অবহেলার কষ্টের গল্প | কষ্টের গল্প ২০২৪

 কষ্টের ভালোবাসার গল্প

গল্প-অভিযোগ                                      

খালাতো বোনের ড্রেস চেইঞ্জ করার সময় তার রুমে নাকি উঁকি দিছিলাম। সেই অপরাধে আজ ৩ দিন ধরে একটা ঘরে বন্দি আমি। আটকে রাখা হয়েছে৷

তিনদিনে কোনো খাবারও দেয়নি।

মেঘলা আমাদের বাসায়ই থাকে। তাই ব্যাপারটা পরিবারের মধ্যেই আছে। বাইরে ছড়ালে মেয়েটার বদনাম হতো। কিন্তু আমি এসব কিছুই করিনি।


মেঘলা আব্বুর কাছে বিচার দিলো আর আব্বুও তার কথা বিশ্বাস করে নিলো। আমার কথা কেউ শুনলোই না, উল্টা আব্বু স্টিলের লাঠি দিয়ে মারলো আমাকে৷ আম্মুও কিছু বললো না। তবে উনার চোখেও ঘৃণা। মাও বিশ্বাস করে নিয়েছে আমি এই কাজটা করেছি।


 ছাদের অন্ধকার ঘরটাতে

হাত বেঁধে দরজায় তালা লাগিয়ে রাখা হইছে আমাকে।

তিনদিন ধরে না খেয়ে থাকায় শরীরটা ভেঙে পড়েছে। মাথা ব্যথা আর গ্যাস্টিক তো আছেই।


মেঘলার কথা মনে পড়তেই লজ্জা লাগতেছে। মেয়েটা সামান্য একটা ভুলের জন্য এতবড় মিথ্যে বললো আব্বুর কাছে।৷ আমি পাগল হয়ে গেছি প্রায়, ড্রাগ নেইনা তিনদিন হলো।


আপনারা ভাবছেন আমার আব্বু আম্মুই বা কেমন?

তারা এরকম ছিলেন না। কিন্তু তারাও বাধ্য হয়েছেন

এমন হতে। দুবছর আগে ইন্টার পরীক্ষায় ফেল করার পর থেকে তারা এমন হয়ে গেছেন। অবশ্য ফেল করার কারণ ছিলো। নুসরাত। 

বুঝতেই তো পারছেন কেনো। সে চলে যাওয়ার পর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি আমি। এতোটাই আসক্ত ছিলাম যে তাকে ভুলতে আমার ড্রাগ নেওয়ার প্রয়োজন হলো।


তারপর থেকে আব্বু আম্মু কেউ আমাকে আগের মতো ভালোবাসেনা। আর মেঘলার সাথে তো কখনোই পড়েনা আমার। কোনো একটা ভুল পেলেই সে আমাকে শাস্তি দিয়েই যাবে। ছোট খাটো থেকে হলেও এবারের শাস্তিটা একটু বেশিই হয়ে গেছে।


আব্বু যখন আমাকে মারছিলো তখন তার দিকে তাকাইছিলাম।

তার মুখে স্পষ্ট হাসি দেখতে পেয়ে আমি আর তাকাইনি। চোখ নামিয়ে নিয়ে মার সহ্য করেছি।

প্রত্যেকটা আঘাত চোখ থেকে রক্তকান্না বের করে এনেছে। বারবার বলেও কাজ হয়নি৷ আমি মাদকাসক্ত। করতেও পারি। আর মেঘলা ভুল বলবেনা। এটা তাদের ধারণা নয় বিশ্বাস। যেই সময়টায় আমার পরিবারের সাপোর্ট দরকার সেই সময়ই তারা আমাকে বন্ধ রুমে আটকে রেখেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে সত্যি। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে গেছে। একফোঁটা পানিও নেই ঘরে৷ অবশ্য বৃষ্টি হলে একটু পানি পাওয়া যেতো উপরে একটু ফুটা আছে ওখান দিয়ে পানি পড়ে।


আজ চতুর্থ দিন। কেউ একবার দেখতেও আসেনি আমাকে। বাড়ির কুকুরটা দুদিন না দেখলে তারও খোঁজ নেয়। আর আমিতো আস্ত একটা মানুষ!! যদিও তারা আর এখন আমাকে মানুষ ভাবেনা তাই হয়তো।


এই ভাবে কয়টা দিন কেটেছে জানি না। কারণ যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি নিজের রুমে শুয়ে আছি। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। নিজের শরীরটাই আলগাতে পারছি না। শরীরের প্রতিটা অংশ ব্যথায় জর্জরিত।


কিছুক্ষণ পর দেখলাম মেঘলার আমার রুমে এলো। আমার চোখ খোলা দেখে মেঘলা ব্যঙ্গ করে হাসলো।


_কিরে বেঁচে আছিস? আমরা তো মনে করেছিলাম মরে গেছিস।


 মেঘলার কথাটা শুনেই চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। এ বাড়ির মানুষজন আমায় এতটা ঘৃণা করে!! কোন পশু যদি অসুস্থ হয় তাকে ও তো ডাক্তার দেখানো হয়। আর আমাকে তারা? হয়ত তারা মৃত্যুই কামনা করেছিল আমার।


আমি মেঘলাকে কোন মতে বললামঃ- অনেক ক্ষুধা পেয়েছে একটু খেতে দিবি??


_ আমার ক্ষুধার কথা শুনে মেঘলা বললোঃ "দেখি ঝুটা কিছু আছে কি না।"


 মেঘলার কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠলো। আমি আজ এত অবহেলিত? সব ওই নুসরাতের জন্য। একটু পর মেঘলা একটা প্লেটে কিছু ভাত সাথে আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে গেলো। ক্ষুধার তাড়নায় দেখার সময় ছিলনা কেমন ছিল খাবারগুলা। তবে খাবার গুলো কেমন টক টক লাগছিল। এই ভাবেই চলছে আমার দিন। একদিন রাতে খাবার খাইতে বসছি এমন সময় আব্বু এলো রুমে। 


 _রাফি,প্লিজ তুই আমাদের মুক্ত কর। তোর জন্য এলাকায় যে সম্মান ছিল তা তো অনেক আগেই চলে গেছে এখন অন্তত ঘরের শান্তি টুকু টা ও কেড়ে নিস না।


রাতে ঘুমানোর সময় বাবার বলা কথাটা চিন্তা করতে লাগলাম। আসলেই তো! আমি তো শেষ হলাম নুসরাতের জন্য। সাথে বাবা মায়ের সম্মান ও শেষ করে দিলাম। এবার তাদের মুক্ত করে দিব। যেখানে নুসরাত আমায় ছেড়ে অন্যের সাথে খুব ভালোভাবেই সংসার করছে সেখানে আমি উল্টো। আমি আর এই বাড়ি তে কাউকে আমার মুখ দেখাবো না। কিন্তু যাবই বা আর কোথায়? যেখানেই যাই তবে আমি আমার জীবনের এই দুই বছরের গল্পটা পালটাতে চাই।


রাতে আব্বু আম্মুর জন্য একটা চিরকুট লিখলাম।


"বাবা আর আম্মু আজ থেকে তোমরা মুক্ত। তোমাদের অবাধ্য সন্তান নামের কুলাঙ্গারকে আর দেখতে হবে না। জানি না,আজ থেকে আমার কোথায় স্থান হবে। তবে মৃত্যুর পর ও আমার লাশ তোমাদের সামনে আসবে না এই প্রমিস করছি। জন্মের পর থেকে কতই না জ্বালিয়েছি তোমাদের। তবে আম্মু তোমার দুধের ঋণ ছাড়া বাকি সব ঋণ শোধ করে দিব যদি বেঁচে থাকি।"


মেঘলার জন্যও একটা চিরকুট লিখে আসলাম।


"আসলে তুই না থাকলে আমি জানতে ও পারতাম না আমি কতটা নিচু স্থানে বাস করতাম এ বাড়িতে। আর হ্যাঁ আজ থেকে এই নেশাখোরটাকে আর দেখতে হবে না তোকে। ভালো থাকিস। আর আব্বু আম্মুকে একটু দেখে রাখিস।"


বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলাম। কিন্তু যাবটা কোথায় এখন! যাওয়ার মত বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজন ও তো নেই। সেই ভোর থেকে হাঁটা শুরু করলাম। সন্ধ্যার দিকে প্রচুর ক্ষুধাও লাগছিল। হাতে একটা ঘড়ি ছিল। নুসরাতের দেওয়া। ভাবলাম এটা বিক্রি করে কিছু খেয়ে নেই। কিন্তু নুসরাতের এই স্মৃতিটা কিছুতেই হারাতে চাচ্ছিলাম না। তাই আর কি না খেয়ে বসে রইলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে ক্রমশ। আর এদিকে ক্ষুধাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে তার সাথে৷ তাই আরেকটু হেঁটে মসজিদের অজুখানা থেকে পানি খেয়ে নিলাম। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে ভয় হচ্ছে আমার। আশ্রয় হবে কি রাতের? ১.০০ দিকে একটা বাড়ির গেট খোলা দেখা যায়। আমি ভাবলাম রাতটা এখানেই কাটিয়ে দেই ।


সকালে ঘুম ভাঙ্গল একজন মহিলার ডাকে।


_ এই ছেলে এখানে ঘুমিয়ে আছো যে? তুমি কে আর এখানেই বা ঘুমিয়ে ছিলে কেন।


_ আন্টি আমি আমার নিজের পরিচয় দেওয়ার মত কিছু নেই। রাত অনেক হয়ে গিয়েছিল। আর থাকার জায়গা ছিল না। পেটে অনেক ক্ষুধা থাকায় এখানে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। সরি আন্টি।


 এই বলে আমি হাঁটা শুরু করলাম তখনই পেছন থেকে ডাক আসলো আবার।


_ এই ছেলে --শোনো??


_ জী আন্টি বলুন।


_তোমায় দেখতে তো অনেক দুর্বল দেখা যায়। রাতে খেয়েছো কিছু?


_ না আন্টি। এখন কোনো জায়গা থেকে পানি খেয়ে নিব।


_ পানি খেলে কি আর ক্ষুধা যায়? চলো আমার সাথে। খেয়ে নিবে।


_ আন্টি রাতের আঁধারে আপনার বাড়িতে থেকেছি এর জন্য আমায় কথা শুনাননি এতেই আমি কৃতজ্ঞ ।


_ এই বেশি কথা না বলে চলো খেয়ে নিবে।


পেটের ক্ষুধার কাছে শেষ পর্যন্ত আমাকে হার মানতে হলো। আর কিছু না বলে উনার পিছু পিছু বাসার ভিতরে ডুকলাম। ভিতরটা বেশ সুন্দর। একটু পর আমায় খেতে দিল আন্টি। ক্ষুধা অনেক থাকায় প্লেটের সব খেয়ে আমি আন্টির দিকে তাকালাম।


_ বসো আমি আরো নিয়ে আসছি।


খাবার খাওয়ার পর আন্টি বললেনঃ- বাবা তুমি এখন কোথায় যাবে।


_ আন্টি জানি না কোথায় যাব।


_ তুমি কি কাজ করতে পারবা?


_ কেমন কাজ আন্টি?


_ এই ধরো আমাদের বাসার অনেক কাজ ই থাকে। তুমি কি করতে পারবা?


_ হ্যা পারব আন্টি। আপনি শুধু আমায় খেতে আর থাকতে দিলেই হবে।


_ পাগল ছেলে। কাজ করলে খাওয়া আর থাকা ছাড়া ও বেতন দেব ।


_ ঠিক আছে আন্টি। আমি আপনাদের সব কাজ নিজের পরিবার মনে করে করব। মনে করার কি আছে।!আজ এখানে ঠাঁই না হলে আমার যে না খেয়ে মরতে হত। আচ্ছা আন্টি আপনি কি একাই থাকেন এই বাড়িতে।


_ না,আমার সাথে আমার মেয়ে সোহানা থাকে। ও নানু বাড়ি গেছে। আগামীকাল আসবে ।


_ আর আঙ্কেল?


_ তোমার আঙ্কেল গত দুই বছর আগে আমাদের ছেড়ে ওপাড়ে চলে গেছে।


_ সরি আন্টি। আমি না বুঝে আপনাকে দুঃখ দিয়ে দিলাম।


_ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার নাম কি?


_ জী আন্টি রাফি।


_ লেখাপড়া করেছো কি?


_ আন্টি গত দুই বছর আগে ইন্টারে পাশ করতে পারি নাই। আর তারপর লেখা পড়া করা হয়নি।


_ তোমার পরিবার নাই? ওরা কিছু বলে নাই?


_ প্লিজ আন্টি পরিবারের কথা বলবেন না। আমি আমার ভংঙ্কর অতীত ভুলে যেতে চাই ।


_ ওকে তোমার কাজ হল আমাদের বাড়ীর বাগানটা দেখে রাখা আর আমাদের সুবিধা অসুবিধা পাশে থাকা। আর তুমি চাইলে স্টাডি ও নতুন করে শুরু করতে পারো। এখন বিশ্রাম নাও। ওইটা তোমার রুম।


রুমে এসে ভাবতে লাগলাম। নিজের পরিবার রাস্তায় ছুঁড়ে মারলো। আর অচেনা কেউ বলা যায় আমার জীবন ফিরিয়ে দিলো। বড় আজব এই দুনিয়া!


পরের দিন বাগানটা ঘুড়ে দেখলাম। একটা গোলাপ খুবই ভালো লাগলো। তাই গোলাপটা ছিঁড়ে নিলাম। যেই ছিঁড়লাম ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা মেয়ের গলার শব্দ শুনতে পেলাম।


_এই ছেলে এখান থেকে ফুল ছেঁড়ার সাহস হয় কি করে হয় তোমার?


_ আপনার ফুল মানে? (অবাক হয়ে)


_ মানে কি বুজাচ্ছি? ( নাক মুখ লাল করে)


_পাগল নাকি হুট করে এসে বলে আমার ফুল আবার বলে দেখাচ্ছি?


_ কি! এত বড় সাহস আমায় পাগল বলা! 


_ সরি পাগল নয় পাগলী। আর হ্যাঁ ম্যাম এটা ডাক্তারের চেম্বার না।


_বদ পোলা পিডাইয়া মাথা ফাটামো। বেশি কথা বললে।


_ আপনাকে দেখতে তো আপেলের মত দেখা যায়। কিন্ত ম্যাম আপনার বিহেভ এমন লেবুর মত কেন?


_ কি বললি?? আম্মু ও আম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মু।


_এই তোর আবার কি হয়েছে? কখন আসলি?


_দেখ আম্মু ও আমার লাল গোলাপ ফুলটা ছিঁড়ে নিয়েছে। আবার আমায় বলে আমার বিহেভ নাকি লেবুর মত ( কেঁদে কেঁদে )


_ তাই বলে কি কাঁদতে হয়? ( আন্টি)


এবার বুঝতে পারলাম এটা আন্টির মেয়ে সোহানা।


_ সরি আন্টি আমি বুঝতে পারিনি এটা আপনার মেয়ে। আর ফুলটা অনেক সুন্দর ছিল। তাই ছিঁড়েছিলাম সরি ম্যাম। আর এমন ভুল হবে না।


_ রাফি ব্যাপারনা। তাছাড়া সোহানার এটা প্রিয় গাছ তাই এমন রিএ্যাক্ট করেছে। ও একটু বেশিই জেদি।


_ বুঝতে পারছি আন্টি।


_ আম্মু এই ছেলেটা কে? ( সোহানা)

 

_ এটা রাফি পরিচয় বলতে শুধু ওর নাম। এর বাহিরে আর কিছুই নেই। ও এখন থেকে আমাদের বাড়িতেই থাকবে আর আমাদের পাশে থাকবে।


বিকালে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। আর ভাবছি নুসরাতের কথা। আমি ওকে ভুলতেই পারি না। ওর দেওয়া ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে ভাবছি মানুষ কত বেঈমান! কত স্বপ্ন আর কত আশা দেখিয়ে শেষে বলে গেল আমার তোমার সাথে থাকা সম্ভব না। ওর কি আমার কথা কখনো মনে পরে? হয়ত পড়ে না কারণ পড়লে হয়তো আমায় কোন ভাবে খোঁজ করতো অবশ্যই। নিজেকে খুব একা লাগে আজকাল। ইচ্ছে হয় এই জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেই। বেঁচে আছি যেন একটা জীবন্ত লাশ হয়ে। এই সমাজে শরীর খুনের বিচার হয় কিন্তু মানুষ বেঁচে থাকার যে মন সেটা হত্যার বিচার হয় না। তাই তো নুসরাতের মত হত্যাকারীরা এই সমাজে হেসে খেলে ঘুরে বেড়ায়। কিন্ত আমি যে এই লড়াই জিততে চাই। আর যারা আমার সাথে কুকুরের মত ব্যবহার করেছে তাদেরও দেখাতে চাই। এসব ভাবতে ভাবতে আচমকা চোখ বেয়ে পানি পড়ে গেল। এমন সময় পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে বললো।


_ এ কি? আপনি কাঁদছেন কেন। 

 


পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখি এটা সোহানা। আমি চোখের জল মুছে নিলাম।


_ ম্যাম কাঁদছি না বিকালের আকাশ দেখছি।


_ এই শুনেন আমি আপনার ছোট হই। আমাকে ম্যাম নয় সোহানা ডাকবেন। আর আপনি মিথ্যা বলবেন না আমার সাথে।


_ জী, আমি নিচে যাই আপনি থাকুন।


_ কেন আমি আসাতে খারাপ লাগছে নাকি?


_ না তেমন কিছু না।


_ তাহলে দাঁড়িয়ে থাকুন সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা দেব। আর সকালের জন্য আমি সরি।


_ ম্যাম সরির কি আছে আপনার জায়গা থেকে আপনি রাইট।


_ আবার ম্যাম সাথে আপনি ( রাগি গলায়) 


_ সরি।


_বাদ দিন আপনি এত চুপচাপ থাকেন কেন?


_ ভালো লাগে তাই।


_ আপনার সম্পর্কে আম্মুর কাছ থেকে কিছু শুনেছি। তবে পুরানো সব ভুলে আগামী দিন থেকে আমার সাথে কলেজে যাবেন। আমি এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।


_ আমার আর পড়ার ইচ্ছা নাই ।


_ এই ছেলে এত কথা বলবা না, আমার কথার উপর কথা বললে খুন করে ফেলবো।


আমি চোখে পানি আর মুখে হাসি নিয়ে ছাদ থেকে চলে আসলাম।

_ রাতে চোখে কিছুতেই ঘুম আসছে না কেন জানি নুসরাতের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো ফিরে আসছে, উফ আর নিতে পারছি না। চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে এখন মাথা ঠান্ডা করার একটাই উপায় সিগারেট। যা গত দুই বছর ধরে করে আসছি। ঘুম আসছে না, তাই রুম থেকে বেড়িয়ে পুকুর পাড়ে চলে আসলাম। নুসরাতকে যতই ভুলতে চাই ততই মনে পড়ে যায়,আর আমার সাথে ঘটে যাওয়া অমানুষিক মেঘলা আর মা বাবার ব্যবহার গুলা তিলে তিলে পুড়ে খাচ্ছে আমায়। বড় হৃদয় বিদারক এই স্মৃতি গুলো। আমি হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নুসরাতের দেওয়া সেই ঘড়িটা। ছুড়ে মারতে চেয়ে ও পারলাম না,মুখ ফঁসকে বেড়িয়ে এলো, "নুসরাত বেঈমান তোর জন্য সত্যি হারিয়ে গেল আমার ঠিকানা"।এই বলে কাঁদতে লাগলাম , এমন সময় পেছন থেকে কেউ বললো," আপনি এত রাতে কাঁদছেন কেন?"

_ কই কাঁদছি? 

_ আমি অনেক ক্ষণ আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে আছি আমি সব দেখেছি আপনার মধ্যে অনেক রহস্য আমি জানতে চাই। প্লিজ, আমায় বন্ধু ভেবে সব খোলে বলুন।

_ প্লিজ ম্যাম, আমায় এই বাড়ি থেকে ও চলে যেতে বাধ্য করবেন না,আমি আমার অতীত বলতে পারব না।

_ ওকে ঠিক আছে, কিন্ত নুসরাতকে কে?

_ নুসরাতের কথা আপনি শুনলেন কখন?

_ যখন আপনি বিড় বিড় করে বলছিলেন তখন শুনেছি এই নামটা। 

_ আমি জানি না প্লিজ, জানি শুধু দু মোট খেয়ে বাঁচার জন্য আপনাদের বাড়িতে পড়ে আছি।"

,,


_ পরের দিন খাবার খাওয়ার সময় সোহানা বললো," আম্মু রাফি আগামীকাল থেকে আমার সাথে কলেজে যাবে।"

_ সেটা রাফি ভালো জানে।

_ না মানে আন্টি আমি বলছিলাম কি ,,,, ( রাফি)।

_ তোমার কিছু বলতে হবে না, চুপ থাকো ( সোহানা) ।


.

_ পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙ্গল সোহানার ডাকে।

_ এই যে মিষ্টার রাফি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন।

_ আরেকটু ঘুমিয়ে নেই ।

_ তোমার বউ পেয়েছো নাকি একটু পর পর এসে ডেকে যাবো।

_ তারপর ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম সকালের নাস্তার পর সোহানা জিজ্ঞেস করলো," তুমি কি রেডী?"

_ না মানে আজ না গেলে হয়না।

_ ওই ছেলে বেশি কথা বললে গলা চেপে মারব( রাগে নাক লাল করে) । 

_ জী আমি রেডী।


.

_ ঐ আমি কি তোর আন্টি লাগি জী,জী শুরু করছিস কেন?

_ না মানে এমনি।

_ আজ থেকে ঠিকঠাক ভাবে কথা বলবে, নয়ত এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে ফেলবো।

,

_ মনে মনে বললাম, এই মাইয়া কোনো দিক দিয়ে রিনা খানের থেকে কম যায় না।

,,

_ এই তুমি বিড় বিড় করে কি বলছো? 

_ কই কিছু না, চলুন ।

_ এই পোষাকে যাবে , তোমার এর থেকে বেটার পোষাক নাই?

_ না মানে ম্যাম, আমার আর পোষাক নাই।

_ হাতের ঘরিটা তো বেশ সুন্দর তোমার।

_ জানি না সুন্দর কি না, তবে এটা যত দিন থাকবে আমার হাতে, তার স্মৃতি হয়ে থাকবে।

_ তার মানে কার?

_ কারোর না ম্যাম, চলুন। 

_ আবার ম্যাম? , ঠিক আছে বিকালে শপিং এ যাব ।

_ তারপর দুজন রিক্সা উঠে বসলাম, নুসরাতের পর এই প্রথম আমি অন্য কোনো মেয়ের সাথে রিক্সাতে বসলাম বা এত কাছে আসলাম, তাই আমি একটু চেপে বসতে চেষ্টা করলাম, যাতে দুজনের মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা থাকে ।

_ আমার অবস্তা দেখে সোহানা বললো, "এই যে মিষ্টার আমার সাথে বসতে বুঝি খুব খারাপ লাগছে?

_ আসলে তা না ।


,

_ তা না হলে এদিকে আসো। 

_ আমার জড়সড় হয়ে বসা দেখে সোহানা নিজেই আমার হাত ধরে তার দিকে টেনে নিয়ে গেল। আমি মনে মনে সোহানাকে কিছু বকা দিলাম, এই মাইয়াটা এত জেদি। আমি কেন যেন নুসরাত যাওয়ার পর মেয়েদের ট্রলারেট করতে পারি না, দেখলে রাগ হয়। কিন্ত যাদের জন্য আশ্রয় খুঁজে পেয়েছি, তাদের তো আর এড়িয়ে চলা যায় না। তাই চুপচাপ সোহানার সাথে বসে রইলাম।

_ সোহানা প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলে সব মিটমাট করে নিলো , আমাকে আর সোহানাকে এক সাথে দেখে সোহানার ফ্রেন্ডরা জিজ্ঞেস করলো, "এটা কে সোহানা? "

_ আমার কাজীন রাফি, আমাদের সাথে এখন থেকে পড়বে যদি ওনি আমাদের সিনিয়র ।

_ রাফি, এই চার জন আমার ফ্রেন্ড, মোহনা, রিমি, সাথী আর এই হল নিলয় ।

_ হ্যালো সবাই কেমন আছেন?

_ হুম আমরা ভালো, তাহলে আমাদের সাথে আরেকজন ফ্রেন্ড বাড়ল, নিলয়।

_ রাফি তোমার চুল গুলো না অনেক সুন্দর ( সাথী)


,,

_হুম লুচু মাইয়া, তোমার কাছে এক ছেলের হাসি, আরেক ছেলের চুল, আরেক ছেলের স্টাইল ভালো লাগে ( সোহানা) ।

_ ওই তুই আমার ফ্রেন্ড হলে এরকম বলতে পারলি।

_ এহ আসছে ন্যাকা, এই শোন রাফিকে বড় ভাইয়ের চোখে দেখবি।

_ কেন তোর কি কিছু আছে নাকি রাফির সাথে?( সাথী) 

_ হ্যা আছে এবার তুই রাফিরে ভাইয়ার নজরে দেখ, প্লিজ।( সোহানা) _রাফি তুমি নায়ক সিয়ামকে চেনো?( সাথী) 

_ হুম কেন? 

_ তোমাকে না ওর মত কিছুটা দেখতে।

_ ম্যাম, আমি ক্লাসে যাব আপনারা আড্ডা দেন। এই বলে আমি চলে আসলাম। আমার সাথে সাথে সোহানা ও চলে আসলো। 

_ শুরু হল নতুন জীবন, যার নাম সংগ্রাম আর যুদ্ধ। যেখান থেকে আমি নুসরাতের শেষ কথার জবাব দেব, ও বলেছিল "আমার হবু বর ডাক্তার তোর মত পাগল না।"

_ ধীরেধীরে বন্ধুত্ত হয়ে যায় সোহানার সাথে আমি পড়া আর বাড়ির কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকতাম আর প্রতি রাতে কাঁদতাম। কখনো সোহানা আমায় মাথায় হাত ভুলিয়ে বলতো," বোকা, মানুষের জীবনে যদি খারাপ সময় না যেত তাহলে মানুষ ভালোর মর্ম বুঝতো না।" দেখতে দেখতে কখন যে বছর চলে গেলো বুঝতে পারলাম না, এখন এই পরিবারের ছেলের মত আমি। হ্যা, এরা আমায় অবহেলা করে না, আমি আজ ও মাঝে মাঝে সিগারেট খাইনুসরাতের কথা মনে হলে আর আমায় এটা সোহানা নিজেই দেয়। কারন নয়ত আমি পচন্ড কান্না করি, একদিন সোহানা বললো, "রাফি, আমার মাথায় হাত রেখে কথা দে, আমি যা আজ বলব তার ঠিক উত্তর দিবি।

 ,,

যারা ভাবছেন রাফি আর সোহানার মাঝে কিছু একটা হবে তাদের ধারণা অচিরেই ভুল প্রমাণিত হবে কারন গল্পটা ভিন্ন ভাবে সাজাতে চাই। 

 "

,,

_এখন এই পরিবারের ছেলের মত আমি। হ্যা, এরা আমায় অবহেলা করে না, আমি আজ ও মাঝে মাঝে সিগারেট খাইনুসরাতের কথা মনে হলে আর আমায়

এটা সোহানা নিজেই দেয়। 


_কারন নয়ত আমি পচন্ড কান্না করি, একদিন সোহানা বললো, "রাফি, আমার

মাথায় হাত রেখে কথা দে, আমি যা আজ বলব তার ঠিক উত্তর দিবি......


_ তুই এমন করে বলছিস মনে হয় আমি তোর কথা কখনো শুনি নি?


_ না, আগে আমার মাথায় হাত রেখে বলতে হবে।


_ ওকে বাবা, বল এবার। কি জানতে চাস?


_ তোর অতীত।


সোহানার মুখে অতীত শব্দটা শুনে রাফির হাসিখুশি মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।


_স্ট্যাচু হয়ে গেলি কেন? তুই কিন্তু আমার মাথা ছুঁয়ে কথা দিয়েছিস।


_ প্লিজ সোহানা, এটা ভুলে যা না।


_ তুই বলবি না, তাই তো?


_বলার মত আছেই বা কি? ছোটবেলা থেকে আমি বাবা মায়ের আদরের সন্তান ছিলাম। রাজপুত্রের মত আবির্ভাব বলা যায়। স্কুলে ভালো ছাত্র হিসেবে সবাই খুব আদর করত। আর এভাবেই কেটে যায় আমার স্কুল লাইফ। গোল্ডেন এ+ নিয়ে কলেজে ভর্তি হই। স্বাভাবিক ভাবেই রোমাঞ্চিত ছিলাম কলেজের প্রথমদিন। সেই দিনে আমার চোখ আটকে যায় একটা মেয়ের উপর। নীল থ্রী-পিছ পড়া ছিল মেয়েটা। তার সৌন্দর্য যেন নীল কালারটা আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল। কেটে যায় প্রথম দিন এই ভাবেই। পরেরদিন মেয়েটাকে আমাদের ক্লাসে দেখি। কেন যেন অনিচ্ছা স্বত্বেও, বার বার ওর দিকে চোখ পড়ে যাচ্ছিলো। এর মধ্যে একবার দুজনের চোখাচোখিও হয়ে গেলো।


_তারপর?


_ আমি লজ্জায় নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নিলাম। তারপর থেকে এই ভাবে চলতো। আমি শুধু ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম। যখন ও আমার দিকে তাকাতো আমি চোখ নিচু করে নিতাম। রোজকার রুটিনবাঁধা ছিল এসব। একদিন আমার এই রুটিনে জল ঢেলে দিলো মেয়েটা। আমি ওর দিকে তাকাতেই ও রেগে গেলো।


_এই ছেলে তুমি আমায় চেনো?


_ হুম। আপনি আমাদের ক্লাসের।


_ চুপ। আর আমার দিকে তাকাবেন না। এক মাস ধরে লক্ষ করছি আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।


আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম। সে দিন থেকে আমি ওকে দেখলে মাথা নিচু করে নিতাম।

ওহ এর মাঝে আমার একটা ছেলে বন্ধু হয়েছিল ও তেমন পড়তো না, ওর এ্যাসাইনমেন্ট গুলা আমিই করে দিতাম। সেই সুবাদে সে আমার ভালো বন্ধু ছিল। ওর নাম ছিল রাশেদ। খুব দুষ্টু ছিল। অনেক প্রেম করতো। আমি যখন মেয়েটাকে দেখতাম ওই দিনের পর থেকে, তখনই মাথা নিচু করে নিতাম অথবা পথ চেইঞ্জ করে নিতাম।


_ একদিন আমি আর রাশেদ বসে আছি। তখন ওই মেয়েটা আসলো।


_রাশেদ ভাই, আপনার বন্ধু হাবলাটাকে আপনি কিছু শিখাতে পারেন না?


_ কেন? তোমার মনে কি ওর জন্য ঘন্টা বাজছে নাকি?


_ আমার না তোমার বন্ধুর বাজে। কিন্ত ভয়ে বেচারা বলার সাহসটুকু পর্যন্ত পায় না।


_ কিরে দোস্ত তলে তলে এত কিছু? আর আমি জানি না!


_ আরে তেমন কিছু না।


_এই ছেলে?? আমার নাম জানো?


_ না জানা হয়নি।


_ নাম জানো না আবার প্রেম করতে চাও? আমি নুসরাত।


পরের দিন ক্লাসে যেতেই নুসরাত এগিয়ে এলো।


_রাফি তুমি কি আমায় ভালোবাস?


আমি কিছু না বলে চুপচাপ রইলাম।


_তোমার মত হাবার আর প্রেম করা লাগবে না।


এই বলে নুসরাত চলে যেতে লাগলেই আমি নুসরাতের হাত ধরে বলিঃ- ভালোবাসি, বড্ড ভালোবাসি তোমায়।


সেই থেকে শুরু আমাদের প্রেম। ক্লাসে আর চোখে দেখা সবাইকে ফাঁকি দিয়ে প্রেম করা, আর অন্য সব জুটির মত আমরা সিনেমা, ফুসকা, রিক্সা করে ঘুরে বেড়ানো, রেল লাইনের পাশ দিয়ে দুজন দুজনের হাত ধরে চলা, কিছুই বাদ যায়নি। দিন যত যাওয়া শুরু করলো ভালোবাসা তত বাড়তে লাগলো। দুজন দুজনের জন্য নেশাক্ত হয়ে উঠলাম।


_ একদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দুজন মেলায় ঘুরতে গেলাম। আমি নুসরাতকে দুই ডজন নীল চুড়ি কিনে দিলাম। আর নুসরাত আমায় একটা ঘড়ি গিফট করল। নুসরাত ঘড়িটা পরিয়ে দিলো আমার হাতে।


_রাফি আমি যদি মরে যাই, তারপরও যেন আমার এই ঘড়িটা তোমার থেকে না হারায়। এটা আমার ভালোবাসার চিহ্ন। এটা তোমার হাতে থাকলে মনে করবে,আমি তোমার সাথে আছি।


সেদিন আমি কিছু না বলে নুসরাতকে জড়িয়ে ধরে কাঁদি। নুসরাত আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে নিজেও কেঁদে ফেলে।


_এই পাগল? কাঁদিস কেন,? মনে রাখবি আমার হৃৎপিন্ড যতদিন চলবে, ততদিন আমি তোর।


দ্বিতীয় বর্ষে টেষ্ট এক্সামের প্রথম দিন আগে নুসরাত আমায় ডাকলো।


_ রাফি একটা কথা বলব তোমায় রাখবা?


_ আমি কি কখনো তোমার কথা ফেলেছি?


_ আগে আমার মাথায় হাত রেখে বল, আমার এই কথা রাখবাই?


_ হুম বলো শুনব ( মাথায় হাত রেখে)।


_ তুমি আমায় ভুলে যাও।


নুসরাতের কথা শুনে,আমি ওর মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিলাম।


_প্লিজ নুসরাত, এমন কিছু বল না। তুমি চাইলে আমায় খুন করতে পারো, কিন্তু আমায় ছেড়ে যেও না ( কাঁদতে কাঁদতে ) ।


_ রাফি আমি আমার কথা বলে দিয়েছি। আমার বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আমি চাই না তুমি আর আমার সাথে যোগাযোগ করো।


এই বলে নুসরাত চলে যায়। আর আমি জ্ঞানহীন পাগলের মত ঘাসের মাঝে বোবার মত বসে পরি। আমার মুখ থেকে কিছুই বের হচ্ছে না। বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম। আর পড়ার দিকে মন বসছে না। তাই আম্মুর থেকে এক হাজার টাকা চেয়ে নিলাম। আর আমি পুরো টাকায় সিগারেট কিনে নিয়ে আসলাম। সারাটা রাত ছাদে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়েছি। আর পাগলের মত হেসেছি, আবার কেঁদেছি।হঠাৎ করে তখন অসুস্থ হয়ে পড়ায় এক্সামে আমি ১০ মার্কের উপর আন্সার করতে পারি নাই। নুসরাত সম্পূর্ণভাবে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। আমি তিন দিন পর ওর বাসার সামনে যাই। ওর বাসার সামনে যেতে ও আরো রেগে যায়।


_ রাফি তুমি চলে যাও প্লিজ। তিন দিন পর আমার বিয়ে আমার জীবনটা নষ্ট করো না।


আমি হাসতে হাসতে বললাম, "আর আমার জীবনের যে গতিরোধ থামিয়ে দিয়েছো? কি অধিকার আছে তোমার আমার জীবনটা নষ্ট করার? প্লিজ নুসরাত আমায় ছেড়ে যেও না তুমি?"


_ রাফি আমি আমার ডিসিশন আগেই জানিয়ে দিয়েছি।।


নুসরাত এই বলে চলে গেল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম নুসরাত যদি একবার ফিরে আসে সেই আশায়। একটু পর তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। আমি একপাও নড়ি নি নুসরাত ফিরে আসবে সেই আশায়। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে,আমি বাসায় চলে আসি সে দিন। রাতে খুব জ্বর হয়। আমার জ্ঞান ফিরার পর আম্মু বলছিল আমি নাকি দুই দিন অজ্ঞান ছিলাম। এর মাঝে পরিবারের সবাই জেনে যায় নুসরাতের কথা। নুসরাতের আব্বু নাকি বাসায় এসে ওয়ার্নিং দিয়ে গিয়েছিল, আমি যদি আর নুসরাতকে ডিস্টার্ব করি, তবে খুব খারাপ হবে। আম্মুও আমাকে অনেক বোঝালো নুসরাতকে ভুলে যেতে।


কিন্তু আমি কিছুতেই নুসরাতকে ভুলতে পারি না। আগামীকাল নুসরাতের বিয়ে আমি তাই আবার নুসরাতের বাড়িতে গেলাম। নুসরাত অপমান করল। যা ইচ্ছে তাই বললো আর বললোঃ- আমার হুবু বর ডাক্তার। তুই পাগল, তোর হাত ধরে আমি বেড়িয়ে যাব কোন দুঃখে?


খুব আঘাত লাগছিল ওর কথায়। তাই ওর গলা চেপে ধরলাম। বললামঃ- ফিরিয়ে দে আমার সব দিন গুলো। আমার ভালোবাসা, আমার আবেগ, আমার অনুভূতি গুলো। ঠিক তখনই পেছন থেকে কে যেন আমার মাথায় আঘাত করে।।জ্ঞান ফিরতে দেখি আমার পাশে পুলিশ দাঁড়ানো

আমি বললামঃ-আপনারা?


_ পুলিশ লোকটি হেসে বললো তোমার জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা করছিলাম। তারপর আমায় জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি আমার অপরাধ জানতে চাইলে পুলিশ লোকটি বলে হত্যার চেষ্টা ধর্ষণ সাথে চুরির অভিযোগ আছে আমার নামে। আর এর প্রধান সাক্ষী নুসরাত সে নিজে এসে অভিযোগ করে গেছে......।


 পুলিশ লোকটি হেসে বললো তোমার জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা করছিলাম। তারপর আমায় জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি আমার অপরাধ জানতে চাইলে পুলিশ লোকটি বলে হত্যার চেষ্টা ধর্ষণ সাথে চুরির অভিযোগ আছে আমার নামে। আর এর প্রধান সাক্ষী নুসরাত সে নিজে এসে অভিযোগ করে গেছে......।

তারপর কি ভাবে যেন আব্বু এক সপ্তাহের মাঝে আমার জাবিন করে নিলো। তবে এই এক সপ্তাহ জানোয়ারের মত আমায় নির্যাতন করেছিল পুলিশ। জেল থেকে বের করে আব্বু আমায় সে দিন চড় মেরে বলছিল, "একটা মেয়ের জন্য আমার মান সম্মান সব শেষ করে দিলি।" আমি কিছু না বলে চুপ করে ছিলাম। তারপর বাড়ি ফিরে আম্মু আমায় দেখে বললো, "তোকে বারণ করেছিলাম না যেতে? এত ভালোবাসা দেখালি! কই তোর ভালোবাসার মানুষ?"


সে দিন নুসরাতের যত ছবি ছিল সব ছিঁড়েছিলাম। ভেবেছিলাম যেখানে বাবা মা কে সম্মানের জায়গায় অসম্মানে ঠেলে দিয়েছি। এই মুখ আর দেখাবো না। সে দিন আমি তিনবার আত্নহত্যা করতে গিয়ে ও পারি নি। প্রতিবার নুসরাতের সেই হাসি মুখটা সামনে ভেসে আসতো। তারপরের দিন গুলো কেটেছিল জেলের থেকে ও খারাপ। মানুষ আমায় আর আমার পরিবারকে নানান কথা বলতো। আব্বু রাতে এসে কান্না করতো। আর কোন কোন দিন আমায় খুব মারতো। আম্মু অসুস্থ হয়ে পরে তাই মেঘলাকে ( আমার খালাতো বোন) আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। কলেজে তো যাওয়া বন্ধ যে দিন নুসরাতের বাড়িতে গিয়েছিলাম সে দিন থেকেই। আব্বু আমায় কলেজে নিয়ে গেলে প্রিন্সিপাল স্যার অপমান করে বের করে দেয়। তার উপর টেষ্ট এক্সাম সব ফেল। সভাপতির সাথে আব্বুর ভালো সম্পর্ক ছিল। অনেক বুঝিয়ে আমার এক্সাম দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। কিন্ত আমি ফেইল করি বসি। তখন পর্যন্ত নেশা আমি গোপনে করতাম। যে দিন রেজাল্ট দিয়েছিল সে দিন আব্বু এত মেরে ছিল বলতে পারব না। তারপর দরজার বাহিরে আমায় বের করে দেয় সে দিন মধ্য রাতের দিকে আমার মাথায় নেশার ভূত চাপে। আমি কি করব বুঝতে পারি নাই তাই আমি দরজা ভেঙ্গে আব্বুর টাকা চুরি করি। আর সে দিন নেশায় মাতাল হয়ে রাস্তায় পরে থাকি। এলাকার লোক বাবাকে বিভিন্ন রকম বাজে কথা বলে। আর সে দিন থেকে শুরু হয় বাবা মায়ের অত্যাচার। যদি খুন করলে জেল না হত তারা হয়তো আমাকে অনেক আগেই মেরে ফেলতো। অন্তত নিজেদের সম্মানের জন্য হলে ও।


_এত অত্যাচারের মধ্যে ছিলা কি ভাবে তুমি?( সোহানা কাঁদতে কাঁদতে বললো)


_ জানি না তখনকার দিন গুলো নেশায় কাটতো। তাই বলতে পারি নি। আর তারপর একদিন আমি বাহিরে থেকে এসে দেখি নুসরাতের দেওয়া আমার ঘড়িটা নাই। আমি পাগলের মত খুঁজতে থাকি। ওর শেষ স্মৃতিটা আমি হারাতে চাইনি। আমি মেঘলাকে জিজ্ঞাসা করলাম, মেঘলা আমার ঘড়িটা দেখেছিস? ও হাসতে হাসতে বললো, আমি ঘড়িটা হাতে নিয়ে দেখার সময় ভেঙ্গে----। আর কিছু বলার আগে ঠাস ঠাস করে ওর গালে পচন্ড জোরে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই ওর গালে। ও আমার ঘড়ি আমার উপর ছুড়ে মেরে দৌঁড়ে চলে যায়। তখন নিজে অনুতপ্ত হই। এর পর ওর কাছে ক্ষমা চাই। কিন্ত ও আর আমার সাথে কোন ভাবেই তেমন কথা বলেনি। যখন এ কথা বলতে গিয়েছি তখনই নেশাখোর বলে বা বিভিন্ন ভাবে আমায় আপমান করতো। মাঝে মাঝে কোন দোষ ছাড়াই ও আম্মু আব্বুর কাছে বিচার দিতো। শেষবার যখন বললো, "ও ড্রেস চেঞ্জ করার সময় আমি উকি দিয়েছি"। আব্বু আম্মুর সামনে অনেক মেরেছে আমাকে। মেঘলা আমার অবস্থা দেখে হাসছিল। তারপর না খেয়ে কত দিন ছিলাম ঠিক জানি না। তারপর বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। আর তোমার আম্মু হয় আমার আশ্রয়ের স্থান ।


সোহানা অতীত শোনার পর আর কিছু না বলে আমায় জাপটে ধরে।


_রাফি তোমার জীবনে এত ঝড় বয়ে গেছে তা কখনো আমি ভাবতে ও পারি নাই। ( কাঁদতে কাঁদতে )


_বাদ দাও তো এসব।


_ রাফি সামনে আমাদের ফাইনাল এক্সাম। লক্ষ্য হল তুমি ভালো রেজাল্ট করবে। তারপর প্রধান লক্ষ ঢাকা মেডিকেল কলেজে এডমিশন। আমি চাই তুমি ওই সব মানুষদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দাও যে তুমি একটা মানুষ। আর তুমিও পারো কিছু করতে।


দেখতে দেখতে ইন্টারের ফাইনাল এক্সাম চলে আসলো। সোহানা আগের থেকে অনেক বেশি মিশে বলা যায়। আমার প্রতিটি কাজ ওর পছন্দ মত করায়। এতে আন্টি তেমন কিছু বলে না। এক্সাম গুলো খুব ভালো গিয়েছিল। এক্সামের পর আমি সোহানা বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়াঘুড়ি করতাম। সবাই আমাদের সম্পর্কটা বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড ভাবলে ও আমরা ছিলাম বন্ধু। সোহানাকে পেয়ে আমি নুসরাতকে ভুলে গিয়েছি বলা যায়। আমার বদলে যাওয়াটা একটা রূপকথার গল্পের মতো হয়তো। কিন্তু নিয়তি তো আমি ঠেকাতে পারবো না।


একদিন সোহানা আর আমি ফান করতেছি। হঠাৎ সোহানা বসে পরে। তারপর ও জ্ঞান হারায়। আমি আর আন্টি ওকে নিয়ে হসপিটাল গেলাম। কিন্তু ডাক্তারের রিপোর্ট শুনে আমি ধপ করে মাটিতে বসে পরলাম ।


একদিন সোহানা আর আমি ফান করতেছি। হঠাৎ সোহানা বসে পরে। তারপর ও জ্ঞান হারায়। আমি আর আন্টি ওকে নিয়ে হসপিটাল গেলাম। কিন্তু ডাক্তারের রিপোর্ট শুনে আমি ধপ করে মাটিতে বসে পরলাম ।


ডাক্তার যখন রিপোর্ট গুলো দেখছিল তখন আমি বার বার বলছিলামঃ-"প্লিজ ডাক্তার সোহানার কি হয়েছে বলুন।"


_আপনি পেশেন্টের কি হন?


_ আমি ওর ফ্রেন্ড আর উনি ওর মা।


_ দেখুন খুব একটা সুখবর নেই। আল্লাহই ভালো জানেন। তবে রিপোর্ট অনুযায়ী মেয়েটি আর বেশি দিন বাঁচবে বলে মনে হয় না। কারণ ওর ব্লাড ক্যান্সার।


ডাক্তারের কথা শুনে আমি ধপ করে মাটিতে বসে পরলাম। আর আন্টি মাথা ঘুড়ে পড়ে গেল। তারপর ডাক্তার আন্টিকে একটা কেবিনে ভর্তি করে নিল। একটু পর ডাক্তার আমাকে ডাকলো।


_তোমার আন্টির জন্য O+ রক্ত দরকার।


_ আমার তো B+ তাহলে এখন কি করব ডাক্তার?


_ তুমি দেখ কোথাও থেকে মেনেজ করতে পারো কি না। আমি ও ট্রাই করছি ।


আমি বেড়িয়ে পরলাম ব্লাড এর সন্ধানে। কিন্ত কোথাও পেলাম না। আমার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। যারা আমায় জীবন দিল বিপদের দিনে আমি তাদের কিছু দিতে পারলাম না। মাথাটা ব্যথা শুরু করে দিয়েছে। ঠিক এমন সময় কারো কণ্ঠে থমকে গেলাম।


_রাফি তুই এখানে?


পেছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই। কারণ ও মেঘলা ছিল। আগের থেকে কেমন জানি দেখতে পালটে গেছে মেঘলা। আমি ওর সামনে দাঁড়াতে চাচ্ছিলাম না। তাই চলে আসতে লাগলাম। এমন সময় মেঘলা ছুটে এসে আমার হাত ধরলো।


_ রাফি তুই কই ছিলি? অনেক কিছু বদলে গেছে এই বছর গুলায়। তোকে অনেক কিছু বলার আছে।


আমি রাগ নিয়ে আমার হাত ছাড়াতে ঝাঁকি দিলাম।


_ কোন সাহসে একজন নেশাখোরের হাত ধরেছিস?


এক ঝটকায় হাতটা মেঘলার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর মেঘলার সামনে থেকে চলে আসলাম।


ডাক্তার আমায় দেখে বললো ব্লাড ম্যানেজ হয়ে গেছে ।


রাতে আন্টির জ্ঞান ফিরলো। আমি আন্টিকে বসতে সাহায্য করলাম।।


_আন্টি চিন্তা করবেন না। আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের কাছ থেকে এমন ভাবে সোহানাকে নিয়ে যাবে না ।


আন্টি আমায় ধরে চিৎকার করতে লাগলো। সোহানার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। আন্টি পাগলামো করছিল। সোহানার এই অবস্তায় আমার ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে । কিন্ত আন্টির সামনে প্রকাশও করতে পারছি না। এতে আন্টি আরো ভেঙ্গে পরবে।


আমি ডাক্তার কে অনেক বলে সোহানার কেবিনে ডুকলাম। ওর হাতটা ধরলাম।।


_আমাকে বাঁচতে শিখিয়ে নিজেই চলে যাচ্ছিস? এত স্বার্থপর তো ছিলি না তুই?


চোখ থেকে পড়া নোনা জলগুলো যেন আজ সাক্ষী হয়ে রইলো সোহানাকে ছাড়া রাফির লাইফটা এগুনো অনেকটা অসম্ভব ।


তিন দিন পর সোহানাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। সোহানাকে দেখে আন্টি কাঁদে। আমি নিরবে কাঁদি। সোহানা আমাদের অবস্থা দেখে কিছুটা বুঝতে পারে যে ওর সাথে খারাপ কিছু হয়েছে।


_ রাফি তুই আর আম্মু কি আমার থেকে কিছু লুকানোর চেষ্টা করছিস? ( সোহানা)


_ ঐ তোর আমাকে সন্দেহ হল? ভালোই তো আমি আজ তোর কাছে মিথ্যা বলি ( রাগ দেখিয়ে)


_ রাফি তা না--। কেন জানি আমার মন বলছে আমার বড় কিছু হয়েছে আমি আর বাঁচব না বেশি দিন।


সোহানার কথা শুনে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলাম সোহানাকে।


_আর কখনো এমন কথা মুখে নিলে তোর সামনে আমার জীবন শেষ হবে ( কেঁদে কেঁদে)


_ এই পাগল কাঁদিস কেন? তোর চোখের পানি একদম সহ্য করতে পারি না।


_ হুম।


_ আচ্ছা বল আর কয়েকদিন পর তো রেজাল্ট দিবে তখন তুই কোথায় এডমিশন নিবি?


_ তুই যেখানে নিস।


_ দূর পাগল তুই জানিস আমার চোখে শুধু তোর স্বপ্ন গুলো ভাসে। তুই ঢাকা মেডিকেল কলেজে এডমিশন নিবি কথা দে।


_ হুম তোর কথা শুনি নাই এমন হয়েছে কখনো?


_ রাফি আর একটা কথা তোর সাথে কেউ অন্যায় করলে তুই তাকে বকবি না। সরি বলে দিবি। কারণ একদিন সে তার ভুল বুঝবেই।


_ আচ্ছা তুই মুরুব্বিদের মত এত উপদেশ দিচ্ছিস কেন?


_ বলা তো যায় না কখন না থাকি।


_ সোহানা----।( রাগি গলায়)।


অবশেষে আসলো সেই দিন।


রাফি আর একটা কথা তোর সাথে কেউ অন্যায় করলে তুই তাকে বকবি না। সরি বলে দিবি। কারণ একদিন সে তার ভুল বুঝবেই।

আচ্ছা তুই মুরুব্বিদের মত এত উপদেশ দিচ্ছিস কেন?বলা তো যায় না কখন না থাকি। সোহানা( রাফি গলায়)

অবশেষে আসলো সেই দিন।


আজকে ইন্টারের রেজাল্ট বের হবে। আমার থেকে বেশি সোহানার চিন্তা আমার রেজাল্ট নিয়ে। ও যে আমার সাথে এক্সাম দিয়েছে এটা মনে হয় ও ভুলে গেছে। সকাল বেলা আজান শুরু হতেই সোহানার ডাক।


_ রাফি,এই রাফি?


_ এই কি হয়েছে এমন মধ্য রাতে ডাকছিস কেন?


_মধ্য রাত মানে? ফজরের আজান হয়ে গেছে। এখন সকাল হবে নামায পড়বি না তুই?


_ আজ না অন্য দিন পড়ব।


_ রাফি প্লিজ উঠনা? আজ না রেজাল্ট দিবে? আল্লাহ্‌ তা'লার কাছে দোয়া করব তোর রেজাল্ট যেন ভালো হয়।


_আজ দোয়া করলে কি রেজাল্ট পালটে যাবে? রেজাল্ট যা আসার আসবে।


_ ধুর--। উঠ তো? আমি এত কথা শুনতে চাই না।


_ প্লিজ আজ অনেক ঘুম পাচ্ছে।


_ আমি মরে গেলে আর কে ডাকবে তোকে এই ভাবে? তখন মিস করবি।


সোহানার কথা শুনে আমি উঠে শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।


_ তোকে কোথাও যেতে দেব না আমি।


_ আরে পাগল একটু আস্তে করে ধর। আমার তো জীবন বের হয়ে যাচ্ছে ।


_ আগে বল আমায় ছেড়ে কোথাও যাবি না?


_ আচ্ছা যাব না। এখন চল নামায পড়বি?


তারপর দুজনে নামায পড়ে বাগানে গেলাম।


_ রাফি জানিস আমার বিশ্বাস তুই ভালো রেজাল্ট করবি?(সোহানা)


_আচ্ছা আমার রেজাল্ট নিয়ে এত না ভেবে তুই নিজের টা নিয়ে ভাব।( আমি)


_ চুপ -।তোকে ডাক্তার হতে হবে আমি এটাই জানি।


_ যদি আমি পাস না করি?


_ কি বললি হনুমান?( চুল টেনে ধরে)


_ ছাড় প্লিজ ছাড়? আমার ব্যাথা করছে।


_ছাড়বো না---।


_ আচ্ছা বল তুই আমায় নিয়ে এত ভাবিস কেন?


_ কারণ তোকে আমি উদাহরণ হিসেবে দেখতে চাই। যে কেউ যেন বলে, জীবনে শেষ বা অসম্ভব বলে কিছু নেই। তার প্রমাণ রাফি।


আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। চলে আসলাম উঠে। এতটা মনের মধ্যে জায়গা করে দুই দিন পর হারিয়ে যাবে মেয়েটা৷ এটা ভাবলে নিজের নিশ্বাসটাই যেন বন্ধ হয়ে আসে আমার৷ আমার জীবনটা এমন করে সাজিয়ে দেওয়ার কি দরকার ছিল ওর? যখন নিজেই চলে যাবে? এর মধ্যে আন্টি এলেন। 


_রাফি কি হয়েছে?


আমি চোখ থেকে পানি মুছে নিলাম।


_ কিছু না আন্টি।


_ আমি জানি তুমি সোহানার কথা ভাবছো। কিন্ত বাবা কি বলতো ও চলে গেলে আমি কি নিয়ে থাকবো? শেষ সম্বল তো ছিল আমার এই মেয়েটাই। আল্লাহ্ তাকে ও নিয়ে যেতে চাচ্ছে। প্রতিটা মূহুর্তে মৃত্যুর যন্ত্রণা অনুভব করি আমি।


_ আন্টি এমন ভাবে কাঁদবেন না সোহানা আমাদের মাঝে যে কয়দিন আছে একদম বুঝতে দেওয়া যাবে না এটা যে ওর শেষ সময়। এই কয়টা দিন আমরা ওর অনেক খেয়াল রাখব।


দুপুর ১২ টা। সোহানা এসে বললোঃ-" রাফি দেখতো ইন্টারনেটে রেজাল্ট বের হয়েছে কি না।"


_ হুম এখনি পাওয়া যাবে।


_ তাড়াতাড়ি দেখ।


_ আরে বাবা দেখবো তো তুই এত পাগল হচ্ছিস কেন?


_ আচ্ছা রাফি তুই ডাক্তার হওয়ার পর প্রথম কার চিকিৎসা করবি?


_ তোর মাথায় কি সারা দিন শুধু আমাকে নিয়েই চিন্তা থাকে? বিয়ার পর তোর জামাই তোরে তিন বেলা নিয়ম করে পিটানি দিবে।


_ গাধারাম এবার দয়া করে রেজাল্ট গুলা দেখুন। আর আমায় উদ্ধার করুন। আমাকে আবার একটা জায়গায় যেতে হবে।


_ কোথায় যাবি?


_ তোর কাছে সব কিছুর কৈফিয়ত দিতে পারব না ।


আমি অনেকটা ভয় নিয়ে রেজাল্ট দেখলাম। তবে আমারটা না সোহানারটা। ওর রেজাল্ট ভালোই হয়েছে 4.80। এখন ভয় করছে আমারটা দেখার সময়। আল্লাহ জানে কি হয়। এই রেজাল্টার সাথে কত কিছু জড়িত। বিশেষ করে সোহানা, ওর সম্মান আর খুশি দুটাই মিশিয়ে আছে এর সাথে।


 হ্যাঁ আমার রেজাল্ট সোহানার কথামতই হল। আমি গোল্ডেন এ+ পেয়েছি। আমার রেজাল্ট দেখে সোহানা আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। 


_ আজকের মত খুশি আমি এর আগে কোন দিন হয় নি। চল আমাদের একটা জাগায় যেতে হবে।


_ এখন আবার কোথায় যাবি?


_ আমি মানত করেছিলাম তুই যদি গোল্ডেন এ+ পেয়ে পাস করিস তাহলে আমি এতিম বাচ্চাদের খাওয়াবো।


 আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না মেয়েটার এত উদারতা দেখে। একটা মানুষ কি করে এত উদার মনের মানুষ হতে পারে! সেটা এই পরিবারে না আসলে বুঝতে পারতাম না। তারপর সন্ধ্যায় আমি আর সোহানা বের হলাম। ও এতিম বাচ্চাদের খাবার দিচ্ছে। আর আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি। 


_ রাফি জানিস এই বাচ্চাদের মুখে হাসিটা দেখলে কেন জানি মনটা ভালো হয়ে যায়।


তারপর থেকে শুরু হয় সোহানার আমার উপর শাসন। পড়া ছাড়া আর অন্য কিছুর সুযোগ নেই। আমি সোহানার হাত ধরলাম।


_ সোহানা তুই না আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছিস। মনে হয় আমি তোর প্রেমে পরে যাব। যেই হারে দিন দিন সুন্দর হচ্ছিস।


_ তাই না? তা আমার এত গুণগান গাওয়ার মতলবটা কি জানতে পারি?


_ আরে এত পড়ে কি করমু? চল ঘুড়ে আসি।


_ আমি জানতাম আপনি এমন আবদার করবেন। কিন্ত স্যার আপনার ছুটি তখন ই হবে---।


_ হুম তারপর থেকে আমার শুরু হল ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির টার্গেট। দিন দিন সোহানার উপর আমার মায়া বেড়ে যাচ্ছে। আমার পাশে থেকে বিনা স্বার্থে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে মেয়েটা কত দূর পৌঁছে দিয়েছে আমায়। এই বন্ধুটা চলে যাবে ভাবতেই পারি না। ও প্রতিটা দিন এমন ভাবে আমার কেয়ার নেয় আমি ওর মাঝে হারিয়ে যাই ।


  হ্যাঁ আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে যাই। যার পুরো কৃতিত্বই সোহানার। যে কিনা আমায় এই পর্যন্ত পৌছে দিয়েছে তাই আজ বাসায় যেতে ওর পছন্দের আইসক্রিম আর সাথে মিষ্টি নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসেই দেখি সোহানা কান্না করছে।


হ্যাঁ আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে যাই। যার পুরো কৃতিত্বই সোহানার। যে কিনা আমায় এই পর্যন্ত পৌছে দিয়েছে তাই আজ বাসায় যেতে ওর পছন্দের আইসক্রিম আর সাথে মিষ্টি নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসেই দেখি সোহানা কান্না করছে।

কিরে কান্না করছিস কেন?


_ তোকে কত গুলো ফোন দিয়েছি। ফোন গুলো রিসিভ করিস নাই কেন?


_ তাই বলে তুই কান্না করবি?


_ আমার চিন্তা হয় না বুঝি? ও আমার চিন্তায় তোর আবার কি আসে যায়?


_ তাই তো আমার কোন কিছু যায় আসে না।


_ যা আর কখনো তোর কাছে আসব না। জানিস আজ কত চিন্তা হচ্ছিলো? সারাটা দিন না খেয়ে আছি। আর তুই একটা বার ও আমার ফোন ধরিলি না।


_ কি বললি তুই এখনো খাবার খাস নি?


সোহানা ঠোঁট বাঁকা করে বললোঃ "না।"


রাফিও সাথে সাথে ধমক দিয়ে উঠলো।


_ থাপ্পড় দিয়ে দাঁতগুলো ফেলে দিতে মন চায়।


_ তুই আমায় আবার বকা দিচ্ছিস? যা খাবই না।


 তারপর আমি সোহানাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম। আমাদের সম্পর্কটা যে কেউ দেখলে বলবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। শুধু দু রুমে ঘুমাই দুজনে। বাকি সব কিছুই এক সাথে। বলা যায় এক সুতোয় বাধা দুটি প্রাণ।


 খাওয়ার মাঝে সোহানা বললোঃ "রাফি তোর ভর্তির কি হল?"


রাফি মুখটা কালো করে ফেললো।


সোহানা রাফির মুখ উপরে তুলে বলে, "তুই চান্স পাস নাই বুঝি? আরে বোকা সবাই কি ডাক্তার হবে এমন কোন কথা আছে নাকি? মন খারাপ করিস না।"


_ওই এত বেশি বুঝোস কেন? আমি কি বলছি তোকে যে আমি সুযোগ পাইনি আমি? আমি তোর এত দিনের ধারণ করা স্বপ্ন, আশা আর বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারি?


 সোহানা কেঁদে দিয়ে রাফিকে জড়িয়ে ধরে।


 _জানিস আল্লাহ তোর মাঝে আমার স্বপ্ন গুলো পূরুণ করে দেয়। আজ আমি অনেক খুশিরে ।


_ এই ধর? তোর জন্য আজ তোর ফেভারিট আইসক্রিম এনেছি।


_ থ্যাংকস তোর বউ এত্ত গুলা লাকী হবে। কেন যে নুসরাত গেলো?


আমি রাগ দেখিয়ে উঠে গেলাম। সোহানা আমায় পেছন থেকে চোখ ধরে ফেললো।  


_মহারাজ বুঝি আমার সাথে কথা বলবে না?


_ তুই এমন কেন? তোর ছোঁয়াতে সব রাগ চলে যায়?


এই ভাবে চলছে দিন। আমি আর সোহানা আরো গভিরভাবে জড়িয়ে যাচ্ছি । ঠিক ৬ মাস পর কলেজ থেকে বন্ধুদের সাথে বের হইছি ঘুরতে। তখনই সামনে পড়ে যায় নুসরাত। প্রায় পাঁচ বছর পর প্রিয় মুখটার দেখা মিললো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে দেখে বন্ধুরা বললো, "কিরে দাঁড়িয়ে পরলি কেন? চল।"


_ তোরা যা আমি আসছি।


ওরা চলে যাওয়ার পর নুসরাত আমার সামনে আসলো। চেহারা সৌন্দর্য আগের মত নেই কিছুই। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। আমার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো, "কেমন আছো রাফি?"


তাচ্ছিল্য একটা হাসি দিলাম ওর দিকে তাকিয়ে। 


_কেন ভাবছেন কবে আবার জেল থেকে ছাড়া পেলাম? নাকি আবার কোন ধর্ষণ বা অন্য কিছুর অভিযোগ তুলবে নাকি?


 একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে নুসরাত আমার দিকে তাকালো।


_ সে দিনের করা পাপে আমার কপালে জোটে একটা ধর্ষক। যে কিনা রাতের খুদা আমার শরীরে মিটাতো আর দিনে অন্য কারোর সাথে----।


_ হা হা হা ডাক্তার বর ---। আরো কত কি বলেছিলে--। আমি তো পাগল।


_ হ্যা তখন যদি বুঝতাম পাগলটা আমার জন্য পাগল ছিল। কি পেলাম বাবার কথায় তোমায় অবহেলা আর পুলিশ কেস করে!!বিয়ে প্রায় ৬ মাস ভালোই কাটছিলো। তারপর আর আমার সৌন্দর্য তার কাছে ভালো লাগেনা। সে বাসায়ও মেয়ে নিয়ে আসতো। আমার সামনে ওদের সাথে নোংরামি করতো। আর ওদের বলতো আমি কাজের মেয়ে। প্রায় ওর সাথে ঝগড়া করতাম। ও আমার গলা চেপে ধরে বলতো, আমি কি তোকে পূজা করার জন্য বিয়ে করেছি? তখন তোর রূপ ভালো লাগছিলো করেছি, এখন লাগে না তাই তোকে ও ছুঁই না। আমার তখন খুব করে মনে পড়তো তোমার সাথে কাটানো সময়গুলা। যে খানে আমায় এত দিন পেয়ে ও রূপের দিকে নয় মনের দিকে তাকাতে। তারপর রাতে দিনে কাঁদতাম। বাবাকে বললে বাবা বলে, ছেলে মানুষ এমন করেই। অন্য মেয়েদের যখন বাসায় এনে নোংরামি করতো আর বলতো আমি কাজের মেয়ে তখন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হত। তারপর আমি কয়েকবার আত্মহত্যা ও করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সব সময় মনে হত ওর মত একটা জানোয়ারের জন্য কেন আমার জীবনটা নষ্ট করব?! তারপর ওর বাড়ি থেকে আমি চলে আসি। লজ্জায় বাবার বাড়ি ও যাইনি। আজ স্থান আমার পতিতালয়ে। 


_ আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম, "এই নাও ১ হাজার টাকা। আমি কোন রাতেই আসব না। আর হ্যাঁ তোমার মত মেয়ের জীবনে এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না।


_ রাফি প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও? ক্ষমা করে দাও আমায়? 


_ হা হা হা ক্ষমা?? 


এই বলে চলে আসলাম ওর সামনে থেকে। মনটা আজ কেন জানি অন্য রকম লাগছে। বাসায় ফিরে সোহানাকে বললাম আজকের পুরো ঘটনা।


 _আল্লাহ কিছু পাপের শাস্তি দুনিয়াতে দেয় আবার কিছু আখেরাতে।


কিছু দিন পর হঠাৎ সোহানার বুকে ব্যথা শুরু হয় প্রচন্ডভাবে। তারপর তাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম।  


,,

হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর সোহানাকে নিয়ে ডাক্তার আই সি ইউ তে নিয়ে গেলেন। আন্টি আমায় জড়িয়ে কান্না করতে লাগলেন। আমি বললামঃ "আন্টি ভরসা রাখুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।"


এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডাকলো।


_ রাফি?


 পেছনে তাকিয়ে আমি অবাক হইয়ে গেলাম, কারণ হুইল চেয়ারে করে বসে আছে


হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর সোহানাকে, ডাক্তার আই সি ইউ তে নিয়ে গেলেন। আন্টি আমায় জড়িয়ে কান্না করতে লাগলেন। আমি বললামঃ "আন্টি ভরসা রাখুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।"

_ আমি আড়ালে গিয়ে কাঁদতে লাগলাম আন্টি কে কি শান্তনা দেবো? আমি নিজেই যে মেনে নিতে পারছি না সোহানার এই অবস্তা। ওর নিষ্পাপ হাসিটা আর সাথে মিষ্টি শাসনটা তো ছিল আমার রোজকার অভ্যাস। আল্লাহ তুমি সোহানাকে আমার জীবনের বদলে হলে ও ফিরিয়ে দাও।বসে বসে ভাবছি, সোহানার সাথে কাটানো খুনসুঁটির সময় গুলো। প্রতিটা দিন যেন ওর খুনসুঁটি ছাড়া কাটতোই না,এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডাক দিলো রাফি। 

_ পেছনে তাকিয়ে দেখি,হুইল চেয়ারে বসে আছে আমার মা আর সাথে আছে মেঘলা।

_ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো, আম্মুর এই অবস্তা দেখে। আগের থেকে কত রোগা হয়ে গেছে ওনি আর সাথে দেখা যাচ্ছে হুইল চেয়ার হাঁটতে ও পারে না মনে হয়।

_ এমন সময় মেঘলা আম্মুকে আমার সামনে নিয়ে আসলো আমি অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম আম্মু বললো," রাফি অনেক দিন দেখি না তোকে। একবার তাকাবি আমার দিকে।"

_ আমি তাকালাম না , কেন জানি নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। যারা কি না আমায় এত অবহেলা করেছিল প্রতিটা মূহুর্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল, আমি কেন তাদের জন্য চোখের জল ফেলছি?

_ আম্মু আবার ডাক দিলো "রাফি, অনেক অভিমান আর রাগ বুঝি জমিয়েছিস।আমাদের বুঝি আর কোন দিন তোর মুখ দেখাবি না?খুব যে ইচ্ছা করছে তোর মুখটা দেখতে খোকা।"

_ আম্মুর কথায় আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি নাই। আমি রাগে বললাম, "কেন এসেছেন? আপনাদের রাফি সে দিন এ মারা গিয়েছে যে দিন আঁধার রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসছিলো আর আপনাদের মুক্ত করে চলে আসছিলো।"

_ আমার কথা শুনে আম্মু বললো," মেঘলা চল, আমরা চলে যাই। রাফি মনে হয় আর আমাদের সহ্য করতে পারছে না।"

_ এমন সময় আন্টি এসে বললো," রাফি সোহানার অবস্তা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে।"

_ আমি বললাম," আন্টি আপনি একদম চিন্তা করবেন না, আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি।"

_ আন্টি বললো,"ওনারা কে রাফি?"

_" আমি চিনি না ওনাদের। " এই বলে হাঁটতে লাগলাম।

_ এমন সময় মেঘলা বললো,"হুইল চেয়ারে বসা মহিলাটি রাফির মা।"

_ আন্টি বললো,"রাফি তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলো, আমি ডাক্তার ডাকতে যাই।"

_" আন্টি, আমার কথা বলার প্রয়োজন নেই। সোহানার জীবনটা দরকার।"এই বলে আমি চলে যাই।


''

_ ডাক্তার নিয়ে এসে দেখি আন্টির সাথে আম্মু আর মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে।আমি বললাম,

"আন্টি, ওনারা এখানে কেন?

_ "রাফি, আগে ডাক্তার সোহানাকে দেখুক বাকিটা পরে বলব।"

_ তারপর আন্টি মেঘলা আর আম্মুকে বললো, "চলে যেতে আর আগামীকাল আসতে ।"

_ ডাক্তার সোহানাকে দেখে বললো, "কোন কিছুই কন্ট্রোলের মধ্যে আসতেছে না। আল্লাহ ভালো জানে আমাদের কিছু করার ক্ষমতা নাই এখন।"

_ আন্টি কান্না করতে লাগলো, আমি কি করব বুঝতেছি না। আন্টিকে সামলাবো নাকি সোহানার সাথে থাকবো। আল্লাহ কি সত্যি এ সোহানাকে আমাদের থেকে কেরে নিবে? না, এ কিছুতেই হতে পারে না। সোহানার সাথে জড়িয়ে আছে আমার আর আন্টির প্রাণ।

_ আন্টিকে রাতে অনেক বললাম," আন্টি, আপনার শরীর ভালো নেই বাড়িতে চলে যান, আমি তো আছি।"

_ আন্টি কেঁদে কেঁদে বলে,

" রাফি, যা দেখছো এটা একটা লাস্ট আর আমার কলিজাটা তো এখন আই সি ইউ তে পড়ে আছে। আমি কি বলব এই কথার উত্তরে আমার জানা নেই ,, একটু পর ডাক্তার কে অনেক অনুরোধ করে আমি সোহানার কেবিনে ডুকলাম, মুখটা শুকিয়ে গেছে দুষ্টুমি ভাবটা আর নেই, মনে হচ্ছে অনেক দিন খায় না, আমি ওর হাতটা ধরে বললাম," কিরে পাগলী, তুই আমায় ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস?আমি যে তোকে ছাড়া অন্ধ। তুই না বলতি আমার স্বপ্ন গুলো তুই তোর চোখে লালন করছিস, আজ চোখ বন্ধ করে আছিস কেন? ওই কথা বল আমার সাথে একদিন কথা না বলে তো থাকতে পারতি না তুই, আজ কথা বলছিস না কেন? প্লিজ একবার কথা বল সোহানা, 

,আমায় এতটা ইগনোর করলো, সোহানা আর কথা বললো না।


***

পরের দিন বসে আছি হসপিটালে পাগলের মত।এমন সময় আম্মু আর মেঘলা এসে সামনে দাঁড়ালো। আম্মু বললো, "তোর আব্বুর মৃত্যুর আগে তোর জন্য একটা চিঠি লিখে গিয়েছে। অনেক খুঁজেছিল তুই চলে আসার পর পায়নি তোকে, তারপর মেঘলা যখন বলছিলো এক বছর আগে,, তোকে দেখেছিল এই হসপিটালে, কতদিন এসেছিল এখানে। এখানকার আশে পাশে ও খোঁজ নিয়েছিল,পাইনি তোকে। তাই তার মৃত্যুর আগে তোর জন্য একটা চিঠি লিখে গিয়েছিলো। আমাদের বলেছিল যদি কোন দিন দেখা হয় চিঠিটা যেন তোকে দেই।"

_আম্মুর কথা শুনে বুকের ভিতরটা যেন ফেটে যাচ্ছে, ওনি যতই হোক আমার বাবা ছিলেন। ওনার অপরাধ ছিল তাতে কি? জন্মদাতা কে আমি কখনো ভুলি নাই, এক দিকে সোহানা অন্য দিকে বাবার মৃত্যুর খবর, মায়ের প্যারালাইজড। কত কিছু হয়ে গেল এই দিন গুলোতে, হারিয়ে গেল কত কিছু।

_ বিকালে বাবার চিঠিটা হাতে নিলাম ( রাফি, জানি তোর কাছে আমি ঘৃনিত বাবা, এটা আমি ও জানি যে, আমি কোন আদর্শ বাবা না কারন আদর্শ বাবারা কখনো সন্তানদের ঘৃণা করে না,, কিন্ত জানিস চার পাশের মানুষ গুলো দিন দিন তোর নামে এত অভিযোগ করতো, আমি তখন রেগে ভাবতাম, এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। মনে আছে রাফি তুই যখন কেজি স্কুলে পড়তি। একদিন বৃষ্টির সময় তোকে যখন কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম, সে দিন তুই বলেছিলি, "বাবা আমিও একদিন তোমায় এই ভাবে কাঁধে করে বাড়ি নেবো। সে দিন আমি খুশিতে আত্মহারা হয়েছিলাম, তুই চলে যাওয়ার পর তোর আম্মু আমার সাথে একদিন ও ভালো করে কথা বলেনি। তোর ছবি বুকে নিয়ে তোর রুমেই ঘুমাতো, তোর ঘাটতিটা বুঝতে বুঝতে একটু বেশি এ সময় লেগে গেছিলো। তোকে শেষবারের মত দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু ভাগ্যে যে সব থাকে না। সব শেষ। তুই তোর মা আর মেঘলার পারলে দায়িত্ব নিস।


ইতি 

তোর অযোগ্য বাবা)।

,,

বাবার চিঠিটা পড়ে আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম, তারপর আম্মুকে সোহানার ব্যাপারে আর আন্টির ব্যাপারে সব কিছু বললাম। সোহানার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। আজ দুই দিন হয়ে গেছে, মেয়েটার মুখটা কেমন জানি কালো হয়ে গেছে। রাতে আন্টি বললো," রাফি, তোমার জন্য সোহানা আমার কাছে একটা চিঠি দিয়ে গিয়েছিল, এই নাও।"

_ আমি চিঠিটা খুললাম, সোহানা কি লিখেছিল দেখার জন্য। ( এই গাধা কাঁদছিস কেন,এটা তো আগেই জানতি আমি আর এই পৃথিবীতে বেশি দিন নাই, আর তুই কাঁদলে আমার একদম ভালো লাগে না জানিস না। তুই কিন্তু কোন কিছুতে একদম ফাঁকিবাজি করবি না।আমি যদি পারতাম না আত্মা হয়ে ফিরে আসতাম। জানিস আমিও স্বপ্ন দেখতাম তোকে নিয়ে, তুই সমাজে একদিন অনেক বড় হবি। মানুষগুলো বলবে," ছেলে হলে রাফির মত হও।" আরো কত স্বপ্ন বুনেছিলাম কিন্তু দেখ না, বিধাতার যে এক কঠিন সত্য। কিছু কাজ অসমাপ্তই মানায়। আমার স্বপ্ন গুলো প্লিজ অপূর্ণ রাখিস না, আর শোন তুই যদি কাঁদিস না আমি আর কোন দিন তোর সাথে গল্প করব না। আমার আম্মুর আমি ছাড়া কেউ ছিল না। প্লিজ তুই মায়ের মত আগলে রাখিস, আর শেষ কথা তুই তোর পরিবারের সাথে আবার সম্পর্কটা আগের মত করে নিস। একদম কাঁদবি না গাধা। আমায় দেখ আমি কতটা হাসছি আর হ্যা একটা লাল টুকটুকি বউ আনিস যে তোর অনেকটা খেয়াল রাখবে আমার সময় শেষ আমি চলে যাই।)

,,

_ রাফি কান্না করতে লাগলো। সোহানাকে ছাড়া কি করে থাকবে আল্লাহ কেন তার থেকে সব কেড়ে নিচ্ছে?


_ ডাক্তার রাফি আমি যত দূর জানি আপনি নতুন কিন্তু আজ আপনি এমন ভাবে কাজ করলেন বুঝায় যায়নি আপনি আজ এ জয়েন করেছেন। আমরা তো প্রায় এই পেশেন্ট কে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম ( ডাক্তার প্রিয়া) ।

_ ডাক্তার, আমি কাজটা ভালোবাসা নিয়ে করি আর সব থেকে বড় কথা কোন মানুষের ১% সম্ভাবনা থাকলে ও আমি তাকে ১০০% চেষ্টা করব ভালো করার জন্য ।

_ হ্যা রাফি আজ ডাক্তার হয়ছে আর তার প্রথম অপারেশনেই সে সাকসেস হয়েছে, এর সবটাই সোহানার অবদান।


_ ডাক্তার রাফি আজ আমার বার্থডে যদি আসতেন খুব খুশি হতাম।( ডাক্তার প্রিয়া) 

_ সরি আজ পারব না।

_ কেন রাফি?

_ আজ আমার সোহানার সাথে দেখা করব।

_ ও গফ নাকি?

_ না প্লিজ এত কথা জিজ্ঞাসা করবেন না,।

_ রাফি এখন সোহানার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, হ্যা সে দিন সোহানাকে আর বাঁচাতে পারেননি রাফি। সোহানার সব স্বপ্ন গুলো একে একে পূরন করতে ব্যাস্ত রাফি। সোহানার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে রাফি কেঁদে বলে, "কতটা দিন আজ আমার সাথে কথা বলছিস না, জানিস আমি এখানে এসে তোর সাথে কথা বললে মানুষ আমায় পাগল বলে। তুই ছাড়া কেউ তোর মত করে বুঝে না রে আমায়। "এই বলে রাফি কাঁদতে লাগলো ,।

,,

এখন মেঘলা রাফির আম্মু আর সোহানার আম্মু একই বাড়িতে থাকে রাফি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত সে। আজ সেই নেশাখোর নেই, সে এখন একটি রোলস। মেঘলা বললো, "রাফি তুই বিয়ে করে নে আর কত দিন এই ভাবে?"

_ কিছু কাজ অসমাপ্তই ভালো, গল্পটা এখানেই শেষ করছি একটা অসমাপ্ত জীবনের অসমাপ্ত কাহিনী ।


-সমাপ্ত


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।