অবহেলার কষ্টের গল্প | অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

 খুব কাছের মানুষের অবহেলা

খুব কাছের মানুষের অবহেলা

__আম্মা ভাবীর অবস্থা তো ভালো না, পানি ভা'ঙ'ছে প্র'স'ব য'ন্ত্র'ণা'য় কা'ত'ড়া'চ্ছে। এখনি হাসপাতালে না নিলে হয়তো বা'চা'নো যাইবো না। 


আপনমনে টিভিতে সিরিয়াল দেখতে ব্য'স্ত ছিলেন শাহেলা বেগম। নাজমার মুখে এহেনু কথা শুনে শালেহা বেগম এর চোখে-মুখে বি'র'ক্তি'র ভাব স্পষ্ট হয়, বি'র'ক্তি'তে টিভি বন্ধ করে নাজমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন তিনি। সেইমূহূর্তে পাশের ঘর থেকে থেমে থেমে আয়েশার করুণ চিৎকার ভেসে আসছে, এতে শালেহা বেগম এর আ'চা'র'ণে' তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না, কিন্তু নাজমার মাঝে অ'স্থি'র'তা আর ভ"য় কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। শালেহা বেগম বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেটে আমেনার ঘরে চলে এলেন। আমেনাকে বিছানায় শুয়ে ব্য"থা'য় ছ'ট'ফ'ট করতে দেখে শাহেলা বেগম রা'গে হি"স"হি'সি'য়ে বললেন... 


__না'ট'ক কম করে কর মা'গ*, বাচ্চা বাড়িতেই জ'ন্ম নিবো। এমন না'ট'ক করবি আর তোরে হাসপাতালে নিয়া যামু ভাবছিস? বলি আমার পো'লা'ডা'র মা'থা খা"ই'য়া নিজের বা'প-মায়ের মুখে চু'ন-কা'লি মা'খা'ই'য়া পালাইয়া যে গেলো বছর আমাদের ঘা'ড়ে এসে বসলি বাপের বাড়ি থেকে তো তারপর একটা কা'না-ক'ড়ি (টাকা-পয়সা) আনোস নাই এহন সুখের হা'লে বাচ্চা প'য়'দা করবি তার পয়সা আমার ছেলের ক'ষ্টে"র আয় থেকে দিবো ভাবলি কেমনে! বাচ্চা কি আমরা প'য়'দা করি নাই? এমন না'ট'ক আমার সামনে চলবো না। 


দাঁ'তের সাথে দাঁ'ত পি'ষে শালেহা বেগমের বলা প্রতিটি কথা স'হ্য করে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমেনা। আধাঘন্টা হবে বা'চ্চা প্র'স'ব করতে সক্ষম হয়েছে আমেনা কিন্তু প্র'স'ব করানোর সময় শালেহা বেগম অ'ত্যা'ধি'ক ঘা'টা'ঘা'টি করেছিলেন যার দ'রু'ণ র"ক্ত পড়া ব'ন্ধ করতে পারেন নি এখনও। সময় যতো যাচ্ছে আমেনার শরীর ততোই নে'তি'য়ে পরছে। সেইমূহূর্তে আমেনার স্বামী নাজমুল বাড়িতে ফিরে। 


বাড়ির ভিতর পুরোপুরি শান্ত দেখে নাজমুলের ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে আসে, দ্রুত পায়ে নিজের রুমে প্রবেশ করে নাজমুল৷ ঘরের মেঝে র"ক্তে ভিজে একাকার অবস্থা দেখে ওর বুক আ'ত'কে উঠে। ছুটে বিছানার কাছে এসে দাঁড়াতেই দেখতে পায়, ওর মায়ের কোলে সদ্য জন্ম নেওয়া ওর নবজাতক সন্তানকে, তার পাশে আমেনা নি"স্তে"জ হয়ে পরে আছে, আমেনার পাশেই নাজমা বসে আছে। নাজমুল অ'স্থি'র কন্ঠে শালেহা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে...


__আম্মা আমার বউ-বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আছেন তো?


শালেহা বেগম এর চোখে-মুখে চি'ন্তা'র ভা'জ ফুটে উঠে, একপলক আমেনার দিকে দেখে নাজমুলকে উদ্দেশ্য করে বলে...


__আধঘন্টা হলো বউয়ের প্র'স'ব হইছে, এখনও লপর্যন্ত র"ক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না বাবু। তবে চিন্তা করিস না, বন্ধ হয়ে যাবে একটুপরে। 


শালেহা বেগম এর এহেনু কথায় নাজমুল দ্রুততার সাথে নাজমাকে বিছানা থেকে নামতে বলে আমেনাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বের হতে নেয়, সেইমূহূর্তে শালেহা বেগম চে'চি"য়ে বলে উঠেন....


__ওরে কোথায় নিয়া যাচ্ছিস বাবু?


__হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। 


__আদিখ্যেতা বাদ দে, ঘরেই শুইয়া রাখ। প্র"স'ব হওয়ার পর একটু আধটু র"ক্ত পড়বোই। এর জন্য হাসপাতালে নিয়া টাকা ন"ষ্ট করার দরকার নাই। ওর (আমেনার) প্র'স'বে'র জায়গায় কাপর দিয়া রাখছি এমনি বন্ধ হয়ে যাবো। 


শালেহা বেগম এর এমন কথায় নাজমুলের সর্ব শরীর যেন রা'গে তি'র তি'র করে কাঁপতে শুরু করেছে, উচ্চস্বরে চে'চি'য়ে বলে উঠে....


__টাকা আমি কা'মা'ই করি আম্মা আপনে না। আধাঘন্টা হলো প্র'স'ব কার্য সম্পন্ন হয়েছে র'ক্ত পড়া এখনও বন্ধ হয় নি, আরো কখন বন্ধ হবে! ওর শরীরের সব র"ক্ত যখন পরে শেষ হবে যাবে তখন?


শালেহা বেগম আর কিছু বলতে পারলেন না তার পূর্বেই নাজমুল আমেনাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন। নাজমাও ভাইয়ের পিছন পিছন ছু'ট'লে'ন। দ্রুত ভ্যনের ব্যবস্থা করে আমেনাকে নিয়ে প্রায় ১ঘন্টার পথ পে'রি'য়ে সদর হাসপাতালে এসে পৌছালেন নাজমুল ও নাজমা। আমেনার সর্বশরীর ইতিমধ্যে ফ্যকাশে বর্ন ধারণ করেছে৷ ডাক্তার আমেনার এমন ক"রু'ণ অবস্থা দেখে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলেন। পরপর ৮ ব্যগ র'ক্ত দেওয়া হয়েছে আমেনাকে। 


কিন্তু কোনো লাভ হয় নি, প্র'স"বে'র জায়গার অবস্থা বেশ ক্ষ'ত-বি'ক্ষ'ত করা হয়েছিলো প্র'স'বে'র সময় তাই ঐদিক দিয়ে র'ক্ত পড়া কোনোভাবেই বন্ধ করতে সক্ষম হন নি ডাক্তাররা। অবশেষে হ'তা'শ হয়ে অ.টি থেকে বেড় হয়ে আসলেন ডাক্তাররা, নাজমুল অ.টি এর বাহিরেই চি'ন্তি'ত অবস্থায় পায়চারী করছিলো। ডাক্তারকে বের হতে দেখে দ্রুত তার কাছে এগিয়ে গেলেন নাজমুল। তারপর অ'স্থি'র কন্ঠে আমেনার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলেন। ডাক্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন...


__আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো ভাবেই রোগীর শরীর থেকে র"ক্ত পড়া বন্ধ করতে সক্ষম হই নি। আপনারা অনেক বেশি দেড়ি করে ফেলেছেন, প্র'স'ব হওয়ার পূর্বেই আপনাদের এখানে আনা উচিত ছিলো তাহলে হয়তো আমরা কিছু করতে পারতাম। কিন্তু সবকিছু হাতের বাহিরে চলে যাওয়ার পর এনেছেন রোগীকে, আমাদের আর কিছু করার নেই। রোগীর হাতে বেশি সময় নেই, আপনারা চাইলে রোগীর সাথে তার শেষ সময়টুকু কাটিয়ে দিতে পারেন। নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজ ফলো করে সাথেই থাকুন ধন্যবাদ। 


এই বলে ডাক্তার স্থান ত্যগ করেন, নাজমুল সেখানেই হা'টু ভে'ঙে বসে পরে। নাজমা মুখে হাত চে'পে কান্না করছে। ভোর ৪টে না'গা'দ আমেনার মৃ'ত্যু ঘ'টে। আমেনার মৃ'ত দেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে নাজমুল। পুরো মানুষটি (নাজমুল) যেনো পাথর মূ'র্তি'র ন্যয় শ'ক্ত হয়ে গিয়েছে। শালেহা বেগম ছু'টে এসে আমেনার লা'শে"র কাছে বসে ন্য"কা কান্না করতে শুরু করেন হয়তো সকলকে এটা বুঝাতে চান আমেনার মৃ'ত্যু'তে তিনি অনেক ব্য"থি'ত। সেইমূহূর্তে নাজমা চেঁচিয়ে বলে উঠে....


__আম্মা আপনার এই ন্য"কা কান্না দয়াকরে থা'মা'ন। আপনার অ'ব'হে'লা'র জন্য ভাবীর লা"শ আজ দেখতে হচ্ছে, স'দ্য জন্ম নেওয়া ঐ নবজাতক শিশুটি ওর মাকে হা'রা'লো জন্মের পর পরই। এখন এই লোক দেখানো না'ট'ক ব'ন্ধ করুন শরীরে জ্বা"লা'র সৃষ্টি করছে আপনার কান্না। 


নাজমার মুখে এমন কথা শুনে শালেহা বেগম থ হয়ে বসে রইলেন। নাজমুল আমেনার লা'শে'র পাশে বসে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমেনার ফ্যকাসে মুখশ্রী পানে।


_সমাপ্ত.....

_অনুগল্প

_অবহেলা

Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।