জোর করে বিয়ে গল্প | হঠাৎ বিয়ে গল্পের লিংক

 বিয়ে গল্প

বিয়ে গল্প

গল্পঃ বিবাহিত বর

অনন্য_শফিক

--- 'তুমি আমার ছেলের দুই নম্বর বউ।এর আগে যে বউ আছিলো সে বন্ধ্যা। সাড়ে চাইর বৎসর আমার ছেলের সাথে সংসার কইরাও সন্তান দিতে পারলো না।তাই তারে তালাক দেয়া হয়ছে।তুমি নিশ্চয় সন্তান দিতে ব্যার্থ হইবা না?'


স্বামীর বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর প্রথম দিনেই নিজের শাশুড়ির মুখ থেকে এমন একটা কথা শুনে আমার চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে এলো। শরীর জুড়ে ঘামের স্রোত বয়ে যেতে লাগলো।

কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো আমি বোধহয় কানে ভুল শুনছি।তাই নতুন করে শোনার জন্য বললাম,

--- 'আম্মা কী বললেন যেন!'


আমার শাশুড়ি তখন বললেন,


--- 'বলছি তুমি আমার ছেলের দুই নম্বর বউ।'


কোন কিছু না বুঝে না ভেবে আমি তখন শব্দ করে করে কেঁদে উঠলাম।আর কাঁদতে কাঁদতে বললাম,


--- 'তাহলে আগে বলেননি কেন আপনার ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে এটা?'

আমার শাশুড়ি তখন বললেন,


--- 'বললে কী আর তুমি বিয়ে বসতা আমার ছেলের কাছে?'

আমি এবার কাঁদতে কাঁদতে বললাম,


--- 'আমার সাথে আপনারা প্রতারণা করেছেন। কেন এমন করেছেন? আমার ক্ষতি করে কী লাভ হলো আপনাদের?'


আমার শাশুড়ি তখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,


--- 'তোমার ক্ষতি করি নাই মা। তোমার বাপ গরীব মানুষ।গরীব মানুষ হইয়া ধনী মানুষের সাথে তোমার বিয়া হইছে এইটা তোমার সৌভাগ্য!'


--- 'কিন্তু এই বিয়েতে তো আমি রাজি না!'

কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বললাম আমি।

আমার শাশুড়ি তখন বললেন,

--- 'বিয়া তো হয়েই গেছে মা।আইজ রাইতে তোমার বাসর। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তোমরা সুখি হও মা। আল্লাহ তোমাদের নেক সন্তান দান করুক।'


আমি তখন কোন কথা বলতে চেয়েও কান্নার জন্য বলতে পারলাম না।

'

বাসর ঘরে বসে থেকে আমি ঢুকরে কাঁদছি। আমার স্বামী জুয়েল তখন আমার কাছে গিয়ে আমার হাত ধরে বললো,


--- 'সরি!আমি আগেই বলে দিতে চেয়েছিলাম সবকিছু।বলতে চেয়েছিলাম আমি আগে একটা বিয়ে করেছি।এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে। কিন্তু আম্মার জন্য পারিনি।'


জুয়েলের কথা শুনে রাগে আমার পিত্তি জ্বলে উঠলো।এ কেমন ছেলে! মায়ের জন্য অন্য একটা মেয়ের সাথে বিয়ে নিয়ে প্রতারণা করেছে সে!আমি বললাম,


--- 'আপনি আমার হাত ছাড়ুন বলছি!'

জুয়েল বললো,

--- 'বিশ্বাস করো আমার কোন দোষ নাই!'

--- 'দোষ নাই!'

বলে ওর কাছ থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম। জুয়েল তখন বললো,


--- 'জোর করতে হবে না।আমি নিজেই ছেড়ে দিচ্ছি তোমার হাত। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার মায়ের জন্যই সবকিছু লুকিয়ে রেখেছি আমি।'


জুয়েলের অনুনয় আমায় একটুও টলাতে পারলো না।আমি ওকে বললাম,


--- 'শুনুন। আপনি আমায় এখন ডিভোর্স দিবেন। আপনার মতন কাপুরুষের সাথে এক মিনিটও থাকতে চাই না আমি!'


--- 'ঠিক আছে না থাকো।আমি তোমায় ছুঁয়েও দেখবো না পর্যন্ত। কিন্তু তুমি হুটহাট কোন ডিসিশন নিও না। বরং তুমি একটা রাত ভাবো। ভেবে দেখো আমায় ডিভোর্স দিবে না সংসার করবে!'


--- 'আমি আপনাকে ডিভোর্স দিবো।'

--- 'না এখন বললে তো হবে না। আগামীকাল বলবে।আজ সারারাত ভাববে।শুনো, তুমি যদি আমার কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে চলে যাও তবে কিন্তু তুমি ঠকবে। ঠকবে এই জন্য যে মানুষেরা এরপর থেকে জানবে তুমি তালাকপ্রাপ্তা।আর তালাকপ্রাপ্তা মেয়ের জন্য আগে বিয়ে করেনি এমন কোন ছেলে পাবে না তুমি। বরং যাকে পাবে সে আগে দু একটা বিয়ে করেছে এমন হবে।এমনও হতে পারে তার দু একটা সন্তানও আছে।'


জুয়েলের কথা শুনে রাগে কাঁপতে কাঁপতে আমি বললাম,


--- 'করুক দু চারটা বিয়ে।আর সন্তান থাকুক। কিন্তু সে তো আপনার মতন প্রতারক হবে না। মিথ্যে বলে আমায় বিয়ে করবে না'

'

জুয়েল তখন বললো,


--- 'দেখো আগেও বলেছি আমি একটা পরিস্থিতির শিকার। মায়ের জন্য এমন করেছি আমি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমায় কোন কষ্ট পেতে দিবো না।'


আমি বললাম,


--- 'এই কথাটা নিশ্চিত আপনার আগের স্ত্রীকেও বলেছিলেন আপনি! কিন্তু সন্তান দিতে না পারায় তাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিলেন?'


জুয়েল তখন শান্ত গলায় বললো,


--- 'আসলে তুমি যা জেনেছো তার সবটা সত্যি নয়। এখানে অনেক কথাই লুকোনো আছে। আস্তে আস্তে সব কথা শুনতে পারবে তুমি!'


--- 'সব কথা কখন শুনতে পাবো?যখন সন্তান দিতে না পেরে আমিও তালাকপ্রাপ্তা হবো তখন?'

জুয়েল নিজেকে স্থির করে বললো---


'

'

'


জুয়েল নিজেকে স্থির করে বললো,


--- 'অস্হিরতার জন্য সব সময় মেয়েরা বেশি ঠকে।তারা কোন কিছু ঝটপট করে ফেলতে চায়।শুনেও ফেলতে চায় ঝটপট।'


আমি তখন রাগত স্বরে বললাম,


--- 'আমি আপনার দার্শনিক মার্কা কথাবার্তা শুনতে চাচ্ছি না।আমি চাচ্ছি আপনার স্ত্রীকে কেন তালাক দিয়েছেন সেই কথা শুনতে।'

--- জুয়েল বললো,'তুমি তো বেশ প্যাঁচালো মানুষ।আমি বারবার বলছি সবকিছু সময় করে বলতে কিন্তু তোমার এক্ষুনি শুনতে হবে।আমি এখন কিছুই বলতে পারবো না।আমি চাই না একটা সুন্দর এবং পবিত্র রাতকে কুৎসিত করতে!'


প্রতারণা করে আমায় বিয়ে করেছে আর এ বিয়ের বাসর রাতকে সে পবিত্র এবং সুন্দর বলছে ,ওর মুখ থেকে এই ভালো মানুষী কথাটা শুনে আমার মেজাজ একেবারে বিগড়ে গেলো।

আমি তখন চেঁচিয়ে উঠে ওকে বললাম,


--- 'মা ছেলে মিলে আমার সাথে শয়তানী করে আমায় বিয়ে করেছেন আবার বড়ো বড়ো কথা বলছেন এখন!প্রতারক কোথাকার!'


আমাদের ঘর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে আমার শাশুড়ি দ্রুত আমাদের ঘরের দরজার কাছে এসে বললেন,


--- 'অত চিৎকার চেঁচামেচি কিসের! মেয়ে মানুষের গলা হইবো নরম। নিজের ঘরের বাইরে তার গলার আওয়াজ যাইবো না। তুমি নতুন বউ হইয়া এমনে গলা মেলাইছো কেনো? মানুষ তো তোমার গলা শুইনা ভাববো না জানি আমরা তোমার উপর কী নির্যাতন চালাইতেছি!'


আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার শাশুড়ির কথার উত্তর দিয়ে বসলাম। বললাম,


--- 'প্রতারণা করে আপনার ছেলের জন্য আমাকে বিয়ে করিয়েছেন।এটা কী নির্যাতন না?'


আমার শাশুড়ি তখন আমায় এমন ধমক দিলেন!ধমক দিয়ে বললেন,


--- 'সাহস কত বড়ো! শাশুড়ির সাথে ঝগড়া করে।চুপ হইয়া যাও এক্কেবারে কইতাছি!'


রাগে আমার শরীর তখন কাঁপছে। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে কেমন!আমি জোর গলায় বললাম,


--- 'আপনার মুখে এমন ভালো ভালো কথা মানায় না।নিজে অনৈতিক কাজ করে এখন আসছেন পুত্রবধূকে নৈতিক শিক্ষা দিতে!'


আমার শাশুড়ি তখন জুয়েলকে ডাকলেন।ডেকে বললেন,


--- 'মেয়ে মানুষ হইলো বাঁকা ত্যাড়া জিনিস। এদেরকে হাতুড়ি পিঠাইয়া সোজা রাখতে হয়। শুরু থাইকা হাতুড়ি না পিটাইলে মাঝে এমন বাঁকন বাঁকবো তখন আর সোজা করন যাইবো না!'


শাশুড়ির মুখ থেকে এমন অসভ্য একটা কথা শুনে আমার বলতে ইচ্ছে করছিলো, আপনাকেও কী তবে আপনার স্বামী হাতুড়ি পিটিয়ে সব সময় সোজা করে রাখতেন?কিন্তু জুয়েলের জন্য বলতে পারিনি।সে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বললো,


--- 'শুনো।যা হয়ে গেছে তা তো আর বললেই ফিরে আসবে না। চিৎকার চেঁচামেচি করলেও বিয়ে ভেঙে যাবে না। সমাজের মানুষেরা জেনে গেছে তুমি এখন বিবাহিতা। তুমি যদি এখন আমায় ছেড়ে চলেও যাও তবুও তো কোন লাভ হবে না। বরং মানুষের চোখে তুমি নিন্দিত হবে। মানুষ তোমায় নিয়ে কু কথা ছড়াবে ওরা চারদিকে।তোমায় নিয়ে সাত রকমের গল্প বানাবে তারা।'


আমি কেঁদে ফেললাম তখন। কাঁদতে কাঁদতে কম্পমান গলায় বললাম,


--- 'আমার অতবড়ো ক্ষতিটা করে কী লাভ হলো আপনার?কেন এমন করলেন আমার সাথে?'


জুয়েল আমার মাথায় হাত দিয়ে স্পর্শ করলো। হয়তো মায়া দেখাতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি ওর কাছ থেকে সড়ে গেলাম অনেকটা।সড়ে গিয়ে বললাম,


--- 'এখন মায়া দেখাতে হবে না।আমি সোই*সাইড করবো।সোই*সাইড করে আপনাকে আর আপনার মাকে ফাঁসাবো!'


জুয়েলের মুখটা ভয়ে কেমন শুকিয়ে গেলো সোইসাইডের কথা শুনে।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,


--- 'না না এমন কথা বলো না। মৃত্যু তো সবকিছুর সমাধান নয়!'

--- 'তাহলে আপনি বলুন আপনার আগের স্ত্রীকে কেন তালাক দিয়েছিলেন!'

জুয়েল এবার বিপদেই পড়ে গেল।না বলে উপায় নেই দেখে সে এবার মুখ খুললো।সে বললো,


--- 'আমার আগের স্ত্রীর নাম জবা।জবা ছিল আমার ছোট ফুপির মেয়ে।তার সাথে আমার সংসার জীবন ছিল সাড়ে চার বছরের। এই সাড়ে চার বছর সে শুধুমাত্র কাগজের বউই ছিল আমার। বাস্তবে সে আমার বউ ছিল না।জবাকে আমি বিয়ে করতে নারাজ ছিলাম।সেও নারাজ ছিল আমায় বিয়ে করতে। কারণ তার একটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।আর সেই ছেলের চাকরি বাকরি করে নিজ পায়ে দাঁড়াতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন ছিল।তাই সে আগে থেকেই আমায় জানিয়েছিল বিষয়টা। কিন্তু আম্মা আর ফুপির জন্য পারিনি।আম্মা তার ননদের মেয়েকেই আমার জন্য বিয়ে করিয়ে আনবেন।আর ফুপিও তার মেয়েকে আমার কাছেই বিয়ে দিবেন।'

--- 'তারপর।'


--- জবা এবার তার মা বাবার কাছে হাত পা ধরে খুব কান্নাকাটি করতে লাগলো। কিছুতেই সে আমায় বিয়ে করবে না। কারণ ছোট থেকেই সে আমায় ভাইয়ের মতো দেখে এসেছে।

ফুপি ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। তিনি এবার বললেন,


--- 'আচ্ছা ঠিক আছে। সমস্যা নাই। জুয়েলকে বিয়ে না করার ইচ্ছে হলে করবি না।অন্য ছেলেকে করবি।আমি আরো দশটা ছেলে দেখে তোকে বিয়ে দিবো।জবা তো এবার আরো বড়ো বিপদে পড়লো। তাকে যে করেই হোক ফুপি বিয়ে দিয়েই দিবেন। এবং তার বেকার প্রেমিকের হাতে কিছুতেই মেয়েকে তুলে দিবেন না।পরিস্থিতি ভালো না দেখে জবা হঠাৎ রাজি হয়ে গেল আমায় বিয়ে করতে। অবশেষে আমাদের বিয়ে হলো খুব ধুমধামে।'


জুয়েলের মুখ থেকে ওর প্রথম বিয়ের গল্পটা শুনতে বেশ ভালো লাগছিলো।তাই আমি আগ্রহ ভরা গলায় বললাম,


--- 'তারপর।'

জুয়েল আমার চোখের উপর তাকালো। তারপর আবার চোখ নীচ দিকে নামিয়ে নিয়ে সে আবার বলতে শুরু করলো।সে বললো,


--- 'সেদিন ছিল আমাদের বাসর।আজকের চেয়ে বেশি সজ্জিত ছিল সেই বাসর ঘর। ফুলের গন্ধে মুখর হয়ে ছিল হাওয়া।মরিচ বাতির আলোয় আমি আর জবা বসেছিলাম খাটের উপর। তারপর যখন জবার হাতটা ধরতে যাবো ঠিক তখন জবা আমার পা শক্ত করে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।আমি ভয়ার্ত গলায় বললাম,


--- 'জবা কী হয়েছে? শব্দ করে কাঁদলে লোকে কী বলবে?'


জবা তখন চুপ হয়ে গেল। তারপর ফিসফিস করে সে আমার পা ধরে রেখেই বললো,


--- 'জুয়েল ভাই,আমি আপনাকে কোনদিন স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।প্লিজ আপনি আমার সাথে স্বামীর অধিকার ফলাতে চাইবেন না! আপনি আমার ভাই। আপনি আমায় বাঁচান। আপনি যদি আমার কথা না রাখেন তবে কিন্তু আমি মরে যাবো।বিঁষ খেয়ে মরে যাবো।'


কথাগুলো বলে চাপা গলায় কাঁদতে শুরু করলো জবা।আমি ওর হাতটা আমার পা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওর হাত দুটো শক্ত করে ধরলাম।জবা কাঁপছে। ভয়ে কাঁপছে।

আমি বললাম,


--- 'জবা, কোন ভয় নেই তোর।কী হলো তোর বলতো!আমায় বিয়ে করেছিস তুই খুশি মনে। কিন্তু এখন এমন করছিস কেন?'


জবা কান্নামাখা গলায় বললো,


--- 'আমি যে ছেলেটাকে ভালোবাসি তার নাম উল্লাস। উল্লাসকে ছাড়া আমি আর কাউকে গ্রহণ করতে পারবো না। শুধু মৃত্যুই পারবে উল্লাসের থেকে আমায় আলাদা করতে!'

--- 'কিন্তু তোর তো বিয়ে হয়ে গেছে এখন।উল্লাস কী তোকে মেনে নিবে?'

--- জবা বললো,'একশোবার মেনে নিবে।তার সাথে পরামর্শ করেই আমি আপনাকে বিয়ে করেছি।'

--- 'কিন্তু বিয়ে করে লাভ কী হলো তোর?'


(৪)

--- জবা বললো,'আপনাকে বিয়ে না করলে অন্য কারোর কাছে মা আমায় বিয়ে দিয়ে দিতেন। তখন কী উপায় হতো আমার?'

--- 'কিন্তু আমিও যদি ওদের মতো হই? তোর সাথে স্বামীর মতো থাকি?'

জবা তার দু চোখ মুছে বললো,


--- 'আপনাকে আমি চিনি। আপনি অনেক ভালো!'

--- 'আম্মা যখন জানবে তখন কী হবে?'

--- 'কাউকে জানতে দেয়া যাবে না।আমরা সবার সামনে স্বামী স্ত্রীর মতোই আচরণ করবো। যেন ওরা দেখে বুঝতে না পারে কোন কিছু।'

--- আমি বললাম,'আচ্ছা ঠিক আছে।'


নিজের ফুপাতো বোনের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিলাম।আমরা দুজন এক ঘরেই থাকতাম কিন্তু আলাদা ভাবে। উল্লাসের সাথে ও মাঝেমধ্যে দেখা করতে চাইতো।আমি তাই ওকে নিয়ে যেতাম উল্লাসের কাছে।আমি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের পাহাড়া দিতাম আর ওরা প্রেম করতো পার্কে কিংবা কোন রেস্টুরেন্টে।এভাবেই সময় গড়িয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু সমস্যা হলো যখন আমাদের নাম মাত্র বিয়ের দু বছর পেরিয়ে গেলো।আম্মা হঠাৎ করে একদিন জবাকে বললো,


--- 'জবা, বিয়ার তো আর কমদিন হয় নাই। এখনও বাল বাচ্চার খবর নাই কেনো?'


জবা তখন লজ্জিত মুখে বলেছিল,


--- 'আল্লাহ না দিলে কী করবো বলেন! আপনি দোয়া করেন আল্লাহর কাছে। আল্লাহ যেন আপনাকে তাড়াতাড়ি দাদি বানান!'


তারপর সে রাতে আম্মাকে বলা কথাটি আমার কাছে জবা বলতে বলতে হেসে গড়িয়ে পড়লো সে।কিন্তু আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম বেশ! চিন্তায় পড়ে গেলাম এই জন্য যে এখন তো ডাক্তারদের কাছে আনাগোনা শুরু হবে।আম্মা হয়তোবা নিজেই নিয়ে যাবেন ডাক্তারের কাছে। তখন কত রকমের প্রবলেম ফেইস করতে হবে!জবাকে আমি বললাম সবকিছু।জবা বললো,


--- 'কোন সমস্যা হবে না।ডাক্তারকে ম্যানেজ করা যাবে।'


জবা ঠিকই বলেছিল।আমরা চার পাঁচবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। আমাদের সাথে আম্মাও গিয়েছিলেন।আর তখন ডাক্তার জানালো,জবা কোনদিন বাচ্চার মা হতে পারবে না।

আম্মা এই কথা শুনে কেমন যেন হয়ে গেলেন।যে মেয়ে বাচ্চার মা হতে পারবে না তাকে ঘরে রেখে তিনি কী করবেন?কিন্তু আসল বিষয় তো আর তিনি জানতেন না।জবা তো আগে থেকেই ডাক্তারকে ম্যানেজ করে রেখেছিল।ডাক্তার তো তার কথামতোই জানালো যে সে আর বাচ্চার মা হতে পারবে না।তারপর থেকে আম্মার আচরণ কেমন পাল্টে গেল! তিনি জবাকে এখন আর আদর সোহাগ করেন না।কথায় কথায় বন্ধ্যা,বাজা বেটি এইসব নোংরা নোংরা কথা বলে লজ্জা দেন।জবা গিয়ে কেঁদেকেটে তার মার কাছে বলে।অবশেষে হঠাৎ একদিন আম্মার সাথে কী কথা নিয়ে যেন জবার তর্ক বেঁধে যায়।আর আম্মা তখন রাগে জবার গায়ে হাত তুলে ফেলেন।এতে জবার মুক্তির পথ একেবারে সুগম হয়ে যায়।সে এবার কেঁদে কেটে আমাদের বাড়ি ছেড়ে তার বাবার বাড়ি চলে যায়।তার মা অর্থাৎ আমার ফুপি এবার শক্ত জেদ করে বসেন। মেয়েকে আর তিনি আমাদের বাড়িতে দিবেন না।আম্মা এতে আরো বেশি রেগে যান।তিনি দ্রুত আমার মাধ্যমে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেন জবার কাছে।আমি নিজেও আর তখন বাঁধা হয়ে দাঁড়াইনি।কারণ ততদিনে উল্লাস নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে।

'

জুয়েলের মুখ থেকে সবকিছু শুনে ওর প্রতি খুব মায়া হলো আমার। এতোক্ষণ ওর প্রতি আমার রাগ থাকলেও এখন আর তার প্রতি আমার কোন রাগ নেই।আমি শান্ত এবং সৌম্য চোখে তার চোখে তাকালাম।কী সুন্দর কালো চোখ। সেই চোখ জুড়ে কী অপার মায়া!একটা ছেলের চোখও কী এতো মায়াময় হতে পারে?আমি নিজে থেকেই জুয়েলের দুটো হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম। তারপর বললাম,


--- 'আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি?'

জুয়েল বললো,


--- 'তুমি বিশ্বাস করলে আমি তোমায় ভালো বাসতে পারি!'


আমি মৃদু হেসে ওর বুকে মুখ গুজে নিয়ে বললাম,


--- 'আমি তোমায় অনেক বিশ্বাস করলাম!'


জুয়েল আমাকে শক্ত করে ওর বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,


--- 'আমিও তোমাকে অনেক ভালো বেসে ফেললাম।'

তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম জবা আর উল্লাসের কথা।জুয়েল বললো,


--- 'ওদের বিয়ে হয়েছে এক বছর হয়েছে।ডিভোর্সি মেয়েকে উল্লাস বিয়ে করতে রাজি শুনে দ্রুত আয়োজন করে বিয়ে দিয়ে দিলেন ছোট ফুপু।আর জবাও নাকি এখন মা হতে চলেছে!'

--- 'বাহ বেশ ভালো তো!

--- কিন্তু আমার ভয় হয় কী জানো?'

--- 'কী?'

--- 'আমি যদি কখনো বাচ্চার মা হতে না পারি তখন যদি তুমি আমায় তোমার মায়ের কথায় ডিভোর্স দিয়ে দাও?'


জুয়েল আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,


--- 'কস্মিন কালেও নয়।আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের ঘর সংসার হোক ভালোবাসাময়।'

                   ___সমাপ্ত___


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।