহানার মনে শুধু একটি কথাই প্রতিধ্বনিত হয়। আরো আগে কেন আসো নি, বড় দেরি করে দেখা হলো হলো চেনা জানা আরো দিন গেল পেতে মনেরই ঠিকানা, জন্ম থেকেই হয়নি কেন তোমার আমার পরিচয়......।


মেয়েরা একবার যদি কাওকে বিশ্বাস করে ভালোবাসে তবে তার জন্য দেহ মন প্রাণ উজার করে দিতে প্রস্তুত থাকে, আর মনের মাঝে সুর তুলে....বুকের ভেতরে মনের গহীনে তুমি ছাড়া আর কেহ নাই, আমার এ রূপের সকল আমার এই দেহের দখল তোমায় দিলাম তাই।


সুহানার পৃথিবী এখন সুভন। সুহানাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল সুভন, সুহানা ১০০% এর মধ্যে ১১০% বিশ্বাস করতে শুরু করলো কেননা মেয়েদের অর্থাৎ প্রেমিকার মনে পুরো পুরি বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য এটা নিষ্ফল ঔষধ।


সুহানা চিন্তা করে দেখলো এখন তার বাবা তাকে বিয়ে দেবে না আর এ সম্পর্কের কথা এখন জানালে ছেলের সম্পর্কে জিঙ্গাসা করলে ছাত্র বললে বাবা কোনদিন বিয়ে দেবে না যদিও ছেলের বাবার অঢেল সম্পত্তি কিন্তু সুহানার বাবার পছন্দ একটা আত্নপ্রতিষ্ঠিত ছেলে।


তাছাড়া সুহানার স্টাডি কমপ্লিট করতে এখনো অনেক সময় বাকি। সব কিছু বিবেচনা করে সুহানা সুভনকে আপাতত বিয়ের প্রস্তাব দিতে নিষেধ করলো। সুভনও তো মনে মনে তাই চায়।


:সুভন তোমার তো এখনো পড়ালেখা কমপ্লিট হয়নি তাছাড়া আমারও সময় হয়নি, সময় হলে তোমাকে বলবো তখন আব্বুকে বলে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যেও।


: আচ্ছা্ছা জান, আমার পাখি। এখন একটু আদর করো...:ওমমমম আমার তো আর ভালোলাগেনা..তোমাকে কবে কাছে পাবো.আমার যে আর সহ্য হচ্ছেনা জানু। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে....।কাল দেখা করো।


: কালতো শুক্রবার

: আমি জানিনা কাল দেখা করো প্লিজ।

: বাড়ি থেকে কি বলে বের হবো

আমার লক্ষিসোনা বুঝার চেষ্টা করো।

: কোন বুঝাবুঝি নাই। তুমি আসবা কাল। ভালোবাসার আবদার পূরন তো করতেই হয়। সুহানা বাসায় বান্ধবীর কথা বলে বের হয়ে আসলো। সুভনদের ছয়তলা বাড়ির নিচ তলার ফ্লাটটা এখনো খালি। ভাড়া হয়নি।


বাড়ির সবাই আজ একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে বেড়াতে চলে গেছে মকা মকা। পুরো বাড়ি সুভনের দখলে। সুভন জন্মনিরূধক বড়ি সহ সব কিছু আগে থেকেই রেডি করে রেখেছিল। অবশেষে ভালোবাসার পূর্ণতা পেল আজ।


ভেজা কাপড় শুকিয়ে গেছে। সুহানা বিদায় নিলো তার বিশ্বাসের মনিকোটার মনের মানুষের কাছ থেকে। শুরু হলো সুহানার জীবনের কালো অধ্যায়।


দিনের পর দিন ভালোবাসার মানুষের মন রক্ষা করার জন্য আর কিছুটা তার আবেগের যৌবনের তাড়নায় চলতে থাকলো এ অবৈধ প্রণয়।


কিন্তু এক তরকারি আর কয়দিন

মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সুভনের। শুরু হলো সোহানাকে এভয়েড করা, অল্প অল্প সামান্য কারনে রাগা রাগি শুরু করে দিল সুহানার সাথে। ফেবুতে কয়েকবার নক করলে শুধু হুম উত্তর আসে।


সুহানা কিছু বললেই তার সাথে রাগারাগি ফোন অফ ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা সময় ধৈর্যের বাধ ভেঙে সুভনকেও কথা বলতে ছাড়লোনা। শুরু হলো দূরত্ব।


অবশেষে একটা সময় দুজনার দুটি মন দু দিকে গেল চলে। কিন্তু সত্যি কি দুটি মন দু দিকে চলে গিয়েছিল

হ্যা গিয়েছিল ঠিকি কিন্তু দুটি নয় একটি। সুহানার মন তো সুভনকে সেই কবেই দিয়ে দিয়েছিল। তাই সুহানা এখন মৃত। কিন্তু না সোহানার নিশ্বাস এখনো বন্ধ হয়নি।


বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্বাসের দরজাটা ম/রে গেছে বেঁচে থাকার সম্বল সেই পবিত্র মনটা। সোহানা কি আধো বেঁচে আছে নাকি বেঁচে থেকেও ম/রে গেছে আমরা তা জানিনা,(কবি এখানে নিরব)কিন্তু সুভনের জীবনে ঈদ আসে বার বার।


দিনে দিনে তার উন্নতি হচ্ছে ধরছে রাঘব বোয়াল, প্রতিনিয়ত ফাঁদ পেতে চলেছে হাসি মাখা মিষ্টি দুষ্ট চেহারাটা নিয়ে। পাল্টে চলেছে তার বাইকের পেছনে বসে থাকা বালিকা গুলো।


যারা তার বাইকে বিশ্বাসের দশ আঙুল দিয়ে বুকে চেপে লং ড্রাইভে পাড়ি জমাচ্ছে। সুভন থামেনি, সুভনরা হয়তো কখনো থামবেও না। থেমে যাচ্ছে শুধু সেই ভালোবাসার বিশ্বাসটা। বেঁচে থাকার সম্বলটা।


যা সুভনরা কখনো বুঝবেনা, আর যারা বুঝে তাদের কাছে সোহানারা কখনো ধরা দেয় না। (গল্প যখন গল্প নয় কিছু গল্পের মাঝে সত্যি লুকিয়ে রাখে)


অনুভবে_তুমি 


সমাপ্ত..............💔