শিক্ষামূলক উপদেশ | শিক্ষামূলক নীতি বাক্য

শিক্ষনীয় গল্প ও শিক্ষামূলক ঘটনা

শিক্ষনীয় গল্প ও শিক্ষামূলক ঘটনা

 সুপ্তির সাথে আমার বিয়েটা ভে/ঙে যায় আমার কয়েকটা কথার কারণে। আমি সুপ্তিকে বলেছিলাম, 


-- আমি তোমার ফেইসবুক আইডিটা ভালো করে দেখেছি। সেখানে দেখলাম ফ্রেন্ডের সাথে লেট-নাইট পার্টি করার অনেক ছবি। ট্যুরে গিয়েছো তারও অনেক ছবি পোস্ট করা। তুমি আধুনিক মেয়ে তুমি এইগুলো করতেই পারো এটা স্বাভাবিক কিন্তু বিয়ের পর আমি তোমার ছেলেবন্ধুদের সাথে তোমায় এইগুলো করতে দিবো না। তোমার যদি ইচ্ছে হয় বন্ধুরা মিলে লেট-নাইট পার্টি দিবে কিংবা বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যাবে তখন আমাকেও সাথে নিতে হবে। কারণ আমি আমার বউকে একা ছাড়বো না।




সুপ্তি আমার কথা শুনে রেগে বললো,


-" ছিঃ তুমি এত ছোটলোক? তোমার মত লো মেন্টালিটির মানুষকে আমি কখনোই বিয়ে করবো না। যে কিনা মেয়েদের স্বাধীনতায় হ/স্ত/ক্ষে/প করে। 


একটা ছেলে যদি মাঝরাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারে তাহলে একটা মেয়ে কেন পারবে না? একটা ছেলে যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরার অধিকার থাকে তাহলে একটা মেয়েরও সেই অধিকার আছে। 




আমি তখন মুচকি হেসে সুপ্তিকে বললাম, 


-- যে স্বাধীনতা দিলে আমার বউয়ের ক্ষ/তি হবে সেই স্বাধীনতাটা না হয় আমি আমার বউকে দিলাম না। আর সম অধিকার মানে এই না যে একটা পুরুষ যা করবে তা একটা নারীও করতে পারবে। তুমি যে অধিকারের কথাগুলো বললে৷ সেই অধিকার গুলো কোন সুস্থ আর বুদ্ধিমান মেয়ে কখনোই চাইবে না




আমার কথাগুলো সুপ্তি মানতে পারি নি আর যার ফলে আমাদের বিয়েটাও হয় নি...




৫ মাস পর.....




আমার স্ত্রী শ্রাবণী দুইদিন ধরে অসুস্থ। তাই অফিস থেকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়েছি। রান্নাবান্না করে টেবিলে খাবার দিয়ে কতক্ষণ ধরে শ্রাবণীকে ডাকছি কিন্তু ওর আসার নাম নেই। রুমে এসে দেখি শ্রাবণী একমনে খবরের কাগজ পড়ছে। আমি তখন ওকে বললাম,


--কি হলো? কতক্ষণ ধরে ডাকছি তুমি আসছো না যে?




শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,


-" একটা নিউজ পরছিলাম। থার্টি-ফাস্ট নাইটে একটা মেয়ে নিজের বন্ধুদের দ্বারা ধ/র্ষি/ত হলো। মেয়েটা প্রথম ছেলে বন্ধুদের সাথে মদ খেয়েছে। মদ খেয়ে যখন নেশা হয়ে যায় তখন ওর ছেলে বন্ধুরা ওর সাথে এই নোং/রা কাজটা করেছে"




শ্রাবণী খবরের কাগজটা রেখে খেতে চলে যায় আর আমি তখন খবরের

 কাগজে সুপ্তির ছবিটা একমনে দেখছিলাম....

শিক্ষা মূলক স্ট্যাটাস

অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ খেয়াল করি আমাদের পাশের বাসায় থাকে আফজাল সাহেব আর উনার স্ত্রী আমাদের আরেক প্রতিবেশী রহমান চাচাকে ব/কা/ঝ/কা করছে। আফজাল সাহেবের স্ত্রী রহমান চাচাকে রেগে গিয়ে বলছে,

-"আপনি নাকি আমার ছেলেকে রাস্তার এতগুলো মানুষের সামনে থা/প্প/ড় মে/রে/ছে/ন?"


রহমান চাচা তখন বললো,

-"থা/প্প/ড় তো আর এমনি এমনি দেই নি। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম তোমাদের ছেলে একজন মুরুব্বি রিকশাওয়ালার কলার চেপে ধরেছিলো। ক্লাস টেনে পড়ে একটা বাচ্চা ছেলে একজন বয়স্ক মানুষের কলার চেপ ধরেছে। এটা তো অনেক বড় বেয়াদবি। তাই একটু শাসন করেছিলাম "


আফজাল সাহেব তখন রেগে গিয়ে বললো,

-"আমার ছেলেকে শাসন করার আপনি কে? আর কলার তো এমনি এমনি চেপে ধরে নি। ঐ রিকশাওয়ালা রিকশা আমার ছেলের শরীরে লাগিয়ে দিয়েছিলো তাই তো কলার চেপে ধরেছিলো।"


রহমান চাচা মাথা নিচু করে বললো,

-" তাই বলে নিজের বাবার চেয়েও বড় বয়স্ক লোকের কলার চেপে ধরবে?"


আফজাল সাহেব তখন আরো রেগে গিয়ে বললো,

-" আমার ছেলেকে আমি জন্ম দিয়েছি তাই শাসন করার অধিকার একমাত্র আমার। আপনার কোনো মাতব্বরি করতে হবে না "


এইকথা বলে আফজাল সাহেব আর উনার স্ত্রী চলে গেলো। আমি তখন রহমান চাচার কাছে গিয়ে মুচকি হেসে বললাম,

--ছোটবেলায় সালাম না দেওয়ার কারণে আমার এক প্রতিবেশী দাদা আমায় থাপ্পড় মে/রেছিলো। আমি দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে মাকে গিয়ে বলেছিলাম, সালাম না দেওয়ার জন্য দাদা আমায় মে/রেছে। মা আমার কথা শুনে আমার গালে আরো ৩টা থা/প্প/ড় মে/রে বলেছিলো, "তুই সালাম দিস নি কেন?"

এরপর থেকে দাদাকে সালাম দেওয়ার কথা কখনোই ভুলতাম না


একসময় সন্তান ভুল করলে বড়রা যখন শাসন করতো অবিভাবকরা তখন খুশি হতো। আর বর্তমান যুগে সন্তান হাজার ভুল করলেও শাসন করলে অবিভাবকদের কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়


আমার কথা শুনে রহমান চাচা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

-"ঠিক বলেছিস রে বাবা, যুগটা পাল্টে গেছে"....


এই ঘটনার বছর খানিক পর আমি বিকালের দিকে গলির মোড়ে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করি আফজাল সাহেব আর উনার স্ত্রী রিকশা দিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছে। আর আফজাল সাহেবের মাথায় ব্যান্ডেজ পেছানো।


আমি রিকশা থাকিয়ে আফজাল সাহেবকে বললাম,

--আরে কি হয়েছে আপনার? কপালে ব্যান্ডেজ কেন?


আফজাল সাহেবের স্ত্রী তখন বললো,

-"তেমন কিছু না বাথরুমে মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলো" 


উনারা চলে গেলে আমি যখন দোকানদারকে চায়ের বিলের জন্য টাকাটা দেই তখন দোকানদার লোকটা টাকাটা হাতে নিয়ে বললো,

-" মিথ্যা কথা বলছে। বাথরুমে গিয়ে কপাল ফাঁটে নাই। উনার ছেলে তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আমার দোকানের পিছনে প্রায় সময় ছাইপাঁশ খায়। আজকে সকালেও খাচ্ছিলো। বাপ তখন দেখে ফেলে। পরে বাপ ছেলেরে মা/র/ধ/র করলে ছেলেও বাপের মাথায় ভা/ড়ি দিয়ে কপাল ফাঁ/টায়"  


দোকানদারের কথা শুনে আমি বিড়বিড় করে বললাম,

আফজাল সাহেবের কপাল আজ না অনেক আগেই ফে/টেছে.... 

শিক্ষামূলক গল্প

ফাইলটা হাতে নিয়ে মামুন সাহেব আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তখন উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, 

--আজকে আবার কি হলো?


মামুন সাহেব মুচকি হেঁসে বললো,

- বউকে নিয়ে আজকেও একটু বের হবো। বুঝতেই পারছেন নতুন বিয়ে করেছি। আপনি ফাইলটা একটু দেখে স্যারের কাছে দিয়েন 


আমি ফাইলটা হাতে নিয়ে মামুন সাহেবকে বললাম,

-- সংসার জীবনে ভালোবাসা হলো তরকারিতে লবণ দেওয়ার মত। তরকারিতে কম লবণ হলে যেমন খাওয়া যায় না তেমনি তরকারিতে বেশি লবণ হলেও খাওয়া যায় না। লবণ সবসময় পরিমাণ মত দিতে হয়। তেমনি ভালোবাসাও পরিমাণ মত দিতে হয়। অতিরিক্ত ভালোবাসা ভালো না। আজ নিজের কাজ ফেলে বউকে প্রচুর সময় দিচ্ছেন। এতে কিন্তু বউয়ের অভ্যাস হয়ে যাবে। পরবর্তীতে যখন নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবেন, বউকে আগের মত সময় দিতে পারবেন না, তখন কিন্তু বউ আপনায় ভুল বুঝবে। সন্দেহের চোখে দেখবে। বউ মনে মনে ভাববে, আগে আমায় সময় দিতো এখন কেন সময় দেয় না। নিশ্চয়ই অন্য কাউকে সময় দেয়।  


আমার কথা শুনে মামুন সাহেব কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,

-"কাজটা করতে পারবেন না সোজাসাপ্টা বলে দিলেই হয়। এত লেকচার দেওয়ার কি আছে?"


আমি মুচকি হেসে বললাম,

-- আমি কাজটা করে দিবো আপনি যান...


সময়ের পরিক্র/মায় অনেক দিন পার হয়ে গেলো। প্রোমোশনের পিছনে আমাদের মত মামুন সাহবেও ছুটলেন। বসকে খুশি করার জন্য সবাই সবার কাছে ব্যস্ত হয়ে গেলো


 রাত ১১টার দিকে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একটা মেয়ে বললো,

-" আপনি পিয়াস ভাইয়া বলছেন?"

আমি উত্তর দিলাম,

--জ্বি

তখন মেয়েটা বললো,

-"ভাইয়া, আমি অর্পিতা আপনার কলিগ মামুনের স্ত্রী। মামুনের মুখে আপনার কথা অনেক শুনেছি। তাই একটা কথা জানার জন্য মামুনের ফোন থেকে গোপনে আপনার নাম্বারটা নিয়েছি। আমি আপনার ছোট বোনের মত। আপনি সত্যি করে বলবেন তো মামুন কি অফিসের কোন মেয়ের সাথে রিলেশন করে?"


আমি মেয়েটার কথা শুনে যা বুঝার বুঝে গিয়েছিলাম। আমি মেয়েটাকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলাম মামুন সাহেব অফিসে কতটা ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আমার মনে হলো আমার সব কথা মেয়েটা বিশ্বাস করছে না...


পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে খেয়াল করি মামুন সাহেব মনমরা হয়ে চুপচাপ বসে আছে। আমি উনার সামনে গিয়ে বললাম,

-- টেবিলে রাখা চা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে


মামুন সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

-"আপনি সেদিন ঠিক কথা বলেছিলেন। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না৷ বউকে মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা দিয়ে ফেলেছিলাম। এখন যদি কোন কারণে সময় দিতে না পারি কিংবা কোন কারণে রাগ দেখায়। বউ সেটা সহ্য করতে পারে না। সারাক্ষণ এখন আমায় সন্দেহের চোখে দেখে। আমার পিছনে ওর ভাইকে লাগিয়েছে। আমি যেখানে যাই না কেন সালা আমায় নজরদারি করে। বউয়ের ধারণা আমি অন্য একটা রিলেশন করি। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন নিশ্চয়ই সালা বাবু দাঁড়িয়ে আছে অফিসের সামনে"


আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ১৮-১৯ বছরের একটা ছেলে মাথায় গোল টুপি আর চোখে কালো সানগ্লাস লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা নিশ্চয়ই এই কাছে আনন্দ পাচ্ছে আর নিজেকে গো/য়ে/ন্দা ভাবছে


আমি কিছু না বলে চুপচাপ নিজের কাজে মন দিলাম আর মাঝেমধ্যে আড়চোখে মামুন সাহেবকে দেখতে লাগলাম, বেচারা দুইগালে হাতদিয়ে বসে আছে..... 


----

-------

আমরা সবাই মনে করি আমারদের এই জগৎ সংসার খুব জটিল। কিন্তু এটা আমাদের ভুল ধারণা। আমাদের এই জগৎ সংসার একদম সহজ। কিন্তু আমরা নিজেরাই এই সহজ জিনিসটাকে জটিল করে ফেলি।


ভালো কাজের ফলাফল আল্লাহ দুনিয়ায় না দিলেও মন্দ কাজের ফলাফল আল্লাহ দুনিয়ায় কিছুটা হলেও দেয়।

তোমার আজকের কাজের উপরে নির্ভর করে তোমার আগামী দিনের ফলাফল...


ফলাফল 

লেখক-আবুল_বাশার_পিয়াস


শিক্ষামূলক আরো গল্প পড়ুন।