খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প | বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

চাপা কষ্টের স্ট্যাটাস

চাপা কষ্টের স্ট্যাটাস

-গল্পঃ_মায়া

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


আমার স্বামী স্বপ্নীলকে স্পষ্ট দেখেছি আমার ছোট বোন 

তিথির সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায়। আমি আমার শ্বাশুড়ির সাথে হসপিটাল গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। আমার পেটে স্বপ্নীলের আট মাসের সন্তান। ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাপ করালো। তারপর হাসি মুখে বললো....


ডাক্তারঃ আপনি ছেলে সন্তানের মা হবেন। 


কথাটা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলাম। এই প্রথম সন্তানের মা হতে চলেছি, অনুভুতি কেমন হবে সেটা অবশ্যই যারা মা হয়েছেন তারা বুঝতে পারছেন। আমার শ্বাশুড়ির গলায় পরা একটা সোনার চেইন ছিলো। খুশির সংবাদ শুনে চেম্বারেই তিনি নিজের গলা থেকে খুলে আমার গলায় পড়িয়ে দিলেন সেই চেইন।


খুশিতে আমার চোখে জল চলে আসলো।। আর আমি তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ আমি স্বপ্নীলকে চমকে দিবো। বাড়ি ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরে বলবো, "স্বপ্নীল তুমি ছেলে সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছো।" কিন্তু কি দুর্ভাগ্য আমার! কে জানতো বাড়ি ফিরে আমি দেখবো আমার আপন ছোট বোনের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে আছে স্বপ্নীল। আমার নিজের 

প্রতি খুব ঘৃণা হচ্ছে। তিথি আমার আপন ছোট বোন হয়ে কি করে এই কাজ করতে পারলো? আর স্বপ্নীল!


গত কালকে যখন দুজন একসাথে শুয়েছি,তখন স্বপ্নীল আমার কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে বললো...


স্বপ্নীলঃ নোহা তুমি কি জানো তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি? 


আমিঃ কতটা?


স্বপ্নীলঃ যার বেশি আর ভালোবাসা যায় না।


ওর কথা শুনে আমি তখন শক্ত করে স্বপ্নীলকে আমার বুকের সাথে মিশিয়ে ধরলাম।(আরে এমন করে যদি আমাকে কেউ ধরতো, দুঃখে কলিজা ফেটে যায়😇) স্বপ্নীল তখন আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে বললো......


স্বপ্নীলঃ এই কি করছো। এভাবে আর কখনো শক্ত 

করে ধরো না। 


আমি অবাক হয়ে বললাম....... 


আমিঃ কেনো?


স্বপ্নীলঃ আমাদের বাবুটা ব্যাথা পাবে তাই। 


ওর কথা শুনে লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে গেলো। আমি তখন স্বপ্নীলের আরো কাছাকাছি গেলাম। তারপর ওর একটা হাত শক্ত করে ধরে বললাম.......


আমিঃ স্বপ্নীল আমি যদি মরে যাই তবে কি তোমার 

কষ্ট হবে? 


স্বপ্নীল আমার মুখ চেপে ধরে রেগে গিয়ে বললো........


স্বপ্নীলঃ আর একবার যদি তুমি এমন কথা বলো তাহলে তুমি নিজেই আমার মরা মুখ দেখবে। 


ওর কথা শুনে মুহূর্তে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। এরপর আমি বললাম.......


আমিঃ না না আর কখনো এমন কথা বলবো না। আমরা দুজন সারাজীবন একে অপরের সাথে মিলেমিশে বেঁচে থাকবো। 


তারপর স্বপ্নীল আমাকে তার আরো কাছে টেনে নিলো। 

আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো.....


স্বপ্নীলঃ তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই আমি, তুমি ঘুমাও কেমন। 


তখন আমার দুই চোখ জলে ভরে উঠেছিলো। মনে মনে বলেছিলাম, "আমার কি ভাগ্য। নাহলে মা মরা মেয়ে কি আর এমন বর পায়। 


আমি ঘরে ঢুকতেই ওরা দু'জনে অপ্রস্তুত হয়ে বিছানায় উঠে বসলো। তিথি তাড়াহুড়ো করে বিছানায় পড়ে থাকা কাপড় নিয়ে তার গায়ে জড়িয়ে নিলো৷ আর স্বপ্নীল কাঁথাটা টেনে নিলো তার শরীরের উপর। আমি দেখেও না দেখার ভ্যান করে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।


তারপর সেখানে ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছে মতো কাঁদলাম। 

কাঁদতে কাঁদতে আমার শুধু একটা কথাই মনে 

হচ্ছিলো, ওরা কি করে এমন করতে পারলো? আমি ইচ্ছে করলে ঘরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারতাম। তিথির গায়ে হাত তুলতে পারতাম। কিন্তু এসব করিনি, কারন ঘরের কথা অন্য লোকেরা শুনবে। 


আমার শ্বাশুড়ি কিংবা ঘরের ১ টা কাজের ছেলে/মেয়ে যদি শুনে যে আমার বর আমার আপন ছোট বোনের সাথে শারীরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিলো তখন তো আমারই লজ্জা হবে? আর আমি কি করেই বা মুখ দেখাবো ওদের! তাই চুপচাপ ওয়াশ রুমে ঢুকে গিয়ে ইচ্ছে মতো কেঁদেছি। কাঁদতে কাঁদতে ভাবছি আসলেই কি দুনিয়াতে ভালোবাসা বলতে কিছু আছে? যদি থাকতো তাহলে স্বপ্নীল কি করে আমাকে ঠকালো?


অনেকক্ষণ ধরে ওয়াশ রুমে নিরবে শুধু কেঁদেই যাচ্ছি আমি। কাঁদতে কাঁদতে আমার পেটে কেমন জানি 

ব্যাথা করছে।। এখন আর কাঁদতে পারছি না। কাঁদলে মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার পেট ছিড়ে যাবে। কাঁদছি আর ভাবছি তিথির কথা।


আমার "মা" মারা যাওয়ার সময় আমি ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। আর তিথি ক্লাস সিক্সে। আমাদের দুই বোনকে নিয়ে আব্বা তখন অকুল পাথারে পড়লেন। কি ভাবে কি করবেন! কিন্তু ভাগ্য ভালো যে আমার শ্বাশুড়ির এক দুরসম্পর্কের আত্মীয় আমার শ্বাশুড়িকে বললো...


ভদ্র মহিলাঃ নিজের ছেলের জন্য তো বউ খুঁজতেছো। আমি তোমাকে একটা লক্ষী মেয়ের খোঁজ দিতে 

পারি। কিন্তু কথা হলো মেয়ের মা নাই। আর মেয়ের পরিবার গরীব। 


তখন আমার শ্বাশুড়ি বললেন........


শ্বাশুড়িঃ আমি একটা লক্ষী বউ-মা চাই! আর কিছু না। 


তারপর স্বপ্নীল এবং তার মা আসলো আমাকে দেখতে। 

দেখে আর কোনো কথা নেই। সেদিনই তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন। আর বললেন তিথিকেও নিয়ে যাবেন সাথে করে। সে তার মেয়ের মতোই সেখানে থাকবে। আব্বাকেও বলেছিলেন। কিন্তু আব্বা আগে থেকে একটু সাদু দরবেশের মতো ছিলেন। তিনি এই সুযোগে এসবে ঢুকে আজ পর্যন্ত বাড়ি ফিরলেন না৷ 


তিথি এখন ক্লাস নাইনে পড়ে।কিন্তু বয়স তো ওর কাঁচা।

এই বয়সে মানুষের চোখে রঙিন চশমা থাকে। যা দেখে তাই ভালো লাগে। আর আবেগও কাজ করে বেশি। তাই বলে কি নিজের আপন বড় বোনের বরের সাথে এসব! ছিঃ ছিঃ ছিঃ।আমার শ্বাশুড়ি এসে দরজায় শব্দ করে ডাকছেন আমায়........


শ্বাশুড়িঃ বউ-মা, ও বউ-মা এতক্ষণ হইছে ওয়াশ রুমে গেছো বাহির হও না কেনো?


তিনি হয়তো ভাবছেন "আমি কি ওখানে গিয়ে পড়ে টরে গেলাম নাকি"। আমার কান্না তখনও থামছে না৷ তবুও খুব সাবধানে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে দরজা খুলে বের হলাম। আমার শ্বাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন.......


শ্বাশুড়িঃ তুমি কাঁদছো কেনো বউ-মা?


আমি চাপা গলায় বললাম........ 


আমিঃ না আম্মা। কাঁদবো কেনো আমি?


শ্বাশুড়িঃ না তোমার মুখ দেখেই বুঝা যায় কাঁদছো। কেনো কাঁদছো শুনি?


আমিঃ না আম্মা, কাঁদিনি আমি। চোখে বেশি করে 

পানি দিছি তো তাই চোখ লাল হয়ে গেছে।


শ্বাশুড়িঃ চোখ নাহয় পানির কারনে লাল হইছে কিন্তু গলা। গলার শব্দ তোমার ভেজা কেনো বউ-মা?


আমি প্রায় ধরা খেয়ে গেছিলাম আমার শ্বাশুড়ির কাছে৷ কিন্তু এই কথাটা কোনো ভাবেই উনার কাছে প্রকাশ করা যাবে না৷ শুনলে তিনি ভিষণ কষ্ট পাবেন। তাছাড়া আমার আপন ছোট বোনের সম্পর্কে এমন একটা কথা কি করে বলি আমার শ্বাশুড়ির কাছে। তাই আমি বানিয়ে বললাম....... 


আমিঃ আম্মা হঠাৎ আমার মায়ের কথা মনে পড়ছে। আমার মা তো সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা গেছিলেন।এই জন্য আমার ভয় হচ্ছে, যদি আমিও..


পুরো কথাটা শেষ করতে পারলাম না আমি। তার আগে আমার শ্বাশুড়ি আমার মুখ চেপে ধরে বললেন.......


শ্বাশুড়িঃ চুপ করো। এমন অলক্ষুণে কথা আর কখনো বলবে না বলছি। আমার নিজের কোনো মেয়ে 

সন্তান নাই। বিয়ের পর থেকে আমি নিজেই তোমারে মেয়ের মতো দেখে আসতেছি! ভালো বাসতেছি। 

আমি তোমারে ছাড়া বাঁচবো কেমনে গো মা?


কথাটা বলেই আমার শ্বাশুড়ি কেঁদে উঠলেন হাউ-মাউ করে। আমি বললাম.......


আমিঃ আম্মা থামেন, প্লিজ থামেন। আমি আর 

কখনো এমন কথা বলবো না, কখনো না।


আমার শ্বাশুড়ি তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন.....


শ্বাশুড়িঃ তাই যেনো হয়।


আজকে সারাদিন আমার কাছ থেকে আড়ালে রয়েছে তিথি। এমনকি দুপুর বেলায় খাবার পর্যন্ত খায়নি।

আম্মা ডেকেছে কয়েকবার। সে বলেছে পেটে গ্যাস করেছে তাই খাবে না। কিন্তু সন্ধা বেলায় হঠাৎ সে আমার কাছে আসলো। এসে আমার পায়ে ধরে কেঁদে উঠলো। 


তিথির প্রতি আমার অসম্ভব দুর্বলতা আছে।। আর এই দুর্বলতার নামই হলো #মায়া_। #মায়ার আরেক নাম ভালোবাসা। আমি তিথিকে খুব ভালোবাসি। বিয়ের আগে ও পরে আমার নিজের জন্য ওর কাপড়ের চেয়ে দামী কোনো কাপড় আমি কিনতে পরিনি৷ ওর খাওয়ার আগে আমি দু মুঠো ভাত আমি মুখে দেইনি। তিথির অসুখ হলে মনে হয় ওর অসুখটা আমার হয়ে যাক তবুও তিথি ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক। সেই বোন যখন পায়ে পড়ে কান্না করে তখন অবশ্যই খারাপ লাগার কথা। কিন্তু আমার এখন খারাপ লাগছে না৷ ঘৃণা হচ্ছে ওর প্রতি। কিভাবে সে আমার এতো বড় সর্বনাশ করে ফেললো। আমার কোনো সাড়া না পেয়ে তিথি এবার আমার হাত দুটি তার গলার কাছে নিয়ে বললো.........


তিথিঃ বুবু আমায় গলা টিপে মেরে ফেল তুই। আমি বাঁচতে চাই না আর। 


আমার ইচ্ছে করছে এখন ওর গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম আমি।তারপর ধীরস্থির ভাবে বললাম......... 


আমিঃ আমি কোন চাওয়াটা তোর পূরণ করিনি রে তিথি? বল আমি কোন চাওয়াটা পূরণ করিনি? 

তাহলে কেনো এতো বড় সর্বনাশ করলি তুই? 


কথা গুলো বলতে গিয়ে কষ্টে আমার বুক ফেটে কান্না আসছে৷ চোখ ভিজে উঠছিলো জলে৷ আমি খুব সঙ্গোপনে জল কান্না লুকিয়ে বললাম........ 


আমিঃ বলছিস না কেনো?


তিথি কান্না করছে। কথা বলতে পারছে না। আমি ওর দু বাহু ধরে প্রচন্ড জোরে নাড়া দিয়ে বললাম......... 


আমিঃ বলছিস না কেনো?


তিথি বললো.......


তিথিঃ আমায় মেরে ফেল বুবু। আমি মরে যেতে চাই।


আমিঃ মরবি কেনো? মেরে ফেলছিস তো আমাকে। 

আমার সুন্দর দুনিয়াটাকে জাহান্নাম বানিয়ে 

দিয়েছিস তুই। নিজের রক্তের বোন, যে বোনকে 

আমি মনে মনে সন্তান মনে করতাম সে বোন হয়ে 

তুই আমার সবকিছু শেষ করে দিলি?? ওকে নিয়ে 

একটু হাঁটলেও কষ্ট হয়। মনে হয় এই বুঝি আমার 

পেট ছিড়ে যাবে।


তিথি কান্না মাখা গলায় কাঁদতে কাঁদতে বললো.......


তিথিঃ আমি বুঝতে পারিনি বুবু। আমি না বলতে পারিনি৷ 


আমিঃ না বলতে পারিস নি মানে?


তিথিঃ আমার লজ্জা করছে বলতে।


কথাটা শুনে আমার মেজাজ একেবারে খিটখিটে হয়ে উঠলো। আর রাগে আমার শরীর কাঁপতে লাগলো। 

নিজেকে সামলাতে না পেরে হাতের সমস্ত শক্তি দিয়ে 

তিথির গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললাম..........


আমিঃ বোন জামাইয়ের সাথে যখন উলঙ্গ শুয়ে ছিলি তখন লজ্জা করেনি তোর? 


তিথি আমার চড় খেয়ে ছিটকে পড়লো খানিক-টা দূরে। 

তারপর শব্দ করে কেঁদে উঠলো৷ আমি দৌড়ে গিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে বললাম.......... 


আমিঃ আস্তে চুপ হয়ে যা বলছি। খবরদার জোরে কান্না করবি না। আমার শরীর এমনিতেই দুর্বল।। একটু টেনশন করলেই সারা শরীর ঘামতে থাকে। মাথা ভার হয়ে আসে। তাছাড়া পেটের বাচ্চাটা বড় হয়ে আসছে এখন। ওকে নিয়ে একটু হাঁটলেও কষ্ট হয়। মনে হয় এই বুঝি আমার পেট ছিড়ে যাবে। 


ভ্যাগ্যিস তিথির কান্নার শব্দ আম্মা শুনতে পায়নি৷ শুনে ফেললে বিপদ হতো। তার কাছে আরেকটা মিথ্যা কথা বানিয়ে বলতে হতো। অথবা তিনি যদি জেনে ফেলতেন ভাই বোনের মতো এক ছাদের নিচে বেড়ে উঠা এই দুজন আসলে ভাই বোন নয়। এদের মধ্যে গড়ে উঠেছে নোংরা সম্পর্ক। তখন কি তিনি সহ্য করতে পারতেন এসব। তারপর তিথি বললো........


তিথিঃ বুবু আজ রাতেই আমি এখান থেকে চলে যাই। 

কেউ জানবে না আমি কোথায় গেছি। ভাইয়াও 

জানবে না আমি কোথায় আছি। তখন দেখবি ভাইয়া তোর সাথে আগের মতোই ভালো থাকবে।


স্বপ্নীল কখনো আমার সাথে খারাপ আচরণ করেনি। কিন্তু তিথির মুখ থেকে এই কথাটা শুনে আমার গা কেমন কাঁটা দিয়ে উঠলো৷ তাহলে কি ওদের 

এই সম্পর্ক টা অনেক পুরোনো? আমি বললাম...... 


আমিঃ তিথি ওর সাথে এসব কবে থেকে করছিস?


তিথি তার চোখ মুছে বললো.......


তিথিঃ আমি পারবো না কিছু বলতে বুবু। ওর সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবো না। 


এবার যা রাগ উঠলো আমার! আমি ওর গলা দু হাতে চেপে ধরে বললাম........ 


আমিঃ বল বলছি?


তিথি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো........


তিথিঃ ভাইয়া আমার জন্য তোমার কোনো ক্ষতি 

করুক তা আমি চাই না। 


আমিঃ তুই কি ভেঙে কিছু বলতে পারিস না? 


তিথি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। তারপর বললো......


তিথিঃ আমি কিছু জানি না বুবু। আমি পালিয়ে যাবো এখান থেকে। আজ রাতেই পালিয়ে যাবো। 


তিথির কথা গুলো শুনে আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে স্বপ্নীল এর প্রতি। আমার এখন মনে হচ্ছে, তিথির যে ভালোবাসা ওর প্রতি তা বোধহয় স্বপ্নীল জোরপূর্বক আদায় করছে৷ আর স্বপ্নীল ওর ব্রেনে এমন ভয়ংকর কিছু কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে যার কারনে তিথি তার মুখ খুলছে না। কিন্ত যে করেই হোক ওর মুখ খোলাতেই হবে৷ ওর মুখ না খুললে যে আমরা দু বোন ঘোর

বিপদে পড়বো। সেই বিপদ থেকে যে কিছুতেই রক্ষা মিলবে না আমাদের। আমি এবার তিথির দুটি হাত আমার হাতের মুঠোয় এনে অনুনয়ের গলায় বললাম...


আমিঃ তিথি তুই যদি কিছু লুকিয়ে রাখিস তবে সেটা আমাদের দুজনের জন্যই খারাপ হবে। প্লিজ 

সবকিছু খুলে বল৷ কিচ্ছু হবে না বললে৷ বরং ভালো হবে আমাদের জন্য। বল তোর ভাইয়া কি তোর

সাথে জোর করে এসব করে?


তিথি কাঁদতে কাঁদতে বললো.......


তিথিঃ ভাইয়া বলেছে কারো কাছে বললে সে নাকি তোকে ডিভোর্স দিবে। 


তিথির মুখ থেকে এই কথা শুনে আমার চোখ অন্ধকার হয়ে আসলো। তবে কি তিথিকে ব্ল্যাকমেইল করে এসব করছে স্বপ্নীল? তিথি বললো.......


তিথিঃ বুবু তুই ভাইয়াকে কিছু বলিস না। আমাদের তো কেউ নেই এই দুনিয়ায়। তোর পেটে সন্তান আছে। ভাইয়া যদি রেগে উল্টাপাল্টা কিছু করে তখন কি হবে?


কথাগুলো শুনে আমার মাথা কেমন জানি ভনভন করে ঘুরছে। শরীর আসাড় হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে একটু পরেই আমি মরে যাবো। তবুও আমি নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখলাম। তারপর তিথিকে বললাম..........


আমিঃ প্রথম কখন তোর সাথে ও এমন করে। 


তিথি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো.........


তিথিঃ জে এসসি পরিক্ষার আগে যখন কোচিংয়ে যেতাম আর রাত করে বাসায় ফিরতে হতো তখন তো ভাইয়া আমাকে এগিয়ে আনতো। আমরা আসতাম রিকশায় করে। একদিন খুব বৃষ্টি ছিলো। রিকশাওয়ালা তখন সামনে থেকে কাগজ দিয়ে আমাদের ঢেকে দেয়। আর তখনই....


কথাটা বলে তিথি থেমে যায় এবং অন্য দিকে তাকলো।

ওর কপাল ঘামছে। শরীর থরথর করে কাঁপছে। আমি তিথিকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর বললাম......... 


আমিঃ তারপর তিথি?


তিথির কান্না এসে যায় খুব। তিথি সেই কান্না মাখা কন্ঠ নিয়ে বললো.......


তিথিঃ ভাইয়া তখন আমার হাত দুটি মুঠো করে ধরলো। আর বলে তিথি তোমার কি ভয় করছে? ঝড় বৃষ্টি 

তুমি খুব ভয় পাও তাইনা। আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম ভাইয়া আমি এসব ভয় পাই না।কিন্তু মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম ভাইয়াকেই। তারপর ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। আমার কাছ থেকে একটু সরেও গেলো। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একটা বজ্রপাত হতেই ভাইয়া আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমার মনে হচ্ছিলো কেউ বুঝি আমার সাথে পাঞ্জা লড়ছে। আমি তখন ভাইয়ার কাছ থেকে ছুটতে গিয়েও ছুটতে পারিনি। ভাইয়া বলে তিথি আমার খুব ভয় করছে। আমি ঝড় ভয় পাই। বজ্রপাত ভয় পাই। তারপর হঠাৎ তিনি......


তিথি আবারো থেমে গেলো।। তারপর ওড়না দিয়ে চোখ মুছলো। কি মায়াবী যে ওর মুখখানা। ঠিক যেনো জান্নাতে ফোঁটা কোনো এক ফুল। আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম........


আমিঃ ভয় পাস না বোন! আমার কাছে সবকিছু খুলে বল। 


আমার মাথা তখন ঘুরতেছে।। বমির উদ্রেক হচ্ছে খুব। পেটে থাকা বাচ্চাটা বারবার লাথি দিচ্ছে পেটে৷ যেনো সে পেট ছিড়ে তার পা বের করে এনে তার পাপিষ্ঠ পিতার কপালে ছুঁয়ে দিতে চায়৷। তিথি আবার বলতে শুরু করলো......


তিথিঃ ভাইয়া হঠাৎ করেই আমার ওড়নার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিলো। আমি এবার তার হাতে খামছি দিয়ে ছুটতে চাইলাম। কিন্তু কাজ হলো না৷ সে আমার সাথে অসভ্যতামি শুরু করলো৷ আমি তখন শব্দ করেও 

কিছু বলতে পারিনি নিজের মান সম্মানের কথা ভেবে৷ 

শুধু চুপিচুপি কাঁদছিলাম আমি। ভাইয়া আমার কান্না দেখেও আমাকে ছাড়লেন না। তারপর সেদিন যখন রিকশা থেকে নামলাম আর রিকশা ওয়ালা চলে গেলো তখন ভাইয়া বললো "সরি তিথি! আমি একটু বেশিই ভয় পাই। তুমি এসবে কিছু মনে করো না।"

আমি তখন ভাইয়ার সাথে কোনো কথা বলিনি। দৌড়ে ওর কাছ থেকে চলে এসেছিলাম বাসায়। কিন্তু তোমার কাছে কিছুই বলিনি ভয়ে৷ ভাবলাম পরে যদি ভাইয়া অস্বীকার করে। আর তোমার সাথে যদি খারাপ ব্যাবহার করে। তাই আমি ভাবলাম এর চেয়ে ভালো পড়াশোনা বন্ধ করে দিবো আমি। এবং এর পরেরদিন আমি তোমাকে বলেছিলামও "বুবু আমি আর কোচিং-এ যাবো না। আমার রাতে ক্লাস করতে ভালো লাগে না।" তুমি তখন ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলেছিলে আমি কোচিং-এ যাবো না৷ এই কথা শুনে ভাইয়া সেদিন যা রাগ দেখালো। সে বললো, আমি নিজেই তো ওকে কোচিং-এ দিয়ে আসি আবার নিয়ে আসি। তাহলে যেতে সমস্যা কোথায়? তখন তুমি আমাকে বলেছিলে, "তোর ভাইয়াই তো তোকে নিয়ে আসে গিয়ে। সমস্যা নেই তো তাহলে। কোচিং কর আর মাত্র কয়েকদিনই তো। তোমার এই কথাটা সেদিন আমার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়ে ছিলো।" 

এরপর কি হলো তা শুনতে আর মোটেও ইচ্ছে হলো না আমার। স্বপ্নীলের প্রতি আমার শরীর রি রি করতে লাগলো।। কিন্তু তিথি নিজে থেকে আবার বলতে শুরু করলো.......


তিথিঃ বুবু সেই দিনের পর থেকে আমি আর রিকশাতে উঠতে চাইতাম না। কিন্তু ভাইয়া জোর করে আমাকে রিকশায় তুলতেন, আর অসভ্যতামি করতেন। একদিন আমি বাড়ির কাছে এসে ভাইয়াকে বললাম, "আপনি কি চান আমি আপনাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই বা মরে যাই?" ভাইয়া হেঁসে বললো, "আমি জানি তুমি এই দুটির কোনোটাই করতে পারবে না। কারন তুমি ভীতু এবং তোমার বোনকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসো। এখন একটা কথা বলি কান খুলে শুনে রাখো৷ তুমি যদি আমার সম্পর্কে তোমার বোনের কাছে কোনোদিন মুখ খুলো তখন আমি কি করবো জানো? আমি চুপ করে রইলাম। তখন ভাইয়া বললো, "ডিভোর্স দিবো।" ভাইয়ার মুখ থেকে এই কথাটা শোনার পর আমার পায়ের নীচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো। 

আমার মাথা কেমন জানি ভনভন করে ঘুরতে লাগলো। আমি কিছুই বলতে পারলাম না। ভাইয়া আবার বললো, "আমি যদি তোমার বোনকে ডিভোর্স দিয়ে দেই তখন ভাবতে পারো তোমাদের জীবনটা কেমন হবে? তার চেয়ে তোমার চুপ থাকাই ভালো হবে। চুপ করে থাকলে তোমার দুটো লাভ হবে। (১) বোনের সংসার রক্ষা। (২) তুমি আমার ভালোবাসা পাবে। তিথি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তুমি যা চাও আমি তোমাকে তাই দিবো। কথাটা বলে ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আর আমি পিছনে যেতে লাগলাম। কিন্তু একটা সময় অবস্থা ভয়াবহ দেখে আমি বাসার দিকে ছুটতে লাগলাম। আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু কপাল মন্দ হলে যা হয়😓😓


কথাটা শেষ করতেই তিথি আবার কেঁদে উঠলো। কান্না করতে করতে ওর নাক মুখ কেমন জানি লাল হয়ে উঠেছে। তারপর তিথি কান্নারত কন্ঠো বললো...........


তিথিঃ বাসায় ফিরে দেখি তুমি,আম্মা বাসায় কেউ নেই। পুরো বাসা খালি।। সেদিন তোমরা সেতু কাকার বাড়িতে গিয়েছিলে তার মায়ের মরা লাশ দেখার জন্য। আর এই সুযোগে ভাইয়া আমার পিছনে দ্রুত ছুটে এসে আমাকে ধরে ফেলতে চাইলো। কিন্তু আমি নিজেকে রক্ষা করতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। আর দরজা চেপে ধরলাম। কিন্তু ওর অশুরের মতো শক্তির সাথে আমি কিছুতেই পেরে উঠিনি। এক ধাক্কায়

দরজা খুলে ফেলেছিলো আর আমাকে ধরে ফেললো। আমি তখন চোখের জল ফেলতে ফেলতে ভাইয়ার পায়ে পড়ে গেলাম। কিন্তু সে আমাকে ছাড় দেয়নি। পাঁজাকোলা করে ওখান থেকে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে এসে ঘরের মেঝেতে আমাকে ফেলে দেয় 😭😭..... 

ঝুমঝুম বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে তিথির চোখ থেকে। 

তিথি কাঁদছে। ভীষণ রকম কাঁদছে। আমিও ওর সাথে কেঁদে উঠলাম। নিঃশব্দে নিভৃতে। তারপর এক টানে তিথিকে আমার বুকের সাথে এনে জড়িয়ে ধরলাম। তিথি আমার বুকের ভেতর ছোট্ট একটা চুড়ই ছানার মতো গুটিশুটি মেরে রইলো। ওর চোখের জলে আমার বুক ভিজে উঠেছে। আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম............ 

ওর মুখ থেকে এমন কঠিন আবদার দুটো শুনে আমার ভেতরটা কেমন থমকে গেছে। আমি কি করবো 

কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার পেটের সন্তানটাকে কি করে হুমকির মুখে ফেলে দিবো! অথবা আমার বোন।। আমার বোনকে কিভাবে এই নষ্টের হাতে তুলে দিবো? এর চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। কিন্তু আমি মরে গেলে আমার বোনটার কি হবে? আর আমার পেটে থেকে যে পৃথিবী না দেখা এক নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু হবে। স্বপ্নীল মৃদু হেসে বললো.........


স্বপ্নীলঃ এতো না ভেবে চুপ করে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি জানি তোমার রাজি না হয়ে কোনো 

উপায় নেই।


ঘৃণায় আমার শরীর বারবার গুলিয়ে আসছে।। ওর হাত থেকে বাঁচার সবগুলো পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি এখন কি করবো? আম্মার কাছে বলতে গেলে ও যদি ছবিগুলো প্রকাশ করে দেয় তখন কি হবে? রাত বাড়ছে! অন্ধকার এবং বিষাদ মাখা রাত। সেই রাতে একটা রাত জাগা পাখি খানিকটা পর পর কি মায়াবী গলায় যে ডাকছে৷ ওর ডাকেও কান্না মাখা। আচ্ছা 

এই পাখিটারও কি আমার মতো দুঃখ আছে? ওর সাথীটাও কি ওর সাথে প্রতারণা করেছে? না করার 

তো কথা না।। পৃথীবিতে শুধু মাত্র মানুষেরাই প্রতারক হয়। অন্য কোনো প্রাণী প্রতারণা করে না। 


তিন দিন পরের কথা.......


আম্মা গেছেন সেতু কাকার মায়ের কুলখানিতে। আমার শরীর খুবই খারাপ, তাই বিছানায় শুয়ে আছি। এই কয়দিন টানা কান্নাকাটি করায় মাথা ধরেছে। এই মাথা ব্যাথা নিয়ে বিছানা থেকে উঠার বিন্দু মাত্র শক্তি 

আমার নেই। তাই তিথিকে বললাম দুপুরের জন্য চুলায় ভাত রান্না করতে। তিথি গেলো রান্না ঘরে৷ 


রান্না ঘরে হঠাৎ কি যেনো একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ হলো৷ তারপর গোঙরানোর। তারপর নিশ্চুপ। একেবারে কোনো শব্দ নেই। হঠাৎ করেই এই শব্দ শুনে আমার ভেতরটা হুহু করে কেঁপে উঠলো। আমি তখন আমার গলার সমস্ত আওয়াজ দিয়ে ডাকলাম তিথিকে...........


আমিঃ তিথি, এই তিথি।


তিথি আমার ডাকে সাড়া দিলো না৷। ভয়ে তখন আমার ভেতরটা স্তব্ধ হয়ে গেলো। বিছানা থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে খাটের কোনায় এমন ব্যাথা পেলাম! মাথায় একটা হাত দিয়ে বিছানা থেকে নামতেই মনে হচ্ছে আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছি। হাঁটতে সামনে পা বাড়িয়েছি কিন্তু পা মোটেও চলছে না। পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। সারা শরীর গুলিয়ে বমি আসতে চাইছে। কিন্তু বমি হচ্ছে না। আমি এখন কিভাবে রান্নাঘর পর্যন্ত হেঁটে যাবো।আমি চিৎকার করে আবার ডাকলাম তিথিকে.........


আমিঃ তিথি, তিথি বোন আমার তোর কি হয়েছে? তুই এখানে নেই? শব্দ হলো কিসের? পথের ওই কুকুরটা কি তোকে ধরে ফেলেছে?


কিন্তু আমার চিৎকার আমার মুখ থেকে বের হয়ে দূরে আর গেলো না। আমি ক্লান্ত হয়ে বিছানায় হেলে পড়লাম। আমার শরীর ঘামছে! প্রচন্ড রকম ঘামছে। কি করবো এখন আমি? মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে শুরু করলাম। আল্লাহ গো তুমি আমার বোনকে রক্ষা করো। তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আমাদের। 


আমি কান্না করছি।।কান্না করতে করতে আবার বিছানা থেকে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে নিজেকে টেনে তুললাম। তারপর নিজের সবটুকু শক্তি সঞ্চার করে রান্না ঘরের দরজার কাছে গেলাম। রান্না ঘরে গিয়ে যে ভয়ংকর দৃশ্য দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।। স্বপ্নীল দুই ভাগ হয়ে পড়ে আছে রান্না ঘরের মেঝেতে। কাঁধ থেকে নীচের সবটা দেহ আলাদা হয়ে আছে মাথা থেকে। আর তিথি দেয়ালের এক কোনায় হেলান দিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে। আর খুলে ফেলা জামাটা বুকে জড়িয়ে ধরে আছে। ওর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। এবার আমার হড়হড় করে বমি শুরু হলো৷ বমি করতে করতে আমার নাভীতে এক হাত চেপে ধরে ওপাশে তাকাতেই দেখি আম্মা দাঁড়িয়ে আছেন। উনার হাতে তরকারি কাটার বঁঁটি।। সেই বঁটি থেকে টুপটুপ করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে। আর তিনি তখনও রাগে ফুসছেন বিষাক্ত নাগিনীর মতো৷ 


আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। তারপর আম্মা হেঁটে হেঁটে আসলেন আমার কাছে। তারপর হাতের বঁটিটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার গালে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন.......


শ্বাশুড়ি আম্মাঃ মেয়ে মানুষ হইলেই ভীতু হওয়া লাগবো আর স্বামীর সবকিছু সহ্য করে স্বামীর দোষ গোপন রাখা লাগবো এইটা কোন শাস্ত্রের কথা। যেই পুরুষ বইনের মতো একটা মেয়ের শরীরে হাত লাগায়, জোর করে ইজ্জত মারে সেই পুরুষ আসলে পুরুষ না৷ সে হইলো কাপুরুষ। নষ্ট পুরুষ। এই কাপুরুষ আমার 

ছেলে ভাবতেই আমার ঘৃণা লাগছে। আমি যদি ওর জন্মের সময় জানতাম আমার সন্তান বড় হয়ে মা জাতীকে ধর্ষন করবে, ইজ্জত নষ্ট করবে, তাহলে আমি ওরে জন্মের পরেই গলা টিপে মারতাম।


আমি কাঁদছি! প্রচন্ড ভাবে কাঁদছি। একজন আদর্শবান মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদছি। আম্মা তখন আমার কাছ থেকে গিয়ে তিথিকে টেনে তুললেন। তারপর তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললেন........


শ্বাশুড়ি আম্মাঃ তোরা ভয় পাইয়া, লজ্জা পাইয়া আমার কাছে সবকিছু লুকাইছিস? কেনো লুকাইছিস মা? আমি তো এমনিতেই সবকিছু জাইনা গেছি। সন্তানেরা ভাবে মা বুঝি কিছুই টের পায় না। কিন্তু সন্তানেরা 

এটা জানে না যে আন্ধার রাইতের বেলায় সন্তান যখন ঘুমাই থাকে তখন তার গায়ে একটা মশা বসলেও 

সেই মা টের পাইয়া যায়। ঘুমে থাকলেও মা লাফ 

মাইরা জাইগা উঠে। তারপর মশা মাইরা সন্তানের 

গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। আমি মা! তোদের দুজনের মা। আমার চোখ কেমন করে এড়িয়ে যাবি তোরা? তোদের সব কথাই তো আমি শুনছি। তোরা ফিসফিস কইরা কইছিস কিন্তু সেই কথা আমার কানে ঠিকই বাজছে। আর আমি তখন থেকেই সুযোগের অপেক্ষা করছি। এক নারীর সম্মান রক্ষা করার জন্য আরেক নারী তার পাপী সন্তানরে খুন করতে পারে এই রকম মন মানসিকতা প্রত্যেক নারীর হওয়া উচিৎ। 


আমি জানি নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া ভালো না। 

কিন্তু যেই দেশের আইন-বিচারের উপর নারীর ভরসা নাই! সেই আইন-বিচারের জন্য অপেক্ষা কইরা আমি আমার দুই মেয়ে আর এক নাতীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। এইডা ঠিক আমি খুন করছি, অপরাধ করছি। এর জন্য পুলিশ আমারে জেলখানায় নিবো। আমার ফাঁসি হইবো। কিন্তু এই ফাঁসির জন্য আমার কোনো দুঃখ নাই। আমি তো পৃথিবীর মাঝে একটা নজির দেখাইয়া গেলাম। নারী জাতির বুকে সাহস জাগাইয়া গেলাম। সব নারী তো আর আমার কথা শুনবো না। শুনতে পাইবি তোরা দুইজন৷ শোন?? শুনে রাখ আমার দুইডা কথা। (১) নারী হয়ে জন্ম নেওয়া কোনো পাপ না। পাপ হইলো কারো অত্যাচার সহ্য করা। এখন থেকে কোনো কুলাঙ্গার পুরুষ যদি তোদের দিকে হাত বাড়ায় তাহলে সেই হাত বঁটি দিয়া কাইটা দিবি। চিৎকার কইরা মানুষের কাছে জানান দিবি, এই শালা গুন্ডা,, লম্পট। মা জাতির দিকে হাত বাড়ায়। 

(২) পুরুষ মানুষ ভালোবাসলে তার জন্য জীবন দিয়ে দিবি। কিন্তু অত্যাচার করলে মুখ বুঝে সহ্য করবি না। সরাসরি আইনের কাছে যাবি। আইন যদি তোরে আশ্রয় না দেয় তাহলে নিজের আইন নিজে তৈরি কইরা নিবি।

মনে রাখবি, যেই দেশের আইন তার নাগরিকের কাজে লাগে না সেই আইন সচল না অচল। এই আইনের পাছায় লাথি দিয়া সচল করতে হইবো৷ কি পারবি না?


আমি আর তিথি আম্মার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম চাতক পাখির মতো। যেনো তার মুখ দেখার জন্য আমরা কত যুগ যুগ ধরে ব্যাকুল হয়ে আছি। চিরদিন তাকিয়ে থেকেও যেনো এ দেখা শেষ হবে না৷ কিন্তু নির্মম ভাগ্য! একটু পরেই তো আম্মা আমাদের সামনে আর থাকবে না৷ থাকবে অন্ধকার কারাগারের বদ্ধ কুঠুরির ভেতর। কিন্তু এমনও তো হতে পারে অন্ধকার জেলখানা আলোকিত করে আমাদের মা আমাদের কাছে ফিরে আসবে। তারপর সে তার সেই আলোর জ্যাতি দিয়ে সারা দেশ আর সারা পৃথিবী আলোকিত করে তুলবে। আমার মনে হয় সত্যি সত্যি পারবে। 


যারা সত্য এবং সুন্দরের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করে 

                 তারা কোনোদিনও ব্যার্থ হয় না। 

      তারা কোনোদিনও পৃথিবী থেকে মুছে যায় না৷ 


বন্ধ হোক ধর্ষণ। ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি হোক মৃত্যুদন্ড।

       ধর্ষক কারো সন্তান, ভাই, পিতা হতে পারে না। 

                      ধর্ষকের কোনো ছাড় নেই।


 অবশ্যই ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন। নিজে স্বাধীন

   ভাবে বাঁচুন, ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অন্যকে

                       স্বাধীন ভাবে বাঁচতে দিন। 


-------------------->>সমাপ্ত<<----------------

সব ধরনের পরকিয়া প্রেমের গল্প পড়ুন।