বেপরোয়া ভালোবাসা গল্পের লিংক | ভালোবাসার গল্প

 গল্প ভালোবাসার গল্প

গল্প ভালোবাসার গল্প

সত্যঘটনা অবলম্বনে

আমি তিথি আর হাজবেন্ডের নাম মেহেদী।২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমাদের রিলেশন ছিল। অনেক ঝড় অতিক্রম করে ২০১৩ এর জুন মাসে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। 


কিন্তু আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ যে, যে রাতে আমার স্বামীর সাথে থাকার কথা সে রাতে আমার জায়গা হয় গোয়ালঘরে। 


মেহেদী পরিবারের বড় ছেলে বলে সে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারতো না। তার মায়ের পায়ের নিচে তার জান্নাত তাই সব অন্যায় মেনে নিতো। সব মেনে নিয়েছি, মানিয়ে নিয়েছি যে মানুষটাকে ভালোবেসে সেই মানুষটাই কখনো বুঝলো না।


বিয়ের ৬মাস পরেই বেবি কনসেপ্ট করি কিন্তু তা ননদ ও শ্বাশুড়ি জোর করে এভরশন করায়। দ্বিতীয় বারও একই কাজ করে তারা। মেহেদীর কাছে বললে তার উত্তর,"তারা তো আমাদের ভালোই চায়।" 


আমার চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। মা বাবাকে কিছু বলার মুখ ছিল না;কেননা আমি তাদের আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়ে বিয়েটা করেছিলাম।


পরিবারের সবাই বলেছিল মেহেদীর পরিবার খারাপ কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। যাইহোক মেহেদী জবের জন্য শহরে থাকতো। ৭/১৫ দিন পর বাড়িতে আসতো।


বিয়ের তখন ১বছরও হয়নি এর মধ্যেই ননদ,শ্বাশুড়ি মেহেদীর কাছে বলল আমার অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। 


মেহেদী কখনও এর সত্যি-মিথ্যা যাচাই করে নি অথচ তাদের কথা শুনেই আমার গায়ে হাত তুলল।এত মারলো যে ২দিন বিছানায়ই পরে রইলাম।এতেও তাদের সমস্যা- আমি ভান করে বিছানায় পরে আছি, কাজ ফাকি দেয়ার ধান্দা( আরো অনেক কথা)। 


শ্বশুর বলল আমার থেকেও দেখতে সুন্দরী মেয়ে তাদের ছেলের জন্য আনতে পারতো।এত দিনে বুঝলাম এত আপত্তির মূলে আমি দেখতে অসুন্দর। 


বিয়ের ১ বছর হওয়ার আগেই আমাকে বাড়িতে রাখবে না এটা বলে রাতেই বাসা থেকে বের করে দিলো।মেহেদীও বাড়িতে ছিল না তাই প্রতিবেশি এক আন্টির বাসায় রাতটুকু আশ্রয় নিলাম।


পরের দিন মেহেদী আসলো। আর কোনো উপায় না পেয়ে আমাকেও শহরে নিয়ে গেলো।সেখানে কয়েকমাস ভালোই ছিলাম। 

কিন্তু অভাগীর সুখ বেশি দিন থাকেনা। তাই ননদ আর তার স্বামী বাসার কাছেই ভাড়া আসলো।এসেই সেই একই জ্বালাতন শুরু করলো।


তখন বিয়ের মোটামুটি ২ বছর শেষ।এর মধ্যে শ্বাশুরী নাতির মুখ দেখানোর জন্য প্রেশার দেয়া শুরু করলো।


কিন্তু এবারও আমার খারাপ ভাগ্য পিছন ছাড়লো না। দুইবার বাচ্চা নষ্ট করার ফলে আল্লাহ আমার উপর অসন্তুষ্ট হলো যার কারণে বাচ্চা নিতে পারছিলাম না।


এদিকে শ্বাশুড়ী-ননদ বলল, আমি বাচ্চা নিতে অক্ষম তাই মেহেদীকে অন্যত্র বিয়ে করাবে। 


এই কথা শুনার পর যে মানুষটার সর্বপ্রথম প্রতিবাদ করার কথা ছিল সেই মানুষটাই নিরব দর্শক হয়ে সব কথা মেনে নিচ্ছিল।


আমিও মেহেদীর আচরণে নির্বাক হয়ে গেছিলাম।মনে মনে শুধু ভাবছিলাম, "এ আমি কাকে ভালোবাসলাম, কাকে ভালোবেসে মা-বাবার ভালোবাসা ত্যাগ করলাম। আল্লাহ আমাকে আমার অবাধ্যতার শাস্তি দিচ্ছে হয়তো।"


রাতে মেহেদীকে বুঝালাম, ভালো কোনো ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে এ সমস্যার সমাধান পাবো ইনশাআল্লাহ্। কিন্তু এখানেও আমার ননদ বাধা হয়ে দাড়াল। জানিনা সে কি এমন বুঝালো যে মেহেদী ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে লাগলো।


আর কোনো উপায় না পেয়ে ডাক্তার দেখাতে ৫ দিনের জন্য বাবার বাড়ি গেলাম। বাবার আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল না তবুও নিজের সংসার বাচাতে বাবার শরণাপন্ন হলাম।বাবাও তার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছিল আমাকে সুস্থ করার জন্য।


বাবার বাড়িতে ২ দিন থাকার পরই মেহেদীকে নিয়ে এক অজানা ভয় আমার মনকে গ্রাস করা শুরু করলো। মেহেদী রান্না পারতো না, তাই আমি কাছে না থাকলে খাওয়া নিয়ে অনিয়ম করে শরীরে অসুখ বাধাতো। 


এসব ভেবে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। তাই মেহেদীকে সারপ্রাইজ দিবো ভেবে ওকে না জানিয়েই ডক্টরের সাথে এপয়েন্টমেন্ট বাদ দিয়ে বাবার নিষেধ সত্ত্বেও বিকেলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।বাসায় পৌঁছাতে রাত ৮:০০ টা বেজে গেছিল।


বাসা ভিতর থেকে লক করা থাকায় কলিংবেল বাজালাম কিন্তু কোনো রেসপন্স পাচ্ছিলাম না। মেহেদীকেও কল করলাম কয়েকবার তাও রিসিভ করলো না, তাই অজানা ভয়টা আরো মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। কেন যেন বুক ফেটে কান্না আসছিল। 


তাহলে কি....(বিভিন্ন খারাপ চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল)


পাশের বাসার আন্টির হেল্প নিবো যে সেও বাসায় ছিল না। তার দরজায়ও তালা ঝুলানো ছিল। তাই কিছু না ভাবতে পেরে ননদকে কল দিলাম। কয়েকবার কল দেয়ার পর তারও কোনো রেসপন্স না পেয়ে সেখানেই বসে রইলাম। এই ভেবে মনকে শান্ত করলাম যে, ও হয়তো ফোন সাইলেন্ট রেখে ঘুমিয়েছে। তাই ওর ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করতেছিলাম।


এর মধ্যে ননদ কল ব্যাক করলো। আমি বাসায় ফিরেছি শুনেই তার কথা বলার ধরন পাল্টে গেল।পূর্বে আমার বাবার বাড়ি যাওয়া নিয়েও বিভিন্ন কথা শুনাতো। কিন্তু এবার! আমি ডাক্তার না দেখিয়েই বাসায় ফিরেছি কেন? এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলাম কেন? কেন নিজের ভালো বুঝি না?এসব নিয়ে কথা পেচানো শুরু করল।


আমি তার কথাগুলো এড়িয়েই জিজ্ঞেস করলাম,'মেহেদী কোথায়?' সে বলল, ' মেহেদী মনে হয় ঘুমাচ্ছে তুমি আমার বাসায় আসো। ওর ঘুম ভাঙলে তোমাকে এসে নিয়ে যাবে।'


আমি আচ্ছা, আসতেছি বলে ফোনটা রেখে দিলাম।


কিন্তু কেন জানিনা আমি সেদিন দরজার সামনেই ঠায় বসে ছিলাম। হয়তো আল্লাহই চেয়েছিল আমি সেখানেই থাকি।


কয়েকমিনিট পর হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে উঠে দাড়ালাম।


মেহেদী আমাকে দেখে ভুত দেখার মতো কেপে উঠল। আমাকে দেখে খুশি হওয়ার পরিবর্তে ও ঘাবড়ে গেছিল। দরজা আগলে দাড়িয়েই প্রশ্ন করা শুরু করলো,' না জানিয়ে আসছি কেন? ডাক্তার কেন দেখাইনি? আপুর বাসায় ডাকলো সেখানে কেন গেলাম না?'


আমি ওর প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়েই হাত ঠেলে বাসায় ঢুকলাম।


বাসার ভিতর ঢুকেই আমি আমার সাজানো সংসারে অন্য কারো স্পর্শ অনুভব করতে পারলাম। এটা মেয়েদের স্পেশাল একটা গুণ যে, তার ভালোবাসার সাজানো জিনিসে অন্য কারো হাত লাগলে তা সহজেই বুঝতে পারে।


ড্রয়িংরুমে টেবিলে আধ খাওয়া বার্থডে কেক, অল্প গলা মোমবাতি, ঝড়ে যাওয়া গোলাপের পাপড়িগুলো যেন জানান দিলো, "তিথি, এই সংসারে তোর প্রয়োজন শেষ।"


এদিকে কিন্তু মেহেদী থেমে নেই।তার বোনকে কল করে বাসায় আসতে বলে দিয়েছে।


ভালোবাসার মানুষকে হারাবার ভয়ে আমার পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না, লজ্জায় না কি ঘৃণায় আমি মেহেদীর দিকে তাকাতে পারছিলাম না।


আমি ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে বেডরুমে যেতে চাইলাম কিন্তু জড়িয়ে ধরার বাহানায় মেহেদী আমাকে আটকে দিল। তবে এবার আমার স্বামীর শরীরের ঘ্রাণে অন্য মেয়ের উপস্থিতি সম্পূর্ণ ধরা দিলো। একটা মেয়ে তার স্বামীর শরীরের ঘ্রাণ চিনতে ভুল করে না।


মেহেদী একাধারে আমাকে বিভিন্ন কথা বুঝিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু আমি শুনার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলাম।


এর মধ্যে ওর বোন এসে দরজায় নক করলে ও দরজা খুলতে গেলে আমি বেডরুমে চলে গেলাম। বেডরুম আগে থেকে অন্ধকার থাকায় আমি গিয়ে লাইট জ্বালালাম। লাইট জ্বালাতেই দেখি আমার খালতো ননদ আমারই বিছানায়। যিনি আমার হাজবেন্ডের এক্স গার্লফ্রেন্ড।  


নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনের ভয়টা যে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। চারপাশটা স্তব্ধ হয়ে গেছিল। প্রতিবাদ তো দূরে থাক কথা বলার শক্তিই হারিয়ে ফেলেছিলাম। মেহেদী বা তার আপু আমার পাশে ছিল কি না তাও আমার মনে নেই। এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে গেছিলাম।


যখন জ্ঞান ফিরলো তখনও আমার পাশে কেউ ছিল না। রাত তখন শেষের দিকে, সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেকে বলী দিবো আর কারো পথের কাটা হয়ে থাকব না। তাই রুম আটকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যারও চেষ্টা করলাম কিন্তু শেষ মুহূর্তে রাজু (প্রতিবেশী সম্পর্কে ভাইপো হয়) পা দুটি তার কাধে তুলে নিয়ে বাচিয়ে দিলো আমার নষ্ট জীবন।


আবার সেন্সলেস হয়ে গেলাম। সকালে যখন সেন্স ফিরলো তখন ননদ আর মেহেদী দুই পাশে বসে আছে, নিপা (খালতো ননদ ) দূরে দাড়িয়ে আছে।


মেহেদীর বোন আমাকে বুঝালো যেন এসব নিয়ে আর ঝামেলা না বাড়াই তাহলে মেহেদী আর আমার ডিভোর্স করিয়ে দিবে। আর আমাকে এমনভাবে মেহেদীর জীবন থেকে সরাবে কেউ আসল সত্যি জানতেও পারবে না।


আবার আমার বাবাকেও কল করে বলা হলো আমি পরোকিয়া করে ধরা পড়েছি তাই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। বাবা মায়ের তুলনা হয়না তাই আমি না বলতেও বাবা তার একটা কথাও বিশ্বাস করে নি বরং থানায় যাওয়ার কথা বলল।


কিন্তু আমিই বাবাকে অনেক অনুরোধ করলাম থানায় না যাওয়ার জন্য। আরো বললাম যে সামান্য বিষয় নিয়ে মান অভিমান , এ নিয়ে যেন ঝামেলা না করে। 


যাইহোক তারা চলে যাওয়ার পর মেহেদীকে শুধু একটা প্রশ্নই করেছিলাম, "আমার ভালোবাসায় কমতি কোথায় ছিল?" কিন্তু সামান্য এই প্রশ্নের উত্তর আমি আজও পাই নি।


এরপর থেকে একই ছাদের নিচে থাকি ঠিকই কিন্তু ভালোবাসাটা আর ছিল না। অফিসে গেলে সারাক্ষন ফোন বিজি পেতাম তাই ফোনে অটো কল রেকর্ড চালু করে দিলাম। সারাদিন পর বাসায় ফিরে সে যখন শান্তির ঘুম দেয় আমি তখন চুপি চুপি তার ফোন নিয়ে সারাদিনের প্রেমালাপের রেকর্ডিং কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে শুনি আর চোখের পানি ফেলি। 


রেকর্ডিং এর কিছু কথা এমন ছিল ' তিথি আমার জীবনের একটা বোজা হয়ে দাড়িয়েছে। আমি তোমার সাথেই সুখী, আর তোমার সাথেই সুখী হতে চাই। তুমি চলে আসো, বাকীটা আমি সামলে নিবো।' মেয়েটার কথা আর নাই বা বললাম। একজন স্ত্রীর পক্ষে এসব কথা শুনে হজম করে নেয়া খুবই কষ্টকর। 


এখন জুয়া খেলার নেশা হয়ে গেছে তার, কিছু বললেই খারাপ ব্যবহার আর মারধর তো আছেই। তবে মা বাবার সামনে সে কখনোই তার আসল রূপ দেখায় নি। এদিক থেকে আমি তার কাছে ঋণী। আমার মা বাবা এসব জানতে পারলে কষ্ট পাবে। এই মানুষগুলোকে আর কষ্ট দিতে চাই না; অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে এরা।


হ্যা এভাবেই মানিয়ে নিচ্ছি আমি। মানুষটাকে আবার ফিরিয়ে আনতে মানিয়ে নিচ্ছি, এছাড়া বাচার আর কোনো রাস্তা নেই। জানি ও ফিরবে না বা তার আশঙ্কা নেই। তবুও মরিচীকার পিছনে ছুটি।


এভাবেই কাটিয়ে দিচ্ছি দিনগুলো। এভাবেই একদিন সব না পাওয়ার কষ্ট, অভিমানগুলো নিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাবো। তবুও আল্লাহর কাছে শেষ চাওয়া, মৃত্যুর আগে যেন একটু সুখের মুখ দেখি।


এমন অনেক অনেক কষ্টের গল্প পড়ুন আমাদের ওয়েব সাইটে।