ইসলামিক গল্প ও কাহিনী | মেয়েদের ইসলামিক গল্প

ইসলামিক গল্প

ইসলামিক গল্প

একটি ইসলামিক গল্প। গল্পটি পড়ে আপনার জীবনের ধারণা পাল্টে যেতে পারে। তাই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ সম্পুর্ণ গল্পটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার। 

               ♥_____ধন্যবাদ সবাইকে_____♥


 -গল্পঃ_হুজুরের_বউ__(পর্বঃ_০১)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


অপুর্বঃ সোহেল জানিস আজ কলেজে একটা নতুন মেয়ে এসেছে??

সোহেলঃ এই তোকে না বলছি আমাকে সোহেল 

বলে ডাকবি না??


অপুর্বঃ সরি দোস্ত আর তোকে সোহেল বলে 

ডাকবো না??


সোহেলঃ হুমম এবার বল। খুব সুন্দরী নিশ্চয়ই?? 


অপুর্বঃ আরে আমি কি দেখছি নাকি?? 


সোহেলঃ তাহলে যে বললি সুন্দরী?? 


অপুর্বঃ আরে মামা মেয়েটা তো মাথা থেকে পা 

পর্যন্ত ঢেকে এসেছে??


সোহেলঃ বলিস কি? এতো জনপ্রিয় একটা পাবলিক ভার্সিটিতে পর্দা?? 


অপুর্বঃ হুমম সেটাই তো আশ্চর্যের বিষয়?? 


সোহেলঃ মেয়েটাকে তো দেখতে হয়। চল মামা 

একটু দেখে আসি??


অপুর্বঃ আচ্ছা চল??


সোহেলঃ হ্যালো কালো বোরকা??


মেয়েটা দেখেও না দেখার ভান করে সেখান থেকে চলে গেলো। সোহেল আর অপুর্ব মেয়েটার বিহ্যাব দেখে হা করে তাকিয়ে রইলাে। আজ পর্যন্ত কেউ সোহেলের সাথে এমন বিহ্যাব করেনি।। সেহেলের মতো হ্যান্ডসাম ছেলের পিছনে মেয়েরা আঠার মতো লেগে থাকে।

আর এই মেয়েটা এমন করলো?? খুব খারাপ লাগলো সোহেলের। তারপর অপুর্ব বললো........


অপুর্বঃ মামা মেয়েটার খুব দেমাগ??


সোহেলঃ একে বুঝাতেই হবে আমি কি জিনিস?? 


সোহেলের পাশ দিয়ে ফাস্ট ইয়ারের অবন্তি যাচ্ছিলো। তাকে ডাক দিলো সোহেল......... 


সোহেলঃ এই অবন্তী এই নতুন মেয়েটার সম্পর্কে 

তুমি কিছু জানো?? 


অবন্তীঃ না মেয়েটা খুব অদ্ভুত। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না?? 


সোহেলঃ মেয়েটা দেখতে কেমন রে??


অবন্তীঃ কালো ভুত মনে হয়। তাইতো কারো সামনে 

মুখ বের করে না??


সোহেলঃ তোমাদের সামনেও মুখ খোলে না?? 


অবন্তীঃ না ভাইয়া??


সোহেলঃ হুমম, এবার তুমি যেতে পারো। অপুর্ব 

শোন??


অপুর্বঃ হুমম বল??


সোহেলঃ সারা ভার্সিটিতে আজকে জানিয়ে দিস সামনের Exam টাইমে সবাই যেনো মুখ বের 

করে পরিক্ষার হলে প্রবেশ করে??


অপুর্বঃ ওকে দোস্ত?? 


পরিক্ষা শুরু হয়েছে। সবাই যে যার আসনে বসে আছে। অপুর্ব আর সোহেল ডুকলো৷ যেহেতু তারা কলেজের বড় ভাই তার উপর রাজনীতিও করে সেহেতু তাদের এসব পাওয়ার আছে। একে একে সবার দিকে তাকালো,হ্যা সবই ঠিক আছে। কিন্তু একি সেই মেয়েটা একই ভাবে এসেছে, সোহেলের কথা অমান্য করলো। সোহেলের রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। রেগে গিয়ে মেয়েটার কাছে গেলো আর বলতে শুরু করলো......... 


সোহেলঃ এই মেয়ে তোমার নাম কি। তুমি কি আমাদের এনাউন্সমেন্ট শুনতে পাওনি??


মেয়েটাঃ নুজাইফা আক্তার শারমিন। আর হ্যা আমি এনাউন্সমেন্ট শুনেছি??


সোহেলঃ তাহলে মুখ খুলো তারপর পরিক্ষা দাও??


শারমিনঃ ম্যাম কে ডাকুন তারপর মুখ খুলবো??


সোহেলঃ তুমি পরিক্ষা দিতে পারবে না??


এই কথা শুনে শারমিন উঠে চলে যেতে লাগলো ঠিক তখনই সোহেল বলে উঠলো........ 


সোহেলঃ তুমি কি জানো টেস্ট পরিক্ষা না দিলে তুমি ফাইনাল পরিক্ষায় বসতে পারবে না?? 


শারমিনঃ আমার আল্লাহর আইনের থেকে পরিক্ষা

বড় নয়??


কথাটা বলে শারমিন হল থেকে বের হয়ে যায়।। সোহেল 

রাগে গজগজ করতে করতে প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে বিচার দিলো শারমিন তার সাথে বেয়াদবি করেছে। সাথে সাথে যথারীতি শারমিনকে অফিস কক্ষে ডাকা হলো। তারপর প্রিন্সিপাল শারমিনকে বলে উঠলো.......


প্রিন্সিপালঃ শারমিন তুমি জানো তুমি কি করছো??


শারমিনঃ জ্বি স্যার আমি আল্লাহর কোরআনের কথা মেনেছি। যাদের সাথে বিবাহ হালাল তাদের সামনে 

পর্দা করেছি??


প্রিন্সিপালঃ তুমি কি জানো টেস্ট পরিক্ষা না দিলে ফাইনাল পরিক্ষা দিতে পারবে না?? 


শারমিনঃ স্যার মাফ করবেন। দুনিয়ার পরিক্ষা দিয়ে কি করবো যদি আখেরাতের পরিক্ষায় ফেল হয়ে যাই??


প্রিন্সিপালঃ আখেরাতের চিন্তা তো পরেও করতে পারবে, আগে তো ক্যারিয়ার গড়ে তুলো??


শারমিনঃ স্যার একটা বরফের খন্ড হাতে তুলে রাখলে তার ২ মিনিট অথবা ৫ মিনিট গ্যারান্টি আছে কিন্তু আমার নিঃশ্বাসের তো সেই গ্যারান্টিও নেই। আমি যে এখান থেকে সুন্দর ভাবে বাড়িতে যেতে পারবো তার গ্যারান্টি দিতে পারবেন বলুন??


প্রিন্সিপাল আমতা আমতা করে বললো.........


প্রিন্সিপালঃ হ্যা তা পারবো না। কিন্তু তুমি সোহেলর সাথে মিস বিহ্যাব কেনো করছো?? 


শারমিনঃ স্যার আমি ওনার সাথে মিস বিহ্যাব করি নাই। উনি আমার মুখ দেখতে চেয়েছে আমি 

বলেছি ম্যাডামকে ডাকতে! ম্যাডামের সামনে আমি

মুখ খুলতাম??


প্রিন্সিপালঃ তুমি এখন যেতে পারো। আর হ্যা পরিক্ষা দিয়ে যাবে। কোনো সমস্যা হলে আমি দেখবো??


শারমিনঃ শুকরিয়া স্যার?? 


সালাম দিয়ে শারমিন অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।

সোহেল প্রিন্সিপাল স্যারকে বলে উঠলো........


সোহেলঃ স্যার আপনি ওকে পরিক্ষা দিতে বললেন??


প্রিন্সিপালঃ হ্যা বললাম।। কারন ও যা বলেছে সবই

যুক্তি সঙ্গত বলেছে। তুমি এখন যাও, তোমার সাথে 

এই বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না?? 


সোহেলের মনে রাগ আর জেদ দুটোই চেপে বসলো আরো জোরালো ভাবে। 


শারমিন পরিক্ষা হলে গেলো। তার সিট পড়েছে অবন্তীর পাশে।। শারমিন অবন্তীর পাশে বসতেই অবন্তী লাফিয়ে উঠে বললো.........


অবন্তীঃ এই কালো ভুত তুমি আমার পাশে বসবে না। 

আনকালচার ক্ষেত??


শারমিন কোমল গলায় বললো..........


শারমিনঃ আমার কোনো দোষ নেই বোন। স্যার রা যেভাবে সিট ফেলছে আমি সেভাবে বসেছি?? 


অবন্তীঃ যেভাবে সিট ফেলুক তুমি আমার পাশে 

বসবে না ব্যাস?? 


শারমিনঃ তাহলে আমি কোথায় বসবো??


অবন্তীঃ জানিনা কোথায় বসবে বাট এখান থেকে 

সরে বসো?? 


অবন্তী আর শারমিনের কথাগুলো পাশের সিটের সুবর্না 

শুনছিলাে। সুবর্না শারমিনকে ডাক দিলো তার পাশে বসার জন্য। শারমিন গিয়ে সুবর্নার পাশে গিয়ে বসলো আর খুব ভালো করে সুবর্নাকে দেখলো, বেশ সুন্দর গঠনের একটা মেয়ে। অন্য সব মেয়ের মতো অতোটা মর্ডান না আবার অতটা ব্যাকডেটেড ও না৷ হিজাব পড়েছে কিন্তু অত্যাধুনিক ভাবে। সুবর্না বললো..........


সুবর্নাঃ কি দেখছো??


শারমিনঃ না কিছু না??


সুবর্নাঃ সিট পরিবর্তনের জন্য প্রিন্সিপাল এমন কি অন্য কোনো স্যার ম্যাডামরাও তোমাকে কিছু বলবে না?? 

 

শারমিনঃ কেনো??


সুবর্নাঃ কারন অবন্তী হচ্ছে প্রিন্সিপালের মেয়ে।। তাই অবন্তী ভার্সিটিতে অন্য রকম একটা পাওয়ার 

দেখিয়ে চলে। আর ওকে কেউ কিছু বলে না৷ বললে অবশ্য তার খবর আছে??


শারমিনঃ হুমম বুঝলাম। কিন্তু বোন তোমার নাম কি??


সুবর্নাঃ সুবর্না আক্তার নিঝুম? তোমার নাম কি?? 


শারমিনঃ মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর নাম। আমার নাম হচ্ছে শারমিন আক্তার নুজাইফা??


সুবর্নাঃ একটা কথা বলবো?? 


শারমিনঃ হুমম বলো??


সুবর্নাঃ এই যে তুমি কালো একটা বোরকা আর চার থেকে পাঁচ লেয়ারের হিজাব পড়ে,নিকাব নামিয়ে 

চোখে সানগ্লাস পড়ছো তাও কালচে গ্লাসের চশমা, আবার হাতে মোজা পায়ে মোজা তোমার কি গরম লাগে না ?? 


শারমিনঃ সত্যি কথা বলতে আমার একটুও গরম লাগে না। এসব পড়ল মনে কেমন জানি প্রশান্তি অনুভব করি। বেপর্দা ভাবে চললে তার শাস্তি জাহান্নাম। এখন যদি এটুকু গরম সহ্য না করে বেপর্দা ভাবে ঘুরাফেরা করি তাহলে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ কিভাবে 

সহ্য করবো? তুমি কি জানো নামায, রোজার মতো মেয়েদের জন্য পর্দাও ফরজ ইবাদত। পর্দা হলো 

ফরজে আইন৷ অর্থাৎ এটা আল্লাহর হুকুম ও আবশ্যক। 

|||

আল্লাহর এই আইন যদি আমরা না মেনে চলি তাহলে জাহান্নামের গর্জন রত কালো ভয়ানক আগুনে দগ্ধ হতে হবে লক্ষ কোটি বছর৷। জাহান্নাম এতো ভয়ংকর যে ৭০ হাজার ফেরেশতা ৭০ হাজার লোহার শিকল দিয়েও বেঁধে রাখতে পারছে না??


সুবর্নাঃ হুমম বাট আমিও তো স্কার্ফকে হিজাবের মতো 

করে পড়ি আর যথেষ্ট শালীন ভাবে থাকি, শুধু মুখ ঢাকি না তাতে কি আমার পর্দা হয় না??

শোনো শারমিন মনের পর্দাই বড় পর্দা। তাছাড়া তোমাকে তো কেউ দেখতে পারে না এসব আবরণের জন্য। সবাই ভাবে তুমি কালো ভুতের মতো??


শারমিনঃ মাশাআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ?? 


সুবর্নাঃ হোয়াট। সবাই তোমাকে কালো ভুত বলে এতে তোমার খারাপ লাগে না?? 


শারমিনঃ না আমার একদম খারাপ লাগে না। কারন তারা আমার শরীরের একটু অংশ দেখতে পারে না বলেই কিন্তু কালো ভুত বলে। তার মানে আমার পর্দা নিখুঁত?? 


সুবর্নাঃ তুমি কি পাগল?? 


শারমিনঃ অবশ্যই না। শোনো সুবর্না, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন--হে ঈমানদার নারীগন, তোমরা বাড়ির ভিতরে থাকো এবং বাড়ির বাহির হইও না, যেভাবে জাহিলিয়া যুগে নারীরা 

তাদের সুন্দর্য প্রকাশ করতে।"(সুরা, আহযাব-৪৩)।।

|||

আবার অন্য আয়াতে বলেছেন--যদি তোমরা প্রয়োজনে বের হও তাহলে তোমাদের উপর একটা লম্বা চাদর টেনে নাও এবং নিজেকে আবৃত করে বের হও।"(সুরা, আহযাব-৬০)। রাসুল (সাঃ) বলেছেন "" নারী যখন বালেগ (ঋতুবতী) হয়ে যায় তখন তার সতর দেখা এবং দেখানো জায়েজ নয়। তার জন্য পর্দা ফরজ।(মুসলিম)

যারা সতর দেখায় এবং দেখে তাদের উপর আল্লাহর লানত" আর তাছাড়া মুখ থেকেই তো পাপের সুচনা। 

যেই নারী বোরকা পড়ে মুখ খোলা রাখলো,, সে যেনো জানালা বন্ধ করে দরজা খোলা রাখলো??


সুবর্নাঃ আচ্ছা এই বিষয় নিয়ে পরে আলোচনা করবো৷ 

স্যার আসতেছে, পরিক্ষা শুরু হবে এখন??


স্যার আসলো, পরিক্ষা শুরু হলো এবং পরিক্ষা চলছে।।

শারমিন ভালোই লিখতেছে। লিখার পর দেখলো অবন্তী কলম কামড়াচ্ছে। হয়তো সে লিখতে পারছে না। যেহেতু শারমিনের লিখা শেষ সেহেতু অবন্তীকে হেল্প করার জন্য উদ্দেশ্য করে ডাকলো। কিন্তু অবন্তী বিরক্ত বোধ করে শারমিনের ডাকে সাড়া দিলো না। শারমিন ভাবলো হয়তো শুনতে পায়নি তাই আবার ডাক দিলো৷

এবার অবন্তী রেগে গেলো তারপর বললো........


-গল্পঃ_হুজুরের_বউ__(পর্বঃ_০২)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


স্যার আসলো, পরীক্ষা শুরু হলো এবং পরিক্ষা চলছে।।

শারমিন ভালোই লিখতেছে। লিখার পর দেখলো অবন্তী কলম কামড়াচ্ছে, হয়তো সে লিখতে পারছে না। যেহেতু শারমিনের লিখা শেষ সেহেতু অবন্তীকে হেল্প করার জন্য উদ্দেশ্য করে ডাকলো। কিন্তু অবন্তী বিরক্ত বোধ করে শারমিনের ডাকে সাড়া দিলো না। শারমিন ভাবলো হয়তো শুনতে পায়নি তাই আবার ডাক দিলো৷

এবার অবন্তী রেগে গেলো তারপর বললো........


অবন্তীঃ এই কালো ভুত আমাকে ডাকছিস কেনো?? 


শারমিনঃ না ইয়ে মানে তুমি তো না লিখে বসে আছো 

আর আমার তো লিখা শেষ তাই ভাবলাম তোমাকে একটু হেল্প করি??


অবন্তীঃ তোর কাছ থেকে আমি সাহায্য নিবো? তুই অবন্তীকে হেল্প করতে চাস। তোকে দেখে তো মনে

হয় পরিক্ষার প ও জানিস না?? 


সুবর্নাঃ ও তোমাকে তখন কত অপমান করলো। তারপরেও নির্লজ্জের মতো তাকে হেল্প করতে 

গেলে কেনো?? 


শারমিনঃ ও পারছিলাে না তো তাই?? 


পরিক্ষা শেষ করে সুবর্না আর শারমিন বাড়ির পথে পা বাড়ালো। তখন তাদের পথ আঁটকে দাঁড়ালো সোহেল। 

আর বললো.....


সোহেলঃ শারমিন দাঁড়াও তোমার সাথে কথা আছে?? 


সুবর্নাঃ সরি শারমিন কোনো কথা বলবে না। আপনি পথ ছাড়ুন নাহলে প্রিন্সিপাল কে ডাকবো??


সোহেলঃ এই মেয়ে তুমি চুপ থাকো। আমি শারমিনের সাথে কথা বলবো?? 


শারমিনঃ দেখুন আপনি আমার জন্য হারাম। তাই 

আমি চাইনা আপনি আমার সাথে কথা বলেন। 

আল্লাহ হাফেজ?? 


সুবর্না আর শারমিন পথ চলছে। হুট করে সুবর্না বলে উঠলো........ 


সুবর্নাঃ শারমিন একটা কথা বলবো?? 


শারমিনঃ হুমম বলো??


সুবর্নাঃ সোহেল ছেলেটা ভালো না??


শারমিনঃ জানি?? 


সুবর্নাঃ জানলে ভালো। ওর থেকে সাবধানে থাকবা??


শারমিনঃ আচ্ছা বোন আমি আমার বাড়ির কাছে এসে গেছি। আমি এখন যাই আর তুমিও সাবধানে যেও??


সুবর্নাঃ আচ্ছা বাই??


শারমিন কখন এসেছিস। কথাটা বললো শারমিনের আম্মু। তারপর শারমিন বললো......


শারমিনঃ এইতো এখন??


আম্মুঃ খেতে আয়??


শারমিন ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে খেতে শুরু করলো। ঠিক তখনই তার আম্মু বলে উঠলো....... 


আম্মুঃ তা নতুন ভার্সিটি কেমন লাগছে?? 


শারমিনঃ আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আম্মু??


আম্মুঃ অবস্থা যাই আসুক কখনো বেপর্দা হবি না। বেপর্দার শাস্তি কিন্তু খুব ভয়ানক?? 


শারমিনঃ জানি আম্মু। তাছাড়া আল্লাহ আমার 

পাশে আছেন??


আম্মুঃ হুমম যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট?? 


শারমিনঃ হুমম আম্মু। তুমি খাও আমি আসর এর নামাজ পড়ে আসছি?? 


পরের দিন সুবর্না সেলোয়ার-কামিজের সাথে রঙচঙা হিজাব পড়েছে। অনেক গুলো ক্লিপ লাগিয়ে মাথার হিজাব লাগিয়েছে। বাসে উঠলো সুবর্না কিন্তু কোনো সিট পেলো না, তাই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। তার পাশে কিছু 

ছেলেরাও দাঁড়িয়ে আছে। তারা বাসে ঝাঁকি লাগার অজুহাতে সুবর্নাকে ছুয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সুবর্না খুব বিরক্ত বোধ করছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। 

পাশের সিটে একজন বয়স্ক লোক বসেছে সেও সুবর্নাকে আড় চোখ দেখছে। হঠাৎ বাস দাঁড়িয়ে

গেলো। বাস দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারন হলো একজন মহিলা যাত্রী বাসে উঠেছে। কাছাকাছি আসার 

পর সুবর্না শারমিনকে দেখতে পেলো।৷ শারমিনকে দেখে সুবর্না খুশি হয়। শারমিনের কাছে এসে বাস দাঁড়ালো। বাস আবার চলতে শুরু করলো। 


শারমিনঃ কেমন আছো সুবর্না??


সুবর্নাঃ ভালো আছি তুমি কেমন আছো?? 


শারমিনঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো?? 


গাড়ির মধ্যে থাকা ছেলে গুলো শারমিনের প্রতি সম্মানে মাথা নিচু করে দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে। বেপর্দা নারীর এই জগতে এবং পর জগতে কোনো মুল্য নেই। যদি তুমি বেপর্দা হয়ে চলো তাহলে আশেপাশের লোকজন তোমার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাবে। আর যখন তুমি আপাদমস্তক ঢেকে নিজেকে আবৃত করে চলবে তখন দেখবে আশেপাশের লোকগুলোর চেহারা পাল্টে যাবে৷ তারা আর তোমাকে সেই বাজে দৃষ্টিতে দেখবে না৷ বরং সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাবে। পুরুষ মানুষের পুরুষত্বটা হচ্ছে একটা লোভী বিড়ালের মতো। আর নারীরা হচ্ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত মাছ। বিড়ালকে যেমন মাছের প্রতি দুর্বল করে বানানো হয়েছে ঠিক তেমনই পুরুষকে নারীর প্রতি দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। যত কঠিন মনের হোক কোনো পুরুষ, তবুও সে একটা নারীর তরে মরণের পথে চলে যেতে পারে৷ তাই লোভী বিড়ালের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে নিজেকে ডেকে রাখতে হয়।।


আর যদি নিজেকে উন্মুক্ত করে মুক্ত বাতাসে কেউ ঘুরে বেড়ায় তাহলে তো তার প্রতি ভয়ংকর ক্ষুদার্থ চিতার থাবা আসবেই। তখন ধর্ষনকারীর শাস্তি চাই বলে চিৎকার চেচামেচি করলে ধর্ষনকারীর বিচার হবে ঠিক কিন্তু হারানো ইজ্জত সম্মান ফিরে পাবেন না। 


ভার্সিটিতে আসার পর শারমিন আর সুবর্না এক সাথে হলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাে। আজকে আবার সোহেল তার পথ আঁটকে দাঁড়ানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ শারমিন থেমে গেলো। সুবর্না বললো.....


সুবর্নাঃ কি হলো দাঁড়িয়ে গেলি কেনো?? 


শারমবন কোনো কথা না বলে দৌঁড়ে ক্যাম্পাসের দিকে যেতে লাগলো৷ সোহেল অবাক হয়ে গেলো ওর দৌঁড়ানো দেখে। সুবর্নাও পিছনে পিছনে দৌঁড়াতে শুরু করলো।। সোহেল কাছে গিয়ে দেখলো শারমিন একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর সোহেলকে দেখে শারমিন সুবর্নাকে বললো.........


শারমিনঃ ওকে যেতে বলো সুবর্না, এখানে একটা 

মেয়ে আছে?? 


সুবর্নাঃ কি হয়েছে আগে বলো??


শারমিনঃ আগে তুমি ওকে যেতে বলো?? 


তারপর সুবর্না কোনো মতে সোহেলকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে এখান থেকে বিদায় করলো৷ তারপর শারমিন একটা অবাক করার মতো কান্ড করলো, এক টানে হিজাবটা খুলে ফেললো। শারমিনের হিজাব খুলতে দেখে সুবর্না হা করে তাকিয়ে রইলাে। শারমিন মেয়েটিকে তার নিজের হিজাব দিয়ে জড়ালো৷ তারপর ব্যাগ থেকে আরেকটা এক্সট্রা হিজাব বের করে তার নিজের মুখে আবার আগের মতো করে ঢাকলো৷ 


সুবর্না গিয়ে ম্যামকে ডেকে আনলো৷ আর এইযে অবন্তী 

প্রিসিপালের মেয়ে। ক্যাম্পাসের পাশে রাস্তায় পড়ে ছিলো, এক্সিডেন্ট করেছিলো,অবস্থা খারাপ, প্রচুর রক্ত 

ক্ষরন হয়েছে আর কাপড় ছিড়ে গেছে। 


প্রিন্সিপাল স্যার এসেই কান্না জুড়ে দিলো, তারপর দ্রুত হসপিটালে নিয়ে গেলো। সোহেল আড়াল থেকে বের হয়ে এলো।। সোহেল তো তখন যায়নি লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখেছিলো, শারমিনের চেহারা দেখে সে হতভম্ব হয়ে গেছে।। আর মানুষের প্রতি শারমিনের ভালোবাসা দেখে অনুশোচনায় চোখে পানি চলে এসেছে৷ সাথে নিয়ে আসা ছুরিটা হাত থেকে ফেলে দিলো৷ যেটা দিয়ে ও শারমিনের হিজাব কাটতে চেয়েছিলো। 


ওইদিকে অবন্তীকে দেখে ডাক্তার বললো,, অনেক রক্ষা ক্ষরন হয়েছে ইমিডিয়াটলি দুই ব্যাগ B+ রক্ত লাগবে। 

একে একে সবার ব্লাড টেস্ট করেও রক্ত পাওয়া গেলো না৷ অবশেষে শারমিনের রক্ত ম্যাচ করলো আর রক্ত দিলো৷ সুবর্না কিংকর্তব্য বিমুড় হয়ে রইলো৷ অবন্তী শারমিনকে যা অপমান করলো, এরপরেও সে অবন্তীকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালো?সুবর্না হলে তো ওই মেয়ের মুখ দর্শন করতো না৷ সত্যি শারমিন দেখতে যেমন, তার ব্যাবহার কাজ কর্ম তেমন অমায়িক। সত্যি শারমিন, রুপ লাবণ্য আর শতগুণে অনন্যা। 


ডাক্তার এসে খবর দিলো, অবন্তীর জ্ঞান ফিরেছে৷ এই কথা শুনে অবন্তীর বাবা, সুবর্না আর শারমিন দৌঁড়ে গেলো অবন্তীর কাছে৷ অবন্তীকে জড়িয়ে ধরলো৷ ঠিক তখনই অবন্তী বলে উঠলো............. 


অবন্তীঃ বাবা তুমি কেমন আছো?? 


প্রিন্সিপালঃ আমার কথা ছাড় আগে বল তুই কেমন আছিস??


অবন্তীঃ আমি ভালো আছি?? 


কথাটা বলতেই অবন্তীর চোখ গেলো শারমিনের দিকে। শারমিনকে দেখেই উত্তজিত হয়ে বললো........


অবন্তীঃ তুমি?? তুমি এখানে কেনো?? তোমাকে কত অপমান করলাম তবুও তোমার লজ্জা হলো না??


প্রিন্সিপালঃ কি বলছো এসব তুমি?? 


অবন্তীঃ বাবা এই কালো ভুতটা এখানে কেনো? 


সুবর্নাঃ অবন্তী তুমি কি জানো ওর জন্যই তুমি বেঁচে আছো??


অবন্তীঃ মানে??


প্রিন্সিপালঃ মানে এই শারমিন তোমাকে প্রথম রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে হসপিটালে নিয়ে আসে??


অবন্তীঃ কিহহহ??


সুবর্নাঃ হ্যা এবং রক্তের অভাবে তুমি যখন মারা যাচ্ছো তখন ও তোমাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছে??


অবন্তীঃ কি বলছো তোমরা??


প্রিন্সিপালঃ হুমম ঠিক বলছি??


অবন্তী ছলছল চোখে শারমিনের দিকে এগিয়ে গেলো। 

তারপর জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো.........


অবন্তীঃ আমাকে মাফ করে দাও। তুমি আমাকে রক্ত দিয়েছো আর আমি তোমাকে কত অপমান করেছি। 

প্লিজ আপু আমাকে মাফ করে দাও??


শারিমন চোখ মুছে দিয়ে বললো.........


শারমিনঃ আরে আরে কি বলছো? আমরা আমরাইতো এতে রাগের কি আছে?? 


তারপর অবন্তী প্রিন্সিপালকে বললো........


অবন্তীঃ আব্বু আমি শারমিনের কাছে ইসলামিক নিয়মাবলি শিখতে চাই??


প্রিন্সিপালঃ হ্যা হ্যা নিশ্চয়ই! তুমি অবশ্যই শিখবে। 

এটা তো খুশির খবর??


অবন্তীঃ ধন্যবাদ আব্বু ❤❤


সুবর্না,শারমিন আর অবন্তী এখন সব থেকে বেস্টফ্রেন্ড।

একজন আরেকজনের কলিজার অর্ধেক৷ অবন্তীর এখন আর আগের মতো অহংকার আর বেপর্দা নেই। অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে❤❤। সুবর্না, শারমিন ও অবন্তী ক্যাম্পাসে বসে আছে ঠিক তখন সোহেলে ওদের কাছে আসলো। তারপর অবন্তী বললো...........


-গল্পঃ_হুজুরের_বউ__পর্বঃ_০৩

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


সুবর্না,শারমিন আর অবন্তী এখন সব থেকে বেস্টফ্রেন্ড।

একজন আরেকজনের কলিজার অর্ধেক৷ অবন্তীর এখন আর আগের মতো অহংকার আর বেপর্দা নেই। অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে❤❤। সুবর্না, শারমিন ও অবন্তী ক্যাম্পাসে বসে আছে ঠিক তখন সোহেলে ওদের কাছে আসলো। তারপর অবন্তী বললো........... 


অবন্তীঃ কি ব্যাপার তুমি এখানে কেনো??


সুবর্নাঃ হ্যা তুমি এখানে কেনো?? 


সোহেলঃ শারমিন আমি তোমার কাছে মাফ চাইতে এসেছি??


সুবর্নাঃ ওও,, কি ব্যাপার হঠাৎ এতো পরিবর্তন?? 


সোহেলঃ আসলে আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি 

আর তাইতো ক্ষমা চাইতে এসেছি??


শারমিনঃ হুমম আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি এবার এখান থেকে যান??


সোহেলঃ ইয়ে মানে.....??(পুরোটা বলতে না দিয়ে)


সুবর্নাঃ আরো কিছু বলবেন??


সোহেলঃ নাহহহ??


কথাটা বলে সোহেল চলে গেলো। ঠিক তখনই অবন্তী সুবর্নাকে বলে উঠলো........... 


অবন্তীঃ সুবর্না জানিস আমার কি মনে হয়??


সুবর্নাঃ কি??


অবন্তীঃ সোহেল মনে হয় শারমিনকে ভালোবেসে ফেলছে??


শারমিনঃ হোয়াট??


সুবর্নাঃ অবাক হওয়ার কি আছে?? 


শারমিনঃ আমার ছোট থেকে স্বপ্ন আমি একজন হুজুরের বউ হবো??


অবন্তীঃ তো ওর সাথে প্রেম করে ওকে হুজুর 

বানিয়ে ফেল??


শারমিনঃ ইম্পসিবল?? 


সুবর্নাঃ কেনো?? 


শারমিনঃ কারন ইসলাম উইদাউট ম্যারিড লাভ 

হারাম করে দিয়েছে এটা জানিস??


অবন্তীঃ কি??


শারমিনঃ হ্যা,, কারন অবৈধ প্রেম জিনা ব্যাবিচারের দিকে নিয়ে যায়। এছাড়া নারমাহরাম ছেলেদের 

দেখলে চোখর জিনা,কথা বললে মুখের জিনা,স্পর্শ করলে হাতের জিনা?? 


সুবর্নাঃ wait wait..কোরাআন হাদিসে কোথায় বলা আছে প্রেম হারাম?? 


শারমিনঃ এমন ভাবে বলছিস যেনো কোরআন হাদিস আত্তস্থ শোন তাহলে রাসুল (সাঃ) বলেছেন 

নানমহারামকারো সাথে কথা বলা মুখের জিনা, 

তাদের দিকে অগ্রসর হওয়া পায়ের জিনা, স্পর্শ করা হাতের জিনা,আর যৌনতা সেটাকে পুর্নতা দেয় অথবা অপুর্ন রাখে।(সহীহ বুখারী)

|||

প্রেম করলে তো কথা বলা, দেখা করা তো হবেই। আর তাছাড়া অবিবাহিত জিনাকারীর শাস্তি হলো কোনো রকম দয়া না দেখিয়ে নির্দয় ভাবে ১০০ দোররা চাবুক 

মারা৷ আর বিবাহিত জিনাকারীর শাস্তি হলো রজম বা প্রস্তর ঘাতে মৃত্যুর নির্দেশ।(তবারনী সহীহুল জামে হাদীস-৪৯২১)??? 


অবন্তীঃ হুমম বুঝতে পারছি জান্নাতের অপ্সরী, এবার আমার একটা প্রবলেম সল্প করে দে??


শারমিনঃ কি প্রবলেম??


অবন্তীঃ আমার কাজিন নেহা, ক্লাস নাইনে পড়ে, খুব ভালো ছাত্রী ছিলো, বাট দুই তিন মাস ধরে পড়া 

লেখাও করে না আর অন্য রকম হয়ে গেছে।। চাচা 

চাচি খুব চিন্তিত?? 


সুবর্নাঃ শারমিন তুই একটা তাবিজ দিয়ে দে??


শারমিনঃ তাবিজ লাগবে না, তোর বোনরে যে বয়স 

এই বয়সটা খুব বিপদ জনক। তুই দেখিস তো ওর ফোন আছে কি না?? 


অবন্তীঃ হ্যা আছে তো??


শারমিনঃ তাহলে হয়েছে?? 


সুবর্নাঃ কি হয়েছে?? 


শারমিনঃ অবন্তী তুই দেখবি ওর বিছানার নিচে সিম কয়টা আর এফ এন এফ নাম্বার কয়টা। কার সাথে বেশি কথা বলে। তারপর হাত থেকে ফোনটা সরাবি ব্যাস প্রবলেম সল্ব??


অবন্তীঃ তাহলে কাজ হবে?? 


শারমিনঃ হবে মানে ১০০% হবে দেখিস তুই??


অবন্তীঃ ওকে দোস্ত?? 


এরপর যার যার মতে সবাই চলে গেলো। বাসায় গিয়ে অবন্তী নেহাকে ডাক দিলো........


অবন্তীঃ এই নেহা কোথায় তুই??


নেহা রুম থেকে বের হয়ে আসলো আর বললো.........


নেহাঃ কি হয়েছে আপু??


অবন্তীঃ তোর মোবাইল টা দে একটু?? 


নেহাঃ কেনো??


অবন্তীঃ দরকার আছে?? 


অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও নেহা মোবাইলটা দিলো অবন্তীর হাতে। অবন্তী মোবাইল হাতে নিয়ে চেক করে পুরাই অবাক। ফেসবুক খুলেছে, ইমু খুলেছে, আর এস এম এস এর অভাব নেই। এসব দেখে অবন্তী বললো.......


অবন্তীঃ নেহা এসব কি? 


নেহাঃ ইয়ে মানে আপু??


অবন্তীঃ চুপপ একটাও কথা বলবি না। এজন্যই তোমার স্টাডি স্বর্গে উঠেছে। এই তোর বয়স কত??


নেহাঃ ১৬+??


অবন্তীঃ আর এখনি এতোকিছু। আজ থেকে তোর মোবাইল আমার ড্রয়ারে বন্ধি থাকবে??


নেহাঃ কিন্তু আপু??


অবন্তীঃ কোনো কিন্তু না।। বেশি কথা বললে চাচা চাচিকে জানাবো। যাও নিজের ঘরে গিয়ে পড়তে 

বসো। উফ পোলাপাইনের দুধ দাঁত পড়েনি আর 

এখনি প্রেম করে?? 


ওইদিকে শারমিন বাড়িতে যাওয়ার পর শারমিনের বড় ভাই জাহেদ ডাক দিলো। শারমিন তার ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললো.........


শারমিনঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া আসবো??


জাহেদঃ হ্যা আয় শারমিন??


শারমিন কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। জাহেদ বলে উঠলো...... 


জাহেদঃ বস এখানে বস, যে কারনে ডেকেছি??


শারমিনঃ হুমম বলো??


জাহেদঃ মা আমার জন্য পাত্রী দেখেছে তোদের 

সাথে পড়ে শুনেছি??


শারমিনঃ নাম কি ভাইয়া??


জাহেদঃ নাম নাকি সুবর্না, পুরো নাম সুবর্না 

আক্তার নিঝুম?? 


শারমিনঃ ভাইয়া সুবর্না তো আমার অর্ধেক??


জাহেদ হেসে বললো..........


জাহেদঃ হাহাহা তাই??


শারমিনঃ হ্যা ভাইয়া, সুবর্না আমার ভাবি হবে? আমার যে কি খুশি লাগছে??


জাহেদঃ আমার বোন যখন এই বিয়েতে রাজি তাহলে বিয়েটা তো আমাকে করতেই হবে।। মাকে বল দিন তারিখ ঠিক করতে??


শারমিন খুশিতে লাফাতে লাফাতে চলে গেলো। জাহেদ, শারমিন আর ওর মা সুবর্নাদের বাসায় গিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আসলো৷ শারমিনের ভাই জাহেদ একজন কোরআনে হাফেজ এবং সৎ লোক। এলাকার সবাই জাহেদকে খুব ভালোবাসে। 


সুবর্না ভার্সিটিতে একা একা বসে আছে।। শারমিন গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। সুবর্না চমকে উঠে রাগী লুক নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে শারমিন দাঁড়িয়ে আছে আর হাসছে। এরপর শারমিন হাসি থামিয়ে বললো......


শারমিনঃ কি ভাবি সাহেবা এখানে একা একা বসে আছেন যে! অবন্তী কোথায়?? 


সুবর্নাঃ wait wait.. ভাবি মানে??


শারমিনঃ ভাবি মানে ভাবি, আমার ভাইয়ার হবু বউ??


সুবর্নাঃ ফাজলামো হচ্ছে? আমি তোর বান্ধবী বুঝলি??


শারমিনঃ আরে বুবু সময় বলে দিবে ভাবি নাকি বান্ধবী। যাইহোক অবন্তী কোথায় রে??


সুবর্নাঃ অবন্তীকে আজ পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে??


শারমিনঃ কি বলিস? ছেলে কি করে?? 


সুবর্নাঃ ছেলে কি আর করবে? ছেলে বেকার??


শারমিনঃ এটা কেমন কথা! তারা কি জানে না কর্মহীন ছেলের জন্য রাসুল (সঃ) বিবাহ নিষেধ করে রোজা রাখার উপদেশ দিয়েছে??


সুবর্নাঃ ছেলে বেকার থাকুক ছেলের বাবার তো আছে??


শারমিনঃ কা-পুরুষের মতো বাবার টা কতদিন খাবে শুনি? তাছাড়া আগে থেকে কাজ কর্মের অভ্যাস না থাকলে পরে যে কপাল চাপড়াবে??


সুবর্নাঃ তোর এই একটাই সমস্যা, সব জায়গাতে কোরআন হাদিস টেনে আনিস??


শারমিনঃ এটা কিন্তু ঠিক বলিস নাই। সব জায়গাতে 

যদি কোরআন হাদিস আমরা মেনে চলতাম তাহলে দেশে শান্তি সু-শৃঙ্খলা বজায় থাকতো??


সুবর্নাঃ কিভাবো??


শারমিনঃ যেমন মনে কর,, চুরি করলে চোর ছোট হোক বা বড় তার হাত কেটে দাও। ধর্ষন কারীর অপরাধ প্রমানিত হলে হয়তো বিয়ে করো নয়তো গর্দান কেটে দাও। এসব যদি কেউ মানতো বা করতো তাহলে একজনের শাস্তি দেখে বাকীরা ভয়ে অপরাধ করা তো দূরের কথা, অপরাধের কথা চিন্তাও করতো না?? 


সুবর্নাঃ হুমম তখন দুর্নিতীও থাকতো না?? 


কথাটা শেষ করতে পিছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো

Excuse me...সুবর্না পিছনে তাকিয়ে দেখলো সোহেল দাঁড়িয়ে আছে। সোহেলকে দেখে সুবর্না বলে উঠলো..... 


সুবর্নাঃ কি ব্যাপার আপনি এখানে??


সোহেলঃ না মানে আসলে হয়েছে কি??


সুবর্নাঃ আমি বরাবরি দেখে আসছি, শারমিন যেখানে থাকে আপনি তার চারপাশে ঘুরঘুর করেন, মতলবটা কি বলেন দেখি??


সোহেলঃ ম-ম-ম মতলব কই। কি-কিছু না তো। ওই এমনি??(তোতলাতে তোতলাতে)


সুবর্নাঃ গলাটা এমন বিড়ালের মতো শুনচ্ছে কেনো? না মানে আগে তো খুব সিংহের মতো গর্জন করতেন আর এখন দেখি ইঁদুরের মতো চি চি করেন গঠনা কি??


সোহেলঃ ইঁদুর? ইঁদুর কোথায়?? আমি তো এমনি ফ্রেন্ডশিপ করতে আসলাম??


সুবর্নাঃ ফ্রেন্ডশিপ? ও আচ্ছা ফেন্ডশিপ করতে এখানে কেনো ছেলেদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করেন গিয়ে?? 


সোহেলঃ না না ছেলেরা কেমন জানি, আর তোমরা

কত ভালো?? 


শারমিন এবার বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো......... 


শারমিনঃ এখানে কি সিনেমা হচ্ছে? আর আমি কি অডিয়েন্স? আর আপনি! আপনি বারবার কেনো আমাদের চারপাশে ঘুরঘুর করেন? আর আপনি জানেন না আমি নান মাহরাম কারো সাথে দেখা বা কথা বলতে পছন্দ করি না। শোধরে যান সময় 

থাকতে। এই সুবর্না চল??


কথাটা বলে সুবর্না আর শারমিন চলে গেলো। সোহেল চলে গেলো মসজিদের ইমামের কাছে। ইমামের কাছে গিয়ে সোহেল বললো........


সোহেলঃ আসসালামু আলাইকুম?? 


ইমাম সাহেবঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম?? 


সোহেলঃ হুজুর একটা কথা বলার ছিলো?? 


ইমাম সাহেবঃ বলো বাবা কি কথা বলবে??


সোহেলঃ হুজুর আমি একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করি, তাকে বিয়ে করতে চাই, কিন্তু মেয়েটা আমাকে সহ্য করতে পারে না। দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়?? 


ইমাম সাহেবঃ মেয়েটা কেমন??


সোহেলঃ মেয়েটা খুবই পরহেজগার এবং পর্দাশীল??


ইমাম সাহেবঃ মাশাআল্লাহ। মেয়েটা পরহেজগার বলেই তোমাকে পাত্তা দেয় না। ও নিশ্চয়ই মনে মনে কোনো হুজুরকে চায়। তবে বাবা তুমি যদি ওকে সত্যি ভালোবাসো এবং বিয়ে করতে চাও তাহলে আগে ওর মনের মতো হও। তারপর ফ্যামিলি গত ভাবে বিয়েটা সেরে ফেলো। নিঃশ্বন্দেহে আল্লাহর ফয়সালা সর্বত্তম?? 


সোহেলঃ তাহলে আমাকেও একজন হুজুরের মতো ভালো হতে হবে??


ইমাম সাহেবঃ হ্যা বাবা,, তুমি আজ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মনোনিবেশ করো। আর বিভিন্ন ইসলামিক 

বই এবং মিডিয়া থেকে ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে পারবে?


সোহেলঃ ধন্যবাদ হুজুর??


আজকে থেকে সোহেলের লাইফের নতুন প্রচেষ্টা শুরু করলো। ওইদিকে শারমিনের মা সাহিদা বেগম শারমিনকে ডাকতে লাগলো........


সাহিদা বেগমঃ শারমিন কেথায় গেলি মা। এদিকে আয়?? 


শারমিন মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে বললো............


শারমিনঃ কি হয়েছে?? 


সাহিদা বেগমঃ আজ আমরা জাহেদের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো। তুই তৈরী হয়ে নে??


শারমিনঃ হ্যা মা, বোরকা পড়ে আসছি দাঁড়াও?? 


সুবর্নাঃ আম্মু জাকিয়া বেগম সুবর্নাকে বললো..........


জাকিয়া বেগমঃ সুবর্না তৈরী হয়ে নে তোকে আজ দেখতে আসবে??


সুবর্নাঃ মা এটা কিন্তু ঠিক না। আমাকে না জানিয়ে তোমরা এটা করতে পারো না?? 


জাকিয়া বেগমঃ আরে বাবা দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। দেখুক দেখতে সমস্যা কোথয়?

শুনেছি ছেলেটা খুব সৎ এবং ধার্মিক??


সুবর্নাঃ মা.....??(পুরোটা বলতে না দিয়ে) 


জাকিয়া বেগমঃ একদম চুপ৷ যা রেডি হয়ে আয়??


সুবর্নাকে জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিলাে।।আর ওদিকে 

শারমিন এসে গেছে। শারমিনের মা প্রথমে সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকলো। সুবর্নার মা শারমিন আর শারমিনের মাকে দেখে তো অবাক। সুবর্নাকে ডাকলো তারপর একনজর দেখে পছন্দ করে ফেললো। টুকিটাকি ইসলামিক প্রশ্ন করেই সুবর্নাকে ভিতরে পাঠিয়ে দিয়ে সাহিদা বেগম বলে উঠলো.......... 


সাহিদা বেগমঃ আপনার মেয়েকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে চাই??


জাকিয়া বেগমঃ আলহামদুলিল্লাহ। কিন্ত তার আগে সুবর্নার আব্বুর সাথে কথা বলতে চাই, উনি দেশের বাহিরে থাকেন??


সাহিদা বেগমঃ হ্যা হ্যা বলুন। তারপর আমাদেরকে জানান?? 


জাহেদঃ মা শারমিন কোথায় গেলো??


সাহিদা বেগম হাসতে হাসতে বললো........


সাহেদা বেগমঃ হয়তো সুবর্নার কাছে গেছে??


ওদিকে শারমিন সুবর্নার ঘরে গিয়ে দেখলো সুবর্না রেগে বসে আছে। শারমিনকে দেখে সুবর্না বললো.........


সুবর্নাঃ শারমিন তুই এখানে? আমি তো কল্পনা করতে পারছি না তুই আমাদের বাড়িতে আসবি। কতবার আসতে বলে ব্যার্থ হয়েছি। কিন্তু আসলি এমন একটা কুপা দিনে??


শারমিনঃ যাই তাহলে আমার ভাইয়ার জন্য অন্য কোথাও মেয়ে দেখি??


কথাটা বলে শারমিন উঠে চলে আসতে লাগলো৷ ঠিক তখনই সুবর্না বলে উঠলো......... 


সুবর্নাঃ এক মিনিট,, তাহলে তোরা এসেছিস 

আমাকে দেখতে?? 


শারমিনঃ হুমমমম??


সুবর্নাঃ তাহলে তো আমি রাজি,, বাট রাগ করছিস কেনো তাহলে?? 


শারমিন সুবর্নাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো.......... 


শারমিনঃ এটাতো কৃত্রিম রাগ,, তোকে রাজি

করানোর জন্য?? 


সুবর্নাঃ কিহহ? যাহ বিয়ে করবো না?? 


শারমিনঃ এই যে মাইর খাবি এবার??


কথাটা বলে দুই বান্ধবী হাসতে লাগলো। 

শারমিনঃ 


সুবর্নার বাবার সাথে কথা বলে সামনের সপ্তাহ শুক্রবার বিয়ের দিন ঠিক করলো, বিয়ে হবে ধর্মিয় ভাবে। 

অনুষ্ঠান হবে নিকট আত্মীয়দের নিয়ে, এবং বিনা যৌতুকে। শারমিনের খুশি আর ধরে না, তার একমাত্র ভাইয়ার বিয়ে বলে কথা। যখন ও ছোট ছিলো তখন কত আত্মীয়দের বিয়ে হতো, ওর খুব ইচ্ছে করতো বাকিদের মতো আনন্দ করতে, কিন্তু ওর আম্মু ওমন করে যেতে দিতো না। আর আজ নিজের ভাইয়ার বিয়ে, তার খুব আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু যা করবে সব সুন্নত অনুসরণ করে। আনন্দ করতে গিয়ে একটুকু সুন্নতের খেলাফ করবে না। যাইহোক শারমিন অবন্তীকে ফোন দিলো। ফোনটা রিসিভ করতেই বললো......


গল্পঃ_হুজুরের_বউ__(পর্বঃ_০৪)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


সুবর্নার বাবার সাথে কথা বলে সামনের সপ্তাহ শুক্রবার বিয়ের দিন ঠিক করলো, বিয়ে হবে ধর্মিয় ভাবে। 

অনুষ্ঠান হবে নিকট আত্মীয়দের নিয়ে, এবং বিনা যৌতুকে। শারমিনের খুশি আর ধরে না, তার একমাত্র ভাইয়ার বিয়ে বলে কথা। যখন ও ছোট ছিলো তখন কত আত্মীয়দের বিয়ে হতো, ওর খুব ইচ্ছে করতো বাকিদের মতো আনন্দ করতে, কিন্তু ওর আম্মু ওমন করে যেতে দিতো না। আর আজ নিজের ভাইয়ার বিয়ে, তার খুব আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু যা করবে সব সুন্নত অনুসরণ করে। আনন্দ করতে গিয়ে একটুকু সুন্নতের খেলাফ করবে না।।যাইহোক শারমিন অবন্তীকে ফোন দিলো। ফোনটা রিসিভ করতেই বললো.........


শারমিনঃ আসসালামু আলাইকুম অবন্তী?? 


অবন্তীঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম??


শারমিনঃ বলেন তো আমি কে??


অবন্তীঃ এটা যে আমার শারমিন পাগলী বোন টা?? 


শারমিনঃ এই বুঝলি কি করে রে??


অবন্তীঃ বুঝবো না কেনো হুমম। একমাত্র শারমিন ছাড়া আর কে আমাকে অবন্তী বলে ডাকবে বলতো??


শারমিনঃ ওহহ এই কথা। শোন একটা খুশির খবর আছে??


অবন্তীঃ কি খুশির খবর? বল প্লিজ??


শারমিনঃ এখানে না, তুই ভার্সিটিতে আয় তারপর বলবো??


অবন্তীঃ ওকে আসতেছি?? 


শারমিন সালাম দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।এরপর দ্রুত রেডি হয়ে ভার্সিটিতে রওয়ানা দিলাে। অবন্তী শারমিনকে দেখে দৌড়ে কাছে আসলো,এরপর জড়িয়ে 

ধরে অভিমানী কন্ঠে বললো..........


অবন্তীঃ কেমন আছিস রে? কতদিন পর তোকে দেখলাম। পোরো চারদিন পর??


শারমিন সামান্য অভিমানী কন্ঠে বললো........


শারমিনঃ থাক আর দরদ দেখাতে হবে না। মিস

করছিস কচু??


অবন্তীঃ এই চুপ। সত্যি আমার কলিজাটাকে খুব মিস করছি?? 


শারমিনঃ হুমম আমিও রে,, বাট ভাবি কোথায় রে??


অবন্তীঃ ভাবি? এই ভাবি টা কে রে??


শারমিনঃ ভাবি, থুক্কু সুবর্না??


অবন্তীঃ সুবর্না তোর ভাবি! কি বলছিস আবল তাবল??


তখনই পিছন থেকে সুবর্না বলে উঠলো........... 


সুবর্নাঃ আসসালামু আলাইকুম,,আমাকে খুঁজছিলি বুঝি??


শারমিন পিছনে তাকিয়ে বললো.........


শারমিনঃ এইতো ভাবি সাহেবা এসে গেছে??


অবন্তী অবাক হয়ে বলে উঠলো........... 


অবন্তীঃ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কিসের ভাবি? কার ভাবি??


শারমিনঃ দাঁড়া দাঁড়া আগে একটু বসতে দে তারপর

সব বলছি??


সুবর্না,শারমিন আর অবন্তী সবুজ ঘাষের উপর বসলো।

তারপর শারমিন বললো..........


শারমিনঃ ভাবি কথাটার মানে হলো, সুবর্না আমার ভাইয়ার বউ হতে চলেছে??


অবন্তীঃ কিহহহ??


শারমিনঃ হুমমম সামনের সপ্তাহে শুক্রবার বিয়ে?? 


অবন্তীঃ আলহামদুলিল্লাহ?? 


শারমিনঃ তোকে অবশ্যই বিয়েতে আসতে হবে?? 

 

সুবর্নাঃ কিন্তু আমাদের বাড়িতে??


শারমিনঃ একদম না, আমাদের বাড়িতে যাবে??


অবন্তীঃ আমি শারমিনদের ওখানেই যাবো। রাগ করিস না বোইন(সুবর্নার কাঁদে হাত দিয়ে) পরে একদিন যাবো তোদের ওখানে। শারমিন একটা প্রবলেমে পড়েছি যদি একটু সল্ব করে দিতি??


শারমিনঃ কি প্রবলেম??


অবন্তী একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না কিছুতেই। 

যদি একটু হেল্প করতি??


শারমিনঃ এজন্য তুই ইস্তেখারা করতে পারিস??


অবন্তীঃ ইস্তেখারা কিভাবে করে জানিনা তো। আর ইস্তেখারা মানে কি??


শারমিনঃ ইস্তেখারা অর্থ-কল্যান কামনা করা। ইস্তেখারা হচ্ছে একটা নামায। আর এই নামাযের মাধ্যমে জানতে পারবি কাজটা ঠিক নাকি বেঠিক??


অবন্তীঃ এই নামায কিভাবে পড়ে??


সুবর্নাঃ আমি শুনেছি এই নামায বিয়ে জনিত ব্যাপারে পড়ে। যার যেখানে বিয়ে হতে চলেছে এটা কতটা মঙ্গলজনক তা জানতে??

 

শারমিনঃ শুধু বিয়ে না, যে কেনে শুভ কাজের শুরুতেই ইস্তেখারা করা যায়??


সুবর্নাঃ আমি শুনেছি ইস্তেখারার মাধ্যমে নাকি গায়েবের রহস্য জানা যায়?? 


শারমিনঃ এটা সম্পুর্ন ভুল কথা।। এটা অনেকের ধারণা যে ইস্তেখারার মাধ্যমে গায়েবের রহস্য জানা যায়। এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে।

আসলে না, এমন কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। এই রকম ঘঠনা ঘটতেও পারে আবার নাও ঘঠতে পারে৷ 

তবে ইস্তেখারা দ্বারা উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে এরুপ কোনো ইঙ্গিত লাভ করা যায়। যা দ্বারা সামান্য চিন্তা ভাবনা করলেই কর্তব্য নির্ধারন করা যায়?


অবন্তীঃ ওয়াও। এই নামায কতদিন পর্যন্ত পড়তে হয়??


শারমিনঃ একদিন পড়লেই হবে।। তবে যদি একদিনের ইস্তেখারায় কোনোরুপ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারিস আর তাতেও যদি ফল না পাস তাহলে সাতদিন করবি।

ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সফলতা পাবি৷ 

যে কোনো শুভ ফলের জন্য আল্লাহর নিকট পার্থনা করাই হলো ইস্তেখারার লক্ষ। 

অতএব কোনো রকম ইঙ্গিত না পেলেও আল্লাহর নাম নিয়ে এবং তার সাহায্য পার্থনা করে কাজ শুরু করলে 

আল্লাহ কাজে সুফল দান করেন??


সুবর্নাঃ হুমম বুঝলাম। কিন্তু নামায টা কিভাবে পড়বো??


শারমিনঃ হুমম ইস্তেখারার দোআ টা মুখস্থ রাখতে হবে??


সুবর্নাঃ হুমমম কি দোআ??


শারমিনঃ আমি বলছি তোরা খাতায় লিখে নে? দোআ টা হলো👉👉আল্লাহুম্মা ইন্নী-আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়াআসআলুকা মিনফাদলিকাল আযীম, ফা-ইন্নাকা 

তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা'লামু ওয়ালা আ'লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহুমা ইনকুন্তা তা'লামু আন্না "হাযাল আমরা" খাইরুল্লি ফীহ-দ্বীনী ওয়া মা'আশী ওয়া আক্কিবাতি আমরী,ফাকদুরহুলী ওয়া-ইয়াসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিকলী ফীহি, ওয়া ইন কুনতা তা'লামু আন্না হাযাল আমরা শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মা'আশী ওয়াআকীবাতি আমরি, ফাসরিফহু আন্নী ওয়াসরীফনী আনহু ওয়াকদির লিয়াম খাইরা হাইসু কানা সুম্মা আরতিনী বিহী।


অবন্তীঃ শেষ??


শারমিনঃ হুমম শেষ??


অবন্তীঃ আর কিছু করা লাগবে??


শারমিনঃ হ্যা ওই দোয়াতে যে,, #হাযাল আমরা বাক্যটি মুখে উচ্চারণ করার সময় যে কাজটির জন্য ইস্তেখারা করবি সেই কাজটি মনে মনে খেয়াল করবি। 

আর শোয়ার সময় উত্তর শিয়রী হয়ে ডান কাত পশ্চিম দিকে মুখ করে রাখবি। সকালে ঘুম থেকে উঠে তোর যেদিকে মনের ঝোক অনুভব হবে সেদিকে লেগে যাবি।আল্লাহর ইচ্ছায় এতেই শুভ ফলাফল পাবি??


সুবর্নাঃ এই ছাড়া কি কোনো সহজ পদ্ধতি নেই??


শারমিনঃ হুম আছে। শোন তাহলে 👉"সেটা হলো রাতে শোয়ার আগে দুই রাকআত নামায পড়ে নিবি। নামায পড়া শেষে তুই কারো সাথে কথা বলবি না। নামায শেষ করে তুই ডান কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়বি। আর মনে মনে যেই কাজটির জন্য নামায পড়েছিস সেই কাজটি তোর জন্য শুভ হবে কিনা সেটি ভাবতে থাকবি। ইনশাআল্লাহ তুই ফলাফল পাবি, আর সব সময় এই দোয়া টি পড়তে থাকবি👉 #আল্লাহুমা_খিরলী_ওয়াখ_তারলী❤❤


অবন্তীঃ ওকে ক্লাসে চল??


তারা তিনজনে ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাে।। হঠাৎ পিছন থেকে একটা ছেলেকে দেখতে পেলো অবন্তী। ছেলেটা পায়ের গোড়ালির উপর প্যান্ট পড়েছে৷ তার কাছে এই ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগলো। এই ভার্সিটিতে আগে কখনো এইরকম দেখেনি। অবন্তী কৌতুহল নিয়ে 

ছেলেটাকে ডাক দিলো। ছেলেটাকে ২/৩ বার ডাকার পর আসলো, তাও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। অবন্তী ছেলেটাকে বলে উঠলো........... 


অবন্তীঃ এই শোনেন নতুন নাকি?? 


ছেলেটাঃ হ্যা আজকেই এসেছি নতুন??


অবন্তীঃ নাম কি আপনার??


ছেলেটাঃ জুবায়ের হোসেন জুনায়েদ?? 


অবন্তীঃ কোন ডিপার্টমেন্টে??


জুবায়েরঃ হিস্ট্রি?? 


অবন্তীঃ ওহহ আমরাও সেইম। আচ্ছা যান??


জুবায়ের চলে গেলো। শারমিন এতক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ছেলেটা চলে যাওয়ার পর শারমিন অবন্তীকে বলে উঠলো.........


শারমিনঃ অবন্তী তোর এই অভ্যাস টা পরিবর্তন কর??


অবন্তীঃ ওকে দোস্ত করলাম। এবার চল??


ওইদিকে হটাৎ করে জুবায়েরকে পিছন থেকে ভার্সিটির কয়েকটা অভদ্র টাইপের রেগিংকারি মেয়েরা ডাক দিলো৷ নেয়ামত চুপচাপ তাদের কাছে গেলো। জুবায়ের চুপচাপ সেখানে গেলো। দলের সর্দারনী সাদিকা জুবায়েরের চারপাশে ঘুরে ঘুরে তাকে দেখলো। তারপর বললো........


সাদিকাঃ কিরে কি পড়ে এসেছিস এগুলো?? 


জুবায়েরঃ জ্বি পাঞ্জাবী?? 


সাদিকাঃ আর প্যান্ট পড়েছিস গোড়ালি বের করে। তোর মতো ক্ষেত কে এই ভার্সিটিতে নিলো কে??


জুবায়েরঃ আপনি তুই তুকারি করছেন কেনো 

অভদ্রের মতো?? 


সাদিকাঃ ওই যে দূরে একটা মেয়েকে দেখতে পাচ্ছিস না? ওর ওড়নাটা টান দিয়ে নিয়ে আয়??


জুবায়েরঃ ছি ছি আপনি একটা মেয়ে হয়ে এই কথা বললেন কি করে?? 


সাদিকাঃ কথা কম, যা বলছি তাই কর গিয়ে?? 


জুবায়েরঃ পারবো না?? 


সাদিকাঃ যা বলছি নাহলে এমন থাপ্পড় দিবো দাঁত পিয়ানো বাজাতে থাকবে??


জুবায়েরঃ আমাকে মেরে ফেললেও এই কাজটা আমি কখনো করতে পারবো না??


এইবার সাদিকা রেগে গিয়ে জুবায়ের-এর মুখে সজোরে ঘুষি বসিয়ে দিলো। ঘুষির আঘাতে মাটিতে পড়ে গেলো,

মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে৷ সাদিকা আবার জুবায়ের এর কলার ধরে উঠাচ্ছে তখনই অজান্তা বললো.........


অজান্তাঃ সাদিকা ছাড় ওকে যাচ্ছে??


প্রিন্সিপালকে দেখে সবাই পালিয়ে গেলো। জুবায়ের মুখ ধরে উঠে দাঁড়ালো। রক্ত বন্ধ হচ্ছে না, পাঞ্জাবির পকেট থেকে যখন রুমাল বা টিস্যু হাতড়ে যখন কিছুই পেলো না তখন বাধ্য হয়ে টুপি দিয়ে যখনই মুখ মুছতে যাবে তখনই কেউ হাত বাড়িয়ে একটা রুমাল তার সামনে ধরলো। তাকিয়ে দেখলো কালো কাপড়ে একটা আবৃত মেয়ে। জুবায়ের কালো বোরকাতে আবৃত মেয়েটিকে দেখে মাথা নিচু করে ফেললো। মেয়েটা বললো...........


মেয়েটাঃ রুমালটা নিন??


জুবায়ের রুমালটা হাতে নিয়ে বলে উঠলো.......


জুবায়েরঃ জাজাকাল্লাহ খাইরান?? 


মেয়েটাঃ ওয়া ইয়্যা??


মেয়েটা চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই জুবায়ের বললো....


জুবায়েরঃ প্লিজ আপনার নামটা যদি বলতেন??


মেয়েটাঃ নুজাইফা আক্তার শারমিন?? 


জুবায়েরঃ আমি জুবায়ের হোসেন জুনায়েদ?? 


শারমিন নামটা শুনে চলে গেলো।। ক্লাস শেষে শারিমন বাড়িতে গিয়ে দেখলো বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এসেছে। শারমিনকে দেখে ওর মা সাহিদা বেগম বললেন.........


সাহিদা বেগমঃ এসে গেছিস তুই?? দেখ বিয়ের শাড়ি থেকে শুরু করে টুকিটাকি সবকিছু কেনা শেষ। তুই দেখতো কেমন হয়েছে??


শারমিনঃ তুমি যখন পছন্দ করেছো তখন ভালোই 

হবে ইনশাআল্লাহ??


সাহিদা বেগমঃ হুমম যা ফ্রেশ হয়ে আয়??


শারমিন রুমে চলে গেলো এবং ফ্রেশ হয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে বসলো। ওর মা ভাত দিয়ে বললো.......


সাহিদা বেগমঃ একটা কথা বলার ছিলো?? 


শারমিনঃ হ্যা মা বলো??


সাহিদা বেগমঃ জাহেদ বলেছিলো তার বিয়ের পরপরেই তোর বিয়েটা দিতে,, তুই কি বলিস??


শারমিনঃ তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো কিন্তু এই মুহুর্তে আমার বিয়ের ব্যাপারে আলাদা কোনো ফিলিংস নেই?? 


সাহিদা বেগমঃ জাহেদ নাকি ছেলেটাকে দেখেছে??


শারমিনঃ ছেলে কি করে?? 


সাহিদা বেগমঃ ছেলে এমবিবিএস ডাক্তার?? 


শারমিনঃ তাহলে বাদ দাও,, আমি হুজুর ছেলে ছাড়া বিয়ে করবো না?? 


সাহিদা বেগমঃ জাহেদ এ ব্যাপারে দ্বিমত ছিলো, ওর ও ইচ্ছে ছিলো কোনো একটা ভালো টাইপের হুজুর ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিবে??


শারমিনঃ কিন্তু মা তোমরা সুবর্নাকে পছন্দ করলে কিভাবে, সেও তো অতটা পর্দাশীল ছিলো না??


সাহিদা বেগমঃ অতীত ঘেটে কি করবো বল। বর্তমান কেমন সেটাই দেখেছি আমরা??


শারমিন আর কিছু বললো না, খুব ক্লান্ত লাগছিলো তাই শুয়ে পড়লো। মাগরীবের নামাযের সময় জেগে মাগরিবের নামায পড়ে ফেসবুক লগইন করলো। এক হাজার এর ফ্রেন্ড তার৷। ফ্রেন্ডলিস্টে সবগুলো ফিমেল। তার আইডিতে নান মাহরাম এর জায়গা নেই। 


ফেসবুক হোক অনুভূতি গুলো তো রিয়েল।যদি ছেলেরা 

থাকে তাহলে মেসেজিং হবেই। শয়তান এই কাজটার সুযোগ নিয়ে মন পরিবর্তন করে দিবে।। তারপর কোনো একটা ফেতনায় জড়িয়ে যেতে পারে। ফেসবুকে গিয়ে টুকিটাকি ইসলামিক নিউজ দেখলো৷ তারপর এশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে গেলো৷। অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই এক ঘুমেই রাত পার করে দিলো৷ 


সকালে সজাগ হতেই দেখলো ফজরের আযান দিচ্ছে.। তাড়াতাড়ি করে উঠে নামায পড়ে নিলো৷ নামাযের পর কিছু তাসবীহ তাহলীল করতে লাগলো। ফরজ নামাযের পর তাসবীর তাহলীল করায় অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুল (সাঃ) বলেছেন..""যে ব্যাক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযে সুবহানআল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, এবং আল্লাহু আকবর ৩৩ বার পাঠ করবে( সব মিলিয়ে ৯৯ বার হয়।) এবং এই বলে শর্ত পুর্ণ করবে যে, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু 

লা শারি কালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির""। তাহলে তার যাবতীয় গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন। যদি তা সমুদ্রের ফেনার পরিমানও হয়"" এতো অল্প সময়ে 

এতো সওয়াবের অধিকারী হওয়াটা কি হাত ছাড়া করা যায়?? 


দেখতে দেখতে শারিমনের ভাইয়ার বিয়ের সময় এলো।

আজ বৃহঃস্পতি বার অতএব আগামী কালকে শুক্রবার। শারমিন খুব খুশি। কিছুক্ষণ পর অবন্তীকে 

ফোন দিলো ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য। অবন্তী ভার্সিটিতে যাওয়ার পর শারমিন বলতে লাগলো.........


-গল্পঃ_হুজুরের_বউ__(পর্বঃ_০৫)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


দেখতে দেখতে শারিমনের ভাইয়ার বিয়ের সময় এলো।

আজ বৃহঃস্পতি বার অতএব আগামী কালকে শুক্রবার। শারমিন খুব খুশি। কিছুক্ষণ পর অবন্তীকে 

ফোন দিলো ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য। অবন্তী ভার্সিটিতে যাওয়ার পর শারমিন বলতে লাগলো.........


শারমিনঃ শোন কালকে ভাইয়ার বিয়ে, তোকে কিন্তু অবশ্যই যেতে হবে??


অবন্তীঃ অবশ্যই যাবো দোস্ত। 


কিছুক্ষণ পর জুবায়ের তাদের কাছে আসলো। কিছুটা নার্বাস হয়ে বললো.........


জুবায়েরঃ আপনি তো শারমিন,, এই নিন আপনার রুমাল??


শারমিন রুমাল টা হাতে নিতেই জুবায়ের চলে গেলো। 

অবন্তী মিট মিট করে হেসে বললো......


অবন্তীঃ কিরে কাহিনী কি??


শারমিনঃ নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক??


অবন্তীঃ কেনো??


শারমিনঃ যা চিন্তা করছিস তা মোটেও ঠিক না??


তাদের কথার মাঝে রিয়া আসলো তারপর শারমিনকে উদ্দেশ্য করে বললো.......


রিয়াঃ এই যে কালো ভুত তোকে সাদিকা ডাকছে??


অবন্তী প্রতিবাদ করতে গেলে শ্রমিন তাকে থামতে বলে। 

এরপর রিয়ার সাথে গেলো।। সেখানে যেতেই সাদিকা শারমিনকে বলে উঠলো......... 


সাদিকাঃ কলেজে এই রকম উদ্ভট ড্রেস পড়া চলবে না??


শারমিনঃ কেনো?? 

  

সাদিকাঃ কেনো আবার, আমি বলছি তাই??


শারমিনঃ ভার্সিটি-টা কি আপনার নিজের?? 


সাদিকা রাগী লুক নিয়ে বললো..........


সাদিকাঃ সংযোত হয়ে কথা বল বেয়াদব?? 


শারমিনঃ বেয়াদব কে সেটা তো দেখতেই পারছি??


সাদিকাঃ এই মেয়ে তোমার তো সাহস কম না আমার সামনে উঁচু গলায় কথা বলছো? যে সাজ সেজেছো তাতে তো জঙ্গি বলে মনে হচ্ছে?? 


শারমিনঃ জঙ্গি আমরা না জঙ্গি আপনারা,নিজের দোষ ঢাকতে আমাদের মতো সহজ সরল মেয়েদেরকে জঙ্গি বানিয়ে দেন?? 


সাদিকা আরো রেগে গিয়ে বলে উঠলো.......... 


সাদিকাঃ তোমার এমন অসহ্য সাজে তোমাকে আদিম মানুষের মতো ক্ষেত এবং বুড়ি বুড়ি লাগছে?? 


শারমিনঃ পর্দা করার কারনে যদি বুড়ি বুড়ি লাগে তাহলে সম্পুর্ণ বস্ত্রহীন হয়ে যান। তখন আপনাকে

সদ্য ভূমিষ্ঠ বাচ্চার মতো লাগবে??


সাদিকাঃ শেট আফ ক্ষেত কোথাকার??


শারমিনঃ আপনি শেট আফ। আর ক্ষেত কাকে বলছেন আমাকে?? আরে ক্ষেত তো আপনি আদিম মানুষের মতো অর্ধলঙ্গ হয়ে আছেন যে আদি কাপড়ের অভাব??


অবন্তীঃ শারমিন ঠিক বলছিস??


শারমিনঃ দেখুন বোন এসব রেগিং বাদ দিয়ে পরিপূর্ণ ইসলামের পথে চলে আসুন??


সাদিকাঃ এই মেয়ে তোমার কাছ থেকে কি আমাকে ইসলাম শিখতে হবে নাকি? আর একটা কথা শোনে রাখো আজ তুমি আমাকে যে অপমান করলে এর 

শোধ আমি নিবো?? 


শারমিনঃ হ্যা প্রতিশোধ নিতে পারেন সমস্যা নেই। কিন্তু আমার কথাগুলো ভেবে দেখবেন?? 


সাদিকাঃ তুমি জিহাদ করছো??


শারমিন মুচকি হাসি দিয়ে বললো........


শারমিনঃ জিহাদ মানে তরবারী হাতে নিয়ে যুদ্ধ নয়, বরং জালিমের সামনে সত্য কথা বলা সব থেকে 

বড় জিহাদ??


অবন্তীঃ এই যে সাদিকা তুমি কি জানো এই ভার্সিটির প্রিন্সিপাল আমার বাবা। আমি চাইলে তোমাকে এই ভার্সিটি থেকে বের করে দিতে পারি। 

কিন্তু আমি তা করবো না। দয়া করে ইসলামের পথে ফিরে এসো বোন??


সন্ধা ঘনিয়ে আশার ঠিক কিছু মুহুর্ত আগে বেলকনিতে একটা চেয়ার টেনে বসে বসে কফি খাওয়াটা মনে এক ধরনের রোমান্টিক অনুভুতি জাগায়। মৃধু বাতাস, গধুলীর লাল রঙ কখনো বা হলুদ রঙ ধারণ করে নিজের শরীরটাকেও লাল অথবা হলুদ করে দেয়। পাখিরা যে যার মতো করে নীড়ে ফিরছে, কর্মব্যাস্ত মানুষজন গৃহে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে, বাচ্চা ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা শেষে ঘরে ফিরছে। নামাযীরা মাগরিবের নামায পড়ার জন্য মসজিদের পানে ছুটেছে।শারমিন কফি খেতে খেতে সে সব উপভোগ করছে। 


আজকের রাতটা পার হলে কালকে তার ভাইয়ার বিয়ে। 

আজ সারারাত একটুও ঘুমাতে পারবে না সে। যখন ছোট ছিলো তখন একটুও ঘুমাতে পারতো না অতি আনন্দে। আনন্দের মাত্রা বেশি হলে মানুষ ঘুমাতে পারে না। একদিন শারমিনের আব্বু তার জন্য একটা কালো হিজাব এনেছে,আর জাহেদের জন্য একটা সাদা জুব্বা।

তখন তারা খুব ছোট, শারমিনের বয়স ৫ বছর আর জাহেদের ৭। দুই ভাই বোন উপহার দুটি পেয়ে এতো খুশি হয়েছিলো যে শারমিনের বাবা ছাদিকুল ইসলাম ওই দিন তাদের খুশি দেখে দুজনকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে শপথ নিয়েছিলেন,,যে করেই হোক জাহেদকে হুজুর বানাবে আর ছোট শারমিনকে দ্বীনদার সু-পাত্র দেখে বিয়ে দিবে।। তারপর হঠাৎ একদিন তার বাবা আরবের মাটিতে রাসুল (সাঃ) এর দেশে চলে গেলেন। 


মাগরিবের আজানের শব্দে ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসলো শারমিন। হাতের আধ খাওয়া কফিটাও ঠান্ডা হয়ে গেছে আর ততক্ষণে চারদিকে একটু একটু অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে গেলো, ওয়াশ রুমে গিয়ে অজু করে নামায পড়ে নিলো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের থেকে মাগরিবের ওয়াক্ত সব থেকে ছোট। আকাশের লাল গালিমা অর্থাৎ লাল মিলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্ত চলে যায়। তাই মাগরিবের ওয়াক্ত হওয়ায় সাথে সাথে নামায পড়ে নিতে হবে। না হলে কাযা হয়ে যাবে।


আর যেনে বুঝে ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায কাযা করার শাস্তি হলো রাসুল (সাঃ) বলেছেন,, যেই ব্যাক্তি অবহেলা বশত নামায তরক করলো ফলে নামাযের ওয়াক্ত চলে গেলো, অতঃপর নামায কাযা আদায় করলো, তাকে জাহান্নামে এক হোকবা বছর থাকতে হবে।(পরকালের হিসেবে এক হোকবা বছর হলো ৮০ বছরের সমান। তার প্রত্যেকটা মুহুর্ত হবে ৩৬০ বছরের সমান,,আর প্রতিটি দিন হবে দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান। এই হিসাব অনুযায়ী ৩ লক্ষ ৬০ হাজার বছরের সমান হবে পরকালের একটি বছর৷ এই অনুপাতে পরকালের ৮০ বছর হবে দুনিয়ার ২ কোটি ৮৮ লক্ষ বছরের সমান। 


ইচ্ছাকৃত এক ওয়াক্ত নামায কাযা করার শাস্তি যদি এতো বছর হয় তাহলে নামায না পড়ার শাস্তি কি হবে আল্লাহ ভালো জানেন।(বাহজাতুল আনওয়ার, মাওয়ায়েযে রেজভীয়্যাহ, খন্ড-১, পৃঃ ১২৮) 

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,, সুতরাং দুর্ভোগ ওইসব নামাযীদের উপর যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে উদাসীন।( সুরা মাউনঃ-৪-৫) 

যারা দূরে অবস্থান, সফরে অথবা কাজের অজুহাতে নামাযে গাফেল থাকে তাদের উদ্দেশ্যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,, যেখানেই নামাযের সময় হবে, সেখানেই তোমরা সালাত আদায় করো। কারন সমগ্র জমিন তোমাদের জন্য মসজিদ স্বরূপ।(সহিহ বুখারীঃ-৩২৪৩) কোনো ব্যাক্তি এবং শিরক ও কুফুরের মাঝখানের পার্থক্য হলো সালাত আদায় করা।(সহীহ মুসলিম) অতএব বুঝা গেলো যারা নামায পড়ে না তারা বিধর্মীদির মতোই। 


খুব সকালে শারমিন ঘুম থেকে উঠে গেলো।। আজকে জাহেদের বিয়ে। জাহেদের রুমে গিয়ে দেখে নামায পড়ে এসে আবার ঘুমিয়েছে। মুচকি হাসি দিয়ে কাছে গেলো। তারপর কান টেনে ধরলো। জাহদ ধরফরিয়ে উঠে বসলো। পাশেই শারমিনের হাসি মাখা মুখটা দেখে বিরক্ত চলে গেলো। শারমিনের হাত থেকে কান সরিয়ে বললো.......


জাহেদঃ কিরে আজকে এতো স্পেশাল একটা দিনেও কান টেনে ধরেছিস??


শারমিনঃ তো কি করবো? যদি তোমার ঘুমটা না ভাঙে। 

আমি তো ভেবেছিলাম ঘুমের কারনে আজকে তুমি বিয়েটা মিস করে ফেলবে??


জাহেদঃ ধুরর এটা কি হয় নাকি??


শারমিনঃ ভাইয়া একটা কথা বলবো?? 


জাহেদ উঠে আয়নার কাছে গেলো আর বললো......


জাহেদঃ হুমমম বল??


শারমিনঃ বিয়ের পর ভাবিকে পেয়ে আবার আমাদেরকে পর করে দিবে না তো??


জাহেদ শারমিনের কাছে এসে বললো..........


জাহেদঃ চুপপপপ। এই রকম কথা কেনো বলছিস??


শারমিনঃ না মানে অনেকে তো বউ পেয়ে মা বোনকে পর করে দেয়?? 


জাহেদঃ আমাকে কি তোর অন্য ৮/১০ টা ছেলের 

মতো মনে হয়??


শারমিনঃ........ (চুপ করে আছে)


জাহেদঃ দেখ মা, বাবা, ভাই, বোন এরা হচ্ছে আমার রক্ত। আর রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু রক্তের সম্পর্ক কেনো!! যে কোনো নিকট আত্মীয় এক কথায় আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এখন একটা মেয়ের জন্য নিজেকে জাহান্নামী বানানো সবচেয়ে বড় বোকামী ছাড়া আর কি?? মা, বাবা হচ্ছে এমন একজন, যাদের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, ওদের রক্ত মাংস পানি করে আমরা বড় হয়ে উঠেছি। তাদেরকে কেনো পর করে দিবো। কোন স্বার্থে!!! শারমিন জানিস তুই কোন কষ্টটা সবচেয়ে ভয়ানক ও যন্ত্রনাদায়ক?? 


শারমিন মাথা নাড়িয়ে না সুচক জবাব দিলো। জাহেদ আবার বলতে শুরু করলো......... 


জাহেদঃ সবচেয়ে বড় যন্ত্রনাদায়ক হচ্ছে সন্তান প্রসবের যন্ত্রনা। যখন একজন মা সন্তান পেটে ধরে তখন ৩/৪ মাস ঠিক মতো খাবার খেতে পারে না। শরীরে অনেক ধরনের অসুবিধা দেখা দেয়। কখনো মাথা ব্যাথা 

আবার কখনো শরীরের দুর্বলতা,,বিশ্রামের সময়টাও পায় না। যতই ক্লান্ত থাকুক তাকে সব কাজ গোছাতে হবে। কাজ যতই কম থাকুক এটলিস্ট রান্নাটা করতে হবে। আমরা পুরুষরা তাদের কষ্টটা বোঝার ট্রাই কখনো করবো না। টাইমলি খাবার দাবার ইত্যাদি কাজ করে দিতেই হবে। না করলে নির্দয়ের মতো কনসিব স্ত্রীর উপর হাত তুলতেও দ্বিধা বোধ করবে না। 

তারপর যখন বেশি সময় হবে আরো বেশি কষ্ট পাবে একটি মা। সব থেকে বেশি তখন পায় যখন সন্তান প্রসব করে। সন্তান প্রশবের সময় যে ব্যাথা হয় ওটা শরীরের বিশটা হাড় এক সাথে ভেঙে যাওয়ার সমান ব্যাথা। সন্তান জন্মের সময় মা মরেও যেতে পারে। বাঁচবে নাকি মরবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবুও জীবন বাজি রেখে সন্তান জন্ম দেয়। সন্তানের জন্য আরামের ঘুমকে হারাম রাত জেগে সেবা অসুস্থতার সময় এমনি তো আছেই। অর্থাৎ আমার গায়ে যে রক্ত মাংস আছে সবই মা-বাবার অবদান বেশি। ওই হাদীসটা তোর মনে আছে?? এক ব্যাক্তি মা-বাবার অবদানের কথা জিজ্ঞেস করলে রাসুল (সাঃ) তিনবার মায়ের কথা বললেন এবং চতুর্থ বার বাবার কথা বললেন??


শারমিনঃ তার মানে বউয়ের থেকে মা বড়?? 


জাহেদঃ আরে গাধী!! বউয়ের সাথে মাকে এবং মায়ের সাথে বউকে কম্পেয়ার করা ঠিক না। কারন মায়ের কাজ একমাত্র মা-ই করতে পারে এবং বউয়ের কাজ বউ। মা হলো অন্তর শীতলকারী আরবউ হচ্ছে চক্ষু শীতলকারী। মা হচ্ছে মায়ের জায়গায় আর বউ হচ্ছে বউয়ের জায়গায়। এখন বলছিস মা বড় না বউ বড়?? তাহলে বলবো মা হতে হলে আগে বউ হতে হবে। মা ছাড়া দুনিয়ার মুখ দেখতে পারতাম না আর বউ ছাড়া বাবা ডাক শুনতে পারবো না। ছেলেদের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে বাবা ডাক শোনাটা??


শারমিনঃ ভাইয়া তোমার এতো জ্ঞান ❤??


জাহেদঃ ধুরর বোকা,,যা মায়ের কাছে যা??


সব রকম গোছগাছ করে সুবর্নাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বর যাত্রী রওয়ানা দিলাে। অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ে সম্পুর্ন করে নিয়ে আসলো জাহেদের বাড়িতে........


শারমিনঃ ভাবি আর লজ্জা পেতে হবে না আমি যাই কেমন?? 


শারমিন কথাটা বলতেই সুবর্না কিঞ্চিত লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসি দিয়ে নিচের দিকে তাকালো।৷ শারমিন চলে গেলো। সুবর্না একা বসে আছে আর ভাবছে কিভাবে বিয়ে হয়ে গেলো। যেখানে সুবর্নার স্বপ্ন ছিলো ক্লিনসেব কোনো স্মার্ট রাজকুমার। কখনো ভাবেনি দাড়ি ওয়ালা পাঞ্জাবী পরিহিত কোনো নবাবজাদা কে বিয়ে করে ফেলবে এতো সহজে৷ আসলেই শারমিনের মাঝে মানুষকে ইম্প্রেস করার অদ্ভুত শক্তি আছে। ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো জাহেদ। 

ভিতরে প্রবেশ করে সুবর্নাকে সালাম দিলো জাহেদ। সুবর্না কোনো রকমে সালামের জবাব দিলো। খুব নার্ভাস হয়ে আছে সে। জাহেদ এসে সুবর্নার পাশে বসলো৷। এবং সুবর্নার দিকে একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে বললো........


জাহেদঃ নিন এটা পড়ে আসুন ওয়াশ রুম থেকে?? 


সুবর্না শাড়িটা হাতে নিলো। জাহেদ আবার বললো......


জাহেদঃ বেশি সাজুগুজু আমার পছন্দ না,, ন্যাচরাল সবকিছুই আমার ভালো লাগে। ন্যাচরাল চোখে যেই সুন্দর্য টা আছে সেটা পৃথিবীতে আর কোথাও নেই??


সুবর্না মুচকি হেসে জাহেদের কাছ থেকে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। শাড়ির সাথে সাথে মুখের মেকআপ চোখের যত সাজুগুজু ছিলো সব ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ভিতরে আসলো। সুবর্নার দিকে তাকিয়ে জাহেদ বলে উঠলো......... 


-গল্পঃ_হুজুরের_বউ__(পর্বঃ_০৬)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


সুবর্না মুচকি হেসে জাহেদের কাছ থেকে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। শাড়ির সাথে সাথে মুখের মেকআপ চোখের যত সাজুগুজু ছিলো সব ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ভিতরে আসলো। সুবর্নার দিকে তাকিয়ে জাহেদ বলে উঠলো......... 


জাহেদঃ মাশাআল্লাহ কি অপুর্ব ❤ এতক্ষণ এই ন্যাচরাল সুন্দর্যটা এক ইঞ্চি মেকআপের নিচে লুকিয়ে কুৎসিত একটা রুপ ধারণ করেছিলো৷ আর এখন খুব সুন্দর লাগছে। সুবর্না একটা কথা শোনো?? 


জাহেদের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে আবার মুখ নামিয়ে ফেললো। জাহেদ আবার বললো..........


জাহেদঃ লজ্জা তোমার সুন্দর্যকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ ❤❤


সুবর্না এবার জাহেদকে ভালো করে দেখলো।। দুধ সাদা গায়ের রং, হাইট ৫, ৪", চোখের মনিটা ইষাৎ নীলচে আর চুলগুলো কালো মসৃন। মায়াবী ফেইস। সুঠাম দেহ, চওড়া এবং ভরাট মুখ, একদম মেদবিহীন স্মার্ট। আর কথা বলার সময় মুচকি হাসি লেগেই থাকে।। 

সব মিলিয়ে অপুর্ব সুন্দর❤। বেশি ছোটও না এবং বেশি লম্বাও না, এরকম ঘন কালো দাড়িগুলো জাহেদের সুন্দর্য আরো হাজার গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজের অজান্তেই সুবহানাল্লাহ বলে উঠলো❤। সুবর্না যতটা সুন্দর তার থেকে কয়েকগুণ বেশি সুন্দর জাহেদ। সুবর্না ভুল কিছু করেনি বিয়েতে রাজি হয়ে। 


ঘোর কাটলো জাহেদের কথা শুনে।। সুবর্না মাথা নেড়ে জবাব দিলো। তারপর জাহেদ এবং সুবর্না দুজনে নামায পড়ে নিলো৷ সুবর্না যখনই পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যাবে তখনই জাহেদ পা সরিয়ে নিয়ে বললো.......


জাহেদঃ ভুলেও এই কাজ করবে না?? 


সুবর্না অবাক হয়ে বলে উঠলো........ 


সুবর্নাঃ কেনো?? 


জাহেদঃ কারন এটা বিধর্মীদের কাজ!! মুখে সালাম দিবে "আসসালামু আলাইকুম বলে। মাথা নত করে সম্মান পাওয়ার একমাত্র উপযুক্ত মালিক হলো 

স্বয়ং আমাদের প্রভু মহান আল্লাহ তায়ালা??


সুবর্নাঃ জ্বি আচ্ছা??


এরপর সুবর্না লজ্জা মাখা কন্ঠে মাথা নিচু করে বললো....


সুবর্নাঃ আসসালামু আলাইকুম??


জাহেদঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। তোমাকে কিছু কথা বলবো?? 


সুবর্নাঃ হুমমম বলেন??


জাহেদঃ আমার মাকে কখনো কষ্ট দিবে না।। মা কোনো ভুল করলে আমার কাছে বলবে না। বরং আমি কোনো ভুল করি বা না করি সব সময় আমার নামে ছোটো খাটো বিচার মায়ের কাছে দিবে এতে করে মা খুব খুশি হবে। আবার কোথাও যেতে চাইলে বা কিছু কিনতে চাইলে মাকে বলবে আপনার ছেলে আমাকে ওই জায়গায় যেতে দিচ্ছে না বা ওটা কিনে দিচ্ছে না। আপনি বললে নিশ্চয়ই যেতে দিবে/ কিনে দিবে। তখন দেখবে মা খুব খুশি হবে। তখন ভাববে যে যাক তার ছেলে এখনো আগের মতোই আছে, সংসারে অশান্তি হবে না। সময় বুঝে মায়ের কাছ থেকে রান্নার টুকিটাকি কাজ শিখতে চাইবে,,যদিও তুমি পারো তবুও চাইবে। 

অবসরে মায়ের সাথে গল্প করবে। মায়ের ছোট বেলার অথবা বিয়ের আগের জীবনের কথা জানতে চাইবে। 

তাহলে দেখবে একবার বলা হয়েছে তোমাকে আর কিছুই বলতে হবে না। শুধু চুপচাপ শুনে যাবে। আর শারমিনকে নিজের বোনের চোখে দেখবে??


সুবর্নাঃ সেই কথা আপনাকে বলতে হবে না, এমনিতেও শারমিন আমার কলিজার অর্ধেক??


জাহেদঃ সেটা তখনই বুঝেছি যখন বিয়ের জন্য তোমার কথা বলেছিলাম??


সুবর্না মুচকি হাসলো। জাহেদ আবার বলে উঠলো....... 


জাহেদঃ আর সব সময় হাসি খুশি থাকব।। যতো কষ্টই হোক আমার ফ্যামিলির সাথে হাসিখুশি থাকবে। 

আর তোমার সব কষ্ট আমার কাছে শেয়ার করবে। দেখবে বুকে আগলে রাখবে তোমাকে। আর পর্দা এবং নামায মাস্ট পড়তেই হবে। তুমি কি জানো আমি কি কাজ করি??


সুবর্নাঃ জ্বি আপনি তো একজন হুজুর এবং খুব ভালো শায়খ??


জাহেদঃ যেটা জেনেছো সেটা সম্পুর্ণ ভুল??? 


সুবর্না পুরাই অবাক হয়ে গেলো। জাহেদ আমি বললো..


জাহেদঃ আমি একজন সার্জারিক্যাল ডাক্তার?? 


সুবর্নাঃ তাহলে যে এই গেটআপ??


জাহেদঃ আমি প্রথম দিকে মাদ্রাসায় পড়েছি তারপর স্কুলে ভর্তি হয়েছি। 

স্কুল, কলেজ পেরিয়ে মেডিকেলে তারপর অস্ট্রেলিয়া থেকে পুরো ডাক্তার হয়ে বেরিয়ে এসেছি। অবশ্য আমার বাবা চেয়েছিলেন আমি যেনো মাদ্রাসায় পড়ি এবং হুজুর হই। আর তাইতো তার ইচ্ছেটাও পুরন করেছি। তুমি স্কুলে পড়ো কলেজে পড়ো সমস্যা নেই, কিন্তু দ্বীন ছেড়ে দিও না। দ্বীনের পথে চলো, দ্বীনকে আঁকড়ে ধরো??


জাহেদ সুবর্নার চিবুতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে বলে উঠলো............. 


জাহেদঃ তুমি কি আমার চক্ষু শীতলকারীনী হবে?? 


সুবর্নাঃ হুমম হবো??


জাহেদঃ আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে??


সুবর্নাঃ হুমমম??


জাহেদঃ আমরা দুজন হাতে হাত রেখে জান্নাতের বাগানে ঘুরে বেড়াবো?? 


সুবর্নাঃ আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবো??


জাহেদঃ ওই যে জানালা দিয়ে যেই চাঁদটা দেখছো ওইটাকে খুব ধরতে ইচ্ছে করতো??


সুবর্নাঃ আর এখন??


জাহেদঃ করে না,কারন আজ যে পুরো চাঁদটা আমার পাশে পেয়েছি ঠিক আমার বুকের বাম পাশে?? 


সুবর্না লজ্জা পেয়ে নিচে তাকালো। জাহেদ আবার বলে উঠলো....... 


জাহেদঃ লজ্জাবতী চিনো?? 


সুবর্নাঃ হুমমম??


জাহেদঃ স্পর্শ পেলেই মুখ লুকায়??


সুবর্না যেনো এবার লজ্জায় মরে যাচ্ছিলো।সকাল বেলা 

সুবর্নার ডাকে জাহেদের ঘুম ভাঙলো। জাহেদ ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো........ 


জাহেদঃ আরেকটু ঘুমাই??


সুবর্না এবার ভেজা চুলের স্পর্শ দিয়ে জাগিয়ে দিলো। জাহেদ উঠে সুবর্নার দিকে তাকিয়ে বললো........


জাহেদঃ মাশাআল্লাহ, যেনো শিশিরে ভেজা লাল পদ্মা?? 


সুবর্না আবার লজ্জা পেলো। জাহেদের এসব করে শুনে সুবর্না লজ্জায় হয়তো মরেই যাবে। কাল রাত থেকে শুরু করে কতোবার যে খুন হয়েছে সেটা নিজেও জানে না। তারপর সুবর্না বলে উঠলো............ 


সুবর্নাঃ কাব্য রচনা পরে করবেন, এবার উঠে ফ্রেশ 

হয়ে মসজিদে যান??

 

জাহেদ মুচকি হেসে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।ফিরে আসতেই সুবর্না তার হাতে রাখা পাঞ্জাবী আর টুপি জাহেদের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিচে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।। জাহেদ পাঞ্জাবী আর টুপি হাতে নিতে নিতে বললো.........


জাহেদঃ আমি তো এমনই একজন লজ্জাবতী স্ত্রী কে চেয়েছিলাম যে হবে আমার চক্ষু শীতলকারিনী??


জাহেদ পাঞ্জাবী টুপি পড়ে মসজিদে চলে গেলো।।সুবর্না নামাজ শেষ করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে গেলো।। সবাই ওকে অনেক অনেক কনগ্রেস 

জানিয়েছে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো।। সুবর্না দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো শারমিন দাঁড়িয়ে আছে। শারমিন দুষ্টুমি করে বললো.........


শারমিনঃ কি ভাবি ঘুম হলো? নাকি ঘুমাওনি??


সুবর্না আবার নিচে তাকিয়ে লজ্জা মাখা মুচকি হাসি দিলো। শারমিন বললো.......


শারমিনঃ থাক থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। নামায পড়েছো তো??


সুবর্নাঃ হুমমম পড়েছি??


শারমিনঃ আলহামদুলিল্লাহ এবার নিচে আসো মা তোমাকে ডাকছে??


সুবর্নাঃ হুমম তুমি যাও আমি আসছি?? 


শারমিন কপট রাগ নিয়ে বললো.........


শারমিনঃ কি বললে আমাকে?? দেখো তুই করেই বলবে আগের মতো?? 


সুবর্নাঃ আচ্ছা যা তুই আমি আসছি??


শারমিন হাসতে হাসতে চলে গেলো।।সুবর্না মা কে ড্রয়িং রুমে না দেখে মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো মা কোরআন তেলওয়াত করছে।। সুবর্না চুপ করে এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।। জাহেদের মা জাকিয়া বেগম সুবর্নার উপস্থিতি টের পেয়ে কোরআন পড়া বন্ধ করে বললো.........


জাকিয়া বেগমঃ মা তুমি বিছানায় এসে বসো, আমি কোরআন শরীফ রেখে আসি??


সুবর্না মাথা নেড়ে ইশারা দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। জাকিয়া বেগম কিছু গহনা আর গলার হাড় নিয়ে আসলো। তারপর এগুলো বিছানায় রেখে বললো.....


জাকিয়া বেগমঃ এগুলো আমি জাহেদের বউয়ের জন্য বানিয়ে ছিলাম। আসো তো মা তোমাকে পড়িয়ে দেই??


সুবর্নার গলায় স্বর্নের হার আর হাতে চুড়ি দুখানা পড়িয়ে দিয়ে বললো........


জাকিয়া বেগমঃ আমাকে কখনো শ্বাশুড়ি ভাববি না, নিজের সা ভাববি কেমন??


সুবর্নাঃ জ্বি মা??


জাকিয়া বেগমঃ ভাববি এক হারিয়ে আরেক মা পেয়েছিস??


সুবর্নার চোখ গুলো ছলছল করছে। জাকিয়া বেগম আবার বললেন........


জাকিয়া বেগমঃ মাঝে মাঝে ভুল হলে তোকে বকা দিবো কখনো রাগ করবি না?? 


সুবর্না এবার কেঁদেই দিলো।। জাকিয়া বেগম সুবর্নার মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বললো.......


জাকিয়া বেগমঃ দেখতো মেয়ের কান্ড। কাঁদছিস কেনো পাগলী। চাঁদ মুখাটাতে কি কান্না মানায়? হেঁসে দে তো দেখি একবার??


সুবর্না চোখ দুটি মুছে হেসে বললো.......... 


সুবর্নাঃ মা এটা যে বড় খুশির কান্না??


জাকিয়া বেগম মুচকি হাসলো। শারমিন মাঝখানে এসে বললো.........


শারমিনঃ বাহহ বাহহ আম দুধ এক হলো আর আটি টা গড়াগড়ি খেলো?? 


জাকিয়া বেগম শারমিনকে বললো.........


জাকিয়া বেগমঃ এক থাপ্পড় দিবো ফাজিল??


শারমিনঃ হুমম জানি তো, এখন একটা মেয়ে এসে গেছে আর আমাকে চলে যেতে হবে??


সুবর্না শারমিনের কান টেনে ধরে বললো..........


সুবর্নাঃ এই যে ম্যাডাম আপনাকে তো বের করতেই হবে তা না হলে মায়ের মনের ভেতর ঢুকবো কি করে??


শারমিনঃ হ্যা হ্যা জানি তো!! এবার কানটা ছাড়ো না হলে?? 


সুবর্নাঃ না হলে কি হুমম??


শারমিনঃ না হলে ভাইয়াকে আজকে তোমার থেকে আলাদা রাখবো??


সুবর্নাঃ তবে রে??


সুবর্না কথাটা বলে শারমিনের দিকে তেড়ে আসতেই সে হাসতে হাসতে দৌড়ে পালালো। সুবর্নাদের বাড়ি থেকে লোক এসেছে ওদেরকে নিয়ে যেতে। জাহেদ এবং সুবর্না 

রেডি হয়ে বসে আছে, আত্মীয়দের খাওয়া শেষ হলেই ওরা রওয়ানা দিবে। যাওয়ার আগে সুবর্না তার শ্বাশুড়ি এবং শারমিনকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে বসে জাহেদ বললো........


জাহেদঃ কবে ফিরবো আমরা??


সুবর্নাঃ এক মাস পর??


জাহেদ লাফিয়ে উঠে বললো.........


জাহেদঃ কি বলছো এসব? কালকেই নিয়ে চলে আসবো??


সুবর্না হেঁসেই ফেললো।শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পর থেকেই অনেক আসছে নতুন জামাই দেখতে। জাহেদ তো লজ্জায় নীল হয়ে আসছে। দেখাদেখির পর্ব শেষে রাতে সুবর্না আর জাহেদ বসে বসে গল্প করছে এমন সময় সুবর্নার কিছু কলেজ ফ্রেন্ড ঘরে ঢুকলো। সবাই এসে খাটের উপর বসলো। জাহেদ ওদেরকে দেখে মাথা নিচু করে বসে আছে। জাহেদ মাথা উঁচু করলো কিন্তু 

ওদের দিকে না তাকিয়ে সুবর্নার দিকে তাকিয়ে রইলো। 

ওদের মাঝে আদ্রি অনেক অহংকারী এবং মর্ডান মেয়ে, 

অনেক ছেলে ওর পিছনে ঘুরে। এজন্য সে প্রাউড ফিল করে। ও ভেবেছিলো সুবর্নার হাজবেন্ড ওকে দেখবে, দেখে এটলিস্ট চোখ ফেরাতে পারবে না। এজন্য কত আকর্ষনীয় ভাবে সেজে এসেছে। বাট কি হলো, দেখবে তো দুরের কথাই বললো না। 


সুবর্না তো এই ব্যাপারটা খুব ইনজয় করছে, সেটা ওর মুখের মুচকি হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। 

আদ্রি রেগে চলে গেলো। সেই সাথে বাকিরাও। সুবর্না বাহিরে যেতে নিলো ঠিক তখনই জাহেদ ওর হাত টান দিয়ে ধরলো, তারপর কোমরে হাত রেখে একদম 

বুকের কাছে নিয়ে নিলো৷ সুবর্না বলে উঠলো...........


সুবর্নাঃ এখন তো ঠিকই দুষ্টুমি হচ্ছে, তখন তো চুপ ছিলেন। কি এমন হতো ওদের সাথে ২/১ টা হাসি 

মুখে কথা বললে? বেচারি রাগ করে চলে গেলো??


জাহেদঃ উঁহু আমি শুধু আমার বউয়ের সাথে কথা বলবো! রোমান্স করবো, দুষ্টুমি করবো। যদি ওদের সাথে কথা বলি তাহলে আল্লাহ না করুক শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পরকীয়াতেও জড়িয়ে যেতে পারি??


কথাটা শেষ করেতে না করতেই সুবর্না জাহেদের ঠোঁটে আঙুল রেখে সাবধান করে দিলো। জাহেদ বললো......


জাহেদঃ আর তাই আমার বউকে আমি দেখবো, আমার বউ আমার কাছে সেরা সুন্দরী?? 


সুবর্না লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। যত লজ্জা পাক, মনে মনে ও ঠিক। সুবর্নার দুই পা উঠে আসলো জাহেদের পায়ের উপরে। হইছে আর কিছু জানতে হবে না, থামেন এবার....😁


জাহেদের বিয়ে উপলক্ষে শারমিনের ভার্সিটিতে যাওয়া হয়নি এই কয়েকদিন। আর অবন্তীরও কোনো খোঁজ পায়নি। বেচারি বিয়েতেও আসলো না, আর আজ ভার্সিটিতেও নেই। অবন্তীর খোঁজ করতে শারমিন প্রিন্সিপালের রুমে গেলো।। তারপর সালাম দিয়ে রুমে প্রবেশ করে বললো..........


শারমিনঃ স্যার অবন্তীর কোনো খোঁজ নেই কোথায় সে??


প্রিন্সিপালের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। শারমিন আবার জানতে চাইলো কোথায় অবন্তী। তারপর প্রিন্সিপাল বললো........


প্রিন্সিপালঃ অবন্তী আজ ১০/১২ দিন ধরে নিখোঁজ?? 


শারমিনঃ নিখোঁজ মানে?? কি বলছেন আপনি??


প্রিন্সিপালঃ হ্যারে মা, সেদিন ভার্সিটি থেকে আর বাসায় ফিরেনি, আমি ওইদিন ভার্সিটিতে আসিনি। আমি যদি সেদিন ভার্সিটিতে আসতাম তাহলে....??


কথাটা বলে প্রিন্সিপাল কান্নায় ভেঙে পড়লো।। অবন্তীর সাথে কলেজের শান্তশিষ্ট জুবায়ের ছেলেটাও নিখোঁজ। তাই সকলের ধারনা অবন্তী আর জুবায়েরের মাঝে কিছু একটা ছিলো, যার কারনে তারা দুজনে পালিয়ে গেছে।। কিন্তু এই কথা কিছুতেই শারমিন বিশ্বাস করবে না। কারন সে জানে এটলিস্ট অবন্তী আর আগের সেই অবন্তী নেই। মৌনতা নিয়ে ক্যাম্পাসের মাঝে হাঁটছে। হঠাৎ করে সোহেল চলে আসলো।। চোখের পানি মুছে চশমা পড়ে নিলো শারমিন।।তারপর পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো, এমন সময় সোহেল বললো, দাঁড়াও। শারমিন দাঁড়ালো। সোহেল সামনে গিয়ে বললো..........


সোহেলঃ শারমিন দেখো আমি কতটা পরিবর্তন করে ফেলেছি নিজের। মুখে দাঁড়ি,পায়ের গোড়ালির উপর প্যান্ট পড়েছি। কোরআন পড়া শিখেছি, নামায পড়ি পাঁচ ওয়াক্ত, অন্য মেয়েদের দিকে তাকাই না। 

এসব শুধু তোমার জন্য, তোমার মনের মতো হওয়ার জন্য। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি 

নিজেকে এতোটা পরিবর্তন করে ফেলেছি?? 


শারমিনঃ হ্যা সব পরিবর্তন করে ফেলেছেন কিন্তু কার জন্য?? কাকে খুশি করার জন্য?? 


সোহেলঃ কেনো তোমাকে খুশি করার জন্য, তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য?? 


শারমিনঃ সরি, আল্লাহ হাফেজ?? 


কথাটা বলে শারমিন চলে যাচ্ছিলো, সোহেল দৌড়ে এসে পথ আঁটকে দাঁড়ালো আর বললো..........


সোহেলঃ সরি কেনো?? বলে যাও তোমার রাগের কারন??


শারমিনঃ আপনার ভুল একটাই, আপনি আমার খুশির জন্য এতো সব করেছেন?? 


সোহেলঃ এতে ভুল কোথায়? এতে কি তুমি খুশি হও নাই??


শারমিনঃ অবশ্যই না??


সোহেলঃ কেনো??


শারমিনঃ কারন আমি তেমন কেউ নই যে আপনি আমাকে খুশি করানোর জন্য এককিছু করবেন??


সোহেলঃ তাহলে?? 


শারমিনঃ যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন, তার রহমতের রিজিক থেকে খাদ্য দিয়েছে, সেই মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য যেদিন নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন, যেদিন মহান আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার জন্য ইসলামি অনুশাসন মেনে চলতে পারবেন, যেদিন জাহান্নামের ভয়ে নিজের ভুল ভ্রান্তি শোধরে নিতে পারবেন, যেদিন আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য আমাকে চাইবেন, সেদিন আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিবেন। আমি কবুল করে নিবো ইনশাআল্লাহ??


কথাটা বলে শারমিন চলে গেলো।। সোহেল মুর্তির মতো

দাঁড়িয়ে রইলো। তার পরিবর্তনের মাঝেও যে অনেক ভুল রয়ে গেছে। নাহজ শোধরাতে হবে নিজেকে। যখন তুমি দুনিয়াকে ভালোবাসবে তখন তুমি দুনিয়ার সবকিছু পাবে।।কিন্তু পরকালের কিছুই পাবে না। 

আর যখন তুমি আল্লাহকে ভালোবাসবে তখন তুমি দুনিয়া ও আখেরাত দুটিই পাবে।। শারমিন চলে যাচ্ছে শারমিনকে দেখে সাদিকা বলে উঠলো............


-গল্পঃ_হুজুরের_বউ__পর্বঃ_০৭

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


কথাটা বলে শারমিন চলে গেলো।। সোহেল মুর্তির মতো

দাঁড়িয়ে রইলো। তার পরিবর্তনের মাঝেও যে অনেক ভুল রয়ে গেছে। নাহজ শোধরাতে হবে নিজেকে। যখন তুমি দুনিয়াকে ভালোবাসবে তখন তুমি দুনিয়ার সবকিছু পাবে।।কিন্তু পরকালের কিছুই পাবে না। 

আর যখন তুমি আল্লাহকে ভালোবাসবে তখন তুমি দুনিয়া ও আখেরাত দুটিই পাবে।। শারমিন চলে যাচ্ছে শারমিনকে দেখে সাদিকা বলে উঠলো............


সাদিকাঃ আরে ওই কালো ভুত এদিকে আয়??


শারমিন নিশ্চুপ হয়ে সাদিকার কাছে গেলো।।সাদিকার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর মুখে অন্য রকম এক পৈশাচিক হাসি। এমন হাসি যেনো সাদিকা কিছু একটা পেয়েছে, যেটা ওর মনের জ্বালা মিটিয়ে দিয়েছে। 


সাদিকাঃ তোর পাশের ওই প্রিন্সিপালের মেয়েটা কই??


শারমিন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সাদিকা আবার বলতে লাগলো...... 


সাদিকাঃ ওইদিন খুব বড় বড় কথা বলছিলো, আমাকে 

বের করে দিবে ভার্সিটি থেকে?? 


শারমিন এবারো চুপ করে আছে। সাদিকা আবার বললো.....


সাদিকাঃ শালি বেয়াদব,, এখন তো নিজেই পরপুরুষের সাথে নিরুদ্দেশ। কি বলছিলো আমাকে? আমি যেনো নিজের গেটআপ এবং নিজের বিহ্যাব চেঞ্জ করে ফেলি,

ফালতু ক্যারেক্টারলেস??


শারমিন কিছুই বলতে পারছে না,নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। 

সে জানে অবন্তীর নিখোঁজ হওয়ার পিছনে কোনো না কোনো ভাবে সাদিকার হাত নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু পরিপুর্ন সত্যিটা না যেনে কিছুতেই সাদিকা কে দোষারোপ করা যাবে না। কিন্তু হ্যা এর উপর নজর রাখতে হবে,, কোথায় যায়, কি করে সবকিছুর উপর কড়া নজর রাখতে হবে।। শারমিন কান্না জড়িত কন্ঠে একটা কথাই বললো.........


শারমিনঃ কে বা কারা অবন্তীকে কিডন্যাপ করেছে বা তাদেরকে দূরে কোথাও আটকে রেখেছে তা আমি জানি না। কিন্তু যে এই কাজ করে থাকুক না কেনো, আল্লাহ যেনো তার উপর রহমতের হেদায়েত নাযিল করেন?? 


কথাটা বলে শারমিন চলে গেলো। কালো বোরকার আড়ালে তার চোখের জল সাদিকার চক্ষুগোচর হলেও ফুপানোর আওয়াজ ঠিকই কানে প্রতিধ্বনিত্ব হচ্ছিলো। 

শারমিন তার রুমে গিয়ে মুখের নিকাব খুলে শব্দ করে কাঁদতে লাগলো।। অবন্তী তার কত ভালো বন্ধু ছিলো। আর তার সাথেই এরকম টা হওয়ার কথা ছিলো??


শারমিন ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দু রাকআত নফল নামায পড়ে অবন্তীর জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করলো।অবন্তী যেখানে থাকুক সে যেনো সুস্থ থাকে, হে আল্লাহ তুমি তাকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিও। যার কাছে বন্ধি থাকুক না কেনো, তুমি বন্ধি দাতার মনকে নরম করে দিয়ে ওকে সসম্মানে মুক্তির ব্যাবস্থা করে দাও। শারমিন যেনো একদম চুপ হয়ে গেছে। দুদিন ধরে আর বেলকনিতে যায় না, ঠিক মতো খাবার খায় না, এমনকি ভার্সিটিতেও যায় না, শুধু ইবাদতে ডুবে থাকে। 

সুবর্নাকে কিছু জানায়নি। শারমিনের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে,, নুরানি চেহারাতে ঘনঘটা দেখে সুবর্না প্রশ্ন করে ফেললো...........


সুবর্নাঃ কি ব্যাপার শারমিন? কিছুদিন ধরে তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো? এনিথিং রং??


শারমিনঃ ভাবি অবন্তী আর নেই?? 


কথাটা শুনে সুবর্না চমকে উঠলাে। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো..........


সুবর্নাঃ নেই মানে? 


শারমিনঃ আজ ১০ দিন ধরে সে নিখোঁজ??


সুবর্নাঃ নিখোঁজ মানে কি??


শারমিনঃ হঠাৎ করে ভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে গায়েব হয়ে গেছে সাথে ওই জুবায়ের ছেলেটাও??


সুবর্নাঃ কি বলছিস এসব শারমিন??


শারমিনঃ হ্যা ভাবি, সবাই ভাবছে অবন্তী পালিয়ে 

গেছে ছেলেটার সাথে?? 

 

সুবর্নাঃ ইম্পসিবল এটা হতে পারে না, আমরা অন্তত জানি অবন্তী কেমন। তোর ভাইয়া বাড়িতে আসলে আলোচনা করবো দেখি কি করা যায়?? 


ভার্সিটিতে প্রচুর ভীড় জমে গেছে। স্টুডেন্টদের বলাবলি শুনে শারমিন বুঝতে পারলো যে, একটা লাশ এসেছে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে। বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠলো কার লাশ হতে পারে।। তখনই প্রিন্সিপালের আহাজারি শুনতে পেলো, দৌঁড়ে লাশের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু লাশটাকে চেনা যাচ্ছে না। খুনিটা এমন ভাবে মুখটা জখম করে দিয়েছে, যার কারনে চেনা যাচ্ছে না লাশটা কার। যাথারিতী পুলিশ এসে লাশটাকে পোস্ট মটমের জন্য নিয়ে গেলো। লাশ শনাক্তের পর এতটুকু জানা গেলো যে, খুনি মেয়েটাকে প্রথমে গেং রেপ করেছে, পরে তার গলা কেটে মুখটা পুড়িয়ে দিয়েছে।। সবকিছু কেমন জানি থমথমে হয়ে গেছে। পরিবেশ টা বড্ড ব্যাথার্ত লাগছে সকলের কাছে। 


আজ অজ্ঞাত লাশটার ডিএনএ রিপোর্ট আসবে। শারমিন শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করে আছে,, কারন আল্লাহ যা করেন তাতেই রয়েছে মঙ্গল। সুবর্না শারমিনের কাছে এসে বললো.......


সুবর্নাঃ চিন্তা করিস না! সব ঠিক হয়ে যাবে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখ??


শারমিন মৃদু মাথা নাড়ালো।। আল্লাহ হয়তো শারমিনকে কষ্ট দিতে চায় না। আর তার প্রমান ডিএনএ রিপোর্ট। 

রিপোর্ট অনুযায়ী লাশটা অবন্তীর না, লাশটা অন্য কারো। খোঁজ নেওয়ার এক পর্যায়ে জানা গেলো লাশটা সাদিকার ফ্রেন্ড রিয়ার। এই ঘটনায় সাদিকা পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে। সে এটা ভেবে পাচ্ছিলো না যে, ওর মতো একজনের ফ্রেন্ডকে কেউ কি করে টাচ করার সাহস রাখে। শুধু টাচ করেই ক্ষান্ত হয় নাই,, সেই সাথে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। 


প্রিন্সিপাল আপাতত টেনশন মুক্ত হলেন৷ কিন্তু আবারো পুলিশ রিপোর্ট করে নতুন করে ডায়েরি লিখিয়ে আসলেন। একটি ছায়া ধীরে ধীরে একটা গোপন কক্ষে আসলেন, ওখানে আগে থেকে একজন অপেক্ষা করেছিলেন। দুজনে কিছুক্ষণ গোপন বৈঠক করলেন। তারপর ধীরে ধীরে ছায়া দুটি রুম থেকে চলে গেলেন।।


শারমিন ও সুবর্না বাসার ছাদের উপর বসে আছে, তখন পিছন থেকে কেউ একজন তাদেরকে জড়িয়ে ধরলো। পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখলো কালো বোরকা পরিহিত কেউ একজন। শারমিন প্রশ্ন করলো..........


শারমিনঃ কে আপনি?? 


মহিলা মুখের নিকাব তুলে সালাম দিলো।। সাথে সাথে সালামের জবাব দিয়ে শারমিন জড়িয়ে ধরে বললো...


শারমিনঃ কোথায় ছিলি একোদিন অবন্তী? কে তোকে ধরে নিয়ে গেছিলো??


হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে গেলো শারমিন। এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখেছিলো। অবন্তীর নিখোঁজের পুরো ১২দিন পর এরকম স্বপ্ন দেখলো শারমিন। বিছানা থেকে উঠে বসলো, এই স্বপ্নটা কিসের দিকে ইঙ্গিত করছে তাহলে?

ভাবতে ভাবতে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ২টা বাজে। এখন তো তাহাজ্জুদ নামায পড়ার সঠিক সময়। রাত ১২টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামায পড়ার পড়ার শ্রেষ্ঠ সময়। তাহাজ্জুদ নামায অনেক ফজিলত পুর্ন ইবাদত। রাসুল (সাঃ) তার জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ কাযা করেনি। তাছাড়া এই নামাযেে ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন,,,এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়তে থাকো। এ নামায তোমার জন্য আল্লাহর অতিরিক্ত ফযল ও করম। শীঘ্রই আল্লাহ তোমাদের উভয় জগতে মর্যাদা ভুষিত করবেন।"(সুরা বণি ঈসরাইলঃ-৭৯) 


যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামায পড়ে তাদেরকে মুহসেন ও মুত্তাকী নামে ডাকা হয়। তাদেরকে আল্লাহর রহমত এবং আখেরাতের চিরন্তন সুখ সম্পদের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নিশ্চয়ই মুত্তাকী লোক বাগ বাগিচা এবং ঝর্নার আনন্দ 

উপভোগ করতে থাকবে। এবং যে যে নিয়ামত তাদের প্রভু তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহন করবে। কারন নিঃসন্দেহে তারা এর পুর্বে(দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন( বড় নেককার) ছিলেন। (সুরা যারিয়াতঃ ১৫-১৮) 


""বস্তুতঃ রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময় কোরআন পাঠ বা যিকির একবেরে যথার্থ।"(সুরা, মুয্যাম্মিলঃ-৬)" আমার প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের(আল্লাহর) দরবারে সেজদা দেয় এবং ইবাদত করে রাক কাটিয়ে দেয়।( সুরা, ফুরকানঃ ৬৩-৬৪) তাছাড়া আমাদের রাসুল (সাঃ) বলেছেন, অন্যান্য সুন্নাত ও নফল নামাযের চেয়ে, তাহাজ্জুদ নামায অত্যাধিক ফজিলত পুর্ন।(আহমদ, মিশকাত-১১০ পৃঃ) 


রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন, আামাদের পরোয়ার দিগা! তাবারাকা ওয়াকা'য়ালা প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন,, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকে। অতঃপর তিনি বলেন,, তোমাদের মাঝে কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দিবো। 

কে আমার কাছে কিছু চাইবে! আমি তাকে দিবো কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে! আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।(সহীহ মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ) 


যে ব্যাক্তি ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং 

নিজের স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে নাসায পড়ায়, এমনকি সে যদি না জাগে তাহলে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় এবং এক সাথে নামায পড়ে, তাহলে আল্লাহ তার উপর রহমত বর্ষন করতে থাকে। অনুরুপ ভাবো যে নারী ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং নিজের স্বামীকে জাগিয়ে নামায পড়ায়, যদি সে না জাগে তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে জাগিয়ে তুলে নামায পড়ায়, তাহলে আল্লাহ তার উপর রহমত বর্ষন করতে থাকেন। 


রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন, আমার নিকট অতি প্রিয় নাসায হলো, হযরত দাউদ (আঃ) এর নামায। (তাহাজ্জুদের নামায) তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং 

রাতের তৃতীয় ভাগে নামাযে দাঁড়াতেন। 


তাহাজ্জুদ নামাযের ফজিলত কতটা বেশি আশাকির তা আমরা বুঝাতে পারলাম।। সকালের আলো ফোঁটার পর শারমিনের কাছে একটা ফোন আসে। যেটা শুনে তার মলিন মুখটাকে খুশির জোয়ারে প্রানবন্ত করে দেয়। সুবর্নার কাছে গিয়ে বলে তার খুশির কারন। অবন্তী এবং জুবায়ের দুজনকে পুলিশ একটা পুরোনো বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে।। এবং অপহরণ কারী ধরা পড়েছে। তারা পুলিশ কাষ্টরীতে আছে।। সুবর্না রুমে গিয়ে জাহেদকে বললো........


সুবর্নাঃ জানো একটা খুশির খবর আছে?? 


জাহেদ হসপিটাল যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিলো,পাঞ্জাবি 

পড়ে টুপি হাতে নিলো আর বললো.........


জাহেদঃ আলহামদুলিল্লাহ। এসবই মহান আল্লাহর

দয়া বুঝলে?? 


সুবর্নাঃ হুমম ঠিক বলছো??


জাহেদ সুগন্ধি লাগিয়ে বললো.......


জাহেদঃ তাহলে আজ থেকে ভার্সিটিতে যাওয়া কন্টেনিউ করো?? 


সুবর্নাঃ হুমমম আচ্ছা??


জাহেদ প্যান্ট পড়ে পায়ের গোড়ালি বাহির করে ভাজ করে নিলো৷ জুতা পড়ে চলে যাচ্ছিল, দরজার কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসলো, তারপর সুবর্নার কপালে একটা চুমু দিলো,সুবর্না প্রতিউত্তর মুচকি হাসি দিলো। শারমিন তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে সুবর্নাকে ডাকা শুরু করলো........... 


শারমিনঃ ভাবি, ও ভাবি কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি আসো??


সুবর্নাঃ এইতো মাকে বলে আসছি, তুই দাঁড়া??


সুবর্না তার শ্বাশুড়ি জাকিয়া বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটিতে রওয়ানা দিলো। কলেজে গিয়ে সুবর্না প্রিন্সিপালের কাছে জানতে চাইলো.........


সুবর্নাঃ অবন্তী কি আজকেও একা আসবে??


প্রিন্সিপালঃ না, ড্রাইবার নিয়ে আসবে??

 

শারমিনঃ ওহ আচ্ছা! আমরা তাহলে যাই??


সালাম দিয়ে ক্যাম্পাসে চলে আসলো। বেশ কয়েক দিন ধরে সাদিকাদের সাড়া শব্দ নেই। রিয়ার হত্যার পর থেকে ওরা চুপ হয়ে আছে। শারমিন দিন রাত তার জন্য আল্লাহর নিকট হেদায়েত পার্থনা করে।। ঠিক নয়টার সময় অবন্তী চলে আসলো।।আশার পরে শারমিন আর সুবর্নাকে জড়িয়ে ধরলো। শারমিন অবন্তীকে মন ভরে দেখে নিলো, তারপর অবন্তী বললো.........


অবন্তীঃ তোর ভাইয়ার বিয়ের আগের দিন খুব দ্রুত বাড়ি থেকে ভার্সিটি ফিরছিলাম। তখন জুবায়েরের সাথে দেখা, ও যেহেতু বাড়ি যাচ্ছিলো তাই আমরা এক সাথে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে যে নির্জন জায়গাটা পড়ে সেখানেই একটা সাদা গাড়ি এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়। আর গাড়ি থেকে দুটি লোক নেমে আমাদের মুখে ক্লোরোফুম ধরে অজ্ঞান করে নেয়। তারপর জ্ঞান ফিরলে দেখি আমরা একটা ভাঙা বাড়িতে বন্ধি অবস্থায় আছি। ছেলে গুলো বাবার কাছে ফোন দিয়ে অনেক টাকা মুক্তিপন চাইতো??


সুবর্নাঃ তারপর কি হলো???


অবন্তীঃ তারপর বাবা পুলিশের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে আমাদেরকে 

উদ্ধার করে??


শারমিনঃ আর লোকেরা তোকে আর জুবায়েরকে সন্দেহ পর্যন্ত করেছিলো??


সুবর্নাঃ কিন্তু আমরা বিশ্বাস করিনি??


অবন্তীঃ লোকেরা তো কত কথাই বলবে, কিন্তু আমি জানি জুবায়েরের মনে কোনো পাপ নেই??


অবন্তীর কথাটাকে ভেংচি কেটে পিছন থেকে সাদিকা এসে বললো.........


সাদিকাঃ হ্যা হ্যা জুবায়ের তো নিষ্পাপ,, আর তাইতো তোমরা এক সাথে এতগুলো রাত দিন পার করছো??


অবন্তীঃ মুখ সামলে কথা বলো,,নয়তো ওই মুখ আর মুখ থাকবে না?? 


সাদিকাঃ চুপ থাকো, ওই কলঙ্কিত মুখে আর ধমক 

দিও না?? 


সুবর্নাঃ ভুলে যেওনা তোমার বান্ধবী কিন্তু একরাশ কলঙ্ক নিয়ে দুনিয়া ছেড়েছে। তাছাড়া সঠিক তথ্য 

না জেনে কাউকে কলঙ্কিনী বলবে না?? 


শারমিনঃ বোনরে সব রেশারেশী, হিংসা, ঘৃণা ভুলে গিয়ে দ্বীনের পথে ফিরে এসো। পর্দা করো, এসব পোষাক ছেড়ে বোরকা পড়ো??


সাদিকাঃ তোমার ভাষন শুনে আমার কাজ নেই।। তোর পর্দা মানুষকে কি নিরাপত্তা দিতে পারে সেটা আমার জানা আছে। আমার বান্ধবী রিয়াও কিন্তু বোরকা পড়তো, কোথাও গেলে হিজাব দিয়ে মুখ ডেকে যেতো। তবুও কি সে কুকুরদের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে?? পায়নি। বরং পাগলা কুকুর গুলো ওর শরীরের মাংস ছিড়ে ছিড়ে খেয়েছে??


শারমিন কোমল কন্ঠে বললো........


শারমিনঃ হা বোরকা পড়তো, তবে সেটা রঙিন, হিজাব পড়ে মুখ বাধতো তবে চোখ দুটি খোলা রাখতো??


সাদিকাঃ চোখ খোলা রাখবে না তো বেঁধে রাখবে??


শারমিনঃ বেঁধে রাখবে না আবার খোলাও রাখবে না??


সাদিকাঃ মানে??


শারমিনঃ মানে হলো এই যে, চোখ খোলা রেখে চোখে মাসকারা, লেন্স, কাজল, মেকআপ দিয়ে এমন ভাবে সাজায় তার চোখ দেখেই হাজারটা ছেলে পাগল হয়ে যায়। তখন যদি তার মুখে হাজারটা ব্রণ থাকে তবুও?


সাদিকাঃ কি বলতে চাইছিস তুই??


শারমিনঃ বলতে চাই যে এখনকার মেয়েরা যেই রকম পর্দা করে এটা কি পর্দা?? পর্দার ভেতর পড়ে?? আজকালকার যুবতীদের বোরকার হিজাব মানে হলো-বিরিয়ানি বাক্সের ভিতর তুলে, বাক্স খানেকটা ছিদ্র করে বিড়ালের সামনে মেলে ধরা। বিড়াল কি তখন চুপ থাকবে?? বিরিয়ানির গন্ধ পেয়ে হয়তো সরাসরি থাবা বসিয়ে আক্রমণ করে প্যাকেটটা খুলে ফেলবে নয়তো প্যাকেটটা খুলার নানান তাল বাহানা খুঁজে বের করবে। যখন বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে ফেলবে তখন বিড়ালের অপরাধ হয়ে যাবে??

তোমরা কেনো বুঝো না? বনের চিতাকে হরিণের মাংসের প্রতি দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। তেমনই পুরুষদেরকে নারীর প্রতি দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে??


সাদিকাঃ কোরআনে তো ছেলেদের চক্ষু সংযত রাখার কথা বলা হয়েছে সর্ব প্রথম?? 


সবর্নাঃ ছেলেরা অবশ্যই চোখ নিচে রাখবে যদি তুমি পর্দা করো??


অবন্তীঃ তাছাড়া ছেলেরা যা ইচ্ছে করুক, তুমি তোমার জায়গা থেকে ঠিক থাকলে সব ঠিক??


সাদিকাঃ তুই চুপ থাক, নষ্টা মেয়ে একটা??


কথাটা শুনে অবন্তী রেগে তেড়ে যেতেই শারমিন ওকে থামালো। তারপর তাকে বুঝিয়ে ক্লাসে নিয়ে গেলো। শারমিন এবং সুবর্না বাড়ি ফিরলো। সুবর্না ফ্রেশ হয়ে খাবার গরম করতে যেতেই জাকিয়া বেগম বললো....


জাকিয়া বেগমঃ তোর খাবার গরম করে খেতে হবে না মা, তোরা গিয়ে বস আমি খাবার গরম করে নিয়ে আসছি??


সবর্নাঃ আপনি কেনো কষ্ট করবেন মা??


জাকিয়া বেগমঃ চুপ, সারাদিন বসেই ছিলাম, এখন তোরা খুব ক্লান্ত। তাছাড়া শারমিন ভার্সিটি থেকে আসলে আমি খাবার গরম করে দিতাম??


সুবর্নাঃ কিন্তু মা আমি তো পারবো??


জাকিয়া বেগমঃ থাপ্পড় খাবি একটা, যা গিয়ে বস??

শারমিন যেমন আমার মেয়ে, তেমনই তুইও আমার মেয়ে। শারমিনের ক্লান্তি থাকতে পারে তোর পারে না??


সুবর্নার চোখ দিয়ে আনন্দে অশ্রু প্রবাহিত হলো।এদিকে সাদিকা এবং তার দলের মেয়েরা অবন্তীকে আর জুবায়েরকে নিয়ে নানান কথা প্রচার করছে ভার্সিটি জুড়ে। কেউ প্রতিবাদ করছে না। শারমিন যদিও কিছু উপদেশ দেয় সাদিকা কে কিন্তু টিকতে পারে না, তিরস্কার আর গালি গালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। অবন্তীর বাবা প্রিন্সিপাল এটা নিয়ে খুব চিন্তিত। সবাই তার দিকে আঙুল তুলছে। প্রিন্সিপাল স্যার চিন্তায় দুচোখ এক করতে পারছে না। অবন্তীও মনে শান্তি পাচ্ছে না। অবন্তীকে দেখতে এসেছে পাত্রপক্ষ। পাত্রের বাবা অবন্তীকে দেখে অবন্তীর বাবাকে বললেন..........


পাত্রের বাবাঃ নিলয় সাহেব আপনার আপত্তি না থাকলে আপনার মেয়েকে আমার ছেলের বউ 

করে ঘরে তুলতে চাই?? 


নিলয় সাহেবঃ আলহামদুলিল্লাহ আমার আবার আপত্তি কিসের? আমি খুব খুশি হয়েছি আপনার এই প্রস্তাবে??


পাত্রের বাবাঃ তাহলে সামনের সপ্তাহে শুক্রবারে বিয়ের ডেট ফাইনাল??


নিলয় সাহেবঃ আলহামদুলিল্লাহ?? 


বিয়ের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে।।অবন্তী হ্যা/না কিছুই বলেনি,এমনকি পাত্রকেও দেখেনি। শুধু শুনেছে পাত্রের নাম নুর ইসলাম। পানি উন্নয়ন বোর্ডে ম্যানেজারের পজিশনে রয়েছে। পারিবারিক অবস্থাও খুব ভালো।  

দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে নুর ইসলাম মেঝ,, তার বড় ভাই ইমরান ইসলাম, একটা প্রাইভেট কলেজের প্রফেসর৷। আর সবার ছোট বোন, নাম তাশনিয়া তাশু। এইবার এস এস সি দিবে। শারমিন সহ সবাই জেনে গেছে বিয়ের কথা। 


শারমিনদের বাড়িতে আজকে কোনো হাসি খুশির ভাব নেই।। সবর্না এবং জাকিয়া বেগমের মাঝে ঝগড়া হয়েছে সকালে। তাই দুজন দুদিকে মুখ গোমড়া করে বসে আছে, কারো সাথে কথা নেই। ঝগড়ার মুল কারন হলো-ফিরে দেখা ঝগড়ার সিন। "জাকিয়া বেগম কিচেন থেকে ডাকছে.......


-গল্পঃ_হুজুরের_বউ__পর্বঃ_০৮

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


শারমিনদের বাড়িতে আজকে কোনো হাসি খুশির ভাব নেই।। সবর্না এবং জাকিয়া বেগমের মাঝে ঝগড়া হয়েছে সকালে। তাই দুজন দুদিকে মুখ গোমড়া করে বসে আছে, কারো সাথে কথা নেই। ঝগড়ার মুল কারন হলো-ফিরে দেখা ঝগড়ার সিন। "জাকিয়া বেগম কিচেন থেকে ডাকছে.......


জাকিয়া বেগমঃ সুবর্না ও সুবর্না এদিকে আয় তো?? 


সুবর্নাঃ হ্যা মা এইতো এক্ষুনি আসছি??


কিচেনে আশার পর সুবর্না জাকিয়া বেগমকে বললো....


সুবর্নাঃ হ্যা মা কি লাগবে বলো এক্ষুনি এনে দিচ্ছি?? 


জাকিয়া বেগমঃ তোর কিছু করা লাগবে না, খেয়ে ভার্সিটিতে চলে যা, শারমিন আর জুবায়েরকে 

ডেকে নিয়ে আয়??


সুবর্না গিয়ে শারমিন আর জুবায়েরকে ডেকে আনলো। 

সবাই খেতে বসেছে তখন জুবায়ের বললো.....


জুবায়েরঃ মা তরকারি কে রেঁধেছে?? 


জাকিয়া বেগমঃ কেনো বাবা, ভালো হয়নি??


শারমিনঃ তোমাদের মাঝে আমি আসলাম কি করে? চুলটা তোমার না হলে ভাবির??


সুবর্নাঃ শারমিন মায়ের মাথার চুল, পাকা চুল দেখ তুই??


জাকিয়া বেগমঃ কিহহ আমি বুড়ি??


সুবর্নাঃ না মা সেটা বলিনি??


জাকিয়া বেগমঃ বলছিস, একদম মিথ্যা বলবি না?? 


সুবর্নাঃ মা আপনি বুঝতে পারছেন না??


এই হলো শুরু। জাহেদ আর শারমিন মুখ টিপে টিপে হাসছে। এবার আসেন বর্তমানে।।বিকেল বেলায় সুবর্না আর তার শ্বাশুড়ি ছাদের দু পাশে বসে আছে না খেয়ে।


জাকিয়া বেগমঃ আজ যদি নিজের মেয়ে হতো তাহলে কখনো না খাইয়ে রাখতো না হুমম??


সুবর্নাঃ আজ যদি নিজের মা হতো তাহলে জোর করে খাওয়াতো??


ছাদে আসলো জাহেদ আর শারমিন। জাহেদ বললো....


জাহেদঃ এজন্যই বিয়ে করতে চাইনি। জানতাম পরের মেয়ে এসে আমার মাকে কাঁদাবে। না বিয়ে কর বিয়ে কর বলে তো মাথা খাচ্ছিলে, এবার হলো তো? থাকো না খেয়ে থাকো আর পুত্র বধুর চেহারা দেখো??


শারমিনঃ কেনো সুবর্নাকে ভাবি করে এই বাড়িতে আনলাম?? 


কথাটা শেষ করতেই জাকিয়া বেগম বলে উঠলো....... 


জাকিয়া বেগমঃ তোদের কত বড় সাহস আমার মেয়েকে এসব বলিস??


সুবর্নাঃ মা আপনি এদেরকে আচ্ছা মারেন। আমাদের মা মেয়ের মাঝখানে এরা নাক গলাবে কেনো?? 


জাহেদঃ হুমমম যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর??


শারমিনঃ এজন্যই গুনীজন বলে অন্যের ভালো করতে নেই। ওরা তুমুল ঝগড়া করবে তার মাঝে তুমি আর আমি কিছু বললেই ওরা ওদের ঝগড়া ভুলে আমাদের পিছনে লাগবে??


জাহেদঃ হুমমম ঠিকই বলছিস চল এখানে থাকা আমাদের জন্য নিরাপদ নই??


শারমিনঃ হুমম ভাইয়া চলো??


ওরা চলে গেলো। জাকিয়া বেগম বললো........


জাকিয়া বেগমঃ সুবর্না এদিকে আয়??


সুবর্না কৃত্তিম অভিমান করে বললো......


সুবর্নাঃ উঁহু আমি যাবো না, তুমি আমাকে অনেক বকেছো??


জাকিয়া বেগমঃ বকেছি বেশ করেছি। মা ভালোবাসতে পারে আবার বকতেও, এখন এদিকে আয় খাইয়ে দিবো?? 


শারমিনঃ বিয়ের ডেট কবে?? 


অবন্তীঃ সামনের সপ্তাহে?? 


শারমিনঃ কি করে??


অবন্তীঃ জব করে??


শারমিনঃ নামায পড়ে??


অবন্তীঃ হুমমম??


শারমিনঃ তাহলে অমত করিস না, বাবা মায়ের মনে 

কষ্ট দিবি না??


অবন্তীঃ হুমম রে, এখন বিয়ে করতাম না, জুবায়েরকে নিয়ে যে সব গুজব চলছে তাতে বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে??


শারমিনঃ বিয়ের পর পর্দা এখনকার মতোই করবি, মনে রাখিস পর্দা করা ফরজ। আর বাহিরে গেলে একদম সাজুগুজু বেপর্দা করে বের হবি না?? 


অবন্তীঃ সাজতে পারবো না?? 


শারমিনঃ আরে বাবা সাজবি তবে নিজের বরের জন্য। 

রাতে যখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে দেখবে তার স্ত্রী সুন্দর করে সেজে আছে, তখন মনটা ভালো হয়ে যাবে। ভালোবাসার কথা বলবে। আর এখনকার মেয়েরা স্বামীর সামনে বিধবা সেজে থাকে আর বাহিরে গেলে এমন ভাবে সাজে তাদের দেখলে চোখ ফিরানো দায়। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, স্বামী ভাবে তার বউয়ের তো কোনো সুন্দর্য নেই, তাই পর নারীতে আশক্ত হয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়?? 


অবন্তীঃ বাহহ এরকম করে তো ভাবিনি কখনো??


শারমিনঃ ভাবতে হয়, যে যুগ আসছে??


অবন্তীঃ বিয়েতে আসবি না??


শারমিনঃ দেখি, তবে পারবো না মেবি??


অবন্তীঃ ওকে আল্লাহ হাফেজ?? 


শারমিনঃ আল্লাহ হাফেজ??


সাদিকা জুবায়েরকে ডাকলো। জুবায়ের আসার পর সাদিকা ওর কলার ঠিক করতে লাগলো। সাদিকার কান্ড দেখে জুবায়ের বললো.........


জুবায়েরঃ ছাড়ুন, কি করছেন?? 


সাদিকাঃ এখনো তো কিছুই করিনি তবে করবো, এই তোর শার্ট খোল??


জুবায়েরঃ মানে??


সাদিকাঃ মানে তোর বডি দেখবো??


জুবায়েরঃ ছিঃ ছিঃ কি বলেন এসব??


সাদিকাঃ ওই অর্থি এদিকে আয়??


অর্থি এদিকে আশার পর সাদিকা বললো........


সাদিকাঃ তুই জুবায়েরকে জড়িয়ে ধর??


জুবায়েরঃ আমি গেলাম??


সাদিকা জুবায়েরকে বাঁধা দিয়ে বললো........


সাদিকাঃ যাবি যাবি এতো ভয় কিসের? তখন ভয় লাগেনি যখন অবন্তীর সাথে এতো গুলো রাত কাটিয়েছিস??


জুবায়েরঃ ছিঃ ছিঃ কি সব বাজে কথা বলছেন আপনি?? 


সাদিকাঃ আহা কচি খোকা ভাজা মাছটিও উলটে খেতে জানে না??


সাদিকার টিম জোর করে জুবায়েরের শার্ট আর গেঞ্জি খুলে ফেললো, সবাই মিলে খুব বাজে ভাবে রেগিং করলো। মুখের রক্ত মুছার বদলে চোখের পানি মুছতে মুছতে মেসে ফিরলো। ওয়াশ রুমে গিয়ে অনেক কাদলো। শহরের কিছু মেয়ে এতটা পাষাণ কি করে?

তারা একটা সহজ সরল ছেলেকে নিয়ে এরকম মজা করে কি করে। নাহ কালকে বাড়ি চলে যাবো। তার আগে ছোট বোনের জন্য কিছু কেনা কাটা করার দরকার। তা কি কিনবো? বোন তো মাদ্রাসায় পড়ে 

তার জন্য একটা বোরকা আর হিজাব কিনে নিলে কেমন হয়। খুব ভালো হবে?? জুবায়ের এর পকেটে ১০০০ হাজার টাকার একটা নোট আর কিছু খুচরাে আছে। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সে, মেধার জোড়ে এই পর্যন্ত আসা। কয়েকটা টিউশনি করে, যে টাকা আয় 

তা থেকে নিজের খরচ রেখে পরিবারের জন্য পাঠায়। এখন মাসের শেষের দিকে, এই কয় টাকা আছে তার কাছে। বাকি টাকা গুলো খরচ হয়ে গেছে। দামী শপিংমল থেকে একমাত্র বোনের জন্য কিছু কেনার সামর্থ নেই, তাই ফুটপাতের দোকান থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে বোরকা আর হিজাব কিনে নিয়ে পিচঢালা গলির পাশ দিয়ে হাঁটছে। পায়ে ৫০ টাকা দামের স্যান্ডেল, দুই বার সেলাই করেছে, এইবার ছিড়ে গেলে আর টিকবে না। জুবায়ের জানে তার জন্য বিলাসিতা নয়, তার 

কাঁধে রয়েছে পাড়ার সমান দায়িত্ব। বুড়ো বাবা রিকশা 

চালাক এটা তার সহ্য হয় না। তাই বাবাকে না করে দিয়ে নিজেই পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি খোঁজে বেড়াচ্ছে। অতিতের সৃতি গুলো বারবার ফিরে ফিরে আসছে।। হঠাৎ একটা মেয়ে পিছন থেকে জুবায়েরকে জড়িয়ে ধরে বলছে........


মেয়েটাঃ বাঁচাও বাঁচাও আমাকে বাঁচাও?? 


জুবায়ের ঘঠনার আকস্মিকতায় নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলো, কোনো ভাবে নিজেকে সামলিয়ে মেয়েটিকে সরিয়ে বললো......


জুবায়েরঃ কে আপনি?? ওভাবে গায়ের উপর পড়ছেন কেনো ছাড়ুন?? 


মেয়েটি জুবায়ের-এর দিকে ফিরে তাকাতেই জুবায়ের দুই পা চমকে পিছিয়ে গেলো আর বললো.......


জুবায়েরঃ সাদিকা ম্যাম আপনি?? এতো রাতে এই অবস্থায়?? 


সাদিকাঃ জুবায়ের প্লিজ আমাকে বাঁচান ওরা আমার ক্ষতি করতে চাইছে??


জুবায়েরঃ কারা ক্ষতি করতে চাইছে?? আপনি যেখানে ছেলেদেরকে ছাড় দেন না সেখানে ওরা করবে 

আপনার ক্ষতি খুবই হাস্যকর কথা। এই এক মিনিট এটা আপনার নতুন কোনো চাল নয়তো আমাকে রেগিং করার??


সাদিকাঃ বিশ্বাস করুন আমি কোনো ছলাকলা করছি না ওরা সত্যি আমার পিছনে?? 


জুবায়ের কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই পিছনে কিছু লোকের দৌড়ে আসার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো। সাদিকা ভয় পেয়ে উদ্ধিগ্ন কন্ঠে বললো......


সাদিকাঃ ওইযে ওরা আসছে। দয়া করে আমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচান আমি আপনার পায়ে ধরছি??


কথাটা বলে সাদিকা জুবায়েরের পায়ে হাত দিতে নিলে জুবায়ের সড়ে দাঁড়ালো। ব্যাগ থেকে ৫০০টাকার কিনে আনা বোরকা আর হিজাবটা সাদবকার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো........


জুবায়েরঃ এগুলো পড়ে নিন??


সাদিকাঃ এসব আমি পড়বো??


জুবায়েরঃ এছাড়া আর কোনো উপায় নেই?? 


বাধ্য হয়ে সাদিকা বোরকা আর হিজাবটা পড়ে নিলো। জুবায়ের আবার বললো.........


জুবায়েরঃ মুখের উপর নিকাব নামিয়ে নিন??


সাদিকা নিকাবটা নামিয়ে জুবায়ের-এর বাম পাশ দিয়ে হাঁটতে লাগলো। কয়েকটা ছেলে সাদিকা কে খুঁজতে এসে না পেয়ে একজন আরেকজনকে বলছে...........


লোকটাঃ সাদিকা এতো তাড়াতাড়ি কোথায় গেলো??


আরেক জনঃ জানি না দোস্ত?? 


আরেক জনঃ ওই যে দেখ একটা ছেলে একটা মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে মনে হয় ওইট সাদিকা??


লোকটাঃ গাঁধা সাদিকা হলো স্টাইলিস্ট একটা মেয়ে আর ও হচ্ছে বোরকাওয়ালি। পাশে যেই ছেলেটা 

আছে ওটা ওর হাজবেন্ড। মেবি তাহলে এখন কি 

হবে,সাদিকা তো আমাদের সব খবর জেনে গেছে??


আরেক জনঃ চল ওদিকের গলিটা দিয়ে খুঁজে দেখি??


ছেলে গুলো চলে গেলো। জুবায়ের বলে উঠলো........ 


জুবায়েরঃ ওরা কারা আর আপনাকে তাড়া করছে কেনো?? 


সাদিকা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো........


সাদিকাঃ ওরা আমার বন্ধু ছিলো?? 


জুবায়েরঃ ছেলে বন্ধু?? তা ওরা আপনার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো কেনো? আর ছেলেটা কে??


সাদিকাঃ রাফি ইমতিয়াজ আর সাকিল??


জুবায়েরঃ এক মিনিট ওরাই তো আমাকে আর অবন্তীকে কিডন্যাপ করেছিলো??


সাদিকাঃ ওরা রিয়ার কথায় আপনাদেরকে কিডন্যাপ করেছিলো?? 


জুবায়েরঃ মানে? আমি রিয়ার কি ক্ষতি করেছিলাম??


সাদিকাঃ বলছি দাঁড়ান,, রিয়া আপনাকে ভালোবাসতো আর ইমতিয়াজ পছন্দ করতো অবন্তীকে।। একদিন ইমতিয়াজ প্রপোজ করছিলো কিন্তু অবন্তী রিজেক্ট করে দিয়েছিলো। সেই থেকে অবন্তীর উপর রাগ 

জমতে থাকে ইমতিয়াজের। সেই অপমানের শোধ তুলতে চেয়েছিলো অনেক দিন ধরে। আর রিয়া যেহেতু আপনাকে পছন্দ করতো তাই আপনাকে একটা প্ল্যান সাজায়। আপনাকে কোথাও আটকে রেখে রিযার সাথে আপনার বাজে ছবি তুলে ব্ল্যাক মেইল করে আপনাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। আর ইমতিয়াজ একই ভাবনা ভেবেছিলো অবন্তীকে বিয়ে করার জন্য। ওরা এই ডিল ফাইনাল করতে একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে আলোচনায় বসেছিলো??


জুবায়েরঃ আমাদেরকে পচানোর জন্য এই প্ল্যান? কিন্তু রিয়া মার্ডার হলো কি করে??


সাদিকাঃ আপনাদেরকে আটকে রাখার পর হঠাৎ করে রিয়ার মন পরবর্তন হয়ে যায়। আর ও আপনাদেরকে ছেড়ে দিতে চায়। ইমতিয়াজের বাঁধাকে উপেক্ষা করে 

যখন ও আপনাদেরকে ছেড়ে দিয়ে মাফ চাওয়ার মনস্থির করে তখনই ইমতিয়াজ ফাইনাল খেলে। ওর সব বন্ধুরা মিলে রিয়াকে??(হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো??) 


জুবায়েরঃ শান্ত হন??


সাদিকাঃ আর ওরা নিজেদের মাঝে এসব কথা নিয়ে এক পর্যায়ো ওরা আমাকে ধরতে আসে?? 


জুবায়েরঃ এর পরের টুকু আমি জানি। সম্মানি লোকের মান আল্লাহ অবশ্যই রাখেন। রিয়া যেই পরিকল্পনা করেছিলো আমাদেরকে নিয়ে, সেই পরিকল্পনাটা ওর জীবনে বাস্তবে রুপ নিয়েছিলো? তবে আপসোস হচ্ছে ওর জন্য যে নিজের মনকে পরিবর্তন করেছিলো কিন্তু সফল হতে পারেনি। চলো থানায়, রিয়াতো শাস্তি পেয়েছে এবার ওদের শাস্তি হওয়া দরকার?? 


সাদিকাঃ আপনার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন??


জুবায়েরঃ আপনি যে আপনার ভুল বুঝতে পারছেন এটাই অনেক??


অন্যদিকে অবন্তী শারমিনের কাছে কল দিলো আর বললো........


অবন্তীঃ শারমিন শুনেছিস খবর??


শারমিনঃ কি খবর??


অবন্তীঃ আমাকে আর জুবায়েরকে যারা আটকে রেখেছিলো তারা নাকি রিযাকে খুন করেছে??


শারমিনঃ কি বলিস??


অবন্তীঃ হ্যা ওই ভার্সিটির বড় ভাই ওরা, পুলিশ ওদেরকে ধরে নিয়ে গেছে??


শারমিনঃ আলহামদুলিল্লাহ, খুনির বিচার হোক। কলেজে আসবি??


অবন্তীঃ হুমমম যাবো??


কলেজে আশার পর অবন্তী শারমিনকে বললো.........


অবন্তীঃ শারমিন সাদিকা কে দেখেছিস?? কতটা চেঞ্জ বোরকা পড়েছে??


শারমিনঃ তাইতো দেখছি। যাইহোক আল্লাহ ওনাকে হেদায়েত দিয়েছে এটাই অনেক??


সাদিকা ওদের দুজনকে দেখে ডাক দিলো........


সাদিকাঃ শারমিন আমাকে মাফ করে দাও। এতদিন তোমাদের সাথে কত মিস বিহ্যাব করেছি?? 


শারমিনঃ ঠিক আছে ঠিক আছে আমরা কিছুই মনে করিনি?? 


সাদিকাঃ আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে??


শারমিন+অবন্তীঃ হ্যা অবশ্যই?? 


ইতিমধ্যে অবন্তীর বিয়ে হয়ে গেছে। শ্বশুড় বাড়িতে এসে 

চুপচাপ বসে আছে। পাশে তার ননদ তাশু বসে একা একা কথা বলেই যাচ্ছে,৷ ভাবি আমার ভাইয়াকে দেখে রেখো, ও কিন্তু অনেক নরম মনের মানুষ। অবন্তী শুধু মাথা নাড়ছে। মনটা পড়ে রয়েছে বাড়িতে। একমাত্র বাবা ছাড়া এই দুনিয়াতে তার কেউ নেই। মা সেই কবে মারা গেছে মনেই নেই। বাবা তাকে কত ভালোবাসতো। একবার হাত কাটা যাওয়াতে তার বাবা কেঁদেই দিয়েছিলো, অবন্তীর কষ্ট হবে ভেবে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। কত কষ্ট করে বড় করেছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের কোনে জল এসে পরিপুর্ন হয়েছিলো বৃষ্টি হয়ে নামবে বলে। তাশু মুখ টিপে টিপে হাসতে হাসতে চলে গেলো। মেয়েটাও পারে বটে, বেশি কথা বলে কিন্তু মনটা খুব ভালো। এর সাথে অবন্তীর জমবে ভালো। 


হঠাৎ কারো গলার আওয়াজ পেলো।। তাকিয়ে দেখলো তার বর নুর ইসলাম খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে। নুর ইসলাম ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো। অবন্তী এক ভয়ে গুটিশুটি করে বসে আছে। অচেনা ছেলে যাকে সে চিনে না জানে না তার সাথে এক ঘরে দিন রাত কাটাতে হবে। 

তার চরিত্রের সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। নুর ইসলাম কাছে আসতেই অবন্তী সালাম দিলো। নুর ইসলাম সালামের জবাব দিয়ে খাটে বসে বললো........


-গল্পঃ_হুজুরের_বউ__(পর্বঃ_০৯)

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


হঠাৎ কারো গলার আওয়াজ পেলো।। তাকিয়ে দেখলো তার বর নুর ইসলাম খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে। নুর ইসলাম ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো। অবন্তী এক ভয়ে গুটিশুটি করে বসে আছে। অচেনা ছেলে যাকে সে চিনে না জানে না তার সাথে এক ঘরে দিন রাত কাটাতে হবে। 

তার চরিত্রের সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। নুর ইসলাম কাছে আসতেই অবন্তী সালাম দিলো। নুর ইসলাম সালামের জবাব দিয়ে খাটে বসে বললো........


নুর ইসলামঃ অচেনা বলে ভয় পাচ্ছো?? একদম ভয় পাবে না। আজ থেকে তুমি আমার সহধর্মিণী। 

তোমার সাথে ভালো ব্যাবহার করা রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত। উনি তার স্ত্রী গনের সাথে কখনো খারাপ ব্যাবহার করেন নি??


অবন্তী মনে মনে খুব উড়ছিলো, যেমন চেয়েছে, তেমন একজনকে পেয়েছে। অন্যদিকে অবন্তীর শ্বাশুড়ি রোকেয়া বেগম তাশুকে ডেকে বললো..........


রোকেয়া বেগমঃ তাশু মা তোর ভাবিকে ডেকে নিয়ে আয় তো?? 


তাশু রুমের দরজায় টোকা দিতেই অবন্তী বের হয়ে আসলো। অবন্তী মাথা নেড়ে আসছি বললে তাশু চলে গেলো। অবন্তী রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। অবন্তীর শ্বাশুড়ি রোকেয়া বেগম হাসি হাসি মুখে বললো.........


রোকেয়া বেগমঃ এসো বউমা বসো। একা একা কাজ করে বোর হয়ে যাচ্ছিলাম??


অবন্তীঃ আমি আপনাকে হেল্প করি??


রোকেয়া বেগমঃ না একদম না, তুমি নতুন বউ এখন এসব রান্নার কালিতে হাত লাগাতে হবে না। তুমি 

শুধু আমার সাথে বসে বসে গল্প করো??


অবন্তীঃ ছিঃ মা এটা কি করে হয়?? আমি বসে থাকবো আর আপনি রান্না করবেন এটা কিছুতে হতে পারে না। আপনি বসুন আমি রান্না করছি?? 


রোকেয়া বেগমঃ মা যখন বলেছিস তখন মায়ের কথাটা রাখ, আর এখানে বসে থাক। তাছাড়া তেমন কোনো মেহমান আসবে না। আমার ওতো আয়োজন করে বাড়ির বউকে দেখানোর ইচ্ছে নেই, তাই নিকট 

আত্মীয় কয়েক জনকে বলেছি আর এতিম খানায় খাবার দিয়ে আসবো গ্রামের গরীব অসহায়দের মাঝে শীতকালীন কম্বল বিতরন করবো। যাতে তারা দোয়া করে আমার ছেলে আর ছেলের বউয়ের জন্য??


অবন্তীঃ মাশাআল্লাহ এই ঘর যে আমার জন্য দুনিয়ার জান্নাত স্বরুপ?? (মনে মনে)


অন্যদিকে শারমিন সুবর্নাকে বললো..........


শারমিনঃ সোহেলের কথা মনে আছে তোমার??


সুবর্নাঃ হুমম ওইযে তোর পিছনে পিছনে ঘুরতো??


শারমিনঃ হুমমম??


সুবর্নাঃ কি হয়েছে??


শারমিনঃ সোহেল ছেলেটাকে তো আর ভার্সিটিতে দেখছি না??


সুবর্নাঃ হয়তো আসে না কোনো কারনে??


শারমিনঃ হতে পারে?? 


সুবর্নাঃ মন খারাপ ছেলেটার জন্য?? 


শারমিনঃ ছিঃ ছিঃ কি বলো! ওসব কিছু না। ওই এমনি একটু জিজ্ঞেস করছিলাম??


অবন্তী আর নুর ইসলাম এর দাম্পত্য জীবনের দুই বছর কেটে গেছে। তাদের ছোট একটা বাচ্চাও হয়েছে। জাহেদ এবং সুবর্নার ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে। নাম রেখেছে তানহা তাবাসসুম তুসমি। শারমিনের অবসব সময় কাটে তুসমিকে নিয়ে। কাছের বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেছে, সবাই সংসারী হয়েছে। পরে রয়েছে শুধু শারমিন। প্রতিদিন ভার্সিটিতে সে আসে যায়, বন্ধু মহলে সে একা। শারমিনের বান্ধবী হিসেবে পাশে আজ শুধু সাদিকা। সাদিকা জুবায়ের-এর প্রতি অনুভূতি গুলো শারমিনের কাছে শেয়ার করে। শারমিন ওকে একটাই পরামর্শ দেয়, আল্লাহর কাছে চাইতে। সাদিকা জুবায়েরকে ডাকলো। জুবায়ের চুপচাপ মাথা নিচু করে সাদিকার৷ কাছে আসলো। সাদিকা জুবায়েরকে দেখে মিটিমিটি হাসলো। জুবায়ের নিশ্চুপ। সাদিকা বললো....


সাদিকাঃ চুপ করে থেকো না জুবায়ের জবাব দাও। কেনো এমন অহংকার নিয়ে চলো বলতে পারো??


জুবায়েরঃ সাদিকা আপনি কি বলতে চান তা আমি জানি, আমি আমার নফসকে খুব ভয় করি। 

নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে চাই। আপনার সাথে কথা বললে শয়তান আমাকে কুমন্ত্রণা দিবে। তখন আমি জাহান্নামের দিকে ধাবিত হবো। তাছাড়া আমার 

হৃদয়ে তীল তীল করে যে নিখুঁত পবিত্র ভালোবাসা আমি তৈরী করেছি তা পাওয়ার একমাত্র অধিকার আমার বিবাহিত স্ত্রী??


সাদিকাঃ তাহলে আমাকে বিয়ে করবে? আমি তোমাকে বিয়ে করে সেই খাঁটি ভালোবাসার হকদার হতে চাই?? 


জুবায়েরঃ সরি বলতে পারলাম না, আল্লাহ হাফেজ?? 


জুবায়ের চলে গেলো,আর সেই যাওয়ার পথে অশ্রুশিক্ত 

নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাে সাদিকা। শারমিন সাদিকার চোখের পানি দেখে জিজ্ঞেস করলো.........


শারমিনঃ কাঁদছো কেনো??


সাদিকাঃ আমি কি জুবায়েরকে পাবো না? ও কেনো আমাকে ইগনোর করে চলে বলতে পারো??


শারমিনঃ কেঁদো না,, ভালো ছেলেরা এমনই হয়।। আর ফালতু ছেলেরা মেয়েদের পিছনে পিছনে ঘুরে। তুমি তোমার মনের সকল কথা আল্লাহর কাছে সেয়ার করো। আল্লাহকে বলো যেনো তোমার জন্য 

কল্যানকর কাউকে নির্ধারিত করে রাখে। যদি 

জুবায়ের তোমার জন্য কল্যানকর হয় তবে তুমি যেনো তাকে কাছে পাও??


সাদিকাঃ কোনো আমল আছে কি জুবায়েরকে পাওয়ার জন্য?? 


শারমিনঃ কোরআনের আয়াতে রয়েছে,, শোন দ্বীনদ্বার স্বামী হতে এবং তাড়াতাড়ি বিয়ে হতে পরিক্ষিত আমলঃ-প্রতিদিন দুই রাকআত সামলাতুল হাজত পড়বি। প্রতি রাকআতে সুরা ফাতিহার পরে আয়াতুল কুরছি এবং দ্বিতীয় রাকআতে সুরা ফাতিহার সাথে 

সুরা ইখলাস তথা কুলহুয়াল্লাহু পড়বি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট একই সময় হলে ভালো হয়। সালাম ফিরানোর পর পুনঃরায় সিজদায় গিয়ে সুরা ফুরকানের ৭৪ নাম্বার আয়াতঃ-রাব্বানা হাবলানা মিন আঝওয়া আ'য়ইউনিউ ওয়াজ'য়াল না লিল মুত্তাক্বীইনা আমামা"(কোরআন দেখে মুখস্থ করতে হবে নয়তো উচ্চারন ঠিক হবে না।) 

৪০ বার পড়বে। এই আমল কমপক্ষে ৪০ দিন করবে। আন্তরিকতার সাথে করলে ইনশাআল্লাহ এই আমল চলাকালীন বিয়ে হয়ে যাবে। 

২য়ঃ-সুরা মুমতাহিনা পাঠ করবে। সুন্দর ভাবে দুই রাকআত নফল নামায বিয়ের নিয়তে পড়ে ১ হাজার বার ইয়া লাতিফু" পাঠ করবে?? 


সাদিকাঃ এত্তো গুলো ভালোবাসা দিলাম?? 


শারমিন মুচকি হেসে বললো......


শারমিনঃ বিয়ের দাওয়াত দিও??


শারমিনকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।। শারমিনের মুখ দেখেই পাত্রপক্ষ তাকে পছন্দ করে ফেলেছে। কিন্তু আশ্চর্য পাত্রপক্ষ থেকে থেকে শুধু পাত্রের মাত্র মা আর বোন এসেছে। অতিশয় হুজুর পাত্র বলেই দেখতে আসেনি। শারমিন মনে মনে হাসলো। বিয়ের তারিখ ফাইনাল করে ফেললো। আর দু দিন পরেই শারমিনের বিয়ে। আজ সোহেলের জন্য মন কেমন কেমন করছে।।

দু বছর আগে যে ছেলেটা গেলো আর তাকে দেখতে পেলো না শারমিন। নিজের মনকে কন্ট্রোল করে আল্লাহর ফয়সালাকে হাসি মুখে মেনে নিলো শারমিন। নিঃসন্দেহে আল্লাহর পরিকল্পনাই মঙ্গলজনক। 

হয়তো সোহেল মঙ্গলজনক নয় শারমিনের জন্য। তাই সোহেলের ভাগ্যে শারমিন নেই। বিয়ের আগের দিন শারমিন ভার্সিটিতে গেলো,সাদিকাকে ইনবাইট করতে। 

সাদিকা ক্যান্টিনে বসে ছিলো, শারমিন পিছন থেকে সালাম দিলো। সাদিকা ঘুরে তাকালো,সালামের জবাব দিয়ে শারমিনের হাতের দিকে তাকালো আর বললো...


সাদিকাঃ তোমার হাতে ওটা কি শারমিন?? 


শারমিনঃ আমার বিয়ের দাওয়াত নামা??


সাদিকাঃ তোমার বিয়ে? কবে আর কার সাথে?? 


শারমিনঃ আগামীকাল। আর আমি বরের কোনো ডিটিয়েলস জানি না তো। শুধু নাম জানি?? 


সাদিকাঃ কি বলছো এসব? শুধু নাম জানো, কি নাম??


শারমিনঃ সাজ্জাদ রহমান?? 


সাদিকাঃ বাহহ বেশ সুন্দর নাম তো, তা দেখেছো তাকে??


শারমিনঃ না আমিও তাকে দেখিনি সেও আমাকে দেখেনি??


সাদিকাঃ কি বলো এসব? আচ্ছা চলো ওদিকে পুকুর ঘাটে গিয়ে বসি??


শারমিন সাদিকার কথায় শায় দিয়ে দুজনে পুকুর পাড়ে এগোতে লাগলো। শারমিন নিরবতা কাটিয়ে বললো.....


শারমিনঃ শোন আমার হাতে টাইম নেই বেশি, এই নাও বিয়ের কার্ড এবং কালকে তুমি অবশ্যই যাবে কেমন??


সাদিকাঃ চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ??


শারমিনঃ চেষ্টা নয় বলো যাবে? তোমার মাকে আমি বলে দিবো ফোনে, ফোন করো?? 


সাদিকা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো আর বললো.......


সাদিকাঃ মা নেই?? 


শারমিনঃ নেই মানে?? 


সাদিকাঃ আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে??


শারমিনঃ সাদিকা আমি দুঃখিত। না জেনে তোমাকে দুঃখ দিয়ে ফেলেছি??


সাদিকাঃ ঠিক আছে। আর তোমার কোনো দোষ নেই সব নিয়তি। শুনেছি মা মারা যাওয়ার পর বাবা আমাকে এতিম খানায় রেখে চলে গেছিলো। তারপর আর ফিরে আসেনি। সেখানে থেকেই এস এস সি পর্যন্ত পড়েছি। তারপর সেখানের বড় আপা আমাকে কলেজে এডমিট করিয়ে দিয়ে একটা পার্ট টাইম জব খুঁজে দিয়েছেন??


শারমিনঃ কষ্ট পেওনা বোন!! আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, নিশ্চয়ই কষ্টের মাঝে স্বস্তি রয়েছে।(সুরা ইনশিরাহঃ-৬) 

আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দিবেন।(সুরা তালাকঃ-৬৫)

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মুসলিমদের যে কোনো ক্লান্তি, অসুখ, চিন্তা, শোক দুঃখ এমনকি তার পায়ে কাটাও লাগে আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে তার গুনাহ সমুহ মাফ করে দেয়।(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমঃ-২৫৭৩)

অতএব ধৈর্য ধরো আপু। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ-হে মুমিনগণ তোমার ধৈর্য এবং আল্লাহর কাছে নামাযের মাধ্যমে সাহায্য পার্থনা করো।(সুরা বাকারাঃ-১৫৩)আমি(আল্লাহ) তোমাদিগকে কোনো কিছুর ভয়, ক্ষুধা, এবং ধন সম্পদ , (তোমাদের) 

জীবনে ফলমুল ও ফসলাদির ক্ষয় ক্ষতি দিয়ে অবশ্যই পরিক্ষা করি। আর আপনি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দিন? 

(ধৈর্যশীলগন) তারা, যাদের ওপর যখনই কোনো বিপদ আপাতিত হয় তখন তারা বলে "নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং অবশ্যই তার নিকটে ফিরে যাবো। (সুরা বাকারাঃ-১৫৬)  

এরাই হচ্ছে তারা যাদের উপর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দয়া ও করুণা অবতীর্ণ হয়। আর এরাই সৎপথ প্রাপ্ত।(সুরা বাকারাঃ-১৫৭)??


সাদিকা সব শুনে বললো.......


সাদিকাঃ ধন্যবাদ তোমাকে এতো সুন্দর বাণী শুনিয়ে অনুপ্রানিত করার জন্য?? 


শারমিনঃ আচ্ছা ঠিক আছে, এবার এই নাও কার্ড?? 


কার্ড দিতে গিয়ে থেমে গেলো। সাদিকার হাতটা ধরে বললো.........


শারমিনঃ কার্ড নয় তুমি আজকে এখনই যাবে 

আমার সাথে?? 


সাদিকাঃ এখুনি??


শারমিনঃ হুমম এখুনি চলো??


অন্যদিকে জাহেদ সুবর্নাকে বললো........


জাহেদঃ সুবর্না আমি এখনই কি করে যাবো??


সুবর্নাঃ দেখো কাল শারমিনের বিয়ে, যত বাজার করার বাকি আছে এখুনি করে আনবে যাও??


জাহেদঃ নামাযটা পড়ে যাই??


সুবর্নাঃ হ্যা হ্যা তাড়াতাড়ি পড়ে নাও যাও??


জাহেদ নামায পড়ে তার মায়ের রুমে গেলো। সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে বললো........


জাহেদঃ মা কি কি আনতে হবে?? 


জাকিয়া বেগমঃ কেনো বউমা বলেনি??


জাহেদঃ বলেছে তবুও তুমি বলো প্লিজ??


জাকিয়া বেগমঃ পাগল ছেলের কান্ড দেখো??


জাহেদঃ বলো না মা দেরি হয়ে যাচ্ছে তো??


জাকিয়া বেগমঃ এইতো মশলা, চাল, গোসত ইত্যাদি 

আর আমরা যে হাতিয়া গুলো দিবো সেগুলো নিয়ে আসবি??


জাহেদঃ আচ্ছা আম্মু গেলাম তাহলে?? 


শারমিন সাদিকাকে নিয়ে বাড়িতে আসলো। সাদিকা শারমিনের মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নিলে শারমিনের মা তাড়াতাড়ি পা সরিয়ে নেয়। পা সরিয়ে নেওয়াতে সাদিকা খানিকটা অবাক হয়ে গেলো। শারমিনের মা দুহাত দিয়ে সাদিকাকে উঠিয়ে বললো...


জাকিয়া বেগমঃ ছিঃ ছিঃ মা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নেই। এটা বিধর্মীদের রিতী। এর থেকে উত্তম হবে তুমি মুখে সালাম দিবে কেমন??


সাদিকাঃ আচ্ছা মা,, ইশশ সরি আন্টি। আপনি মা বলছিলেন তো তাই মুখ ফসকে মা বলে ফেলেছি?


জাকিয়া বেগমঃ মারবো একটা, সরি কি হুমম? মা বলেই ডাকবে??


সাদিকার চোখের কোনে জল জমা হয়ে গেছে। একবার একজন বড় ম্যামকে মা বলাতে উনি রেগে গিয়ে সাদিকাকে থাপ্পড় মেরেছিলো। এরপর থেকে সাদিকা কাউকে মা বলতে ভয় পায়। ওই যে বলে না, চুনে মুখ পোড়ালে দই খেতেও ভয় লাগে। শারমিনের কথায় ঘোর কাটলো। শারমিন সুবর্নাকে বলে উঠলো...........


শারমিনঃ তুসমি কোথায় ভাবি??


সুবর্নাঃ ও তো ঘুমিয়েছে। তুই সাদিকাকে নিয়ে রুমে যা??


শারমিন সাদিকাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো।।সাদিকাকে বসতে বলে শারমিন ড্রেস চেঞ্জ করতে ওয়াশ রুমে গেলো। সাদিকা শারমিনের রুমটা দেখছে তাকিয়ে তাকিয়ে, একটা খাট তার কাছে জানালার পাশে একটা

টেবিল আর চেয়ার, তাকে বই গুলো খুব সুন্দর করে সাজানো, আর সাইডে একটা জগ আর গ্লাস। একটা আলমারি, একটা ড্রেসিং টেবিল, আর একটা বুক সেলফ। বুক সেলফে অনেক অনেক বই রাখা। তার মধ্যে ইসলামিক বই বেশি। খুব পরিস্কার আর পরিপার্টি করে সাজানো।


রাতের খাবার খেয়ে ওরা রুমে আসলো। ছোট ছোট পা পেলে তখনই ঘরে আসলো দুষ্টু মিষ্টি তুসমি। তুসমি শারমিনকে বললো..........


তুসমিঃ ফুপি এটা কি তোমার ফ্রেন্ড??


শারমিন তুসমিকে কোলে তুলে নিয়ে বললো........


শারমিনঃ হ্যা মা এটা তোমার আরেকটা ফুপি??


তুসমিঃ আমি ফুপির কোলে যাবো??


সাদিকা মুচকি হেসে কোলে তুলে নিয়ে গাল টিপে বললো.......


সাদিকাঃ ওলে মামুনিটা তুমি কত কিউট??


তুসমিঃ ফুপি তুমিও খুব কিউট আর আব্বুও খুব কিউট??


সাদিকাঃ হাহাহা তাই??


তুসমিঃ হ্যা, আব্বু আমাকে রাজকুমারী বলে ডাকে??


সাদিকাঃ হুমম বাবুটা তুমি তো সত্যি রাজকুমারী?? 


তুসমিঃ তুমি খুব ভালো, আব্বু চকলেট আনলে তোমাকে দিবো??


শারমিন ও সাদিকা দুজনে হেসে দিলো।সুবর্না তুসমিকে ডাকলো। তুসমি তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে বললো.......


তুসমিঃ কি হয়েছে আম্মু??


সুবর্নাঃ তোমার বাবা তোমাকে ডাকছে??


তুসমি দৌড়ে জাহেদের কাছে গিয়ে বললো.......


তুসমিঃ আব্বু আমাকে ডেকেছো??


জাহেদ তুসমিকে কোলে নিয়ে বললো......


জাহেদঃ এইযে মামুনি কোথায় ছিলে তুমি??


তুসমিঃ আব্বু ফুপির একটা ফ্রেন্ড এসেছে খুব কিউট, তার কাছে ছিলাম??


জাহেদঃ ওরে বাবা আমার আম্মুটার কত বুদ্ধি?? 


তুসমিঃ আব্বু চকলেট এনেছো??


জাহেদঃ উঁহু মনে ছিলো না যে??


তুসমিঃ আমি কালকেই ফুপির সাথে চলে যাবো?? 


জাহেদ তুসমিকে বুকে চেপে ধরে বললো.........


জাহেদঃ না মা, এভাবো বলো না, চকলেট এনেছি তো??


বাড়ির পরিবেশ থমথমে। রাত পার হলে শারমিন নামের 

অতুলনীয় রত্না বাড়ি খালি করে পরের বাড়ি চলে যাবে।

সাদিকা শারমিনের মনটা ভালো রাখতে এটা সেটা গল্প করে ব্যাস্ত রাখছে। ভেতরে ভেতরে শারমিন কষ্ট পেলেও বাহিরে প্রকাশ করছে না। শারমিন ওর বাবাকে খুব মিচ করছে, যদি বিয়েতে আসতো। আবার ভাবে ফোনে তো কথা হয়,তাছাড়া এত দূরে আসবে কি করে। তবুও তার মনটা কাঁদে। 


ফজরের আজান কানে যেতেই সাদিকা জেগে উঠলো।

উঠে দেখলো শারমিন এখনো উঠেনি, কাঁদতে কাঁদতে অনেক রাতে ঘুমিয়েছে, তাই এখনো সজাগ পায়নি। সাদিকা ডাকবে কি ডাকবে না ভাবতে ভাবতে দুই বার হাল্কা করে ডাক দিয়েছে, শারমিন উঠলো না দেখে

আর ডাক দিলো না। সাদিকা ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অজু করে নিলো। রুমে এসে শারমিনকে হাল্কা ধাক্কা দিলো, শারমিন পাশে ফিরে আবার ঘুমিয়ে গেলো। সাদিকা আর না ডেকে নামায পড়ে নিলো। জায়নামাজ ভাজ করছে তখন তার ফোন বেজে উঠলো।। ফোনের স্কিনে আননোন নাম্বার ভেসে উঠেছে। কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠে কেউ একজন সালাম দিলো। সালামের জবাব দিতেই ওপাশ থেকে যা শুনলো তাতে সাদিকা খুশিতে কান্না করে দিলো। ফোন কেটে তাৎক্ষনাৎ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো। শারমিনের মায়ের রুম 

থেকে কোরআন তেলওয়াতের মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসছিলো। সাদিকা পা টিপে টিপে ওদিকে রওয়ানা দিলো। সুবর্না এবং তার শ্বাশুড়ি করআন তেলওয়াত করছে। কি সুন্দর একটা সংসার, যেনো দুনিয়ার বুকে একটা জান্নাতের টুকরো।। শারমিনের কান্নার আওয়াজে সবাই ওর কাছে দৌড়ে গেলো,, সেখানে গিয়ে সাদিকা বললো............ 


সাদিকাঃ কখন উঠেছো??


সুবর্নাঃ কাঁদছিস কেনো??


শারমিনঃ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো আটটা বাজে। আর তোমরা আমাকে ডাক দাওনি কেনো??


সাদিকাঃ আসলে তুমি অনেক রাতে ঘুমিয়েছো তাই আমার ডাকে সাড়া পাওনি??


শারমিনঃ নামাযটা পড়তে পারলাম না, শয়তান আজ আমাকে পরাজিত করে দিয়েছে। আল্লাহর কাছে আমাকে গুনাহগার করে দিলো??


সুবর্নাঃ একদম না এটাতো অনিচ্ছাকৃত। তুই কাযা করে আদায় করে নে এখুনি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেঃ-আর আমাকে স্বরন করার উদ্দেশ্যে তোমরা নামায কায়েম করো। রাসুল (সাঃ) বলেছেঃ-যে ব্যাক্তি নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, শিথিল্য তো জাগ্রত অবস্থায় হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো নামায পড়তে ভুলে অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার উচিৎ স্বরন হওয়া মাত্র পড়ে নেওয়া।(মুসলিম, মিশকাত শরীফ)বিনা কারনে নামায ছেড়ে দিলে অথবা সুযোগ ও সময় না থাকা স্বত্বেও না পড়ে অন্য ওয়াক্ত এসে গেলে পাপ তো হবেই, পরন্তু সেই নামাযের কাযা নেই, পড়লে গ্রহন যোগ্য না। বরং যে ব্যাক্তি এন করে ফেলেছে তার উচিৎ বিশুদ্ধ রুমে তওবা করা এবং পরে যথা সময়ে নামায পড়ায় যত্নবান হওয়া। সাথে নফল নামায বেশি পড়া??


শারমিন আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি নামায পড়ে নিলো। সুবর্না সাদিকাকে বললো.......


সুবর্নাঃ সাদিকা তুমি শারমিনকে তাড়াতাড়ি সাজাও। বর যাত্রী রওয়ানা দিয়েছে। আমি মায়ের কাছে যাই দেখি উনি কি করছে??


সাদিকাঃ হ্যা তুমি যাও??


সাদিকা শারমিনকে শাড়ি পড়িয়ে চুলগুলি বেধে বিয়ের অন্যান্য প্রসাধনী দিয়ে বউয়ের মতো করে সাজিয়ে রাখলো। হঠাৎ করে বিদ্যুত চলে গেলো। 

সবাই অন্ধকারে টর্চ খুঁজছে। সাদিকা শারমিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো........


সাদিকাঃ এখন তো তোকে আরো অপরুপা লাগতেছে। ইশশ আমি যদি ছেলে হতাম??(ঠাট্টা করে)


লজ্জায় শারমিনের চোখ-মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। অন্ধকারে টের পেলো সাদিকা। বিদ্যুৎ চলে এলো আর পুরো ঘর আলোয় ঝলমল করে উঠলো। বর যাত্রী 

চলে এসেছে৷ শারমিন তাড়াতাড়ি করে বোরকা আর হিজাব পড়ে নিলো। সাদিকা তাকে বডি স্প্রে দিতে গেলে শারমিন বাঁধা দিলো আর বলতে লাগলো.......... 


গল্পঃ_হুজুরের_বউ__(পর্বঃ_১০)_এবং_শেষ_পর্ব 

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।


লজ্জায় শারমিনের চোখ-মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। অন্ধকারে টের পেলো সাদিকা। বিদ্যুৎ চলে এলো আর পুরো ঘর আলোয় ঝলমল করে উঠলো। বর যাত্রী 

চলে এসেছে৷ শারমিন তাড়াতাড়ি করে বোরকা আর হিজাব পড়ে নিলো। সাদিকা তাকে বডি স্প্রে দিতে গেলে শারমিন বাঁধা দিলো আর বলতে লাগলো.......... 


শারমিনঃ বডি স্প্রে দিলে ছেলেরা গন্ধ তার পাবে আর এতে করে আমার পাপ হবে??


বর পক্ষের একটা মহিলা আসলো শারমিনকে দেখতে।

শারমিনকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। তারপর বলতে শুরু করলো............ 


মহিলাঃ হ্যা গো তুমি আজকের দিনেও বোরকা পড়ে ভুত সেজে রয়েছো??


শারমিন ছোট্ট করে জবাব দিলো........


শারমিনঃ জ্বি??


মহিলাঃ আজকে না করলেই নয়??


সুবর্না পাশেই ছিলো। মহিলার কথা শুনে হেসে জবাব দিলো......


সুবর্নাঃ আপনি পাত্রের কি হন সেটা তো জানি না, কি বলে যে ডাকবো। আর আজকের দিনেই তো পড়তে হবে। আর কত শত গেস্ট আসবে তাদের সামনে তো পাত্রীকে পর্দা ছাড়া রাখতে পারি না। অনেকে ছবি তুলবে, হাসি তামাশা করবে,রুপের বর্ণনা দিবে এতে করে স্বামীর হক নষ্ট হবে??


মহিলাঃ আমি পাত্রের বড় ভাইয়ের বউ।। আপনি

যেটা বলেছেন সেটাতে যুক্তি আছে কিন্তু মানা 

হয়ে উঠেনি??


সুবর্নাঃ চেষ্টা করেন হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ?? 


সারাদিনের ব্যাস্ততার কারনে সাদিকার খুশির সংবাদ শারমিনকে জানাতে পারেনি। এখন তো আরো পারবে না। খাওয়া দাওয়া শেষ এখন বিয়ে পড়াবে। সাদিকাকে এবার বিদায় নিতে হবে। সুবর্নাকে আর শারমিন ও তার মাকে বলে সাদিকা চলে গেলো। বিয়ে পড়ানো শেষে শারমিনের বিদায়ের সময় ওর মায়ের থেকেও বেশি কেঁদেছে জাহেদ আর সুবর্না৷ তাদের কাছে শারমিন ছিলো অতুলনীয়। শারমিন চলে গেলে বাড়িটা শুন্য হয়ে যাবে। সুবর্নাকে আর কেউ কারনে অকারনে বিরক্ত করবে না। জাহেদের সাথেও আর খুনশুটি করবে না। পিচ্ছি তুসমিটাও কেঁদেছে। কিন্তু জগতের এই কঠিন নিয়মকে কেউ উপেক্ষা করতে পারবে না। মেয়ে হয়ে জন্ম নিলে শত কষ্ট সহ্য করে হলেও পিতৃতালয় ছাড়তে হবে। 


অবশেষে শারমিনকে বিদায় দিলো,, গাড়ি ছেড়ে দিলো।

বাড়ির সবাই গাড়ি চক্ষুর আড়াল না হওয়া পর্যন্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো। গাড়িতে বসে শারমিন কেঁদেই যাচ্ছে। শারমিনের বর সাজ্জাদ রহমান কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। কাঁদুক কাঁদলে হাল্কা লাগবে। কাঁদতে কাঁদতে শারমিন ঘুমিয়ে পড়লো সাজ্জাদের কাঁধে মাথা রেখে।। সাজ্জাদ আরেকটু ভালো ভাবে শারমিনের মাথাটা তার কাঁধে রেখে দিলো।


কিছুক্ষণ পরে বাড়িতে চলে আসলো তারা। গাড়ি থেকে নামতেই শারমিনের ননদ আর শ্বাশুড়ি শারমিনকে ঘরে নিয়ে গেলো। ঘরটা সুন্দর করে সাজানো। এটাই হলো কাঙ্ক্ষিত বাসর ঘর। শারমিন চুপচাপ বসে আছে। পাশের ঘর থেকে পরিচিত একজনের কন্ঠ ভেসে আসলো।কিন্তু কে কথা বলছে সেটা বুঝতে পারছে না। 

হঠাৎ করে রুমে একটা বাচ্চা ঢুকলো আর বললো......


মেয়েটাঃ তুমি আমার কাকীমা তাইনা??


শারমিন বেশ অবাক হলো,আবার কিছু জিজ্ঞেস করতে 

যাবে তখন একজন মহিলা ঘরে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে শারমিনের নিকাপ উঠিয়ে বললো""তুই আমার চাচাতো দেবরের বউ। এরপর শারমিন অবন্তীকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনেই কাঁন্না করছে.........


শারমিনঃ তুই তো বলেছিস তোর একটা মাত্র ভাসুর আছে??


অবন্তীঃ হ্যা, বাট তুই আমার চাচাতো দেবরের বউ। চাচাতো হলেও আমরা একই বাড়িতে থাকি??


শারমিনঃ পিচ্চিটা কি তোর মেয়ে?? 


অবন্তীঃ হুম, আর আমি চাই আমার পিচ্চি শারমিনেরও যেনো একটা অতুলনীয় রত্ন হয়??


শারমিন মৃদু হেসে দিলো।। অবন্তী আর কথা না বাড়িয়ে শারমিনকে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেলো। এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে। শারমিনের শ্বাশুড়ি ভাত এনে নিজের হাতে শারমিনকে খাইয়ে দিলো। 


শারমিন সেই কখন থেকে একা বসে কিন্তু বরের কোনো খোঁজ নেই। শারমিন মনে মনে ভেবে রেখেছে মোহরানার এক অংশও মাফ করবে না।। পুরো মহরানা আদায় করবে। আচ্ছা অচেনা বরটা কেমন হবে মনের দিক থেকে, বা কেমন দেখতে কে জানে। 


কিছুক্ষণ পরেই সাজ্জাদ ঘরে ঢুকলো।। শারমিন কারো উপস্থিতি টের পেয়ে বুঝতে পারলো কে। সাজ্জাদ সালাম দিয়ে খাটের উপর বসে শারমিনের হাতে মোহরানার টাকা গুলো দিলো। কারন সাজ্জাদ ভালো করেই জানে মোহরানা হলো স্ত্রীর হক। শারমিন মোহরানার টাকা গুলো হাতে নিলো। এরপর সাজ্জাদ বললো...........


সাজ্জাদঃ ইসলামে নারীদের মর্যাদা সর্বচ্চ করা হয়েছে। আর তাই যৌতুক নেওয়াকে হারাম করা হয়েছে আর মোহরানাকে হালাল করে দিয়েছে। মোহরানা কনেদের ক্রয়ের টাকা নয়, এটা স্বামীর পক্ষ থেকে ফরজ 

উপহার যা স্ত্রীর অধিকার?? যৌতুক নেওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ-"তোমরা নিজেদের মধ্যে একজন অন্যজনের ধন সম্পদ অন্যায় ভাবে 

গ্রাস করো না।মানুষের কিছু অংশ জেনে শুনে অন্যায় ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের নিকট পেশ করো না??(সুরা বাকারা-১৮৮)

যৌতুক হলো অন্যায় ভাবে অন্যের সম্পদের উপর হস্তক্ষেপ করা, কোনো রকম চুক্তিবদ্ধ না হয়ে অথবা চাপ প্রয়োগ ব্যাতিত কনে পক্ষ যদি সম্পুর্ণ নিজের ইচ্ছায় পাত্র পক্ষকে কিছু দেয় তবে তা উপহার 

হিসেবে পন্য হবে।। 

আর যদি কেউ অজ্ঞাতবশত যৌতুক নিয়ে থাকে তাহলে জানার সাথে সাথে শ্বশুড়কে তা ফিরিয়ে দিয়ে তওবা করতে হবে??


শারমিনের মনে সাজ্জাদ রহমানের জন্য একটু একটু করে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জেগে উঠতে লাগলো। সাজ্জাদ রহমান আবার বলতে শুরু করলো.......... 


সাজ্জাদঃ মোহরানা দেওয়ার সস্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-"তোমরা নারীগণকে মোহরানা বা একটা নির্দিষ্ট উপহার দিবে। যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানার কিছু অংশ ছাড়ে তবে তা সচ্ছেন্দ মনে ভোগ করবে??(সুরা নিসা-০৪) 


অর্থাৎ স্ত্রী যদি নিজের ইচ্ছায় মন থেকে কিছু মোহরানা মাফ করে দেয় তবে তা স্বামী গ্রহন করতে পারবে। 

কিন্তু স্ত্রীকে জোর করে মোহরানা মাফ করে 

নেওয়ার বিধান নেই। স্বামীকে মন থেকে মোহরানা আদায়ের নিয়ত করে খুশি মনে মোহরানা দিতে হবে।। নয়তো মোহরানা আদায় হবে না। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ-"যে কোনো ব্যাক্তি কোনো মহিলাকে কম কিংবা বেশি মোহরের বিনিময়ে বিয়ে করেছে, মনে 

মনে তার হক আদায়ের নিয়ত রাখেনি, তাকে ধোঁকা দিয়েছে, অতঃপর তার হক আদায় না করে মারা গিয়েছে, সে ব্যাক্তি কেয়ামতের দিন ব্যাবিচারী বা যেনাকারী হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে??(ত্বাবারনী (সাঃ) তারগীবঃ-১৮০৭) অতএব আমি তোমাকে মোহরানার নিয়ত করেই মোহরানা দিলাম। তাছাড়া মোহরানা হিসেবে জমিজমা, গরু, ছাগল, ভেড়া ব্যাবহার যোগ্য জিনিসপত্র দেওয়া যায়। আর স্ত্রীদের একজনকে দিয়েছে স্তুপিকৃত সম্পদ??(সুরা নিসা।)


এবার শারমিন বললো.......


শারমিনঃ আমি আপনার মোহরের পরিমানের অর্ধেক অংশ কমিয়ে দিলাম। এবং এর অর্ধেক মোহর 

হিসেবে নিলাম??


সাজ্জাদঃ আমি তোমাকে খুশি মনে মোহর দিয়েছি। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-"আর তোমরা নারীদের মোহরানা স্ততঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে??(সুরা নিসাঃ-০৪) আমি কি এবার আমার স্ত্রীর মুখ দর্শন 

করতে পারি??


শারমিন হ্যা সুচক মাথা নাড়লো।সাজ্জাদ রহমান মুখের নিকাব সরিয়ে চমকে উঠলো। কথাটা শুনে শারমিনের খটকা লাগলো।। মাথাটা তুলে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাে, সোহেল?? সাজ্জাদ রহমান হলো সোহেলের ছদ্মনাম। যেটা কেউ জানতো না। তাই শারমিনও জানতে পারেনি সোহেল তার বর হবে। বিঃদ্রঃ অনেকে বলবে বাসর ঘরেও কি বোরকা পড়তে হবে? তাদের প্রশ্নের জবাব হলো, সোহেল চেয়েছিলো তার পছন্দের কাঙ্ক্ষিত মানুষটির নিকাব নিজ হাতে তুলে তার মুখ দর্শন করবে। তারপর শারমিন বললো....


শারমিনঃ আপনি??


সোহেলঃ হুমমম, যে তোমাকে একদিন চেয়েছিলো কিন্তু তুমি রাজি হওনি। বরং আল্লাহর কাছে চাইতে বলেছো। 

আর আমি আল্লাহর কাছেই চেয়েছি। আমার সব সখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে আল্লাহকে ভালোবেসেছি আর তার বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে শারমিন নামক জান্নাত উপহার দিয়েছে। আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। চলো দু রাকআত শুকরানা নামায পড়ে আমাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করি??


শারমিন হ্যা সুচক মাথা নাড়ালো। তারপর বোরকা খুলে যখনই ওয়াশ রুমে যাবে ঠিক তখনই সোহেল পিছন থেকে শারিমনের হাত ধরে বললো.........


সোহেলঃ আমি কি তোমার যোগ্য হতে পেরেছি শারমিন?? 


শারমিন সোহেলের মুখ চেপে ধরে বললো.......


শারমিনঃ সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমরা একে অপরের জন্য যোগ্য ছিলাম বলেই আজ আমরা স্বামী-স্ত্রী?? 


সোহেলঃ এজন্যই হয়তো কেউ একজন বলেছিলো, ''তুমি যদি হও হযরত আলী (রাঃ) এর মতো ঈমানজাপরনী, তবেই তুমি পাবে ফাতেমা (রাঃ) 

এর মতো জীবন সঙ্গীনি??


সকালে শারমিনের মিষ্টি মধুর কোরআন তেলওয়াতের শব্দে ঘুম ভাঙলো সোহেলের। সোহেল কোরআনের প্রতিটি আয়াত মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাে, এতো সুমিষ্ট কন্ঠের কোরআন তেলওয়াত আগে কখনো শুনেনি। চুপচাপ শারমিনের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। শারমিন কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তেলওয়াত করা বন্ধ করলো.......


সোহেলঃ এতো মধুর তেলওয়াত বন্ধ করলে কেনো?? 


শারমিন তাকিয়ে দেখলো সোহেল দাঁড়িয়ে আছে। 


শারমিনঃ আপনি উঠে গেছেন?? আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই ডাকিনি, চলুন না তাহাজ্জুদ পড়ে নেই??


সোহেল শারমিনের দুটি হাতের আঙুল ধরে শারমিনের চোখের দিকে তাকালো। শারমিন লজ্জায় চোখ নিচে নামিয়ে ফেললো। 


সোহেলঃ লাল শাড়ি আর তোয়ালে পেছানো ভেজা চুল সত্যি রূপবতী বউ বউ লাগছে। এমনিতেই তুমি অনেক সুন্দর মাশাআল্লাহ। কিন্তু এখন আরো বেশি সুন্দর লাগছে??


শারমিন লজ্জায় তাকাতে পারছিলো না। তাই প্রসঙ্গ এড়াতে বললো.......


শারমিনঃ যান অজু করে আসেন নামায পড়বো। টাইম চলে যাচ্ছে?? 


সোহেল শারমিনের গালে হালকা লিপ টাচ করে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। অজু করে এসে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করলো। আল্লাহকে মনে মনে অনেক শুকরিয়া জানালো। সোহেল যদি আজকে নিজেকে না পরিবর্তন করতো তাহলে শারমিনের মতো পুন্যবতী স্ত্রীকে কখনোই পেতো না। আল্লাহ তায়ালা কখনো অন্যায় বিচার করেন না। তিনি বলে দিয়েছেন, তুমি যেমন তোমার লাইফ পার্টনারও তেমন হবে। শারমিনকে পেয়ে সোহেল সত্যিই ধন্য। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ-"গোটা দুনিয়া সম্পদে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হলো পুন্যবতী স্ত্রী?? 


সোহেল ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে চলে গেলো। ভোরের আলো ফুঁটতেই শারমিন চা হাতে করে তার শ্বাশুড়ির রুমে ঢুকলো। তার শ্বশুর মসজিদে গেছে তাই 

শ্বাশুড়িকে এক কাপ চা করে দিলো। শারমিনকে দেখে তার শ্বাশুড়ি বললো........


শ্বাশুড়িঃ একি নতুন বউ এতো সকালে চা করতে গেলে কেনো? মর্জিনাকে বলতে??


শারমিনঃ মেয়ের হাতের চা মায়ের কাছে সব সময় স্পেশাল, তাই আমি আপনাকে চা করে দিলাম??


শ্বাশুড়ি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো........


শ্বাশুড়িঃ মাশাআল্লাহ এতো সুন্দর চা করতে পারো তুমি??


শারমিন মুচকি হাসি দিলো।অবন্তী রুমে প্রবেশ করলো।

শারমিনের শ্বাশুড়িকে বলে শারমিনকে তার রুমে নিয়ে গেলো। তারপর বললো........


অবন্তীঃ জানিস শারমিন তোকে দেখে আমার খুব হিংসে হয়?? 


শারমিনঃ কেনো??


অবন্তীঃ দেখ তুই কত সুন্দরী। আগে তো ভাবতাম তুই কালো ভুত বাট যখন তোকে দেখলাম তখন তো পুরাে টাসকি খাইলাম??


শারমিন মুচকি হেসে বললো........ 


শারমিনঃ তুইও তো কম না। তুই যে উনার (সোহেল) ভাইয়ার বউ বলিস নি তো একবারো??


অবন্তীঃ আমি কি জানতাম নাকি সোহেল আমার চাচাতো দেবর। তোকে খুব মিস করতাম??


শারমিনঃ আমিও খুব মিস করতাম??


ওদের কথার মাঝে শারমিনের শ্বাশুড়ি শারমিনকে ডাক দিলো। রাতে ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলো শারমিন ও তার শ্বাশুড়ি। সোহেল পাশ দিয়ে মোবাইল টিপতে টিপতে রুমে যাচ্ছিলো।।ঠিক তখনই সোহেলের মা ডাক দিয়ে বললো..........


মাঃ বাবা সাজ্জাদ খাবার খেতে আয়??(সোহেলের ছদ্মনাম। বাড়িতে সবাই সাজ্জাদ বলে ডাকে)


সোহেল দেখলো খাবার টেবিলে ফ্যামিলির সবাই বসে আছে। আমার খাবার রুমে পাঠিয়ে দাও কথাটা বলে সোহেল রুমে চলে গেলো। এরপর শারমিনের শ্বাশুড়ি শারমিনকে বললো........... 


শ্বাশুড়িঃ বউ মা সোহেলের জন্য আর তোমার জন্য খাবার ঘরে নিয়ে যাও। তোমরা এক সাথে খাবে কেমন??


শারমিন সম্মতি জানিয়ে, হাতের কাজ সেরে সোহেলের জন্য খাবার নিয়ে রুমে চলে গেলো। শারমিনকে দেখে সোহেল বলে উঠলো........ 


সোহেলঃ তাড়তাড়ি খেতে দাও, খুব ক্ষুধা লেগেছে, সেই সকালে খেয়েছি??


শারমিনঃ ওমা আপনিই তো বললেন পরে খাবেন। আর এখন ক্ষুধা লেগে গেলো??


সোহেলঃ তোমার হাতে খাওয়ার জন্য পরে খাবো বলেছিলাম??


শারমিনঃ কিহহ?? ওকে আমি আপনাকে খাইয়ে দিবো??(দুষ্টুমি করে)


সোহেলঃ তাহলে আর কি! সোহেল তোর বউ আজ তোকে খেতে দিবে না, তুই না খেয়েই থাক??


শারমিন সোহেলের কথা শুনে মুখ টিপে টিপে হাসছে। সোহেল শুয়ে পড়বে ঠিক তখনই শারমিন বললো.....


শারমিনঃ নিচে আসুন খাইয়ে দিবো??


সোহেল খাট থেকে নেমে ফ্লোরে মাদুরের উপর বসলো।

শারমিন দস্তরখানা বিছিয়ে দিলো। দস্তরখানা বিছানো সুন্নত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন দস্তরখানা বিছিয়ে 

খাবার খাওয়া উত্তম।(সহীহ বুখারীঃ-৫৩৮৬) প্রথমে নিয়ামতের দিকে মুখাপেক্ষি হয়ে বসা তারপর দস্তরখানা বিছানো।(সহীহ বুখারীঃ-৫৩৮৫, ৫৩৯৯) 

শারমিন বিসমিল্লাহ বলে সোহেলের দিকে খাবারেন লোকমা এগিয়ে দিলো। সোহেল বিসমিল্লাহ বলে খেতে আরম্ভ করলো।সোহেল এবার শারমিনের দিকে খাবারের লোকমা এগিয়ে দিলে শারমিন বললো.........


শারমিনঃ খাবো না?? 


সোহেলঃ কেনো??


শারমিনঃ বিসমিল্লাহ বলেছেন?? 


সোহেলঃ ওহহ সরি?? বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, নাও এবার খাও?? 


শারমিন খেতে শুরু করলো।। শারমিন গোসতের হাড়ের মধ্যে কামড় দিয়ে পাত্রের কর্ণারে রাখা মাত্রই সোহেল সেটা হাতে নিয়ে সেইখান থেকে কামড় দিয়ে খেতে লাগলো। এই দেখে শারমিন মুচকি হাঁসলো। আবার শারমিন গ্লাসের যেই স্থান থেকে পানি পান করলো, সোহেলও তার অনুরূপ করলো। রাসুল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) এর সাথে এমন করতেন। রাসুল (সাঃ) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রোমান্টিক স্বামী।। তিনি স্ত্রীদের ভালোবাসার কথা অকপটে জানাতেন। তাদের সাথে ঘুরতে বের হতেন। হালকা গল্প করতেন। আয়েশা (রাঃ) এর সাথে দৌঁড় প্রতিযোগিতা করতেন। রাসুল (সাঃ) হেরে গেলে পরের বার আয়েশা (রাঃ) কে হারিয়ে তার প্রতিশোধ নিতেন। একবার হাবশিরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলছিলো। রাসুল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। তারপর রাসুল (সাঃ) এর কাঁধ ও কানের মাঝখান দিয়ে খেলা দেখতে থাকেন৷ আয়েশা (রাঃ) যে খেলা উপভোগ করেছিলেন তা কিন্তু না। তিনি দেখতে চাইলেন যে রাসুল (সাঃ) কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন।। অবশেষে আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) উঠে চলে গেলেন।


আরেকবার আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে এক বিশাল গল্প বলা আরম্ভ করলেন। রাসুল (সাঃ) ধৈর্য ধরে পুরো গল্প শুনলেন। শুধু তাই নয়, গল্পের শেষে সুন্দর মন্তব্য করলেন। আবার মাঝে মাঝে আয়েশা রাঃ এর ব্যাবহৃত 

মেসওয়াক দিয়ে মেসওয়াক করতেন। মৃত্যুর ঠিক কিছু মুহূর্ত আগে আয়েশা (রাঃ) এর ব্যাবহৃত মেসওয়াক তিনি ব্যাবহার করেছিলেন।। দুজনের লালা এক হয়ে গেছিলো। আয়েশা (রাঃ) এর কোলে মাথা রেখেই তিনি আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করেন। স্ত্রীদের আদর করে ছোট ছোট নামে ডাকতেন। কখনো কখনো ভালোবেসে নিজেই আলাদা একটা নাম দিয়ে দিতেন৷ যেমন আয়েশা (রাঃ) কে আদর করে "হুমায়রা" (লাল সুন্দরী) বলে ডাকতেন। 


আয়েশা (রাঃ)কখনো মা হতে পারেননি। তাই যখন তার বোনের একটা ছেলে হয় তখন রাসুল (সাঃ) বলেন, ছেলেটির নাম আব্দুল্লাহ এবং তুমি হবে উম্মে আব্দুল্লাহ, অর্থাৎ আব্দুল্লাহর মা। এরপর থেকে তিনি আয়েশা (রাঃ) কে উম্মে আব্দুল্লাহ বলেই ডাকতেন। অনেকে তাদের স্ত্রীকে ময়না পাখি, টিয়া পাখি,জান বলে ডাকে তারা নিজেরাও জানে না যে তারা অজান্তে রাসুল (সাঃ) এর একটি সুন্নত অনুসরণ করছে।। রাসুল (সাঃ) স্ত্রীদের বিপদে পাশে দাঁড়াতেন, এবং তাদেরকে সাহায্য করতেন।। 


আম্মাজান সাফিয়া(রাঃ) ছিলেন খাটো।তাই যখন তিনি বাহনে আরোহণ করতেন তখন রাসুল (সাঃ) কে ঢেকে দিতেন, তারপর হাঁটু বিছিয়ে দিতেন। সাফিয়া (রাঃ) সেই হাঁটুতে পা রেখে বাহনে উঠতেন। প্রত্যেক স্ত্রী ছিলো রাসুল (সাঃ) এর কাছে রানীর মতো।।একজন রাজা তার রানীকে যত সম্মানে রাখে,, রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীরা তার কাছে তার থেকে বেশি সম্মান পেতো। 

প্রিয়তমাদের অনুভুতির দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। 

জীবনে দুঃখ কষ্টের অভাব ছিলো না তবুও স্ত্রীদের কষ্ট চোখ এড়িয়ে যেতেন না৷ একবার আয়েশা (রাঃ) কে বলেন, "হে আয়েশা তুমি কখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাকো। আর কখন রাগ করো তা আমি বুঝতে পারি। আয়েশা (রাঃ) অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, "কি করে বুঝতে পারেন?? রাসুল (সাঃ) বলেন, " যখন তুমি আমার উপর সন্তুষ্ট থাকো তখন তুমি বলো, এমন নয়, মুহাম্মদের রবের কসম। আবার যখন আমার উপর রাগান্বিত হও, তখন তুমি বলো, এমন হয় ইব্রাহিমের রবের কসম। সোহেল শুয়ে আছে আর বলছে.........


সোহেলঃ বুকের ভেতরটা খা খা করছে, একটু বুকে আসবা আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চার মা??


শারমিন লজ্জায় গুটিশুটি মেরে রইলো। হঠাৎ সোহেল শারমিনকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বললো..........


সোহেলঃ এবার একটু ওই মিষ্টি কন্ঠে কোরআন তেলওয়াত করে শুনাবা??


শারমিন সুরা ইয়াসিন তেলওয়াত করতে আরম্ভ করলো আর সোহেল মুগ্ধ হয়ে শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লো। 

সোহেল এবং শারমিন দম্পত্তির মাঝে গভীর ভালোবাসা তাদের দাম্পত্য জীবনকে খুব সুন্দর করে তুলেছে। যা সত্যি অমায়িক। 


শারমিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে।। খুব জ্বর,মাথা ব্যাথা। সোহেল রুমে আসার পর শারমিনের এই অবস্থা দেখে পাগল প্রায়। তাড়তাড়ি করে পানি এনে জলপট্রি করে দিচ্ছে। শারমিন জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে। সোহেল সারারাত জেগে শারমিনের সেবা করলো। স্ত্রীরাও মানুষ! তাদেরও অসুখ-বিশুখ আছে। স্ত্রী যেমন 

স্বামীর সেবা যত্ন করবে,তেমনই স্বামীদের উচিৎ স্ত্রীদের উপর খেয়াল রাখার। 


সোহেল এবং শারমিনের সংসার ছোট ছোট খুনশুটি ও অফুরন্ত ভালোবাসার মাঝে কেটে যাচ্ছে।। মাঝে মাঝে শারিমন সোহেলের উপর রাগ করে থাকে।


আবার কখনো যদি ভুল করে তখন সোহেল শারমিনকে 

ভালোবাসা দিয়ে প্রতিটা ভুল শোধরে দেয়। রাসুল (সাঃ)

বলেছেন, "স্ত্রীরা হলো পাঁজরের বাঁকা হাড়ের মতো, বেশি সোজা করতে চাইলে ভেঙে যাবে। তাই স্ত্রীদেরকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হয়। স্ত্রী কোনো অপরাধ করলে তাকে শাস্তি না দিয়েও অন্য ভাবে প্রহার করা যায়। যেমন একবার রাসুল (সাঃ) তার স্ত্রীগনের উপর রাগ করে এক মাস দেখা করেন নি, তাছাড়া যার উপর রাগ উঠতো তার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিতেন তাদের হাসি ঠাট্টা কমিয়ে দিতেন।। তারপর স্ত্রীরা নিজেরাই ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে মাফ চাইতেন।। 


একবার রাসুল (সাঃ) আম্মাজান আয়েশা (রাঃ)এর ঘরে থাকা কালীন সাফীয়া (রাঃ) খাবার পাঠালেন। আয়েশা (রাঃ) তখন ঈর্ষাকাতর হয়ে পাত্র ভেঙে ফেললেন। অন্য সকল পুরুষ হলে তখন হয়তো উগ্র পন্থান অবলম্বন করতেন। কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সাঃ) শান্ত ভাবে পাত্রের টুকরো কুড়াতে কুড়াতে বললেনঃ-" তোমাদের মায়ের (আয়েশা (রাঃ) এর) ঈর্ষা এসে গেছে। 


সোহেল এবং শারমিনের বিয়ের পাঁচ বছর কেটে গেছে। 

শারমিনের ছোট একটা ছেলে হয়েছে। সোহেল তার নাম রেখেছে আব্দুল্লাহ আল সায়েম। এবং শারমিনকে ডাকে উম্মে আব্দুল্লাহ নামে। সোহেল খুব চিন্তিত হয়ে বসে আছে। শারমিন সোহেলের কাছে গিয়ে বললো....


শারমিনঃ কি হয়েছে আপনার? আপনাকে এতো টেনশনে দেখাচ্ছে কেনো??


সোহেল চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। শারমিন বললো...


শারমিনঃ আমাকে কি বলা যায় না??


সোহেলঃ আমাদের কলেজের একটা মেয়ের আজকে ডিভোর্স হয়ে গেছে??


শারমিনঃ কি বলছেন??


সোহেলঃ হুমম প্রথম হাজবেন্ড মারা যাওয়ার পর এই দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো?? 


শারমিনঃ ইশশশ??


সোহেলঃ আর জানো মেয়েটার এই দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আর আপন কেউ নেই। কোথাও কোনো 

চাকরি করতে গেলে সবাই তাকে বাজে ভাবে দেখে। 

নোংরা ভাবে তাকায়??


শারমিনঃ তাহলে তো মেয়েটা সেইফ না??


সোহেলঃ হুমমম??


শারমিনঃ মেয়েটা এখন কি করবে??


সোহেলঃ একটা কথা বলবো??


শারমিনঃ বলেন??


সোহেলঃ মেয়েটাকে আমি বিয়ে করতে চাই??


শারমিন অবাক চোখে সোহেলের দিকে তাকালো। সোহেল আবার বললো........


সোহেলঃ দেখো আমার কাছে থাকলে মেয়েটা নিরাপদে থাকবে??


শারমিন আর কিছুই বললো না। এখান থেকে উঠে চলে গেলো। সোহেল শারমিনের মনের অবস্থা বুঝতে পারলো। যত যাইহোক না কেনো একজন সত্যিকারের নারী কখনো তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না। 

রাতে শারমিন সোহেলের জন্য ভাত টেবিলের উপরে রেখে আব্দুল্লাহকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। সোহেল রুমে এসে দেখলো শারমিন না খেয়ে শুয়ে আছে। সোহেলও কিছু না বলে, না খেয়ে শুয়ে পড়লো। শারমিন সোহেলকে দেখেও না দেখার ভান করে শুয়ে রইলো।। 

সোহেল এপাশ ওপাশ করছে। প্রতিদিন শারমিনকে বুকে নিয়ে ঘুমায় সোহেল।। আর আজকে তার উল্টো।


কিছুক্ষণ পর সোহেল উঠে দাঁড়ালো তারপর শারমিনের পাশে গিয়ে বসলো। শারমিনের কপালে কিস করতেই শারমিন ফুঁপিয়ে উঠলো,তার চোখের গরম জলের ধারা সোহেলের হাতকে তপ্ত করে দিলো। সোহেল শারমিনের কাঁধে ধরে শারমিনকে উঠালো। শারমিনের মাথাটা বুকের বাম পাশে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো......... 


সোহেলঃ কেঁদো না প্লিজ?? তোমার কান্না যে আমি সহ্য করতে পারি না। আমি শুধু তোমাকে বলেছিলাম এই ভেবে যে, মেযেটার একটা নিরাপদ আশ্রয় হবে। যদি অন্য কোথাও বিয়ে হলে মেয়েটা নিরাপদে না থাকে। কিন্তু এখন যেহেতু আমার সোনা পাখি রাজি না, তখন আর বিয়ে করতে চাই না??


শারমিন সোহেলের গেঞ্জি আরো বেশি আকড়ে ধরে বুকের ভেতর মিশে যেতে চাচ্ছে। সোহেল ঠাট্টা করে বলে উঠলো........ 


সোহেলঃ উফফ আমি এবার হার্ট অ্যাটাক করবো, যেভাবে বুকের ভেতর ঢুকে যাচ্ছো??


শারমিন লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দিলো। সোহেল বললো......


সোহেলঃ ভালোই তো লাগছিলো, ছেড়ে দিলে কেনো??


শারমিন লজ্জা পেয়ে শাড়ির আঁচলের কোনা দুই হাতের দুই আঙুল দিয়ে ঘুড়াচ্ছে। সোহেল দুষ্টুমি করে বললো...


সোহেলঃ এবার একটু বেশিই বউ বউ লাগছে?? 


শারমিন মনে মনে বললো,ইশশ কি লজ্জা, কি লজ্জা এবার মরেই যাবো। সোহেল ঠাট্টা করে বললো......


সোহেলঃ দেখো তুমি যদি এখন মারা যাও তাহলে তো তোমার ভাগ্য ভালো হবে, আমি তোমাকে গোসল করাবো, কাফনের কাপড় পড়াবো, জানাযা দিবো, কবর দিবো, দোআ করবো??


শারমিনঃ হুহহ আমি এখন মরে যাই আর আপনি আমার ঘরে অন্য কাউকে বিয়ে করে আনেন??


কথাটা শুনে সোহেল না হেঁসে পারলো না৷ খাবার খেয়ে দুজনে শুয়ে পড়লো। আব্দুল্লাহকে মাঝখানে রেখে শারমিন খাটের আরেক পাশে শুয়ে পড়লো৷ সোহেল বলে উঠলো....... 


সোহেলঃ মিষ্টি বউটাকে রেখে একা একা ঘুমাতে পারবো না?? 


শারমিন বিপরীত পাশে ফিরে মুচকি হাঁসতে হাঁসতে বললো.......


শারমিনঃ আজকে এটা আপনার শাস্তি??


পরের দিন সকালে অবন্তী শারমিনকে বললো........ 


অবন্তীঃ জানিস এক লোক একটা অসহায় মেয়েকে বিয়ে করে নিজের ঘরে আশ্রয় দিতে প্রথম স্ত্রীর 

কাছে অনুমতি চাইলো। কিন্তু প্রথম স্ত্রী অনুমতি না দিয়ে উল্টো রাগ দেখালো। তার কিছুদিন পরই মেয়েটার স্বামী মারা যায়। তারপর সেও অসহায়ের মতো পথে পথে ঘুরতে থাকে??


এই কথা শুনে শারমিনের বুকের ভেতরটা কেমন যেনো করে উঠলো। দৌঁড়ে চলে গেলো সেখান থেকে, অবন্তী বেশ কয়েকবার ডাকলেও পিছনে ফিরে তাকালো না। 

ঘরের ভেতর গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। সোহেলকে হারানোর তীব্র ভয় তার মনের ভেতর৷ সোহেল ঘরে ফিরে দেখলো শারমিনের চোখ দুটি ফোলা ফোলা আর লাল, দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব কান্না করেছে। কাছে গিয়ে কান্নার কারন জানতে চাইলে শারমিন সোহেলের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো,আর কাঁদতে কাঁদতে বললো......... 


শারমিনঃ আমি আপনাকে হারাতে পারবো না, আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। বিশ্বাস করেন?? 


সোহেলের চোখ মুখে কিস করতে করতে কাঁদছে আর বলছে.......


শারমিনঃ আপনি দাঁড়ান আমি আসছি??


কথাটা বলে শারমিন রুম থেকে বের হতে গিয়ে আবার ফিরে এসে সোহেলর বুকে কপালে নাকে কিস করে চলে গেলো। আর সোহেল মনে মনে ভাবতে লাগলো....


সোহেলঃ শারমিন এমন ভাবে কিস করেছে মনে হয় আমাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে পেয়েছে। 

পাগলীটার কি এমন হলো। আর কোথায় গেলো??


আব্দুল্লাহ ঘুমিয়ে আছে। তার পাশে গিয়ে কপালে কিস করলো। শারমিন সোহেলের কাছে এসে একটা লাল শাড়ি আর কিছু গহনা এগিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো....


শারমিনঃ এই নিন??


সোহেল অবাক হয়ে জানতে চাইলো......


সোহেলঃ এগুলো কি?? 


শারমিনঃ ওই অসহায় মেয়েটাকে আজকেই বিয়ে করে আনবেন??


সোহেল হা করে রইলো। তারপর বললো.......


সোহেলঃ কিন্তু শারমিন.......(পুরোটা বলার আগে)


শারমিনঃ কোনো কিন্তু না,আজ যদি মেয়েটার জায়গায় আমি থাকতাম। দোহাই আপনার আপনি যান, আমার কসম রইলো??


সোহেলঃ শারমিন এমন পাগলামি করো না, দেখো??


শারমিন চিৎকার দিয়ে বললো.......


শারমিনঃ প্লিজ প্লিজ আপনি যান??


অগত্যা সোহেল চলে গেলেন।। শারমিন কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লো,কলিজা ফেটে যাচ্ছে তার, চোখের পানি বাধ ছাড়া হয়ে গেছে। সোহেল বিয়ে করে এনে বউকে ড্রয়িং রুমে রেখে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। কাজের লোক এসে বলে গেলো উপরে যেতে। নতুন 

বউ সব জেনেই বিয়ে করেছে। এক পা দু পা করে মনে সংকোচ রেখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।ভেতর থেকে শারমিন বললো..........


শারমিনঃ ভেতরে আসো??


নতুন বউ ঘরে ঢুকেই দেখলো তার বিপরীত দিকে ঘুরে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। শাড়ি পড়েছে, দেখতে বেশ সুন্দরী হবে। ইনি হয়তো উনার প্রথম স্ত্রী। তারপর নতুন বউ বললো.......


নতুন বউঃ আসসালামু আলাইকুম?? 


শারমিন সালামের জবাব দিতে দিতে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থেকে বললো.......


শারমিনঃ সাদিকা তুমি??


সোহেলের বিয়ে করে নিয়ে আসা বউটা হলো সাদিকা।। সাদিকা দৌঁড়ে গিয়ে শারমিনের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো........ 


সাদিকাঃ আমাকে মাফ করে দাও, আমি জানতাম না উনি তোমার স্বামী?? 


শারমিন সাদিকাকে দু হাত দিয়ে ধরে উপরে তুলে বলে উঠলো....... 


শারমিনঃ ছিঃ ছিঃ কি করছো?? দেখো উনি যা করেছে ঠিক করেছে, আর এতে আমার সম্মতি ছিলো। আজ যদি তোমার জায়গায় আমি থাকতাম তাহলে? আচ্ছা তোমার প্রথম হাজবেন্ড মারা গেলো কি করে?? 


সাদিকা কাঁদতে কাঁদতে বললো........। 


সম্পুর্ণ গল্পটাতে জুবায়ের নামটা লেখা হয়েছিলো,,কিন্তু এই খানে এসে ব্যাক্তিগত সমস্যার কারনে শুধু এটুকুতে নামটা চেঞ্জ করে দিতে আমি বাধ্য।জুবায়েরের নামটার পরিবর্তন করে গল্পে নাহিদ নামটা ইউজ করা হলো। 


সাদিকাঃ তোমার বিয়ের দিন সকালে নাহিদ আমাকে ফোন দিয়ে বিয়ের প্রফোজাল দেয়, আমি খুশি হয়েছিলাম যে তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। তারপর আমরা বিয়ের দুই বছর এক সাথেই ছিলাম। 

একদিন রাতে নাহিদ বাজারে গিয়ে আর ফিরে আসেনি,ফিরে এসেছে তার এক্সিডেন্ট হওয়া লাশ??


শারমিন সাদিকাকে বললো......


শারমিনঃ কেঁদো না, আজ থেকে আমরা বোনের 

মতো থাকবো??


সাদিকাঃ কিন্তু আমি যে তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম?? 


শারমিনঃ চুপপ, কষ্ট কিসের?? উম্মুল মুমিনরা কি মেনে নেয়নি? আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কি কষ্ট পেয়েছিলেন? ওনার মতো জান্নাতি নারী যেখানে হাসি মুখে রাসুল (সাঃ) এর বিবাহ মেনে নিয়েছিলেন সেখানে আমি তো কিছুই না?? 


সাদিকা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাে,আর ভাবতেছে 

"একটা মানুষ এতটা মহান হয় কি করে।


শারমিনঃ কি ভাবছো??


সাদিকাঃ সত্যি তুমি হুজুরের বউ। সত্যি শারমিন তুমি #হুজুরের_বউ


সোহেল এতক্ষণ আড়াল থেকে সব শুনছিলো। তারপর 

মুচকি হেঁসে দুই বউ বুকের দুই পাশে চেপে ধরলো। হঠাৎ করে আব্দুল্লাহ তাদের মাঝখানে এসে বললো....


আব্দুল্লাহঃ আব্বু আমি সব শুনেছি, আজ থেকে আমার দুইটা আম্মু??


পর্বঃ ০৯ এর লিংক। 

https://www.facebook.com/111134014099646/posts/375117921034586/


এই কথা শুনে তিনজনে হেঁসে দিলো। সুখে থাকুক ওরা, প্রত্যেক নারী যেনো শারমিনের মতো পুন্যবতী ও মহান হৃদয়ের হয়। হুজুরের বউ হবে এমন যে উম্মুল মুমিনদের আদর্শকে মনের ভেতর জীবিত রাখবে। এবং একের বিপদে আরেকজন পাশে দাঁড়াবে 💖💖


                           আল্লাহ হাফেজ। 

                     আসসালামু আলাইকুম। 


------------------->>সমাপ্ত<<-----------------


কষ্ট করে গল্প লিখলাম আপনাদের জন্য পারিশ্রমিক না দিয়ে চলে যাবেন,পারিশ্রমিক হিসেবে আপনাদের দোয়া 

ও ভালোবাসা চাই.।


ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা রইলো সবার জন্য...❤❤


এমন আরও পর্বের গল্প পড়ুন।