স্বামীর সংসার
একটা সময়ের পর, অধিকাংশ নারী স্বামীর সাথে সংসার করে না। স্বামীর ঘরে সংসার করে।
কথাটা শুনে হাসি এলেও এইটা কি পরিমাণ সত্য আর নিত্য তা আমরা নিজেরাও জানি না। খুব বেশি নিত্যতায় মিশে আছে বলে আলাদা করে চোখেও পড়ে না৷
উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্মবিত্ত, সদ্য বিবাহিত, মধ্যবয়স্ক বা শেষ বয়স ব্যাপার না। এইটা ছড়িয়ে আছে সব খানে।
সংসার টা একটা সময়ের পর সেই নারীর হয়ে যায়, যে নড়বড়ে কাপাঁ পায়ে আসে সে ঘরে।
জা, দেবর, ননদ, শ্বশুর, শাশুড়ী, আত্মীয়, সন্তান সবার সাথে মাখামাখি সর্ম্পক থাকলেও থাকে না সে একটা মানুষের সাথে।
অমুকের বউ, তমুকের বউ হয়েই রয়ে যায় শুধু।
এই নামটার সাথেই পার হয়ে যায় গোটা একটা জীবন। গোটা একটা শতাব্দীর সংসার।
দায়িত্ব সমানে পালন করে দুজনেই।
কিন্তু নেই কারো কোন টানে আর অস্তিত্ব থাকে না অনুভূতি তে। পুরো দিনে প্রয়োজন ছাড়া, অপ্রয়োজনে তাদের কথা বলতে দেখা যায় না। দেখা যায় না পাশে বসে নতুন পুরানো কথা বলতে। তাদের আলাদা কোন কথা থাকে না। আলাদা কোন সময় থাকে না। কেউ কারো প্রশংসা করে না। তাকানো হয় না। যেন এমনটায় তো স্বাভাবিক।
অনেকের তো বিছানা আলাদা হয়ে যায় অনেক বছর।
আমাদের দাদু -ঠাকুমা, কাকা-কাকী, মামা-মামী, হয়ত মা-বাবাও, এমন অনেকেই দেখি আমরা। জানি। তবে এই নিয়ে আলাদা কোন চিন্তা ভাবনা নেই কারো সময় নেই ভাবার। আলাদা কোন অনুভূতি ও হওয়ার কথা মাথায় আসে সে নারী বা পুরুষ টার জন্য।
অনেকের জন্য কেমন যেন স্বস্তির ব্যাপার হয়ে যায় এইটা।
সন্তানদের আলাদা কোন অভিব্যক্তি থাকে না এই নিয়ে। যেন চিরচায়িত স্বাভাবিক সর্ম্পক মা বাবার এইটা৷
একটা সময়ের পর অধিকাংশ নারী স্বামীর সাথে সংসার করে না। স্বামীর ঘরে সংসার পাতে।
সব দায়িত্ব, কি সুনিপুণ হয়, তার কথা ছাড়া নড়ে না একটা চামচ ও। অধিকার বোধ তীব্র হয় প্রতিটা কাজে তার।
কিন্তু সে কোন আগ্রহ বোধ দেখায় না তার উপর অধিকার ফলানো, যে অমুকের আর তমুকের বউ বলে সে স্বীকৃত।
ব্যাপার টা আপনি চোখ মেলে দেখলে প্রতিটি পরিবারে একটা দুটো পেয়ে যাবেন। সত্যিই পাবেন।
আচ্ছা এই ব্যাপার টা কি একদিনে হয়েছে? এমন নিস্পৃহ আর নিষ্প্রাণ অনুভূতি কি কেউ শখ করে মেখে নেয়?
আজ না সে মধ্যবয়স্ক। ছেলে মেয়ে বড় হওয়া সে তকমা নিজেই টেনে নিয়েছে।
তবে বিয়ের দুই তিন বছর পর ও অনেকে এমন নিষ্প্রাণ হয়, কেউ দশ বছর পর,কেউ বিশ বছর।
কিন্তু কাউকে ভালোবাসতে পারার আগ্রহ বা ইচ্ছে তো মানুষ একদিনে হারায় না।
কি নিদারুন অবহেলা, অভিযোগের শব্দ হারানোর আকুতি ধীরে ধীরে এমন অনুভূতি হীন হয়ে পড়ে কোন নারী তা শুধু সেই জানে।
আজ যার ইস্পাতের মতো দৃঢ় ব্যক্তিত্ব, কি মলিন নেতানো তিক্ত অনুভূতি সে পুরানো জিনিসের মতো ধুলো জমা তাকে জমিয়ে রেখেছে তা শুধু সেই জানে, যেমন গোপনে জমানো তার কোন ব্যাংক জমার রশিদ।
এই নিষ্প্রাণ অনুভূতি টা সাড়ানো কোন তাড়া এক সময় তারা আর অনুভব করে না৷
সংসার সংসার খেলায় দিব্যি দিন কেটে যায়। চলে যায় সে মানুষ টাও।
কিন্তু এরা একা হয় না। ভেঙে পড়ে না। কারণ অনেক শতাব্দী অবধি সে একাই এই সংসারে একা সংসার করে যাচ্ছে।
একটা সময়ের পর অধিকাংশ নারী স্বামীর সাথে সংসার করে না। স্বামীর সংসারে একটা নামের সাথে সংসার করে।
কি নিদারুন অদ্ভুত সত্য! একটা দীর্ঘশ্বাস ও থাকে না সে নামের সংসারে এতটাই অনুভূতি হীন,এই সংসারের সংসার।
একটা সময়ের পর অধিকাংশ নারীই নামের সাথে সংসার করে ব্যক্তির সাথে নয়।
-নিষ্প্রাণ_নিত্য_সংসার
-দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা