ভালোবাসার গল্প
ভয়ংকর_ভালবাসা।
প্রথম_পর্ব।
-লেখক : Dh Ome
কলেজে ভরা মাঠে সবার সামনে হুট করে এসেই আভাস যখন আমার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেয়,আমি ওর দিকে তাকিয়েই কাঁপতে শুরু করি।মুসলিম ঘরের মেয়ে আমি।অথচ সিঁদুর দিয়ে আমার মাথা ভর্তি।সিঁদুর নাকে পড়ে আমার নাকটা লাল হয়ে গেছে।
সিঁদুর পড়ে আমার সাদা কলেজ ড্রেস জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে গেছে।
আমি মুসলিম পরিবারের সাধারণ একটি মেয়ে।প্রেম ভালবাসা থেকে সব সময় দূরত্ব বজায় রেখে চলি।আমার বাবা প্রেম ভালবাসা একদমই পছন্দ করেন না।
আম্মু আমাকে আগেই বলে রেখেছে আমি যেন কোন দিন কোন প্রেমে ট্রেমে না পড়ি।আব্বু কোন দিনই এসব প্রেম ভালবাসা মানবেনা।
ছোট বেলা থেকেই এই জন্য প্রেম বিরোধি আমি।যেখানে ভালবেসে কাউকে পাওয়াই যাবেনা সেখানে ভালবেসেই বা কি লাভ।
কষ্ট ছাড়া তো আর কিছুই পাবোনা।তাই ছোট বেলা থেকে এই পণ নিয়ে বড় হয়েছি যে,কোন দিন কাউকে ভালবাসবোনা।
আম্মু আব্বুর পছন্দে বিয়ে করবো।
কিন্তু আভাস সেই ৬ষ্ঠ শ্রণীতে পড়ি যখন তখন থেকে আমার পিছু নিয়েছে।
আভাস তখন ১০ম শ্রেণীর ছাত্র।আমি স্কুলে যেতাম ও আমার পেছন পেছন যেতো।আমি প্রাইভেট পড়তে যেতাম,আমার পেছন পেছন যেতো।ভয়ে হাত পা কাঁপতো আমার।
এভাবে এক বছর চলে গেলো।
হঠাৎ দেখি আভাসকে আর রাস্তা ঘাটে দেখা যায়না।মনে মনে ভাবি বাঁচলাম এবার।
এভাবে কেটে গেলো কত গুলো বছর।আভাসের আর দেখা নেই।আমিও ভুলে গেছি।পড়াশোনা করছি।
এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে যেই না কলেজে ভর্তি হলাম।
একদিন দেখি আভাস কলেজের সামনে এসে হাজির।
দেখেই মনে পড়ে গেলো এটা তো ওই ছেলে।চেহারা আগের মতই আছে,শুধু হাতে পায়ে অনেকটা বড় হয়ে গেছে।
সামনে এসেই জিজ্ঞেস করলো,কেমন আছো আরফা?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে উত্তর দিলাম জ্বী ভালো আছি।
আভাস:খুব সুন্দর হয়ে গেছো।অনেক বড় হয়ে গেছো।সেই ছোট্ট মেয়েটা এ কয় বছরে কত্ত বড় হয়ে গেছে ভাবতেই অবাক লাগছে।
আমি:আমার ক্লাস আছে,আমি এখন যাবো।
আভাস:একটু দাঁড়াও।জিজ্ঞেস করলেনা আমি কেমন আছি,এত দিন আমি কোথায় ছিলাম?আমাকে দেখতে কেমন লাগছে।
আমি চুপ করে আছি।
আভাস:ঠিকাছে আমিই বলছি,আম্মু আব্বু হঠাৎ ই আমাকে ঢাকার এক কলেজে ভর্তি করে দিলেন।আর তারাও চলে আসলেন ঢাকাতে।তাই আমরা ওখানে চলে গেছি।তোমাকে বলার জন্য খুঁজেছিলাম কিন্তু পাইনি।তাই না জানিয়েই চলে যেতে হয়েছে।
আমি:আচ্ছা।
আভাস:আমি এখন অনার্সে পড়ছি।বাবা মা সহ সবাই গ্রামে চলে এসেছি একবারে।ঢাকায় গিয়ে শুধু এক্সাম দিবো।
আমি:আচ্ছা।
আভাস:তুমি কি আচ্ছা আচ্ছা ছাড়া কিছু বলতে পারোনা?
আমি:আমার ক্লাস আছে প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
আভাস:আচ্ছা যাও।কয়টা পর্যন্ত ক্লাস করবে?আমি অপেক্ষা করবো।
আমি জানিনা বলে চলে আসলাম।
আভাস দেখতে খুবই সুন্দর একটা ছেলে।যে কেউ ই ওকে দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে।
আমার বান্ধবী স্নেহা দেখেছে আভাসের সাথে আমাকে কথা বলতে।
ও তো আমাকে দৌড়ে এসে বল্লো,দোস্ত!ছেলেটা কে রে?একদম নায়ক।
আমি জানিনা বলে চুপ করে ক্লাস করা শুরু করলাম।
ক্লাস শেষে আমি যখন বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।ঠিক তখনি আভাস এসে কোথায় থেকে যেন হাজির হলো।
আভাস:উফ!এই বুঝি তোমার আসার সময় হলো?কত ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি জানো তুমি?
আমি:দেখুন আপনি আমার পেছন পেছন আসবেন না প্লিজ।কেউ দেখলে মন্দ বলবে।
আভাস:কেউ কিছু বলবেনা।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমি:দেখুন আপনি চলে যান।
আভাস:না আমার কথা আছে তোমার সাথে।
আমি:আচ্ছা কাল শুনবো।আজ প্লিজ চলে যান।
আভাস:আচ্ছা কাল সকালে আমি আবার অপেক্ষা করবো।
আমি কোন কিছু না বলেই বাসায় চলে আসি।
এর পর ১০ দিনের মত কলেজে যাইনি।
১১ দিনের দিন কলেজে গিয়ে দেখি আভাস গেইটের সামনে দাঁড়ানো।
আমি দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলাম আর তখনি আভাস আমার হাত ধরে টান দিয়ে দূরে নিয়ে যায়।
আমি:হাত ছাড়ুন প্লিজ।লোকে দেখলে খারাপ বলবে।
আভাস:এই কয়দিন কয় ছিলে তুমি?আমি প্রতিটা দিন অপেক্ষা করেছি সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত এই জায়গায়।
আমাকে কি মানুষ মনে হয়না?হ্যাঁ? (রাগি স্বরে)
আমি:আমি অসুস্থ ছিলাম। (যদিও মিথ্যে)
আভাস:উদ্বিগ্ন হয়ে,কি হয়েছে তোমার?এখন ঠিক আছো?সুস্থ হয়েছো?সরি সরি।আমি বুঝিনি আসলে।এই যে কানে ধরলাম মাফ করে দাও।
আমি:আপনি কোন ভুল করেন নি।মাফ চাইতে হবেনা।আপনি শুধু আমাকে যেতে দিন।আর প্লিজ এভাবে আমাকে আর রাস্তা ঘাটে ডাকবেন না।প্লিজ।
আভাস:আমি বলেছিনা কথা আছে তোমার সাথে।
আমি:জ্বী বলুন।
আভাস:না,এখন না।তুমি ক্লাসে যাও।ক্লাস শেষে বলবো।
আমি দ্রুত ক্লাসে চলে যাই।
ক্লাস শেষ করে যেই না বের হয়েছি তাড়াতাড়ি করে রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসি।
মনে মনে ভাবলাম যাক বেঁচে গেছি।
কিন্তু রিক্সা থেকে বাসার গেইটের সামনে নেমেই দেখি আমার রিক্সার পেছনেই সে আরেক রিক্সায় বসা।আর শুধু এইটুকুই বল্লো,
বাসাটা চিনে গেলাম।ভালোই হলো।
আমি মনে মনে ভাবলাম ধুর!বিপদ আরো ডেকে আনলাম।
বাসায় কাউকেই কিছু বলিনা,কারণ গ্রাম অঞ্চলে মেয়েদের ছেলেরা বিরক্ত করলেই বিয়ে দিয়ে দেয়।
কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে আমি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবো।
বাসায় বললে আমার পড়াশোনা যদি বন্ধ করে দেয়,তাই কিছু বলিনা বাসায়।
এরপর আম্মুকে বললাম,আম্মু আমি এখন থেকে ক্লাস করবোনা।আর কলেজে বেশি ক্লাস না করলেও হয়।শুধু এক্সাম দিবো।
আম্মু রাজি হলো।বল্লো বাসায় ভালো করে পড়বি তাহলে।
এরপর থেকে আর কলেজে যাইনা।কিন্তু আভাস বাসার সামনে এসে ঘুরঘুর করে।
একদিন পাশের বাসার একটা পিচ্চি এসে আমার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বল্লো এটা একটা ভাইয়া দিয়েছে।
কাগজ টা খুলে দেখি,
আরফা,
আমার না বলা কথা গুলো হলো,
আমি তোমাকে ভালবাসি।
আর সেটা সেই ছোট বেলা থেকেই।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
আগামীকাল কলেজ মাঠে প্রোগ্রাম আছে।কয়েকটা কলেজের ছাত্র ছাত্রী সেখানে এটেন্ড করবে।নাচ গানও হবে।তুমি যদি না আসো তবে আমি তোমার বাসায় এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবো।
সিদ্ধান্ত এখন তোমার।
ভেবে দেখো তুমি কি করবে।
ইতি
তোমার আভাস।
চিঠি পড়ে যেন আমি অজ্ঞান হবো হবো অবস্থা।
স্নেহা আমার বান্ধবী,ওকে ফোন করে সব কিছু জানালাম।ও বল্লো তুই প্রোগ্রামে আয়।এত মানুষ এর সামনে ও কিছুই করবেনা।আর যদি না আসিস,তবে যদি ও বাসায় চলে যায় তাহলে তোর পড়া লেখা তো বন্ধ হবেই।আন্টি মারতেও পারে।
আমি এমনিতেই একটু ভীতু।
স্নেহার কথায় প্রোগ্রামে আসলাম।
সবাই যখন প্রোগ্রাম দেখায় বিজি।
তখনি হুট করে কোথায় থেকে এসে আভাস আমার সীঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দেয়।
আর আমি থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে শুধু জিজ্ঞেস করি,
-কেন করলেন এমনটা আমার সাথে?
-ভয়ংকর_ভালবাসা পর্ব-২
দ্বিতীয় পর্ব
--------------------------------------
আর আমি থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে শুধু জিজ্ঞেস করি, কেন করলেন এমনটা আমার সাথে?
মুসলিম ঘরের মেয়ে আমি।
অথচ সিঁদুর দিয়ে আমার মাথা ভর্তি।
সিঁদুর নাকে পড়ে আমার নাকটা লাল হয়ে গেছে।
সিঁদুর পড়ে আমার সাদা কলেজ ড্রেস জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে গেছে।
আভাস, কেন করলেন আমার সাথে এমন?
আমাদের বন্ধু বলতে লাগলো দোস্ত কি করলি এটা তুই?
(প্রদীপ) আজব তো,কি করলেন এটা আপনি?
(স্নেহা) আমি আরফাকে পাগলের মত ভালবাসি,ভালবাসি,ভালবাসি,আমি ওকে কোন মতেই হারাতে চাইনা।
আর আরফা তুই কাল শুনলি না দেব কি বল্লো?
দেব পূজাকে গোপনে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে প্রথমে বিয়ে করেছে।
তারপর পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেছে।
আর হিন্দু ধর্ম মতে সিঁদুর পরালেই বিয়ে হয়ে যায় না?
দেবতো তাই বল্লো,টিভি সিনেমায়ও তো তাই দেখি।
আভাস: তারমানে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
যেভাবেই হোক হয়েছেতো।
এখন শুধু মুসলিম ধর্ম মতে বিয়ে করা বাকি।
এটাও হয়ে যাবে।
আজ থেকে আমি আরফার স্বামী,আর আরফা আমার স্ত্রী।
আমি শুধু এটাই জানি।
আভাসের বন্ধু: দোস্ত শোন,সিনেমা আর বাস্তবতা এক না।
আর দেব যেটা করেছে সেটা ওরা মন থেকে দুজনকে আপন ভেবে সজ্ঞানে নিজেদের ইচ্ছেয় করেছে।
আর পরবর্তীতে যখন পূজা বাসায় জানায় দেব ওকে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছে তখন পূজার পরিবার ওদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে দেয়।
কারণ আমাদের ধর্ম মতে আমাদের কাছে সিঁদুরটা অনেক দামি।
আমাদের কাছে সিঁদুরের মূল্য অনেক।
আর আমরা হিন্দু।
কিন্তু তাই বলে সিঁদুর পরালেই যে বিয়ে হয়ে যায় তা কিন্তু না।
অনেক বিধি,নিয়ম আছে।
তারপরই আমাদের ধর্মে বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।
(প্রদীপ) আপনি যেটা করলেন সেটাতো পাপ করলেন,আমাদের ধর্ম আর তাদের ধর্ম কি এক?
আমাদের ধর্মে বিয়ের পর কেউ সিঁদুর পরে?
এটা তো আমাদের ইসলাম ধর্ম মতে কঠিন গুনাহ এর কাজ করেছেন আপনি।
এর শাস্তি আপনাকে ভোগ করতে হবে।
এর শাস্তি আপনি পাবেন।
আভাস : আরফা,বিশ্বাস করো আমার হিতাহিত কোন জ্ঞান নেই এখন।
কত টা দিন তুমি আমার চোখের আড়াল।
কলিজাটা ফেটে যাচ্ছিলো আমার।
গত কাল যখন দেবের কাছে ওদের বিয়ের কাহিনী শুনলাম,তখন মনে হলো আমি তাহলে তোমাকে সিঁদুর পরিয়ে দিলেই হিন্দু রীতিতে আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে।
আর তারপর আমরা ইসলাম ধর্ম মতে বিয়ে করে নেবো।
আর তুমিও আমাকে বিয়ে করবে,করতে বাধ্য হবে।
আমার মাথায় শুধু একটা চিন্তাই ছিলো যে তুমি আমার হবে।
শুধু আমার হবে।
তোমার প্রেমে আমি অন্ধ হয়ে গেছি,আমার জ্ঞান,বুদ্ধি লোপ পেতে শুরু করেছে।
প্লিজ আমাকে তুমি বিয়ে করে নাও।
আমি বাঁচতে পারবোনা তোমায় ছাড়া।
আভাসের বন্ধু: আরফা, আভাস তোমাকে সত্যিই অনেক লাভ করে।
না হলে ও এমন পাগলামো করতোনা।
ও যেভাবেই হোক তোমাকে পেতে চেয়েছে।
নইলে এভাবে সিঁদুর পরাতোনা।
আর ও কোন ধর্মের উপর অসম্মানতো করেনি তবে কেন ও শাস্তি পাবে?
আর না কোন ধর্মকে অপমান করেছে।
ও শুধু তোমাকে আপন করে পেতে চেয়েছে।
সেটা যেকোন উপায়ই হোক।
তাই ও এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
তাছাড়া আমরা তো আজকাল কতই দেখি,হিন্দু মুসলিম রা খ্রিষ্টানদের নিয়মে বিয়ে করে।
দেখোনি তুমি?
তুমি ওকে ফিরিয়ে দিওনা প্লিজ।
তোমার বাসায় ওর কথা জানাও,আর ওর ভুল গুলো মাফ করে দাও।
আলফা:(প্রদীপ) সরি ভাইয়া,আমার পক্ষে ওকে মাফ করা সম্ভব না।
যে কিনা সবার সামনে আমাকে এই ভাবে অপমান করলো, তাকে নিয়ে সংসার করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
আর আল্লাহ্ ই তো ওকে মাফ করবেন না,কারণ ও একজন মুসলিম ছেলে হয়ে সিঁদুর ছুঁয়েছে,আমাকে ছুঁইয়েছে।
আমি এই কুত্তাটার মুখ আর দেখতে চাইনা।
ওকে আমার সামনে থেকে যেতে বলুন,নয়তো আমি ওর নামে মান হানির মামলা করবো।
প্রদীপ: তুমি কি বলতে চাও আরফা?
তোমাদের ধর্মে কি ভুল করে ক্ষমা চাইলে মাফ পাওয়া যায়না?
তাছাড়া আমিতো শুনেছি আল্লাহর কাছে কান্না কাটি করে তোমরা ক্ষমা চাইলে তিনি তোমাদের নিরাশ করেন না।
ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে।
কিন্তু তুমি আগে ওকে ক্ষমা করে দাও।
এদিকে আমরা ছিলাম মাঠের এক পাশে।
আর সবাই প্রোগ্রাম দেখায় বিজি ছিলো।
তাই আমার ক্লাসমেট কয়জন আর আভাসের বন্ধু কজন ছাড়া তেমন কেউ বিষয়টা খেয়াল করেনি।
তার উপর ফুল সাউন্ডে গান বাজছে,স্টেজে নাচ হচ্ছে সেই গানের তালে।
আমি কোন কথা না বলে কাঁদতে কাঁদতে স্নেহাকে নিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে সিঁদুর ধুয়ে ফেলি।
কিন্তু তবুও থেকে যায় কিছু অংশ।
ধুয়ে স্নেহাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
আর তখনি পেছন থেকে আভাস আর প্রদীপ দা আসে।
আভাস আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
আরফা: হাত ছাড়ুন আমার।
হাত ছাড়ুন।
নইলে আমি চিল্লাবো।
আভাস: প্লিজ আমাকে ১০ টা মিনিট সময় দাও।
জাস্ট ১০ টা মিনিট।
এর পর থেকে আমি আর তোমাকে জ্বালাবোনা।
ওকে এই দশ টা মিনিট ই আপনার শেষ সময়।
এর পর আপনি আর আমার সামনে আসবেন না।
আপনার মুখ আর আমি দেখতে চাইনা।
তারপর আভাস,প্রদীপ দা,স্নেহা আর আমাকে কলেজের সামনের মসজিদ টায় নিয়ে যায়।
আমরা সেখানে যাই,ওই মসজিদে একজন ইমাম সাহেব সব সময়ই থাকেন।
উনার গ্রামের বাড়ী দূরে বলে উনি মসজিদের পাশেই একটা রুমে থাকেন।
ছুটি পেলে গ্রামে গিয়ে ঘুরে আসেন।
খুব ভালো একজন ইমাম উনি তাই উনাকে কেউ ছাড়তেও চায়না।
তো আভাস প্রথমে গিয়ে ইমাম সাহেব কে ডাকলো।
ইমাম সাহেব বেরিয়ে এলে আভাস আমাদের তিন জন কে ডাকে।
আভাস : আমরা দুজনের সামনে যাই, হুজুর আমি আজকে আপনার কাছে একটা কথা নিয়ে এসেছি।
ভয়ংকর_ভালবাসা।
পর্বঃ ৩+৪
ছবিটা দেখা মাত্রই আমার বুকের ভেতর কাঁপতে শুরু করলো, এ যে আর কেউ না,এ যে দেখছি আভাস।
আর আমি আব্বু আম্মুকে সাথে সাথে বলে দিলাম,
আমি এই ছেলেকে বিয়ে করবোনা,
তোমরা অন্য ছেলে দেখো...
-কি বলছিস তুই?ছেলেটা দেখতে কত সুন্দর,স্মার্ট, দাঁড়ির জন্য না করছিস তুই?
দাঁড়িতে কত্ত নিষ্পাপ লাগছে ছেলেটাকে দেখ।
ছেলেটা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,কেউ নাকি দেখেনি আজো একটা সিগারেট খেতে।
তোর বাবার তো ছেলে অনেক পছন্দ হয়েছে।
আর ছেলের মা টাও নাকি অনেক ভালো।
তুই সুখী হবি,ভালো থাকবি।
তাছাড়া আমারো এমন ছেলে পছন্দ।ওরা অন্তত আল্লাহ্কে ভয় পেয়ে হলেও বউকে কখনো কষ্ট দিবেনা।তোকে ভালো রাখবে।(আম্মু)
-ছেলেকে তোমার পছন্দ না কেন মামনি?কোন সমস্যা?ছেলে কে কি তুমি আগে থেকে চেনো?
-আব্বু অন্য ছেলে দেখেন প্লিজ।আমার এই ছেলেকে ভালো লাগেনি।
-আচ্ছা ঠিকাছে,তুমি যা বলবে তাই হবে।
আব্বু আভাসের চাচাকে ফোন করে রাতেই না করে দেয়।
বলে,ছেলেকে আমার আর আপনার ভাবীর পছন্দ হয়েছে।কিন্তু আমাদের মেয়ের পছন্দ হয়নি।
আভাসের চাচা যখন আভাসকে জানায় এ কথা,আভাস ওর চাচার কাছ থেকে আমাদের বাসার মোবাইল নাম্বার নেয়।
সকাল বেলা হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে,
আর আমি ফোন টা রিসিভ করি।
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আস সালাম।
-কে বলছেন?
-আমি আভাস।
এই কথা শোনার সাথে সাথে আমি লাইন কেটে দেই।
আভাস ফোন করেই যাচ্ছে।
আর আমি বার বার লাইন কেটে দিচ্ছি।
পরে আম্মু রুমে এসে বলে কে ফোন দিচ্ছে,আর তুই কাটছিস কেন?
দেতো আমার কাছে।
আমি মোবাইল আম্মুর হাতে দিয়ে চলে যাই অন্য রুমে।
-হ্যালো,কে?
-জ্বী আমি আভাস।আমার কাকা আমার কথা আপনাদের বলেছিলেন না?
-ও হ্যাঁ চিনেছি।কেমন আছো তুমি?
-এইতো আলহামদুলিল্লাহ্!
-আপনি কেমন আছেন?
-আমিও ভালো আছি।
-আমি কি আপনাদের বাসায় একটু আসতে পারি আম্মু?আপনার সাথে আমি একটু কথা বলতাম।
-অবশ্যই বাবা,কখন আসবে এসো।
(আম্মু আভাসের মুখে আম্মু ডাক শুনেই শেষ)
-আমি একটু পরেই আসছি।
-আচ্ছা ঠিকাছে এসো।
আমি জানিনা ও যে আমাদের বাসায় আসবে।
আম্মুও আমাকে বলেনি,আমি যদি চিল্লাপাল্লা করি।
একটা সময় হুট করে আভাস আমাদের বাসায় চলে আসলো,
আম্মু বাইরের রান্না ঘরে রান্না করছিলো।
আর আভাস এসে হাজির।
-আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
-ওয়ালাইকুম আস সালাম।
-কেমন আছেন আম্মু?
-ভালো,তুমি?
-এইতো চলছে।
-আম্মু কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।
-হ্যাঁ বাবা ঘরে আসো,কিছু চা নাস্তা করো তারপর শুনবো সব।
-না আম্মু!চা নাস্তা পরে হবে,আগে আমার কথা শুনুন।
-আচ্ছা বলো,
-আম্মু আমি আরফাকে বিয়ে করতে চাই।
-বাবা আমাদের তো কোন আপত্তি নেই,ও ই না করছে।
-আম্মু আমি জানি ও কেন আমাকে না করছে,
আসলে দোষ আমারি।
-তোমরা কি পূর্ব পরিচিত?
-আম্মু আমি একটা সময় ওকে খুব বিরক্ত করতাম।একদিন...
এই ভাবে আভাস আম্মুকে সব কথা খুলে বলে।আর পরবর্তীতে কিভাবে ও পরিবর্তন হয় সব খুলে বলে।আর আম্মুর কাছে ক্ষমা চায়।
আমি অবাক হয়েছিলাম ওর সাহস দেখে।ও কিভাবে আমাদের বাসায় এসে ডিরেক্ট আম্মুকে বলেছে আমাকে ও বিয়ে করতে চায়।আবার সব অতীত ও আম্মুর সামনে তুলে ধরেছে।
পরে আম্মু ওকে নাস্তা দেয়,ও কোন রকম খেয়েই চলে যায়।
আর আম্মুকে বলে যায়,প্লিজ আম্মু।আপনার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিবেন না।আপনার ছেলেটা আপনার মেয়েটাকে খুব ভালবাসে।
আমি ওর সামনে যাইনি।
পাশের রুম থেকে শুনেছি।
আব্বু বাসায় ফিরলে আম্মু আব্বুকে সব খুলে বলে।
আম্মু আব্বু খাবার টেবিলে বসে আমাকে বলেন,
-আমরা জেনেছি কিসের জন্য তুমি না করেছো।কিন্তু ছেলেটা যা করেছিলো শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্যই করেছিলো।
আর এখন ও টোটালি চেঞ্জ হয়ে গেছে,তাও আবার তোমার জন্যই।
এত বছর পরও ও তোমাকে মনে রেখেছে।
আমাদের কোন আপত্তি নেই,আমরা ওকে ওর ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছি।
আমরা চাই তুমিও সব ভুলে ওকে বিয়ে করে নাও।
আর যেই ছেলে তোমার জন্য এত পাগল।সেই ছেলে কোন দিন তোমায় কষ্ট দিবেনা।
-আপনাদের যা খুশি আপনারা তাই করুন।
-তুমি ছেলের চাচাকে বলে দাও আগামীকাল ছেলের মাকে নিয়ে,ছেলেকে নিয়ে আসতে।এসে আরফাকে দেখে যাক।ছেলে অনেক ভালো।(আম্মু)
-ঠিকাছে আমি বলে দিচ্ছি ফোন করে।
পরে আব্বু ফোন করে বলে দেয় ওই বাসা থেকে এসে আমাকে দেখে যেতে।
আভাস আভাসের মা,আভাসের চাচা,চাচি আমাকে এসে দেখে যান।
পরের দিন আমাদের বাসার লোক জন ওদের বাসায় যান।
বাড়ী ঘর,সবার ব্যাবহার,সব কিছু আমাদের বাড়ীর লোকজনের পছন্দ হয়।
তাই ওই বাসায়ই আমাদের বিয়ের পাকা কথা হয়ে যায়।
ডেট ফিক্সড হয়ে যায়।
আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ে।
ধুমছে বিয়ের কেনা কাটা চলে।
আভাস ফোন দিয়ে আম্মুকে বলে আমার সাথে কথা বলতে চায়।
আম্মু আমার হাতে ফোন দিয়ে বলে,
আভাস কথা বলবে।
-হ্যালো,
-আরফা,
-জ্বী বলুন।
-এখনো রেগে আছো আমার উপর?
-কি বলার জন্য ফোন দিয়েছেন সেটা বলুন।
-কি রঙের, হলুদের শাড়ী,বদল শাড়ী,আর বিয়ের শাড়ী নিতে চাও তুমি?
-আপনার ইচ্ছে।
-না সমস্যা নেই,তুমি তোমার পছন্দের রঙ বলতে পারো।আর চাইলে আমার সাথে কেনাকাটাও করতে পারো।
-না,প্রয়োজন নেই।
-তাহলে আমি আমার পছন্দ মত কিনবো?
-জ্বী,কিনেন।
এই বলে লাইন টা কেটে দেই।
আজ আমার গায়ে হলুদ,
বাসায় বিয়ের আমেজ।ছেলের বাড়ীর লোক জন সবাই আসছে।
আমার বাসার লোক জন রিসিভশনে দাঁড়িয়েছে।
কিছু ক্ষণ পর শুনি আমার খালাতো বোনের চিৎকার।
-ওই জামাই আসছে জামাই আসছে..
ভয়ংকর_ভালবাসা।
পর্ব_৪
আজ আমার গায়ে হলুদ,
বাসায় বিয়ের আমেজ।ছেলের বাড়ীর লোক জন সবাই আসছে।
আমার বাসার লোক জন রিসিভশনে দাঁড়িয়েছে।
কিছু ক্ষণ পর শুনি আমার খালাতো বোনের চিৎকার।
-ওই জামাই আসছে জামাই আসছে।
সবাই আমার পাশ থেকে উঠে দৌড়ে চলে গেলো।
সবাই বলছে,হলুদে জামাই আসছে।
কত রোমান্টিক জামাই।
আর আমার মনে মনে রাগ হচ্ছে,
কি দরকার ছিলো এসব ন্যাকামোর,
কি দরকার ছিলো হলুদে আসার।
কিছু ক্ষণ পর আমাকে রেডি করে স্টেজে নেয়া হলো।
বর পক্ষের মধ্যে সর্ব প্রথম আভাস আসলো স্টেজে আমাকে হলুদ দিতে।
দেখেতো মেজাজ পুরাই খারাপ আমার।
আমি বসে আছি,
আভাস আমার সামনে বসলো।
-অনেক সুন্দর লাগছে আমার বউ টাকে,
আর কাচা ফুল গুলোতো সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
-শেষ হয়েছে আপনার ন্যাকামি?হলে প্লিজ বাসায় যান।
-উঁহু এক্টুতো বাকি,
এই বলে আভাস হলুদ নিয়ে আমার নাকে ছুঁয়ে দিলো।
না পারি হাসতে,না পারি কাঁদতে।
মানুষ আগে হলুদ কপালে ছোঁয়ায়।
আর সে আমাকে নাকে ছোঁয়াচ্ছে।
তারপর কপালে আর গালে হলুদ দিয়ে,
মিষ্টি খাইয়ে দিলো।
-আমার না শখ যে আমার বউও আমাকে হলুদ দিয়ে দিবে।দিয়ে দাওনা একটু।
-আপনি যাবেন?
ও আমার হাতটা হলুদে দিয়ে নিজের কপালে হাতটা ছুঁয়ে নিলো।
-হয়ে গেছে আমার ইচ্ছে পূরণ।এবার আমি আসি,আগামীকাল দেখা হবে।
ও চলে গেলো।ছেলে পক্ষের সবাই আমাকে হলুদ দিয়ে,খাবার খেয়ে চলে গেলো।
আমাদের বাসার লোকজনও ওকে হলুদ দিয়ে চলে এসেছে।
রাতে আমাদের বাসার মানুষ আমাকে হলুদ দিলো।
হলুদ দেয়া শেষে সবাই যখন ঘুমাতে চলে গেলো তখন আম্মু আমার রুমে আসলো।
-শাড়ীতে খারাপ লাগছে?খারাপ লাগলে খুলে ফেল।
-না সমস্যা নেই।
-তুই কি রেগে আছিস আমাদের উপর?
-না,রাগ করবো কেন?
-দেখ মা, আভাস খুব ভালো ছেলে।দেখেছিস কিভাবে ও আমাদের সবাইকে আপন করে নিয়েছে।
আর তোকেও খুব ভালবাসে,
নয়তো এত বছর পর তোকেই বউ করে নিতে আসতোনা।
ওর কি মেয়ের অভাব হতো?
-অনেক রাত হয়েছে যাও ঘুমাও।
-আমার একটা কথা রাখবি?
-বলো,
-তুই আভাসকে কোন দিন কষ্ট দিস না।
ছেলেটা বড্ড ভালো।
ওদের সংসার টাকে নিজের সংসার মনে করে আগলে রাখিস।
-হুম।
আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে চলে যায়।
সকালে আম্মুর মোবাইলে আভাসের কল।
রিসিভ করে আম্মু আমাকে দেয়,
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম সালাম।কেমন আছো?
-জ্বী ভালো।
-ইশ আর কয়েক ঘন্টা বাকি,চিরদিনের মত তুমি আমার হবে।এই দিন টার অপেক্ষায় আমি কতটা বছর।আমাদের বিয়ে তে কি তুমি খুশি না?
-(আমি চুপ)
-সমস্যা নেই,খুশি না থাকলেও আমি তোমার মন ভালো করার দায়িত্ব নিলাম।তোমাকে খুশি রাখার দায়িত্ব আজ থেকে আমার।
-আচ্ছা এখন রাখেন,সবাই ডাকছে।
-আচ্ছা ঠিকাছে, লাভ ইউ বউ টা।
-বুঝলাম।
-এই বুঝলামের হিসেব আমি কড়ায়গণ্ডায় নিবো হুহ।
-আচ্ছা।
-ওকে আল্লাহ্ হাফেজ।
-আল্লাহ্ হাফেজ।
এই প্রথম ওর সাথে কথা বলে আমি মুচকি হাসলাম।
দুপুর হয়ে এসেছে।
পুরো বাড়ী মেহমানে ভরপুর।বাসায় বিয়ের আমেজ।
আমাকে সাজানো হচ্ছে বধূর সাজে।
আমাদের বাসার আত্মীয় স্বজনের খাওয়া দাওয়া শেষ।
একটু পরেই সবার চিল্লাচিল্লি,
বর আসছে বর আসছে।
কেন যেন আমার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠছে।
আমি রুমে বসে আছি।
আভাস এসে বাইরে স্টেজে বসে।
বসেই বার বার নাকি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,আমাকে এক নজর দেখতে।আমাকে কেমন লাগছে দেখতে।
আমার কাজিনকে ওর মোবাইল টা দিয়েই বলে বোনের কত গুলো পিক তুলে নিয়ে এসোনা।
খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
কাজিন ৫০০ টাকা না দিলে পিক তুলে দিবেনা বলে বায়না করে,
আভাস বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকা দিয়েই পিক তুলতে পাঠায়।
কিছু ক্ষণ পর আমার কাজিন,আমার ব্যাক সাইডের কত গুলো পিক তুলে নিয়ে আভাস কে মোবাইল দেয়।
আভাস যখন এক্সাইটেড হয়ে মোবাইলে পিক দেখতে যায়,
দেখে শুধু পেছন সাইডের পিক।
আর আমার কাজিন হাসতে হাসতে ওখান থেকে চলে যায়।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে
ফাইনালি আমাদের বিয়েটা হয়।
এত ক্ষণেও আমি ওর দিকে একবারের জন্যও তাকাইনি।
আর আভাস যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।
শেষ মেস ও ওর ভালবাসার মানুষটাকে নিজের করে পেলো।
আমার আম্মু আভাসকে একটা চেইন পরিয়ে দেয়।
সন্ধ্যা হলে আব্বু আমার হাত আভাসের হাতে দিয়ে বলেন,
-বাবা,বড় আদরের মেয়ে আমার আরফা।
কোন দিন কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেইনি ওকে।
কিছু চাওয়ার আগেই এনে দিয়েছি।
উহ্ শব্দ করার আগে কোলে তুলে নিয়েছি।চোখে পানি আসতে দেইনি।আজ আমার কলিজার টুকরাটাকে আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম।
আজ থেকে ওর দায়িত্ব তোমার।ওকে তুমি আগলে রেখো।
এই কথা বলে আমার আব্বু কাঁদতে থাকে।
একটু পরে খেয়াল করি আভাসও কাঁদছে।
-আপনি কোন চিন্তা করবেন না আব্বু।আমি ওকে সারাজীবন আগলে রাখবো।আপনিও চলুন না আমাদের সাথে,আম্মুকেও নিয়ে চলুন।
এই কথা শুনে আর সবার এক্সপ্রেশন কেমন হয়েছে আমি জানিনা,
তবে আমি আমার বাম হাত টা দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে হি হি করে হেসে দিয়েছিলাম।
যদিও কেউ দেখেনি।ভেবেছিলো আমি কাঁদতেছিই।
-না বাবা আজ না,আগামীকালই আমি তোমাদের নিতে আসবো।
এর পর আমাকে আর আভাসকে আব্বু জড়িয়ে ধরে।
আম্মুও আমাদের জড়িয়ে ধরে কান্না করে।
এদিকে আব্বু কাঁদে,আম্মু কাঁদে,আমি কাঁদি,আমাদের কান্না দেখে আভাসও কাঁদে।
পরিশেষে আব্বু আমাদের গাড়ীতে তুলে দেন,আর বিদায় নিয়ে আমরা চলে আসি।
সারা রাস্তা আমি কাঁদতে কাঁদতে আসি,
যতটা না আম্মু আব্বুর জন্য খারাপ লাগছে,
তারচেয়ে বেশি ভয় হচ্ছে এই ভেবে যে,
আমি তো এবার একা।
আভাস যদি ওকে এত শাস্তি দেয়ার প্রতিশোধ এবার আমার উপর দিয়ে নেয়,তখন কি হবে আমার?
বাসায় নিয়ে আবার ঝাড়ি,ধমক দিবে নাতো?
ভাবতে ভাবতেই গাড়ী এসে একটা জায়গায় থামলো।
মনে মনে ভাবছি,
এখানেতো কোন বিয়ে বাড়ী দেখিনা।
বিয়ের কোন গেইট ও দেখিনা।
এখানে গাড়ী থামলো কেন?
-আরফা নামো গাড়ী থেকে।
আভাসের এই কথা শুনে আমার কলিজা যেন শুকিয়ে যাচ্ছে....
-ভয়ংকর_ভালবাসা।
-লেখক : Dh Ome
৬ শেষ_পর্ব।
মনে মনে ভাবছি,
এখানেতো কোন বিয়ে বাড়ী দেখিনা।
বিয়ের কোন গেইটও দেখিনা।
এখানে গাড়ী থামলো কেন?
-আরফা নামো গাড়ী থেকে।(আভাস)
আভাসের এই কথা শুনে আমার কলিজা যেন শুকিয়ে যাচ্ছে...
-এখানে নামবো কেন?
-গাড়ী আর সামনে যাবেনা,রাস্তা ঠিক করছেতো সেই জন্য।
-আপনাদের বাসা কত দূর?কোথাও তো বিয়ের গেইট দেখিনা,বিয়ে বাড়ীও তো দেখিনা।
-আরে বাবা আরেকটু সামনে আমার বাসা,নামো তো গাড়ী থেকে আগে।
এই বলে আভাস আমার হাত ধরে গাড়ী থেকে নামালো।
এরপর আমার হাত শক্ত করে মুঠোয় নিলো,
-এবার চলো।
আমার বুকের ভেতরটায় যে কি হচ্ছিলো সেটা আমি কাউকে বুঝাতে পারবোনা।
মনে মনে ভাবছিলাম,ও আমাকে বাসায়ই নিয়ে যাবে তো?
এক হাত দিয়ে শাড়ী ধরে রেখেছি অন্য হাত আভাস ধরে রেখেছে।
কিছু দূর যাবার পর আভাস বলছে,
কোলেই নিতাম,মুরুব্বিরা পেছনে বসে আছেন,উনারা এসে দেখলে নানান কথা বলবেন সেই জন্য কোলে নিলাম না,একটু কষ্ট করে হেঁটেই চলো প্লিজ।
কিছু দূর হেঁটে যাবার পর দেখি বিয়ে বাড়ী।যেন প্রাণটা ফিরে পেলাম।
বউ এসেছে বউ এসেছে বলে সবাই আমাকে বরণ করতে আসলো।
কেউ মিষ্টি এনে,কেউ পায়েস এনে,কেউ সেমাই এনে আমার মিষ্টি মুখ করছে।
সাথে আভাসকেও খাইয়ে দিচ্ছে।
আভাসের আপু আমাকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো।
আমাকে আভাসের মায়ের রুমে বসানো হলো।
আশেপাশে সবাই আমাকে দেখছে।
আমি চুপ করে বসে আছি।
কিছু ক্ষণ পর আভাসের দুইটা বন্ধু এসে আমাকে বলে,
শেষমেস ভাবী হতেই হলো।
শুধু শুধু বন্ধু টাকে কষ্ট দিলে,শাস্তি দিলে।
আজ ও প্রতিশোধ না নিলেই হয়।
আল্লাহ্ আল্লাহ্ করো।
কথা গুলো শুনে বুকের ভেতর টা আবারো কেঁপে উঠলো।
যদিই ও প্রতিশোধ নেয়।
তখন কি হবে আমার?
রুমে বসার পর থেকে আভাসকে আমি আর কোথাও দেখতে পেলাম না।
রাত হয়ে গেছে অনেক,
সবাই আমাকে খেতে বলছে।আমি লজ্জায় সবার সামনে খেতেও পারিনি।
পরে আমাকে ধরে আভাসের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।এত ক্ষণ ওর বন্ধু রা রুমটাকে ফুল দিয়ে সাজাচ্ছিলো।
ওর ভাবীরা আমাকে খাটে বসিয়ে দিয়ে বাইরে চলে যায়।
এই প্রথম আমি ভয়ে কাঁপছি।
গলা শুকিয়ে যাচ্ছে,আভাস কি বলবে আমাকে।ও কি ওর কষ্টের শাস্তি দিবে আমাকে?প্রতিশোধ নিবে।
এই চিন্তা গুলো বার বার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।ওর ভালবাসা টা আবার সেই ভয়ংকর ভালবাসার রুপ নিবে নাতো?
রাত ১ টার সময় ওকে ওর বন্ধুরা রুমে ঢুকতে দেয়।
যেই পর্যন্ত ওর কাছ থেকে ৪০০০ টাকা না নিতে পেরেছে সেই পর্যন্ত ওকে রুমে ঢুকতে দেয়নি।
ও রুমে ঢুকতেই আমি কি করবো দিশা না পেয়ে কান্না শুরু করে দেই।
-এই এই কি হয়েছে?
কাঁদছো কেন তুমি?আম্মু আব্বুর কথা মনে পড়েছে?কালই তোমাকে আমি তোমাদের বাসায় নিয়ে যাবো।
-মনে মনে বলি,আমি তো আপনার ভয়ে কাঁদছি।
-দেখো,কাঁদেনা প্লিজ।আজ কাঁদলে লোকে কি বলবে?সবাই ভাব্বে আমি তোমাকে মারছি,আরো পঁচা কথা বলবে।
প্লিজ কেঁদোনা।কেঁদোনা লক্ষী।
-আপনি কি আমাকে মারবেন?বা কোন শাস্তি দিবেন?(কেঁদে কেঁদে)
-কেন মারবো,কেন শাস্তি দিবো?
-ওই যে আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি বলে,বিয়েতে রাজি হইনি বলে।
-ওরে পাগলী,এত সাধনার পর,এত কষ্ট করে আমি আমার জানটাকে পেয়েছি ওকে কষ্ট দিতে?
এই ভয়ে কাঁদছো তুমি?আমার প্রাণ থাকতে একটা আঁচরও তোমার গায়ে কোন দিন লাগতে দেবোনা আমি।সেই আমি তোমাকে মারবো?
কি করে এমন অদ্ভুত কথা মাথায় আসে তোমার?
-সরি(কেঁদে কেঁদে)
-একবার জড়িয়ে ধরা যাবে?
থাক থাক ওই ভাবে তাকিওনা।সমস্যা নেই।
-জানো,আজ আমি অনেক খুশি।আল্লাহ্ আমাকে আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।
তোমাকে না পেলে এ জীবন মৃত বৃক্ষের মত হয়ে যেতো।
কত অপেক্ষার পর আজ আমি আমার জীবন টাকে পেলাম।খুব ভালবাসি তোমায় আমি আরফা।খুব ভালবাসি।আজ আমার এ জীবন ধন্য।
আচ্ছা তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।আবার সকাল সকাল উঠতে হবেতো।
-আমি খাটের এক পাশে শুলে তোমার প্রবলেম হবে?
-না।
-তবে আমি শুই?
-আচ্ছা।
আমরা দুজন দুদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লাম।
আর মনে মনে আমি ভাবতে লাগ্লাম,কি ভুল টাই না আমি বুঝেছিলাম আভাসকে।
অথচ ও কত ভালো একটা ছেলে।
ভোর বেলা দেখি আভাস নামাজ পড়ছে।
নামাজ শেষে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,কখন উঠেছেন?
-এইতো কিছু ক্ষণ আগে।তোমাকে কত ডাকলাম।তুমি উঠলেনা।নামাজ পড়বেনা?
-দিনে পড়বো।
-দিনে পড়লে হবেনা,সব ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে এখন থেকে।ঠিক আছে?
-হুম।
আজ আমাদের বউ ভাত,
বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষে আমরা আমাদের বাসায় যাই।
ওখানেও সুন্দর করে বাসর ঘর সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে।
আমাদের বাসায় যেতেই আমাদের সবাই মিষ্টি মুখ করায়।
আম্মু আভাসকে এর মধ্যেই খুব আপন করে নিয়েছে।
আমার সাথে দেখা হতেই আম্মু বল্লো,
ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করিসনি তো?
-না।
-ওকে কষ্ট দিসনা কিন্তু।
ও তোর স্বামী,নইলে আল্লাহ্ নারাজ হবেন।
-হুম।
রাতে আভাস আম্মু আব্বু আর সবার সাথে অনেক গল্প করলো।
গল্প শেষে আমরা সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গেলাম।
আমার রুমটা দারুণ ভাবে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
-আরফা,
-হুম।
-আই লাভ ইউ।
-আচ্ছা।
-শুধু আচ্ছা?
-ওকে।
-শুধু ওকে?
-ঠিকাছে।
-শুধু ঠিকাছে?
-বুঝলাম,
-বুঝলাম না?
-হি হি হি।
-আম্মু আব্বু অনেক ভালো।একদম আমার মনের মত।আমি সব সময় এমন একটা পরিবারই চেয়েছি।যারা আমাকে বুঝবে,আর আমাকে আপন করে নিবে।
-আর আমি?
-উম্ম তুমি,আছো ভালোই।
-আমি ভালোই?তারমানে খুব ভালো না?
-খারাপ তো বলিনি।কিন্তু আম্মু আব্বু বেশি ভালো।দেখোনা তারা আমাকে কত তাড়াতাড়ি আপন করে নিয়েছেন।আর তুমি?
-আমি কি?
-নিয়েছো আপন করে?
-বিয়ে করেছিনা?
-ওটাতো সবার জোরাজুরিতে।
-আপনি জানেন?
-সব জানি।
-উঁহু সব জানেন না।
-কি জানিনা?
-এই যে এখন যে আমি জানি আপনি খুব ভালো।এটা কি আপনি জানেন?
-নাতো।তোমার কাছে আমি তাহলে ভালো হতে পেরেছি?থ্যাংক্স গড।
-আপনি আসলেই খুব ভালো।
-সেটা আমি জানি।
-কিইইই
-হা হা হা।
-পঁচা।
-হুম তোমার পঁচা।
-আচ্ছা।
-আর তুমি আমার পুঁচু।
একবার জড়িয়ে ধরি?
জড়িয়ে ধরা যাবে?
-হুম।
-এই রে আজ আমার বউ চোখ কপালে তুলেনি।
এই বলে আভাস আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।
মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সব টুকু সুখ যেন এই মানুষটার বুকে।
ভয়ংকর ভালবাসা টা রুপ নেয় পবিত্র ভালবাসায়।
এরপর কেটে যায় আমাদের বিবাহিত জীবনের অনেক গুলো বছর।
আমাদের বিয়ের ৭ বছর চলছে।আমাদের বিয়ের পর যারা বিয়ে করেছেন তারাও মা বাবা হয়ে গেছেন।শুধু আমরাই পারিনি আজো মা বাবা হতে।
আমি এখনো আভাসকে বাবা ডাক শোনাতে পারিনি।
কিন্তু ওর মুখে ওই একটাই কথা,
আল্লাহ্র যখন ইচ্ছে হবে তখন দিবেন।
আমরা কি মন্দ আছি বলো?
টুনাটুনির সংসার ভালোই তো আছি।
এইতো চলছে জীবন।
সবাই দোয়া করবেন,আমি যেন আভাসকে বাবা ডাক শোনাতে পারি।
আল্লাহ্ তায়ালা যেন আমার কোল ভরে দেন।সবাই ভালো থাকবেন।
সমাপ্ত
আল্লাহ্ হাফেজ।