হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প | রোমান্টিক লাভ স্টোরি গল্প

 রোমান্টিক প্রেমের গল্প

রোমান্টিক প্রেমের গল্প

গল্পঃ_হঠাৎ_বিয়ে (পর্ব_০১)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


""আজকে আমার হবু দুলা ভাইয়ের সাথে আমারই বিয়ে হতে যাচ্ছে। কথাটা শুনতে খুব অবাক লাগলেও এটাই হচ্ছে আমার সাথে। 


আমার যার সাথে আজকে বিয়ে হতে যাচ্ছে, তার সাথে আজ আমার বড় বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। 


আমার বড় বোনের নাম ইরা।। ইরা আপু আমার আপন চাচাতো বোন। আমাদের চাচাদের মধ্যে আমি আর ইরা আপু সবার বড় এবং বিবাহ যোগ্য।


ইরা আপু আমার দুই বছরের বড়!! দেখতে পরীর মতো সুন্দর। তার রুপের কাছে সবকিছু হার মানবে।


ইরা আপুর সাথে যার বিয়ে হবার কথা ছিলো তিনি এক দেখাতে পছন্দ করেন এবং বিবাহ করতে সম্মতি দেন।


শুনলাম লোকটার নাকি বিশাল বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের আর্থিক অবস্থার তুলনায় আমাদের আর্থিক অবস্থা তেমনএকটা মানানসই না। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে,উনি বড় পরিবারের ছেলে।


আপুকে যেই দিন উনি দেখতে এসেছিলো, সেদিন আমি জানালা দিয়ে হাল্কা উকি দিয়ে দেখেছিলাম। সত্যি লোকটা খুব সুন্দর এবং হান্ডসাম ছিলো। লোকটা আপুকে দেখেই পছন্দ করেন এবং বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলেন। আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম আপুর এত বড় ঘরে বিয়ে হবে।। তাই আমিও খুব মঝা করছিলাম। সামনের সপ্তাহ আপুর আর অরন্যের বিয়ে। 


"'ওহ আপনাদের তো ঐ লোকটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলোনা। উনার নাম অরন্য বয়স ২৫। বাবার বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আছে সেটাই দেখা শোনা করেন।


শুনেছিলাম ঢাকায় উনাদের অনেক গুলো বাড়ি আছে। আর টাকা পয়সার নাকি কোনো অভাব নেই।


যেহেতু সামনের সপ্তাহে ইরা আপুর সাথে অরন্যের বিয়ে

তাই আমি আগে থেকেই ঠিক করে রাখলাম। হলুদে কি পড়বো, বিয়েতে কি পড়বো, বউ ভাতে কি পড়বো। চিন্তা করেছিলাম আপুর বিয়েতে অনেক মঝা করবো। কতো প্ল্যান করেছিলাম,সব প্ল্যান বিয়ের দিন মাটি হয়ে গেছে। কারন সকাল বেলায় কাকি এসে বললো..........


কাকিঃ~কিগো ইরার মা ইরাকে তো কোথাও খুজে পাচ্ছি না??


বড় কাকির কথা শুনে আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আর কিছুক্ষণ পর পাত্র পক্ষ আসবে আর এখন ইরা আপুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইরা আপু কোথায় গেলো কেউ বুঝে উঠতে পারেনি।


কারন ইরা আপুর সাথে কোনো ছেলের সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। থাকলে অবশ্যই কেউ না কেউ জানতো। তবে আপু কোথায় গেলো এই প্রশ্ন সবার মনে বিদ্ধ করতে লাগলো।


ইরা আপুকে সারা বাড়ি খুঁজা হলো।। কিন্তু তার কোনো হুদিশ মিললো না। সবাই ভাবছে ইরা আপুর হয়তো প্রেমিক ছিলো,,তার হাত ধরে পালিয়েছে। কিন্তু এই কথা জানা জানি হলে মান সম্মান আর থাকবেনা। তাই কি করবে সবাই ভেবে উঠতে পারছিলো না। সবাই উপায় খুঁজতে লাগলো। হটাৎ করে কাকা বাবাকে বলে উঠলো...........


কাকাঃ~অনন্যা তো বিবাহ যোগ্য। অনন্যাকে বিয়ে দিলে কেমন হয়। মান সম্মান বাঁচানোর এছাড়া 

কোনো উপায় নেই?


যেহেতু পাত্র যোগ্য ছিলো। আর তাছাড়া আমি দেখতে এতোটা সুন্দর না। এবং আমার মতো দেখতে খারাপ মেয়ের জন্য এর থেকে ভালো পাত্র পাওয়া অসম্ভব। তাই আমার বাবা কাকার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। 


বাবার এমন অন্যায় সম্মতি দেখে আমার মাথায় যেনো

আকাশ ভেঙে পড়লো। কারন আমি আর ইরা আপু রাত আর দিন। আমি দেখতে এতোটা সুন্দর না! তারা মেনে নিবে বলে মনে হয় না।


কিন্তু বাবা আর চাচার প্রচন্ড চাপে ইরা আপুর যায়গায় আমাকে কনে সেজে বসতে হয় বিয়ের পিরীতে।


লাল টুকটুকে শাড়ী বারি গহনা পড়ে আমি কনে সেজে বসে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে বর পক্ষ চলে আসবে।জানিনা তারা এসে কি করবে? কি হবে এর পরিনতি?


এসব কথা ভাবতেই নিজের ভিতরে অসজ্য যন্ত্রণা হতে লাগলো। কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। মাথাটা ঘুরতে লাগলো। তবুও কোনো মতে নিজেকে সামলে স্থির হয়ে বসে রইলাম। হটাৎ কানে বাজতে লাগলো বর এসেছে বর এসেছে বলে চিৎকার করতে লাগলো। 


বরকে বরণ করা হলো। পাত্র পক্ষের সবাই কনে দেখার জন্য রুমে প্রবেশ করলো। পাত্র পক্ষ আমাকে দেখে কনে পাল্টানো হয়েছে বলে হৈচৈ শুরু করলো। কিন্তু আমার বাবা আর কাকারা বললো "কনে ঠিকই আছে। পাত্র পক্ষ কে চাপ দিলো বিয়ে করার জন্য না হয় খুব বড় ঝামেলা হবে। পাত্রপক্ষ চাপে পড়ে আমাকে বিয়ে করিয়ে নিতে রাজি হলো। 


°°নানান ঝামেলার পর অবশেষে আমার বিয়েটা সম্পুর্ন হলো।। আজকে ইরা আপুর যায়গায় অরন্যের বউ হলো অনন্যা। জানিনা তাদের মনে আমার জন্য ক্ষোভ জন্মে আছে কিনা। জমলেই বা কি করার আছে আমার।যা হবার তাই হয়েছে। আমিতো চাইনি এমন কিছু হোক আমারও তো অরন্য ভাইয়ার প্রতি খুব খারাপ লাগছে।।কারন উনি আসছে পরী বিয়ে করতে আর বিয়ে করলো শ্যাওরা গাছের পেত্নী।


নিজের জন্যেও খুব খারাপ লাগছে! কারন আমি চাইনি আমার বিয়েটা এমন জোর পুর্বক হোক। 

দেখতে খারাপ হলেও কখনো এটা নিয়ে আপসোস করিনি।। কারন নিজেকে সবদিক দিয়ে পারফেক্ট করে তোলার আপ্রাণ চেস্টা করেছি।


আরে এই বিয়ে নিয়ে আট/দশটা মেয়ের মতো আমারও অনেক স্বপ্ন ছিলো। আর আজকে চোখের সামনে আমার সব স্বপ্ন গুলো ভেঙে গেলো। নিজের অজান্তেই বুকের ভিতর হু হু করে উঠলো। আর চোখ দিয়ে বৃষ্টি নামতে লাগলো।


আশে পাশের সবাই বলাবলি করতে লাগলো👉👉ইরা অনন্যার ভাগ্য খুলে দিয়ে গিয়েছে। তা নাহলে অনন্যা এমন ছেলে কখনো বিয়ে করতে পারতো নাকি।


এসব কথা শুনে আমার মন আরো খারাপ হয়ে গেলো। ভাগ্যের কাছে এভাবে হেড়ে যাবো ভাবতেই পারিনি😔 অবশেষ বিয়ে সম্পুর্ন হলো।


এখন কনে বিদায় দেওয়ার পালা।আমার বাবা আমাকে অরন্যের হাতে তুলে দিলো। আমাকে অরন্যের হাতে তুলে দেওয়ার সময় তার মুখের দিকে তাকানোর সাহস ফেলাম না। লজ্জায় আমি মুখ নিচু করে রাখলাম। এবং কিছুক্ষন পর গাড়ীতে তুলে দিলো। হুমম আমি বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু আট দশটা মেয়ের মতো স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছি না। হাজারো স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছি। ভাগ্যের পরিহাস এমন হবে বুঝতে পারিনি।

অবশেষে ব্যাস্ত শহরের পথ পেড়িয়ে আমি শ্বশুর বাড়ি পৌঁছালাম। শ্বশুর বাড়ির বাকি সবাই আমাকে দেখে কানাকানি করতে লাগলো,কি সর্বনাস করেছে অরন্য। এক তো মধ্যবিত্ত ঘরে বিয়ে করেছে,,তার মধ্যে মেয়ে হলো অসুন্দর। মেয়ে দেখার সময় সবার চোখ কপালে ছিলো নাকি। এই মেয়েকে অরন্যের সাথে মানায় না। এমন সর্বনাস অরন্য নিজ হাতে কেনো করলো।


এসব শুনে মনটা আরো ভাঙ্গতে লাগলো। কোনো রকম সবাই তুলে আমাকে ঘরে নিলো। খেয়াল করলাম ঘরটা ভীষন সাজানো গোছানো। চারদিকে ফুলের সুভাস ছড়াচ্ছে। আজ এই ঘরে ইরা আপু আসার কথা ছিলো। ভাগ্যের নিলা খেলায় আমি আসলাম।


ঘরে নিভু নিভু আলোতে চুপ করে বসে রইলাম। হয়তো এই সময় অন্য মেয়েরা বসে থাকে স্বামীর অপেক্ষায়। আর আমি বসে আছি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত_এর অপেক্ষায়। হটাৎ খেয়াল করলাম অরন্য ঘরে ঢুকেছে।


উনাকে দেখে আমার পুরা শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো। জানিনা কি কথার সম্মুখীন হতে হবে আমাকে? এসব ভেবে ভয়ে কুঁকড়ে যেতে লাগলাম আমি। লক্ষ করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ করে.........


-গল্পঃ_হঠাৎ_বিয়ে (পর্ব_০২)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


ঘরে নিভু নিভু আলোতে চুপ করে বসে রইলাম। হয়তো এই সময় অন্য মেয়েরা বসে থাকে স্বামীর অপেক্ষায়। আর আমি বসে আছি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত_এর অপেক্ষায়। হটাৎ খেয়াল করলাম অরন্য ঘরে ঢুকেছে।


উনাকে দেখে আমার পুরা শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো। জানিনা কি কথার সম্মুখীন হতে হবে আমাকে? এসব ভেবে ভয়ে কুঁকড়ে যেতে লাগলাম আমি। লক্ষ করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ করে.........


হটাৎ খেয়াল করলাম আমার শরীর ভীষণ কাঁপতেছে। উপরে তাকালাম মনে হলো ফ্যান আমার উপরে পড়ে যাবে। সবকিছু উল্টাপাল্টা লাগছে। আমার এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর চোখ বন্ধ করে ধপাস করে শুয়ে পড়লাম।


আস্তে আস্তে শরীর নিস্তেজ হয়ে কাঁপতে লাগলো। কষ্ট হতে লাগলো খুব। হটাৎ খেয়াল করলাম কেউ আমার হাত ধরেছে। হাত ধরে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে।। কিন্তু চোখ খোলার মতো শক্তি আমি পাইনি।


এবার মনে হয় কেউ আমার প্রেসার মাপছে। কিন্তু চোখ খোলার মতো শক্তি আমি পাইনি। আস্তে আস্তে আরো নিস্তেজ হতে লাগলাম।। অনুভব করলাম আমার পাশে এখন কেউ নেই।


নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো।।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম কেউ আমার মুখে কিছু একটা দিয়ে বলতেছে,

এই যে আপনি এটা খেয়ে নিন। আপনার প্রেসার খুব নেমে গিয়েছে! একটু কষ্ট করে খান হা করুন।


কথা গুলো শোনার পর হা করার মতো শক্তি পাচ্ছিলাম না। কোনো ভাবে নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে হা করলাম। খেয়াল করলাম মুখে পানি দিচ্ছে। পানি টা মিষ্টি। বুঝতে বাকি রইলো না চিনির পানি। তাই নিজের মধ্যে শক্তি জুগিয়ে পানিটা খেলাম। খাওয়ার পর একটু জিম ধরে শুয়ে রইলাম। এবার শরীরে কিছুটা শক্তি পাচ্ছি চোখটা খোলার মতো। 


চোখ খুলে লক্ষ করে দেখলাম অরন্য আমার পাশে বসে আছে কিছু খাবার নিয়ে।। একটু তারাহুরো করে বসতে নিলাম। উনি আমাকে বললেন........


অরন্যঃ~এত তাড়াহুড়া করার কিছু হয়নি। আস্তে আস্তে উঠুন আর উঠে এগুলো খেয়ে নিন। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে সকাল থেকে কিছু খাননি। তাই প্রেসার কমে গেছে আপনি এগুলো খেয়ে নিন??


উনার কথা শুনে মনে মনে বললাম....... 👇👇


সকাল থেকে আমার উপর দিয়ে যা গেছে,, এরপর গলা দিয়ে খাবার নামে নাকি। তবে আমি অনেক খেতে পারা একটা মেয়ে। সারাদিন কিছু না কিছু খেতাম। সত্যি বলতে এই মহুর্তে আমার পেটে প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে 

তাই সামনে পোলাও রোস্ট দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। সামনে পেয়ে খেতে লাগলাম।। হটাৎ করে খাবার গলায় বাঁধলো। 


তখন উনি আমার সামনে এক গ্লাস পানি ধরলো।।আমি পানি টা নিয়ে এক নিশ্বাসে খেয়ে পেললাম। উনি আমাকে কি ভাবছে সেটা আমার দেখার প্রয়োজন মনে করছি না! আমি আমার আপন মনে খেতে লাগলাম।

খাবার শেষ করে আমি রিলাক্স মুডে শুয়ে পড়লাম।


আর উনি খাবার প্লেটটা টেবিলের উপর রাখতে গেলো। যাক লোকটাকে যতটা খারাপ ভাবছি ততটা খারাপ না!এটা ভেবে মনটা শান্ত হলো। হুট করে উনি বললো..


অরন্যঃ~আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন। না ঘুমালে আপনার সাথে একটু কথা ছিলো??


👉👉আমি নড়ে চড়ে বসে বললাম.........


আমিঃ~না আমি ঘুমায়নি। কেনো কি বলবেন 

বলুন??


👉👉উনি এবার গম্ভীর গলায় বললেন........


অরন্য:~সত্যি বলতে সবার চাপে পড়ে আমি আপনাকে বিয়ে করেছি। আমি আপনার বোন ইরাকে প্রথম দেখাতে ভালোবেসে ফেলেছি। সে যায়গায় আপনাকে কেনো জানিনা। চাইলেও মানতে পারছিনা। আপনাকে আমি আঘাত দিয়ে কথাটা বলতে চাইনি। আমি সোজা সাপ্টা ছেলে যা বলি সরাসরি। না মানারও একটা কারন আছে। আশা করি আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি আর সে কারনটা বুঝতে পেরেছেন???


উনার কথা শুনে কেনো জানিনা তেমন কোনো খারাপ লাগলো না। কারন টা আর কি হবে কারন টা হলো আপু সুন্দর আমি অসুন্দর। আমি তো আগেই বুঝেছিলাম আমার বিয়ে টা আট/দশটা মেয়ের মতো হয়নি। তাই উনাকে জবাব দিলাম..........


আমিঃ~আপনাকে জোর করে আমাকে মানতে হবে না। আমি নিজেও চাইনি আমার এভাবে বিয়ে হোক। বিয়ের দিন ইরা আপুকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।কোথায় গেলো কেউ বলতে পারলো না। আর আপুর কোনো রিলেশন ছিলো এটা কারো জানা ছিলো না।

এই সময় কি করবে কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। আর ঐ বাড়িতে আমি ছাড়া আর কোনো বিবাহ যোগ্য মেয়ে ছিলোনা। তাই সবার জোরাজুরিতে আমি রাজি না হয়ে পারলাম না??

|||

আমি জানি ইরা আপুর তুলনায় আমি কিছুই না। আপু সুন্দর আমি অসুন্দর? কিন্তু এটা নিয়ে আমার কখনো আপসোস হয়নি। আমি নিজেকে সব সময় পারফেক্ট ভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভাগ্যের কাছে এভাবে হেরে যাবো বুঝতে পারিনি।

|||

আপনি চিন্তা করবেন না,আমি কখনো জোর করে কিছু করবো না। সময় টা একটু পার হতে দিন,আপনি চাইলে আমি আপনাকে ডিবোর্স দিয়ে দিবো???


আমার কথা শুনে উনি বেশ চমকে গেলেন। উনি হয়তো আশা করেননি আমি এমন কিছু বলবো। কিছুক্ষণ স্তব্দ

থেকে উনি উত্তর দিলেন........


অরন্যঃ~সে যাই হোক সময় সব বলে দিবে।। আপাতত আমি আপনাকে মেনে নিতে পারবোনা। আপনি এ বাড়িতে এসেছেন মেহমান হিসেবে। আপনার যেনো কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয় টা খেয়াল রাখবো। দয়া করে আমার ভালোবাসা পাওয়ার আশা রাখবেন না।

কারন আমি আপনার বোনকে প্রথম দেখাতে ভালোবেসে পেলেছি???


👉👉আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে জবাব দিলাম.......


আমিঃ~আপনি দয়া করে আমাকে চিরিয়ালের নায়িকা ভাববেন না? আমি আপনাকে জোর করবো না। কিন্তু আপনি আপনার স্ত্রীর সামনে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসি বলবেন সেটা আমি কখনো মেনে নিবো না।

|||

আপাতত ডিভর্সের আগ পর্যন্ত আমি আপনার স্ত্রী আপনি আমার স্বামী।

|||

সুতারাং সম্পর্ক টা ওই ভাবেই দেখবেন। আর আমার সামনে অন্য মেয়েকে ভালোবাসি বলার আগে 

দশবার ভেবে বলবেন। কারন আমি দেখতে অসুন্দর হলেও নিজেকে কখনো ছোট করে দেখি না। এখনো দেখবো না। দয়া করে আমাকে অবলা নারী ভেবে যা ইচ্ছা তা বলে যাবেন না। দোষটা তো আমার ছিলো 

না। আমি তো আপনাকে জোর করে বিয়ে করতে চাইনি। ভাগ্য এভাবে সব উলট পালট করে দিয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিজের জীবন বরবাদ করার মতো মেয়ে আমি নই???


এইবার আমি উনার দিকে খেয়াল করে দেখলাম উনার মুখটা বেশ চুপসে গেছে। গেলেই বা কি। আমি কেনো উনার এসব কথা শুনে নিজেকে ছোট করবো। আর এটা বাংলা সিনেমা না আর আমি নায়িকা সাবানা না।


সুতরাং যতদিন আমি অরন্যের বউ হিসেবে আছি,আমি আমার অধিকার আদায় করে নিবো। তবে সেটা জোর করে নয়! ভালোবাসা দিয়ে। উনি আমার কথা গুলো শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে জবাব দিলেন...............


অরন্যঃ~আমার মন যা চায় আমি তাই বলবো,,আপনি না করার কে? আপনাকে সেই অধিকার দেইনি আমি। নিজের অধিকারের বাইরে কথা বলবেন না। দেখে তো মনে হচ্ছে ছেলে ফাসানোর ব্যাপারে খুব চালু??


উনার কথাটা শুনে মাথায় রাগ উঠে গেলো। তবুও নিজেকে শান্ত করে জবাব দিলাম.......


আমিঃ~আপনাকে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট দিতে বলেছি।। আমার ব্যাপারে মন্তব্য করার অধিকার দিয়েছি নাকি। আপনে যেমন আমাকে বলছেন আমিও আপনাকে বলবো। আর হ্যা এটাকে বলে লেবেল। 

আর হ্যা আপনে যেমন আমাকে তেমনই হতে হবে??


অরন্যঃ~দেখেন আপনি কিন্তু বেশি বকবক করছেন?? আপনাকে দেখে তো প্রথম ভাবলাম কথা বলতে জানেন না। এখন তো দেখছি আপনার মুখ দিয়ে কথার ফুলঝুরি ফুটেছে। আমার সাথে লাগতে আসবেন না??


👉👉আমিও এবার শান্ত হয়ে জবাব দিলাম........


আমিঃ বকবক আপনি শুরু করেছেন। দেখতে অসুন্দর বলে কি ভেবেছেন অবলা নারী। সিরিয়ালের মতো আপনাকে উপরে শুইতে দিবো আর আমি নিছে শুয়ে পড়বো। তা হবেনা মশাই আমার পাশে এসে ঘুমান??


অরন্যঃ~আপনি তো বেশ ডেঞ্জারাস মেয়ে আপনার পাশে আমি ঘুমাবো কেনো??


👉👉আমি ভ্রু টা বেশ কুচকে বললাম.........


আমিঃ~তাহলে কোথায় ঘুমাবেন?


👉👉জবাবে উনি বললেন.....


অরন্যঃ~পাশের রুমে ঘুমাবো? 


👉👉আমি হাসি দিয়ে বললাম.....


আমিঃ~তা হবে না মশাই। আপনে এখানেই ঘুমাবেন??


উনি আমার এই কথা শুনে বেশ অবাক হলেন মনে হয়। কিছুক্ষন চুপ থেকে রাগী ভাব নিয়ে আমাকে বললো...


অরন্যঃ~আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন??


আমিঃ~সে যাই করি আমি ঘুমালাম,তবে রুম ছেড়ে ঘুমানো যাবে না। রুম ছেড়ে ঘুমালে আমি কিন্তু 

আপনার সাথে চলে আসবো??


উনি বেশ চমকিত পুলকিত হয়ে আমাকে বললো......


অরন্যঃ~আপনি তো বেশ নাচর বান্দা। ওকে রুম ছেড়ে যাবো না। আমি নিচে ঘুমাচ্ছি এবার আমায় একটু রেহায় দেন??


👉👉আমি মুচকি হেসে জবাব দিলাম........


আমিঃ~ওকে ভুত মশাই??


👉👉উনি ভ্রু টা কুচকে বললো........


অরন্যঃ~ভুত মশাইটা কে আবার??


👉👉আমি হাসতে হাসতে বললাম.........


আমিঃ~কেনো আপনি??


👉👉উনি অবাক হয়ে বললো.......


অরন্যঃ~এর মধ্যেই আপনি আমার নাম ঠিক করে ফেলছেন??


 আমিঃ~হ্যা করেছি? 


👉👉উনি বিরক্ত হয়ে জবাব দিলেন......


অরন্যঃ~আপনি সত্যি পাগল একটা মেয়ে। সেটা কি আপনি জানেন??


👉👉আমি হেসে তাকে জবাব দিলাম.......


আমিঃ~সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। আমি একটু নাছরবান্দা সবাই জানে। আপনে ঘুমান আর হে ধন্যবাদ এতো কিছু খাওয়াবার জন্য। সবগুলো খাবার আমার প্রিয় ছিলো। শুধু চিনির পানি ছাড়া??


👉👉উনি কিছুটা চুপ হয়ে বললো......


অরন্যঃ~দোহাই লাগে এবার চুপ হন আমাকে 

ঘুমাতে দিন??


আমি হাত দিয়ে মুখ চেপে ইশারা দিলাম ঘুমান। এরপর উনি ঘুমিয়ে পড়লেন।

____

আপনারা হয়তো আমার এ রকম আচরণ দেখে অবাক হচ্ছেন। আমি এমন কেনো করলাম। সত্যি বলতে আমি ছোট বেলা থেকেই এমন নাছোরবান্দা আর পাগলাটে।

পাগলামির ভাবগুলো এতো বড় হওয়ার পরেও যায়নি। তাই পাগলামির সুযোগ পেলেই করে ফেলি। এই যে অরন্যের সাথে সবে মাত্র শুরু করেছি। এরপর যে কত কি হবে তা আস্তে আস্তে জানতে পারবেন।___


যাইহোক সেই দিনের মতো ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে উঠে আমি খেয়াল করলাম উনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। এমন ভাবে নাক ডাকছে মনে হয় ভুমিকম্প হচ্ছে। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে এক গ্লাস 

পানি নিয়ে উনার নাক বরাবর ঢেলে দিলাম। ভুত মশাই খপ করে উঠে বসে বলতে শুরু করলেন...........


-গল্পঃ_হঠাৎ_বিয়ে (পর্ব_০৩)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


যাইহোক সেই দিনের মতো ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে উঠে আমি খেয়াল করলাম উনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। এমন ভাবে নাক ডাকছে মনে হয় ভুমিকম্প হচ্ছে। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে এক গ্লাস 

পানি নিয়ে উনার নাক বরাবর ঢেলে দিলাম। ভুত মশাই খপ করে উঠে বসে বলতে শুরু করলেন........... 


অরন্যঃ~কি হলো। আপনি এভাবে গায়ে পানি দিলেন কেনো। মাথার সব ছিড়ে গেছে নাকি আপনার?


আমি এবার হাসতে হাসতে বললাম.......


আমিঃ~মাথা আমার ঠিক আছে। এমন ভাবে নাক ডাকছেন মনে হয় সাত মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে?? 


লক্ষ করলাম উনি বেশ রেগে আছে আমার কথা শুনে। কিছুক্ষণ দম ধরে বসে থেকে আমাকে বললেন..........


অরন্যঃ~দেখেন এসব মজা আমার একদম পছন্দ না।আর এমন করবেন না। কালকের থেকে একের পর এক করে আমাকে জ্বালাচ্ছেন। শেষমেষ আমি এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম আল্লাহ আমায় রেহায় দাও??


👉👉আমি ভ্রু টা কুঁচকে বললাম........


আমিঃ~হয়েছে হয়েছে এতো কষ্ট পেতে হবে না,,আমি এখনো আপনাকে কিছুই করিনি। এতে হতাশ হওয়ার মতো কিছু হয়নি। এখন আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। আমি তো বাসার কাউকে চিনিনা??


👉👉ভুত মশাই রাগি গলায় বললেন.......


অরন্যঃ~কারো সাথে পরিচয় হওয়ার দরকার নেই। বাসায় অনেক মেহমান আপনার বাহিরে যাওয়ার দরকার নেই,,ঘরে বসে থাকুন??


উনি আরো কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময় কে যেনো দরজায় নক করলো। আর বললো.........


বাহির থেকেঃ~অরন্য দরজাটা খোল। বউ নিয়ে নিচে আয়। সবাই বউ দেখার জন্য অপেক্ষা করতেছে??


উনি আমার সাথে কোনো কথা না বাড়িয়ে ঐ মহিলাকে জবাব দিলেন.........


অরন্যঃ~ফ্রেশ হয়ে আসতেছি তুমি যাও??


বাহিরে থেকেঃ~আচ্ছা গেলাম আমি??


উনি উঠতে যাবে ঠিক তখনই আমি উনাকে বললাম.....


আমিঃ~আচ্ছা আপনার বাসায় কে কে আছে বলুন না আমায়.??


👉👉এবার উনি রেগে গিয়ে বললেন........


অরন্যঃ~আপনার এতো কিছু যানতে হবে না। অতিথি হয়ে আসছেন সময় মতো চলে যাবেন। বাসায় কে আছে এটা যেনে আপনার কি হবে??


উনার কথা গুলো শুনলে গা জ্বলে যায়। কিন্তু আমিও নাছোর বান্দা যতক্ষণ না বলবে আমি উনাকে উঠতে দিবো না। এরপর আমি বললাম.......


আমিঃ~আপনি না বললে আপনাকে উঠতে দিবো না। আগে বলেন কে কে আছে?? 


অরন্যঃ~বলবো না কে কে আছে? কি করবেন আপনি? আপনি একরোখা হলেও আমি আপনার চাইতে বেশি একরোখা। আমি কিছুই বলবো না??


👉👉আমি গলায় একটা কাশি দিয়ে বললাম.......


আমিঃ~বলতে হবে না যান ওয়াশ রুমে যান??


উনি আমার হার মানা দেখে বেশ খুশি হলো। কিন্তু যখন ওয়াশ রুমে যেতে লাগলো আমার পা টা বাড়িয়ে দিলাম। আমার পায়ে উনার পা লেগে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। তখন তিনি বললেন........


অরন্যঃ~আপনি ইচ্ছে করে এমন করেছেন। ইচ্ছে করে এমন করেছেন কেনো বলেন??


👉👉আমি মুচকি হেসে বললাম......


আমিঃ~কোথায় আমি তো কিছু করিনি। আপনি বলেন নি তাই শাস্তি পাচ্ছেন। যদি এবারও না বলেন তাহলে আপনার জন্য আরো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। এবার ভেবে দেখুন কি করবেন??


উনি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলেন আমি আসলেই একটা নাছোরবান্দা। তাই আরো কিছু ঘটার আগেই বললেন.........


অরন্যঃ~আমার পরিবারে বাবা-মা,, আমি আর আমার বড় বোন আছে। বাবা বিদেশে থাকে সব সময়। আর 

মা দেশে থাকে,,প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন। আর বড় বোন স্বামী নিয়ে লন্ডন থাকেন। একটু আগে যে মেয়েটা ডেকে গেলেন উনি আমার বড় বোন। আর আমার বাবা আমার বিয়েতে আসেনি উনি সব সময় ব্যাস্ত থাকেন??


আমিঃ~আচ্ছা তাহলে আপনার বাসায় রান্না করে কে?


👉👉উনি রাগ হয়ে বললেন.......


অরন্যঃ~এটাও কি আপনার জানতে হবে??


👉👉আমি এবার ভাব মাখা মুখ নিয়ে বললাম........


আমিঃ~হ্যা ভুত মশাই? 


👉👉উনি মুখটা বাকিয়ে উত্তর দিলেন.........


অরন্য~বাবুর্চি রান্না করে। এবার আমাকে ওয়াশ রুমে যেতে দিন। আপনিও রেডি হোন বাসার সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। পারলে একটু ভালো করে সেজে যাবেন। না হয় মান সম্মান আর থাকবে না। বিয়ে তো করেছেন ফাঁসিয়ে সেটা তো আর কেউ বুঝবে না। সুতরাং একটু গুছিয়ে যাবেন নিচে। পরে সময় আর সুযোগ মতো আলাদা হয়ে যাবো আমরা। আশা করি বুঝতে পারছেন??


কথাটা শুনে বুকের ভিতর কাঁপতে লাগলো। যতই হোক 

উনি এখন আমার স্বামী হয়। কোনো মেয়ে চাইবে না সে ডিভোর্সি হোক। খারাপ লাগলেও নিজেকে বেশ সামলে 

ভুত মশাইকে জবাব দিলাম...........


আমিঃ~আমি ওসব ময়দা মেখে নিচে যেতে পারবো না। আমি যেমন ঐ রকমেই যাবো। কে কি বললো তাতে আমার যায় আশে না। ময়দা মেখে নিজের সুন্দর্য বাড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই আমার। আশাকরি বুঝতে পারছেন??


উনি এতক্ষণে বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন যে আমি

খুব নাছোরবান্দা। তাই উনি শুধু বললেন........


অরন্যঃ~আপনার যা ইচ্ছে করুন। যে ভাবে ইচ্ছে ওই ভাবে নিচে যান। আমার তাতে কিছু যায় আসে না?


কথা গুলো বলে ওয়াশ রুমে ডুকে গেলেন।। এর মধ্যেই আমি খেয়াল করলাম সারা ঘর অগোছালো হয়ে আছে

তাই ঘরটা গুছানো শুরু করলাম। আলমারি থেকে উনার কাপড় বের করে বিছানায় সাজিয়ে রাখলাম।

যাতে করে ওয়াশ রুম থেকে এসেই হাতের নাগালে উনি

সব পেয়ে যায়। উনার ঘড়ি ওয়ালেট সব একত্রে এক যায়গায় রাখলাম। আমিও একটা শাড়ী পড়ে নিলাম।

যতটুকু সম্ভব নিজেকে ময়দা ছাড়া গুছানোর চেষ্টা করলাম। সবকিছু ঠিক করতে করতে খেয়াল করলাম উনি ওয়াশ থেকে বের হয়েছে। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে সারা ঘরটা দেখে একটু অবাক হয়েছেন। বিছানার উপর উনার কাপড় গুলো দেখে বললেন..........


অরন্যঃ~এখানে এগুলো কে রেখেছে। ঘর টা এতো তারাতারি পরিপাটি করে কে গুছিয়ে দিয়ে গেলো?


👉👉আমি লাজুক স্বরে জবাব দিলাম..........


আমিঃ~এসব কিছু আমি করেছি??


আমার কথা শুনে উনি বেশ চুপসে গেলেন। চুপসানো মুখ নিয়ে আমাকে বললো.........


অরন্যঃ~এতকিছু করতে কেউ তো আপনাকে বলেনি। এতকিছু করতে গেলেন কেনো??


👉👉আমি বেশ ঝাঁঝালো গলায় জবাব দিলাম......


আমিঃ~আমার ঘর আমি গুছিয়েছি তাতে আপনার

কি মশাই???


👉👉উনি ভ্রু কুঁচকে বললো.......


অরন্যঃ~আপনার ঘর মানে। এটা আপনার ঘর 

কবে হলো?? 


👉👉আমি হাসি হাসি মুখে উত্তর দিলাম......


আমিঃ~স্বামীর ঘরেই তো স্ত্রী ঘর হয়। বিয়েটা যে ভাবেই হোক ডিভোর্সের আগ পর্যন্ত আমি আপনার স্ত্রী আপনে আমার স্বামী?? সুতারাং ঘর গুছাতে আমি পারবো নিশ্চয়ই?? 


👉👉ভুত মশাই রাগি গলায় বললেন........


অরন্যঃ~আপনি একটু বেশিই বকেন। আর আপনাকে এই ড্রেস বের করতে কে বলেছে। আমি তো এটা পড়বো না??


আমিঃ~আমার কাছে এটা ভালো লেগেছে তাই এটা বের করছি এটা পড়লে আমি খুশি হবো??


উনি এবার গম্ভীর একটা মোড নিয়ে জবাব দিলেন.......


অরন্যঃ~আপনার খুশিতে আমার কি যায় বা আসে। করছেন তো ফাঁসিয়ে বিয়ে আবার অধিকার ফলাতে আসছেন। লজ্জা হওয়া উচিত আপনার??


এই কথাটা শুনে বুকের ভিতর হুহু করে কষ্টের সাইরেন বেজে উঠলো। চোখের কোনে হলকা মেঘও জমতে শুরু করলো। তবুও নিজেকে অনেক শক্ত করে উনাকে বললাম........


আমিঃ~আপনার ইচ্ছে মতো পড়ে নিন সমস্যা নেই??


তারপর উনি উনার পছন্দ মতো একটা ড্রেস পড়লেন। কিন্তু আমিও কম নাছোরবান্দা নয়। এর শাস্তি উনাকে পেতেই হবে। কি করে কি করা যায় বেশ ভাবতে শুরু করলাম। ভাবতে ভাবতে চিন্তার আকাশে হাবুডুবু 

খেতে লাগলাম। হটাৎ করে ভুত মশাইয়ের তুরির 

শব্দে চিন্তার গোর কাটলো।। ভুত মশাই তুরি বাজাতে বাজাতে বললেন.......


অরন্যঃ~এই যে আপনি উপরে তাকিয়ে কি দেখছেন??


আমিঃ~নাহ তেমন কিছু না। কি হয়েছে বলুন??


অরন্যঃ~আপনি আর কোনদিন আমার অনুমতি ছাড়া আমার আলমারিতে হাত দিবেন না বুঝছেন??


আমি কথাটা শুনে বেশ হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিলাম। লুটোপুটি খেয়ে তুরি বাজাতে বাজাতে বললাম.....


আমিঃ~ওই হ্যালো আলমারিতে হাত দিতে অনুমতি লাগে নাকি। আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না। 

আমি অন্যায় কিছু করিনি??


👉👉উনি বেশ বিরক্ত হয়ে আমাকে বললেন.........


অরন্যঃ~আপনি সত্যি পাগল একটা মেয়ে। আপনার মাথার তার সব ঢিলা??


👉👉আমি আবার হাসতে হাসতে বললাম........


আমিঃ~ভুত মশাই একটু ভুল বলে ফেলছেন??


👉👉উনি উনার বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে প্রশ্ন করলেন...


অরন্যঃ~কি ভুল শুনি?


👉👉আমি হাসি দিয়ে বললাম.......


আমিঃ~আমার মাথার তার ঢিলা না?


অরন্যঃ~তো আপনার মাথার তার কি?


আমিঃ~আমার মাথার তার তো সব ছিড়া??


এবার খেয়াল করলাম উনার মুখের বিরক্তির মাত্রা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে বললেন.........


অরন্যঃ~দোহাই লাগে এবার চুপ করুন। আপনার বকবক থামান। এবার নিচে চলুন আমাকে মুক্তি দিন???


আমি আমার শাড়ীর আঁচল নাড়াতে নাড়াতে বললাম...


আমিঃ~চলুন...??


এরপর দুজনে নিচে গেলাম।। নিচে যাওয়ায় পর খেয়াল করলাম সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে তাকাচ্ছে। আর আমাকে দেখে বলছে, অরন্যের কি কপালে চোখ ছিলো নাকি। এমন একটা মেয়ে কেউ বিয়ে করে আনে নাকি। তার উপর মেয়ের পরিবার বেশি ধনী না। কি দেখে অরন্য এই মেয়েকে বিয়ে করলো আল্লাহ জানে।


একের পর এক এই সব কথা শুনে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হতে লাগলো। সবাই শুধু আমার ব্যাহিক সুন্দর্য

নিয়ে সমালোচনা করছে। আমার ভিতরটা বুঝার চেষ্টা করলো না।।ভিতরের মানুষটা কেমন আমি সেটা কেউ জানার প্রয়োজন মনে করলো না।


হুট করে খেয়াল করলাম আমার শ্বাশুড়ি মা এসেছেন।

সবাই শ্বাশুড়ি মাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো। শ্বাশুড়ি মা এসে আমাকে দেখে বললেন..........


-গল্পঃ_হঠাৎ_বিয়ে (পর্ব_০৪)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


হুট করে খেয়াল করলাম আমার শ্বাশুড়ি মা এসেছেন।

সবাই শ্বাশুড়ি মাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো। শ্বাশুড়ি মা এসে আমাকে দেখে বললেন..........


শ্বাশুড়িঃ~তোমার নাম কি মা?


👉👉আমি চট কর উনাকে সালাম করে বললাম......


আমিঃ~আমার নাম অনন্যা?


👉👉উনি হাসি দিয়ে বললেন.......


শ্বাশুড়িঃ~বাহ খুব সুন্দর নাম?


👉👉আমি মাকে বললাম.......


আমিঃ~মা আপনি এইদিকে এসে বসেন।। মা আপনে অসুস্থ শরীর নিয়ে কষ্ট করে এখানে আসলেন কেনো? শুনেছি ডাক্তার নাকি আপনাকে বেড রেষ্ট দিয়েছে।

এ শরীর নিয়ে এখানে আসার কি দরকার ছিলো?

|||

আপনি বললে আমি আপনার রুমে চলে যেতাম। আমি আপনার রুমটা চিনলে সকালে উঠে আমি আপনার রুমে চলে যেতাম। কিন্তু আপনার রুমটা চিনিনা তাছারা এই বাড়িতে আমি নতুন তাই চিনতে পারিনি। চিনলে আমি চলে যেতাম। মা কষ্ট হয়নি তো আসতে???


উনি একরাশ 👉👉হাসি দিয়ে বললেন...........


শ্বাশুড়িঃ~আমার মা টা দেখি অনেক সুন্দর করে কথা বলে। আমার মা টা যেমন রুপবতী তেমনি গুনোবতী?


মায়ের মুখে রুপবতী কথাটা শুনে যেনো নিজের চোখে অজড়ে বৃষ্টি নামতে লাগলো। জীবনে প্রথম কেউ আমাকে রুপবতী বলেছে। নিজেকে সামলাতে অনেক চেষ্টা করলাম।৷ কিন্তু জানিনা কেনো আবেগটা সামলাতে পারলাম না। তাই মাকে ধরে হুহু করে কেঁদে কেঁদে বললাম..........


আমিঃ~মা আপনি আমাকে রুপবতী বলছেন। আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ রুপবতী বলেনি। আপনার মুখে রুপবতী কথাটা শুনে কেনো জানি না আবেগটা কে সামলে রাখতে পারলাম না??


শ্বাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন.....


শ্বাশুড়িঃ~সবাই তোমার বাহিরের রুপ টা দেখেছে কিন্তু ভিতরের রুপটা কেউ দেখেনি। তোমার ভিতরের রুপটা যদি কেউ দেখতো তাহলে সবাই তোমাকে রুপবতী বলতো। আমি যে তোমার ভিতরের রুপ টা উপলব্ধি করতে পেরেছি। যার কারনে তুমিই আমার কাছে সবছেয়ে রুপবতী??

|||

আমি আমার মেয়ের মুখে সব শুনেছি বিয়ের ব্যাপারে।

শুনো মা আমার ছেলে তোমার কপালে ছিলো। তাই তোমার সাথে এভাবে বিয়ে হয়েছে। 

আমার ছেলের ভাগ্যে তুমি ছিলে। কে কি বললো কান দিবেনা। কারন মানুষ যাই বলুক। নিজের কাছে যেটা সঠিক মনে হবে সেটাই করবে। মানুষের কাজে কথা বলা। মনে রাখবে যখন তোমাকে নিয়ে কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করবে ভেবে নিবে সে তোমার জয়ে ঈর্ষান্বিত তাই তোমার মুখে তার মন কাতর হয়েছে বলেই তোমার নামে সে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। জীবন চলার পথে অনেক বাধা আসবে। লক্ষ স্থির রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষের কথায় কান দিয়ে নিজের লক্ষ থেকে বিচ্যুতি হবে না???


মায়ের কথা গুল শুনে মনে আরো ভরসা ফেলাম। মাকে জড়িয়ে ধরে আবেগে আরো কাঁদতে শুরু করলাম। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন..........


শ্বাশুড়িঃ~পাগলিটা কাঁদছে কেনো?? শোন মা আজকে রাতের পর থেকে বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে। নীলাও চলে যাবে রাতের ফ্লাইটে লন্ডনে। বাড়িতে আমি তুমি অরন্য ছাড়া কেউ থাকবে না। প্রতিদিন বাবুর্চির রান্না খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। আমি জানি আমি এবার চিন্তা মুক্ত কারন আমাকে আর বাবুর্চির রান্না খেতে হবে না। আমার বউ মা আমাকে সব রান্না করে খাওয়াবে। কিরে মা খাওয়াবি না???


👉👉আমি চোখে পানি মুছতে মুছতে বললাম......


আমিঃ~কেনো পারবো না। এতো ছোট একটা আবদার পালন করতে পারবো না মেয়ে হয়ে। তাহলে আমি তোমার কেমন মেয়ে। চিন্তা করো না আমি সব গুছিয়ে নিবো। আমাকে শুধু বুঝিয়ে দিও। আর দোয়া করো??


👉👉উনি হাসতে হাসতে বললেন......


শ্বাশুড়িঃ~সে তো অবশ্যই??


চারপাশে এই সময় বেশ নিস্তবতা বিরাজ করছে। সবাই চুপ হয়ে গেছে। খেয়াল করলাম আমার ভুত মশাই আমার দিকে আলুর মতো চুপসানো মুখ নিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। আমিও এই সুযোগে নিজেকে একটু পাগলামি থেকে বিরত রাখতে পারলাম না।

|||

সুযোগ বুঝে ভুত মশাইকে চোখ টিপুনি দিলাম।। ভুত মশাই আমার চোখ টিপুনি দেখে একটু নড়ে চড়ে দাড়ালো।আমি ভুত মশাই এর দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম............


আমিঃ~মা এবার ঘরে চলুন।। বেশিক্ষণ এভাবে থাকা ঠিক হবেনা। আপনে আমার সাথে ঘরে চলুন আর আমাকে আপনার ঘরটা চিনিয়ে দিন যাতে করে পরে যেতে আমার অসু্বিধা না হয়??


👉👉মা হাসতে হাসতে বললেন.......


শ্বাশুড়িঃ~চল আমার সাথে চল??


আমি মাকে নিয়ে ঘরে গেলাম। এবার মা আমার হাতটা ধরে বললেন..........


শ্বাশুড়িঃ~দেখো মা অরন্য বেশ সরল সোজা সাফটা স্বভাবের ছেলে। তুমি অরন্যকে ভালো রেখো। তুমি তাকে কখনো কষ্ট দিও না??


আমি মায়ের হাতটা চেপে ধরে বললাম......


আমিঃ~মা বিয়েটা যে ভাবেই হোক না কেনো,,আমি এখন অরন্যের স্ত্রী। অরন্যের ভালো মন্দের বিষয়টা আমি মাথায় রাখবো। আপনে শুধু আমার জন্য 

দোয়া করবেন???


মা আবার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন......


শ্বাশুড়িঃ~দোয়া করি অনেক সুখী হও??


মায়ের আদর মাখা স্পর্শ নিয়ে বের হলাম রুম থেকে। মায়ের রুম থেকে বের হয়ে দেখলাম ভুত মশাই এক যায়গায় স্থির হয়ে দারিয়ে আছে।।এই সুযোগ আমার প্লান টা কাজে লাগানোর। আমি একটু কোক মুখে 

নিয়ে ভুত মশাইয়ের কাছে গিয়ে জোরে হাঁছি দিলাম আর সব কোক উনার গায়ে ফেললাম। উনি বেশ লাফিয়ে উঠে বললেন.......


অরন্যঃ~আমি ভালো করেই জানি আপনি ইচ্ছে করেই এমন করেছেন। কেনো করেছেন এমন?? আপনি আমার সাথে এমন করেন কেনো? মাকে তো দেখলাম খুব হাত করে ফেলছেন। ফাঁসানোর ব্যাপারে আপনে অনেক বড় ওস্তাদ। মাকেও ফাঁসিয়ে দিয়েছেন??


আমিঃ~সে আমি যা ইচ্ছে করি,আপনার কি হুম।। যান ড্রেসটা চেঞ্জ করে আগের ড্রেসটা পড়ে আসেন,,যেটা আমি পছন্দ করে দিয়ছি? আমার কথা শুনেন নি তো তাই এমন হলো। মাঝে মাঝে বউয়ের কথা শুনতে হয়। নয়তো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে??


এই কথা শুনার পর উনার আর বুঝতে বাকি রইলো না আমি ইচ্ছে করে এমন করেছি। কিন্তু উনার মুখে এখন তেমন রাগের ছাপ দেখতে পেলাম না। তবুও মুখটা একটু বেকিয়ে জবাব দিলেন.........


অরন্যঃ~আপনার পছন্দের ড্রেসটা পড়বো না। কারন আপনাকে আমার ভালো লাগে না। ইরাকে প্রথম দেখায় ভালো লেগে গিয়েছিলো। যে ভালো লাগাটা আপনার প্রতি চাইলেও আনতে পারছিনা???


আমি এবার হালকা করে উনার কাছে গেলাম। কাছে গিয়ে বললাম........


আমিঃ~প্রথম দেখায় ভালো লাগার চেয়ে দেখতে দেখতে ভালো লাগাটা অনেক শ্রেয়। আপনি 

আমাকে দেখতে থাকুন??


এই কথা বলে চোখ টিপুনি দিয়ে আবারো বললাম.......


আমিঃ~ওই ড্রেসটা পড়লে ভালো লাগবে। পড়বেন কিন্তু..??


অরন্যঃ~পড়বো না?? 


এই কথা বলে তিনি তাড়াহুড়া করে রুমে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম উনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। আমি উনাকে দেখে পুরা অবাক কারন আমি যেই ড্রেসটা পড়তে বলেছি সেই ড্রেসটা পড়েছে। 

আমি তো উনার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না। হুট করে উনি আমার কাছে এসে বললেন.........


অরন্যঃ~ভাববেন না আপনার কথা রাখতে পড়েছি। আমার ড্রেস আমি পড়বো যা ইচ্ছে তা পড়বো??


আমি এবার আর কোনো কিছু বললাম না। শুধু মুচকি একটু হাসি দিয়ে বললাম........


আমিঃ~আচ্ছা ঠিক আছে কিছু ভাববো না??


ছোট খাটো খুঁনসুটি দিয়ে সারাদিন পার করলাম।সন্ধার দিকে একে একে সব মেহমান চলে গেলো। নিলা আপুও রাতের ফ্লাইটে লন্ডনে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলো.......


নীলাআপুঃ~বিয়ে যে ভাবেই হোক আমি যেনো সবকিছু ম্যানেজ করে নেই??


আমি আশ্বাস দিলাম সব ঠিক করে নিবো।। পরিবারের এমন সাপোর্ট পাবো আশা করিনি। সবাই আমার পাশে আছে এটা ভেবে মনে আরো ভরসা ফেলাম। 


সারাদিন পার করে রাতে ঘুমাইতে গিয়ে রুমে দেখি ভুত মশাই কি যেনো কাজ করতেছে। আমি এক মগ কফি বানিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম...........


আমিঃ~এই যে আপনার কফি??


উনি আমার হাত থেকে কফি নিয়ে,,কফিতে এক চুমুক দিয়ে কিছুক্ষণ টেষ্ট বুঝার চেষ্টা করলো মনে হয়। আর একটু পর আমাকে বললেন........


অরন্যঃ~কফিটা কে বানিয়েছে??


👉👉আমি লজ্জা মাখা মুখে বললাম..........


আমিঃ~কেনো...??


অরন্যঃ~কফিটা ভালো হয়েছে তাই..??


👉👉আমি লজ্জা মাখা মুখে বললাম........


আমিঃ~কফিটা আমি বানিয়েছি..??


উনি এবার মুখ টাকে আলুর চপের মত করে ফেললেন। 

ভুলক্রমে উনি আমার প্রশংসা করে ফেলছেন, এটা মনে হয় উনার উচিত হয়নি। তাই মুখটাকে বাংলা পাঁচ করে ফেললেন। এবার মনে হয় আমাকে একটু পঁচিয়ে উনি উনার দায়িত্ব পালন করবে।যা ভেবেছিলাম তাই করছে। উনি উনার মুখটাকে বাংলার পাঁচ বানিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন.......


অরন্যঃ~এজন্যই বলি টেষ্ট টা এতো জগন্য কেনো.??


আমি উনার কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে একটু মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলাম?


পরের দিন সকালে উঠে সব রান্না করলাম। রান্না করে মায়ের খাবার নিয়ে মায়ের রুমে চলে গেলাম। মা আমাকে দেখে হাসি মাখা মুখ নিয়ে বলে উঠলো......


শ্বাশুড়ি মাঃ~কিরে মা এখন এতো খাবার নিয়ে 

আসলি কেনো??


আমিঃ~এতো খাবার কোথায় দেখলে তুমি।। এগুলো সব খেতে হবে তোমাকে। নয়তো সুস্থ হবে না। আমার কাছে খাবার নিয়ে কোনো ফাঁকি দিতে পারবে না। খেতে না চাইলে মাইর দিয়া জোর করে খাওয়াবো??


উনি হাসতে হাসতে আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন...


শ্বাশুড়ি মাঃ~বুঝতে পেরেছি আমার আর ফাঁকি 

দেওয়া যাবে না। তা দাও খেয়ে নেই.??


আমি মাকে খাওয়াতে লাগলাম।। আর একের পর এক গল্প শুনতে লাগলাম।মনে হয় উনি অনেক দিন পর মন খুলে কথা বলছে। ঠিক এ সময় অরন্য এসে বললেন...


অরন্যঃ~মায়ের রুমে আপনি এখন কি করছেন??


আমিঃ~মায়ের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম?? 


অরন্যঃ~আচ্ছা আপনি এখন যান মায়ের সাথে আমার একটু কথা আছে??


👉👉ঠিক তখনই পাশ থেকে মা বললেন.......


শ্বাশুড়ি মাঃ~অনন্যা তো পর কেউ না। অনন্যার সামনে বল কি বলবি??


অরন্যঃ~না মা আমি একা কথা বলতে চাই?? 


আমি আর কিছু না বলে মায়ের পাশ থেকে উঠে চলে আসলাম। কিছুক্ষণ পর উনি কথা শেষ করে খাবার খেতে আসলেন। আমি খাবার গুলো খেতে দিলাম। খেয়াল করলাম গপ গপ করে খাবার খাচ্ছে। এরপর আমি বললাম......


আমিঃ~আরে মশাই আস্তে খান। সব শেষ হয়ে গেলে আবার রান্না করবো??


অরন্যঃ~মানে" এগুলো কে রান্না করছে??


👉👉লাজুক মুখে জবাব দিলাম......


আমিঃ~এগুলো সব আমি রান্না করেছি?? 


অরন্যঃ~এজন্যই বলি এতো জগন্য কেনো??


কথাটা বলে উনি খেতে লাগলেন। আমি তখন বললাম..


আমিঃ~হুম জগন্য খাবার এভাবে খাচ্ছেন। ভালো খাবার হলে কিভাবে খেতেন??


আমার কথাটা কানে তুললেন না মনে হয়। খেয়ে যাচ্ছে। 

এবার উনাকে বললাম.......


আমিঃ~এই যে শুনছেন??


অরন্যঃ~হ্যা কি বলবেন বলুন?? 


আমিঃ~আমি একটু বাহিরে যেতে চাই। কিছু জিনিস কিনতে হবে। রান্নার জন্য কিছু সবজি লাগবে। আমি গেলে মন মতো কিনে আনতে পারতাম??


অরন্যঃ~আপনি গেলে যান কিন্তু কি দিয়ে যাবেন। একটা গাড়ি আমি নিয়ে যাবো। আরেকটা গাড়ি থাকলেও ড্রাইবার নেই। ড্রাইবারের স্ত্রী অসুস্থ তাই 

ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছে। আপনি কিভাবে যাবেন?


👉👉আমি মুচকি হেসে বললাম..........


আমিঃ~সেই গাড়ির চাবিটা দিয়ে যান আমি একাই 

চলে যেতে পারবো??


👉👉উনি অবাক হয়ে বললেন.......


অরন্যঃ~একা চলে যেতে পারবেন মানে? গাড়ি কে চালাবে??


আমিঃ~কেনো আমি চালাবো?


আমার এই কথা শুনে এবার উনি বেশ চমকে উঠলেন। আমার মুখ থেকে উনি এমন কথা আশা করেনি হয়তো। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন.........


অরন্যঃ~আপনি গাড়ি চালাতে পারেন??


 👉👉আমি হাসতে হাসতে বললাম.........


আমিঃ~হ্যা পারি?? অসুন্দর বলে নিজেকে কখনো 

ছোট ভাবিনি। সবকিছু শিখার চেষ্টা করেছি।

নিজেকে পারফেক্ট ভাবে গড়ে তুলার চেষ্টা করেছি?


আমার কথা শুনে উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এবং বললেন.......


অরন্যঃ~আচ্ছা আমি চাবি দিয়ে যাবো??


তারপর উনি আমাকে চাবি দিয়ে চলে গেলেন?? আস্তে আস্তে দিন কাটতে লাগলো। অরন্যের সাথে খুনসুটি গুলো বাড়তে লাগলো। খেয়াল করলাম অরন্য অনেক পরিবর্তন হতে লাগলো। এর মধ্যে হুট করে একদিন অরন্য অফিস থেকে এসে আমাকে বলতে লাগলো....


-গল্পঃ_হঠাৎ_বিয়ে (পর্ব_০৫)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


তারপর উনি আমাকে চাবি দিয়ে চলে গেলেন?? আস্তে আস্তে দিন কাটতে লাগলো। অরন্যের সাথে খুনসুটি গুলো বাড়তে লাগলো। খেয়াল করলাম অরন্য অনেক পরিবর্তন হতে লাগলো। এর মধ্যে হুট করে একদিন অরন্য অফিস থেকে এসে আমাকে বলতে লাগলো....


অরন্যঃ~আপনি একটু তারাতারি রেডি হন। আপনাকে নিয়ে একটু এক যায়গায় যাবো??


অরন্যের এমন কথা শুনে আমার মন টা খুশিতে নাঁচতে শুরু করলো। কিন্তু অরন্য আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে। 

জানার জন্য মনটা চটপট করতে লাগলো। তাই নিজের আবেগ আর সামলাতে পারলাম না। অরন্যকে জিজ্ঞেস করলাম........... 


আমিঃ~আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন?


👉👉অরন্য বেশ রাগ রাগ গলায় বললো.......


অরনঃ~আপনাকে রেডি হতে বলেছি আপনি রেডি হন। এতো কিছু জানতে হবে না। একটু বকবক বেশিই করেন। এতো বকা ভালো না যান রেডি হয়ে আসুন??


আমি মুখটা কাচুমাচু করে যেতে লাগলাম। উনি পিছন থেকে ডাকে বললেন..........


অরন্যঃ~শুনেন...??


👉👉আমি হাসি দিয়ে পিছন ফিরে বললাম......


আমিঃ~হ্যা বলেন। আমি জানতাম কোথায় যাবো আপনি বলবেন??


👉👉উনি আরেকটু গম্ভীর গলায় জবাব দিলেন....... 


অরন্যঃ~আপনার মাথায় আসলেই গোবর। আমি বলার আগেই বকবক করে যাচ্ছেন। 

আমি কোথায় যাবো সেটা বলার জন্য ডাকিনি??


👉👉আমি মন খারাপ করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম....


আমিঃ~তাহলে কেনো ডেকেছেন??


অরন্যঃ~আমি ডেকেছি এজন্য আজকে একটা 

শাড়ী পড়বেন??


আমিঃ~হটাৎ শাড়ী পড়বো কেনো?


অরন্যঃ~আমি বলেছি তাই পড়বেন?


আমিঃ~আপনি বললে পড়তে হবে। আমি পড়বো না?


অরন্যঃ~আপনাকে পড়তেই হবে? 


আমিঃ~বলছি তো পড়বো না?


👉👉উনি রেগে গিয়ে বললেন......


অরন্যঃ~আপনার যা ইচ্ছে তাই করেন?


এ কথা বলে উনি চলে গেলো। আমারো উনাকে রাগাতে পেরে খুব ভালো লাগতেছে। এখন কি করবো শাড়ী পড়বো নাকি। কিছুই মাথায় আসছে না। আজকে ভুত মশাই আমাকে কোথাও নিয়ে যাবে। কেনো জানিনা ভুত মশাই এই কয়েক দিনে অনেক পাল্টে গিয়েছে। এখন আর আমাকে আগের মতো কষ্ট দিয়ে কথা বলে না। তার এই পাল্টানো দেখে আমি খুব খুশি। যাইহোক আলমারি খুলে শাড়ী দেখতে লাগলাম কোনটা পড়বো। এতো শাড়ীর মধ্যে কোন শাড়ীটা পড়লে ভুত মশাই খুশি হবে। দেখতে দেখতে আলমারির সব শাড়ী খাটের উপর রাখলাম। ভুত মশাই আমার কাছে এসে বললো... 


অরন্যঃ~আপনি এখনো রেডি হন নি। খাটের উপর শাড়ীর মেলা বসিয়েছেন। এতো শাড়ী খাটের ওপর রাখছেন কেনো??


👉👉আমি তোতলাতে তোতলাতে জবাব দিলাম.....


আমিঃ~নাহ মানে নাহ মানে....


অরন্যঃ~কি নাহ মানে মানে করছেন। স্পষ্ট করে বলেন কি হয়েছে। এমনিতে তো কথা একটাও মাটিতে পড়ে না। এখন এভাবে তোতলাচ্ছেন কেনো?? ঠিক করে বলেন কি হয়েছে??


👉👉আমি মুখটা একটু অসহায় ভাব নিয়ে বললাম....


আমিঃ~নাহ মানে?


অরন্যঃ~আবার না মানে শুরু করেছেন? 


আমিঃ~সত্যি বলতে আমি কোন শাড়ী টা পড়বো ঠিক বুঝতে পারছিনা। আপনি যদি একটু ঠিক করে দিতেন ভালো হতো। আমার রেডি হতে সুবিধা হবে??


👉👉উনি মুসকি হেসে আমাকে বললেন........


অরন্যঃ~একটু ওই দিকে যান।। সামান্য শাড়ী-টা ঠিক করতে পারছেন না কোনটা পড়বেন। সবকিছু তো বলার আগে করেন।আজ এমন কি হলো শাড়ী পছন্দ করতে পারছেন না??


আমিঃ~নাহ মানে?


অরন্যঃ~থাক আপনাকে আর নাহ মানে,,নাহ মানে করতে হবে না। দেখতে দিন শাড়ী গুলো??


আমি একটু সরে পাশে গিয়ে বসলাম।উনি এসে আমার পাশে বসলেন। এবং সব শাড়ী থেকে একটা শাড়ী হাতে নিয়ে বললেন...........


অরন্যঃ~~আপনি বরং কালো শাড়ী টা পড়ুন পড়লে ভালো লাগবে??


কালো শাড়ীর কথা বলাতে আমার মনের ভিতর কেমন করে উঠলো। কারন আমি ফর্সা না তাই। এরপর আমি উনাকে বললাম........


আমিঃ~আমি তো ফর্সা না তাই আমাকে কালো শাড়ী মানাবে বলে মনে হচ্ছে না। কালো শাড়ীতে আরো কালো লাগবে আমাকে। একদম পেত্নী মনে হবে। আপনি আমাকে অপমান করার জন্য এমন বলেছেন তাইনা??


উনি আমার কথায় মনে হয় বেশ বিরক্ত হলো।। হয়তো

আমার মুখে এমন কথা আশা করেনি। তাই উনি বিরক্ত মাখা মেজাজে আমাকে বললেন.........


অরন্যঃ~আপনার মতো সাহসী মেয়ের মুখে এমন কথা মানায় না। মা তো বলেছে সুন্দর্য ভিতরে থাকে। বাহিরের সুন্দর্য কোনো সুন্দর্য না। আপনাকে না হয় আমি ভিতর থেকে দেখলাম। আপনি কালো শাড়ী টা পড়ুন। আপনাকে অপমান করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আপনার যদি মনে হয় আমি অপমান করার জন্য বলেছি তাহলে পড়ার দরকার নেই??


এই কথাট বলে উনি রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি এখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। অবশেষ চিন্তা ভাবনা করে কালো শাড়ী টা পড়ে নিলাম। 


এই প্রথম আমি কালো শাড়ী পড়লাম.?? কালো ছিলাম বলে কখনো কালো ড্রেস পড়িনি। আজকে কালো শাড়ী টা পড়াতে নিজের কাছেই নিজেকে কেনো জানি সুন্দর লাগছে। হালকা একটু পাউডার মুখে মেরে নিলাম।


হটাৎ করে খেয়াল করলাম উনি রুমে প্রবেশ করেছেন।

রুমে প্রবেশ করে আমাকে দেখে বললেন.........


অরন্যঃ~বাহহ আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে। কালো কাজল পড়লে আরো সুন্দর লাগবে, সাথে একটা 

বড় খোঁপা করলে??


আমিঃ~আমি কালো তার উপর কালো কাজল পড়লে চোখ গুলো আরো কালো দেখাবে??


অরন্যঃ~সাদা কালো কোনো ভেদাভেদ নেই। ভেদাভেদ তো মানুষের দৃষ্টি করে। আপনাকে সুন্দর দৃষ্টিতে কেউ দেখলে অবশ্যই তার কাছে সুন্দর লাগবে। 

মানুষকে সুন্দর অসুন্দর তখন লাগে যখন মানুষের দৃষ্টি সুন্দর অসুন্দর হয়। আপনি চাইলে কালো কাজল পড়তে পারেন আপনাকে ভালো লাগবে??


ভুত মশাইয়ের কথাগুলো শুনে মনের বিতর রোমাঞ্চকর অনুভুতি আসলো। উনার মুখে এমন কথা শুনে 

নিজের মধ্যে অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে। সত্যি কখন যে উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতে পারিনি। হটাৎ করে উনার ডাকে চিন্তার ঘোর কাটলো.........


অরন্যঃ~কি ব্যাপার কোথায় হারিয়ে গেলেন?


আমিঃ~নাহ মানে?


অরন্যঃ~আবার নাহ মানে। হয়েছে হয়েছে এবার চটপট রেডি হোন। আমি নিচে নামছি??


এই বলে অরন্য নিচে নামতে গেলো। দরজার সামনে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে বললো....... 


অরন্যঃ~এই যে শুনুন? 


আমিঃ~জ্বী বলেন??


অরন্যঃ~একটা টিপ পড়লে খারাপ লাগবে না। আর মাথায় খোঁপা করুন??


অরন্যের মুখে এসব কথা শুনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। অরন্য এভাবে আমাকে বলবে আমি কখনো ভাবিনি। অরন্য এ বলে বাহিরে গেলো। আমি টিপ আর খোঁপা করে নিচে নামলাম। খেয়াল করলাম মা নিচে বসে আছে। মা আমাকে দেখে বললেন.........


শ্বাশুড়ি মাঃ~আজকে আমার মা অনন্যা এতো খুশি কোথায় যাচ্ছে??


মায়ের কথা শুনে আরো লজ্জা পেলাম?? লজ্জায় লাল হয়ে নিচে তাকিয়ে রইলাম। মা আমার এ হাল দেখে কাছে আসলো আর আমার মাথা উপরে তুলে বললো...


শ্বাশুড়ি মাঃ~আজকে অরন্যের সাথে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে। এতেই এতো লজ্জা। আজকে মাকে অনেক সুন্দর লাগছে,দেখি হাতটা দাও???


আমি মায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। মা তার হাত থেকে বালা জোড়া খুলে আমার হাতে পড়িয়ে দিয়ে বললো...........


শ্বাশুড়ি মাঃ~বিয়ের পর হাত খালি রাখতে হয় না। হাতে সব সময় চুরি পড়ে থাকতে হয়। যাও তোমার তো আর আনন্দের শেষ নেই স্বামীর সাথে গুরে আসো। আমার মহাজনও কাল পরশু আসবে তখন আমিও ঘুড়বো। তখন আমাদর প্রেম দেখে হিংসা করো না???


👉👉আমি হাসতে হাসতে মাকে বললাম.......


আমিঃ~কি যে বলোনা মা। আমি তো তোমার বন্দুর মতো??


শ্বাশুড়ি মাঃ~যাও মা দেরি হলে আরন্য রাগ করবে??


আমি রেডি হয়ে বের হলাম খেয়াল করলাম উনি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে আমার দিকে এক নজরে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় আরো কাতর হয়ে গেলাম। লজ্জায় কাতর হয়ে উনাকে বললাম...........


আমিঃ~কি ব্যাপার কি দেখছেন?


অরন্যঃ~তেমন কিছু না? 


আমিঃ~তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছেন?


অরন্যঃ~এমনে তাকিয়ে আছি সব কি তোমাকে বলতে হবে। এতো বাঁচাল মেয়ে এতো বকতে পারে??


লক্ষ করলাম অরন্য আমাকে তুমি করে বলছে। আমার যে কি খুশি লাগছে বলে আপনাদেরকে বুঝাতে পারবো না। মনটা খুশিতে নাচতে লাগলো। হুট করে উনি ডাক দিলো আর বললো...........


অরন্যঃ~অনন্যা এভাবে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?


আমিঃ~নাহ মানে?


অরন্যঃ~আজকে তোমার মুখ থেকে নাহ মানে 

গেলো না?


আমিঃ~এই যে আপনি আমাকে তুমি বললেন তো তাই আর কি?


অরন্যঃ~তুমি আমার বয়সে ছোট তোমাকে কেনো আপনি ডাকবো। তোমাকে তুমি করেই ডাকবো। 

শুনো?


আমিঃ~জ্বী বলুন?


অরনঃ~আজকে তুমি গাড়ি চালাবে আমি তোমার পাশে বসবো??


আমি খুশিতে লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠতে লাগলাম আর বললাম আচ্ছা আচ্ছা। আমি উঠতে যাবো ঠিক 

তখনই একটা হোঁচট খেলাম। উনি আমাকে ঝাপটে ধরে বলতে শুরু করলো........


অরন্যঃ~তোমার চটপটে আর পাগলামি স্বভাব আর গেলো না। আস্তে উঠো?


এরপর আমি আস্তে করে গাড়িতে উঠলাম।ভুত মশাইও গাড়িতে উঠলেন। আমি গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে বললাম.....


আমিঃ~কোথায় যাবেন মশাই?


উনি আমাকে রাস্তা বলে দিলো,আমিও যেতে লাগলাম।

যেতে যেতে একটা রেষ্টুরেন্টের সামনে চলে আসলাম।

রেষ্টুরেন্টে দুজনে ঢুকলাম। এরপর অরন্য আমায় আস্তে আস্তে করে একটা জায়গায় নিয়ে গেলো। জায়গাটা পুরা মোমবাতি দিয়ে সাজানো পরিপাটি। দেখেই 

কেমন জানি আনন্দ লাগতেছে। একটা কেক আনলো। এরপর আমাকে বললো...........


অরন্যঃ~কেক টা কাটো তুমি?


আমিঃ~হটাৎ করে কেক কাটবো কেনো?


অরনঃ~কারন আজ তোমার জন্মদিন। সেটা তো ভূলে বসে আছো??


আমিঃ~ওহো আজকে ২১ ফেব্রুয়ারি সত্যিই তো আমার জন্মদিন। আমার জন্মদিন আপনে 

জানলেন কিভাবে?


অরন্যঃ~মা বলেছে?


আমি তো খুশিতে আত্বহারা যে ভুত মশাই এমন একটা সারপ্রাইজ দিয়েছে। হটাৎ করে ভুত মশাই একটা রিং

বের করে আমাকে পড়াতে নিলো। ঠিক তখনই একজন মেয়ে ওয়েটার এসে ডাক দিলো। আমরা ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে চমকে গেলাম। ওয়েটারও আমাদের দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো আর মুখ লুকাতে লাগলো।


কারন এই হলো ইরা আপু।। কিন্তু ইরা আপু এখানে কি করছে। ইরা আপু আমাকে আর অরন্যকে দেখে চলে যেতে নিলো। আমি ইরা আপুর হাতটা ধরে বললাম....


আমিঃ~তুই এতদিন কোথায় ছিলি। হুট করে কথায় চলে গেলি??


কিন্তু ইরা আপু কোনো জবাব দিলো না। আমি একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলাম। হটাৎ ইরা আপু 

আমাকে প্রশ্ন করতে লাগলাম। হটাৎ করে ইরা আপু আমাকে একটা কষিয়ে চড় দিয়ে বলে উঠলো.........


গল্পঃ_হঠাৎ_বিয়ে (পর্ব_০৬)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


কিন্তু ইরা আপু কোনো জবাব দিলো না। আমি একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলাম। হটাৎ ইরা আপু 

আমাকে প্রশ্ন করতে লাগলাম। হটাৎ করে ইরা আপু আমাকে একটা কষিয়ে চড় দিয়ে বলে উঠলো.........


ইরা আপুঃ~আমার কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিয়ে এখন মজা করা হচ্ছে। লজ্জা করেনা তোর। আমার জীবনের এই অবস্থা করে আমার অরন্যকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের করেছিস। আর এখন নাটক করছিস আমি কোথায় ছিলাম। তোকে নাটকের সেরা পুরস্কার দেওয়া দরকার। অনেক নাটক শিখে গিয়েছিস। নাটক করে আমার জীবনের বারোটা বাজিয়ে অরন্যের গলায় ঝুলে পড়েছিস। তুই ভালো করেই জানতিস তোর যে চেহারা তোকে অরন্যের মতো কেউ বিয়ে করবে না। তাই এতো বড় নাটক করছিস। লজ্জা লাগেনা এখন আমাকে এসব জিজ্ঞেস করতে। আমাকে খুব হিংসা করতি তাইনা। হিংসা কাতর হয়ে এমন করেছিস। নিজের বোনের সাথে এমন করতে লজ্জা লাগেনা?? 


আমি ইরা আপুর কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না?? ইরা আপু কি বলে মাথায় কিছু ঢুকছে না। ইরা আপু এসব দোষরুপ আমাকে করছে কেনো? আমি তো এমন কিছু করিনি। আমি ইরা আপুকে বললাম........


আমিঃ~আপু কি হয়েছে এমন বলছিস কেনো?? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি তোর কথার মানে বুঝতে পারছি না। আমাকে কেনো এসব বলছিস। আমি কেনো নাটক করতে যাবো। কেনো তোর ক্ষতি করতে যাবো??


আপু আমাকে মুখটা বেকিয়ে রাগন্বিত হয়ে বললো......


ইরা আপুঃ~এখন তো অরন্যের সামনে ন্যাকা সাজবিই। একদম কিছু বুঝিস না। আর বুঝবি কি ভাবে তুই তো কিছুই করিস না তাইনা??


আমিঃ~আপু আমি তোর কথার মানে বুঝতে পারছিনা। সত্যি আমি কিছু করিনি। তুই কেনো এমন করছিস। আমি সত্যি কথা গুলোর মানে বুঝতে পারছি না??


👉👉পাশ থেকে অরন্য বলে উঠলো..........


অরনঃ~ইরা তুমি আমাকে বলো কি হয়েছে? আর অনন্যাকে এমন কথা বলছো কেনো?? অনন্যা কি করেছে আমাকে একটু খুলে বলো??


ইরা অরন্যের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো.........


ইরাঃ~অনন্যাকে জিজ্ঞেস করুন সে নাহয় আপনাকে উত্তর দিয়ে দিবে। আমার থেকে ভালো সে বলতে পারবে। কারন নাটকের ডিরেক্টর তো অনন্যা ছিলো। আমি তো ছিলাম ভুক্তভোগী???


অরন্য আমার দিকে তাকালো।। অরন্যের মুখে এবার আমার প্রতি সন্দেহের চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। বুঝা যাচ্ছে সে আমাকে অনেক সন্দেহ করতেছে। সন্দেহ মাখা মুখ নিয়ে বললেন.........


অরন্যঃ~অনন্যা কি করেছো তুমি। ইরা এসব কি বলছে সত্যিটা বলো কি হয়েছে। আমার কাছে সব খুলে বলো। নাটক করবে না একদম??


আমিঃ~আপনে বিশ্বাস করেন আমি কিছু করিনি। ইরা আপু কেনো এমন বলতেছে সেটাও বুঝতেছি না। 

এমন কেনো বলতেছিস তুই??


খেয়ালে করলাম ইরা আপু খুব কান্না করতেছে। কেনো এভাবে কান্না করছে সেটাও বুঝতেছি না। অরন্য ইরা আপুকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো.........


অরন্যঃ~ইরা তুমিই বলো কি হয়েছে??


👉👉ইরা আপু কাঁদতে কাঁদতে অরন্যকে বললো......


ইরা আপুঃ~কি আর বলবো বলুন। আমার তো সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে এ কাল নাগীনির জন্য। এখন আর বললেও সব ঠিক হবেনা। আমি চাইনা আপনাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হোক আপনারা চলে যান??


অরন্যঃ~ইরা তোমাকে বলতে বলেছি বলো অনন্যা কি করেছে??


👉খেয়াল করলাম ইরা আপু কাঁদতে কাঁদতে অরন্যকে বললো.....


ইরা আপুঃ~আপনার কি বিশ্বাস হয় আমি বিয়ের দিন বয়ফ্রেন্ড নিয়ে পালিয়েছি??


👉👉অরন্য শান্ত স্বরে জবাব দিলো.......


অরনঃ~সে তো আমি বিশ্বাস করিনি?? কারন তুমি তো বিয়ের আগে আমার সাথে ফোনে অনেক কথা বলতে। কিন্তু হটাৎ কি এমন হলো কোথায় গিয়েছিলে তুমি?? 


খেয়াল করলাম ইরা আপু এবার বেশ কাঁদছে।। কাঁদতে কাঁদতে ইরা আপু যা বললো সেটা শুনে আমার 

হার্টবিট বেড়ে গেলো। মনে হয় এখানে দম বন্ধ হয়ে যাবে। আপু এসব কেনো বলছে কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমার বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে কথা গুলো শুনে😥😥 কারন আপু বললো..........


ইরা আপুঃ~আমি কোথায় গিয়েছিলাম সেটা কি আপনি জানতে চান??


অরন্যঃ~হ্যা জানতে চাই??


 👉👉তখন ইরন আপু বললো......


ইরা আপুঃ~সেদিন আমি ঘরে বসে সাজতে লাগলাম?? হটাৎ করে অনন্যার মোবাইল থেকে ম্যাসেজ আসলো। আপু একটু লুকিয়ে বাহিরে আয়। অরন্য ভাইয়া আসছে তোমার সাথে দেখা করতে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে। আমি ও সরল মনে বের হলাম। আমার ভুল ছিলো আমি আপনাকে কল দেইনি। বের হয়ে দেখলাম বাহিরে কেউ নেই। আশে পাশে ফাঁকা। অনন্যাকে কল দিলাম সেও ফোন তুলছে না। হুট করে অনন্যার মোবাইল থেকে ম্যাসেজ আসলো একটু বাগানের দিকে আয়।অরন্য এখানে দাড়িয়ে আছে। আমিও বাগানের দিকে গেলাম। কিন্তু কাউকে কোথাও দেখলাম না। আমি সামনের দিকে একটু এগুলাম। তারপর....??? 


এ বলে ইরা আপু আবার কাঁদতে লাগলো। অরন্য তখন ইরা আপুর হাতটা ধরে বললেন..........


অরনঃ~বলো তারপর কি হলো। কান্না থামাও??


👉👉ইরা আপু কান্না থামিয়ে বললো........


ইরাঃ~তারপর লক্ষ করলাম কয়েকটা লোক আমাকে ঝাপটে ধরলো। আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি চোখেও কিছু দেখতে ফেলাম না। কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম টের ফেলাম না।৷ জ্ঞান ফিরার পর লক্ষ করলাম আমি রনকদের বাসায়??


👉👉অরন্য বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন.....


অরনঃ~রনক টা কে??


👉👉ইরা আপু বললো........


ইরা আপুঃ~রনক হলো অনন্যার ব্রেষ্টফ্রেন্ড।যদিও রনক অনন্যার দুই বছরের বড় তবুও তাদের ভালো ফ্রেন্ডশিপ ছিলো। রনক আমাকে অনেক পছন্দ করতো।অনন্যাকে বেশ কয়েক বার বলেছিলো সে। কিন্তু আমি রাজি হয়নি। আর সে সুযোগ অনন্যা নিয়েছে। আমার বিয়ের দিনে আমাকে গায়েব করে দিয়েছে। আর ফাঁসিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছে। অনন্যা আমার সাথে এমন করবে আমি ভাবতেও পারিনি। রনককে দেখে আমি চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো কেনো??


রনকঃ~আমি তোমাকে ভালোবাসি ইরা।আমি চাই তুমি আমার হও। দেখো অনন্যাও চায় তুমি আমার হও।

 তাইতো অনন্যা আমাকে সাহায্য করেছে??


ইরা রনকের মুখে অনন্যার নামটা শুনে অবাক হয়ে গেলাে। অবাক হয়ে রনককে জিজ্ঞেস করলাে.......


ইরা আপুঃ~অনন্যা তোমাকে সাহায্য করেছে আমাকে তুলে আনতে। আমি বিশ্বাস করিনা??


রনকঃ~হ্যা আমি সত্যি বলছি বিশ্বাস অবিশ্বাস তোমার ব্যাপার। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই আর সন্ধায়

বিয়ে করবো। আমি সব কিছু ঠিক করে রেখেছি??


এই কথা গুলো বলে ইরা আপু আবার কাঁদতে লাগলো।

অরন্য ইরার হাতটা আরো ভালো করে ধরে বললেন.....


অরনঃ~এরপর তুমি ওখান থেকে কি ভাবে এসেছো?


ইরা আপুঃ~এরপর আমি কোনো রকম রনকের চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হলাম। এরপর বাড়ি এসে দেখি আপনার সাথে অনন্যার বিয়ে হয়ে গেছে। আর সবাই ভেবে নিয়েছে আমি পালিয়ে গিয়েছি। সেদিন আমার মুখটা দেখানোর মতো ইচ্ছা আর ছিলো না। তাই বাড়িতে আর যাইনি। সরাসরি ফ্রেন্ডের বাসায় চলে যাই। সেখানে থেকে একটা কাজ জোগাড় করি। আর এখানে একটা বাসা ভাড়া করে থাকা শুরু করলাম??


অরন্যঃ~তুমি একবার আমাকে বলতে পারতে ইরা?


ইরা আপুঃ~কি বলবো আপনাকে.? কোন মুখে বলতাম আপনাকে। ততক্ষনে সব শেষ হয়ে গিয়েছিলো। অনন্যার সাথে আপনার বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো। আমার তো এখানে বলার কিছুই ছিলো না। অনন্যা আমার সাথে যা করেছে আমি তো তা করতে পারি না। কারন অনন্যা আমাকে বোন না ভাবলেও আমি তাকে বোন ভাবি??


আমি ইরা আপুর কথা শুনে চিৎকার করে কেঁদে বলতে লাগলাম.......


আমিঃ~আমি এসব কিছুই করিনি??


👉অরন্য আমার গালে কষিয়ে একটা চড় দিয়ে বলে উঠলো.......


অরন্য'~তুমি এতটা নীচ আমি ভাবতে পারিনি। সামান্য টাকার জন্য নিজের বোনের সাথে এমন করতে 

পারলে। লজ্জা করলো না তোমার এমন করতে। আর এখন সব কিছু অস্বীকার করছো??


👉👉আমি অরন্যকে হাত জোর করে বললাম........


আমিঃ~সত্যি আমি এমন কিছু করিনি। বিশ্বাস করেন আমাকে। ইরা আপু তুই কেনো আমার নামে এমন মিথ্যা কথা বলছিস। কেনো অরন্যের চোখে আমাকে খারাপ বানাচ্ছিস। দেখতে অসুন্দর হতে পারি কিন্তু আমার মনে উচ্চ আশা ছিলোনা। টাকা পয়সার মোহ আমার ছিলোনা। তাহলে কেনো এমন বলতেছিস। কি ক্ষতি করেছি আমি তোর। তুই তো আমাকে ছিনিস আমি কেমন। তাহলে কেনো এসব বলতেছিস??


👉👉জবাবে ইরা আপু বললো........


ইরা আপুঃ~কি ক্ষতি করেছিস জিজ্ঞেস করতে লজ্জা করেনা তোর। আর কি ক্ষতি করার বাকি রাখছিস 

তুই। যা তুই আর অরন্য সংসার কর। আর এখানে আছিস না??


👉👉ওপাশ থেকে অরন্য বলে উঠলো......


অরন্যঃ~আমার সাথে অনন্যা যাবে না। তুমি যাবে?


👉👉ইরা আপু অবাক হয়ে উত্তর দিলো......


ইরা আপুঃ~আমি কোথায় যাবো?


অরন্যঃ~আমার সাথে আমার মায়ের কাছে যাবে। আর মায়ের কাছে সব বলবে। আর যে কষ্ট অনন্যা তোমাকে দিয়েছে। সেটা আমি অনন্যাকে ফিরিয়ে দিবো। তুমি আমার সাথে চলো??


ইরা আপুঃ~নাহ আমি চাইনা আপনাদের মাঝে কোনো ঝামেলা হোক??


অরন্যঃ~ঝামেলা তো তুমি করোনি ঝামেলা করেছে অনন্যা। সেটার শাস্তি তুমি কেনো পাবে??


আমি অরন্যকে অনেক বার বুঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু বুঝাতে পারলাম না। অরন্য ইরা আপুর কথা বিশ্বাস করেছিলো। আমার কথার কোনো মুল্যই 

দিলো না। আর ইরা আপু কেনো আমার নামে মিথ্যা বললো সেটা বুঝতে পারছি না।


অরন্যকে বুঝানোর হাজার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছি। অরন্য ইরা আপুর হাতটা ধরে বের হয়ে গেলো। আর আমাকে যে রিং টা পড়াতে চেয়েছিলো সেটা মেঝেতে পড়ে গেলো। অরন্য সেটা ফেলেই চলে গেলো। আমি রিং টা হাতে নিয়ে কাঁদতে লাগলাম। কেনো আমার সাথে এমন হলো কি ক্ষতি করেছি আমি। কেনো আমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়া হলো। আমি তো কারো কোনো ক্ষতি চাইনি।


কাঁদতে কাঁদতে এক দৌঁড়ে রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হলাম। খেয়াল করলাম অরন্য আর ইরা আপু গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে।


আমার বুকে বেশ কষ্ট হতে লাগলো?? একে তো অরন্য আমাকে ফেলে রেখে গিয়েছে তার উপর অরন্য জানতো আমি এখানের কিছুই চিনি না। কিভাবে পারলো আমাকে আমার ভুত মশাই ফেলে রেখে যেতে। 


আমি তো কিছু করিনি। তাহলে আমার ভুত মশাই কেন আমাকে বিশ্বাস করলো না। কেনো আমাকে এতো কষ্ট দিলো।


আমি তো ইরা আপুর কোনো ক্ষতি করিনি। তাহলে ইরা আপু কেনো এমন বললো। কেনো আমার অরন্যকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইলো। এতো কষ্ট কেনো দিলে আমায়।।আল্লাহ আমি তো কোনো প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না। আমি কি করবো তুমি বলে দাও।


এই মহুর্তে আমার হাতে একটা টাকাও ছিলো না।।এখন আমি বাসায় যাবো কিভাবে। তবুও একটা সি এন জি ভাড়া করলাম। ভাড়া করে বাসায় চলে গেলাম। বাসার দারোয়ানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাড়া দিলাম।ঘরের ভিতর ঢুকতেই দেখলাম........


-গল্পঃ_হঠাৎ_বিয়ে (পর্ব_০৭_শেষ_পর্ব)


লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


এই মহুর্তে আমার হাতে একটা টাকাও ছিলো না।।এখন আমি বাসায় যাবো কিভাবে। তবুও একটা সি এন জি ভাড়া করলাম। ভাড়া করে বাসায় চলে গেলাম। বাসার দারোয়ানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাড়া দিলাম।ঘরের ভিতর ঢুকতেই দেখলাম রনক ভাই দাঁড়িয়ে আছে। 


রনক ভাইকে দেখে আমার মাথায় আগুন ধরে গেলো।কারন রনক ভাইয়ের কারনেই ইরা আপু আমাকে ভুল বুঝলো নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। রনক ভাইকে গিয়ে বললাম...........


আমিঃ~আপনার কি দরকার ছিলো এত বড় নাটক করার। ইরা আপুকে কেনো ভুল বুঝিয়েছেন। আমি 

কি ক্ষতি করেছি আপনার??


রনক ভাই কোনো কথায় বলছে না। আমার রাগ যেনো আরো বেড়ে গেলো। মন চাইছে রনক ভাইকে একটা কষিয়ে চড় দেই! তাই করতে ছিলাম। এমন সময় অরন্য এসে পিছন থেকে আমার হাতটা ধরে ফেললো।


আমি অরন্যের দিকে ফিরতেই অরন্য আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে এসব? অরন্য জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে খেয়াল করলাম চারদিকের 

আলো আরো বেড়ে গেছে। ইরা আপু,রনক ভাই আমার কিছু বান্ধবীরা বলে উঠলো.....হ্যাপি বার্থডে অনন্যা।


এখন আর আমার মাথায় কোনো কিছু কাজ করছে না এসব কি হচ্ছে? আমার মাথাটা খুব ঝিমাতে লাগলো।

পরক্ষনেই জ্ঞান হারালাম? জ্ঞান ফিরার পর খেয়াল করলাম অরন্য আমার পাশে চিন্তা মগ্ন হয়ে বসে আছে। আমার জ্ঞান ফিরার সাথে সাথে আমাকে বললেন......


অরন্যঃ~ঠিক আছো তো তুমি। কিছু হয়নি তো.??


হটাৎ করে সবার এতটা পরিবর্তন দেখে কেনো জানিনা নিজের কাছে খুব অবাক লাগছে। খেয়াল করলাম সামনে ইরা আপু আর রনক ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওদের দেখে রেগে যেতে লাগলাম।। ঠিক তখনই অরন্য আমাকে শান্তস্বরে বললো.......


অরন্যঃ~অনন্যা ওদেরকে কিছু বলো না। ওরা এতক্ষণ যা করছে আমার কথায় করেছে??


অরন্যের কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। কি বলে এসব! মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম.........


আমিঃ~মানে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না??


👉👉অরন্য একটু মুসকি হেসে বললো.......


অরন্যঃ~কিছু বুঝতে হবে না?? আগে তোমাকে একটা সংবাদ দেই। ইরা কোথায় গিয়েছিলো সেটা তো সবার অজানা ছিলো। ইরা রনকের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলো??


👉👉আমি কথাটা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললাম......


আমিঃ~তাহলে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা কি আমার স্বপ্ন ছিলো।। ওরা বিয়ে করলে একটু আগে এমন করলো কেনো?? 


👉👉ইরা আপু পাশ থেকে বলে উঠলো.......


ইরাঃ~তুই একটু শান্ত ''হ আমি সবটা বলছি??


👉👉আমি নিজেকে শান্ত করে বললাম.......


আমিঃ~এবার বল?


রনকের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো ০৩ বছরের। রনক

তোকে কিছু বলেনি কারন আমরা ভাবছিলাম তোকে সারপ্রাইজ দিবো। কিন্তু হটাৎ করে আমার বিয়ে ঠিক করায় সব ঝামেলা পাকালো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শেষমেষ বিয়ের দিন সকালে মনে হলো নিজের ভালোবাসাকে এই ভাবে কোরবানি করা ঠিক হবে না। তাই রনক কে ফোন দিয়ে বললাম........


ইরা আপুঃ~রনক তুমি কি চাও আমরা এক হই??


রনকঃ~ইরা তুমি এখনো একথা জিজ্ঞেস করছো। তুমি যা করতে বলবে তাই করবো। তুমি শুধু আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ??


ইরা আপুঃ~তাহলে বাগানের কাছে চলে আসো.? রনক আমার কথা শুনে বাগানের কাছে আসলো। আর আমি সুযোগ বুঝে রনকের সাথে পালিয়ে যাই??


আমিঃ~তাহলে একটু আগে যে কাহিনী বলেছিলি সেটা কি ছিলো??


আমার প্রশ্নের জবাবে সবাই একটু হেসে নিলো।। সবার হাসি দেখে এবার সত্যি আমার গা জ্বলে যেতে লাগলো।

রেগে গিয়ে বললাম.......


আমিঃ~কি হলো বলবি তো?


👉👉অরন্য মুসকি মুসকি হেসে বললেন.......


অরন্যঃ~চারটা মাস খুব জ্বালাইছো আমাকে।।তাই এর শাস্তি ভালোবাসি শব্দটা বলার আগেই দিতে হতো। আর একটু সারপ্রাইজ দেওয়ার বাকি ছিলো। হুট করেই ইরার সাথে দেখা। তখন ইরাকে নিয়েই প্লানটা করি??


আমিঃ~এই রকম প্লান টা কে করলো শুনি?


👉👉অরন্য হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো......


অরন্যঃ~আমি করেছি?


এ রকম একটা প্লান করেছে বলে অরন্যের প্রতি আমার খুব অভিমান জমে গেলো। অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। ইরা আপু বললো.........


ইরা আপুঃ~আচ্ছা অনন্যা থাক তুই আমি আর রনক বাহিরে গেলাম। তোদের মান অভিমানের পালা শেষ কর। আর চড়টা দেওয়ার জন্য সরি জোরে লাগেনি তো। নাটক করতে গিয়ে কারেক্টারের মধ্যে ঢুকে গিয়ে ছিলাম??


ইরা আপুর কথাটা শুনে অভিমান আরো বেড়ে গেলো। 

তাই অভিমানি গলায় বললাম...... 


আমিঃ~হয়েছে জুতা মেরে গরু দান করতে 

হবে না??


ইরা আপু হাসি দিয়ে রনক ভাইয়াকে নিয়ে চলে গেলো। আর আমি গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। 


অরন্য আমার দিকে তাকালো!! কিন্তু আমি অভিমানের কারনে অরন্যের দিকে তাকালাম না। অরন্যের চোখ যেনো আমার দিক থেকে সরছে না। আমি যেনো তার চোখের নিশানা থেকে সড়াতে পারছিলাম না। 

ক্রমশেই আমার অভিমান কমতে লাগলো। তবুও অভিমান ধরে রাখতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু অভিমান ধরে রাখতে পারলাম না। তাই অরন্যকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম.....


আমিঃ~আমাকে এই ভাবে কষ্ট দেওয়ার কি দরকার ছিলো। আমি যদি হারিয়ে যেতাম ঐ যায়গা থেকে?


অরন্যঃ~আমি তো আমার অনন্যাকে চিনি যে সে বাসা খুঁজে আসতে পারবে। সেটা আমার খুব ভালো করেই জানা ছিলো। সারপ্রাইজ টা কেমন লাগলো??


আমিঃ~খুব বাজে লাগছে। এভাবে আর সারপ্রাইজ দিবেন না। নাটক করতে গিয়ে তো রিং টা ফেলে আসলেন??


খেয়াল করলাম অরন্য আমার এই কথা শুনে অট্র হাসি দিচ্ছে। তাই আমি বললাম........ 


আমিঃ~কি ব্যাপার এতো হাসি দিচ্ছেন যে.??


অরন্যঃ~হাসি দিচ্ছি এই জন্য?? আমি যে রিং টা ফেলে এসেছি সেটা নকল রিং ছিলো। আসল রিং টা আমার কাছে। নাটক টা বাস্তব মুখী করার এক অভিন্ন প্রচেস্টা আর কি। হা হা হা?? 😀😀


আমিঃ~এতো বড় চলনা যান আপনার সাথে আর কথা বলবো না??


অরন্য এবার আমাকে জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে তার নিঃশ্বাসের শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি। তার হার্ট বিটের আওয়াজ আমি শুনতে পাচ্ছি।। এইবার কানের কাছে মুখটা হালকা করে নিয়ে বললেন...........


অরন্যঃ~আই লাভ ইউ আমার পেত্নী??


এবার যেনো ওর প্রতি থাকা সব অভিমান ধুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে গেলো।অভিমান টা টিকিয়ে রাখার ব্যার্থ চেষ্টা করলাম! কিন্তু পারলাম না। আমি ফিস ফিস করে বললাম........


আমিঃ~আই লাভ ইউ টু ভুত মশাই। আমার মতো কালো মেয়েকে ভালোবাসলেন কিভাবে??


অরন্যঃ~মানুষের দৃষ্টি সুন্দর অসুন্দরের বৈষম্য করে। আমার দৃষ্টিতে তুমি সবচেয়ে বেশি সুন্দরী??


অরন্যের মুখে কথা টা শুনে আমি যেন নিমিষে কোথাও হারিয়ে গেলাম। কিছু বলতে চাইলেও আর বলতে পারছি না। কারন গলাটা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। অরন্য এবার আমার চোখ টা হাত দিয়ে চেপে ধরলো! আর বললো.......


অরন্যঃ~আমার সাথে একটু চলো??


👉👉আমি বললাম......


আমিঃ~কোথায়.??


অরন্যঃ~আগে চলো তারপর বলি। এতো নাছোরবান্দা মেয়েরে বাবা। এতো বকবক করতে পারে??


আমিঃ~হয়েছে হয়েছে আর বকবক করবো না এবার নিয়ে যান??


চোখ টা চেপে ধরে আস্তে আস্তে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। হুট করে চোখ খুললাম। খেয়াল করলাম আমি ছাদে। চারদিকে মোম বাতি দিয়ে সাজানো। ইরা আপু আর রনক ভাইয়া বাজি ফুটাতে লাগলো। পাশে মা দাঁড়িয়ে আছে উনার পাশে একজন বদ্রলোক দাড়িয়ে আছে,,আমার বুঝতে বাকি রইলো না উনি আমার শ্বশুর মশাই। আমি দৌড়ে গিয়ে উনাদের সালাম করলাম। ইরা আপু ও রনক ভাইয়া একটা কেক আমার সামনে আনলো। আর বললো........


ইরা আপুঃ~ভুত আর পেত্নী দুই জনে কেক টা কাটেন.? আর অরন্য ভাইয়া আপনি অনন্যাকে রিং পড়িয়ে দিন। আর অনন্যা তোর হাতের নকল রিং টা ফেলে দে এতো বোকা কবে হয়েছিস। সামান্য নাটক বুঝতে পারলি না। তুই তো বেশ নাছোরবান্দা আর বুদ্ধিমতি ছিলি??


ইরা আপুর কথা শুনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। আর বিড়বিড় করে বললাম প্রেমে পড়লে যে মানুষ বলদ হয় সেটা আমাকে দিয়ে প্রমান হলো।অরন্য ধাক্কা দিয়ে বললো......


অরন্যঃ~কি বিড়বিড় করা হচ্ছে হুম.??


আমিঃ~নাহ কিছু না.??


অরন্যঃ~একটু ওইদিকে তাকাও তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে??


আমিঃ~কি সারপ্রাইজ.? 


অরন্যঃ~ওই দিকে তাকিয়ে দেখো.?


আমি ওইদিকে তাকিয়ে দেখি বাবা,মা, চাচা, চাচি সবাই এসেছে। আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। বিয়ের পর এসব ঝামেলার কারনে আমার শ্বশুর বাড়িতে কেউ আসেনি। এভাবে সারপ্রাইজ পাবো বুঝতে পারিনি। আমি তো খুশিতে স্থীর হয়ে গিয়েছিলাম। নড়তেও পারছিলাম না। অরন্য আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললেন......


অরন্যঃ~এবার কেক টা কাটো আর আপনি শব্দ টা ইতি টান.??


আমিঃ~আপনি শব্দ টা ইতি টানবো মানে??


অরন্যঃ~মানে তুমি আমাকে তুমি করে বলবে??


আমিঃ~আমার তো লজ্জা লাগবে.??🙊🙊


অরন্যঃ~হয়েছে হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। কেক টা কাটো সবাই অপেক্ষা করছে??


এরপর কেক টা কাটলাম। কেক টা কাটার সাথে সাথে চার দিকে বাজি পুটতে শুরু করলো। কয়েকটা ফানুস আকাশে উড়তে লাগলো। কি যে এক অনুভূতি বলে বুঝানো যাবে না। মনের ভিতরটা এমন লাগছে যেনো ঝড় হওয়ার পরে শরীরে শীতল হাওয়া বইছে।। সত্যি বুঝতেই পারিনি আমার ভুত মশাই আমাকে এতোটাই ভালোবাসে৷ 


কেক টা কাটলাম? ভুত মশাই আমার হাতে রিং পড়িয়ে দিলো।৷ আমি লজ্জায় এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। অরন্য আমার পিছন পিছন রুমে আসলো। অরন্যকে বললাম.......


আমিঃ~আপনার তো...??


👉👉অরন্য আমার মুখটা চেপে ধরে বললো......


অরন্যঃ~আপনি না তুমি বলো.??


👉👉আমি লজ্জা মাখা মুখে বললাম........


আমিঃ~তোমার তো আমাকে ভালো লাগে না?? ইরা আপুকে প্রথম দেখাতে ভালো লেগেছিলো। হুট করে আমাকে ভালো লাগলো কিভাবে.??


👉👉উত্তরে অরন্য বললো.........


অরন্যঃ~কারন প্রথম দেখে ভালো লাগার চেয়ে দেখতে দেখতে ভালো লাগা অনেক শ্রেয়.??


👉👉আমি বললাম.......


আমিঃ~আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে??


অরন্যঃ~সত্যি কথা বললে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। বরং সত্যতার প্রমাণ হয়.??


সে দিনের পর থেকে অরন্য আর আমার জীবনটা পুরো পুরি পাল্টে গেলো। দেখতে দেখতে তিনটা বছর কেটে গেলো। এর মধ্যে আমি একটা পুত্র সান্তানের মা হলাম। একদিন পাশের বাসার ভাবি আমার সন্তানকে দেখতে এসে বললেন..........


অনন্যা ভাবি আপনার বিয়ে টা যেনো কিভাবে হয়েছে। 

উত্তরে আমি বললাম......👇👇


     💖💖আমাদের হাটাৎ বিয়ে হয়েছে💝💝


*************সমাপ্ত*************


এমন আরও অনেক রোমান্টিক গল্প পড়ুন।