হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প | রোমান্টিক গল্প বিয়ে

 বউ নিয়ে রোমান্টিক গল্প

বউ নিয়ে রোমান্টিক গল্প

জীবনে প্রথমবার বিয়ে করে খুব এক্সাইটেড ছিলাম...


বাসর ঘরে ঢুকে বউকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো?


বউ বলে ডঙ রাখেন, আমি আপনার থেকে ভাল কাউকে ডিজার্ভ করতাম... শেষ পর্যন্ত ফেঁসে গেলাম...


আমি বোকাচো*দা হয়ে চুপ হয়ে গেলাম...


বউ খাটে হেলান দিয়ে বললো আমার সামনে অত ভদ্রতার কিছু নেই, আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন না... বসেন... আর ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড দেন... রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করতে হবে...


আমি দিত্বীয়বারের মত বোকাচো*দা হলাম...


বিয়ের আগের রাতে বন্ধুবান্ধবদের জন্য ঘুমাতে পারিনি, তাই অবসর সময়ে কয়েকটা কবিতা মুখস্ত করেছি, ভাবলাম প্রথম রাতে বউকে কবিতা শুনিয়ে মুগ্ধ করতে হবে...


কিন্তু বউ তো মুডটাই চেঞ্জ করে দিলো...


অনেকক্ষণ ফোন টিপে বউ প্রথম মুখ খুললো, "শুনেন, বিয়ের আগে যত আকাম কুকাম করসেন সব ভুলে জান, আমার কোন কিছুতেই প্যারা নাই, কিন্তু এখন আর কিছু কইরেন না, এখন কিছু করলে মেরে ফাঁশিতে ঝুলিয়ে বলবো আত্নহত্যা করসেন... সহজ হিসাব!


আমি তৃতীয়বারের মত বোকাচো*দা হয়ে বললাম, 'দ্যাখো আমি কখনো প্রেম করিনি, আর আকাম কুকাম বলতে তুমি যা বুঝিয়েছো সেসব নিয়ে ভাবতে হবেনা, আমার কোন এক্স নেই..."


আপনার কথা বিশ্বাস করলাম, আপনার চেহারা দেখেই বুঝা যায় আপনারে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা, মেয়ে মানুষ এমন আজাইরা মানুষরে ভালবাসেনা... তবে আমার জন্য সুবিধা হইসে, আপনার মত লোক জামাই হিসেবে ভাল...


কিন্তু আপনার যে কোন এক্স নেই, এখন সারারাত কিসের গল্প শুনবো আমি? একটা এক্স জুটাতে পারলেন না জীবনে?


সেই রাত বউ খুব প্যারা দিসে...


দুইদিন পর শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি, ড্রাইভার আমি আর পাশের সিটে সে... এই কয়েক ঘন্টার রাস্তায় সে আমাকে তার আনুমানিক ২০-২৫টা এক্সের বাড়ি দেখিয়েছে...


মানুষ পড়াশোনা করে মনোযোগ দিয়ে, আর সে পুরো জীবন মনোযোগ দিয়ে প্রেম করেছে... আর পেশন নিয়ে জীবনে কিছু করলে যে সফল হওয়া যায় তার প্রমাণ আমাকে দিচ্ছে...


আমি বললাম তুমি একটু চুপ করে বসো, আমরা গান শুনি...


শ্বশুর বাড়ি ডুকার সাথে সাথেই দেখি অনেক আত্মীয় স্বজনরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে...


আমি গাড়ি থেকে নেমে সবাইকে সালাম দিলাম, আর সে হইহুল্লোর করে কান্না শুরু করে দিয়ে বাবাকে যেয়ে জড়িয়ে ধরসে...


আমি একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম, এভাবে কান্না করলে তো মানুষ ভাববে আমি বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় অত্যাচার করতেসি... কি অবস্থা!


সেরকম কিছু হয়নাই, সবাই কান্নাটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে নিসে... সবাই মনে হয় অপেক্ষাই করছিলো জামাই এসে সালাম দিবে আর বউ বাবাকে ধরে কান্না করবে...


সেসব বাদ, আমার বউ যে কান্না করতে পারে আমি সেটাই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না... একা রুমে বসে শুধু এসবই ভাবছিলাম... নতুন জামাই তাই ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও বাহিরে যেয়ে একটা সিগারেট ধরাতে পারছিলাম না...


কিছুক্ষণ পর বউ হুট করে রুমে ডুকে দড়জা বন্ধ করে দিলো... মুহুর্তে শাড়ি খুলে সেলোয়ার কামিজ পড়ে আসছে... আমি নিজের বউকেই চিনতে পারছিলাম না...


বউ এসে বললো, এটা আমার রুম ছিল, কেউ আসবেনা, প্যারা নাই... দড়জা লাগায়া দিসি এবার আপনি সিগারেট খান আমি দেখি...


আর শুনুন, আমার কান্না দেখে আমাকে দুর্বল ভাবার প্রয়োজন নেই... আমি ঐটা অভিনয় করে কান্না করেছি... এতে বাবাও খুশি হয়েছে... বাবা বুঝেছে তাকে আমি অনেক মিস করছি...


আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছি... সে কখন কি করে, কখন কি চায়, আর কোনটা আসলেই চায়, আর কোনটা আসলেই চায়না আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা...


সন্ধ্যার দিকে শ্বশুর আব্বার সাথে বাসা থেকে বের হয়েছি... আব্বা কিছু দূর যেয়েই আমাকে একটা সিগারেট সাধলো, আর লাইটার দিয়ে বললো খাও, সমস্যা নেই, শুধু একটু কমিয়ে খেয়ো... আর লজ্জার কিছু নেই, আমার মেয়ে আমাকে বিয়ের রাতেই(বাসর ঘরে) মেসেজে বলেছে তুমি সিগারেট খাও...


আর বাবা আমার মেয়েকে তুমি কখনো ভুল বুঝোনা, সে আসলে খুবই ভাল মেয়ে... সম্ভবত তোমাকে সে ভীষণ পছন্দ করেছে...


- আপনি কিভাবে বুঝলেন আমাকে পছন্দ করেছে?

- দুপুরে খাওয়ার পর তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন তোমার লেখা পুরো একটা বই সে পড়ে শেষ করেছে, পড়া শেষে তোমার ব্যাগে আর কোন বই না পেয়ে তোমার মক্কেলদের মামলার কাগজও পড়েছে...


আমার আসলে কোন কিছুই বিশ্বাস হচ্ছিলোনা!


তারপর আব্বা বললেন, "দ্যাখো বাবা, আমার মেয়ে যে সকালে এসে কান্নাকাটি করে একসের করেছে সেটাও আসলে কান্না ছিলনা... সে ভেবেছে সে আমাকে খুব মিস করছে বুঝালে আমি খুব খুশি হবো...


পৃথিবীর সব বাবাকেই তো কন্যাদান করতে হয়, আমি আসলে খুশি হবো আমার মেয়ে যদি তোমার বুকে ভাল থাকে...


শ্বশুর আব্বা বলেই যাচ্ছে, আর পড়েছি এক চিপায়... কোন পাগলের গুষ্টিতে জানি বিয়ে করেছি... আল্লাহই জানে সব!


বিয়ের এক মাসের মধ্যে বউয়ের চেহারা অনেকটা বদলে গেল, বউ কেন জানি শুধু সুন্দর থেকে সুন্দরীতমা হয়ে উঠছিলো... দুপুরে গোসলের পর ভেজা চুলে বউ, শাড়ি পড়ে বউ কপালে একদিন কৃষ্ণ রঙের টিপ দিয়েছিল...


আমি মুগ্ধ প্রেমিকের মত বউয়ের দিকে তাকিয়েছিলাম

 অনেকক্ষণ... বিধাতা এত সুন্দর করে তাকে সৃষ্টি করেছে...


বউ আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

- প্রেমে পড়ে যাচ্ছি তোমার...

- উহু, প্রেমে পড়া যাবেনা, প্রেমে পড়া হারাম... আপনি খেতে আসেন...


আমার বউয়ের আসলে সবই ঠিক আছে, কিন্তু সে আসলে আমাকে কতটুকু ভালবাসে আমি বুঝতে পারিনা...

একদিন আমি বললাম চলো বাচ্চা নেই...

সে বলে উহু, বাচ্চা নিলে আমার ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে... তাছাড়া আমি নিজেই একটা বাচ্চা...


কয়দিন পর এসে বলে বাচ্চা নিবো, আমার বান্ধবীদের দুই তিনটা করে হয়ে যাচ্ছে, পরে ওদের বাচ্চা আমাদের বাচ্চার চেয়ে সবসময় সিনিয়র থাকবে... এটা ভাল না, বাচ্চা নিবো...


বিয়ের চার মাস পর আমি একটা বিশেষ কাজে দেশের বাহিরে যাবো, বাসা থেকে ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে সে আর আমি এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসলাম এক সাথে...


এয়ারপোর্ট এসেই সে শুরু করেছে মরা কান্না...


তার কান্না ধরে রাখা যাচ্ছেনা, এমন তো না যে আমি কয়েক বছরের জন্য যাচ্ছি, যাচ্ছি তো অল্প কয়দিনের জন্য... তাকে কিছুই বুঝানো যাচ্ছিলোনা...


কান্না করে আমার শার্ট ভিজিয়েছে, এরপর কান্না থামিয়ে রক্তাক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার জন্য কাঁদছিনা, আমার একটা এক্স এভাবে দেশের বাহিরে চলে গেসিলো, এরপর সে আমার সাথে আর যোগাযোগ করেনি, তাই মন খারাপ করে কান্না করছি...


এবার দুজনেই জোড়ে হেসে দিলাম...


বিমানে বসে প্রথমবার মনে হলো আমি প্রচণ্ড রকম প্রেমে পড়ে গেছি অর...

গত চার মাসে যে শক্ত ভালবাসার দেয়াল সে আমার চারপাশে সে তুলেছে, সেই দেয়াল ভেদ করে আমাদেরকে আলাদা করা কোন শক্তি এই মহাবিশ্বে নেই...


কখনো কখনো প্রিয় মানুষের চোখের কান্নাও অনেক বেশি প্রিয় হয়ে উঠে, এই মায়া সাত জনমেও কাটানো যায়না! 💜