স্বামী স্ত্রী ঝগড়া | স্বামী স্ত্রীর আদর ভালোবাসা

 স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প

আমার স্ত্রীর সাথে প্রতিদিন আমি ঝগড়া করি।ঝগড়ার প্রধান কারণ টা অবশ্য আমি নই।আমার অফিসের সাজ্জাদ সাহেব।আমার কলিগ হন উনি।প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার পর উনার কথা গুলো শুনে আমি বিরক্ত হয়ে যাই,এবং ফল স্বরুপ বাসায় এসে আমার স্ত্রীর সাথে প্রতিদিন ঝগড়া করি যে সে বাসায় কোন কাজ করে না।


প্রতিদিন অফিসে সাজ্জাদ সাহেব এসেই উনার ভাষণ ভাণ্ডার থেকে বের করেন ভাষণ। বিশ্বাস করুন উনাকে যদি কখনো কোন নারী বাদী কেউ পায় আস্ত রাখবে না।

সাজ্জাদ সাহেবের কথার ব্যাপক প্রভাব পড়ে আমার উপর।প্রতিদিন অফিসে টেবিলের উপর ফাইল গুলো আসতে না আসতেই সাজ্জাদ সাহেব শুরু করে দেন উনার ভাষণ।ফাইল টি হাতে নিয়ে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

"শুনেন রাজ সাহেব এই মেয়ে গুলোর না খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই। সারাদিন বাসায় থাকে আর শুধু রান্না টা করে।আর কিছুই করে না।যা কাজ সব হলো আমাদের ছেলেদের।প্রতিদিন সকালে দু মাইল দূরে এসে এই ফাইল গুলো(টেবিলে ফাইল বাড়ি দিয়ে)রেডি করতে হয়।আর উনারা মাস শেষে বলে, আমাকে এইটা কিনে দিবে প্লিজ,ঐটা না নষ্ট হয়ে গেছে।আর আমরা ছেলেরা বৌয়ের সেই মিষ্টি প্লিজের কাছে হেরে যাই।"

এত টুকু নিয়মিত করে বলেন সাজ্জাদ সাহেব। 

দুপুরে লাঞ্চ টাইমেও উনি খাবার খেতে খেতে বলেন,"কী যা তা বানায়।আসলে তাদের এই সামান্য খাবার টাও রেডি করার সময় নেই।এই এক ভারতীয় বাংলা সিরিয়াল আছে ঐ টা দেখায় মন থাকে তাদের এই কাজ গুলো করার সময় কই"

.

আজ ও প্রতিদিনের মতো করে সাজ্জাদ সাহেব উনার ভাষণ গুলো আমাকে শুনালেন।আমি অফিস শেষে সোজা বাসায় গেলাম।বাসায় গিয়ে দেখি নাজিয়াত টিভি দেখতেছে।আমার আজ আর কেনো জানি এটা সহ্য হলো। সাজ্জাদ সাহেবের কথা গুলো আমার কানে বাজতে লাগলো।সাজ্জাদ সাহেব ই ঠিক বলেছিলো। এই মেয়ে গুলো কোনো কাজ করে না।

আমি উচ্চস্বরে নাজিয়াত কে বললাম,


---এই যে মহারানি!!আমি এসেছি দেখেছো।

--হুম দেখলাম।

---তো এখন কি করবা?

--কি করবো মানে।কিছু করতে হবে!(টিভির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে)

---নাহ্ নাহ্ কিছু করতে হবে কেনো!এখন তো তোমার টিভি দেখার সময়।

--তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো?(আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে)

---সাজ্জাদ সাহেব না ঠিকই বলে তোমরা মেয়েদের কোন কাজ নেই।সারাদিন খাও এবং টিভি দেখো।

--এই কি বললা তুমি!(নাজিয়াত অবাক দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে)

---ঠিকই তো বলেছি।

--ঠিক বলেছো।আমরা খাই আর টিভি দেখি।আমাদের কতো সুখ তাই না?

---হ্যা,সুখ ই তো।আরাম আরাম।

--ওহো আমার প্রিয় স্বামী। আমাদের আরাম সহ্য হচ্ছে না।এরকম আরাম পেতে চাও।

আমি হাসি মুখে, 

---হ্যাঁ,হ্যাঁ কেনো চাইবো না অবশ্যই চাই।

--তাহলে চলে এসো আমার জায়গায়। 

---তোমার জায়গায় চলে আসবো মানে?

-- আগামীকাল তুমি অফিস করবে না।আমার মতো ঘরে থাকবে।আগামীকাল আমি কোন কাজ করবো না।মেয়ে হয়ে কাটাও এক দিন। সংসার সামলাও। দেখো আমার জায়গায় কতো সুখ।চুক্তি ম'ঞ্জু'র। 

---হ্যাঁ,হ্যাঁ অবশ্যই ম'ঞ্জু'র।এর থেকে ভালো চুক্তি হতে পারে না।

--আচ্ছা তাহলে কাল তোমার কাজ করার দিন।

.

আমি রাতে হাসি খুশি মনে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।আহ্ আগামীকাল একদিন আরাম করবো।সকাল ছয়টার দিকে প্রচন্ড রকমের ডাকাডাকি শুরু হলো।চোখ মেলে দেখি নাজিয়াত ডাকতেছে। 

---এই কি হয়েছে। সকাল সকাল ডাকতেছো কেনো?

--ওমা, ভুলে গেছো। আজ না তোমার আমার জায়গায় আসার কথা।

---হ্যা,তো কি হইছে?

--এমা,তুমি এখন কাজ করবা না।

ঘড়ির কাঁটা দেখে, 

---মাত্র ছয়টা বাজতেছে।আর এখন কাজ করতে বলতেছো?

--তুমি অফিসে সকাল আটটায় যাও, এবং আমি সকাল ছয়টায় উঠে সব কাজ করি।তাই তোমাকে ও করতে হবে।


চুক্তির জন্য সাত সকালে ঘুম থেকে উঠলাম।এই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠা টা বেশ কষ্টের। একদম মাথাটা আমার ঘুরাচ্ছে।প্রতিদিন আমি সাড়ে সাতটায় উঠে আটটায় রওনা হই তাই আজ ঠেলা বুঝতেছি।


বাথরুমে গিয়ে আমার বমি আসতে লাগলো।পুরো বাথরুম টা নোং'রা হয়ে গেছে।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি নাজিয়াত দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু বলার আগেই সে বললো,

--প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুম পরিষ্কার পাও তাইনা।নেও এবার পুরো বাথরুম পরিষ্কার করো।

বাধ্য হয়ে বাথরুম পরিষ্কার করে হাপাতে হাপাতে চেয়ারে এসে বসতেই নাজিয়াত আবার চলে এলো।

--এই বসে আছো কেনো। যাও ফ্রিজে ডিম রাখা আছে ভাজি করতে আসো।আর গোসলের জন্য গরম পানি বসাও।


রান্নাঘরে গিয়ে ডিম টা ভাঙতে গিয়ে ফুস করে ডিম মেঝেতে পড়ে গেলো।পানি গরম করতে বসিয়ে পেছনে ফিরতেই দেখি নাজিয়াত আমাকে ডিম পরিষ্কার করতে বলছে। অনেক ত্যাগের পর আমি নাস্তা রেডি করে টেবিলে এনে রাখলাম।


নাজিয়াত বসে আছে।আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।তার হাসির কারণ টা আমি বুঝতে পারছি। 

নাস্তা করার পর রুমে এসে দেখি পুরো রুম টা কেমন অগুছালো।একে একে পুরো রুম টা পরিষ্কার করলাম।রুম পরিষ্কার করতে করতে আমার মনে হচ্ছিলো দম বেরিয়ে যাবে।এক রুম পরিষ্কার করার পর নাজিয়াত বললো,

--কি হাপিয়ে গেলে,এখনো আরো দুইটা রুম বাকি আছে।কাপড় ও ধুতে হবে।রান্না ও করতে হবে। 

এই কথাগুলো শুনে আমার কাছে বিষের মতো মনে হলো।একে একে আরো দুইটা রুম পরিষ্কার করলাম।

এই বার কাপড় ধোয়ার পালা।

.

বাথরুমে গিয়ে দেখি এক গাদা কাপড় পড়ে আছে। আমি অসহায় দৃষ্টি দিয়ে নাজিয়াতের দিকে তাকালাম। 

---এতো কাপড় ধোয়া লাগবে?

--হুম এতো কাপড় ধোয়া লাগবে।

কাপড় ধোয়ার পর এসে দেখি এগারো টা বেজে গেছে।কীভাবে যে সময় চলে গেলো টের ই পেলাম না।আমার বেশ ক্লান্তি লাগছে। বিছানায় এসে গা এলাতেই দেখি মুখের সামনে নাজিয়ার মুখ। আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,

--রান্না টা কে করবে শুনি?

---রান্না।

--হুম রান্না।

---আমি রান্না পারি না।

--পারো না পারতে হবে।এসো আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।


নিজের সাথে এক প্রকার লড়াই করে আমি রান্না ঘরে আসলাম।পেয়াজ কাটতে গিয়ে আমার দু চোখ বেয়ে শোকের অশ্রু বের হতে লাগলো।মেয়েরা এটা কিভাবে করে।

কড়াইয়ে মাছ ভাজার জন্য ঢালতেই গরম তেলের ছিটা এসে আমার হাত পড়লো।সাথে সাথেই পেছনে সরে গেলাম আমি।হাতে গরম তেল পড়ে ফুসকা উঠে গেছে।নাজিয়াত আমাকে গিয়ে বিশ্রামে করতে বললো।

.

বিকেলের দিকে ঘুমটা ভাঙলো।চোখ মেলে দেখি নাজিয়াত পাশে বসেই টিভি দেখছে।আমাকে উঠতে দেখে,

--কি বেপার পারলে না তো একদিনের জন্য ও ঘর সামলাতে। 

---সরি, আমি বুঝতে পেরেছি।আসলে তোমাদের কাজের কাছে আমাদের কাজ টা কিছুই না।

--হুম, যাক বহু পরে হলেও বুঝেছো এটাই শান্তি।


পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে সাজ্জাদ সাহেব এসে উনার ভাষণ শুরু করার আগেই,

---শুনুন সাজ্জাদ সাহেব,মেয়েরা কোন কাজ করে না সারাদিন খালি খায় আর টিভি দেখে এটা যদি ভেবে থাকেন তাহলে মেয়ে হয়ে একদিন সংসার করে দেখান।কতো ধানে কতো চাল বুঝে যাবেন।

আমি ভাবিকে বলে রাখবো আগামীকাল যেনো আপনাকে সুযোগ দেয় সংসার সামলানোর। 


সাজ্জাদ সাহেব কোন কথা বললেন আর। আমি মনে মনে সাজ্জাদ সাহবের আগামীকাল এর পরিস্থিতি ভেবে মুচকি হাসলাম।


সমাপ্ত।


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।