হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প
-গল্পঃ_মিষ্টি_বউ
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
বাসর ঘরে বউ আমার সেজেগুজে বসে আছে। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। ডর ভয় কিছুই নেই মনে। দুরুদুরু মনে,, আরে ধুরর কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলি। খুশি খুশি মনে বউয়ের কাছে এসে বললাম..........
আমিঃ ইয়ে মানে একটা কথা ছিলো বলার?
বউঃ জ্বি বলুন?
আমিঃ আপনি তো আমার বউ তাইনা?
বউঃ মানে?
আমিঃ না আসলে আমি জানতে চাচ্ছি আপনি কবুল বলেছিলেন নাকি সবেভুল এ কথা বলেছিলেন?
বউঃ কি যা তা বলছেন হুমম?
আমিঃ আরে রাগবেন না প্লিজ, আসলে গত পরশু আমার এক বন্ধু বিয়ে করেছিলো, এ কথা আমরা বন্ধুরা সবাই জানতাম?
বউ মাথার ঘোমটা সরিয়ে অগ্নিশর্মা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললাে.......
বউঃ তাতে কি হয়েছে?
আমি আমতা আমতা করে বললাম.......
আমিঃ বাসর রাতে বউ বন্ধুকে বললো, একদম আমার কাছে আসবেন না, আমি আপনার বউ না। বন্ধু
বেচারা পুরাই টাসকি খেয়ে যায়। পরে ব্যাপারটা এমন হলো মেয়েটা নাকি কবুল না বলে সবেভুল বলেছিলো৷
এজন্যই আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম?
বউঃ ওই মিস্টার এবার কিন্তু ভালো হচ্ছে না। আমি কবুল না বললে কি এমনি বাসর ঘরে লম্বা ঘোমটা
টেনে আপনার জন্য অপেক্ষা করতাম?
কথাটা বলেই লজ্জায় মুখ ঢেকে দিলো। আমি বউকে বললাম.......
আমিঃ একটা কথা বলবো?
বউঃ বলেন?
আমিঃ আমি আর তুমি আবার কবুল বলে বিয়েটা করি?
বউঃ নাহ, এসব কি বলছেন, আমি তো আপনাকে নিজের বর ভেবে কবুল বলেছি?
আমিঃ তাহলে সমস্যা কি, চলুন না আর একবার বিয়ে করে ফেলি?
বউঃ ভারি মুসকিলে ফেললেন তো?
আমিঃ প্লিজ না করবেন না?
বউঃ আমি আপনাকে সরাসরি না করে দিলাম?
কথাটা বলে মেয়েটা পাশে ফিরে শুয়ে পড়লো। এই যাহ বেশি বলে ফেলেছি। কিন্তু বউ যদি এখন ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে আমি বিড়াল মারবো কিভাবে??? আমি বউকে বললাম........
আমিঃ বউ ও বউ?
বউঃ হুমম বলেন?
আমিঃ তুমি কি ঘুমিয়ে পড়বে এখন?
বউঃ তো কি করবো এখন? আপনার এসব গাঁজাখুরি গল্প শুনবো?
আমিঃ এই আমি তো মজা করছিলাম, এসব তো
মনের কথা না।
বউঃ আপনার এমন মজা আমার ভালো লাগে নি।
আমিঃ আচ্ছা এই কানে ধরলাম আর কখনো এমন মজা করবো না।
বউঃ হুম ঠিক আছে।
আমিঃ আচ্ছা বউ একটা কথা বলার ছিলো?
বউঃ জ্বি বলুন?
আমিঃ আমার সেই সবেভুল বন্ধুটা বলে তার বউ নাকি তাকে অবহেলা করে, আর এই জন্যই নাকি সে স্বর্গের সুখ অনুভব করে। আমারও ইচ্ছে করে অবহেলা
কাকে বলে সেটা জানতে। আমাকে কি বুঝিয়ে বলতে পারবে? আমিও স্বর্গের সুখ পেতে চাই??
বউঃ হুমম খুব পারবো। আপনি দশ মিনিট অপেক্ষা করুন, আমি অবহেলার উদাহরণ সহ বিস্তারিত
বুঝিয়ে দিচ্ছি?
এই বলে বউ বাহিরে চলে গেলো।। আমি ভাবলাম কি সারপ্রাইজ টা না জানি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। খুশিতে আমি আত্মাহারা।
দশ মিনিট, বিশ মিনিট, এক ঘন্টা, তিন ঘন্টা, পাঁচ ঘন্টা পেরিয়ে গেলো, এখন পর্যন্ত বউয়ের কোনো পাত্তা নেই।
কি যে রাগ লাগছে আমার। বউ আমার বাসর রাতটাই
ধ্বংস করে দিলো। সকালে বোনের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।।দরজা খুলতেই ও আমাকে টেনে আম্মুর রুমে নিয়ে আসলো। তারপর বউকে দেখিয়ে বললো..........
অরিনঃ দেখ ভাইয়া ভাবিরা জমজ। এখানে ভাবির জমজ বোনটা শুয়ে ঘুমাচ্ছে?
বুঝতে আর বাকি রইলো না এটা জমজ বোন না।। এটা আমারই গুনধর বউ। রাগ সামলাতে না পেরে সজোরে বউকে আদর দিলাম শক্ত হাতে। বউ একটা ঝাঁকুনি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।আমাকে দেখে লাফিয়ে উঠে বসলো আর বললো......
বউঃ এইইই আপনি?
আমিঃ হুমমম আমি?
বউঃ কিন্তু আমাকে মাটিতে ফেল দিলেন কেনো?
কি বলবো,,কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।। কারন আম্মু ওর হাতে মানে ক্ষমতা ওর হাতে। জোট সরকারকে আমি বিরোধী দল কি করতে পারবো। কিন্তু করতে হবে।ভাবতে ভাবতে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। এক গ্লাস শরবত বানিয়ে নিয়ে আসলাম আর বললাম......
আমিঃ আঁখি, আঁখি?(আমার বউয়ের নাম)
আঁখিঃ এই আমার নাম ধরে ডাকলি কেনো?
আমিঃ তুই না আমার আদরের বউ?
আঁখিঃ বাহহ বাহহ এতো পীরিত নিশ্চয়ই কোনো
কারন আছে?
আমিঃ তুই যে কি বলিস, মতলব করবো কেনো বল। তাছাড়া তোকে সেই কবে থেকে ভালো লাগতো। সারাক্ষণ তোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম?
আঁখিঃ এই মুখ ছুটাইস না, তুই তাকাইতি নিশির দিকে?
এই মেয়ে দেখি আমাকে আগে থেকেই ফলো করেছে। ফাপর দিয়েও কাপড় ছিঁড়লো না। উল্টা ধরা খেয়ে গেলাম। তারপর আমি বললাম.......
আমিঃ ধুরর কি যে বলিস, তুই তো আমার সব,আমার আদুরী?
আঁখিঃ হইছে হইছে কি করতে হবে সেটা বল?
আমিঃ এই শরবত টা খা, তোর জন্য বানিয়ে এনেছি?
আঁখিঃ এতো ভালোবাসিস আমাকে?
আমিঃ হুমম তুই বুঝিস না?
আঁখিঃ হুমম বুঝতে পারছি, দে গ্লাসটা?
হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে চিৎকার দিয়ে বলতে শুরু করলো........
আঁখিঃ আন্টি ও আন্টি?
আমিঃ এই থাম থাম আম্মুরে ডাকিস কেনো?
আম্মুঃ কি হইছে রে মা?
আঁখিঃ আন্টি তোমার ছেলে আমারে কি যেনো খাওয়াইতে চাইছিলো এই শরবতে মিশিয়ে?
আম্মুঃ সত্যি? অপুর্ব বল এমন করছিস?
আমিঃ না আম্মু কিছুই নেই গ্লাসে?
আম্মুঃ তাহলে তুই খা?
এই সেরেছে,এটা খেলে তো টয়লেটে গিয়ে বসে থাকতে
হবে। তারপর আমি বললাম.......
আমিঃ না আম্মু একটু আগে অনেক পানি খেলাম?
আঁখিঃ আন্টি খাবে না দেইখেন। কারন এটার ভিতরে কিছু একটা দিছে?
দুজনের চিৎকার চেঁচামেচিতে অবশেষে শরবত টা বাধ্য হয়ে খেলাম আমি। খাওয়ার ঘন্টা খানেকের মধ্যে একশন শুরু। গুনে গুনে সতেরো বার টয়লেটে গেলাম। শেষবার টয়লেটে গিয়ে দেখি টয়লেটে তালা দেওয়া। আম্মু নানার বাড়ি গেছে৷নিশ্চয়ই বজ্জাত মেয়ের কাজ।
তারপর আমি বললাম.........
আমিঃ এই টয়লেটে তালা দিছে কে?
আঁখিঃ আমি?
আমিঃ তুই ভয় পাস না আমাকে, আবার বলিস আমি?
আঁখিঃ তোরে? আর ভয়? হিহিহিহি?
আমিঃ হাসি থামা, আর চাবি দে?
আঁখিঃ না, হাসিও থামাবো না চাবিও দিবো না। হিহিহিহি?
কথাটা বলে আরো বেশি করে হাসতে লাগলো। এদিকে আমার যায় যায় অবস্থা। তারপর আমি বললাম......
আমিঃ দে না চাবিটা?
আঁখিঃ তাহলে বল আমার পিছনে আর লাগবি না?
আমিঃ আচ্ছা, এবার চাবিটা দে আমার পেটে খুব গন্ডগোল লাগছে। মনে হয় প্যান্ট নষ্ট হয়ে যাবে?
আঁখিঃ এই নে, এবারের মতো দিলাম। আমার সাথে লড়তে আসলে তোর অবস্থা খারাপ করে ফেলবো?
চাবিটা নিয়ে টয়লেটে গেলাম। ইশ আর একটু লেট হলে প্যান্ট নষ্ট হয়ে যেতো। মেয়েটাকে জব্দ করতে হবে। আজ টয়লেটে যেতে যেতে আমার অবস্থা শেষ। দাঁড়ানোর শক্তিও পাচ্ছি না।৷ ভাবতেছি আর মনে মনে বলতেছি, "সখী রাতে আসো দেখাবো মজা। টয়লেট থেকে বের হয়ে দেখি দরজার কাছে ও দাঁড়ানো।। বের হতেই আঁখি আমাকে বললো.........
আঁখিঃ ভিতরে বসে বসে কি ভাবলি আমাকে জব্দ করবি?
আমিঃ না না তা কেনো করবো?
আঁখি জানলো কেমন করে আমি বসে বসে ওকে জব্দ করার কথা ভাবতেছি। মেয়েটা কি তাহলে কালা জাদু জানে। আঁখি বলে উঠলো........
আঁখিঃ দেখ আমার সাথে পাঙ্গা দিতে আসবি না৷
মেয়ে মানুষের সাথে পাঙ্গা দিতে আসলে তার
ফল ভালো হয় না?
আমিঃ থাক বাবা তুই তোর মতো আমি আমার মতো?
আঁখিঃ জ্বি না, আমি যা বলবো তোকে তাই শুনতে হবে?
আমিঃ ইশশ আমার ঠেকা পড়ছে?
আঁখিঃ করবি না তো, ঠিক আছে তোকে আমি দেখে নিবো?
সেদিন রাতে বসে খাবার খাচ্ছি সবাই।। খাবারটা বেশ মজা হইছে। আহহ কি মজা। বিশেষ করে গরুর গোস্ত বেশি মজা হইছে। তাই আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম.....
আমিঃ আম্মু গরুর গোস্ত কে রান্না করেছে?
আম্মুঃ আঁখি, কেনো?
আমিঃ একটুও মজা হয় নি তাই?
মজা কিন্তু ঠিকই হয়েছে। কিন্তু আঁখি রান্না করেছে তাই ইচ্ছে করে ওকে রাগানোর জন্য বললাম মজা হয় নাই।
আঁখিঃ মজা হয়নি খাওয়ার কি দরকার, কেউ তো আর খেতে জোর করছে না। আন্টি আপনার কেমন লাগছে?
আম্মুঃ হুমম অনেক মজা হইছে?
আঁখিঃ আন্টি তোমার কাছে ভালো লাগলেই হবে?
স্বাদের রান্না রেখে উঠতে ইচ্ছে করছে না।। কিন্তু ইজ্জত এর একটা ব্যাপার সেপার আছে। তাই উঠে রুমে চলে গেলাম। আজকে নিজের কম্বল আলাদা এনেছি। আজকে আর আমাকে জ্বালাতে পারবে না। কিন্তু যা ভাবলাম কার উল্টো হলো। ও জগে করে পানি আনলো। ভাবছিলাম আমার কম্বল টা ভিজাবে। একি সে নিজের কম্বল টা ভিজালো। আরে আঁখি নিজের কম্বল নিজেই ভিজালো। মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি। যাইহোক আমারটা তো আর ভিজায় নি। কম্বল ভিজিয়ে বাহিরে চলে গেলো। এবার দেখি আম্মুকে নিয়ে এসেছে। রুমে আসার পর আঁখি বললো............
আঁখিঃ আন্টি দেখো তোমার ছেলে কি করেছে?
আম্মুঃ কি করেছে?
আঁখিঃ আমার কম্বলে পানি ঢেলে দিছে?
কথাটা বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করেছে আর আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভেংচি কাটছে। আল্লাহ কোথায় এসে পড়লাম। তারপর আমি বললাম........
আমিঃ আম্মু আমি ভিজাই নি, ও নিজের টা নিজে ভিজাইছে?
আম্মুঃ থাক আর বলতে হবে না, যা দুজন এক কম্বল নিয়ে ঘুমা?
কিছু করার নেই। একই কম্বলের নিচে দুজনকে শুইতে হলো। কিন্তু কম্বলটা গত কালকের মতো আজকেও দখল করে নিলো। আমি আম্মুকে ডাকতে চাইলাম....
আমিঃ আম্মু ও আম্মু....
পুরোটা বলার আগে আঁখি আমার মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো.......
আঁখিঃ বুইরা পোলা আম্মুরে কেনো?
আমিঃ দেখামু কতটুকু কম্বল দিছস?
আঁখিঃ ওওও তাই, দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা, তোর কষ্ট করতে হবে না আমিই ডাকি। আন্টি, আন্টি?
আমিঃ ওই চুপ চুপ আর করমু না?
আঁখিঃ কানে ধর?
আমিঃ না?
আঁখিঃ আন্টি?
আমিঃ ধরছি তো?
আঁখিঃ এবার ঘুমা। কিছু করার চেষ্টা করবি তোর
খবর আছে?
কিছু বললাম না,সারাদিনের শরীর ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়লাম। প্রতিদিনের মতো আজকেও মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভাঙতেই দেখি আঁখির একটা পা আমার উপর দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ইচ্ছে করছে পা টা ভেঙে দেই। কিন্তু শতহোক আমারই তো বউ। তাই আমি ওর উপরে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল বেলায় ওর চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙলো। আম্মুকে ডাকছে............
আঁখিঃ আন্টি আন্টি দেখে যাও তোমার ছেলে কি করেছে?
আমি আবার কি করলাম, কিছুই বুঝতে পারছি না। আবার কোন মতলব আটলো দুষ্টু টা। আঁখি আবার বলতে শুরু করলো.......
আঁখিঃ আন্টি আন্টি দেখে যাও তোমার ছেলে বিছানা নষ্ট করে ফেলছে। তাও এই বুড়ো বয়সে?
আম্মুঃ কি করেছিস এটা?
আমিঃ কিছু করিনি তো?
আম্মুঃ তাহলে বিছানা ভেজা কেনো?
আমিঃ ও ভিজাইছে?
আম্মুঃ ও ভিজাইলে ওর জামা ভেজা থাকবে তোর লুঙ্গি ভেজা কেনো?
আঁখিঃ আন্টি আগে বলতে তোমার ছেলের এই অভ্যাস আছে, তাহলে আমার ভাতিজার পেমপার্স নিয়ে আসতাম। পড়ে ঘুমাইতো?
আমিঃ তুই কিন্তু বেশ কথা বলিস?
আঁখিঃ ইশশ বিছানা নষ্ট করতে পারবা কেউ বলতে পারবে না?
কথাটা বলতে বলতে দুজনে রুম থেকে বের হয়ে গেছে।
যাওয়ার আগে কি যেনো ইঙ্গিত করে আঁখি। কিন্তু কি সেটা বুঝলাম না। তাহলে কি সত্যি সত্যি বিছানা নষ্ট করে দিলাম। খাটের নিচ থেকে সেন্ডেল বের করতে গিয়ে দেখি পানির জগ,, তাও আবার খালি৷ তার মানে বজ্জাতটার কাজ। কিসের পাল্লায় পড়লাম রে ভাই।
ভাবতে ভাবতে গোসল করে স্কুলের জন্য রেডি হতে হতে ৮ঃ৩০ বেজে গেছে। বিয়ের পর প্রথম স্কুল আজ।
দুজনে রিকশায় করে যাচ্ছি। রিকশাটাও যেনো ওর দখলে। কোনো রকম বসে আছি। রিকশাওয়ালা বলে উঠলো.........
রিকশাওয়ালাঃ মামা গার্লফ্রেন্ড নাকি?
আমিঃ গার্লফ্রেন্ড হলে তো ব্রেকআফ করে বেঁচে যাইতাম?
রিকশাওয়ালাঃ তাহলে কি?
আমিঃ এইটা আমার দজ্জাল বউ?
আঁখিঃ ওই তুই আমারে দজ্জাল বললি কেনো?
আমিঃ তাহলে কি বলবো?
আঁখিঃ মামা কও তো আমার মতো সুন্দরী মেয়ে ওর মতো বাদর মার্কা ছেলে পাইবো?
রিকশাওয়ালাঃ না পাইবো না?
হায়রে কপাল,,, রিকশাওয়ালা মামাও ওর পক্ষ নিলো। কোথায় যাবো। নাহ আর না। এবার ওরে আমি মজা দেখাবো। ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে হঠাৎ আঁখি বললো......
আঁখিঃ ওই তুই ওই মেয়ের দিকে তাকালি কেনো?
আমিঃ কই না তো?
আঁখিঃ হ তাকিয়ে ছিলি, দেখ কারো দিকে তাকাবি না।
নইলে তোর খবর আছে?
আমি অন্য কারো দিকে তাকালে ও অনেক রাগ করে। তাহলে অন্য কারো সাথে প্রেম করতে দেখলে কি অবস্থা হবে। ও ইয়েস দাঁড়াও মেয়ে তোমার প্রতিশোধ
আমি নিচ্ছি।
স্কুলের সেরা ১০ সুন্দরীদের মাঝে আঁখি নিজেও আছে।
আর কাটা দিয়েই কাটা তুলতে হবে। প্রিয়াও সেরা সুন্দরীদের মাঝে একজন। তবে প্রিয়ার সাথে আজ থেকে প্রেম করবো। প্রিয়া আমাকে আগে থেকে পছন্দ করে। ওর সাথে রিলেশন করবো, এই মেয়ের সাথে সংসার করা যাবে না। স্কুলে গিয়ে প্রিয়ার সাথে বসে ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলছি আর হাসাহাসি করছি দুজনে। আরেকজন লুচির মতো ফুলতেছে। এটাই তো চেয়েছিলাম।। যাক বাঁচা গেলো স্কুলের কেউ জানে না আমাদের যে বিয়ে হয়েছে।
স্কুল ছুটির পর আবার রিকশায় করে বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু এবার আর কোনো কথা নেই। মাথা নিচু করে বসে আছে। বাসায় গিয়ে নিশি আম্মুকে বলে উঠলো.........
আঁখিঃ আন্টি আন্টি বাসায় যাবো?
আম্মুঃ কেনো বাসায় যাবে কেনো। তোমার আব্বু আম্মু তো এখনো হজ্জ থেকে আসে নি। তুমি একা বাড়িতে। না না তুমি এখানেই থাকো?
আঁখিঃ না আন্টি আমি বাসায় যাবো?
আম্মুঃ পাজিটা কিছু করেছে?
আঁখিঃ না, এমনিতেই বাসায় যাবো?
আম্মুঃ কেথাও যাওয়া হচ্ছে না, কাপড় ছেড়ে গোসল করে খেতে আসো?
আম্মুর কথায় বাধ্য হয়ে থাকছে। আমার কি, গেলে তো ভালো হতো বেঁচে যেতাম। সাবধানে থাকতে হবে, আবার কোন মতলব আটছে জানি না। সেদিনের মতো খাবার খেয়ে রুমে গেলাম ঘুমানোর জন্য। খাবারের টেবিলে ওকে দেখা যায়নি। রুমে এসে দেখি আঁখি আলাদা কম্বল নিয়ে শুয়ে আছে। আজ কম্বল ভিজায়নি। যাক বাবা আজ শান্তিতে ঘুমানো যাবে। অনেক রাত হয়ে গেলো, কিন্তু ঘুম আসছে না কেনো? ওর দুষ্টুমিতে একটু রাগ হলেও বেশ ভালোই লাগতো। ভালোবাসা টা মিস করছি।
আজ আর ঘুম আসলো না। মাঝ রাতে ওর পা আমার উপর দেয়নি। আমার উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে।। যাক বাবা ঘুমিয়ে পড়ি,,সকাল সকাল উঠতে হবে নয়তো আবার কোনো কান্ড করে বসে।
সকালে উঠতে উঠতে ৮ টা বেজে গেছে। কাজ সেরেছে আজ আবার কি করেছে, বিছানা চেক দিলাম, না ভেজা না। আয়নার সামনে গেলাম,না মুখেও কিছু নেই।
কেনো জানি খুব খারাপ লাগছে, মনে হচ্ছে কি যেনো নেই। সবকিছুর মাঝেও কি যেনো একটা নেই। কিছুই ভাবতে পারছি না। গোসল করে কলেজের জন্য রেডি হয়ে ৯টার সময় খেতে বসেছি,কিন্তু ওকে দেখলাম না।
কেনো জানি খুব জানতে ইচ্ছে করছে দুষ্টুটা কোথায়...
আমিঃ আম্মু আঁখি কোথায়?
আম্মুঃ ও তো চলে গেছে?
আমিঃ চলে গেছে মানে?
আম্মুঃ হ চলে গেছে, কলেজে নাকি কি কাজ আছে?
আমিঃ আচ্ছা আমি তাহলে যাই?
রিকশা করে কলেজে যাচ্ছি, আজকে কেনো জানি মনে হচ্ছে রিকশা চলছে না। রাস্তাও বুঝি ফুরোচ্ছে না। কি কাজ থাকতে পারে ওর? না তেমন কোনো কাজ তো নেই। আর প্রাইভেট স্যারের তো আজকে পড়াও নেই। তবে কি কারো সাথে দেখা করতে আসছে। মেজাজ টা বেশ খারাপ হচ্ছে।
ক্লাসে ঢুকে যেই সিন দেখলাম তা দেখে মাথা গরম হয়ে গেলো। আমার বউ অন্য ছেলের সাথে হাসি তামাশা করছে। কেমন কাছে গিয়ে কথা বলছে। তাহলে কি ওদের মাঝে কিছু আছে? ওরা কি একে অপরকে......
না না, কি সব ভাবতেছি আমি। আর ও চলে গেলে তো আমার খুশি হওয়ার কথা। আমার এমন লাগছে কেনো। কেমন যেনো মনে হচ্ছে, যেমন টা প্রিয় কোনো জিনিস হারালে লাগে।। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে গিয়ে আঁখিকে বললাম.......
আমিঃ আঁখি শোন?
আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মনে হলো আমি যেনো বিরক্ত করছি ওকে। আমি বললাম....
আমিঃ আঁখি এদিকে শোন?
আঁখিঃ কি হইছে?
আমিঃ না কিছু না?
বলেই চলে আসলাম। আমি কি কম নাকি,,গিয়ে প্রিয়ার সাথে আমিও হাসি তামাশা শুরু করে দিলাম। অনেকক্ষণ ধরে হাসি তামাশা করছি কিন্তু আঁখি কোনো রিসপেন্স করলো না৷ আজকে আর ওর মাঝে রাগ দেখলাম না। আজ আর চোখ গরম করলো না, বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে।তাহলে কি সত্যি ওই ছেলেটার সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে।
কেনো জানি আজ আর ক্লাসে মন বসছে না। যেই মেয়ে দিনে হাজার বার তাকাতো সেই মেয়ে আজ একবারো তাকালো না। স্কুল ছুটির পর বাসায় যাবো কিন্তু রিকশা পাচ্ছি না, তাই দুজনে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি আর মাঝে মাঝে কথা বলছি....
আমিঃ ওই ছেলেটা কে রে?
আঁখিঃ কেও না?
আমিঃ ওও, পছন্দ করিস?
আঁখিঃ তাতে তোর কি?
আমিঃ না এমনিই,, তোদেরকে ভালো মানাবে?
আঁখিঃ জানি। ও কালকে ওর আম্মুকে আমার কথা বলবে?
আমিঃ এতো ফাস্ট তোরা?
আঁখিঃ হুমমমম?
আমিঃ আমার উপর রেগে আছিস?
আঁখিঃ কেনো রাগ করবো কেনো?
আমিঃ না এমনি মনে হলো,, আজকে যে বিছানা ভিজালি না, দুষ্টুমি করলি না?
আঁখিঃ কে বলেছে করিনি, আজকে ওর পিঠে কিল দিছি?(ওই ছেলেটার)
আমিঃ ও আচ্ছা। তাড়াতাড়ি চল, কেনো জানি খারাপ লাগছে?
আজকে ও অন্য কারো সাথে দুষ্টুমি করছে। কিছু ভালো লাগছে না। বলতে ইচ্ছে করছে আঁখি তুই আমার সাথে দুষ্টুমি করবি, আর কারো সাথে না। কিন্তু সেই সুযোগটা হয়তো আর নেই।
বাসায় গিয়ে খাবার শেষ করে দেখি আঁখি ওর কাপড় গুছাচ্ছে, তাই আমি ওকে বললাম......
আমিঃ কিরে কই যাস?
আঁখিঃ কালকে বাড়ি যামু?
আমিঃ কেনো?
আঁখিঃ তোগো বাড়িতে থেকে তোরে ডিস্টার্ব করে লাভ নেই। কালকে আব্বু আম্মু আসবে?
আমিঃ তুই কোথাও যেতে পারবি না?
আঁখিঃ আমাকে যেতেই হবে?
কেনো জানি জোর করতে পারলাম না। কারন এই বাসা থেকে যাওয়ার কারনটা যে শুধু আমি। খুব কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতর কেমন জানি করছে, কাঁদতে পারছি না। আম্মুর কোলে মাথা রেখে কাঁদতেছি, আম্মু বলছে.......
আম্মুঃ কিরে কি হইছে?
আমিঃ আম্মু অনেক পেট ব্যাথা করছে?
সত্যি কথাটা বলতে পারলাম না যে আঁখির জন্য খারাপ লাগছে। আম্মু আমার হাতে একটা ঔষধ দিয়ে বললো..
আম্মুঃ ঔষধ টা খা?
আমিঃ না খাবো না, এমনিতেই চলে যাবে?
রাতে না খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আঁখি আমার পাশে অন্য একটা কম্বল নিয়ে শুয়ে আছে। কেউ কিছু বলছি না। কিছুক্ষণ পর আমি বলতে শুরু করলাম........
আমিঃ আঁখি ওই আঁখি ঘুমিয়ে গেছিস?
আঁখিঃ কি হইছে বল?
আমিঃ কালকে সত্যি তুই চলে যাবি?
আঁখিঃ হহহ থাইকা কি করমু বল?
আমিঃ হহহ তাইতো?
কথাটা বলে কাঁদতে শুরু করলাম। আঁ ঁখি আমার কান্না দেখে বললো.......
আঁখিঃ ওই পাগল কাঁদিস কেনো?
আমিঃ না কাঁদি না এমনি?
আঁখিঃ কান্না থামা আমি কোথাও যামু না?
আমিঃ তাহলে বল কালকে যাবি না?
আঁখিঃ কাঁদলে চলে যাবো?
আমিঃ না কাঁদমু না?
আঁখিঃ তুই একটা পাগল। তোরে রেখে কই যামু?
আমিঃ হহ তাহলে সকালের ও ছেলে কে ছিলো?
আঁখিঃ ও আমার খালাতো ভাই, আমার মেঝো খালার ছেলে?
আমিঃ আমি কিছু জানি না, তুই কারো সাথে কথা বলবি না?
আঁখিঃ নিজে যে প্রিয়ার সাথে....?
আমিঃ তোরে রাগানোর জন্যই তো?
আঁখিঃ হহ আমিও বুঝছি। তাইতো খালাতো ভাই আর আমি এই প্ল্যান করছি?
আমিঃ ইউ দুষ্টু?
আঁখিঃ না দুষ্টি?
আমিঃ তাহলে বল আর দুষ্টুমি করবি না?
আঁখিঃ না করুম না?
সেদিন একটা কম্বল ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দুজন এক কম্বল এর নিচে,, আমার গায়ের উপর ও পা দিয়েছে আর আমি ওর গায়ের উপর হাত দিয়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। কেনো জানি খুব ভালো লাগছে। নিজেকে পরিপূর্ণ লাগছে। যাক বাঁচা গেলো, কালকে থেকে আর দুষ্টুমি করবে না, আর চলেও যাবে না। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল বেলায় আবারো আঁখির চিৎকার শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো।
আঁখিঃ আন্টি আন্টি দেখে যাও, দেখে যাও তোমার ছেলে কি করেছে?
আম্মুঃ কি করেছে মা?
আঁখিঃ এই দেখো আম্মু তোমার ছেলে আমার কামিজ পড়ে বসে আছে?
হায় হায় আমি কামিজ পড়লাম কিভাবে। হাইরে আমার ইজ্জত বুঝি এবার সত্যি সত্যিই গেলো। না না এটা আমি পড়িনি।। এটা নিশ্চয়ই অন্য কেউ করেছে।। মানে আমার দুষ্টু বউয়ের কাজ ☺☺।
জীবনে দুষ্ট মেয়ে দেখেছি,, আমি সিওর আমার বউয়ের চাইতে দুষ্টু মেয়ে পৃথিবীতে এখনও জন্ম নেয়নি।
*************সমাপ্ত*************