ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস | ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

 চাপা কষ্টের গল্প

চাপা কষ্টের গল্প

অফিস থেকে বেরোতেই একটা চিকনা পাতলা লোক সামনে এসে বললো, 

- নবনী ম্যাডাম আপনাকে যেতে বলেছে। ম্যাডাম তো অসুস্থ, এখন হাসপাতালে ভর্তি। 


- বললাম, আপনার মেডামকে তো আমি চিনি না। আর নবনী কে? 


এবার ড্রাইভার তার মোবাইল থেকে একটা ছবি বের করলো। আমি তাকিয়ে দেখি পার্কে যে মেয়েকে প্রতিদিন ফলো করতাম সেই মেয়েটাই হাসিখুশি মুখে জন্মদিনের কেক কাটছে। নিশ্চয়ই ছবিটি তার জন্মদিনে তোলা হয়েছে। কিন্তু সে কীভাবে আমার অফিসের ঠিকানা জানলো? 


- এর নাম নবনী, আমি ম্যাডামের ড্রাইভার। 


- সে আমাকে চেনে কীভাবে? 


- কি মুস্কিল, আমি জানি নাকি? 


ড্রাইভারের মুখ দেখে মনে হচ্ছে তিনি তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে নিতে এসেছেন। ম্যাডাম অসুস্থ, নিশ্চিন্তে ছুটি কাটাবেন কিন্তু তা করতে না পেরে নিতে এসেছে আমাকে। 


- আপনি আমাকে কীভাবে চিনলেন? 


- আমি আপনাকে চিনি আপনারও ছবি আছে আমার কাছে। 


লোকটা আরেকটা ছবি বের করলো, পার্কে একটা বেঞ্চে আমি বসে আছি। নিশ্চয়ই ছবিটি পার্কের মধ্যে তোলা হয়েছে, তারমানে নবনীও আমার ভাবসাব বুঝতে পেরেছিল। 


প্রতিদিন পার্কে হাঁটতে গিয়ে নবনীকে আমি ফলো করতাম। হাঁটা শেষে নবনী যখন বাসায় ফিরতো তখন পার্কের বাইরে এসে সে যখন গাড়িতে উঠে বসতো তখন আমি তাকিয়ে থাকতাম। 


মাস খানিক আগে থেকে আমি ভোরবেলা পার্কে হাঁটার অভ্যাস করেছি। অফিস আর বাসা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই, তবুও দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছিলাম। পার্কে তিনদিন হাঁটার পরে নবনীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।

আমি তার প্রতি নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে তাকে দেখতাম আর হাঁটতাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারিনি। এর প্রধান কারণ তার পারিবারিক অবস্থা। 


একদিন আমি মোটামুটি প্রস্তুতি নিলাম তার সঙ্গে কথা বলার জন্য। স্কুল জীবনে কোনো মেয়ের সঙ্গে ভালো করে কথা বলতে না পারা আমার জন্য এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু পার্কে সবাই হাঁটতে আসে আর নবনীর কানে সবসময় ইয়ারফোন গোঁজা থাকতো। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, তার সঙ্গে সঙ্গে পার্ক থেকে বের হবো তারপর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কথা বলবো। 

কিন্তু বাহিরে এসে যখন দেখি সে বিশাল দামী একটা গাড়ির মধ্যে ঢুকছে। তখন আর সাহস করে কথা বলতে পারিনি। 


সত্যি বলতে তারপর থেকে আর কথা বলতে চেষ্টা করিনি, কিন্তু প্রতিদিন নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে তাকে দেখতে ভুল করতাম না। 


গাড়ি ব্রেক কষলো। 

ইউনাইটেড জেনারেল হসপিটাল, গুলশান, ঢাকা। 


আমি গাড়ি থেকে নামলাম, ড্রাইভার কাকে যেন কল দিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 


- একটু অপেক্ষা করেন, ম্যাডামের বান্ধবী এসে আপনাকে নিয়ে যাবে। 


আমি নিজেকে আরেকটু পরিপাটি করলাম। যেন কারো বাড়িতে এসেছি। অথচ যার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি সে এই হাসপাতালে ভর্তি। ঠিক কি কারণে ভর্তি হয়েছে সেটাও তো জানি না। 


একটু পরে একটা মেয়ের সঙ্গে আমি উপরে উঠে এলাম৷ কেবিনে ঢুকে দেখি সেখানে নবনী শুয়ে আছে তার পাশে আরেকটা মেয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে নবনী হাসিহাসি মুখ করে বললো, 


- কেমন আছেন আপনি? 


- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন? 


- আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনাকে কষ্ট করে ডেকে আনলাম সেজন্য ক্ষমা করবেন। 


- না না সমস্যা নেই। 


নবনীর দুই বান্ধবী এবার বিদায় নিয়ে চলে গেল। মনে হচ্ছে আগেই ঠিক করা ছিল যে আমার প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রস্থান করবে। 


- বসুন, আমার কাছেই বসেন। 


- আপনার কি হয়েছে? 


- বলবো, বলার জন্যই ডেকেছি আপনাকে। প্রায় তিন চারদিন ধরে ভাবছি আপনাকে ডাকবো। কিন্তু সাহস হচ্ছিল না। 


- আজকে হয়ে গেল? 


- হ্যাঁ, কারণ আগামীকাল শুক্রবার। আপনার তো ছুটির দিন তাই আজকে রাতটা আমার সঙ্গে যদি গল্প করেন তাহলে সমস্যা হবে না। 


- একটা প্রশ্ন করি? 


- জ্বি করেন। 


- আপনি আমার অফিস চিনলেন কীভাবে? 


- তেমন আহামরি কিছু নয়, একদিন আপনাদের অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে দেখি আপনি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছেন। আপনার সঙ্গে আরেকটা মেয়ে ছিল, আমার ভিষণ রাগ হচ্ছিল। গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাকিয়ে ছিলাম, তারপর আপনি সেই মেয়ের সঙ্গে অফিসে প্রবেশ করলেন। 


- ওর নাম সুমনা, আমার কলিগ। 


- হ্যাঁ জানি, বিবাহিতা মেয়ে। 


- আমাকে কি শুধু গল্প করার জন্য ডেকেছেন? 


- না, আমার নিজের ব্যক্তিগত কিছু কথা বলবো। আর আপনাকে দিয়ে আমি একটা কাজ করাবো। বলতে পারেন নিজের স্বার্থে। তবে এই কাজটা আমি অন্য কারো সাহায্য নিতে পারতাম ঠিকই কিন্তু আমি নিতে চাই না। 


- কারণ আমি অপরিচিত তাই? 


- অনেকটা তাই, তবে আপনি বেশ সহজসরল। 


- কীভাবে বুঝলেন? 


- আপনি সবসময় পার্কে হাঁটতে গিয়ে আমাকে লুকিয়ে দেখার চেষ্টা করতেন। আপনার ধারণা আমি কিছু বুঝতে পারিনি, তাই মনে মনে হয়তো নিজেকে চালাক ভাবতেন। 


- সেরকম কিছু না। 


- আমি একটা ছেলেকে ভালবাসি। 


এবার আমার মুখের ভাব পরিবর্তন হয়ে গেল। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম সেটা লুকানোর চেষ্টা করবো কিন্তু পরে আর করলাম না। শুধু নবনীর পরবর্তী কথা শোনার জন্য তার মুখের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করলাম। 


- সে গরীব ছিল, দুই বছরের সম্পর্ক আমাদের। ঢাকায় পড়াশোনা করতো। কিন্তু একটা সময় তার কথা বাবা জানতে পারে। আমার বাবা আমার সঙ্গে অনেক ঝামেলা করে, এমনকি শিহাবকে এই শহর ত্যাগ করতে বাধ্য করে। 


- শিহাব কে? 


- আমি যাকে ভালোবাসি। আজ সাত মাস ধরে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। তার এক বন্ধুর কাছে শুনলাম সে তার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। বাবা তাকে বেশ কিছু টাকা দিয়েছে। তাই পড়াশোনা বাদ দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে, হয়তো উপায় ছিল না। কারণ টাকার লোভ উপেক্ষা করে নিজের জীবন বিলিয়ে দেবার মতো ঘটনা সিনেমায় ঘটে কিন্তু বাস্তবে নয়। 


- আমাকে কি করতে হবে? 


- শিহাবের কাছে একটা চিঠি পৌঁছে দিতে হবে। আর সেটা তার হাতে গিয়ে দিয়ে আসতে হবে। 


- এই কাজটা করার জন্য আপনি আমার মতো সম্পুর্ণ একটা অপরিচিত মানুষকে বেছে নিলেন? 


- কারণ, শিহাব আপনাকে দেখে প্রশ্ন করবে যে আমার সঙ্গে আপনার পরিচয় কি? তখন আপনি তাকে সবকিছু সত্যি সত্যি বলবেন। তারপর সে বেশ অবাক হয়ে যাবে কারণ আমার মতো একটা মেয়ে অপরিচিত কাউকে অনুরোধ করে তার কাছে পাঠিয়েছি এটা তাকে ভাবাবে। আমি চাই সে আমাকে নিয়ে ভাবুক। শুধুমাত্র এই ক্ষুদ্র কারণে আপনাকে দিয়ে আমি কাজটা করতে চাই। আমি আপনাকে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবো সেই গাড়িতে করে যাবেন। 


- তার গ্রামের বাড়ি কোথায়? 


- নাটোর। আমি সম্পুর্ণ ঠিকানা লিখে দেবো। 


- চিঠি কি লেখা আছে?


- হ্যাঁ, আপনি একটু পড়ুন তো। 


- আমি পড়া ঠিক হবে? আপনাদের ব্যক্তিগত কিছু থাকতে পারে। 


- সেরকম কিছু নেই বলেই পড়তে বলছি। 


অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি চিঠিটা চোখের সামনে নিলাম। 


19-9-8-1-2


আশা করি ভালো আছো। লেখার মতো বেশি শক্তি নেই বলে খুব স্বল্প কিছু লিখে চিঠি শেষ করতে চাই। তুমি আমাকে বলেছিলে, তোমাকে হারানোর যে কষ্ট সেটা খুব দ্রুত কমে যাবে। কিন্তু এখনো সেই কষ্ট আমার মধ্যে দিনদিন বাড়ছে। তোমাকে দেখার একটা তৃষ্ণা আমি দিনরাত মনের মধ্যে লালন করছি। প্রতিদিনই ভাবতাম তুমি হুট করে এসে আমাকে এই শহর থেকে বহুদূর নিয়ে যাবে। কিন্তু আমার স্বপ্ন গুলো ঘুমের সঙ্গে হারিয়ে যায়। 


ভালোবাসার প্রচুর শক্তি নিয়ে মানুষ পৃথিবীতে আসে। আমি তোমাকে পাবার জন্য আজও কিন্তু অপেক্ষা করছি। তবে এতদিন বাড়িতে ছিলাম আর এখন হাসপাতালে। বাবা তার চোখের সামনে আমাকে দিনরাত হাসপাতালের বেডে দেখে বেশ নরম হয়ে গেছে। আমার ধারণা এখন যদি তুমি বাবার কাছে এসে দাঁড়াও তাহলে বাবা তোমাকে নিয়ে ভাবতে পারে। সে চিন্তা করবে তুমি আমার অসুস্থতার খবর শুনে ছুটে এসেছ। তখন আমার হাতটা তোমার মুঠোয় বন্দী করে দেবেন এই স্বপ্ন আপাতত দেখে যাচ্ছি। 


সোমবার আমার অপারেশন। চিঠি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় আসবে। তোমার সঙ্গে বলবো বলে আমি আমার মনে একটা কথামালার লাইব্রেরি তৈরি করেছি। অপারেশন শেষে যখন তুমি আমি একসঙ্গে থাকবো, তখন আমার মনের লাইব্রেরি থেকে কিছু কিছু কথা তুমি পড়বে। সামন-সামনি সব কথা হবে, চিঠি ক্ষুদ্র থাকুক। 


তোমার, 

14-1-2-15-9


চিঠি পড়া শেষ করে আমি নবনীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার ধারণা আমি কিছু বলার আগেই সে কিছু বলবে। এমনিতেই এই শিহাব ব্যাটার কথা শুনে আমার সকল আশা ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। 


- আপনি আগামীকাল সকাল আটটার দিকে এখানে আসবেন। আমি আপনার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে রাখবো। সেই গাড়িতে করে আপনি চলে যাবেন। 


- তাহলে চিঠি আপনার কাছে রাখুন, আগামীকাল সকালে নাহয় নিয়ে যাবো। 


- না, আপনার কাছে থাক। কারণ আপনি বাসায় গেলে আপনার মনে হতে পারে অপরিচিত একটা মেয়ের জন্য কেন শুধু শুধু ছুটির দিনটা নষ্ট করবো। তাই আসার প্রতি অনিচ্ছা জাগ্রত হবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু চিঠি নিয়ে গেলে এটা নিয়ে আবার আসতে চাইবেন। 


আমি বেশ অবাক হলাম। মেয়েটার কণ্ঠ অনেক স্বাভাবিক। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে যে তার কী কারণে অপারেশন হবে? কিন্তু সেই সাহস নিজের মধ্যে পাচ্ছি না। 


- আপনি এখন বাসায় চলে যান, আমার ড্রাইভার আপনাকে পৌঁছে দেবে। আর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বেন, মনে রাখবেন সকাল আটটা। 


- ঠিক আছে। 


হাসপাতাল থেকে বের হলাম। কেমন একটা স্বপ্ন আর কল্পনার মতো মনে হচ্ছে সবকিছু। যেন আর একটু পরে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠবো, টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে ডগডগ করে পানি খাবো। 


রাত বারোটার দিকে একটা অপরিচিত নাম্বার দিয়ে কল এলো। রিসিভ করতেই বুঝতে পারি কলটা নবনীর। 


- আপনি এখনো জেগে আছেন? আপনাকে তো তাড়াতাড়ি ঘুমাতে বলেছিলাম। 


- তারপর কাঁচা ঘুম ভাঙ্গাবেন? 


- হিহিহিহি, আমি সেটাই ভাবছিলাম। 


- আপনার কাছে আমার নাম্বারও আছে? 


- অস্বাভাবিক কিছু না। যাইহোক, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে কল দিলাম। 


- বলেন। 


- যদি এমন হয়, কালকে সকালে আপনাকে আর নাটোরে শিহাবের কাছে যেতে হলো না। আপনার হাতে আমার ওই চিঠি তাকে দেবার আর কোনো দরকার নেই। তাহলে কেমন হবে? 


- সেটা কীভাবে সম্ভব? 


- আপনি খুঁজে বের করুন। 


- এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে যদি রাতে আমি ঘুমাতে না পারি তাহলে? তারপর তো সকালে ঠিক সময়ে যেতে পারবো না। 


- সমস্যা নেই। 


কল কেটে গেল। আমি সাহস করে কলব্যাক করে দেখি নাম্বার বন্ধ। রহস্যময় একটা মেয়ে, এরকম রহস্যময় মেয়ে কোনদিন দেখেছি কিনা জানিনা। 


চিঠি নিয়ে ভাবতে লাগলাম। নবনী কি আমার সঙ্গে মিথ্যা বলেছে? আমাকে পরীক্ষা করে হয়তো দেখতে চায় আমার পরিস্থিতি কেমন হয়। আর সেজন্য হয়তো বলেছে কালকে চিঠি নিয়ে না ও যাওয়া লাগতে পারে। 

কথাগুলো ভেবে বেশ শান্তি পেলাম। তারমানে নবনী আমাকে ভালোবাসে। আর সেটা আমাকে এমন ভাবে বোঝাতে চাইছে। 


কখন ঘুমিয়ে গেছিলাম জানি না। ঘুম থেকে উঠে দেখি ছয়টা বেজে গেছে। আজকে আর ফজরের নামাজ পড়তে পারলাম না। শুক্রবারের মতো এমন বরকতময় একটা দিনের শুরুতে ফজরের নামাজ পড়তে পারলাম না। আফসোস। 


হাসপাতাল পৌঁছাতে সাড়ে আটটা বেজে গেল। নবনীর কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন থমকে গেলাম। বেশ লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। গতকাল যে মেয়েটা আমাকে নিচতলা থেকে উপরে নিয়ে এসেছিল সে আমার সামনে এসে যা বললো তা হচ্ছে, 


ভোর পাঁচটার দিকে নবনী মারা গেছে। রাত তিনটা থেকে বেশি অসুস্থ হয়ে যায়, তারপর থেকে অস্থিরতা বাড়তে থাকে। অসুস্থার সঙ্গে লড়াই করে তার সেই লড়াই শেষ হয় ভোরবেলা পাঁচটার দিকে নবনীর জীবনাবসান দিয়ে। 


আমি বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসলাম। পকেট থেকে গতকাল রাতে নবনীর দেওয়া চিঠি বের করে কুচিকুচি করে ছিঁড়লাম। তারপর ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে রাস্তায় নেমে গেলাম। 


চিঠি সকাল বেলা ছিঁড়তে হতে পারে সেই রহস্যের সমাধান আমি পেয়েছি। নবনী যখন মারা গেছে তখন শিহাব সাহেবকে এই চিঠি পৌঁছে দেবার কোনো অর্থ নেই। কিন্তু নবনী কি বুঝতে পেরেছিল সে মারা যাবে, সেজন্য কি রাতে ঐ কথা বলেছে? 


বাসায় ফিরলাম জুম্মার আজানের সঙ্গে সঙ্গে। মোটেই ইচ্ছে করছিল না। আজ বহুদিন ঢাকা শহরে অনেক পথ হাঁটলাম। ব্যস্ত এই শহরের মাঝে বুকের মধ্যে তীব্র কিছু কষ্ট নিয়ে একা একা হাঁটার তৃপ্তি পেয়েছি। নবনী হারিয়ে গেছে, গতকাল দেখা তার সেই স্বাভাবিক চোখ বন্ধ হয়েছে চিরতরে। 


তাকে আমি নিজেও বলতে পারলাম না যে তার মতো আমিও মনের মধ্যে কথামালার লাইব্রেরি তৈরি করেছি। তাকে বলার জন্য আমারও অনেক কিছু ছিল, কিন্তু বলতে পারলাম না। 


----- সমাপ্ত -----


গল্পঃ- কথামালার লাইব্রেরি। 

লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।


ভালোবাসার কষ্টের আরও একটি গল্প।