বৃষ্টির দিনের রোমান্টিক গল্প | রোমান্টিক গল্প স্বামী স্ত্রী

জামাই বউয়ের রোমান্টিক গল্প | রোমান্টিক গল্প বাংলা

জামাই বউয়ের রোমান্টিক গল্প | রোমান্টিক গল্প বাংলা

 সকালে বৃষ্টি দেখে ছাতা নিয়ে বের হচ্ছি বউ চেঁচিয়ে বললো , এইটা কিন্তু বাসার শেষ ছাতা, গত তিনদিনে তিনটা হারাইছো এইটাও হারাইয়ো না, খবরদার।


মন খারাপ হয়ে গেল, ছাতা না হয় দুএকটা হারাইছি তাই বলে সকাল সকাল কথা শোনানো? ঠিক করলাম আজ ছাতা কোনভাবেই হারাবো না, বাসায় ফেরত আনবোই, যে কোন মূল্যে।


বের হয়ে দেখি টিপ টিপ বৃষ্টি, ভাবলাম ছাতা খুলবনা খুব দরকার ছাড়া, তাতে হারানোর সম্ভাবনা থাকবে না। ছাতা বগলে করে বৃষ্টি মাথায় হাটছি , লোকজন অদ্ভুত ভাবে তাকাতে লাগলো। কেউ কেউ দাত কেলিয়ে হাসছে বৃষ্টির মধ্যে বগলে ছাতা নিয়ে হাটছে- পাগল নিশ্চয়ই। বিরক্ত হয়ে একটা রিক্সা ডেকে উঠে বসলাম। রিক্সাওয়ালা চলতে চলতে কিছুক্ষন পর থামলো। আমাকে বলল, এসে গেছি নামেন। আমি অবাক। কোথায় যাবো ব্যাটাকে বলি নাই সে বুঝলো কেমনে কই যাবো? ভালো করে তাকিয়ে দেখি একটা ছাতা সারাইয়ের দোকানের সামনে সে দাড়িয়েছে। বললাম , এখানে থামালে কেন?

এবার রিক্সাওয়ালা অবাক , আপনি ছাতা সারাবেন না? ছাতার দোকানে আসছি , নামেন।

মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, ওই তোমারে আমি বলছি আমি ছাতা সারাবো? এইটা নতুন ছাতা।

--তাইলে ছাতা বগলে নিয়ে ঘুরতেছেন ক্যা এই বৃষ্টির মধ্যে?

--সেইটা জেনে তোমার দরকার কি, শার্লক হোমস হইছো? সোনালী ব্যাংকে নিয়ে চলো ।

রিক্সাওয়ালা গজগজ করতে করতে আমাকে সোনালী ব্যাংকের সামনে নামিয়ে দিল।


ব্যাংকে ঢুকতে গেলে গার্ড বাধা দিয়ে বললো,ভেজা ছাতা নিয়ে ভিতরে যাওয়া যাবে না, ছাতা বাইরে রেখে যান।

--কিন্তু আমার ছাতা বগলে ছিলো , ভেজে নাই।

দারোয়ান আমার দিকে একটু অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বললো, কথা বাড়ান ক্যা? ওইখানে ছাতা রাইখা ভিতরে যান।

অগত্যা গেটের পাশে এক কোনায় ছাতা রেখে ভিতরে গেলাম। একটা পে অর্ডার করব। ছাতা হারায় যায় কিনা এই টেনশনে ব্যাংক অফিসারকে বললাম একটু তাড়াতাড়ি করেন ভাই।

--কেন ? এতো তাড়াহুড়া নিয়ে ব্যাংকে আসেন কেন?

--দেরী করলে আমার ছাতা চুরি হয়ে যাবে। বাইরে রেখে আসছি।

ব্যাংক অফিসার মধ্য বয়সী। উনি চশমার ফাক দিয়ে এমন ভাবে তাকালেন যেন এমন কথা জীবনে শুনেন নাই। মুখে বললেন, বাইরে আমাদের গার্ড আছে , কাজে দক্ষ, কিছু চুরি হবে না।

উনি সম্ভবত তার গার্ডের দক্ষতা বোঝানোর জন্যই কাজের গতি কমিয়ে দিলেন। ঘন্টা খানেক পর

ব্যাংকের কাজ শেষ হলে দৌড়ে এসে দেখি না, ছাতা জায়গা মতো আছে।


আবার ছাতা বগলে নিয়ে বৃষ্টি মাথায় হাটছি। সলিমুল্লাহ রোডের মোড় ঘুরতে গিয়ে বন্ধু রিপনের সাথে দেখা। আমাকে ছাতা বগলে নিয়ে ভিজতে দেখে সে বললো, মেহেদী তুই শালা আজীবন কিপটেই থেকে গেলি, ছাতা পুরান হবে দেখে বগলে নিয়ে ঘুরছিস।

সে জোর করে আমার ছাতা খুলে হাতে ধরিয়ে দিলো। খোলার পর দেখি ছাতায় বিরাট ফুটা।

সর্বনাশ! আমার ছাতাতো নতুন ছিলো, নিশ্চয়ই ব্যাংক থেকে বদলে গেছে কেউ তার পুরান ছাতা রেখে আমার নতুন ছাতা নিয়ে গেছে। এই ছাতা নিয়ে বাসায় যাওয়ার উপায় নাই, কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে। আমি ছাতা সারাইয়ের দোকানে চলে গেলাম। ছাতার মিস্ত্রি ছাতা দেখে বললো, কাপড় বদলাতে হবে, এই কাপড় আমার কাছে নাই, আপনি দোকানে বসেন আমি কাপড় নিয়ে আসি। যাবো আর আসব।


ছাতার দোকানে বসে আছি অনেকক্ষণ। দোকানদারের খবর নাই। এরমধ্যে এক অল্প বয়সী দম্পতি হাসতে হাসতে দোকানে ঢুকলো । ছেলেটা আমাকে জিজ্ঞেস করলো , ভাই আপনার বাড়ি কোন জেলায় ?

আমি অবাক। বললাম ফরিদপুর। কেন?

দুইজনই হেসে দিলো। ছেলেটা বিজয়ী ভংগীতে তার বউকে বললো, দেখছো তোমাকে বলছি না যতো ছাতা সারাইয়ের মিস্ত্রী আছে সবার বাড়ি ফরিদপুর?

এরপর সে আমাকে একটা লেডিস ছাতা ধরিয়ে দিয়ে বললো, ভাই ছাতা ইঞ্জিনিয়ার তাড়াতাড়ি এই ছাতাটা সারায় দেনতো দেখি।

রাগে আমার গা জ্বালা করতে লাগলো। জবাব দেয়ার জন্য মুখ খুলতে গেলাম ছেলেটা বললো , আহা ভাই রাগ করেন কেন , যারা ছাতা সারায় তারাও এক ধরনের ইঞ্জিনিয়ার। মজা করলাম ভাই । হা হা ।

আমি অতি রাগে তোতলাতে থাকলাম। একটা ভয়ংকর কিছু করার আগেই দোকানদার ফিরে এলো। সে আমাকে এসে বললো, স্যার আপনার ভাগ্য ভালো, কাপড় পাওয়া গেছে। পনেরো মিনিটে আপনার ছাতা তৈরি হয়ে যাবে।

পরিস্থিতি দেখে ছেলেটা চুপ করে গেছে। মেয়েটা মিস্টি করে হেসে বললো, স্যরি ভাইয়া । ও সবকিছুই একটু কম বোঝে। এই রকম একটা হ্যান্ডসাম ভদ্রলোক যে মিস্ত্রি হতে পারে না সেটাই ও বোঝে না । আপনি কিছু মনে কইরেন না।

আমার রাগ পানি হয়ে গেল। সুন্দরী একটা মেয়ে হ্যান্ডসাম বলছে- রাগের প্রশ্নই নাই। হাসি মুখে বললাম , না না ঠিক আছে। ভুল হতেই পারে।


ছাতা ঠিক করে বেরিয়েছি রাস্তায়। একটা মেয়ে কন্ঠের ডাক শুনলাম, মেহেদি না? এই মেহেদি। তাকিয়ে দেখি আমার ইউনিভার্সিটির ক্লাসমেট মিলি। সে নিউইয়র্ক থাকে। নিশ্চয়ই বেড়াতে এসেছে। আমার পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। মিলি একদিন আমাকে বলেছিল, মেহেদি আজ ক্লাস শেষে তোমাকে আমার কিছু জরুরী কথা বলার আছে। তার আগে তুমি আমাকে খাওয়াবে , খেতে খেতে বলব। বলে সে অদ্ভুত ভংগীতে হেসেছিল। আমি ক্লাস শেষ করে মিলিকে টিএসসি নিয়ে চান মামার চিনা বাদাম কিনে দিয়েছিলাম এক ঠোংগা। বাদাম একটা ছিলে দিয়ে বলেছিলাম , বলো মিলি কি জরুরী কথা?


আশ্চর্য! মিলি কেন জানি রেগে গিয়েছিল , তুমি আমাকে পচা চিনা বাদাম খাওয়াতে এনেছো? বলে সে রাগ করে চলে গিয়েছিল। আমি আজও ভেবে অবাক হই সেইদিনের পর থেকে সে কেন আর আমার কাছেই আর ঘেষেনি। চান মামার চীনা বাদাম পচা ছিলো বলে সে কি রাগ করেছিলো?

মিলি আমার কাছে এসে আশ্চর্য হয়ে বলল, একি তুমি ছাতা বগলে নিয়ে ঘুরছো কেনো?

আমি তাড়াতাড়ি ছাতাটা পাশে রাখা একটা ভ্যান গাড়ির উপরে রাখলাম। একটু বিব্রত হয়ে বললাম, ইয়ে ছাতাতে প্রব্লেম আছে ,সারাতে হবে।

এরমধ্যে একটা নয় দশ বছরের পিচ্চি ছেলে দৌড়ে এলো । এই লোকটা কে মা?

--ওহ। উনি তোমার আংকেল হন। আমার ইউনিভার্সিটির ক্লাস মেট।

--বলো কি এই হোঁৎকা লোকটা তোমার ক্লাসমেট? একে দেখলে তো তোমার আংকেলের মতো লাগে।

মিলি বিব্রত ভংগিতে হেসে বলল, দুষ্ট । যাও গাড়িতে ওঠো। ছেলেটা একটা লাল রঙয়ের হ্যারিয়ারে উঠে পরল। মিলি আমাকে বলল, যাই মেহেদি। বলে সে তার সুন্দর ছাতাটা গোটালো। আমি আমার ছাতার খোজে তাকিয়ে দেখি নেই , যে ভ্যান গাড়ির উপরে ছাতা রেখেছিলাম সেটা ছাতা সুদ্ধ চলে গেছে।

আমি হাহাকার করে উঠলাম, ছাতা !


মিলি গাড়িতে উঠে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো , ছাতাটা নেবে ? আচ্ছা নাও। সামান্য এই ছাতাটাই তোমাকে দিলাম। এতো করে চাইছো।

মিলি ছাতাটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। গাড়ির দরজা বন্ধ হতে হতে শুনলাম বিচ্ছু ছেলেটা বলছে ,মা তুমি হোঁৎকা লোকটাকে ছাতাটা দিয়ে দিলে?

-- আরে ছাতাটা পুরান হয়ে গেছে, একটা ডান্ডি ভেংগে গেছে, এমনিতেই ফেলে দিতাম। এরচেয়ে ভালো দিয়ে দিলাম বুদ্ধুটাকে ।

আমি ছাতা নিয়ে বাসায় ফিরে বউকে হাক দিলাম। ছাতা ফিরিয়ে আনছি। হুহ। ছাতা হারানো অতো সোজা না। বউ ছাতা দেখে চীৎকার করে উঠলো , আরে লেডিস ছাতা তুমি কোথায় পেলে ? কার ছাতা? কে দিয়েছে সত্যি করে বল।


আপনারা লক্ষ্য করেছেন কিনা, মেয়েরা কিছুতেই সন্তুষ্ট থাকে না। ছাতা ফিরে এসেছে সেটাই আসল। কার ছাতা এসেছে , কিভাবে এসেছে সেইটা জানার কি দরকার?

লেখক : Khondokar Mahedi Hasan