রোমান্টিক হাসির স্ট্যাটাস | রোমান্টিক প্রেমের গল্প

 খুব রোমান্টিক গল্প

খুব রোমান্টিক গল্প

ছাদে দাঁড়িয়ে আরেক ছাদের মেয়েকে হাত দিয়ে মাঝে মাঝে সিগনাল দিচ্ছি। মেয়েটা মাঝে মাঝে হাত দিয়ে চড় ঘুষি মারার ইশারা করে, কিন্তু তবুও আমি তাকিয়ে থাকি। মেয়েটা রোজ পড়ন্ত বিকেল বেলা ছাদে এসে ৩০ মিনিট হাঁটাহাটি করে, আমি সেই ৩০ মিনিট তার জন্য অপেক্ষা করি। 


কিন্তু আফসোস, আজ পর্যন্ত তার স্পষ্ট চেহারা দেখার ভাগ্য হলো না। দুরত্ব কম নয় তাই চেহারা স্পষ্ট বোঝা যায় না, কিন্তু অন্যরকম অনুভূতি হয় আমার। মাঝে মাঝে ওই বিল্ডিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করি কিন্তু কখনো ছাদের মেয়েটার মতো কাউকে পাইনি। 


একটু আগেই ছাদ থেকে নামলাম, সন্ধ্যা পেরিয়ে অন্ধকার নামছে আস্তে আস্তে। বাবুল ভাইয়ের হোটেলে গিয়ে দুটো ডালের পুরি আর এক কাপ চা খেতে হবে, নিত্যকার রুটিন। হোটেলে ঢুকেই দেখি আনোয়ার আঙ্কেল বসে আছে, তিনি এখানকার স্থানীয় মানুষ। আমার সঙ্গে দিন পনের ধরে বেশ খাতির জমেছে, কারণ তিনি একদিন এই হোটেলে বসে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল নিয়ে তর্ক করছিল। তখন তার দলীয় কেউ ছিল না, আর আমি হুট করে তার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিলাম। তখন থেকে আমি তার কাছে বন্ধুর মতো, সবসময় সে আমাকে পেলেই খেলার বিষয় গল্প করে। 


আমাকে দেখে আঙ্কেল বললো, কি খবর প্রেমিক পুরুষ, তোমার সিগনাল শেষ হয়েছে? 


আঙ্কেলের সঙ্গে আমার এতটাই বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে যে আমি এখন সবকিছুই তাকে শেয়ার করি। তবে তিনিও তার নিজের অনেক কিছু আমার কাছে বলেন, যুবক বয়সে কি কি করেছেন ইত্যাদি। 


- বললাম, আঙ্কেল আর ভালো লাগে না। সবসময় হাত নাড়াতে নাড়াতে ক্লান্ত হয়ে গেছি এখনো তো কিছু বলতে পারি নাই। 


- আরে হাল ছাড়লে চলবে নাকি? লেগে থাকো সবসময়, তাহলে সফলতা আসবেই। তুমি তো আজ পর্যন্ত আমাকে বললে না যে মেয়েটা কোন বিল্ডিংয়ে থাকে, তাহলে আমি পরিচয় বের করে দিতাম হাহাহা হাহাহা। 


- কাল বিকেলে আপনাকে নিয়ে ছাদে যাবো। 


- ঠিক আছে তাই হবে। 


- আজকে তাস খেলতে যাবেন?


- হ্যাঁ অবশ্যই, নাস্তা শেষ করো তারপর যাচ্ছি। 


নাস্তা করে বের হয়ে বললাম, 


- ঠিক আছে আঙ্কেল, আপনি শিহাব ভাই আর রহমান কাকাকে নিয়ে রুমে গিয়ে বসুন আমি সামনে ফ্লেক্সিলডের দোকান থেকে আসছি। 


- আচ্ছা। 


মোবাইলে রিচার্জ করে দোকান থেকে বের হতেই একটা বোরকা পরা মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমি তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবো ঠিক তখনই সে বললো, 


- শুনুন। 


- আমি অবাক হয়ে বললাম, আমাকে বলছেন? 


- হ্যাঁ। 


- বলেন। 


মেয়েটি তার হাতের কাগজটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, 


- চারিদিকে সবাই আমার পরিচিত, এখানে বেশি কথা বলতে পারবো না। এই কাগজে আমার মোবাইল নাম্বার ও কিছু কথা লেখা আছে, আপনি রাত দশটার পরে কল দিবেন। 


- কিন্তু কে আপনি? 


- আশ্চর্য ব্যাপার, এক মাস ধরে প্রতিদিন ছাদে দাঁড়িয়ে হাত নাড়েন তবুও চিনতে পারেন না? বলি আমি তাহলে কত নাম্বারে আছি? 


আমি হতবাক হয়ে গেলাম, মেয়েটা তো বেশ সুন্দরী আছে। ঠোঁটের কাছে তিল আছে, কথাতে গালে টোল পরে তাহলে হাসিতে নিশ্চয়ই পরবে। 


- দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান চলে যান। 


- ইয়ে মানে, তুমি অনেক সুন্দর। 


- এমন সস্তা কথা বলার অনেক সময় আছে। 


হাতের কাগজটা নিয়ে দৌড়ে চলে আসলাম রুমে, হঠাৎ করে বেশ আনন্দ লাগছে। আনোয়ার আঙ্কেল ও বাকি দুজন তাস নিয়ে বসে আছে। আমার হাতে কাগজ দেখে শিহাব ভাই বললো, 


- হাতে ওটা কি সজীব? 


- আমি বললাম, তেমন কিছু না। 


এমন সময় রহমান কাকা সেটা ছো মেরে নিয়ে গেল, হয়তো সন্দেহ করেছে। আমি তেমন কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছি, কাগজে কি লেখা আছে সে তো আমিও জানি না। যদি রোমান্টিক কিছু থাকে তাহলে লজ্জা পাবো এতটুকুই। 


রহমান কাকা পড়তে লাগলো। 


" আমার নাম 'ফারহানা আফরোজ' আপনার সব কর্মকান্ড দেখে অবাক হই। তবুও আপনাকে দেখে ভালো লাগে, রাস্তায় হাঁটার সময় মোবাইল বের করে এতো কি দেখেন? সেদিন দেখলাম গাড়ির নিচে পরে যাচ্ছিলেন। 

যাইহোক, জরুরি কথা হচ্ছে আপনার সঙ্গে কিন্তু আমার বাবার বেশ খাতির জমেছে। আমি প্রায়ই রাস্তায় বা হোটেলে বাবার সঙ্গে গল্প করতে দেখি, খবরদার বাবার কাছে আবার আমার কথা বলে দিবেন না। তাহলে কিন্তু হাসপাতালের মর্গে রাখা হবে আপনাকে, সাবধান। আমার বাবার নাম 'আনোয়ার হোসেন'।  

নাম্বার দিলাম, রাত দশটার পরে কল দিবেন। " 


আমি তখন সম্পুর্ন বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আনোয়ার আঙ্কেলের দিকে চোখ দিয়ে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। এতদিন ধরে যত অপকর্মের কথা তিনি বলেছেন, আর আমিও যেসব কথা তাকে বলেছি, সবকিছু চোখের সামনে ভাসছে। 🥹🥹


হে খোদা, রক্ষা করো। 


________(ছোটগল্প)(সমাপ্ত) _______


এমন আরও রোম্যান্টিক মজার গল্প পড়ুন।