সংসার জীবনের কষ্ট | সংসার ভাঙ্গার কারণ

 মেয়েদের সংসার জীবন

মেয়েদের সংসার জীবন

গল্পঃ_জীবনের_গল্প

                 ~সত্য অবলম্বন~


লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 

আমি স্নেহা, বাবা মায়ের আদরের বড় সন্তান। পরিবারে বাবা-মা আমি আর আমার ছোট দুই ভাই-বোন। বাবা-মায়ের আদর স্নেহ মায়া আর ভালোবাসা দিয়েই দিন যাচ্ছে আমাদের। কিন্তু এই ভালোবাসাও যেনো আমার কপালে বেশি দিন সইলো না। বিয়ের জন্য একের পর এক প্রস্তাব আসতে শুরু করলো। বাবা-মা ছাড়া নতুন বাড়িতে দিন গুলো কেমন কাটবে তার 

বিন্দু মাত্র ধারণা নেই আমার। মায়ের মুখে একটা 

কথা সব সময় শুনতাম,, মেয়ে মানুষের নিজের বাড়ি বলতে কিছু নেই, স্বামীর বাড়িই সব। 


দেখতে দেখতে মাস্টার্স কমপ্লিট করলাম। এদিকে বিয়ে দেওয়ার জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। মা এসে আমাকে বলছে ছেলে নাকি হুজুর, খুবই ভালো এবং ধার্মিক। শুনলাম ছেলে নাকি ব্যাবসাও করে, একটা দোকান রয়েছে ছেলের। এমন ছেলে এই যুগে পাওয়া দুষ্কর। এসব বিবেচনা করে আমিও বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয় এলো... 


অবশেষে আমাদের বিয়ের কাজটা সম্পুর্ণ হলো। মনের ভেতর তিলতিল করে যে স্বপ্ন আমি সাজিয়েছি সেই স্বপ্ন আমার পুরণ হলো। মনের মতোই একজন স্বামী পেলাম আমি। ও আমার খুব কেয়ার করে এবং সব কাজে হাতে হাতে সাহায্য করে। ওর ব্যাবসার কাজেই আমাদেরকে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। শ্বশুর শ্বাশুড়ি বাড়িতে একা থাকেন। আর আমরা দুজনে ব্যাবসার কারনে দোকানের কাছাকাছি একটা বাসায় ভাড়া থাকি, আর দিনে দিনে নতুন স্বপ্ন আঁকি।


কিন্তু এ সুখ যেনো আমার কপালে বেশি দিন রইলো না। বিয়ের এক মাস যেতেই জানতে পারলাম যে দোকানটা ওর ছিলো সেটা আসলে ওর নয়, দোকানটা ছিলো ওর বন্ধুর। বিয়ের সময় তার বন্ধুর দোকানটা ওর বলে আমাকে বিয়ে করায়। যাতে করে ছেলেকে বিয়ে দিতে কোনো মেয়ে-পক্ষ "ছেলে বেকার" কথাটা বলে আঙুল তুলতে না পারে। কোনো একটা ঝামেলার কারনে দোকান থেকে বের করে দেয় তাকে। 


অতপর রাতে আমার স্বামী রিহাব বাসায় এসে আমাকে সব খুলে বলে। আমি এসব শোনার পর তাকে আশ্বাস দিয়ে পরের দিন সকালে আমার বাবার বাড়ি নিয়ে গেলাম। এবং বাবার কাছে সবকিছু খুলে বললাম। 

বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রিহাবকে নতুন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান দাড় করানোর জন্য টাকা দেয়। এবং রিহাবও নতুন দোকান চালু করে, যার ফলাফল 

হিসেবে আমাদের সংসার মোটামুটি ভালোই চলে। 


দেখতে দেখতে বিয়ের ছয় মাস কেটে গেলো। এর মাঝে পরিবর্তন হলো জীবনের অনেক রঙ। সেই সাথে পরিবর্তন হলো রিহাব। হ্যা বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে রিহাব অনেকটা বদলে গেছে। রাতে বাসায় লেট করে আসা, ঠিক মতো কথা না বলা, এছাড়াও আরো কত 

কি তা আর নাইবা বলি। কিছু কথা নিজের মধ্যে থাক একান্তই। বিধাতার কাছে নাহয় দিলাম বিচার। 


একদিন আমি সন্দেহ বসতো রিহাবের মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম। ও তখন ওয়াশ রুমে ছিলো। কল লিস্ট থেকে মেসেঞ্জারে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি একটা হিন্দু মেয়ের সাথে ওর রিলেশন। মেসেজ যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি, লাস্ট যে মেসেজ টা দেখলাম সেটা ছিলো কালকে আমার বাসায় এসো বাসা পুরো ফাঁকা থাকবে। একটা মানুষ এতো নোঙরা হতে পারে কিভাবে? তাও সে একজন হুজুর হয়ে। সারা-জীবন যার জন্য নিজেকে তিলেতিলে গড়ে তুলেছি সেই স্বামী এভাবে ঠকাতে পারলো আমাকে।


আমি ওকে সেদিনের মতো কিছু বললাম না, অন্য রুমে চলে গেলাম আমি। কেনো জানি বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে, আকাশে মেঘ জমেছে, এই বুঝি বিশাল দ্বারায় বৃষ্টি নামবে। ভাবতে ভাবতে দুচোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ভালোবাসার মুল্য দিতে পারেনি রিহাব। সে আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নয়। 


রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি। রিহাব একটা বার জিজ্ঞেসও করলো না আমি খেলাম কিনা। সকালে ও নাস্তা খেয়ে দোকানে চলে গেলো। বাসায় আসতে প্রতিদিনের ন্যায় আজও লেট হলো। জামা কাপড় খুলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো রিহাব। আমি জামা কাপড় 

গুলো ঠিক করে রাখতে গিয়ে দেখি ওর শার্টে লিপিস্টিকের দাগ লেগে আছে। এসব দেখে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ফ্রেশ হয়ে আসতেই ওকে জিজ্ঞেস করলাম "কোথায় ছিলে এতোক্ষণ"। জবাবে

সে বললো "দোকানে"। তখন আমি শার্টে থাকা লিপিস্টিক দেখিয়ে বললাম "দোকানে থাকলে এসব কি"? সে আমতা আমতা করতে লাগলো, আমি ওর মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেজ গুলো দেখাতে লাগলাম। 


রিহাব চুপ করে আছে,, কোনো কথা বলছে না। সবশেষ নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, আর আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে বলেছে আর কখনো এসব কাজ করবে না। আমি আর কি করবো নিজেরই স্বামী। হাজারো ব্যাথা লুকিয়ে মাফ করে দিলাম ওকে। কিন্তু মনের মধ্যে রয়েছে একরাশ ঘৃনা। 

যে একবার বিশ্বাস ভাঙে তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না। 


দেখতে দেখতে আবারো কয়েক মাস কেটে গেলো। এই কয়েকটা মাস ভালো কাটলেও রিহাব এখন আবার আগের মতো শুরু করেছে। এসব সহ্য করতে না পেরে ওর বাবা-মাকে বিষয়টি জানালে তার মা বলেন 

"ঘরের বউ সুখ দিতে না পারলে ছেলে বাহিরে যাবেই"

এসব কথা শোনার পর উনাদেরকে আর কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি আমি। শুধু ভাবছি উনি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে এসব কথা কিভাবে বললো? তাও নিজের ছেলের বউকে। 


তারপর আমি বিষয়টি আমার বাবা-মাকে জানালাম।

আব্বু রিহাবকে অনেক বকাঝকা করলো। বিষয়টি আমার কাছেই খারাপ লেগেছে, তাই আমি আব্বুকে বারন করলাম ওকে কিছু না বলতে। 


বিয়ের এক বছর পর:-


যাইহোক,, ভালো খারাপের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত হতে লাগলো। কিন্তু ওর মধ্যে বিন্দু মাত্র পরিবর্তন 

দেখা দিলো না। এরই মাঝে একদিন তার মোবাইল 

চেক করে দেখি সে আরো ৩/৪ টা মেয়ের সাথে রিলেশন করে। এই মুহুর্তে আমি কি করবো কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না। কিভাবে ওকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবো সেটাও আমার অজানা। 


কি এমন পাপ করেছি আমি? যার জন্য মহান আল্লাহ আমাকে এমন শাস্তি দিচ্ছেন। কেনো আমার কপালে মহান আল্লাহ তায়ালা এমন একজন স্বামী দিলেন? আর ওর মা-ই বা কেমন? একজন মা তো ইচ্ছে 

করলে ছেলেকে ভালো শিক্ষা দিতে পারতেন। তিনি বরং ছেলেকে আশকারা দিয়ে গাছে উঠিয়েছেন। 


আমি তো কখনোই চাইনি আমার স্বামীর সাথে সংসার ভেঙে যাক, কিংবা ডিভোর্স হোক। তবে আমার 

জীবনে কেনো এমন হলো? আমি কি আদো ওর সংসারে ঠিক মতো জীবন যাপন করতে পারবো? 

নাকি এর থেকে বিচ্ছেদ আমার জীবনকে সুন্দর-ময় করে তুলবে? আপনারা সবাই আমাকে আপনাদের মুল্যবান বক্তব্য দিয়ে উপকৃত করবেন। 


~হ্যা এটা একজন আপুর হৃদয়বিদারক জীবনের গল্প~


জানিনা কতটা গুছিয়ে লিখতে সক্ষম হয়েছি। তবে এটা উপলব্ধি ক্ষণে ক্ষণে করতে পারতেছি যে সুন্দর হবে না এবং আপনাদের মনও কাড়বে না। তার একটাই কারন সেটা হচ্ছে ~আমরা কাল্পনিক জগৎকে প্রাধান্য দেই বেশি, আর বাস্তবতাকে কম~ 


#ধন্যবাদ_সবাইকে


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।