মেয়েদের ইসলামিক গল্প | শিক্ষামূলক ইসলামিক গল্প

 ইসলামিক গল্প ও ঘটনা

ইসলামিক গল্প ও ঘটনা

কখনো আমার চোখ ব্যথিত শরীরের অন্যকোন অঙ্গ কেউ দেখতে পায়নি। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি। যখন একটু বুঝতে শিখেছি বাবা

তখন আমায় তার কাছে ডেকে একটি কথা বলেছেন,


“মা তুমি আমার একমাত্র মেয়ে। শুনেছি একটি মেয়ে একজন বাবার জাহান্নামের দরজা বন্ধ করার অস্ত্র। কিন্তু কখনো কখনো কোন মেয়ের জন্য তার বাবাকে জাহান্নামে যেতে হয়। তুমি নিশ্চয়ই চাও না তোমার জন্য আমি জাহান্নামী হই।„


আমি তখন বলেছিলাম,


“না বাবা, আমি কখনো এমন কোন কাজ করবো না যে তোমার এই পৃথিবীর সাথে সাথে ওপারেও কষ্ট পেতে হয়।„


সেদিন থেকে শুরু ইসলামের পথ অনুসরণ করা।বাবা একটি মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়। শুরু হলো আমার লেখা পড়া ওখানে। মওলানা পাশ করার পর বাবা আমাকে বলল,


“মা তোমাকে এখন আমরা একজন সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে চাই, তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে আমরা পাত্র দেখতে শুরু করবো„


আমি মাথা নিচু করে বলেছিলাম,


“তোমরা যা বলবে সেটাই হবে।„


এরপর শুরু হলো আমার জন্য পাত্র দেখা।একজন ভালো পাত্র পাওয়া গেল। নাম মিজান রহমান। মায়ের থেকে যতটুকু যেনেছি ছেলেটা নাকি খুব আল্লাওয়ালা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম, করে সবর্দা সত্য কথা বলে। বাবা খুব খুশি এমন একজনের হাতে আমাকে দিতে পারবে ভেবে। কিন্তু আমার বাবার খুশি বেশি দিন থাকলো না। কিছু এলাকার বাজে ছেলে আমায় আচমকা তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তাদের বন্ধুদের মাঝে একজন সত এবং নিষ্ঠা মানুষ ছিল যিনি তাদের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে আমাকে সহিসালামতে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু আমার বিয়েটা ভেঙে যায়। 

তারা নাকি কোন ধর্ষিতা মেয়েকে তাদের ছেলের বউ করবে না। তখন খুব ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে বলতে, “আমি ধর্ষিতা নই, আমি ধর্ষিতা নই।„


কিন্তু পারিনি শুধু মুখ বুঝে সহ্য করে ছিলাম সেদিন এই সমাজের মিথ্যা অপবাদ আর কটু কথা। এভাবে প্রায় এক বছর কেটে যায়। অনেক সমোন্ধ আসে কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনা শুনে আবার ফিরে যায়। হঠাৎ একদিন সেই লোকটার আগমন ঘটে আমাদের বাড়িতে। যিনি আমাকে ওই বদমাশদের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিল। সে সরাসরি আমার বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বাবা জানতে চায়, সে কেন আমাকে বিয়ে করতে চায় যেখানে সবাই আমাকে নষ্টা বলে। তখন তার উত্তর ছিল, একমাত্র আমি জানি সেদিন সে ধর্ষণ হয়নি। এবং যারা আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তিনি সেখানে উপস্থিত ছিল। তাই তারও পাপ এবং অন্যায় ছিলো। বাবা সেদিন কি ভেবেছিল জানি না তখনি একজন হুজুর ডেকে তার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দেয়। এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। এখন আমি আর যুবতী নেই, দুই কন্যা এবং তিন ছেলের মা। আমার স্বামী বিয়ের আগে কখনো ইসলামের পথ অনুসারে চলেনি। কিন্তু আমাকে বিয়ে করার পর সে আমার থেকে সব যেনে নিয়েছে এবং ইসলামের পথ অনুসারণ করে চলতে শুরু করেছে। সেই একটি বছর ছিল আমার জীবনের কষ্টের। তারপর কোনদিনই আমাকে কষ্ট পেতে হয়নি আল্লাহর রহমতে। 

না কখনো চোখের জ্বল ফেলতে হয়েছে। যতটুকু ফেলেছি সেটা ছিল সুখের এবং আল্লাহর তায়া’লার কাছে শুকরিয়ার। বড় ছেলের বিয়ে ঠিক করেছে তর বাবা এক মধ্যেবিত্ত পরিবারের মেয়ের সাথে। বিয়ের সব যখন ঠিকঠাক তখন সেই মেয়েকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় এবং তাকে মেরে ফেলার চেষ্টাও করা হয়। তবে আল্লাহর রহমতে সেই মেয়ে বেঁচে যায়।তাকে একদিন হসপিটালে দেখতে যা-ই আমি। তখন দেখতে পাই বহু বছর আগের আমি কে? 

কিন্তু ও যে আমার চাইতেও অসহায়, অভাগী। আমি তো নিজের ইজ্জত রক্ষা করতে পেরেছিলাম। কিন্তু মেয়েটা তো তাও পারেনি।

চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি তাই ওখান থেকে চলে আসছিলাম।

ঠিক তখনি শুনতে পেলাম কেউ বলছে,


“ভাইয়া এখন কি হবে? আমরা কি করবো? মেয়েটাকে বা কি উত্তর দিবো জ্ঞানফেরার পর।আমার তো মনে হয় পাত্রপক্ষ বিয়ে ভেঙে দিবে। মেয়েটা জীবন মরনের সাথে যুদ্ধ করে যদি বেঁচেও যায় তবুও তো ও মরে যাবে। „


আমি একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম এই সেই লোকটা, যে একদিন আমাকে বিয়ে করতে নাকচ করেছিলো এবং তার ফ্যামেলি বলেছিল আমি একজন নষ্টা মেয়ে। তখন আমি তাদের কথার মাঝে বলে উঠলাম, 


“চিন্তা করবেন না এই বিয়ে ভাঙবে না। আর আমার ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে হবে। আমি কথা দিলাম। আমার বাবা-মা এমন শিক্ষা দেয়নি কোন অসহায় মেয়েকে মাঝ রাস্তায় একা ফেলে চলে যেতে। তার অসহায়ের সময়।„


সেদিন আমি বাড়িতে ফিরে আমার উনাকে সব খুলে বললাম। তিনি সব শুনে শুধু বলল,


“তুমি কোন চিন্তা করো না সব ঠিক হবে, এবং আমি আমাদের ছেলেকে বোঝাবো।„


ঠিক তখন আমাদের ঘরের দরজার বাহির থেকে ঘরে এসে আমার ছেলে আমার পা দু'টো জড়িয়ে বলল,


“ মা তুমি আমার সেই মা, যে কিনা কখনো সন্তানকে একটি ধমক দিয়ে কথা বলেনি। কিনবা গায়ে হাত তোলেনি। তুমি সেই মা যে কিনা এই দুনিয়ায় সুখের সাথে সাথে কি করে আখেরাতে সুখ পাবো তার খোঁজ দিয়েছে। সেই মা আমাকে একটি কেন হাজারটা আদেশ করলে আমি মানতে বাধ্য। হ্যাঁ মা আমি করবো ওই মেয়েকেই বিয়ে। „


আমি খুশিতে আমার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর মেয়েটা সুস্থ হবার পর খুব ছোট্ট আয়োজনে বিয়েটা সম্পুর্ন হলো। কিন্তু আমার উনি কেন যানি তার বুকে জমা কিছু কথা সেই লোকটাকে না বলতে পেরে হাসপাশ করছিল

অবশেষে তাকে বলেই দিলো,


“একদিন আপনাদের মেয়ের জায়গায় আমার স্ত্রী ছিল। তবুও তো আমার স্ত্রী নিজের ইজ্জত নিয়ে ঘরে ফিরে ছিল যার সাক্ষী আমি নিজেই।

কিন্তু আপনি আর আপনার পরিবার আমার স্ত্রিকে সেদিন অপমান করেছিলেন, কটু কথা বলেছিলেন। দেখুন আজ মহান আল্লাহ তায়া’লা সেই জায়গায় আপনাদের দাঁড় করিয়েছে। আমার স্ত্রীর চাইতেও করুন অবস্থায় ছিলেন আপনারা।

ভাববেন না আমি এগুলো আপনাকে অপমান করতে বলছি। শুধু মনে করিয়ে দিলাম কখনো কোন অসহায় মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিবেন না। কে জানে সেই জায়গায় আপনাকে কখনো না পরতে হয়। আর হ্যাঁ এখানে আপনার ভাইয়ের মেয়ে না-হয়ে আপনার মেয়েও হতে পারতো।„


সে এই কথা গুলো একদমে বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো এবং সেখান থেকে চলে এলো আমার কাছে। আমি মুগ্ধ নয়নে তাকে দেখলাম।

সত্যি আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে এটা মানতেই হবে। সেটা কারো সাথে সাক্ষ্যত হোক বা বিচ্ছেদ।


সমাপ্তি


-আজ_অথবা_কাল

-সমুদ্রিত_সুমি


এমন আরও অনেক ইসলামিক গল্প পড়ুন।