রহস্যময় গল্প | রহস্যময় ঘটনা ২০২৩

 অদ্ভুত রহস্যময় ঘটনা

অদ্ভুত রহস্যময় ঘটনা

- স্যার,রাস্তাটা ভালো না। যাইয়েন না এখন। অপেক্ষা করেন।সকালে যান।

- কি বলেন চাচা। রাস্তা ভাঙ্গা নাকি। তাছাড়া হাতে টর্চ লাইট আছে আমার। সমস্যা নেই,ভাঙ্গা রাস্তা পার করে নিবো। 

- আমি ঐ খারাপের কথা বলিনি স্যার।

- তবে কি রাস্তার মাঝে কোনো নদী আছে? 

- ভূত বিশ্বাস করেন আপনি? 

- হা হা হা,কি যে বলেন চাচা। ওসব আছে নাকি। বনোয়ারি গল্পগুজব। রিয়াজ রাজ নামের একটা ফালতু লেখকের পেজেই এমন গল্প পাওয়া যায়। বাস্তবে এর কোনোই অস্তিত্ব নেই।


কথাটা বলে হেটে চলে আসলাম। মুরুব্বিরা পারেও বটে। শহর অঞ্চলে বড় হয়েছি বলে আমাদের তারা বুদ্ধিহীন ভাববে? আমরা শহরের মানুষ। সাইন্সের ব্যাপারে কি জানবে এই গ্রামের বুদ্ধিহীন মানুষগুলা।


এদিকে পড়লাম আরেক ঝামেলায়।এই গ্রামে আমাদের একটি প্রজেক্ট আছে। ভিজিটর পদে তাই কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা সব দেখা লাগবে। আজকালকার ইঞ্জিনিয়ার গুলাও বাটপার। প্রজেক্ট এর টাকা গুনে গুনে নিবে,কিন্তু ৮০ দিনের কাজ করতে লাগিয়ে দিবে ৬ মাস। মাত্র নামলাম রেলস্টেশনে।ঘড়িতেও সময় রাত ২ টা। ভাড়া বাসা অব্দি এখন হেটে যেতে হচ্ছে। এতো এতো ডিপ্রেশনের মাঝে যদি কেও এসে বলে ভূত বিশ্বাস করেন কিনা। কেমন লাগে তখন। প্রচুর রাগ আর একগাদা ডিপ্রেশন নিয়ে হেটে রওনা করেছি। দুইটা বিল আর একটা স্কুল মাঠ পরেই গন্তব্যে যেতে পারবো। বাজারে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকালাম। একটা রিক্সাও দেখতে পাইনি। কেমন স্টেশন এগুলা কে জানে। যাত্রীসংখ্যাও কম না।গ্রামের ড্রাইভার গুলা কি টাকার মায়া করেনা? এতো পথ হাটা লাগবে ভাবলেও ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে,আমিও শুরু করলাম হাটা। 


বাজার পেরিয়ে রাস্তার পাশে থাকা বিলে নেমে পড়েছি। এই পথ আমার অচেনা নয়। আজ থেকে আরো ২ মাস আগেও এসেছিলাম। তখন কাজ কোথায় হবে তা সিলেক্ট করতে এসেছিলাম। কোম্পানি আমার কম ছোট না। ৮৫ লাখ টাকার জমি কিনেছে ১ কোটি ৫০ লাখ দিয়ে।যাইহোক, তাতে আমার মাথা ব্যাথা নেই। মাসে ৭০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছি,তাতে আমার পরিবার খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে । কোনোদিকে আর মনোযোগ না বাড়িয়ে ফোনের ফ্ল্যাশ অন করলাম। এরপর হাটতে হাটতে যখন বিলের মাঝে আসি। তখন আমি ভিন্ন কিছু অনুভব করতে লাগলাম। 


শীত যায় যায় অবস্থা।তবুও রাতে ঘন কুয়াশার জাল কমেনি। গায়ে শীতের শীতলতা ঝাপটে ধরেছে।কনকনে এই শীতে থাকাও অসহ্য। কখন বাসায় গিয়ে একটা আরামের ঘুম দিবো,সেই চিন্তা।

কিন্তু ভিন্ন কিছু কি ঘটেছে? হ্যাঁ ঘটেছে। 

বিলের মাঝে যখন এসেছি আমি,অনুভব করলাম আশেপাশে কেও দৌড়াদৌড়ি করছে। আমি আশেপাশে ভালোভাবে নজর দিয়ে দেখলাম। কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এই কাঁদার মাঝে কারো দৌড়ার শব্দ আমি পেয়েছি। যাক,হতে পারে আমার মনের ভুল। আবারো এগিয়ে যেতে লাগলাম গন্তব্যস্থানে। 


কোনোভাবে বিল পেরিয়ে ওপাশের রাস্তায় উঠলাম। আরো একটি বিল। এটি পার করলে স্কুল মাঠ। তারপর জনবসতি। যদিও মেইন রোড দিয়ে আসা যায়। কিন্তু রোড দিয়ে হেটে আসলে আমার ৩ ঘন্টার বেশি সময় লাগতো। বিল দিয়ে মাত্র ৩০ মিনিটের পথ। 


রাস্তা থেকে আবার নামলাম বিলে। কৃষকের করা চিকন পথটিতে হাটতে তেমন অসুবিধাও হচ্ছেনা। কিছুদূর যাবার পর আমার আবার মনে হলো,কেও একজন দৌড় দিলো। 

ফ্ল্যাশ লাইটের আলো চারদিকে আবার মেরেছি। কাহিনি কি বুঝতেছিলাম না। মনোযোগ যখন আবার হাটার জন্য দিবো,তখন মনে হলো,পিছনে কিছুর গর্জনের শব্দ। আমি পিছনে ঘুরে ফ্ল্যাশলাইট মারতেই দেখি,একটা কুকুর আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই জানেন,রাতের বেলায় লাইটের আলো মারলে কুকুর বা বিড়ালের চোখ জ্বলজ্বল করে। হটাৎ তেমনি জ্বলজ্বল চোখ দুইটা দেখে প্রথমে আমি ভয় পেয়ে যাই। আচমকা এরকম কিছু দেখলে,কে বা ভয় না পাবে। কুকুরটাকে তাড়ানোর জন্য আমি সাথে সাথে নিচ থেকে কিছু কাঁদা হাতে নিলাম। দেখলাম কুকুরটা আমার থেকে ৭-৮ হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি যে কাঁদা নিলাম,সে কোনোভাবে ভয় পায়নি। আমি এইবার, " যাহ কুত্তা" বলে যখন হাতে থাকা কাঁদা ছুড়ে দিলাম। তাও আবার কুকুরটার মুখে। দেখলাম কুকুরটা তখনও আমার দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে। এইবার আমার কিছুটা ভয় হয়। আমি আবার বসে কিছু কাঁদা নিয়ে উঠে দেখি,এইবার চোখ এক জোড়া না,শত শত চোখ দেখা যাচ্ছে।


আমার সামনে থাকা কুকুরের গায়ে লাইটের আলো পড়লেও, পিছনের কুকুরগুলা দূরে থাকায় শরীর দেখা যায়না। কিন্তু চোখ যতগুলা দেখা যাচ্ছে,মনে হচ্ছে প্রায় ২-৩ শ কুকুর আছে। এইবার আমি প্রচুর ভয় পেয়েছি। এতোগুলা কুকুরের থেকে বাঁচতে পারবো কিনা জানিনা। 

 দিয়েছি দৌড়। কোথায় ফেলেছি ব্যাগ আর কোথায় গেলো জুতা। কিছুই আমার জানা নেই। কোনদিকে ছুটছি আর কোন পাশে উঠবো,সেটিও জানিনা। হাতে ফোন আর তার আলোতে যা দেখি, তার উপর দিয়ে দৌড় শুরু করি। কতক্ষণ ধরে দৌড়াচ্ছি,সেটিও জানিনা। 

কিছুক্ষণ পর দেখি,আমি যেদিকে যাচ্ছি,সেই পথেও শ খানেক চোখ দেখা যাচ্ছে। যাদের শুধুই চোখ দেখা যায়,শরীর দেখা যায়না। দিকভ্রান্ত হয়ে সামনে না এগিয়ে ডান দিকে দৌড় লাগালাম। কিন্তু কিছুদূর যেতেই দেখি,সেদিকেও কিছু চোখ। তখনো আমার মাথায় আসেনি,এখানে অলৌকিক কিছু হচ্ছে। 


এদিক সেদিক এলোপাথাড়ি দৌড়ার পর দেখলাম আমি কোনোভাবে রাস্তায় উঠেছি। সামনে স্কুল মাঠ,আর তারপর জনবসতি। বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ায়, আল্লাহ তালার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দিলাম মাঠের দিকে দৌড়। কিন্তু মাঠে যাবার আগেই দেখি,স্কুলের ছাদে কারো উপস্থিতি। এটি আমার জীবনে সবচেয়ে ভয়ের মুহুর্ত ছিলো। 


আমি দেখি,বিশাল দেহের একটি মহিলা স্কুলের ছাদে শুয়ে আছে। পা বাকা করে এমনভাবে শুয়েছে,মাথার চুলগুলা সোজা ছাদ থেকে মাটিতে নেমে এসেছে। এতো বড় একটি মহিলা যে কোনো মানুষ নয়,তা এতক্ষণে আমি আন্দাজ করেছি। পুরো স্কুল যত লম্বা,সে মহিলা তার চেয়েও লম্বা। চুলগুলো যেনো শূন্যে হেলেদুলে যাচ্ছে। আমি এই অশরীরী দেখে যখন থ হয়ে ছিলাম,তখন সে মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়েছে। 


" ভাই,এ ভাই"। কারো ডাকে লাফ দিয়ে উঠেছি। দেখলাম আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার আর অফিস সহকারীরা আমার পাশে। তাদের কথা অনুযায়ী, সকালে স্কুল মাঠে আমি জ্ঞান হারা ছিলাম। আমাকে উদ্ধার করেছে সেই বৃদ্ধ চাচা,যিনি আমাকে রেলস্টেশনে নিষেধ করেছিলো না আসতে। পরে আমি এইটাও জানলাম,ঐ চাচাটা আমাকে চিনে। গত ২ মাস আগে যখন এই প্রজেক্ট এর জায়গা কিনতে এসেছিলাম। তখন আমাদের রান্নাবান্না উনি করেছিলেন। সেখানেই দেখেছেন আমাকে। উনার বাড়ি ঐ রেলস্টেশনের পাশেই। জানতেন আমি বিল বেয়ে চলে আসবো। তাই নিষেধ করেছে। আমার ঐ পাগলামির ফল আমি পেয়েছি। 


আর ঐ কুকুর এবং মহিলা কে ছিলো? এই প্রশ্ন মনে গেঁথে যায়। একজন হুজুরকে দেখানোর পর তিনি বললেন," ঐদিন ওটা একটা পেত্নি ছিলো। যারা রাতের বেলা বিলের মাঝে মাছ ধরে খায়। তুমি তোমার অজান্তেই ঐ পেত্নির গায়ে পা দিয়ে হেটে এসেছো। তাই সে কুকুর সেজে ধাওয়া করেছে,আর স্কুলের ছাদে তার শরীর দেখিয়েছে। তোমার ভাগ্য ভালো তাই বেঁচে গেছো।হয়তো আল্লাহ্‌র কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করায়,আল্লাহ্‌ তোমাকে এ যাত্রায় রক্ষা করেছে"।


********** সমাপ্ত*************


গল্প- বিলের পেত্নি

লেখক- রিয়াজ রাজ


পরকিয়া প্রেমের গল্প।