ভালোবাসার কষ্টের গল্প কাহিনী
অবন্তীর দিকে তাকিয়ে কাজি সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন,
- আপনার স্বামীর আসতে আর কতক্ষণ লাগবে? আপনাদের কাজ শেষ করে আমি আরেকটা বিয়ে বাড়িতে যাবো৷
অবন্তী কিছু বললো না। আজ তাদের ডিভোর্সের বিষয় কাগজপত্র ঠিক করার কথা। হাসানের সঙ্গে আর একসঙ্গে থাকার মতো কোনো পথ অবন্তীর সামনে নেই।
কাজির সামনে থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাসানকে কল দিল। এটা তার নতুন নাম্বার, এই নাম্বার হাসানের কাছে নেই।
পরপর তিনবার কল দিয়ে কানেক্ট করতে পারলো না। তারপর রাগান্বিত হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল অবন্তী। কিন্তু একটু পরেই হাসান কলব্যাক করলে সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে সে। তারপর ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
- কোথায় তুমি?
হাসানের আশেপাশে প্রচুর মানুষের কথা শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে গুলিস্তানের মোড়ে মানুষের চেচামেচি হচ্ছে। হাসান বললো,
- আমি তো অফিসে।
- তোমার না কাজি অফিসে আসার কথা? আর তোমার আশেপাশের চেচামেচি শুনে মনে হচ্ছে তুমি বাহিরে আছো।
- আরে না, অফিসে একটু সমস্যা হচ্ছে তাই। আর তুমি এটা কার নাম্বার দিয়ে কল দিছো? তোমার নাম্বারে কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করলা না, মনে হয় ২০ বারের মতো কল দিছি।
- ছোট মোবাইল বাসায় রেখে এসেছি। আর তুমি কল দিবে কেন? তোমার না অফিসে আসার কথা ছিল?
- পাগল নাকি? আমি কি ডিভোর্স দেবার জন্য তোমাকে বিয়ে করেছিলাম? আমি কিছুতেই রাজী নই, তোমাকে আমি ডিভোর্স দেবো না।
- আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যি সিরিয়াস, তোমার মতো সাইকো টাইপের মানুষের সঙ্গে আর যাই হোক কিন্তু সংসার হয় না।
- সামনে পেলে কানের নিচে ঠাস করে দুটো দিলে সব ভুত মাথা থেকে নেমে যাবে। চুপচাপ বাসায় ফিরে যাও, তারপর কাপড়চোপড় নিয়ে সরাসরি আমাদের বাসায় চলে আসো।
- একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না? আমি কিন্তু এমনিতেই রাগের শেষ সীমানায়।
- তাতে আমার বয়েই গেলো।
- তারমানে তুমি আসবে না?
- না, সেটা সম্ভব না। তুমি বাসায় চলে যাও। শুধু শুধু অপেক্ষা করো না, তোমাকে বাসায় যাবার জন্য আমি বারবার কল দিচ্ছিলাম।
- আমি কিন্তু সত্যিই আর এই সম্পর্কটা রাখতে পারবো না হাসান। তুমি যদি সামনাসামনি না হও তাহলে আমি নিজে থেকে একা একা সবকিছু করে ফেলবো।
- আমি জানি।
- জানো তাহলে আসোনি কেন? তোমার অফিস আছে আর আমার অফিস নেই? আমি অফিসে ছুটি নিয়ে অপেক্ষা করছি আর তুমি অফিসে বসে বসে ডিমে তা দিচ্ছো?
- আমি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু একটা ঝামেলা হয়ে গেছে তাই যেতে পারছি না।
হাসানের আশেপাশের শব্দ বাড়তে লাগলো। মনে হচ্ছে কোনো বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে সেখানে। অবন্তী খানিকটা নরম হয়ে বললো,
- তুমি কি সত্যি সত্যি অফিসে?
- হ্যাঁ।
- তাহলে এরকম আওয়াজ আসছে কোত্থেকে?
- বললাম তো একটা সমস্যা হচ্ছে, তুমি বাসায় চলে যাও। আর তোমার অফিসের পারভেজ সাহেবকে বলে দিও তোমরা শীঘ্রই বিয়ে করতে পারবে।
- তাকে নিয়ে আর কোনো কথা বলবে না।
- মিথ্যা কিছু বললাম?
- আমি রাখছি।
- বাসায় ফিরে ওই মোবাইলের মেসেজ চেক দিও।
রিক্সা নিয়ে বাসায় ফিরতে অবন্তীর সময় লাগলো আধা ঘণ্টার মতো। রিক্সায় বসেই তার অফিস কলিগ পারভেজকে কল দিয়েছিল। আজও তাদের কাজটা হয়নি এতটুকু বলে কল কেটে দিয়েছে অবন্তী।
হাসানের সঙ্গে যখন থেকে সম্পর্কের ভাঙ্গন ধরে তখন সবসময়ই মনমরা থাকতো অবন্তী। সবসময় চুপচাপ থাকা পারভেজ একদিন নিজেই অবন্তীর কাছে জানতে চায় পরিবর্তনের কারণ।
অবন্তীও একদিন অফিস ছুটি হলে পারভেজ সাহেবের সাথে একটা কফিশপে বসে বিস্তারিত জানায়৷
ভালোবেসে বিয়ে করার পরও কীভাবে সাজানো সংসার আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যাচ্ছে। নিজের হাতে গড়া সবকিছুর উপর থেকে মন উঠে যাচ্ছে তার।
অবশেষে সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে আলাদা হবার সিদ্ধান্ত নেয় অবন্তী।
বাসায় ফিরে কলিং বেল টিপতেই অবন্তীর মা ব্যস্ত হয়ে বললো,
- হাসানদের অফিসে আগুন লেগেছে শুনেছিস?
- না তো, কে বললো?
- হাসান ফোন করেছিল, আমাদের কাছে ক্ষমা চাইলো, কান্না করলো। টিভিতে অনেকক্ষণ ধরে লাইভে দেখাচ্ছে।
মোবাইলে কথা বলার সময় হাসানের আশেপাশে প্রচুর শব্দের রহস্য পরিষ্কার। সবার হুড়োহুড়ি আর বাঁচার আকুতির জন্য হয়তো ওরকমভাবে কথা শোনা গেছে।
অবন্তী নিজে দ্রুত টিভির সামনে দাঁড়িয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেল। মোবাইল বের করে হাসানের কাছে কল দিল কিন্তু নাম্বার বন্ধ। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের রুমে গিয়ে ছোট মোবাইল হাতে নিল। হাসান বলেছিল বাসায় ফিরে তার মোবাইল চেক করতে,
১৯ টা মিসডকল আর একটা মেসেজ। মেসেজ ওপেন করে অবন্তী কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে পড়তে লাগলো,
" ডিভোর্স ছাড়াই তোমাকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিলাম। বাঁচতে তো সবাই চায় অবন্তী, আমিও এখনো চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনভাবেই বের হবার পথ খুঁজে পাচ্ছি না। খুব জানতে ইচ্ছে করে, সত্যি সত্যি যদি মারা যাই। তুমি আমার পোড়া লাশটা খুঁজে পাবে তো? আমি তো তোমার কাছে অনেক বিরক্তিকর একটা মানুষ। "
বাসা থেকে বেরিয়ে পাগলের মতো ছুটতে লাগলো অবন্তী। একটা বিরক্তিকর মানুষ, যাকে জীবন থেকে তাড়ানোর জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই মানুষটার জন্য সে এখন ছুটে যাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তার দয়া হলে হয়তো সে পেতে পারে হাসানকে। কিন্তু আমার কল্পনার মধ্যে অবন্তীর কোনো ছায়া আমি দেখতে পাচ্ছি না।
সমাপ্ত
গল্পঃ বিরক্তিকর মানুষ৷
মোঃ সাইফুল ইসলাম।