হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প | খুব রোমান্টিক গল্প ২০২৩

 নতুন রোমান্টিক গল্পের লিংক| রোমান্টিক গল্পের লিংক

নতুন রোমান্টিক গল্পের লিংক | রোমান্টিক গল্পের লিংক

বিয়ের মঞ্চে হবু বউ মিমিকে নিয়ে পাশাপাশি বসে আছি। ঠিক তখনি আচমকাই সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক কালো বোরখা ওয়ালী আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দিলো। তার এমন কান্ডে শুধু আমি নই বরং উপস্থিত অতিথিরাও হতভম্ব হয়ে গেলেন। আমি তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,

"একি! কে আপনি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে কান্না করছেন কেনো?"

বোরখা ওয়ালী আরো বেশি করে আমাকে জড়িয়ে ধরে মেয়েলি কণ্ঠে বললো,

"তুমি আমাকে ছাড়া কিভাবে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে? আমাদের পাঁচবছরের রিলেশন তুমি এতো সহজেই ভুলে গিয়েছো? আমার ভালোবাসা কি তুমি একটুও বুঝলে না? সামান্য একটু ঝগড়াইতো হয়েছিলো আমাদের। তাই বলে রাগ করে তুমি অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে?"

তার কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম। জীবনে প্রেমতো দূরে থাক কোনো মেয়ের সাথে ভালোভাবে কথাও বলিনি আর এই অচেনা মহিলা কিনা বলছে তার সাথে আমার পাঁচবছরের সম্পর্ক? স্টেজের সামনে থাকা অতিথিগণ ততক্ষণে ঘটনার মূল বিষয়বস্তু সম্বন্ধে জানার জন্য চেয়ার থেকে উঠে আমাদের কাছাকাছি চলে এসেছেন। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার হবু বউ মিমিও কিছুক্ষণ আগের লাজুক ভাবকে মাটিচাপা দিয়ে চোখ বড় বড় করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এই মুহূর্তে কি বলবো তা যেন আমার ভাবনাতেই আসছে না। তবুও কোনোরূপ তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ভয় মাখা কণ্ঠে বলি,

"প্লিজ! এই মুহূর্তে কোনোরকম ঝামেলা বাধাবেন না। আর আমারতো কস্মিনকালেও কোনো প্রেমিকা ছিলো না। আপনি কোত্থেকে উদয় হলেন? বলুনতো!"

তার আমাকে ছাড়ার কোনো নামতো নেই উল্টো আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

"প্লিজ তুমি এখন মিথ্যা বলবা না। আমি তোমার কাছে পায়ে ধরে ক্ষমা চাচ্ছি। আর কখনো তোমার সাথে ঝগড়া করবোনা। তুমি যা বলবে তাই করবো। তবুও তুমি এই বিয়ে করবে না। তুমি আমাকে বিয়ে করো।"

এই বলেই সে আমাকে ছেড়ে আমার পা দুটো জড়িয়ে ধরলো। আমি চেয়ার থেকে উঠেই তাকে থামিয়ে বললাম,

" আরে করছেন কি? পা ছাড়ুন। প্লিজ এসব নাটক বন্ধ করেন।"

সে আমার পা'তো ছাড়লোই না উল্টো এক আর্তচিৎকার দিয়ে মেয়েলি কণ্ঠে বলে উঠলো,

"তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করে এই মেয়েকে বিয়ে করো তাহলে আমি এই বিয়ের স্টেজেই বিঁষ খাবো।"

এই বলেই তার বোরখার ভেতর থেকে একটি কাঁচের ছোট বোতল বের করলো। মুহূর্তেই আমার ভয়টা আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হলো। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি মিমি ওর মেহেদি রাঙা হাত দিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলেছে। 

হঠাৎই স্টেজের সামনের ভীড় ঠেলে আমার বাবা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলেন,

"কি ব্যাপার? কি হয়েছে? এখানে এতো হট্টগোল কিসের? আর এই মেয়েই বা কে? এখানে এসে সিনক্রিয়েট করছে কেনো?"

আমি বাবাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আগন্তুক আমাকে ছেড়ে বাবার পা দুটো জড়িয়ে ধরে বললো,

"আঙ্কেল! প্লিজ আপনি এই মেয়ের সাথে মারুফকে বিয়ে দিবেন না। ওর সাথে আমার পাঁচবছরের সম্পর্ক। সামান্য রাগ করে আজ আপনাদের পছন্দে বিয়ে করছে। আজ যদি এই বিয়ে হয় তাহলে আমি এখানেই বিঁষ খেয়ে সুইসাইড করবো। আর দায় দিয়ে যাবো আপনাদের উপর।"

তার কথা শুনে বাবা আমার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকালেন। হঠাৎই পাশ থেকে মিমির বড় ভাই বেশ রাগান্বিত দৃষ্টিতে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

"বিয়ে ঠিকঠাক হওয়ার আগেতো নিজের ছেলের সম্বন্ধে বেশ সুনাম করেছিলেন যে আপনার ছেলের মতো নাকি ছেলেই হয়না। এখন এসব কি দেখছি? হুহ! আমাদের কি অপমান করার জন্য এতো আয়োজন করলেন নাকি? আজ যদি আমার বোনের সাথে আপনার ছেলের বিয়ে না হয় তাহলে আমরা আপনাদের নামে মানহানির মামলা করবো।"

তার কথা শুনে বাবা কিছুটা অসহায় দৃষ্টিতে বললেন,

"শান্ত হও বাবা! আমি দেখছি বিষয়টা।"

পরক্ষণেই তিনি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

"আচ্ছা সবকিছুই বুঝলাম যে তোমাদের মাঝে প্রেম ছিল কিন্তু এর কোনো প্রমাণ তুমি দিতে পারবা?"

বিঁষের বোতলটা হাত দিয়ে দেখিয়ে বোরখা ওয়ালী কান্নামিশ্রিত স্বরে বলে,

"কোনো মেয়ে রিলেশন না থাকলে শুধু শুধু কি একটা ছেলের জন্য বিঁষ খেতে চাইবে? আপনিই বলুন। আপনার যদি একান্তই প্রমাণ লাগে তাহলে আমি এই বিঁষ খেয়ে এখনই প্রমাণ দিচ্ছি।"

এই বলেই সে যখন বিঁষের বোতলটা খুলতে যাবে তখনি আমার বাবা বাঁধা দিয়ে বলেন,

"না না বুঝতে পেরেছি আমি। তোমার বিঁষ খাওয়ার দরকার নেই।"

এদিকে আমি বেশ অসহায় দৃষ্টি এনে বাবাকে বলি,

"তুমি বিশ্বাস করো! ওনাকে আমি চিনিই না। হয়তো কোনো ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে আমার এই বিয়ে ভাঙ্গার জন্য। তুমি এর কথা একটুও বিশ্বাস কইরো না।"

আমাকে ধমক দিয়ে বাবা বলে,

"তুই চুপ থাক! এই মেয়ের সাথে সম্পর্ক না থাকলে ইনি কি হুদাই তোর জন্য বিঁষ খাবে? আমি কি কিছু বুঝি না? আমাকে বোকা পেয়েছিস? আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিলি আজ।"


বেশ কিছুক্ষণ এভাবে কথোপকথন চললো...

পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি মিমি কাঁদছে। কাঁদারই কথা, কারণ এমন খুশির মুহূর্তে যদি এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তাহলে আর কান্না ছাড়া কিইবা করার আছে? 

ইতোমধ্যে আমাদের আত্মীয়স্বজন অনেকেই বিয়ের স্টেজের সামনে চলে এসেছে এসব দেখার জন্য। হঠাৎই আমার মাথায় সুবুদ্ধির উদয় হলো। ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখি তার পুরো শরীর কালো বোরকায় আবৃত এমনকি চোখ দুটোও নেকাব দিয়ে লাগানো আর হাতে কালো মোজা তো আছেই। আমি কৌতূহলী মনে তাকে জিজ্ঞেস করি,

"আচ্ছা আপনার চেহারাটা একটু দেখানতো। দেখি আপনি আসলেই আমার প্রেমিকা নাকি অন্য কেউ?"

সে এবার চিকন মেয়েলি কণ্ঠস্বরে বলে,

"এসব তুমি কি বলছো মারুফ? তুমি জানো না আমি কতটা পর্দা করি আর সেখানে কিনা এতো মানুষের সামনে আমাকে মুখ দেখাতে বলছো?"

তার কথা শুনে আমি পুনরায় যেন চমকে উঠলাম। ঠিক তখনি আমার চোখ যায় তার পায়ের দিকে। পায়ের মধ্যে বুট জুতা দেখে আমার সন্দেহ তীব্র থেকে তীব্রতর হলো।


মনের মধ্যে বেশ সাহস জুগিয়ে আর দেরী করলাম না। শক্ত হাতে নেকাব টা ধরে টান দিতেই আগন্তক নারীর চেহারাটি সবার সামনে উন্মুক্ত হলো। তার চেহারা দেখে আমার থেকেও আশপাশের উৎসুক অতিথিগণ অবাক হওয়ার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেলেন। এতক্ষণ যাবৎ এতো সুমধুর কণ্ঠস্বরের অধিকারী বোরখা পরিহিত নারীর মুখমণ্ডলে দাড়ি আর গোঁফে ভরপুর। আর সে আর কেউ নয় বরং আমারই বন্ধু আক্কাস। ছোটবেলা থেকেই ওর মেয়েদের কণ্ঠস্বর হুবুহু নকল করার এক অদ্ভুত দক্ষতা ছিলো আর পাশাপাশি অভিনয়ে ছিলো সমান পারদর্শী। 

শা*লার বন্ধু আক্কাস এক অট্টহাসি দিয়ে বলে,

"কি ব্যাপার বন্ধু! অভিনয়টা কেমন দিলাম? তুই তো খুব করে চাইছিলি তোর বিয়েতে যেন আমি একটু অভিনয় করে দেখাই। তাই জায়গামতো নিজের প্রতিভাকে প্রদর্শন করলাম।"

ওর কথা শুনে আমার মুখ থেকে দুনিয়ার সব গালি যেন বের হয়ে আসতে চাইছে। তবুও বিয়ের স্টেজে নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে নিজেকে দমিয়ে একটি গালিও বের করলাম না মুখ থেকে। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার হবু বউ চোখের জল মুছে মিটমিটিয়ে হাসছে। 


বাঁশ যে কত ভাবে দেওয়া যায় তা আজ এই বন্ধু আক্কাসের অভিনয় না দেখলে বুঝতে পারতাম না। অস্কার কমিটির ব্যর্থতা যে তারা এখনো ওকে অস্কার দিতে পারেনি। তবে আমি সময়মতো ওকে ঠিকই অস্কার দিয়ে দিবো।


(সমাপ্ত)


-বাঁশ