অনেক কষ্টের ভালোবাসার গল্প
- আন্টি আমি ফয়সালকে সত্যিই ভালোবাসি।
- মাঝে মাঝে ওকে খাবার রান্না করে তুমিই পাঠাতে, তাই না?
- জ্বি আন্টি।
- খুব ভালো রান্না করতে পারো, আমিও খেতাম ওর সঙ্গে।
- ছোটবেলায় আমার মা মারা গেছে, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেনি শুধু আমার জন্য। ছোটবেলা থেকে আমিই রান্না করতাম, আমাদের বাবা মেয়ের ছোট্ট একটা সংসার।
- তো সরকারি চাকরি করা বাবার একমাত্র মেয়ে আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবে তোমার বাবা?
- আমার বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসে, তিনি আমার পছন্দের অবশ্যই গুরুত্ব দিবেন। তাছাড়া আমি কখনো ভুল করি না তাই আমার প্রতি বাবার অনেক বিশ্বাস আছে।
- ফয়সালের সঙ্গে তোমার পরিচয় কতদিনের?
- সাত মাস চৌদ্দ দিন।
- তোমার বাবার কাছে আজ পর্যন্ত কখনো বলছো যে তুমি কাউকে পছন্দ করো।
- না আন্টি, এখনো বলা হয়নি।
- তোমার বলা উচিৎ ছিল, এমনও তো হতে পারে তিনি কাউকে পছন্দ করে রেখেছেন। অথবা হঠাৎ করে কাউকে বিয়ের জন্য পাকা কথা দিয়ে দেবে, তখন তো কিছু করার থাকবে না।
ফয়সালের মায়ের কথা শুনে চমকে গেল নিমিশা, সত্যিই তো যদি তার বাবা কাউকে পছন্দ করে তবে কি করবে সে? নিমিশা তার বাবাকে অনেক ভালোবাসে, বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সে তখন তার পছন্দের কথা বলতে পারবে না।
- নিমিশা বললো, বুঝতে পারছি আমার ভুল হয়ে গেছে আন্টি। আমি আজকেই বাবার কাছে বলে দেবো আমি একজনকে পছন্দ করি।
- তোতোমার বাবা নিশ্চয়ই বাসায় একা আছেন, তা তাকে রেখে আমাদের বাসায় ইফতার করতে এসে খারাপ লাগে না?
- বাবা তার এক বন্ধুর বাসায় গেছেন তাই আমিও চলে আসলাম। কিন্তু ফয়সাল মসজিদ থেকে এলেই চলে যাবো, বাসায় গিয়ে রান্না করতে হবে।
- আমরা গরীব, আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ের পরে এমন পরিবেশে থাকতে কোন আপত্তি নেই তো?
- জ্বি না আন্টি, আর তাছাড়া আমরাও কিন্তু খুব বড়লোক নয়। আমার বাবা ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার হলেও তিনি সৎপথে চলেছেন সবসময়।
- জানি আমি।
- আন্টি আরেকটা কথা, আমার বাবার জীবনে আমি ছাড়া কেউ নেই। ফয়সালের সঙ্গে বিয়ের পরে আমি কিন্তু বাবার কাছাকাছি থাকব। এখন যেমন খুব কাছাকাছি আপনাদের আর আমার বাসা ঠিক এভাবেই। আমি যেন সপ্তাহে বারবার নিজের হাতে রান্না করে বাবার জন্য নিয়ে যেতে পারি। এখন যেমন বাবার কাছে থেকে ফয়সালকে নিজের হাতের রান্না খাওয়াতে ইচ্ছে করে। বিয়ের পরে ঠিক এমনি করে বাবার জন্য খাবার নিতে ইচ্ছে করবে।
- কোন সমস্যা নেই। বরং বাবার প্রতি তোমার এই ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হলাম। আচ্ছা তোমার নাম তো নিমিশা, তাই না?
- জ্বি, নিমিশা জান্নাত।
- ভারি মিষ্টি নাম।
- আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার কবরবাসি মায়ের জন্য দোয়া করবেন আন্টি।
- সবসময় দোয়া রইল মা, তোমার কাছে আমার ছোট্ট একটা অনুরোধ তুমি আমার সন্তানকে দুঃখ দিও না। কোনদিন তাকে ভুলে যেও না মা, আমার ছেলেটা খুব কষ্ট পাবে।
- আন্টি দোয়া করবেন, আর আমি কথা দিচ্ছি সবসময় আপনার সঙ্গে থাকবো।
★★
মসজিদ থেকে ফিরতেই ফয়সালের সঙ্গে বেরিয়ে গেল নিমিশা। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে বাতির নিচ দিয়ে দুজনেই পাশাপাশি হাঁটছে। রাস্তায় তেমন কেউ নেই, আজ ২৯ রমজান তাই বেশিরভাগ মানুষ এখন মার্কেটে।
- ফয়সাল নীরবতা ভেঙ্গে বললো, কেমন লাগলো আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলে?
- খুব খুব খুব... ভালো লেগেছে। এমন একটা শাশুড়ি পেলে আমার এতদিনের মা হারানোর কষ্ট দুর হয়ে যাবে।
- আর এমন একটা জামাই পেলে কি হবে?
- সারারাত কান ধরে রুমের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখবো, আর আমি নাক ডেকে ঘুমাবো। তারপর মাঝে ঘুম থেকে উঠে চেক করবো, বলা তো যায় না যদি আবার ঘুমিয়ে যাও তুমি। কেমন বুদ্ধি?
- খুব খারাপ বুদ্ধি, আজকেই পরিবর্তন করো।
- হিহিহিহি, আমি একটা কারণে খুব অবাক হই মাঝে মাঝে ফয়সাল।
- কি কারণে?
- তুমি কত্ত রাগি মানুষ, অথচ একদিন আমাকে কথা দিয়ে যখন বললে আর কোনদিন আমার সঙ্গে রাগ করবে না। তারপর থেকে আর কখনো রাগ করোনি, এটাই অবাক করে আমাকে।
- যে মেয়েটা আমার একটু রাগের কারণে রাতভর জেগে জেগে কান্না করে তার জন্য এতটুকু অভ্যাস নাহয় পরিবর্তন করলাম। ক্ষতি তো আর হচ্ছে না বরং সেদিন থেকে আর আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয় না কারণ একা একা ঝগড়া করা যায় না কখনো।
- একদম ঠিক।
- নিমি..?
- বলো।
- আমার মা তোমাকে খুব পছন্দ করেছে, তোমার অনুপস্থিতি আমার চেয়ে আমার মা'কে বেশি কষ্ট দেবে, কখনো হারিয়ে যেও না।
- হারানোর জন্য ভালোবাসিনি ফয়সাল, তোমার সঙ্গে সারাজীবন একসঙ্গে থাকার জন্য নিজের হাত বাড়িয়ে দিলাম।
- বাসায় যাও, আমি এগারোটার দিকে কল দেবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
★★
রাতের খাবার খেতে বসে নিমিশা উসখুস করতে লাগলো, ফয়সালের কথা বলা দরকার। কিন্তু তার বাবা এমন মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছেন তার মধ্যে বলতে সাহস হচ্ছে না।
ভাবতে ভাবতে খাওয়া শেষ হয়ে গেল, তার বাবা টেবিল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেল। নিমি তখন সবকিছু গুছিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল, হঠাৎ বাবার ডাক শুনে দৌড়ে বাবার রুমে প্রবেশ করলো।
- বাবা ডাকলে?
- হ্যাঁ মা, এদিকে আয় তোর সঙ্গে জরুরি কিছু কথা বলার ছিল।
- বলো বাবা।
- দেখতে দেখতে তুই কতবড় হয়ে গেছিস তা কি কখনো খেয়াল করেছিস? এখন তো শশুর বাড়ি যেতে হবে, বাবার সংসারে না থেকে নিজের সংসার গুছাইতে হবে। সন্তান হবে, সেই সন্তানের লালনপালন করতে হবে, আমি নানা হবো, তুই জামাই নিয়ে বেড়াতে আসবি। আহ কি আনন্দ।
- আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না, আর যদি যাই তাহলে খুব কাছাকাছি থাকবো।
- তোকে কাছাকাছিই বিয়ে দেবো, আমার বন্ধু আলাউদ্দিনের ছেলেটা খুব ভালো। নতুন চাকরি শুরু করেছে, আমি অনেকদিন ধরে তাকে চিনি তাই আজকে ইফতার শেষে এ বিষয় নিয়ে পাকা কথা দিয়ে এলাম।
বাবার কথা শুনে চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল তার, এটা কি সত্যি বলছে তার বাবা? ফয়সালের মা তাহলে ঠিকই বলেছিলেন যে সময় থাকতে বলে দিতে হবে। কিন্তু সুযোগ চলে গেল...!
- নিমিশা?
- কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, বলো বাবা।
- আলাউদ্দিনের ছেলে কালকে ঢাকা থেকে এই খুলনায় আসবে। আমি চাই ওরা এইবারে তোকে দেখে তারপর বিয়ের জন্য যতদূর সামনে যাওয়া যায় ততটা সামনে যেতে।
- বাবা...!
- বল মা।
- আমি... আমি।
- আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, আমি বেশ সুখে শান্তিতে থাকবো। তোর জন্য এমন একটা পাত্র খুঁজে পাবো ভাবতেই পারি নাই, আমি কিন্তু সত্যিই অনেক খুশি।
নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি দেখতে পেল নিমিশা। বাবাকে কখনো সে হাসতে দেখেনি, এমন মুহূর্তে বাবার সঙ্গে ফয়সাল এর কথা বলতে জিহবা নড়ছে না। বুকের মধ্যে তীব্র আর্তনাদ স্বত্বেও মাথা নিচু করে বাবার কথা মতো মাথা নাড়িয়ে বের হয়ে গেল। নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে কেঁদে উঠলো। মাত্র একটা সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত যত গভীর হলো তার স্বপ্ন ততই ভেঙ্গে গেলো।
মোবাইলে ফয়সালের নাম্বার দিয়ে বারবার কল আসছে, নিমিশা মোবাইল হাতে নিয়ে বুকের উপর রেখে আবারও চোখ বন্ধ করলো। ওদিকে একটা কল শেষ হতেই আরেকটা কল দিয়ে যাচ্ছে তার জন্য অপেক্ষায় থাকা ফয়সাল। বারবার কল দিয়ে তারপর মেসেজ ও করেছে কয়েকটা,
(১) " তুমি কি ব্যস্ত? "
(২) " খুব টেনশন হচ্ছে, রিসিভ করো না কেন? "
(৩) " ফ্রী হয়ে কল দিও, প্লিজ টেনশনে অস্থির। "
কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গেছে সেই সময় জানা নেই নিমিশার। পাশেই মসজিদের মাইকের শব্দে চমকে গেল সে, সাহরির জন্য মসজিদ থেকে সিগনাল দিচ্ছে। মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখতে যাবে তখন তাকিয়ে দেখে এখনো কল দিয়ে যাচ্ছে ফয়সাল।
নিমিশা রিসিভ করে চুপ করে রইল।
- ফয়সাল অস্থির কণ্ঠে বললো, হ্যালো নিমি?
- হ্যাঁ বলো।
- কি হয়েছে তোমার? কল দিলাম রিসিভ হয় না।
- ফয়সাল..?
- বলো, তুমি সুস্থ আছ তো?
- হ্যাঁ আমি সুস্থ, একটা অপ্রত্যাশিত খবর আছে।
- কি খবর?
- বাবা তার বন্ধুর ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, গতকাল রাতেই নাকি কথা দিয়েছে। আমি তোমার কথা বলতে গেলাম আর তখনই বাবা তার কথা জানালেন। বিশ্বাস করো ফয়সাল, বাবাকে এতটা ভালোবাসি যে তার মুখে হাসির দিকে তাকিয়ে আমি তোমার কথা বলতে পারিনি।
- ওহ্ আচ্ছা।
- দেখ বিশ্বাস করো আমি সত্যি, সত্যিই তোমাকে মন থেকে খুব ভালোবাসি। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে মনে হয় আমাদের একসঙ্গে থাকা হবে না।
- বুঝতে পারছি।
- তুমি আমাকে ক্ষমা করবে তো? আন্টির কাছে বলবে আমাকে নিজের মেয়ে মনে করে মাফ করে দিতে। আজকে সন্ধ্যা বেলা তাকে কথা দিয়ে ভোর হবার আগেই কথা ভঙ্গ করতে হলো।
- আচ্ছা ঠিক আছে, আমি মাকে সামলে নেবো। তুমি নিজেকে শক্ত করো আর এসব নিয়ে মন খারাপ করে কান্না করিও না। তুমি তো জানো যে তোমার কান্না আমার ভালো লাগে না, আল্লাহ যদি আমাদের মিলন না লিখে থাকে তাহলে তো কিছু করার নেই তাই না?
- ফয়সাল...!
- বলো, আর কান্না বন্ধ করো।
- আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ফয়সাল, তুমি জানো এ কথা ভাবতে গেলে আমার বুকের উপর পাথর বসে যায়।
- আঙ্কেল কি সাহরি খেয়েছেন?
- না আমি মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।
- তাড়াতাড়ি করো, সময় বেশি নেই। তাছাড়া আমি এখনো খাইনি, তোমার টেনশনে অস্থির হয়ে এখনো ঘুমাতে পারি নাই।
- ফয়সাল...!
- রাখলাম নিমিশা, পরে কথা হবে।
★★
মন খারাপ মাথা নিচু করে খেতে বসেছে ফয়সাল, তার দিকে তাকিয়ে তার মা বললো,
- কিছু হয়েছে?
- কো কোই না তো।
- সারারাত না ঘুমিয়ে দেখলাম বাতি জ্বালিয়ে বসে আছো, কারণ কি?
- মা নিমিশার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, রাতে নিমিশা যাবার পরে নাকি জানতে পেরেছে।
- সে তার বাবার কাছে বলেনি তোর কথা?
- না মা, বলতে পারে নাই। আমি ওকে ভালো করে চিনি, হয়তো পরিস্থিতি ছিল না তাই বলেনি নাহলে ঠিকই বলতো।
- কিন্তু তাই বলে এভাবে রাজি হয়ে যাবে?
- বাদ দাও মা, কপালে লেখা থাকলে নিমিশা আমার হবে আর না থাকলে হবে না।
- কিন্তু...
- কোন কিন্তু নেই মা, তুমি খাওয়া শেষ করো। শাক নিতে পারো, খুব ভালো লাগছে শাক ভাজি।
★★
আজ ৩০ এ রমজান।
সারাটা দিন নিজের রুমে বসেই কাটিয়ে দিল নিমিশা, মাঝখানে ফয়সালের কাছে কল দিয়ে সামান্য কথা বলেছিল। ফয়সাল স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে কল কেটে দিয়েছে কারণ তার হাতে অনেক কাজ।
ইফতারের পরে মোবাইল হাতে বেলকনিতে বসে বাহিরে তাকিয়ে রইল নিমিশা। চোখ দিয়ে বের হচ্ছে অজস্র পানি, শহরের চারিদিকে গলিতে গলিতে বাজি ফাটার শব্দ। আগামীকাল ইদের দিন তাই সবার আনন্দের শেষ নেই, নিমিশার ও ইদ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ছিল। ফয়সালের সঙ্গে পরিচয়ের পরে এটাই তাদের প্রথম ইদের দিন হবে কিন্তু একদিন আগেই সবকিছু হঠাৎ করে এলোমেলো হয়ে গেল। যেখানে কথা ছিল সারাটি জীবন একসঙ্গে ইদের আনন্দ করবে সেখানে আল্লাহ একটা ইদের আনন্দও কপালে রাখলো না।
এমন সময় নিমিশার বাবা রুমে এসে ডাক দিল, নিমিশা তার দিকে তাকিয়ে রইল। বাবার হাতে ছোট্ট একটা বাক্স, খুব সুন্দর করে সেটা রঙিন কাগজ দিয়ে মোড়ানো।
- কিছু বলবে বাবা?
- হ্যাঁ আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, এটা তোর জন্য আমার দেওয়া উপহার।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
বাবা চলে গেলে নিমিশা তার বাবার দেওয়া সেই বাক্সটা খুলতে লাগলো। ভিতরে শুধু একটা চিঠি ব্যতীত আর কিছু নেই, কৌতূহল নিয়ে পড়তে শুরু করলো নিমিশা।
মা নিমিশা,
কিছুদিন আগে তোমাকে আমি একটা ছেলের সঙ্গে ঘুরতে দেখেছিলাম। মনের কৌতূহল নিয়ে আমি তোমার আর ওই ছেলের পিছনে একটা লোক লাগিয়ে দিলাম। সপ্তাহ খানিক পরে আমার কাছে সে বললো আমার মেয়ে নাকি সেই ছেলেকে খুব ভালোবাসে। আমার চেয়েও নাকি বেশি সেই ভালোবাসা, তাই কেমন যেন হজম হচ্ছিল না।
তোমার মা মারা গেছে আজ ১৯ বছর হয়ে গেছে, ১৯ বছর ধরে তোমাকে আমি মা-বাবা দুজনেরই আদর দিয়ে বড় করেছি। সেই ভালোবাসার কথা ভুলে তুমি কি সত্যি সত্যি কাউকে আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে পেরেছো কিনা সেটা বোঝার জন্যই তোমাকে বিয়ের কথা বলেছি। সত্যি বলতে আমি তোমার বিয়ে কারো সঙ্গে ঠিক করিনি, শুধু দেখতে চাইলাম বাবার প্রতি আমার মেয়ের কতটা ভালোবাসা আজও রয়েছে।
তোমার প্রতি আমি মুগ্ধ, গতকাল রাতে যখন তুমি আমাকে খুশি করতে গিয়ে নিজে কেঁদেছ। তখন আমি তোমার মাকে স্মরন করে বলেছি আমাদের মেয়ে আমাকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসে না। এই অনুভূতি তোমাকে বোঝানো অসম্ভব, শুধু বলবো তুমি অনেক অনেক সুখী হবে। মনের অজান্তেই তোমার জন্য কত দোয়া এসে যায় সেকথা আমার আল্লাহ আর আমি ছাড়া কেউ জানে না। মা-বাবার দোয়া থাকলে সেই সন্তানের জীবনে আর কিছু দরকার নেই, সে সফল হবেই।
ছেলেটার বিষয় খবর নিলাম, খুব ভালো ছেলে, বাবা নেই, মাকে নিয়ে এই শহরে বাস করে। তাকে কল দিয়ে আমার পক্ষ থেকে সরি বলে দিও আর ইদের দাওয়াত পৌঁছে দিও। একটা রাত আর এই একটা দিনের মধ্যে আমার মেয়েটার করুন চেহারা দেখে খুব কষ্ট পেলাম।
ইতি
তোমার ভালোবাসার বাবা।
ভেজা চোখ নিয়ে হাসছে নিমিশা, মোবাইল বের করে ফয়সালকে বারবার কল দিচ্ছে। ফয়সাল শুধু একটা মেসেজ দিয়ে বললো,
" পরে কল দিচ্ছি "
নিমিশাও একটা মেসেজ দিয়ে বললো,
" অনেক কথা আছে প্রিয়, ফ্রী হয়ে অবশ্যই কল করবা, বাবা সবকিছু মেনে নিয়েছে। "
★★
আমার কাছে ভাবতে ভালো লাগে তাই গল্পের শেষটা এভাবে হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা কভু দেখা যায় না, সরকারি চাকরি করা কোন বাবা তার মেয়েকে টেইলারিং দোকানে কাজ করা কোন ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয় না। পাহাড় সমপরিমাণ ভালোবাসার চেয়ে তারা তখন একটা ভালো জব কিংবা ভালো ভবিষ্যত কল্পনা করে। আর হারিয়ে যায় নিমিশার মতো মেয়ের বুকভরা ভালোবাসা আর হাজার হাজার স্বপ্নের কথা। হারিয়ে যায় সেই ফয়সালের মা এ সন্তান দুজনের আশা, তবুও যেন পৃথিবীতে আমাদের চলতে হয়। কোনকিছু হারিয়ে গেলে আবারও সামনে গিয়ে নতুন কিছু পাবার আশা নিয়ে বাঁচতে হয়। একসময় ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলার অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যায়, নাম্বারটা তখন হারিয়ে যায় কল লিস্টের তলানিতে। তারপর কোন এক ক্লান্ত দুপুরে কিংবা মাঝরাতে বেলকনিতে বসে পুরনো মেসেজ চেক করে হুহু করে কান্না আসে। এটাই জীবন, জীবনের মর্ম।
#সমাপ্ত
-গল্পঃ- পূর্ণ_কিংবা_অপূর্ণ।