খারাপ মেয়ে চেনার উপায় | খারাপ মেয়েদের বৈশিষ্ট্য

খারাপ মেয়ে নিয়ে স্ট্যাটাস

খারাপ মেয়ে নিয়ে স্ট্যাটাস

 দীর্ঘ পনেরো বছর পর আমার প্রাক্তনের সামন-সামনি হব আমি৷ আমি খুব একটা চাইনি আমাদের দেখা হোক। 

ওর স্ত্রীর আতিথিয়েতায় মুগ্ধ আমি। শুধুই ঘরে আসা মেহমান বলেই কি এত আদর আপ্যায়ন নাকি অতীত জেনে এমন! যদি অতিত জেনে এমন হয় তাহলে বলব মেয়েটা ভীষণ ভালো মনের মানুষ।  


আদিবকে দেখে আমি প্রথমেই থমকে যাই। এতগুলো বছর পর নিজের কাছেই যেন আমি হেরে যাচ্ছি৷ যদিও দোষটা সম্পূর্ণ আমার। নাহলে আজ ওর স্ত্রীর জায়গায় আমি থাকতাম। 

আদিব মিষ্টি হেসে হাসিমুখে আমার কুশল জিজ্ঞেস করলো। আমিও উত্তর দিয়ে ওর খবর নিলাম। 

খুব একটা জরুরি কাজে বাধ্য হয়ে এখানে আসা। 

কাজের কথা শুরু করতেই কেমন জানি সঙ্কোচ হচ্ছে আমার। 

যদি সে আমার পরিস্থিতি শুনে উপহাস করে? করতেও তো পারে!  

তারপরেও উপায় নেই। পাশের রুমে ওর স্ত্রী সুমনা একটা গান ছেড়ে দিল। 'ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়.. করেছে যে দান.." 


গানটা আমার আর আদিবের খুব পছন্দের ছিল। সুমনা কি ইচ্ছে করেই এমন করলো নাকি কাকতালীয় বুঝলাম না৷ 

আদিব গানটা শুনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল! তবে সে তাকানো তে পুরনো দিনের আভাস খানিক থাকলেও বাকিটা ছিল আমার প্রতি তার তিক্ততা। তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি যেহেতু আমি আমার কাজের জন্য এসেছি ওর প্রফেশনের কাছে। 


আদিব বরাবরই খুব প্রফেশনাল। পড়াশোনার ব্যাপারেও তেমন ছিল। 

আমার বাসার সবার কথা এক এক করে জিজ্ঞেস করছিল আদিব। সব শেষে এসে থামল আমার সংসারে কথায়। আমিও একবাক্যে উত্তর দিলাম সবকিছুর জবাবই পাবে।  


ওর সাথে আমার সম্পর্ক হয় অনার্স ফাস্ট ইয়ার থেকে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিল আমাদের। যদি বলি আদিবই বেশি দূর্বল ছিল আমার প্রতি। নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে সে। আমাদের অবস্থা বেশ ভালো বলা যায়।


যখন হুট করে আমি অন্য একজনের হাত ধরে নতুন জীবনে প্রবেশ করি আদিবকে ছেড়ে দিয়ে। তখন বুঝতে পারিনি নিয়তি আমার জন্য কি রেখেছে। তবে সেটা বুঝতেও বেশি সময় লাগেনি আমার। শেষ বারের মত আদিবের চোখের ভাষা আমাকে পরে যন্ত্রণার কারণ হয়েছিল হয়ত। 


আমার বাবার বাড়ির কথা বলতে বলতে সুমনা মানে আদিবের স্ত্রী চিংড়ি দিয়ে চাওমিন রান্না করে আনলো। 

হাসিমুখে বললো, আদিব নাকি এইসব খাবার খুব পছন্দ করে। যদিও সে আমার পছন্দ জানে না তাই সে আদিবের পছন্দের নাস্তা বানিয়েছে। 


আদিব তখনি রেগে গিয়ে বললো, কি বানাবে সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করলেই পারতে একবার!  

না বলে এসব বানানোর কি দরকার? রাইমার চিংড়িতে এলার্জি! ও এসব খাবে না। রাগে মুখ লাল হয়ে আছে। 


ওর এখনো মনে আছি আমি কি খাই না খাই? ওর মনে আমার জন্য জায়গা আছে এখনো! আগের মত? অনুভূতি গুলো কি আগের মতই নাড়া দেয় ওকে!  

এসব ভাবতে ভাবতেই যেন মনে একটা শীতল হাওয়া বয়ে গেল! যেন অনেক দিনের হারিয়ে যাওয়া কোন জিনিস খুজে পাওয়ার মত আনন্দ! জানি না এটা ঠিক কি না? তবে নিজের জায়গা টুকুর অবস্থান আমাকে খুব শান্তি দিচ্ছিল। 


আমি পরিবেশটা সামলে নিতে বললাম আমি এখন খাই। এলার্জি নেই। 

কিন্তু এই কথায় ওরা দুজনের কেউই কান দিল না৷ সুমনা নাস্তা নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল নিরবে। 


আদিবকে ছেড়ে বিলাসি জীবনের সাধ নিতে বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করি। প্রথম প্রথম সংসার জীবন খুবই ভালো কাটে আমার। কিন্তু পরে আস্তে আস্তে আমার স্বামীর দৈনন্দিন জীবন আমার কাছে খারাপ লাগা শুরু করে। হ্যা, হাতের কাছে জীবন উপভোগ করার মত সবই ছিল আমার তবুও সুখ নামক শব্দের ঘাটতি হতে লাগল প্রবল। 


বিয়ের পর প্রথমবার যখন দেশে আসি। সেই আশাটাও আনন্দের ছিল না। আমার ভাইয়া ব্রেইন স্ট্রোক করে হঠাৎ ই মারা যান। ভাইয়াকে শেষ দেখা দেখতে ছুটি আসি দেশে।  

আমার স্বামীও আসে সাথে। 

এখান থেকে যে আমার জীবনের চরম পতনের রূপ দেখা দিবে ভাবনার বাইরে ছিল আমার। 

আমার স্বামী দেশের বাইরে যেতে অনীহা প্রকাশ করে। আমি মনে মনে বললাম ভালই হয়েছে। দেশে নিজের পরিবারের সাথে থাকতে পারব! কিছুটা শান্তি পাব। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ রূপে ভুল হলো। আমার ভাইয়ের মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। বডিং এ থেকে পড়াশোনা করে। বাড়িতে আমি বাবা ভাবী আর আমার স্বামী। আমার সাথে আমার স্বামীর দূরত্ব যেন আরও দ্বিগুণ ভাবে বাড়তে লাগল! এর কারণ কি বুঝতে পারছিলাম না। 


একদিন একটা কাজে বাইরে থেকে এসে দেখি আমার স্বামী আর ভাবী ঘনিষ্ঠ অবস্থায়। যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। বাবাকে সবকিছু বলে দিই। বাবা বললেন আমি যা ভালো মনে করব সেটাই যেন করি। আর ভাবীকে বাবার বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে৷ প্রত্যেক মাসে উনার যাবতীয় খরচ পাঠানো হবে এখান থেকে। আর আমি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিলাম।


কিন্তু এর কয়েকদিন পরই বাবারও হুট করে মৃত্যু হয়৷ এই মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয় এটা কোন ভাবেই মন মানছিল না আমার। কিন্তু এসবের প্রমাণ কই। কি ই বা বলব কাকে! কে বিশ্বাস করবে আমার কথা!  


এসব বলতে বলতে গলা শুকিয়ে আসলো আমার। পানি খেয়ে আবার বললাম, ডিভোর্স আমার ঠিকই হয়ে গেছে। কিন্তু আমার বাবার সম্পত্তি থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে চায় ওরা!

ভাবীও আর বাপের বাড়ি যায়নি। 

আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। আমি যেন জাহান্নামের ভিতরে পুড়ে মরছি। একটু একটু করে যেন বেঁচে থাকার অর্থটা হারিয়ে ফেলেছি!  


আদিব চুপ করে আছে। আমি সব বলা শেষ করে ওর ঘরটা চোখ বুলিয়ে দেখছিলাম। এটা তো আজ আমার ঘর হতে পারত! স্বর্গ সরূপ একটা ঘর! যেখানে আর কিছু না থাক শান্তি আর সুখ নামক শব্দের অভাব থাকত না!  

আমার ভেতরটা কেমন জানি করে উঠল!  

আমি ঠিক না ভুল ভাবছি তার বোধও আমার মাঝে নেই। যেন অজানা একটা অতৃপ্তি ঘ্রাস করছে আমাকে। 


ঠিক তখনি রান্নাঘর থেকে সুমনার চিৎকার শোনা গেল!  

আদিব দৌড়ে গেল। আমিও তার পিছু পিছু গেলাম। 

পুরো ঘর ভর্তি ধোঁয়া আর আগুন। একপাশে সুমনা পড়ে আছে। গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়েছে।

কাজের ছেলে বাইরে থেকে দৌড়ে এসে মোটর থেকে পানির লাইন এনে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। আর আদিব হাউমাউ করে কান্না করছে সুমনাকে বাইরে আনার চেষ্টা করছে। আমিও পানি দিতে সাহায্য করছিলাম কিন্তু দেখছিলাম আদিব কেমন পাগলের মত তার মানুষটার জন্য কাঁদতে পারে৷ এই পাগলামি আমি আমার জন্য দেখিনি কখনো৷ অবশেষে সুমনাকে বের করে এনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

আদিবের সুমনার প্রতি অস্থিরতা আমাকে যেন দূরে ঠেলতে শুরু করলো। আমি যে দু'ঘন্টা যাবত আছি সেটা ওর খেয়ালেই নেই! সময়ের দূরত্ব যে জায়গাটার বদল ঘটেছে তা যেন একটু একটু করে জানান দিচ্ছিল। 


সুমনার খুব বেশি আহত হয়নি৷ আদিব ওর কাছে আছে। নার্স এসে বললো আমাকে ভেতরে যেতে। 

অনেকটা সুস্থ আছে সুমনা। সুমনা আমাকে দেখে আদিবকে বাইরে যেতে বললো। 

আমি কিছুটা অবাক হলাম। 


আদিব বাইরে যেতেই সুমনা বললো, আমি সবই জানি। জেনেও আপনার সাথে আতিথেয়তায় ত্রুটি করিনি। মুখ বাঁকা করে বসেও থাকিনি। কিন্তু যখন আপনার সব কথা রান্নাঘর থেকে শুনছিলাম এবং আপনার আমার ঘরের দিকে তাকানোর অর্থ খুঁজছিলাম তখন কোথায় জানি একটা অমিল ধরতে পারছিলাম। যা কোন নারীই সহ্য করতে পারে না৷ আপনার তাকানোর অর্থ অন্যকিছু লোভ যেন আমার কাছে পরিষ্কার দেখা দিচ্ছিল। তার আগে চিংড়ির জন্য আদিবের রাগারাগি আমার সাথে সেটাও আপনার মনে প্রভাব ফেলেছে অনেকটা! 


তাই আদিবের জীবনে আমার স্থানটা দেখিয়ে দিতে এতটুকু করতে আমার ভয় হয়নি৷ আমি একজন নারী আর এক নারী হয়ে আরেক নারীর চোখের ভাষা বুঝতে একটুও সময় লাগেনি আমার। তবে হ্যা, নিজেকে রক্ষা করে যতটা করা যায় ততটুকু করেছি৷ নিজের প্রতিও তো আমার মায়া আছে। ভালোবাসার মানুষটার সাথে তো সারাজীবন কাটানোর ইচ্ছা। মরে গেলে তো শকুনরা এসে ছিড়ে খাবে! আর বুঝাতে চেয়েছিলাম বৈধ আর অবৈধতায় পার্থক্য কতটুকু! পবিত্র সম্পর্কের টান তা আপনার আন্দাজের বাহিরে ছিল হয়ত। 


ওর শেষ কথাটা শুনে যেন আমার সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠল! 'শকুন'!  

আমিও বললাম, তুমি তো বেশ বুদ্ধিমতি আর চালাকও বটে!  


মনে মনে ভাবলাম, একজন স্ত্রী তো এমনি হবে!  

আদিব বরাবরই বুদ্ধমতি মেয়ে পছন্দ করে। (সুমনা)

গল্প_ একজন স্ত্রী

ফাবিহা ফেরদৌস।

পরকিয়া প্রেমের গল্প পড়ুন।