ভালোবাসায় কষ্ট
" মা যখন বললো, পাগলামি করিস না তামান্না, আমিও বিয়ের আগে একটা লোককে ভালোবাসতাম। তার জন্য একসময় আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলাম, সময় বদলে গেলে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। তোর বাবা মারা যাবার পরে তোকে নিয়ে তোর এই মামার বাসায় থাকি, মনে রাখিস। "
মায়ের ওই একটা কথায় আর প্রতিত্তোর করতে পারিনি, পুতুলের মতো নীরবে সবকিছু সহ্য করে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম। মামার বাসায় থাকি, মামাতো ভাই শিমুলকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসি, সেও আমাকে ভালোবাসে। ভাগ্যের ছোঁয়ায় আজ তার সঙ্গে সবকিছু শেষ করতে হচ্ছে।
শিমুল শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, " আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে যখন বিয়ে করবে, তাহলে সেদিন ভালোবেসেছিলে কেন? "
আমি জবাব দেইনি, শিমুল আমাকে আশীর্বাদ করে বিয়েরদিন সকালে চলে গেল। সারাদিন ধরে আর ওকে দেখিনি, লুকিয়ে লুকিয়ে কল দিয়েছি কিন্তু নাম্বার বন্ধ ছিল। ইচ্ছে করছিল নদীর তীরে ছুটে গিয়ে ওকে ধরে নিয়ে আসি, মন খারাপ হলে শিমুল নদীর তীরে থাকতো। কিন্তু আজকে আর যাওয়া হবে না, নির্মম সত্য মেনে চলে যাবো অন্য কারো ঘরে।
সন্ধ্যা বেলা বরযাত্রী এলো, বাড়ি জুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। রাত দশটার দিকে বিয়েতে কবুল বলে হয়ে গেলাম অন্য কারো। মাকে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করেছিলাম " শিমুল কোথায়? " মা বললো তিনি জানেন না।
রাতের আঁধারে চলে এলাম শশুর বাড়িতে, বাসর ঘরে ফুলের গন্ধে মুখরিত আমি। স্বামীর স্পর্শে হুহু করে উঠলো বুকের ভেতর, একজনের বুকে মাথা রেখে অন্য কারো কথা চিন্তা করার তীব্র কষ্টটা অনুভব করলাম।
সকাল বেলা মায়ের কাছে কল দিয়ে শিমুলের কথা জিজ্ঞেস করলাম, রাতে ফেরেনি বাসায়।
বেলা এগারোটার দিকে আমার স্বামী আমার কাছে বললো " তোমার মামার বাড়ি থেকে ০৩ কিঃমিঃ দুরে চরের মধ্যে তোমার মামাতো ভাইয়েল লাশ পাওয়া গেছে। তোমার মা বললো তোমাকে নিয়ে এখনই তোমার মামার বাড়ি যেতে। "
শিমুল মারা গেছে, যেই নদীর তীরে রচয়িত হয়ে আছে আমাদের শত স্মৃতি। সেই নদীর মধ্যে চলে গেছে তার প্রাণ, আমি পৃথিবী ঘুরতে দেখলাম। চোখ বন্ধ হবার আগে অনুভব করলাম শিমুল আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। হাসতে হাসতে শিমুল বললো,
" বলেছিলাম না, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। "
------(সমাপ্ত) -------
-মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।