পরকিয়া প্রেম কতটা ভয়ংকর | পরকিয়া প্রেমের স্ট্যাটাস

 পরকিয়া গল্প

পরকিয়া গল্প

-গল্পঃ_স্ত্রীর_পরকীয়ার_পরিনতি  

সব পর্বঃ_একসাথে_


      গল্পটা বাস্তবের সাথে যথাযথ মিল রয়েছে। 


লেখকঃ -আব্দুল্লাহ_আল_শাহজালাল 


গল্পটি শুরু করার আগে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। 

গল্পটির কিছু কথা কারো কাছে খারাপ লাগলে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। আশা করছি সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে গল্পটি। আর হ্যা এই নামে হয়তো অনেক গল্প লিখা হয়েছে।গল্প না পড়ে বাজে মন্তব্য করবেন না।। গল্পটা পড়বেন তারপর আপনার মতামত জানাবেন৷ ধন্যবাদ সবাইকে...... 


বাসার সামনে নিজের আট বছরের মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে আমার কলিজাটা কেঁপে উঠলো। কারন আমি আমার মেয়েকে কখনো কাঁদতে দেইনা। বলতে পারেন আমার মেয়ে আমার চোখের মনি। আমি তাড়াতাড়ি করে আমার মেয়ের কাছে গেলাম,আর বললাম........


আমিঃ নেহা মামনি তুমি কাঁদছো কেনো??


নেহা আমাকে দেখে আরো কান্না বাড়িয়ে দিলো। কান্না করতে করতে হিচকি দিতে লাগলো.....


আমিঃ কি হয়েছে মামনি আমাকে বলো। তোমার 

আম্মু বুঝি তোমাকে বকা দিয়েছে?? 


নেহাঃ হুমমম??( খুব ভয়ে ভয়ে বললো)


আমিঃ নিশ্চয়ই তুমি তোমার আম্মুকে খুব বিরক্ত করেছো তাই বকা দিয়েছে??


নেহাঃ পাপা বিশ্বাস করো আমি কিছুই করিনি।। আমি শুধু আম্মুকে ভাত খাবো বলেছিলাম। কিন্তু আম্মু বললো এখন তুমি বাহিরে গিয়ে খেলে আসো তারপর খাবার খাবে? আমি বলেছিলাম,, আমি এখন খাবো তাই আম্মু আমাকে অনেক মেরেছে??


এই বলে নেহা কাঁদতে লাগলো।। আমি নেহাকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকলাম। ঢুকে আমি আমার স্ত্রী নাবিলা কে ডাক দিলাম। নাবিলা এসে আমাকে বললো.........


নাবিলাঃ কি হয়েছে এভাবে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছো কেনো??


আমিঃ কি বলো। আমি তো তোমাকে মাত্র একবার ডেকেছি, এতেই রেগে যাচ্ছো কেনো?? 


নাবিলাঃ আচ্ছা কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো। আমার কাজ আছে??(রাগ দেখিয়ে) 


আমিঃ তুমি নেহাকে মেরেছো কেনো?? 


নাবিলাঃ তোমার মেয়ে আদর পেয়ে বেয়াদব হয়ে গেছে। কোনো কথা শুনে না??


আমিঃ এই জন্য তুমি এই ছোট মেয়েটাকে মারবে। 

ওকে তো একটু বুঝাতে পারতে??


নাবিলাঃ দেখো এতো বুঝানোর সময় আমার নেই। আমার কাজ আছে আমি গেলাম??


এই বলে নাবিলা চলে গেলো। আমি বুঝি না এই মেয়ের ইদানিং কি হয়েছে। শুধু কথায় কথায় রেগে যায়।


যাইহোক আপনাদের তো পরিচয় দেওয়া হয়নি৷। আমি

সাকিল আহমেদ।। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা মা মারা গিয়েছে সেই বছর তিনেক আগে। 

বলা যায় নেহা আর নাবিলা আমার সব।। কারন ওরা ছাড়া এই পৃথিবীতে আপনজন কেউ নেই বলতে পারেন। আমি একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে জব করি। আপাদত এটুকুই জানেন।


রাতের বেলায় খাবার খেয়ে রুমে চলে গেলাম শোয়ার জন্য, ঠিক তখনই আমার মেয়ে নেহা বলে উঠলো.....


নেহাঃ বাবা নিহাল মামা না শুধু আম্মুকে জড়িয়ে ধরে। আম্মুও নিহাল মামাকে জড়িয়ে ধরে। তাহলে আমাকে ধরে না কেনো??(কাঁদো কাঁদো গলায়) 


আপনাদের তো বলা হয়নি,, আমাদের পরিবারে আরো

একজন থাকে। নাবিলার চাচাতো ভাই নিহাল। আমার বাসায় থেকে পড়াশোনা করে। এবার HSC দিবে।।


আমিঃ মামুনি আমি কি তোমাকে আদর করি না? আর নিহাল তো তোমার মামা হয়। আর তোমার মামা তোমার আম্মুর ছোট ভাই। তাই তাকে আদর করে???


নেহাঃ তাহলে আমাকে কেনো করে না??


আমিঃ আচ্ছা আমি তোমার আম্মুকে বলে দিবো এখন থেকে যেনো তোমাকে অনেক আদর করে??


নেহাঃ ওকে পাপা??


আমিঃ এখন ঘুমাও নয়তো তোমার আম্মু বকা দিবে??


নেহাঃ আচ্ছা?? 


কিছুক্ষণ পরেই নেহা ঘুমিয়ে গেলো। তারপর নাবিলা সবকিছু গুছিয়ে আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করতে লাগলো। আজকে নাবিলাকে খুব সুন্দর লাগছে তাই আমি গিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। নাবিলা বুঝতে পেরে আমার কাছ থেকে সরে গেলো😥😥 তাই আমি বললাম..........


আমিঃ কি হয়েছে তোমার??


নাবিলাঃ দেখো তুমি যা করতে চাচ্ছো সেটা এখন সম্ভব না। আমি খুব ক্লান্ত, আমাকে ঘুমাতে দাও। আর হ্যা এসব আমার একদম ভালো লাগে না। যখন তখন হুট করে জড়িয়ে ধরা??


আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম নাবিলার দিকে। নাবিলা এই কথা বলতে পারলো৷ যেই মেয়ে আমার জন্য 

এতটা পাগল ছিলো সেই মেয়ে আজ এই কথা কিভাবে বললো আমাকে। পরে ভাবলাম......

যাইহোক আজ হয়তো নাবিলা অনেক ক্লান্ত, তাই মাথা ঠিক নেই। তাই আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে গেলাম। 


সকাল বেলায়ঃ

--------------------

সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখি ০৯ টা বেজে গেছে।

অথচো আজকে নাবিলা আমাকে ডাক দিলো না। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলাম! কারন লেট হয়ে যাচ্ছিলো। আমি দ্রুত রেডি হয়ে রান্না ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি নাবিলা আর নিহাল হাসাহাসি করছে। আবার মাঝে মধ্যে নাবিলাকে জড়িয়ে ধরছে। সত্যি বলতে ব্যাপারটা একদম আমার কাছে ভালো লাগলো না। তাই আমি নাবিলাকে বললাম খাবার দাও লেট হয়ে যাচ্ছে আমার। ঠিক তখনই নিহাল বললো....


নিহালঃ গুড মর্নিং দুলাভাই?? 

 

আমিঃ গুড মর্নিং। তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে??


নিহালঃ ভালো ভাইয়া। তোমরা আমাকে হেল্প না করলে কি যে হতো আমার??(মন খারাপ করে)


আমিঃ আরে পাগল মন খারাপ করো কেনো। আমরা কি তোমার আপন কেউ না??


নিহালঃ তবুও....??(পুরোটা বলতে না দিয়ে) 


নাবিলাঃ হয়েছে এবার খেতে আসুন আপনারা?? 


আমিঃ হুম চলো আমার এমনিতেই আজকে অনেক লেট হয়ে গেছে। ভাবছি আজ অফিসে যাবো না?? 


নাবিলাঃ যাবে না মানে? কি বলছো এসব। দ্রুত নাস্তা করে অফিসে যাও??


আমিঃ আরে রেগে যাচ্ছো কেনো। একদিন অফিসে 

না গেলে কিছুই হবে না? দাঁড়াও বসের কাছ থেকে 

ছুটি নিয়ে নিচ্ছি?? 


নাবিলাঃ তুমি অফিসে যাবে মানে যাবে ব্যাস। আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না?? (রেগে)


আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি? বুঝিনা আমাকে নিয়ে তোমার এতো প্রবলেম কেনো??


আমি অফিসে যাবো শুনে নাবিলার আর নিহালের মুখে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠেছে। এই হাসির কারন বুঝতে পারলাম না। যাইহোক অফিসে চলে আসলাম। মনটা তেমন ভালো নেই তাই আজকে একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাসায় রওনা দিলাম। বাসায় গিয়ে দেখি নেহা টিভি দেখছে। তাই আমি নেহাকে ডাক দিলাম। নেহা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম তোমার আম্মু কোথায় মামুনি। তখন নেহা বললো.......


নেহাঃ পাপা আম্মু তো সেই কখন থেকে নিহাল মামার রুমে। সেই কখন গেছে এখনো আসছে না?? 


আমিঃ আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার আম্মুকে 

নিয়ে আসছি??


তারপর আমি নিহালের রুমের কাছে যেতেই ফিসফিস করার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। রুমের দরজাটা ধাক্কা দিতেই আমি দেখলাম,নিহাল শুয়ে আছে আর নাবিলা নিহালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে নাবিলা আমার দিকে তাকিয়ে বললো.......


নাবিলাঃ কি ব্যাপার! কখন এলে তুমি??


আমিঃ এইতো মাত্র আসলাম। তুমি নেহাকে একা 

রেখে এতক্ষণ এখানে কি করছো??


নাবিলাঃ নিহালের শরীর ভালো না তাই ওর মাথায় 

হাত বুলিয়ে দিচ্ছি??


আমিঃ কি হয়েছে নিহালের??


নাবিলাঃ হঠাৎ করে জ্বর আসছে। 


আমিঃ তাহলে এখনো ডাক্তারকে ফোন দাওনি কেনো?? 


নাবিলাঃ আসলে....??(পুরোটা বলতে না দিয়ে)


নিহালঃ দুলাভাই আমি আপুকে না করেছি যেতে। 

আমি ঠিক হয়ে যাবো আপুর সেবা পেলে??


আমিঃ ঠিক আছে তোমরা যা চাও??


নাবিলাঃ তুমি ফ্রেশ হও আমি খাবার দিচ্ছি?? 


আমিঃ ওকে??


তারপর আমি ওদের কাছ থেকে রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। কিন্তু মনের মধ্যে একটা খটকা যেনো লেগেই আছে। কারন আমি অফিসে যাওয়ার সময় 

তো ঠিকই ছিলো। এই ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে কি এমন হলো যার জন্য নিহালের জ্বর হয়ে গেলো। পরে আবার ভাবলাম কার কখন অসুখ হয় কে জানে।।ধুরর আমি কি ভাবছি এসব। 


সব চিন্তা বাদ দিয়ে খাবার খেতে গেলাম।। খাবার খেয়ে রুমে এসে নাবিলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর নাবিলা রুমে আসলো। আমি রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে নাবিলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় নাক ডুবিয়ে দিলাম। হঠাৎ করে নাবিলা আমার কাছ থেকে সরে গেলো। আর বললো....

সব চিন্তা বাদ দিয়ে খাবার খেতে গেলাম।। খাবার খেয়ে রুমে এসে নাবিলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর নাবিলা রুমে আসলো। আমি রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে নাবিলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় নাক ডুবিয়ে দিলাম। হঠাৎ করে নাবিলা আমার কাছ থেকে সরে গেলো। আর বললো....


নাবিলাঃ দেখো বারবার এটা ভালো লাগে না?? 


আমিঃ বারবার মানে? আমি তো প্রায় অনেক দিন তোমার কাছে আসি না তাহলে বারবার বলতে কি বুঝাচ্ছো?? 


নাবিলাঃ ইয়ে মানে...??( ভীতু চাহনিতে) 


আমিঃ কি মানে মানে করছো?? 


নাবিলাঃ দেখো আমি তোমার কথার উত্তর দিতে 

বাধ্য নই??


আমি কিছু বলতে গিয়েও বলিনি।।কারন এতে বিপরীত হলেও হতে পারে। রাতের বেলায় আমি নেহাকে শুইয়ে দিয়ে ল্যাপটপে অফিসের কাজ গুলো গুছিয়ে নিচ্ছিলাম এমন সময় নাবিলা এসে আমাকে বললো.....


নাবিলাঃ শুনো আমি আজকে নিহালের সাথে থাকবো??


আমিঃ নিহালের সাথে থাকবে মানে??


নাবিলাঃ আসলে নিহাল তো অসুস্থ রাতে যদি জ্বরটা আরো বেড়ে যায় তখন কি হবে ভাবছো??


আমিঃ দাঁড়াও আমি এখনই ডাক্তারকে কল দিচ্ছি তোমাকে কোথাও যেতে হবে না?? 


নাবিলাঃ আরে কি করছো, একটা রাতেরই তো ব্যাপার৷ একটু বোঝার চেষ্টা করো। আর এখন তো অনেক রাত হয়েছে। শুধু শুধু ডাক্তারকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি??


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। কাল কিন্তু মনে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে??


নাবিলাঃ আচ্ছা কালকের টা কালকে দেখা যাবে।

এখন তুমি ঘুমাও কালকে অফিস আছে না??


আমিঃ আচ্ছা ঘুমাবো তার আগে একটা মিষ্টি দিয়ে যাও??


নাবিলাঃ দেখো সব সময় ফাজলামো আমার একদম পছন্দ না??(চোখ রাঙিয়ে) 


আমিঃ ওকে যাও লাগবে না?? (মন খারাপ করে)


নাবিলাঃ ওকে গুড নাইট??


আমিঃ গুড নাইট?? 


আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম। আর ওইদিকে নাবিলাকে দেখে নিহাল বললো.........


নিহালঃ কি ব্যাপার এতো লেইট করলে কেনো? সেই কখন থেকে তোমার জন্য বসে আছি?? 


নাবিলাঃ ওহ সোনা রাগ করে না। আসলে বলদটাকে ম্যানেজ করতে লেট হয়ে গেছে?? 


নিহালঃ আচ্ছা দুলাভাই যদি কখনো সন্দেহ করে 

তখন কি হবে??


নাবিলাঃ কি হবে আর আমরা দুজন দুজনকে তো ভালোবাসি। দুজন বিয়ে করে ফেলবো??


নিহালঃ কিন্তু তুমি তো আমার বোন। আবার আমার থেকে বড়?? 


নাবিলাঃ দেখ প্রথমত তুই আমার মায়ের পেটের ভাই না। আর ছোট বড় এটা কোনো ব্যাপার না। কারন বয়স দেখে ভালোবাসা হয় না??


নিহাল মনে মনে ভাবতে লাগলো,,তুমি কি মনে করো।। আমি জীবনে তোমাকে বিয়ে করবো নাকি। প্রথমে তোমাকে ভোগ করবো। তারপর তোমার সমস্ত টাকা গয়না নিয়ে পালাবো। কথাটা বলেই আপন মনে হেসে উঠলো নিহাল৷ 


নাবিলাঃ কিরে কি ভাবছিস??


নিহালঃ না মানে ভাবছি আজ পুরো রাতের জন্য তুমি আমার। কি কি করবো রাতে সেটাই ভাবছি??


নাবিলাঃ তাই নাকি। ঠিক আছে দেখবো আজ তুই কেমন পারিস। 


নিহালঃ ওকে দেখা যাবে??


নাবিলাঃ দাঁড়া আমি একটু দেখে আসি বলদটা ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি??


এরপর নাবিলা আমার রুমের দরজা হালকা ধাক্কা দিয়ে  

দেখলো আমি ঘুমিয়ে পড়েছি কি না। যখন দেখলো আমি ঘুমিয়ে পড়েছি।। তখনই একটা প্রাপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিহালের রুমে চলে গেলো। 


নিহালঃ কি ব্যাপার ঘুমাইছে??


নাবিলাঃ হুমম??( মুচকি হেসে)


এবার নিহাল দেরি না করে নাবিলার ঠোঁটের সাথে এক করে দিলো নিজের ঠোঁট গুলো। আস্তে আস্তে তাদের পাপকর্ম আরো গভীর হতে থাকে। দুজনে নগ্নতায় মেতে উঠেছে। যেনো তারা খুব ক্ষুদার্ত।।  


রাত প্রায় ২ঃ৩০। হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে গেলো।। তাই পানি খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলাম। হঠাৎ নজর গেলো নিহালের রুমের দিকে। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি ওদের রুমে কিছু একটা হচ্ছে। কারন এতো রাতে রুমের দরজা খোলা।। নিশ্চয়ই নিহালের শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো না৷ তাই তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে নিহালের রুমের দিকে যেতে শুরু করলাম। আমি রুমে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলাম না। কারন তার আগেই আমি এমন কিছু দেখলাম যা আমি কখনো কল্পনাও করিনি। 


আমি রুমের দরজার কাছে গিয়ে দেখলাম আমার স্ত্রী নাবিলা আর নিহাল দুজনে নগ্ন অবস্থায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। হয়তো পাপ কাজের নেশায় দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে। আমি কি সত্যি দেখেছি নাকি

স্বপ্ন দেখেছি। ওদের তো ভাই-বোনের সম্পর্ক তাহলে কিভাবে পারলো এমনটা করতে। একবারো আমার আর নেহার কথা ভাবলো না৷ 


আর থাকলাম না ওখানে৷ নিজের রুমে চলে আসলাম। 

চোখ দুটি যেনো আজ বাঁধ মানছে না। নাবিলা গ্রামের মেয়ে ছিলো। আমি ভাবতাম গ্রামের মেয়েরা খুব সাধারন হয়।। তারা মা বাবার চাপে প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে না। আমি ভাবতাম আমি যাকে ভালোবাসবো তার কাছে আমিই প্রথম ভালোবাসা হয়ে থাকবো। কারন আমি কখনো আমার বউয়ের ভালোবাসা বিয়ের আগে কাউকে দেইনি। আমার ভালোবাসা ছিলো পবিত্র। বিয়ের পর থেকে নাবিলা প্রচন্ড পরিমান ভালোবাসতো আমাকে। তখন আমি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মনে করতাম। আজ নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। বাবা মা থাকলে ঠিকই আমাকে সান্ত্বনা দিতো। কিন্তু এই পৃথিবীতে নেহা ছাড়া তো আর কেউ নেই৷ নেহার কথা মনে পড়তেই ওর কাছে গেলাম। কি নিষ্পাপ লাগছে আমার পরীটাকে। কপালে একটা চুমু দিয়ে ভাবতে লাগলাম সেই দিনের কথা,, যেদিন নেহা নাবিলার কোল আলো করে আমাদের ছোট সংসারে আসে। সেদিন কি খুশী হয়েছিলাম আমরা বলে বুঝাতে পারবো না।। সেদিন নাবিলা আসাকে বলেছিলো,,মেয়েকে পেয়ে আবার আমাকে ভুলে যেওনা। আমাকে এখন আগের থেকেও বেশি ভালোবাসতে হবে কিন্তু। সেদিন নাবিলাকে বুকে জড়িয়ে খুব হেসেছিলাম। সেদিন পৃথীবিতে সবচেয়ে বেশি সুখী মানুষ ছিলাম আমি। কিন্তু আজ সেই ভালোবাসা কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে আত্বহত্যা করি৷ কিন্তু নেহার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু করতে পারলাম না।। 


রুম থেকে বের হয়ে বাবা মায়ের কবরের কাছে গেলাম। 

মাটিতে বসে অনাথের মতো মাথায় হাত দিয়ে বাবা মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে লাগলাম। কেনো আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে গেলে। আমাকে তোমাদের সাথে কেনো নিয়ে গেলে না। 


আমি যখন অফিসের কাজে চিটাগং চলে যাই তখন নাবিলা আমাকে ফোন করে বললো,,বাবা মা এক্সিডেন্ট করেছে। আমি ফিরতে ফিরতে বাবা মা বেঁচে ছিলো না। 

যদিও ডাক্তার বলেছিলো,, মা বাবা এবং যেই ড্রাইবার গাড়ি চালাচ্ছিলো তিনজনের দেহে ঘুমের ঔষধ পাওয়া গেছে যার ফলে তারা হঠাৎ করে শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং সেই থেকে দুর্ঘটনা ঘটে। আমার কোনো শক্র ছিলো না তাই কাউকে সন্দেহ হয়নি যার ফলে কোনো মামলা করতে পারিনি বাবা মায়ের পরিকল্পিত হত্যার। তবে নাবিলা প্রায় সময় বলতো বাবা মা একা থাকে। তাদের যদি এমন কোথাও রাখা যেতো যেখানে তারা আরো সঙ্গী পাবে, এবং তারা হাসি খুশি থাকবে। কিন্তু আমি কাজের চাপে এগুলো কখনো মাথায় আনিনি। কারন আমি মনে করতাম বাবা মা সবচেয়ে আনন্দে থাকবে আমাদের সাথে থাকলে। এতে নেহাও দাদা দাদীর আদরের থেকে বঞ্চিত হতে হবে না।


বাবা মায়ের কবরের পাশে বসে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সকাল হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। তাই এখান থেকে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। আর ভাবতে লাগলাম কি করবো এখন নাবিলাকে। কারন আমি নাবিলাকে আঘাত করলে চরম কষ্ট পাবে নেহা। 

আর নেহার কষ্ট আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারবো না।


ভাবতে ভাবতে বাসায় এসে গেলাম। কলিংবের দেওয়ার কিছুক্ষণ পর নাবিলা এসে দরজা খুলে দিলো। 

ওকে দেখে বুঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে গোসল করে আসছে। আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আগে যখন নাবিলা গোসল করে আমার সামনে আসতো তখন হা করে তাকিয়ে থাকতাম। কারন ওর চেহারায় যে নিষ্পাপ যে ভাবটা আসতো আর একটা অজানা মায়া কাজ করতো। কিন্তু আজ নাবিলার দিকে চাহনি সম্পুর্ণ ঘৃণার দৃষ্টিতে। হঠাৎ করে নাবিলা বলে উঠলো...


নাবিলাঃ কি ব্যাপার এভাবে কি দেখছো??


আমিঃ কি ব্যাপার! আজকে তুমি গোসল করলে এতো সকালে??(না জানার ভান করে) 


নাবিলাঃ ইয়ে মানে নিহাল রাতে কাপড়ে বোমি করে দিয়েছে??


শুনতে পারছেন পাঠক/পাঠিকা নিহাল কাপড়ে বোমি করে দিছে। অসাধারণ সত্যি কথা। ছিহহ নষ্টা


আমিঃ ও আচ্ছা নিহাল বোমি করে দিয়েছে। তা 

নিহালের কি অবস্থা এখন??


নাবিলাঃ একদম সুস্থ আছে?? 


আমিঃ বাহহ তুমি দেখছি যাদু জানো। মেডিসিন 

ছাড়াই সুস্থ করে দিলে। যাক আমার তো টাকা 

বেঁচে গেলো??


নাবিলাঃ হুমমম??

 

আমিঃ ওকে তুমি দাঁড়াও আমি নিহালকে দেখে আসি??


নাবিলাঃ ঠিক আছে?? 


আপনারা হয়তো ভাবতেছেন এতোকিছুর পরেও আমি কেনো ভালো ভাবে কথা বলছি৷ তাহলে শুনুন, আমি ওদের এখন শাস্তি দিবো না। পরিকল্পনা মাফিক ভাবে ওদের এমন শাস্তি দিবো যে ওরা কল্পনাও করতে পারবে না। তারপর আমি নিহালের রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি নিহাল শুয়ে আছে তাই আমি বললাম......... 


আমিঃ কি সালাবাবু আর কত ঘুমাবেন??


নিহালঃ ওহ দুলাভাই তুমি,ভিতরে আসো। আসলে শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে?? 


আমিঃ সে তো লাগবেই। সারারাত কি একটা ধকল গেলো তোমাদের। শরীর কি আর ভালো থাকে??(শয়তানি হাসি দিয়ে)  


নিহালঃ মানে??(ভীতু চাহনিতে) 


আমিঃ আরে মানে মানে কি করছো। সারারাত জ্বর গেলো তার উপর বোমিও করছো তাই বললাম??


নিহালঃ ও হ্যা দুলাভাই?? 


আমিঃ সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো নিহাল??


নিহালঃ হ্যা দুলাভাই সবকিছু ঠিক আছে?? 


আমিঃ তা আমি জানতে পারলাম রিয়া নামে একটা মেয়েকে তুমি খুব ভালোবাসো আবার খুব শীঘ্রই 

নাকি দুজনে বিয়ে করছো?? 


নিহালঃ তোমাকে কে বলেছে দুলাভাই??(ভয়ে ভয়ে)


আমিঃ হাহাহা খবর রাখতে হয় সালাবাবু। এবার 

বলো খবর সত্যি নাকি?


নিহাল কিছু একটা ভেবে আমার পায়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো......... 


নিহালঃ দুলাভাই প্লিজ কাউকে বলো না। এমনকি আপুকেও না। আমি রিয়াকে খুব ভালোবাসি৷ 

তাকে না পেলে আমি মরেই যাবো?? 


আমিঃ কি বলো সামান্য একটা মেয়ের জন্য কেউ মরে যায় নাকি। আর মেয়েটাকে বিয়ে করে খাওয়াবে কি? 

তুমি তো চাকরি করো না। আর যদি রিয়ার বাবা রিয়াকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়, তখনই বা কি করবে তুমি। কারন কোনো বাবা তো নিজের মেয়েকে 

কোনো বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দিবে না?? 


নিহালঃ প্লিজ দুলাভাই এভাবে বলো না। তাহলে আমি সত্যিই মরে যাবো। তুমি দয়া করে আমাকে সাহায্য করো। আমি রিয়াকে বিয়ে করে আমার করে নিতে চাই। আমি ওকে হারাতে পারবো না?? 


কান্না করে দিয়েছে বেচারা।। এতোই যদি ভালোবাসিস তাহলে কেনো আমার সংসারটা নষ্ট করলি। তারপর আমি বললাম........ 


আমিঃ আরে বোকা ছেলে কান্না করো না।। রিয়াকে তোমার করে দেওয়া আমার দায়িত্ব। তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো। শুধু আমি যা বলবো তোমাকে তাই করতে হবে কেমন??


নিহালঃ ধন্যবাদ দুলাভাই?? 


আমি নিহালের রুম থেকে বের হয়ে আয়মানকে একটা ফোন করলাম.......


আমিঃ হ্যালো আয়মান??


আয়মানঃ হ্যা বল??


আমিঃ দোস্ত একটা হেল্প করতে পারবি??


আয়মানঃ বল কি করতে হবে?? 


আমিঃ নিহাল যেই মেয়েকে ভালোবাসে সেই মেয়ের সব ইনফরমেশন আমার চাই। আর আমি কিছু ছবি দিচ্ছি এগুলো রিয়াকে দেখাবি। যদি কিছু জানতে চায় তাহলে আমার নাম্বারটা দিবি। বাকি কাজ আমি করবো??


আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে??


কলটা কেটে দিলাম। গেইম তো এবার শুরু হবে হাহাহা।

রাতের বেলায় বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছি কখন কলটা আসবে। আয়মান কি পারবে ঠিক মতো কাজটা করতে। উফফ টেনশনে মাথা ঘুরছে আমার। পায়চারি করছি রুমে। এতক্ষণে তো কলটা আসার কথা। ভাবতে ভাবতে একটা কল আসলো আমার মোবাইলে। দেরি না করে দ্রুত কলটা রিসিভ করলাম। অপর পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো......... 


কলটা কেটে দিলাম। গেইম তো এবার শুরু হবে হাহাহা।

রাতের বেলায় বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছি কখন কলটা আসবে। আয়মান কি পারবে ঠিক মতো কাজটা করতে। উফফ টেনশনে মাথা ঘুরছে আমার। পায়চারি করছি রুমে। এতক্ষণে তো কলটা আসার কথা। ভাবতে ভাবতে একটা কল আসলো আমার মোবাইলে। দেরি না করে দ্রুত কলটা রিসিভ করলাম। অপর পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো......... 


মেয়েটাঃ হ্যালো.??


আমিঃ আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহলে আপনি রিয়া! রাইট??


মেয়েটাঃ হ্যা আমি রিয়া??


আমিঃ তা কেমন আছেন আপনি?? 


রিয়াঃ দেখুন আপনার সাথে এতো কথা বলার সময় আমার নেই। আপনি যে ছবি গুলো দিছেন সেগুলো 

যে এডিট করা নয় তার প্রমাণ কি?? (রাগী গলায়)


আমিঃ কুল কুল ম্যাডাম।। আমি আগেই জানতাম আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। তাই 

আমাকে ছবির প্রমাণ গুলো দেওয়ার জন্য একটা সুযোগ দেওয়া যায় কি??


রিয়াঃ কি বলতে চাচ্ছেন স্পষ্ট করে বলুন??


আমিঃ কাল বিকাল ৩ঃ৩০ মিনিটে কফিশপে চলে আসুন! সেখানে সব কথা হবে কেমন??


রিয়াঃ সে নাহয় দেখা যাবে। কিন্তু একটা কথা শুনে রাখুন যদি প্রমান দিতে না পারেন তাহল আমি 

আপনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দিবো??


আমিঃ খুব ভালোবাসেন নিহালকে তাইনা??


রিয়াঃ রাখছি বাই??


আমি জানি মেয়েটা এখন প্রচন্ড কান্না করবে।। আসলে

এই পৃথিবীতে সত্যিকারের মন থেকে যারা ভালবেসেছে তারাই ধোঁকা খেয়েছে। 


এবার হয়তো আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন আমি ছবি গুলো কোথায় পেলাম। আবার এতো কনফিডেন্স নিয়ে কিভাবে বললাম প্রমান দিবো। তাহলে শুনুন,, আমার বাবা মা যখন মারা যায় ঘুমের ঔষধের কারনে তখন আমি মনে মনে নিহালকে সন্দেহ করতাম। তাই ওর ঘরে সব সময় একটা স্পাই ক্যামেরা অন থাকতো যদি কোনো প্রমান মেলে তাই। কিন্তু তার পরিবর্তে যা দেখতে পেলাম সেটা তো আপনারা জানেন। ওদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও অনুমানিক কয়েকশত আমার কাছে আছে। তাহলে বুঝেন কতদিন ধরে ওরা আমাকে ঠকাচ্ছে। যাইহোক ডিনার করে আসি তারপর কথা হবে। ডিনার করতে গিয়ে দেখলাম নিহাল আর নাবিলা দুষ্টুমি করছে আর খাবার খাচ্ছে। তাই আমি গিয়ে নেহার পাশে বসলাম। তখন নেহা আমাকে বললে.......


নেহাঃ পাপা এতো দেরি করলে কেনো??


আমিঃ আমি তো ভেবেছিলাম তোমরা আমাকে ডাকবে তাইতো দেরি করে আসলাম। কিন্তু তোমরা তো কেউ আমাকে ডাকলে না??(অভিমানী সুরে)


নেহাঃ পাপা আমি তেমাকে ডাকতে চেয়েছিলাম। 

কিন্তু আম্মুর জন্য পারিনি?? 


আমিঃ কেনো আম্মু কি করেছে মামুনি??


নেহাঃ আম্মু বলেছে ক্ষুধা পেলে এমনিতেই আসবে। এতো ডাকাডাকির দরকার নেই?? 


আমিঃ তাই বলেছে??


তখনই নাবিলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো আর নেহার গালে ঠাসস করে চড় বসিয়ে দিলো। তারপর বললো...


নাবিলাঃ বেয়াদব মেয়ে। দিনে দিনে বড় হচ্ছে আর মিথ্যা কথা বলা শিখছে??


নাবিলা যখন নেহাকে চড় মারলো তখন আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। যেনো আমার কলিজায় লাগলো আঘাতটা। এই নেহার জন্যই ওরা এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে৷ আর ওরাই কিনা নেহাকে আঘাত 

করলো।। না এর শেষ আমাকে খুব দ্রুত করতে হবে। আমি নাবিলাকে রাগী গলায় বললাম.........


আমিঃ এভাবে কেউ মারে।। তুমি তো কখনো নেহার 

গায়ে হাত দিতে না। ফুলের আঘাত পর্যন্ত লাগতে দাওনি তুমি। তাহলে আজ কিভাবে পারলে আঘাত করতে। তোমার হাত একটুও কাঁপলো না??


নাবিলাঃ আমার মিথ্যা কথা একদম সহ্য হয় না?? 


নেহাঃ বাবা আম্মু আমাকে একটুও আদর করে না,শুধু মারে৷ দেখো আমার পিঠে কত মারের আঘাত??


এই বলে নেহা ওর পিঠ আমাকে দেখিয়ে কাঁন্না করতে লাগলো।। আর আমি ওর পিঠের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। আমার কলিজাটা এতো কষ্ট পাচ্ছে তবুও বলেনি যে, পাপা আম্মু অনেক পঁচা আমাকে শুধু মারে। নেহার কান্ড দেখে নাবিলা বললো........


নাবিলাঃ বেয়াদব মেয়ে আবার মিথ্যা বলছিস আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবা??


এই কথা বলে নাবিলা যখন নেহাকে আবার চড় মারতে যাবে ঠিক তখনই আমি খুব জোরে নাবিলাকে একটা চড় মারলাম। সাথে সাথে নাবিলা চেয়ার থেকে ফ্লোরে পড়ে গেলো। প্রায় ২ মিনিট কোনো কথা বলতে পারেনি। হাতের ৫ টা আঙুলের চাপ ভেসে উঠলো ওর গালে। আমার রাগ দেখে নিহালও ভয় পেয়ে যায়। কারন আমি তেমন রাগারাগি করি না কখনো। আর রাগলে আমি সাইকো টাইপের হয়ে যাই।। অনেকক্ষণ পরে নাবিলা আমাকে বলে উঠলো......... 


নাবিলাঃ তুমি আমাকে এভাবে মারতে পারলে??(কেঁদে কেঁদে) 


আমিঃ হুমম মারলাম। তোকে তো খুন করলেও আমার রাগ কমবে না। তোর সাহস কিভাবে হয় আমার কলিজায় আঘাত করার??(আমার রাগ উঠলে তুই করে বলি🙂🙂)


নাবিলাঃ আমি আমার মেয়েকে শাসন করার অধিকার নেই?? 


আমিঃ আছে। কিন্তু এভাবে ক্ষত বিক্ষত করার অধিকার কে দিয়েছে তোকে?? 


নাবিলার মুখে আর কোনো কথা নেই।। কারন ও বলবে কি? বলার মতো কিছু থাকলেই তো বলবে। যে আঘাত করেছে আমার মেয়েটাকে আপনারা দেখলে আপনাদের চোখেও পানি আসবে। ওর চুপ থাকা দেখে আমি বললাম.......


আমিঃ এরপর যদি কখনো কোনোদিন তোর নামে নেহা অভিযোগ দিয়েছে তাহলে শুনে রাখ,সেদিনই তোর এই বাড়িতে শেষ দিন। আর নিহাল তুমি এই মুহূর্তে তোমার বোনকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাও??


নিহালঃ আচ্ছা দুলাভাই। এই আপু চল আমার রুমে। শুধু শুধু ঝগড়া করে সংসারে অশান্তির সৃষ্টি করে কি লাভ হবে বল??


নাবিলা রাগে ফুঁসছে আর কেঁদে যাচ্ছে।। এরপর নিহাল নাবিলাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। আমি নেহার কাছে গেলাম। মেয়েটা আমার কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলছে। তাই ওকে কোলে তুলে নিলাম সেই সাথে ওর খাবার টা নিয়ে নিলাম। আজ আমার খাওয়া হবে না। তাই নেহার খাবার নিয়ে রুমে চলে আসলাম। নেহাকে যখনই খাবার খাইয়ে দিতে যাবো ঠিক তখনই নেহা মুখটা অন্যদিকে সরিয়ে নিলো তাই আমি বললাম......


আমিঃ কি হলো মামুনি খাচ্ছো না কেনো??


নেহাঃ তুমি আম্মুকে মারলে কেনো? আমি তোমার সাথে কথা বলবো না??


দেখছেন কি মেয়ে আমার।। যে মা এত আঘাত করেলো তার পরেও সেই মায়ের জন্য কাঁদছে। নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। তাই নেহাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম। আর মনে মনে বলতে লাগলাম,, মা রে তোর এই ভালোবাসার দাম নেই তোর মায়ের কাছে। সে তো তার পরকীয়ার প্রেমিক ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। কোনোদিন তোর মায়ের গায়ে হাত দেইনি আজ দিতে হলো। আমাকে যদি ভালো না লাগতো তাহলে একটিবার বলতে পারতো। আমি না হয় নিজ থেকে সরে যেতাম। কিন্তু এভাবে অভিনয়, আবহেলা দিনদিন আমাকে যে শেষ করে দিচ্ছে। মরলেও তো শান্তি পাবো না। কারন না জানি তোকে মেরেই ফেলবে কোনোদিন। তোকে তো বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখতে মন চায়। তুই যেদিন হারিয়ে যাবি সেদিন আমিও চলে যাবো না ফেরার দেশে। বলেই কান্না করতে লাগলাম।। আমার কান্না দেখে নেহা বলে উঠলো.......... 


নেহাঃ পাপা তুমি কান্না করছো? তুমি জানো না 

তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না?? 


আমিঃ না রে মা কান্না করছি না। তুমি ভাত গুলো 

খেয়ে নাও??


নেহাঃ খাবো তবে তুমি যদি কান্না না করো তাহলে?? 


আমিঃ ওকে এই চোখ মুছে নিলাম এবার হা করো??


তারপর আমি নেহাকে খাইয়ে দিলাম। খাওয়া শেষে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর নেহা ঘুমিয়ে গেলো। আমি ঝটপট করে ল্যাপটপ অন করলাম। কারন আমাকে বসে থাকলে হবে না। নাবিলা আর নিহাল কি করছে সেটা আমাকে জানতে হবে। ক্যামেরা অন করতেই দেখি ওরা ঘুমিয়ে গেছে। তাই আগের রেকর্ড গুলো অন করলাম। নাবিলার কিছু কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। নিহাল যখন নাবিলাকে নিয়ে রুমে গেলো তখন নাবিলা বললো........


নাবিলাঃ নিহাল আমি আর পারছি না চলো আজকেই আমরা বিয়ে করে এখান থেকে চলে যাই। ওর সাহস কিভাবে হয় আমাকে মারার??


নিহালঃ আরে রেগে যাচ্ছো কেনো বিয়ে তো আমরা করবোই। আর কয়েকটা দিন যাক তারপর??


নাবিলাঃ তুই বিয়ে করবি তো আমায়। দেখ তোর উপর ভরসা করেই আমি এই সংসারের মায়া ছাড়ছি। তুই 

যদি আমাকে ধোঁকা দিস তাহলে তোর, নেহার 

আর শাকিলের অবস্থা হবে ওই তিনজনের মতো?? 


নিহালঃ তিনজনের মানে??


নাবিলাঃ আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আর ড্রাইবারের মতো এবার বুঝলি??(শয়তানি হাসি দিয়ে) 


নিহালঃ মানে তুমি ওদের মেরেছো? কিন্তু কেনো?? 


নাবিলাঃ সেটা তোকে জানতে হবে না। তুই আমাকে বিয়ে করবি কি না সেটা বল??


নিহালঃ হুমম করবো??

( আল্লাহ কি বিপদে পড়লাম। আমি তো রিয়াকে ছাড়া আর কাউকে বউ হিসেবে কল্পনা করতে পারি না। যাইহোক আমাকে দ্রুত পালাতে হবে এখান থেকে। কিন্তু তার আগে টাকা পয়সা গুলো কোথায় আছে সেটা জানতে হব আমাকে।) মনে মনে ভাবলো নিহাল।


নিহালের চুপ থাকা দেখে নাবিলা বলে উঠলো....... 


নাবিলাঃ কি ভাবছিস। নাকি পালানোর কথ ভাবছিস??


নিহালঃ পালাবো কোথায় তোমাকে ছাড়া??(ভয়ে ভয়ে)


নাবিলাঃ গুড বয়। চল এবার একটু রোমান্স করবো তারপর ঘুমাবো??


নিহালঃ না আজ শরীরটা ভালো লাগছে না?? 


নাবিলাঃ ওকে ঠিক আছে। আয় তোকে বুকে জড়িয়ে রাখি তাহলে ভালো লাগবে??


নিহালঃ হুমমম??


তারপর ওরা লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো। আর আমার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়তে লাগলো।। 

কি শুনলাম আমি? সবচেয়ে প্রিয় মানুষ গুলোকে যে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলো সে আর কেউ নয়,, আমার স্ত্রী নাবিলা।। ভাবতেই পারছি না ও এমন কাজ কিভাবে করলো। না এর প্রতিশোধ আমাকে নিতে হবে। নয়তো বাবা মায়ের আত্মা শান্তি পাবে না।  


সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে অফিসের দিকে রওয়ানা দিলাম। আবার বিকালে রিয়ার সাথে দেখা করতে হবে। তাই ল্যাপটপ পেনড্রাইভ বলতে গেলে সব ধরনের প্রমান নিয়ে নিলাম নিজের সাথে।। অফিস থেকে বের হয়ে কফিশপে চলে গেলাম। গিয়ে নিলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে কালো বোরকা পড়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। তার কিছুক্ষণ পর দেখলাম মেয়েটা কোথায় যেনো ফোন দিলো। সাথে সাথে আমার ফোনটা বেজে উঠলো। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটাই রিয়া। তাই আমি ডাক দিলাম........... 


আমিঃ এই যে মিস আমি এখানে??


এটা বলার পর রিয়া যখন আমার দিকে তাকালো সাথে সাথে আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমি কি দেখলাম এটা? এটা কি মেয়ে নাকি পরী। বিশ্বার করেন শাহ জালাল ভাই বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম। আল্লাহ এতো সুন্দর মানুষ হয় নাকি। আর এই মেয়ে কিভাবে নিহালের মতো ছেলের প্রেমিকা হয়। হঠাৎ করে রিয়ার ডাকে হুশ ফিরলো আমার..........


রিয়াঃ আপনার মাথায় কোনো প্রবলেম আছে নাকি??


আমিঃ হ্যা। এই না না??( হুশ নেই আমার)


রিয়াঃ অসহ্যকর লোক একটা??(আস্তে করে বললো)


আমিঃ কিছু বললেন??


রিয়াঃ না কিছু বলিনি। আমরা যেই কাজে আসলাম সেটা করুন তাড়াতাড়ি। আমাকে আবার বাসায় 

ফিরতে হবে?? 


আমিঃ হুমম বসুন??


রিয়াঃ জ্বি এবার আপনার প্রমান গুলো দেখান?? 


তারপর আমি ল্যাপটপে পেন ড্রাইভ লাগিয়ে সব গুলো ছবি দেখাতে লাগলাম।। ছবি গুলো দেখে রিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। আমি বুঝতে পারছি মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। কারন তার থেকে বেশি কষ্ট নিয়ে আমি এখানে বসে আছি। সেটা আপনারাও আমার অতীতের কথা গুলো জানেন। এরপর রিয়া আমাকে বললো...........


রিয়াঃ এগুলো সত্যি কি আপনি এডিট করে 

আনেন নি??


আমিঃ আপনাকে এতোকিছু দেখানোর পরেও বিশ্বাস করতে পারছেন না??


রিয়াঃ আসলে নিজের চোখে যতক্ষণ পর্যন্ত কিছু না দেখি ততক্ষণ কোনো কিছু বিশ্বাস করা কি উচিত আপনিই বলুন??


আমিঃ ওকে নো প্রবলেম। আমি আপনার নিজের চোখে দেখার ইচ্ছে টা পুরন করবো কেমন??


কথাটা বলে নিহালের রুমে থাকা ক্যামেরা টা অন করে দিলাম। তারপর ল্যাপটপ রিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দিলাম। 

রিয়া ল্যাপটপ অফ করে দিলো। চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে রিয়ার। (রিয়ার দিকে ল্যাপটপ ঘুরিয়ে দিতেই দেখলো নিহালের বুকের উপরে ঘুমিয়ে আছে নাবিলা।) আর সেগুলো দেখেই রিয়ার অবস্থা খারাপ। তারপর আমি রিয়াকে বললাম..........


আমিঃ আমি চাইলে এই দুইজনের কয়েক শত অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও আপনাকে দেখাতে পারতাম। কিন্তু এগুলো আপনাকে আমি দেখাবো না। কারন আমি আশাকরি যথেষ্ট প্রামন দিয়ে দিছি আপনাকে। আমার কথা শুনে রিয়া কেঁদে কেঁদে বললো.......


রিয়াঃ হুমম??


আমিঃ দেখুন নিজেক শক্ত করুন।। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।। আজ যদি আপনার সাথে আমার দেখা না হতো তাহলে এই রকম একটা লম্পট ছেলের সাথে আপনাকে সারাজীবন পার করতে হতো। কিন্তু আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করেছে। তাই আপনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন??


রিয়াঃ তা তো করবোই। কিন্তু ওর তো কিছু শাস্তি 

প্রাপ্য তাইনা??


আমিঃ তা তো দিবোই। তার আগে নিজেকে শান্ত করুন??


রিয়াঃ হুমম ঠিক বলছেন।। কিন্তু আমি তো ওরে ওর কাজের জন্য ভয়াবহ শাস্তি দিয়ে ছাড়বো। ওরে 

আমি নিজ হাতে খুন করবো তারপর নিজে মরবো??


আমিঃ নিজের ক্ষতি আর খুন করার কথা কখনো ভাববেন না। তাহলে আপনার জীবন তো নষ্ট হবে

এবং আপনার বাবা মা আপনাকে হারিয়ে তাদের

কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখেছেন?? 


রিয়াঃ তাহলে আমি এখন কি করবো।। আমি যে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। যার জন্য নিজের ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিলাম সে আমাকে এভাবে ঠকাতে পারলো?? (কেঁদে কেঁদে) 


আমিঃ শাস্তি তো নিহাল অবশ্যই পাবে। কিন্তু সেটা অন্য পদ্ধতিতে যাতে সাপ ও না মরে লাঠিও না ভাঙে??


রিয়াঃ হুমমম। আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার দরকার ছিলো?? 


আমিঃ আমি জানি আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করবেন আমি কে? কেনো আমি এসব তথ্য আপনাকে দেখাচ্ছি। এসব দেখিয়ে আমার কি লাভ। তাইতো??


রিয়াঃ হুমমম আমার অনেক জানতে ইচ্ছে করছে?? 


আমিঃ নিহালের বুকে যেই মেয়েটা শুয়ে আছে সে আর কেউ না আমার বিবাহিত স্ত্রী??(মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে?  


রিয়াঃ হোয়াট??


আমার কথা শুনে রিয়া দাঁড়িয়ে গেলো। তারপর আমি বললাম........


আমিঃ কি খুব অবাক হলেন তাইতো। কিন্তু এটাই যে সত্যি। আমাদের ছোট একটা মেয়েও আছে?? 


রিয়া আমার কথা শুনে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।। কিন্তু আমি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না।। কারন লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো। হুট করে রিয়া আমাকে বলে উঠলো........


রিয়া আমার কথা শুনে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।। কিন্তু আমি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না।। কারন লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো। হুট করে রিয়া আমাকে বলে উঠলো........


রিয়াঃ কিভাবে পারেন নিজের কষ্ট গুলো আড়াল

করে রাখতে?? 


আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম........


আমিঃ আমার মেয়ের জন্য?? 


রিয়াঃ খুব ভালোবাসতেন আপনার স্ত্রীকে তাইনা??


আমিঃ হুমমম??(নিচের দিকে তাকিয়ে) 


রিয়াঃ আপনার জায়গায় আমি থাকলে হয়তো পাগল হয়ে যেতাম নয়তো সুইসাইড করতাম??


আমিঃ কিছু জিনিস চাইলেও করা যায় না??


রিয়াঃ হুমম। আপনার মেয়েকে দেখাবেন একটু??


আমিঃ নিশ্চয়ই?? 


তারপর আমি নেহার ছবি দেখালাম রিয়াকে। রিয়া ছবি দেখে বললো.........


রিয়াঃ এতো সুন্দর একটা মেয়ে,,একজন দায়িত্ববান স্বামী রেখে কিভাবে পারলো এই মহিলা পরকীয়ায় 

লিপ্ত হতে। একটা বারের জন্যেও কি এই কাজগুলো করার সময় তার মেয়েটার কথা মনে পড়লো না??


আমিঃ হয়তো মনে পড়ে। আবার নিজের ইচ্ছে কে প্রধান্য দিতে গিয়ে তার মেয়ের কথা মনে করতে 

চায় না?? 


রিয়াঃ এদের পাপের শাস্তি কি এরা পাবে না?? 


আমিঃ অবশ্যই পাবে আর সেটা দিবো আমরা??


রিয়াঃ এদেরকে কঠিনের চেয়ে কঠিনতম শাস্তি 

দিতে হবে?? 


আমিঃ তা তো অবশ্যই। কিন্তু সেজন্য আপনার 

সাহায্য প্রয়োজন??


রিয়াঃ আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?? 


আমিঃ আপনি কি সত্যিই চান ওদের ভয়াবহ শাস্তি ??


রিয়াঃ আমার কাছে ক্ষমতা থাকলে আমি এখনই নিহালকে তার পাপের ভয়াবহ শাস্তি দিতাম। 

কিন্তু চাইলেও তো এদের মতো শয়তানকে শাস্তি 

দিতে পারবো না?? 


আমিঃ আমার কাছে একটা উপায় আছে?? 


রিয়াঃ কি বলুন আমাকে??


আমিঃ বিয়ে?? 


রিয়াঃ বিয়ে মানে??


আমিঃ আমাকে আপনার বিয়ে করতে হবে?? 


রিয়াঃ কি বলছেন এসব। এই জীবনে বিয়ে নামক জিনিসটা আমি করতে পারবো না??


আমিঃ আমি কারনটা জানি। কিন্তু এছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই?? 


রিয়াঃ সরি আমার পক্ষে এটা কোনো ভাবে সম্ভব নয়?? 


আমিঃ দেখুন আপনি যদি আমাকে বিয়ে করেন তাহলে ওরা শুধু আমাদের সাথে প্রতারনা করার জন্য শাস্তি পাবে না। আমার বাবা-মায়ের হত্যার শাস্তিও পাবে??


রিয়াঃ আপনার বাবা-মায়ের হত্যার শাস্তি মানে??


আমিঃ হুমম আমার স্ত্রী নাবিলা পরিকল্পিত ভাবে আমার বাবা- মা কে হত্যা করেছে?? 


রিয়াঃ ছিহহ একটা মেয়ে এতটা পাষান কিভাবে হতে পারলো। আমার বুঝে আসে না?? 


আমিঃ হুমম। তাইতো আপনাকে বলেছি আমাকে বিয়ে করতে। কারন আপনি যদি আমার কাছে থাকেন তাহলে আপনার নিজ চোখে নিহালের পাপের শাস্তি দেখতে পারবেন আর নেহাও সুরক্ষিত থাকবে??


রিয়াঃ দেখুন আমি এখন আপনাকে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারছি না। রাতে আমি আমার সিদ্ধান্ত আপনাকে জানিয়ে দিবো??


আমিঃ ওকে নো প্রবলেম। আমি আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো??


রিয়াঃ এখন আমাকে উঠতে হবে। বাসায় আমার জন্য সবাই চিন্তা করবে??


আমিঃ আমি কি আপনাকে এগিয়ে দিবো??


রিয়াঃ তার প্রয়োজন নেই। নিচে আমার গাড়ি আছে৷ আমি নিজেই চলে যেতে পারবো। আমি আসছি 

তাহলে আল্লাহ হাফেজ?? 


আমিঃ আল্লাহ হাফেজ?? 


রিয়া চলে গেলো। আমি ভাবতে লাগলাম,, "রিয়াকে কি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া ঠিক হলো? যদি নেহা আরো কষ্ট পায় রিয়াকে দেখে। উফফ অসহ্য লাগছে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ধ্যাৎ যা আছে কপালে পরে দেখা যাবে।। আগে শয়তান গুলোকে শাস্তি দিয়ে নেই।। 


এরপর বাসায় চলে আসলাম। এসে নেহার কাছে দৌড়ে গেলাম। কারন মেয়েটা আমার ফ্লোরে শুয়ে আছে। 

গিয়ে কোলে তুলে নিলাম। বিছানায় শুইয়ে বললাম......


আমিঃ নেহা মামুনি,, মামুনি চোখ খুলো। দেখো পাপা এসে গেছে। এই কলিজা কথা বল??(কেঁদে দিয়ে)


নেহার কোনো রিসপেন্স পাইনি। তাই ডাক্তারের কাছে কল দিলাম। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসলো।। নেহাকে দেখে ডাক্তার আমাকে বললো..........


ডাক্তারঃ জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না বুঝলেন। কি অবস্থা করেছেন মেয়েটার। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সারাদিনে এক ফোঁটা পানিও পড়েনি মুখে। তাই শরীর প্রচুর দুর্বল হয়ে গেছে?? 


আমিঃ কি বলছেন আপনি। আমার মেয়ে সারাদিনে কিছু খায়নি??


ডাক্তারঃ বাহ কেমন বাবা আপনি! নিজের মেয়ে খাবার খেয়েছে কিনা সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন। মেয়েকে সুন্দর ভাবে পালন না করতে পারলে আমাকে দিয়ে দেন। খুব যত্নে রাখবো.??


সত্যিই তো আমার মেয়ে সারাদিন না খেয়ে আছে সেটা আমি জানি না৷ সত্যি তো বাবা হিসেবে আমি ব্যার্থ। মনে মনে এসব ভাবতেছি ঠিক তখনই ডাক্তার বললো..


ডাক্তারঃ ইনজেকশন দিয়ে দিছি কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরবে৷ তারপর কিছু খাবার খাইয়ে দিয়েন??


আমিঃ আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো?? 


ডাক্তারঃ ধন্যবাদ দিতে হবে না। এটা আমার কর্তব্য। আর হ্যা মেয়ের যত্ন নিবেন। মেয়ের মা কোথায় 

উনাকে দেখছি না যে??


আমিঃ মেয়ের মা নেই মারা গেছে??(নাবিলা আমার কাছে মৃত)


ডাক্তারঃ তাহলে মেয়ের কথা ভেবে আরেকটা বিয়ে করুন। মেয়ের অযত্ন করবেন না?? 


আমিঃ জ্বি ধন্যবাদ?? 


ডাক্তারঃ তাহলে আমি আসি কেমন??


আমিঃ সিউর??


এরপর ডাক্তার সাহেব চলে গেলেন।। আর ভাবতে শুরু করলাম,, "আজ আমি যদি মরে যাই তাহলে তো ওরা নেহাকে কোনো জায়গায় বিক্রি করে দিবে নয়তো মেরে ফেলবে। আমি বেঁচে থাকতে আমার কলিজা না খেয়ে অসুস্থ হয়ে থাকে। আমি মরে গেলে না জানি কি হবে।। 


অপরদিকে নিহালের ঘুম ভঙতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে 

লাফ দিয়ে উঠে গেলো। তখন নাবিলারও ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই নাবিলা বলে উঠলো........ 


নাবিলাঃ কি হলো এভাবে ঘুমটা ভেঙে দিলি কেনো?? 


নিহালঃ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছো কয়টা বাজে। দুলাভাই তো অনেক আগে বোধহয় আসছে। যদি এসেই থাকে তাহলে আমাদের কি হবে ভাবছো??


নাবিলাঃ দেখলে ভালোই হবে আমার জন্য??(একটু হেসে বললো)


নিহালঃ তুমি কি পাগল হয়ে গেছো নাকি??


নাবিলাঃ শোন বোকা এমনিতেও আমি বেশি দিন ওর সাথে সংসার করবো না। তাই ও যত তাড়াতাড়ি আমাদেরকে দেখবে তত তাড়াতাড়ি আমাদের বিয়েটা হয়ে যাবে?? 


নিহালঃ হুমম। কিন্তু তোমার বয়স আর আমার বয়সের কথা ভেবে দেখছো একবার??


নাবিলাঃ দিনের পর দিন যখন মজা নিতি তখন বয়স কোথায় ছিলো হ্যা? দুইদিন ভরে যে সারারাত মজা নিচ্ছিস তখন বয়সের কথা মনে পড়েনি। শুধু বিয়ে করার সময় বয়স বয়স করছিস কেনো হ্যা??(রেগে)


নিহালঃ আরে রেগে যাচ্ছো কেনো আমি তো মজা করছিলাম। চলো ক্ষুদা পেয়েছে ডিনার করবো??


নাবিলাঃ চল?? 


তারপর ওরা ডিনার করতে চলে গেলো।। আর এদিকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি রিয়ার অনেক গুলো ফোন। সাইলেন্ট থাকার কারনে বুঝতে পারি নাই। তারপর আমি নিজেই কল দিলাম রিয়াকে। কল দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করলো আর বললো..........


রিয়াঃ হুমম আমি রাজি আপনার প্রস্তাবে??


আমিঃ আমি যে কি বলে আপনাকে ধন্যবাদ দিবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না??


রিয়াঃ এই যে মিস্টার আমি আপনার জন্য রাজি হইনি।আমি আমার প্রতিশোধ আর আপনার মেয়ের জন্য রাজি হইছি। নাহলে আমি জীবনে বিয়ে নামক জিনিস টা করতাম না?? 


আমিঃ সে আপনি যে কারনেই হোন না কেনো,, আপনি রাজি হয়েছেন এতেই আমি খুশি। তা আপনার বাবা-মা ব্যাপারটা কিভাবে নিবে ভেবে দেখেছেন একবারও??


রিয়াঃ সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমি খুব ভালো করে জানি আমার বাবা-মা আমাকে কিছু বলবে না কারন আমি একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছি।। কারো সাথে পরকীয়া করতে নয়?? 


আমিঃ আমি সেটা বলিনি।। আমি বলছি আপনি যে আমাকে বিয়ে করবেন আমার তো একটা মেয়ে 

আছে। সেটাকে আপনার বাবা-মা কিভাবে নিবে??


রিয়াঃ আশ্চার্য মানুষ তো আপনি৷। নিজে বিয়ের প্রস্তাব দিছেন আবার বলছেন কিভাবে মেনে নিবে। বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে তো আপনার এটা ভাবা দরকার ছিলো তাইনা??(রেগে)


আমিঃ আরে রাগার কি আছে আমি তো এমনিতেই বলছি। আচ্ছা সরি??


রিয়াঃ হুহহ। এখন বলেন বিয়ে কবে করবেন?? 


আমিঃ আপনি চাইলে এক্ষুনি??(মুখ ফসকে বলে দিছি)


রিয়াঃ দেখুন ফাজলামো বাদ দিয়ে আসল কথা বলুন??


আমিঃ ওকে আমি আগে নাবিলাকে ডিভোর্স দিবো তারপর??


রিয়াঃ কিন্তু নাবিলা কি আপনাকে ডিভোর্স দিবে?? 


আমিঃ সেই ব্যাবস্থা আমি করবো। কাটা দিয়ে কাটা তুলবো। তুমি বরং বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নাও??


রিয়াঃ আরেকটা কথা??


আমিঃ বলো.??


রিয়াঃ প্রতিশোধ সম্পুর্ণ হলে আমি কিন্তু আপনার সংসার আর করবো না?? 


আমিঃ মানে??


রিয়াঃ আমি শুধু একজনকে নিয়েই ভেবেছিলাম। সে তো আমার হলো না তাই আর কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো না??


আমিঃ ওহহ তাহলে তারপর কি করবেন??


রিয়াঃ কানাডা চলে যাবো। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে আমাদের বিজনেস দেখা শোনা করবো??


আমিঃ ওকে নো প্রবলেম। সেটা আপনার ইচ্ছা?? 


রিয়াঃ হুমমম। তাহলে পরে কথা হচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ?? 


আমিঃ আল্লাহ হাফেজ?? 


কথাটা বলে কলটা কেটে দিলাম। আর ভাবতে লাগলাম কিভাবে নাবিলাকে দিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন 

করা যায়। তারপর একটা প্ল্যান মাথায় আসলো। প্ল্যান টা কি? গল্প পড়তে থাকেন অবশ্যই জানতে পারবেন। আর কিছু না ভেবে নেহাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। 

এমন একটা মেয়ে থাকলে সারাজীবন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে কাটানো সম্ভব। সকালে ঘুম থেকে উঠে নেহাকে ডাকতে লাগলাম..........


আমিঃ নেহা মামুনি, ও নেহা মামুনি উঠো না??


নেহাঃ উফফ পাপা ডিস্টার্ব করো না তো আমি ঘুমাবো। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাও পাপা(ঘুমের ঘোরে)


আমিঃ দেখো পাগল মেয়ে বলে কি। সকাল কয়টা বাজে দেখছো। উঠো না মামুনি প্লিজ। আমার 

খুব ক্ষুদা লাগছে। আর তুমি তো জানো তোমাকে 

ছাড়া আমি কিছু খাইনা বাসায় থাকলে??


কথাটা বলতে দেরি উঠতে দেরি নয়।। আমি জানতাম এই কথা বললে নেহা ঘুম থেকে উঠে যাবে৷ ঘুম থেকে উঠে নেহা আমাকে বললো.........


নেহাঃ পাপা তোমার ক্ষুদা পেয়েছে আগে বলোনি কেনো। আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি??


আমিঃ না মামুনি আমি তোমাকে আজকে দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিবো কেমন??


নেহাঃ সত্যি পাপা??(খুশি হয়ে। আসলে এতোদিন নাবিলা সব করতো।)


আমিঃ হুমম। কিন্তু আমার যে একটা জিনিস লাগবে?? 


নেহাঃ কি পাপা??


আমিঃ এই যে এখানে একটা পাপ্পি লাগবে??(গালটা দেখিয়ে)


নেহাঃ সেটা তো পাবে না?? (হেঁসে)


আমিঃ কেনো??(মন খারাপ করে)


নেহাঃ কারন তুমি কতদিন আমাকে আর আম্মুকে নিয়ে 

ঘুরতে যাও না??


নাবিলার কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে গেলো। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম....... 


আমিঃ তোমার আম্মু তো রাগ করেছে সে তো যাবে না। কিন্তু তোমাকে নিয়ে কালকে ঘুরতে যাবো কেমন??


নেহাঃ আম্মু ছাড়া যাবো??(মন খারাপ করে) 


আমিঃ তোমার আম্মুর রাগ কমলে আরেকদিন আমরা সবাই মিলে অনেক ঘুরবো কেমন??


নেহাঃ সত্যি পাপা। আমার পাপা সবার থেকে বেস্ট। উম্মাহ পাপা??(খুশিতে নাচতে শুরু করলো) 


আমিঃ আস্তে আস্তে পড়ে যাবে তো মামুনি। এখন চলো তোমার দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিবো??


তারপর নেহাকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে আমরা সকালের নাস্তা করে নিলাম। এখন আসল কাজটা করতে হবে। নিহালের রুমের কাছে গেলাম।।নিহাল আর নাবিলা খুব হাসাহাসি করছে। আমি কিছু না বলে দরজায় নক করলাম। সাথে সাথে রুমের পরিবেশ নিরব হয়ে গেলো। 

রুমের ভিতর থেকে নাবিলা বলে উঠলো......... 


নাবিলাঃ কে??


আমিঃ আমি দরজাটা খুলো??


নাবিলাঃ কি বলবে ওখান থেকে বলো?? 


আমিঃ নিহাল??(নাবিলার কথার উত্তর না দিয়ে)


নিহালঃ হুমম দুলাভাই বলো??


আমিঃ একটু আমার রুমে আসবে কিছু কথা আছে?? 


নিহালঃ তুমি যাও আমি আসছি?? 


আমিঃ একটু তাড়াতাড়ি আসো আমার আবার অফিসে যেতে হবে?? 


নিহালঃ এক্ষুনি আসছি দুলাভাই??


আমি আর কিছু না বলে আমার রুমে চলে আসলাম।।

আর নিহালের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর নিহাল আসলো,খুব ভীতু ভাবে। বেচারা মনে হয় ভয় পেয়েছে আমি কিনা কি বলে ফেলি তাই।। তারপর নিহাল বললো...........


আমি আর কিছু না বলে আমার রুমে চলে আসলাম।।

আর নিহালের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর নিহাল আসলো,খুব ভীতু ভাবে। বেচারা মনে হয় ভয় পেয়েছে আমি কিনা  কি বলে ফেলি তাই।। তারপর নিহাল বললো...........


নিহালঃ তুমি যেনো কি বলবে বলেছিলে??


আমিঃ হুমম। তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে?? 


নিহালঃ গুড নিউজ। কি গুড নিউজ দুলাভাই?? 


আমিঃ আমি রিয়ার পরিবারের সাথে কথা বলেছি তোমার ব্যাপারটা নিয়ে?? 


নিহালঃ তুমি রিয়ার বাসার ঠিকানা কোথায় পেলে??


আমিঃ আমার কথা শুনবে কি আগে??


নিহালঃ সরি দুলাভাই তুমি বলো??


আমিঃ হুমম শোনো৷ আমি রিয়ার পরিবারের কাছে তোমার কথা বলেছি। তারা রাজিও হয়েছে। কিন্তু একটা প্রবলেম হয়েছে?? 


নিহালঃ রিয়ার পরিবার রাজি হয়েছে?(অনেকটা খুশি হয়ে) কিন্তু কি প্রবলেম??😔😔


আমিঃ রিয়ার বাবা-মা চাচ্ছেন তোমার বাবা-মা যেনো সেখানে গিয়ে প্রস্তাব দিয়ে আসে। কিন্তু আমার জানা মতে তোমার বাবা-মা এখন কিছুতেই বিয়ে দিবে না?? 


নিহালঃ এই জন্যই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছি পালিয়ে যাবো??


আমিঃ তুমি যদি রিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যাও তাহলে রিয়ার বাবার এতো কোটি টাকার সম্পদ বিজনেস 

তুমি কিছুই পাবে না?? 


নিহালঃ কিন্তু না পালিয়ে গেলে উপায় নেই। আমার এতো কিছু চাই না, রিয়াকে পেলেই হবে?? 


আমিঃ দেখো বোকা ছেলে বলে কি।। শোনো রিয়াকে নিয়ে পালিয়ে গেলে খাওয়াবে কি বোকা। যখন 

রিয়া দেখবে তুমি তাকে চালাতে পারো না তখন রিয়া অন্য কাউকে খুঁজবে?? 


নিহালঃ প্লিজ দুলাভাই এটা বলো না। রিয়াকে আমি অন্য কারো সাথে দেখতে পারবো না। তুমি কোনো উপায় বলে দাও আমাকে?? 


আমিঃ তাহলে আমার কথা শোনো তবেই রাজ্য আর রাজকন্যা দুটোই পাবে??


নিহালঃ বলো দুলাভাই কি করতে হবে?? 


আমিঃ এই পেপারে তোমার আপুর একটা সাইন 

লাগবে এনে দিতে পারবে??


নিহালঃ কিসের পেপার এটা দুলাভাই?? 


আমিঃ এটা হচ্ছে আমার এবং তোমার আপুর কিছু সম্পদের কাগজপত্র। আমি আমাদের সম্পদের 

কিছু অংশ তোমাকে লিখে দিচ্ছি।। আমি সাইন করে দিচ্ছি এখন নাবিলা সাইন করে দিলেই হবে। কিন্তু তোমার আপু এটা জানলে সাইন করবে না তুমি 

এমন ভাবে সাইন করাবে যাতে তোমার আপু কিছু বুঝতে না পারে। এমনকি পেপারে কি লেখা আছে সেগুলো পড়তে না পারে৷ পড়লে সমস্যা হতে পারে?? 


নিহালঃ কি সমস্যা দুলাভাই??


আমিঃ শোনো পেপারে লেখা আছে যে তোমার আর রিয়ার বিয়ে উপলক্ষে এই সম্পদটা তোমাকে গিফট করছি। এখন যদি নাবিলা এটা দেখে তাহলে কি 

হবে একবার ভেবে দেখেছো?? 


নিহালঃ আপু আমাকে খুন করবে??(আস্তে করে বললো)


আমিঃ কি বললে??


নিহালঃ কিছু না দুলাভাই। আমি যাবো আর সাইনটা করিয়ে নিয়ে আসবো।। আপু কিছুই বুঝতে পারবে না??(এটা আপুকে বুঝতে দিলে যে আমি আমার ভালোবাসাকে পাবোই না। মনে মনে) 


আমিঃ তাহলে দেরি না করে কাজটা সম্পুর্ণ করো আর বিয়ের জন্য রেডি হও সালাবাবু??


নিহালঃ দুলাভাই তোমার পা ধুয়ে পানি খেলেও এই ঋণ কখনো শোধ হবে না??(ইমোশনাল হয়ে)


আমিঃ আরে পা ধুয়ে পানি খেতে হবে না শুধু সাইনটা করিয়ে নিয়ে আসো। মন রেখো নাবিলার সাইনটা 

করা মানে তোমার ভালোবাসাকে কাছে পাওয়া??


নিহালঃ ওকে দুলাভাই। আমি এক্ষুনি কাজটা করে আসছি??


কথাটা বলে নিহাল চলে গেলো।। কিন্তু আমার ভয় হতে লাগলো। নাবিলা পেপারটা পড়লেই বিপদ। যাইহোক যদি ধরা পড়ে যাই তাহলে অন্য কোনো প্ল্যান করা যাবে।। আর নিহালের উপর নাবিলা এমনিতেও অনেক দুর্বল তাই ডিভোর্স নিয়ে কোনো কষ্ট করা লাগবে না। কিন্তু আজকে যদি সাইনটা হয় তাহলে আমার প্ল্যান সাকসেসফুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।। দীর্ঘ ১০ মিনিট পর নিহাল আসলো আর বললো..........


নিহালঃ দুলাভাই?? 


আমি দ্রুত নিহালের কাছে গেলাম আর বললাম........ 


আমিঃ নিহাল কাজটা কি হয়েছে?? 


নিহালঃ আসলে দুলাভই??


কথাটা বলে মাথা নিচু করে ফেললো নিহাল।। তারপর আমি বললাম........ 


আমিঃ ওহহ বুঝতে পারছি তুমি কাজটা করতে পারোনি তাইতো??


নিহালঃ দুলাভাই আমার নাম নিহাল,,আমার কাছে অসম্ভব বলতে কিছু নেই, আমি কাজটা করতে পেরেছি??(হাসি মুখে)


আমিঃ সালার ঘরের সালা টেনশনে ফেললি কেনো তাহলে??(সরি রসিকতা করে গালি দিয়েছি ডোন্ট মাইন্ড )


নিহালঃ প্লিজ দুলাভাই রাগ করো না। আমি আসলে সাইনটা নেওয়ার পর এতো খুশি ছিলাম তাই তো তোমাকে সারপ্রাইজ দিলাম। কি সারপ্রাইজ কেমন লাগছে?? 


আমিঃ এমন বলদের মতো আর কাজ করবি না। দুইদিন পর বিয়ে করবি এখন যদি তুই এমন 

করিস বউ থাকবে না তোর। তোর বউকে অন্য 

কেউ নিয়ে যাবে?? 


নিহালঃ এহহ শখ কত। আমার বউ কে নিয়ে যাবে?? 


আমিঃ নিতেও তো পারে কেউ তাইনা??


নিহালঃ একবার বিয়েটা করি শুধু তারপর বউকে নিজের কাছ থেকে যেতেই দিবো না। দেখবো 

কোন সালায় আমার বউয়ের দিকে নজর দেয়??


আমিঃ ওটা সালা না, দুলাভাই হবে??(মুখ ফসকে বলে দিলাম)

 

নিহালঃ মানে??


আমিঃ আরে বলতে চাইছিলাম রিয়ার কোনো ভাই থাকলে তোকে দুলাভাই ডাকতো??


নিহালঃ ওহহ তাই বলো। তুমি যে কখন কি বলো কিছুই মাথায় ঢুকে না??


আমিঃ সব ঢুকবে। আগে বিয়ের দিনটা আসুক??(সালা বাবু তুমি ফেঁসে গেছো। তুমি শুধু সাইনটাই আনোনি। তুমি তোমার ভালোবাসাকে হারানোর সাইন এনেছো মনে মনে)


নিহালঃ কি ভাবছো দুলাভাই??


আমিঃ কিছু না?? 


নিহালঃ কিছু তো একটা ভাবছো এটা আমি সিওর??


আমিঃ আমি ভাবছি তুমি যেটা বলেছিলে সেটাই 

করতে হবে?? 


নিহালঃ আমি কি ভাবছিলাম??


আমিঃ রিয়াকে পালিয়ে বিয়ে করার ব্যাপারটা??


নিহালঃ তুমি না বললে রিয়াকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করলে সম্পত্তির ভাগ কিছুই পাবো না। তাই পালিয়ে বিয়ে করতে নিষিধ করলে। আর এখন বলতেছো পালিয়ে বিয়ে করতে।। আমার মাথায় কিছু আসছে

না দুলাভাই প্লিজ বুঝিয়ে বলো??


আমিঃ শোন তোর বাবা-মা ছাড়া রিয়ার বাবা-মা রিয়ার বিয়ে দিবে না এটা তো জানিস??


নিহালঃ হুমম জানি??


আমিঃ তুই যদি রিয়াকে পালিয়ে বিয়ে করিস তাহলে তোর খরচের সব টাকা আমি দিবো৷ আর তুই যখন চাকরি পাবি তখন তুই তোর সংসার চালাবি। আরেকটা কথা যখন তোদের একটা বাচ্চা হবে তখন দেখবি  সবাই তোদেরকে মেনে নিবে৷ আর রিয়ার বাবার সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারি তো রিয়া। তাহলে সবকিছু তো রিয়া পাবে। সো টেনশন করার কিছু নেই। কি বুঝতে পারছিস তো এবার??


নিহালঃ ওয়াও দুলাভাই ইউ আর গ্রেট। আমি তোমার মাস্টরমাইন্ড প্ল্যান শুনে পুরাই ফিদা। কিভাবে এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও তুমি?? 


(বোকা বুদ্ধি যদি না থাকতো তাহলে তোদের পাপের শাস্তি কিভাবে দিবো তোদের। মনে মনে) তারপর 

আমি বললাম........


আমিঃ অনেক কষ্টে ঘুমাই?? 


নিহালঃ হাহাহা। দুলাভাই বিয়ে করবো কবে??


আমিঃ এতো অস্থির হচ্ছো কেনো??


নিহালঃ ও তুমি বুঝবে না। ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাবো ভাবতেই ডান্স করতে ইচ্ছে করছে?? 


আমিঃ আহা কি প্রেম আমার সালাবাবুর মনে। তাহলে কালকেই বিয়েটা করিয়ে দেই কি বলো??


নিহালঃ কিহহ সত্যি। ইয়াহু,, উম্মাহ দুলাভাই??(গালে চুমু দিয়ে) 


আমিঃ এই সালা এটা কি করলি তুই??


নিহালঃ কি যে বলো দুলাভাই। আজকে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি??


আমিঃ তাই??


নিহালঃ হুমম দুলাভাই??


আমিঃ এই নে ৩০ হাজার টাকা??(এগিয়ে দিয়ে)


নিহালঃ এতো টাকা দিচ্ছো কেনো দুলাভাই??


আমিঃ বিয়ের জন্য কেনা-কাটা করবি৷ আর বাকি টাকা দিয়ে তোর বন্ধুদের ট্রিট দিবি আর বলবি কালকে বউ দেখতে আসতে আমাদের বাড়িতে??


আসলে আমার লজ্জা করে নিজের বিয়ের কেনা-কাটা নিজে করবো এটা ভেবে। তাই সালারে দিয়ে বিয়ের শপিং করাচ্ছি। কিন্তু সালা হয়তো ভাবছে তার বিয়ের

কেনা-কাটার জন্য টাকা দিছি। হয়রে জীবন। হিহিহি।

আপনারা আবার বলে দিয়েন না। তারপর নিহাল বলে উঠলো...... 


নিহালঃ সত্যি??(তীব্র মাথায় খুশি হয়ে) 


আমিঃ হুমমম আদরের সালাবাবু??


নিহালঃ আমি এক্ষুনি যাচ্ছি?? 


আমিঃ টাটা সালাবাবু। আর সুন্দর দেখে পাঞ্জাবি টা কিনবা কেমন??


নিহালঃ সে আর বলতে হবে না। বাই দুলাভাই??


তারপর নিহাল শপিংমলের উদ্দেশ্যে চলে গেলো। আর আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে রিয়াকে একটা ফোন দিলাম। কিছুক্ষন পর রিয়া ফোন রিসিভ করলো........


রিয়াঃ হ্যালো??


আমিঃ রিয়া একটা গুড নিউজ আছে?? 


রিয়াঃ কি??


আমিঃ আমরা কালকে বিয়ে করছি??


রিয়াঃ হোয়াট এতো তাড়াতাড়ি?? 


আমিঃ হুমম কালকে উত্তরা কাজি অফিসে চলে এসো?? 


রিয়াঃ সে আসা যাবে কিন্তু তোমার বউয়ের সাথে ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছুতেই তোমাকে 

বিয়ে করতে পারবো না??


আমিঃ আরে বাবা ডিভোর্স হয়েছে দেখেই তো

বলতেছি কালকে বিয়ে করবো??


রিয়াঃ ওকে??


আমিঃ ওইদিন লাল বেনারসি শাড়ি যেটা কিনছো 

সেটা পড়ে এসো??


রিয়াঃ সেটা বলতে হবে না তোমাকে। আমি একদম পারফেক্ট বউ সেজে আসবো তোমার কাছে?? 


আমিঃ আর একজন পারফেক্ট অভিনেত্রী হিসেবে??


রিয়াঃ বাই??


আমিঃ এই শোনো?? 


কলটা কেটে দিলো।। এর আবার কি হলো। এই সামান্য বিষয় নিয়ে এমন রিয়েক্ট করবে ভাবিনি৷ যাইহোক আগে বিয়েটা করি এরপর জানতে পারবো অভিমানের কারনটা কি। রাতে নিহাল আসলো......... 


নিহালঃ দুলাভাই?? 


আমিঃ আরে নি, নি নিহাল যে??


আমি নিহালের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। নিহাল বললো........


নিহালঃ দুলাভাই জামাইয়ের সাজে আমাকে কেমন লাগছে?? 


আমিঃ তুমি এগুলো এখন পড়ছো কেনো?? 


নিহালঃ না দেখলাম জামাই এর সাজে আমাকে 

কেমন লাগে??(হাসি মুখে)


দেখেন সালার কান্ড দেখেন।। এই পাঞ্জাবি  পড়ে বিয়ে করবো আমি আর সে পাঞ্জাবি পড়ে বসে আছে।(মনে মনে) তারপর আমি বললাম........


আমিঃ এই কি করছো খুলো তাড়াতাড়ি। কালকে 

বিয়ে আজকে এগুলো নাবিলা দেখলে কি 

হবে ভেবে দেখেছো একবার৷ খুলো তাড়াতাড়ি?? 


নিহালঃ আপুকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিছি। তাই সারাদিন শুধু ঘুমাইতেছে??


আমিঃ তুমি পাঞ্জাবি টা খুলো আগে??


(পাঠার পো পাঠা আমার পাঞ্জাবি পড়ে ফেলছে। মনে মনে) তারপর নিহাল বললো.........


নিহালঃ খুলে ফেলবো??(মন খারাপ করে) 


আমিঃ হুমম তাড়াতাড়ি খুলো??


এরপর নিহালের কাছ থেকে পাঞ্জাবি খুলে নিয়ে আমার  আলমারিতে রেখে দিলাম। বলা যায় না আবার এই পাঞ্জাবি পড়লেও পড়তে পারে৷ পাঞ্জাবি রেখে ঘুমিয়ে গেলাম। আর অপেক্ষা করতে লাগলাম কালকের জন্য। 

সকালে ঘুম থেকে উঠে কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে গেলাম। ঘন্টা খানেক পর নিহালের ফোন আসলো। ফোনটা রিসিভ করতেই নিহাল বলে উঠলো.............. 


নিহালঃ দুলাভাই কই তুমি??


আমিঃ আমি তো রিয়াকে আনতে আসছি।। বুঝো তো কত রিস্ক একটা মেয়েকে বাসা থেকে পালিয়ে নিয়ে আসতে। তুমি এক কাজ করো মিরপুর ১২ তে যেই কাজি অফিস আছে সেখানে চলে যাও। আমি রিয়াকে নিয়ে আসতেছি??


নিহালঃ আচ্ছা দুলাভাই কিন্তু পাঞ্জাবি টা কোথায়?? 


আমিঃ আরে পাঞ্জাবি পাঞ্জাবি করো না তো বাসর

ঘরে পাঞ্জাবি পড়ে যেও??


নিহালঃ ওকে দুলাভাই আমি এক্ষুনি মিরপুর যাচ্ছি। বাই??


আমিঃ বাই??


অবশেষে আমার আর রিয়ার বিয়েটা সম্পর্ণ হয়েছে। সাক্ষী হিসেবে আমার দুজন বন্ধু আর রিয়ার বান্ধবী।  সবাই বিবাহিত ছিলো। 


বিকাল প্রায় ৫ টা৷।রিয়াকে নিয়ে বাসার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর রিয়া আমার হাত জড়িয়ে ধরে আছে। কারন বুঝতে দেওয়া যাবে না আমরা বিয়ে করলেও কেউ কাউকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মানিনা৷ বাসার 

কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পর নাবিলা এসে দরজা খুলে দিলো। আমাকে আর রিয়াকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আমি কিছু না বলে রিয়াকে কোলে তুলে নিলাম।। রিয়া লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মাথা লুকিয়ে রাখলো.........


বিকাল প্রায় ৫ টা৷।রিয়াকে নিয়ে বাসার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর রিয়া আমার হাত জড়িয়ে ধরে আছে। কারন বুঝতে দেওয়া যাবে না আমরা বিয়ে করলেও কেউ কাউকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মানিনা৷ বাসার 

কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পর নাবিলা এসে দরজা খুলে দিলো। আমাকে আর রিয়াকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আমি কিছু না বলে রিয়াকে কোলে তুলে নিলাম।। রিয়া লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মাথা লুকিয়ে রাখলো.........


আমিঃ এইতো আটার বস্তা নিয়ে আসলাম মনে হয়??


রিয়াঃ এই কি বললেন আপনি আমি আটার বস্তা৷ আর আপনাকে এতো হিরোগিরি দেখাতে কে বলেছে??


আমিঃ গল্পে তো আমি হিরো সুতরাং আমি না 

দেখালে কে দেখাবে??


রিয়াঃ হইছে এসব বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে যা করতে আসছি সেটা করেন??


আমিঃ বাসর তো কাল রাতে এখন কি করবো??


রিয়াঃ আবার.....??


আমিঃ সরি সরি??


রিয়াঃ হুহহ কাজের কথা বলেন?? 


আমিঃ আজ রাতে গেস্ট আসবে, সবার সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিবো। আর হ্যা আমরা দুজন এমন ভাবে চলবো যাতে সবাই বলে তোমার আমার জুটি টা বেস্ট। তাহলে নিহাল আর নাবিলার জ্বলবে। বুঝতে পারছো??


রিয়াঃ  হুমম বুঝতে পারছি কিন্তু নিহাল এখন কেথায়??


আমিঃ নিহাল মিরপুর কাজি অফিসে বসে আছে??


কথাটা বলতে না বলতেই নিহালের ফোন আসছে৷ কলটা রিসিভ করতেই বললো.......


নিহালঃ দুলাভাই আর কতক্ষণ লেট হবে তোমাদের?? 


আমি কিছু না বলে কল কেটে দিলাম।। খুব হাসি পাচ্ছে 

আমার। হাসি চেপে রাখতে না পেরে জোরে হেসে দিলাম। রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে কেনো হাসছি। তারপর বলেই ফেললো........


রিয়াঃ ওভাব হাসছেন কেনো??


আমিঃ নিহাল মিরপুরে এখনো বসে আছে?? 


রিয়াঃ ওহহহ??(মন খারাপ করে)


আমিঃ তোমার মন খারাপ নাকি নিহালের জন্য?? 


রিয়াঃ না বাবা-মায়ের জন্য। বলেও বের হইনি৷ হয়তো এতক্ষণে খুব চিন্তা করছে??


আমিঃ ওহহ এই ব্যাপার। আচ্ছা মন খারাপ থাকলে কল দিয়ে উনাদের সাথে কথা বলো?? 


রিয়াঃ কিন্তু বাবা-মা যদি বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে কষ্ট পায়??


আমিঃ আগে তো কথা বলে দেখো?? 


তারপর রিয়া তার বাবাকে কল দিলো। প্রায় দুইবার রিং হওয়ার পর রিয়ার বাবা ফোন রিসিভ করলো আর বললো.........


রিয়ার বাবাঃ মা কই তুই। সেই কখন গেলি সন্ধা হয়ে আসছে এখনো আসছিস না। কখন আসবি??


রিয়াঃ বাবা আমি আসবো না??


রিয়ার বাবাঃ আসবি না মানে। কি বলছিস এসব??


রিয়াঃ বাবা একটা কথা বলবো?? 


রিয়াঃ কি কথা। আর তুই এভাবে কথা বলছিস 

কেনো। তুই ঠিক আছিস তো??


রিয়াঃ আমি ভালো আছি।। প্লিজ আগে আমার 

কথাটা শুনো??


রিয়ার বাবাঃ আচ্ছা বল??


রিয়াঃ বাবা আমি বিয়ে করেছি??(খুব কষ্টে কথাটা 

বলে ফেললো)


রিয়ার বাবাঃ বিয়ে করেছিস মানে? কাকে বিয়ে করেছিস??


রিয়াঃ তোমার অফিসের ম্যানেজারকে??


রিয়ার বাবাঃ তুই সাকিলের কথা বলছিস??


রিয়াঃ হুমম বাবা??


রিয়ার বাবাঃ হোয়াট কি বলছিস এসব।। আর সাকিল তো বিবাহিত তাহলে তুই কিভাবে পারলি এমন একটা ভুল কাজ করতে?? 


রিয়াঃ বাবা উনার স্ত্রীর সাথে উনার ডিভোর্স হয়ে গেছে?? 


রিয়ার বাবাঃ তাহলে বুঝ এবার, যার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে তার কাছে তুই কিভাবে নিরাপদ থাকবি??


রিয়াঃ বাবা তুমি না বলতে তোমার ম্যানেজার খুব ভালো মানুষ এবং খুব সৎ। তাহলে আজ কিছু না 

যেনে উনাকে এমন বলছো তুমি। 


রিয়ার বাবাঃ মা শোন ডিভোর্স তো আর এমনি এমনি হয় না তাইনা?? 


রিয়াঃ ডিভোর্স কেনো হয়েছে সেটা আমি খুব ভালো করে জানি৷ আর তুমি তো জানো তোমার মেয়ে 

কখনো ভুল করে না৷ আমি এবারো ভুল করিনি বাবা। আমি বাসায় এসে তোমাকে সব বলবো??


রিয়ার বাবাঃ আচ্ছা মা তোর জীবনের সিদ্ধান্ত তুই  নিয়েছিস। তবে যদি কখনো তোর ভুল মনে হয় 

তাহলে কিন্তু আমাদের দোষ দিতে পারবি না??? 


রিয়াঃ তার মানে তুমি বিয়েটা মেনে নিচ্ছো?? 


রিয়ার বাবাঃ না মেনে তো উপায় নেই। তুই ছাড়া আমাদের তো আর কেউ নেই?? 


রিয়াঃ ধন্যবাদ বাবা। তবে একটা কথা দিচ্ছি তোমাকে, তুমি নিজেই একদিন বলবে তোমার মেয়ে ভুল করেনি?


রিয়ার বাবাঃ তাই যেনো হয় মা। তুই কবে বাসায় আসবি??


রিয়াঃ ২দিন পর আসবো। মা কে প্লিজ তুমি ম্যানেজ করিও??


রিয়ার বাবাঃ তুই চিন্তা করিস না তোর মা কে আমি 

সব বুঝিয়ে বলবো??


রিয়াঃ ধন্যবাদ বাবা। এখন রাখছি পরে কথা বলবো??


রিয়ার বাবাঃ আচ্ছা মা নিজের যত্ন নিস??


তারপর তাদের কথা শেষ হলো। আর রিয়াও স্বাভাবিক হলো৷ এবার আপনাদের বিষয়টা ক্লিয়ার করি। রিয়ার বাবার অফিসে আমি জব করতাম। সেখানে একদিন রিয়ার বাবা রহমান সাহেব রিয়ার জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করে। সেখানে আমাদের দাওয়াত দেয়৷ সেখানে রিয়াকে প্রথম দেখি।। কিন্তু রিয়া তখন অনেক ছোট ছিলো। রিয়া আর আমার বয়সের প্রার্থক্য ১০ বছরের কম হবে না। সেদিন পার্টিতে নিহালকেও দেখতে পাই। বই কেনার নাম দিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পার্টিতে আসছে। রিয়া আর নিহালের কথা আড়াল থেকে শুনতে পেয়ে বুঝতে পারি দুজনে সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। রিয়াকে আমি অনেক আগে থেকে চিনতাম। কিন্তু সামনা-সামনি দেখা বা কথা হয়নি৷ ভেবেছিলাম নিহাল বড় হলে রিয়ার সাথে ধুমধামে বিয়ে দিবো। কিন্তু আজ নিজেই বিয়ে করলাম সেই পিচ্চি মেয়েটাকে। রিয়ার বর্তমান বয়স ১৯ হবে। আর আমার ২৯+। যাইহোক গল্পে চলেন এবার।।। 


আমিঃ কি তোমার বাবা কি বললো। নিশ্চয়ই বলেছে আমার চাকরি ঘ্যাচাং করে দিবে তাইতো??


রিয়াঃ মোটেও না৷ আর আমার বাবা এমন নয়। বাবা বিয়েটা মেনে নিয়েছে?? 


আমি জানতাম রহমান সাহেব শান্ত মনের মানুষ। উনার চোখের মনি রিয়া। রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিবেন উনি। তবুও মজা করে বললাম কথাটা।। 


আমিঃ ওহহ তাই নাকি তাহলে তো আর মন খারাপ করার কিছু নেই। তা ম্যাডাম মনটা কি এখন ভালো হয়েছে?? 


রিয়াঃ হুমম। আচ্ছা নেহা কোথায়?? 


আমিঃ তাইতো। তুমি কাপড় চেঞ্জ করো আমি নেহাকে নিয়ে আসছি??


রিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে?? 


তারপর তাড়াতাড়ি রুমের বাহিরে এসে নেহাকে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও নেহা নেই। আমার মনের মাঝে আলাদা একটা ভয় কাজ করতে লাগলো। নাবিলা আবার কোনো ক্ষতি করেনি তো নেহার৷ তাই তাড়াতাড়ি করে নাবিলার রুমে গেলাম আর বললাম....


আমিঃ নেহা কোথায়??


নাবিলাঃ তুমি এখানে আসছো কেনো? লজ্জা করে না বউ রেখে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে আনতে??


আমিঃ নেহা কোথায়??(প্রচন্ড রেগে গিয়ে)  


নাবিলাঃ আমি জানিনা। তোমার মেয়ে আমার কাছে আসে না এখন??


আমিঃ না আসলেই ভালো। আমার মেয়ে তোর মতো বেশ্যার কাছ থেকে যত দূরে থাকবে ততই ভালো?? 


নাবিলাঃ একে তো বউ থাকতে আরেকটা বিয়ে করে আনছো তার উপর এতো বাজে বাজে কথা বলছো।

আমি যদি চাই সারাজীবন জেলের ভাত খাওয়াতে পারবো তোমাকে??


আমিঃ তাহলে খাওয়া। না করছে কে তোরে?? 


নাবিলাঃ তোমার উপর আমার কোনো ফিলিংস নেই। সো তোমার এসব ব্যাপার নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তুমি ১০ টা বিয়ে করলেও আমার কিছুই যায় আসে না?? 


আমিঃ তা থাকবে কেনো। তোর সব ফিলিংস তো 

এখন আরেকটা জামাইয়ের জন্য?? 


নাবিলাঃ মানে? তুমি কার কথা বলছো??


আমিঃ কেনো চিনতে পারছিস না এখন৷ যে তোর বিছানা গরম করে তাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি??


নাবিলাঃ ওহহ তার মানে তুমি জেনে গেছো।  হাহাহা নো প্রবলেম জেনে ভালোই হলো। এবার আমি নিহালকে বিয়ে করবো তারপর সারাজীবনের জন্য এখান থেকে  চলে যাবো?? 


আমিঃ তোর লজ্জা করলো না নিহাল তোর ছোট ভাই ছিলো তার সাথে কিভাবে পারলি এমন নোংরামি করতে। তোর যে ছোট একটা মেয়ে আছে তার কথা একবারো মনে পড়লো না?? 


নাবিলাঃ মেয়ে হাহাহা। আমার কোনো মেয়ে নেই। আমি শুধু জানি নিহালকে বিয়ে করতে পারলেই হলো??


আমিঃ তোকে বুঝিয়ে লাভ নেই। তোর যা ইচ্ছে তাই কর??


নাবিলাঃ তোমাকে বলছি নাকি আমাকে বুঝাতে।  যত্তসব??


আমিঃ একদিন বুঝবি তুই কি পেয়েছিস আর কি হারিয়েছিস। আর কিছু বলবো না। বাই??


তারপর রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে চলে গেলাম। নেহার জন্য প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে কি করবো এখন৷। নেহা মা তুই কোথায় আছিস এখন৷ তারপর রুমে প্রবেশ করলাম। রুমে প্রবেশ করতেই অবাক। কারন রিয়া কথা বলছে আর নেহা খুব হাসাহাসি করছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রিয়ার সাথে পরিচিত হয়ে নেহা খুব খুশি।। 

তারপর আমি নেহাকে ডাক দিলাম......... 


আমিঃ নেহা মামুনি??


নেহা আমাকে দেখে আমার কাছে চলে আসলো আর বললো.......


নেহাঃ পাপা তুমি কোথায় ছিলে সারাদিন। জানো পাপা আন্টি না খুব ভালো। আমাকে অনেক মজার মজার গল্প শুনচ্ছে??


আমিঃ তাই??


নেহাঃ হুমম পাপা। আন্টি??(রিয়াকে বললো)


রিয়াঃ হুমম মামুনি বলো??


নেহাঃ তোমার নাম কি??


আমিঃ মামুনি তোমার এই আন্টির নাম হলো আম্মু। 

কি খুব সুন্দর নাম না??


নেহাঃ আম্মু কি কারো নাম হয় নাকি পাপা??


আমিঃ তুমি না বলো আম্মু ডাকটা খুব সুন্দর। তাই আজ থেকে তুমি উনাকে আম্মু বলে ডাকবে?? 


নেহাঃ কিন্তু উনি তো আমার বড় পাপা। আমি উনাকে আম্মু আন্টি বলে ডাকি??


আমিঃ না তোমার আন্টিকে যদি শুধু আম্মু বলে ডাকো তাহলে উনি তোমাকে অনেক গল্প শুনাবে। আর আমাদের সাথে থাকবে??


নেহাঃ কি সত্যি বলছো উনি আমাদের সাথে থাকবে?? 


আমিঃ উনি নয়। আম্মু বলে ডাকবে কেমন। আর হ্যা উনি আমাদের সাথে থাকবে। কারন আমি উনাকে তোমার জন্য এনেছি। তোমাকে গল্প শুনাবে??


নেহাঃ সত্যি আমার পাপা বেস্ট। তুমি বসো আমি গিয়ে আম্মুকে এই নতুন আম্মুর কথা বলে আসি??


রিয়াঃ আরে শোনো?? 


আমিঃ যেতে দাও ওকে??


তারপর নেহা নাবিলার কাছে চলে গেলো।  ঠিক তখনই রিয়া আমাকে বলে উঠলো.......... 


রিয়াঃ এই যে শুনুন আম্মু আবার কার নাম হ্যা। আমার এতো সুন্দর নাম থাকতে আম্মু নাম দিলেন কেনো??


আমিঃ আমি যেটা করি সেটা ভেবে চিন্তে করি। দেইখো আজ কিংবা কাল যদি নাবিলা আর নিহালের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় দেখবে নাবিলা আবার আমার কাছে ফিরতে চাইবে৷ যদিও আমি ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি তবুও আমার দুর্বলতা নেহাকে নেওয়ার জন্য আইনের সহযোগিতা নিতে পারে৷ তাই আগে থেকে সব ব্যাবস্থা করে রাখছি। আম্মু নাম দেওয়ার কারনটা সময় হলে আপনা আপনি বুঝতে পারবে৷ সো এখন আমি গোসল করে আসি। কেমন??


রিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে?? 


তারপর গোসল করার জন্য ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। আর ওইদিকে নেহা গিয়ে নাবিলাকে বললো.......


নেহাঃ আম্মু জানো আমাদের রুমে আম্মু আসছে??


নাবিলাঃ এই পাগলের মতো কি বলছিস। আম্মু আসছে মানে? আমি কে তাহলে?? 


নেহাঃ আম্মু আসছে। আর তুমি তো আমার আম্মু?? 


নাবিলাঃ ও বুঝেছি আজকে আসতেই আমার মেয়েকে হাত করে নিয়েছে। যেই মেয়ে আমাকে ছাড়া কাউকে আম্মু ডাকেনি আর সে নতুন মেয়েটাকে এখুনি আম্মু ডাকা শুরু করে দিছে। ভালোই হয়েছে! এই আপদ গুলো দূরে থাকলেই ভালো। বেশি বেশি করে ওই মেয়েকে আম্মু ডাকিস। আর আমার আশেপাশে যেনো তোরে না দেখি??


নেহাঃ আম্মু??😭😭(কাঁদো কাঁদো গলায় বললো)


নাবিলাঃ এই একদম আম্মু বলবি না। তোর তো আম্মু আসছে তাকে আম্মু বল যা??


তারপর নেহা কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে আসলো। আমি নেহার কান্নার আওয়াজ পেয়ে তোয়াল পেছিয়ে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলাম। কারন নেহার কান্না আমার একদম সহ্য হয় না। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখি রিয়াকে জড়িয়ে ধরে নেহা কান্না করছে।।তারপর আমি নেহার কাছে গিয়ে বললাম.......... 


আমিঃ নেহা মামুনি কান্না করছো কেনো?? 


নেহাঃ পাপা আম্মুকে এই আম্মুর কথা বলতেই আমাকে বলেছে আম্মুকে আর আম্মু না ডাকতে??


আমিঃ তাহলে ডাকবে না কেমন??


নেহাঃ কি বলো তুমি পাপা??


আমিঃ শোনো তোমার আম্মু অনেক রেগে আছে তাই এখন আর আম্মু বলে ডেকো না। না হলে রাগ করে চলে যাবে তোমাকে ছেড়ে। তুমি কি এটা চাও??


নেহাঃ না না পাপা। আমি আর আম্মু বলে ডাকবো না। 

তবুও আম্মু যেনো না চলে যায়?? 


আমিঃ এইতো গুড গার্ল??


আমার আর নেহার কথার মাঝে রিয়া আমাকে এভাবে দেখে আমার বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। বুক থেকে হালকা পানি বেয়ে বেয়ে পড়ছে এটা দেখছে৷ আর নাক দিয়ে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।। যেটা আমি বুঝতে পারছি। 

তাই আমি রিয়াকে বললাম.......... 


আমিঃ আর ইউ ওকে??


রিয়াঃ প্লিজ শরীরে কাপড় পড়ে আসুন??


আমি মজা করে রিয়ার একটু কাছে যেতেই রিয়া বলে উঠলো........ 


রিয়াঃ আমি আপনাকে রিকুয়েষ্ট করছি প্লিজ শরীরে কাপড় দিয়ে আসেন??


তারপর আমি আর দাঁড়ালাম না,, তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আসলাম। আর রিয়ার এই ব্যাবহারের কথা ভাবতে লাগলাম। রাতে রিয়া আর নেহাকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। আর আমি সোফায় শুয়ে পড়লাম। যেহেতু আমাদের সম্পর্কটা সারা জীবনের জন্য নয়। 

বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি থাকার কারনে গেস্ট রা কেউ আসতে পারেনি।। আর নিহালের কোনো খবর নেই। এদিকে নেহা আর রিয়া গল্প করছে।। আমার ক্লান্ত লাগছে তাই ঘুমিয়ে পড়লাম। মধ্য রাতে মনে হলো কেউ আমার বুকে নাক দিয়ে ঘসা দিচ্ছে। আমি শুধু বুঝার চেষ্টা করলাম কি হচ্ছে আমার সাথে। বাসায় আবার ভুত পেত্নী আসেনি তো। ভুতের কথা মনে পড়তেই শরীর কাঁপুনি চলে আসলো আমার। আল্লাহ গো ভুত আমার রক্ত চুষে নিচ্ছে না তো।। তাই আমি বুকের উপর থাকা অচেনা ভুত বা মানুষকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। ছিটকে ফ্লোরে গিয়ে পড়লো৷ আর ব্যাথা পেয়ে বলতে শুরু করলো,,"ও মা গো আমি শেষ। আমার কোমড়টা বুঝি গেলো।। 


কথাটা শুনে তো আমি অবাক। কারন এটা তো রিয়ার গলা। কিন্তু রিয়া তো ভুত না, তাহলে আমার বুকের উপর কি করছে৷ আমি সোফা থেকে নেমে তাড়াতাড়ি রিয়ার কাছে গেলাম। তারপর রিয়াকে কোলে তুলে নিলাম।। কোলে করে বিছানায় নিয়ে রাখতেই ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো। 


ওদিকে নিহালের চিন্তায় নাবিলার চোখে ঘুম নেই।কারন নিহাল যে আজ এখনো বাসায় আসেনি। কোনো ফোন ধরছে না। নাহলে আজকেই নাবিলা বিয়ের কথা বলতো নিহালকে। কারন নাবিলা তো এখন মুক্ত। রিয়ার চিৎকার শুনে নাবিলা আমাদের রুমের কাছে কান দিলো আর বুঝার চেষ্টা করলো আমরা কি করছি। 

এদিকে রিয়া ব্যাথায় কাতর হয়ে আছে। তাই আমি বললাম দাঁড়াও ঔষধ নিয়ে আসছি। রিয়া কোমর থেকে কাপড়টা একটু নিচে নামাও আমি ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছি। আর ওদিকে নাবিলা নিজে নিজে বললো......


নাবিলাঃ ঔষধ লাগাবে, মানে ব্লিডিং হচ্ছে। ছিহহ ছিহহ ফুলসজ্জা করবে ভালো কথা তাই বলে এভাবে 

চিৎকার করতে হবে। আমরা কি ফুলসজ্জা করি নাই। আর মেয়ের কি দোষ,সব দোষ তো হারামি টার৷ নিজে ৩০ বছরের বুইরা হইয়া বিয়ে করছে ১৮ বছরের মাইয়ারে??


আর এই দিকে আমি রিয়াকে বললাম.........


আমিঃ রিয়া কাপড়টা একটু নিচে নামাবে প্লিজ??(যেহেতু কোমরে ব্যাথা পেয়েছে সেহেতু কাপড়টা হালকা নিচে নামানোর কথা হয়েছে)


রিয়াঃ না অনেক ব্যাথা করছে আমি পারবো না?? 


আমিঃ আরে একটু নামাও, দাঁড়াও আমি হেল্প করছি??


আর এদিকে নাবিলা নিজে নিজে বলতে লাগলো........ 


নাবিলাঃ মানুষ কত বড় পাষান হতে পারে।। একে তো অল্প বয়সী মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছে তারপরেও নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য আরো জোর করতেছে। 

হয়তো মেয়েটাকে মেরেই ফেলবে পশুটা। 

ধুরর আমি ওদের কথা ভাবছি কেনো। আমার তো নিহালকে নিয়ে ভাবা উচিত। আর সকালে মেয়েটার করুন অবস্থা দেখবো। যখন গেস্টদের সামনে সুন্দর ভাবে হাঁটতে পারবে না, তখন সবাই খুব মজা নিবে। 

উফ ভাবতেই কি আনন্দ হচ্ছে। যাই নিহালকে গিয়ে কল দেই। ছেলেটা যে কোথায় আছে??


তারপর নাবিলা রুমে গিয়ে নিহালকে ফোন দেয়।। প্রতি বার ফোন বন্ধ থাকলেও এবার রিং হচ্ছে। কিন্তু রিসিভ করার কোনো নাম নেই। আসলে নিহাল জেনে গেছে আমি আর রিয়া বিয়ে করে নিছি, তাই সে বারে নেশায় ব্যাস্ত। নাবিলা বারবার ফোন দিচ্ছে তাই বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই নাবিলা বলতে লাগলো.........


নাবিলাঃ কিরে কই তুই। সারাদিন ফোন দিছি তোর খবর নেই কেনো?? 


নিহালঃ বারে আছি কিছু বলবি??


নাবিলাঃ তুই আমাকে তুই করে বলছিস। তার মানে তুই নেশা করছিস। তোর কথা শুনতে কেমন জানি লাগছে। 

বল কেনো নেশা করলি??


নিহালঃ নেশা করেছি আরো করবো তোর বাপের কি??


নাবিলাঃ তোর সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। তুই বারের নাম বল আমি আসতেছি তোকে নিতে??


নিহালঃ লাগবে না। আমার সময় হলে আমি চলে আসবো। এবার বল তোর জামাইয়ের ফুলসজ্জা 

কেমন চলছে?? 


নাবিলাঃ তার মানে তুই সব কিছু জানিস। আমি তোকে বলতে চাইছিলাম মাত্র। আর কি বলবো তোকে, তোর দুলাভাই কোন অল্প বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে আনছে। এখন নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে?? 


নিহালঃ তোমার এতো কষ্ট লাগলে জামাই ছেড়ে আসলে কেনো??


নাবিলাঃ কারন আমি তোকে ভালোবাসি। শাকিলের প্রতি এখন আমার কোনো ফিলিংস কাজ করে না??


আমি বলি ওরে হারাম জাদি ফিলিংস দিয়ে ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসার কোনো চাহিদা থাকে না। সে ক্ষেত্রে যদি তোমাদের সন্তান নাও হয় একে অপরকে আগলে সারাজীবন পার করার নাম ভালোবাসা। নিজের চোখের সামনে এমন ঘঠটা দেখেছি,কই তাদের তো সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়নি। এটাই তো ভালোবাসা বোন। 

আবার এমনও ঘঠনা নিজ চোখে দেখেছি সুখের সংসার বিবাহ যোগ্য তিন সন্তান রেখে পরকীয়া করে চলে যেতে। আফসোস তারাই বা কেমন সন্তান😕😕।

নিজের মা পরকীয়া করে সেটা ছেলে হয়ে নিজেরা চুপ করে থাকে 😠😠। ছিহ বলতেও ঘৃণা করে এসব নারী ও সন্তানের কৃতকর্মের কথা। 


নাবিলার মতো শত শত মেয়ে বাস করে সমাজে।। আর হাজারো নিরীহ ছেলের সুন্দর জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ এদের বিচার করুন। যারা স্বামী রেখে অন্য ২২/২৪ বছরের যুবকের সাথে অবৈধ মেলা মেশা বা ভিডিও কলে অশ্লীল ভাবে কথা বলে।। 

আরে মাতারি তোরে শুধু ভোগ করবো বিয়ে করবো না।

তোর স্বামী তোর সব। কেনো এটা বুঝিস না বোন😥।

কি মজা পাও স্বামীর হক নষ্ট করে অন্যকে দিয়ে। 

হাত জোর করছি বোন🙏🙏তোমার দুটি পায়ে পড়ছি

নিজের স্বামীর সম্পদ অন্য কোনো পুরুষের কাছে বিলীন করে দিও না। প্লিজ🙏🙏


উপরের কথা গুলো সম্পুর্ণ বাস্তব।।আর এখানে আমার কিছু অনুরোধ করা হয়েছে আপনাদের কে। আশাকরি ছোট ভাই নয়তো বড় ভাই হিসেবে আমার কথা গুলো রাখবেন প্লিজ। বিদেশে এসেও নিজ কানে রুমের ৮/১০ টা ছেলের কাছ থেকে শুনি। অন্যের স্ত্রী তাদের সাথে ভিডিও কলে অশ্লীল ভাবে কথা বলে। দেখা সাক্ষাৎ করে। বাকিটা আপনারা বুঝে নেন। এবার বুঝেন আপনি তাকে বিশ্বাস করে তার সাথে উলঙ্গ অবস্থায় কথা বলেন সে নিজেই আবার এক কথায় দুই কথায় বলে দেয় আমাদের। তখন খুব কষ্ট হয়। আপনার স্বামীর ভালোবাসা অন্যকে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। 

এমন কোনো মেয়ে মানুষ আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকলে দয়া করে আনফ্রেন্ড করে দিবেন আমাকে। এতে কষ্ট করে আমাকে করতে হবে না। তবে আমার দীর্ঘ বিশ্বাস আমার পাঠক পাঠিকা অনেক ভালো💝। মহান আল্লাহ তায়ালা আমার পাঠক পাঠিকাদের সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন। সেই সাথে আমাকেও💝🤲🤲


আর হ্যা পাঠিকাদের বলছি,,বিয়ে করার আগে অবশ্যই পার্সোনাল ভাবে ছেলের সাথে কথা বলে নিবেন। ঠিক তেমনই পাঠকরা মেয়েদের সাথে পার্সোনাল ভাবে কথা বলে নিবেন, তাদের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা। যদি থাকে নিজ থেকে সরে যাবেন। সে ভাবে সরবেন যেনো মেয়েটার সম্মান নষ্ট না হয় এবং কেউ বুঝতে না পারে। 

মনে রাখবেন ভালোবাসা থাকলে সব করা সম্ভব। 

এবার গল্পে চলুন। 


এরপর নিহাল বলে উঠলো............... 


নিহালঃ তাহলে দুলাভাই কি করলো না করলো সেটা আমাকে বলার কি আছে??


নাবিলাঃ তুই এমন রেগে যাচ্ছিস কেনো?? 


নিহালঃ রাখছি বাই??


নাবিলাঃ শোন হ্যালো, হ্যালো??


নাবিলার আর বুঝতে বাকি রইলো না ওপাশ থেকে কল কেটে দিয়েছে নিহাল। আর ওদিকে একটার পর একটা ড্রিংকস নিচ্ছে নিহাল৷ এখানে যেই আসে সবাই কোনো না কোনো কষ্ট নিয়েই আসে।। তাই কেউ জিজ্ঞেস করে না কেনো তুমি এগুলো খাচ্ছো। কি তোমার কষ্ট। 


এদিকে জোর করে রিয়ার কোমরে ঔষধ লাগিয়ে দিছি।

এখন হয়তো আগের থেকে বেটার লাগছে ওর। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, ও আমার বুকে কি করছিলো। 

ওকে কি জিজ্ঞেস করবো। যদি কিছু মনে করে। যা হবার হবে আগে জিজ্ঞেস করে দেখি কি বলে............


আমিঃ রিয়া??


রিয়াঃ হুমম বলেন?? 


আমিঃ কেমন লাগছে এখন??


রিয়াঃ ভালো তবে??


আমিঃ তবে কি??


রিয়াঃ পেটে হালকা ব্যাথা করছে ওখানে কি একটু মালিশ করে দিবা। তাহলে ভালো লাগতো??


হায় হায় বলে কি।। কোমর মালিশ করতে গিয়ে আউট অফ কন্ট্রোল আমি। এখন পেট মালিশ করতে গেলে কি হবে আল্লাহ জানে। তাই আমি রিয়াকে বললাম.....


আমিঃ না মানে তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?? 


রিয়াঃ কি কথা??


আমিঃ আমার বুকে কি করছিলে তখন??


রিয়াঃ ঘ্রাণ নিচ্ছিলাম??


আমিঃ কি বলো ঘ্রাণ নেয় নাকি কেউ??


রিয়াঃ আমি নেই। আরো নিবো যখন মন চায়। এখন যা বলছি তা করো। আমার পেট মালিশ করে দাও??


আমিঃ না মানে ওটা আমি পারবো না। আমার কেমন জানি লাগছে??


রিয়া আমার কথা শুনে রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো......


রিয়াঃ লাগবে না তোমার মালিশ। যাও ঘুমাও এখন৷ খুব বিরক্ত করছি তাইনা। তার জন্য সরি??


রিয়ার দাঁড়িয়ে যাওয়া দেখে আমি তো পুরাই অবাক।।

যে মেয়ে একটু আগেও তো ব্যাথায় নড়তে পারছিলো না সে একেবারে দাঁড়িয়ে গেছে অদ্ভুত ব্যাপার.......


আমিঃ রিয়া তোমার না কোমরে ব্যাথা তুমি দাঁড়ালে 

কি করে?? 


রিয়াঃ ওহহ তুমি তো চাও আমি সারাজীবন কোমর ব্যাথা নিয়ে থাকি তাইনা। এখন দাঁড়ালেও বিপদ??


আমিঃ এমা ছিহ ছিহ কি বলছো এসব। তুমি দ্রুত সুস্থ হবে এজন্যই তো মালিশ করে দিলাম??


রিয়াঃ যদি তুমি আমাকে সুস্থ চাইতে তাহলে তো আমার পেট মালিশ করে দিতে?? 


আমিঃ আচ্ছা আসো আমি মালিশ করে দিচ্ছি। তবুও এতো রাতে রাগারাগি করিও না?? 


বলতে দেরি আসতে দেরি নাই। এসেই শুয়ে পড়েছে। কিন্তু আমি পড়লাম মহা ঝামেলায়। কিভাবে মালিশ করে দিবো। তারপর রিয়া আমাকে বললো.......


রিয়াঃ কি হলো তাড়াতাড়ি দাও?? 


আমিঃ পেট থেকে কাপড়টা সড়াও তাহলে??  


রিয়াঃ কেনো তোমার বুঝি হাত নেই তুমি সড়াতে পারছো না??


আমি বুঝতে পারছি না রিয়া কি চাচ্ছে।। ও কি বুঝে না একটা ছেলের পক্ষে এই মুহুর্ত টা কন্ট্রোল করা কত কষ্টকর। আর রিয়া তো সারাজীবন আমার সাথে থাকবে না। যদি ভুল করে কিছু করে ফেলি তাহলে সারাজীবনের জন্য ক্ষমা করতে পারবো না নিজেকে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে রিয়া বললো........


রিয়াঃ কি ভাবছো এতো। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাড়াতাড়ি করো??


আমি আর কিছু না বলে রিয়ার পেট থেকে কাপড়টা সরিয়ে দিলাম।।আর মনে মনে বলতে লাগলাম কন্ট্রোল ভাই, কন্ট্রোল। আলতো করে হাতটা পেটে রাখতেই রিয়া কেঁপে উঠলো। আস্তে করে চোখ মেলতেই চোখ গেলো মেদবিহীন সাদা পেটে।। আমি যদি আজকে এই মুহুর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি তাহলে কি পৃথিবীর সবচেয়ে ধৈর্য্যশীল ব্যাক্তি হিসেবে পুরুষ্কার পাবো?(সবাই কমেন্ট করে জানাবেন।) ধুর কি ভাবছি এসব আমি কি পাগল হয়ে গেছি নাকি এখনই আবল তাবল বলা শুরু করে দিয়েছি। রিয়া জোরে জোরে

শ্বাস নিচ্ছে।জানিনা ওর কাছ থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করা কতটা সহজ হবে। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের ছোঁয়া পেয়েছে আজ। যদিও সে আমার জীবনে প্রথম নারী নয়। তারপর আমি রিয়াকে বললাম.......... 


আমিঃ রিয়া??


রিয়াঃ হুমম বলো??(নিশ্বাস আটকে বললো)


আমিঃ আমি এবার যাই??


রিয়াঃ না??


আমিঃ ঘুমাবো এখন প্লিজ??(কারন আমার এখানে থাকা যাবে না) 


রিয়াঃ আমার সাথে ঘুমাও??


আমিঃ কি বলছো এসব তুমি কি তোমার কথা ভুলে গেছো?? 


রিয়াঃ তোমাকে যা বলেছি তাই করো। আমি তোমার বুকের উপর শুবো। তুমি ঘুমাবে আর আমি তোমার বুকের ঘ্রাণ নিবো??


আমিঃ দেখাে আমার মনে হয় তোমার হুশশ নেই তাই এমন করতেছো। তুমি ঘুমাও আমি তোমার মাথায় 

হাত বুলিয়ে দিচ্ছি??


রিয়াঃ না আমি তোমার বুকে ঘুমাবো। আর এই গরমে গেঞ্জি পড়ে আছো কেনো। গেঞ্জিটা খুলো??


আল্লাহ কি বিপদে পড়লাম আমি😥😥। তারপর আমি বললাম......


আমিঃ দেখো বাহিরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। তাই ঠান্ডা লাগছে। আমি গেঞ্জি খুলতে পারবো না?? 


রিয়াঃ তুমি কি বুঝতে পারছো না আমার আদর খেতে মন চাচ্ছে। এমন কেনো করো??


একদিনে কি এমন হয়েছে যে রিয়া আমার প্রতি এতো দুর্বল হয়ে গিয়েছে।। তারপরেও নিজেকে সামলিয়ে বললাম......... 


আমিঃ আদর এখন দেওয়া যাবে না?? 


রিয়াঃ কেনো??


আমিঃ কারন আমার মনে হচ্ছে তোমার এখন হুঁশ

নেই। আর আমি এটার সুযোগ কখনো নিবো না। 

যদি তোমার হুঁশ থাকতো তাহলে তোমার ইচ্ছেটা 

আমি পুরন করতাম??


রিয়াঃ আপনি এখন ঘুমাতে পারেন??


রিয়ার আবার কি হলো। একটু আগেও তো তুমি করে বলেছিলো। আর এখনই কথার ধরন পাল্টে ফেললো কেনো। ও কি রাগ করেছে।। 


আমিঃ বাহহ তুমি থেকে একেবারে আপনিতে চলে আসলা৷ রাগ করোনি তো আবার??


রিয়াঃ রাগ করিনি বরং আজকে নিজেকে হালকা লাগছে অনেক?? 


আমিঃ কেনো জানতে পারি?? 


রিয়াঃ আসলে আপনার আর আমার এই সম্পর্কটা ছয় মাসের জন্য। এই ৬ মাস আমরা একই ছাদের নিচে বসবাস করবো। যদি কোনোদিন আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি কিংবা নিজের হুঁশে না থাকি তখন যদি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনাকে আজকের কথা গুলো বলতাম। এবং আপনাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলতাম তাহলে কি আপনি আমার সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিতেন কিনা সেটাই পরিক্ষা করলাম??


আমিঃ কিহহ তুমি এতক্ষণ অভিনয় করেছিলে??


মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে সেই সাথে মাথাও গরম হয়ে গেছে। তারপর রিয়া আমাকে বললো.......


রিয়াঃ অভিনয় করার জন্য দুঃখীত। ক্ষমা করে দিবেন আমাকে??


আমিঃ ক্ষমা,, কিসের ক্ষমা হ্যা??(রেগে বললাম)


রিয়াঃ সরি বললাম তো??


আমিঃ আমার এখন ৬মাস নয় তোমার সাথে ৬সেকেন্ড থাকতে ইচ্ছে করে না৷ কিভাবে পারলে আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলতে। তুমি শুধু আমার পরিক্ষা নাওনি বরং আমাকে তুমি ছোট করেছো। আমাকে ছোট করে দেখেছো। আসলে তোমাকে কি দোষ দিবো সব তো আমার কপালের দোষ। না হলে আমার সাথে তোমার এক মুহুর্ত থাকতে হতো না।। তুমি নিহাল আর আমার মাঝে কোনো পার্থক্য রাখোনি?? 


রিয়াঃ প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না।। একজন মেয়ে হিসেবে নিজের সুরক্ষার কথা ভাবতে পারিনা আমি?


আমিঃ আপনার পরিক্ষা তো হয়েছে। নিশ্চয়ই পাশ করেছি আমি তাইতো। তাই দয়া করে আর এমন পরিক্ষা নিবেন না। এতে হয়তো আপনার কাছে 

হালকা লাগলেও অন্য কেউ অপমান বোধ করতে পারে??(আপনি করে বলতে লাগলাম)


রিয়াঃ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি বুঝতে

পারিনি ব্যাপার টার জন্য আপনি কষ্ট পাবেন??


আমিঃ আমি ক্ষমা করার কে? আপনার সাথে আমার একটা ডিল হয়েছে, সেটা পুর্ণ হলেই আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিবো। ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে না, আপনি তার আগেই মুক্তি পাবেন??


রিয়াঃ আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন হবে না। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন??


আমিঃ আমি ঘুমাবো। কয়েকটা দিন কষ্ট করে মানিয়ে নিন প্লিজ?? 


রিয়াঃ আপনার মুখে আপনি ডাক শুনতে ভালো লাগে না। প্লিজ আগের মতো হয়ে যান। মানুষ তো ভুল করে থাকে ক্ষমা করে দেওয়া সওয়াবের কাজ। এবারের মতো মাফ করে দিন। কথা দিচ্ছি আর এমন হবেনা??


ভাবলাম ছোট মেয়ে ভুল করতেই পারে তাই তাকে মাফ করে দেওয়াই ভালো হবে। তাছাড়া মেয়েটা আমার প্রতিশোধ পুর্ন করার জন্য মা-বাবাকে ছেড়ে এখানে এসেছে, তার প্রতি এতটা কঠোর হওয়া ঠিক হবে না। আর এতো সুন্দর বউয়ের সাথে রাগ করলে পরে নিজেকে মাইনকা চিপায় পড়তে হবে। এমনকি আপনাদের নজর আমার বউয়ের দিকে🙉। পরে যদি আমার এই বউকে নিয়ে যান তাহলে আমার কি হবে।। 

আপনারা নাবিলাকে নিয়ে ভাগেন। এরপর আমি রিয়াকে বললাম......... 


আমিঃ ঠিক আছে মাফ করে দিলাম আপনাকে??


রিয়াঃ আবার😠😠??


আমিঃ কি?? 


রিয়াঃ আপনি করে বলছেন কেনো??


আমিঃ আপনি তো আমাকে আপনি করে বলছেন

তাই আমি ভাবলাম শুধু শুধু আমি একা কেনো 

তুমি করে বলবো তাই??


রিয়াঃ ওকে আজ থেকে আমিও তুমি করে বলবো।

আর একটা কথা আরেক বার যদি কখনো যদি 

আপনি শুনি তাহলে কিন্তু দাঁত ভেঙে দিবো হুম??


আমিঃ আচ্ছা আর আপনি বলবো না। এখন থেকে তুমি করে বলবো। এতে আমাদের আরেকটা লাভ হবে। নিহাল আর নাবিলা বুঝতে পারবে না আমাদের সম্পর্ক টা অল্প কয়েক দিনের??


রিয়াঃ হুমমম। আচ্ছা ঘুমাও এখন। আর সকালের 

জন্য ভেবেছো কিছু?? 


আমিঃ কি ভাবার কথা বলছো?? 


রিয়াঃ নিহাল যদি সকালে কোনো ঝামেলা করে 

সেটার কথা বলছি??


আমিঃ ঝামেলা করলে পুলিশে দিয়ে দিবো ওদের। সব প্রমান তো আছেই আমার কাছে?? 


রিয়াঃ না পুলিশে দিলে আমি ওর কষ্ট নিজের চোখে দেখতে পারবো না। আমি যে ওকে তিলে তিলে শেষ করতে চাই?? 


আমিঃ আচ্ছা তাই হবে। যদি ঝামেলা করে তাহলে 

অন্য রাস্তা আছে ওকে শায়েস্তা করার জন্য। এখন 

আর কোনো কথা না। ঘুমাবো এখন। গুড নাইট?? 


রিয়াঃ হুমম গুড নাইট?? 


তারপর আমরা ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে রিয়া আমাকে পিসপিস করে ডাকছে। আমি ঘুম অবস্থায় বললাম....


আমিঃ কি হয়েছে এভাবে ডাকছো কেনো?? 


রিয়াঃ তাড়াতাড়ি সোফা থেকে উঠো। দরজায় কেউ নক করছে। তুমি গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ো??


আমি তাড়াতাড়ি করে নেহার পাশে গিয়ে শুয়ে রইলাম।রিয়া দরজা খুলতেই দেখলো নাবিলা চা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত তাইনা। নাবিলা আমাদের চা দিতে এসেছে। আসলে নাবিলা রিয়ার অবস্থা দেখতে এসেছে। গত পর্বে তো জেনেছিলেন নাবিলা রাতে কি ভেবেছিলো। রিয়াকে দেখে নাবিলা হেসে বললো.........


নাবিলাঃ গুড মর্নিং??


রিয়াঃ গুড মর্নিং আপু। কেমন আছেন?? 


নাবিলাঃ আমি তো ভালো আছি। তা তোমার শরীরটা ভালো তো??(মজা নিয়ে বললো)


রিয়াঃ আমার আবার কি হবে। আমি তো ঠিক আছি??


নাবিলাঃ না মানে কালকে তো খুব বড় ঝড় গেলো তোমার উপর দিয়ে তাই বললাম। সব ঠিকঠাক 

আছে তো??


রিয়াঃ কালকে তো প্রচুর বৃষ্টি ছিলো।। আমার জানা 

মতে ঝড় হয়নি তাই কি বলছেন আপু একটু বুঝিয়ে বললে ভালো হতো??


নাবিলাঃ আচ্ছা তোমার হাঁটতে কি খুব কষ্ট হচ্ছে?? 


রিয়াঃ কেনো আমার কি পা নেই যে হাঁটতে অসুবিধা হবে?? 


নাবিলাঃ না মানে রাতে খুব চিৎকার চেচামেচি শুনলাম। 

তাই বললাম তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে। চাইলে আমাকে বলতে পারো৷ আরো শোনো তুমি তো অনেক ছোট কিভাবে শাকিলকে বিয়ে করতে পারলে। শাকিলকে তুমি যতটা ভালো মানুষ ভাবছো আসলে সে ততটা ভালো মানুষ না। না হলে রাতে নিষেধ করা স্বত্বেও তোমার উপর নিজের চাহিদা মেটানোর কথা বলছে??


রিয়াঃ চিৎকার চেচামেচি, চাহিদা কি বলছেন এসব।আর হ্যা উনি এখন আমার স্বামী। সে ভালো আর খারাপ যাই হোক না কেনো তাকে মানিয়ে চলতে 

হবে আমার৷ আর হ্যা আমি ১৮ বছরের একটা 

মেয়ে। নিজের ভালো মন্দের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বয়স আমার হয়েছে। সো আপনি আর কখনো আমাকে এসব বলতে আসবেন না??


নাবিলা মনে মনে ভাবছে,না এই মেয়ের সাথে কথা বলে পারা যাবে না। কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে না মেয়েটার খুব কষ্ট হচ্ছে। এতো তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে গেলো কি করে। তারপর নাবিলা বলে উঠলো......... 


নাবিলাঃ আরে রাগ করছো কেনো? আমি তো এমনি এমনি বললাম। এই নাও তোমার জন্য চা??


রিয়াঃ ধন্যবাদ। কিন্তু আমি চা খাই না। এটা বরং আপনি খান??


তারপর রিয়া নাবিলার মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দিলো। নাবিলা তো রাগে সাপের মতো ফুঁসছে। আমি ওদের সব কথা শুনেছিলাম। রিয়া যখন আমাকে নিয়ে কথা গুলো বলেছিলো তখন খুব ভালো লেগেছিলো। ইশশ সত্যি যদি রিয়াকে আপন করে পেতাম তাহলে এতক্ষণে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখতাম। কিন্তু রিয়া আর আমার সম্পর্কটা তো কয়েকদিনের মাত্র। কথাটা মনে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রিয়া এসে আমার পাশে বসে বিড়বিড় করে কি জেনো বলতে লাগলো। আমি বুঝতে পারছি না রিয়া কি নিয়ে বিড়বিড় করছে। তাই আমি বললাম............. 


আমিঃ তোমার মনে জমে থাকা প্রশ্নের উত্তরটা কি আমি দিবো রিয়া?? 


রিয়াঃ তুমি কিভাবে বুঝলে আমার মনে একটা প্রশ্ন জমে আছে?? 


আমিঃ আমি তোমাকে বুঝতে পারি৷ যদিও আমাদের সম্পর্কটা বেশি দিনের না তবুও আমি তোমার মুখের দিকে তাকালে তোমার মনের কথা বুঝতে পারি??


রিয়াঃ তাহলে উত্তরটা দাও??


আমিঃ মনে আছে কাল রাতে কোমর ব্যাথার অভিনয় করেছিলে??


রিয়াঃ দেখো তখন ঠিকই একটু বাঁধা পেয়েছিলাম। কিন্তু পরিক্ষা করার জন্য একটু বেশি অভিনয় করেছিলাম??


আমিঃ এই জন্য আমাকে দিয়ে তোমার পেট মালিশ করাবে??


রিয়াঃ আমি তো বলেই দিয়েছি,, আমি তোমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলতে চেয়েছি যেখান থেকে কোনো পুরুষ নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব ছিলো না। যেহেতু এমন পরিস্থিতিতে তুমি আমার কোনো ক্ষতি করোনি 

সেহেতু আমার বাবা-মায়ের পর সবচেয়ে নিরাপদ 

মানুষ তুমি। আচ্ছা সেটা বাদ দাও এখন উত্তর দাও??


আমিঃ তুমি যখন ব্যাথায় চিৎকার করছিলে তখন নিশ্চয়ই নাবিলা আড়াল থেকে আমাদের সবকিছু শুনেছে। আর সেটা অন্য ভাবে চিন্তা করেছে?? 


রিয়াঃ কিহহহ। ছিহহ ছিহহ কি লজ্জা?? 


আমিঃ হয়েছে এখন আর লজ্জা পেতে হবে না। গোসল করে রেডি হয়ে নাও। একটু পর গেস্ট আসবে। আর তখনই তোমাকে এমন ব্যাবহার করতে হবে যেনো তুমি আর আমি দুজনেই খুব খুশি আমাদের নতুন সম্পর্কটা নিয়ে। এতে নিহাল আর নাবিলারও জেলাস হবে??


রিয়াঃ হুমম ঠিক বলছো। তুমি ওয়েট করো আমি গোসল করে আসতেছি??


আমিঃ ওকে??


তারপর রুম থেকে বাহিরে যেতেই দেখলাম নিহাল তার রুমের দিকে যাচ্ছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মাত্র বাসায় ফিরেছে। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। তাই আমি মজা নেওয়ার জন্য বললাম...........


আমিঃ আরে সালাবাবু যে কি অবস্থা করছো নিজের। কি হয়েছে তোমার??(জেনেও না জানার ভান করে)


এখানে নাবিলাও ছিলো তাই কোনো রিয়েক্ট করলো না।

তারপর নিহাল বললো......... 


নিহালঃ ওহহ দুলাভাই তুমি। আসলে মাত্র বাসায় ফিরলাম। রাতে একটু কাজ ছিলো তাই ঘুমাতে পারিনি। তাই এমন অবস্থা হয়েছে?? 


আমিঃ কই আমিও তো আজকে রাতে ঘুমাইনি। আমাকে তো কেমন চাঙ্গা লাগছে দেখে??


নিহালঃ তুমি ঘুমাওনি কেনো?? 


আমিঃ কি যে বোকার মতো কথা বলো। এমন সুন্দর মেয়ে পাশে শুয়ে থাকলে কি রাতে ঘুম হয়??


নিহালঃ ওহহহ??(মন মরা হয়ে) 


আমিঃ তোমার কি কোনো কারনে মন খারাপ?? 


নিহালঃ কই নাতো। আমি ঠিক আছি একদম??(হাল্কা হেসে বললো)


আমি যেই কিছু বলতে যাবো তখনই রিয়া গোসল করে নতুন একটা শাড়ি পড়ে আমার সামনে আসলো। হাল্কা সাজে মানুষকে কেনো এতো সুন্দর লাগে তা বলার বাহিরে। আমি রিয়ার দিকে ভালো করে লক্ষ করতেই দেখলাম রিয়া ভালো করে শাড়ির কুঁচিটা ভালো করে পড়তে পারেনি। তাই ওর পেট হাল্কা দেখা যাচ্ছে। নিহালের নজরটাও সেদিকে।। তাই তাড়াতাড়ি রিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আর বললাম............


আমিঃ সোনা তোমাকে দেখে চোখ ফিরাতে পারছি না। 

মন চায় শুধু রাতের মতো আদর করি। কিন্তু ওদের সামনে তো আর আদর করতে পারবো না?? 


রিয়া আমার কথা শুনে লজ্জায় চুপ করে আছে।। আর এদিকে আমার কথা শুনে নিহালের চোখ লাল হয়ে গেছে। বেচারা কেঁদেই দিবে বোধহয়। আসলেই ছেলেটার কি দোষ। দোষ তো নাবিলার? স্বামী রেখে কিভাবে পারলো নিজের চাচাতো ভাইয়ের সাথে পরকীয়া করতে। নাবিলার মতো চরিত্রহীন মেয়ে সমাজে এখনো বসবাস করে। স্বামী সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও করে অন্য পুরুষকে দেখায়। ছিহহ কি লজ্জার ব্যাপার। কিভাবে পারে তারা। 


যারা পাঠক আছেন তারা ভালো করে শুনে রাখুন, বিয়ে করতে পাত্রি দেখতে গেলে অবশ্যই একান্ত ভাবে মেয়ের সাথে কথা বলে নিন। তার সম্পর্কে জানতে চান সে কাউকে ভালোবাসে কিনা। কারো সাথে রিলেশন আছে কিনা। কারন অনেক মেয়ে পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করে পরে পরকীয়া চালিয়ে যায়।। মাঝখানে ধ্বংস হয়ে যায় একটা নিস্পাপ ছেলের জীবন 💔


ঠিক তেমনই সকল পাঠিকাদের একই কথা বলতেছি।।নারী যেমন খারাপ আছে তেমনই পুরুষও খারাপ আছে। বিয়ের আগে তার সম্পর্কে জেনে নিবেন। এবং বাবা মায়ের কথায় বিয়ে করে অন্য নিরীহ ছেলর জীবন নষ্ট করবেন না। যদি পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করেন তাহলে যাকে করবেন সারাজীবন তার হাত ধরে কাটাবেন। পরকীয়া করবেন না। একান্ত কাউকে ভালোবেসে থাকলে সেটা আপনাকে দেখতে আসা ছেলেকে বলুন। নিশ্চয়ই কেউ না বুঝলেও অবশ্যই সে আপনাকে বুঝবে। 💝 


আর এটা শুধু গল্প নয়, চরম বাস্তবতা ফুঁটিয়ে তুলেছি। 

এবার আসুন গল্পে ফিরে যাই। তারপর আমি রিয়াকে বললাম.........


আমিঃ আমার মনে হচ্ছে তোমার কুঁচিটা ঠিক নেই। চলো রুমে গিয়ে তোমাকে আবার শাড়িটা পড়িয়ে 

দিবো আমি??


রিয়াঃ তুমি পড়িয়ে দিবে তাইতো তোমার কাছে আসলাম??


আমাদের দুজনের লুতুপুতু প্রেম দেখে নিহাল বেচারা আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না।। সাথে নাবিলাও নিহালের পিঁছু পিঁছু চলে গেলো। আমি আর রিয়া এটা দেখে হাসাহাসি শুরু করে দিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর নিহাল আমাদের কাছে আবার ফিরে আসলো। হাতে একটা লাল শাড়ি।। শাড়িটা রিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো আর বললো........


নিহালঃ এই শাড়িতে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগবে রিয়া। তোমার সাথে যেদিন প্রথম দেখা করেছিলাম সেদিন তুমি একটা লাল রঙের থ্রী-পিস পড়ে এসেছিলে সেদিন তোমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছিলো। তাই সেদিন দুলাভাই এর কাছ থেকে মিথ্যা বলে টাকা নিয়ে এই শাড়িটা কিনেছিলাম। কাউকে দেখতে দেইনি।। ভেবেছিলাম যেদিন আমাদের বিয়ে হবে সেদিন শাড়িটা তোমাকে দিবো। কিন্তু সবার তো আর সব আশা পুর্ন হয় না?? 


রিয়াঃ ওহহহ??


নিহালঃ আরেকটা কথা আমার সামনে অভিনয় করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি চাই তুমি আর দুলাভাই অনেক সুখে থাকো। আমাকে নিয়ে তোমার যত স্বপ্ন সব দুলাভাই কে দিয়ে পুর্ন করো??


তারপর নিহাল আমাকে বললো.......


নিহালঃ দুলাভাই একটা কথা বলবো??


আমিঃ হুমম বলো??


নিহালঃ রিয়াকে কখনো কষ্ট দিওনা৷ রিয়া খুব ভালো মেয়ে?? 


আমিঃ হুমম??


আসলে নিহালের কথা শুনে আমি আর রিয়া অবাক হচ্ছি। কারন আমরা যা চেয়েছিলাম এখানে তার উল্টো হচ্ছে। তাহলে নিহাল কি অন্য কোনো প্ল্যান করেছে আমাদের আলাদা করতে নাকি মন থেকে এসব বলছে। তারপর আমি আবার নিহালকে বললাম.........


আমিঃ তোমার হঠাৎ এই পরিবর্তনের কারনটা কি জানতে পারি?? 


নিহালঃ দুলাভাই তুমি কি ভেবেছিলে নিহাল বোকা। 

যে ভাবে যা বুঝাবে বুঝে যাবো??


আমিঃ মানে কি বুঝাতে চাচ্ছো তুমি?? 


নিহালঃ আজকে কিছু বলবো না। তবে খুব শীঘ্রই 

জানতে পারবে??


রিয়াঃ শুনেন মিস্টার নিহাল,, আপনার কথা এতোক্ষণ শুনেছিলাম এবার আমার কথা শুনুন। আপনার মতো একটা ক্যারেক্টারলেস ছেলের মুখে এতো ভালো কথা শোভা পায় না। উনি আমার স্বামী বিয়েটা যে কোনো কারনেই হোক না কেনো উনার থেকে কেউ আমাকে আলাদা করতে পারবে না। আপনি কি ভেবেছেন আপনার এই কথা গুলো শুনে আমি আবার আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে যাবো। আপনাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করবো। কখনোই না। আমি আপনাকে ঘৃণা করি, জাস্ট ঘৃণা। আপনার মুখটা দেখলেও আমার বমি আসে। মনে হয় আপনাকে খুন করতে পারলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম আমি??(রাগে রিয়ার মুখ লাল হয়ে গেছে) 


নিহালঃ ক্যারেক্টারলেস,,হাহাহা হুমম আমি সত্যি একটা 

ক্যারেক্টারলেস। রিলেশন শিপে থাকা কালিন কোনো দিন হাতটা ধরার ও আবদার করিনি। কোনো দিন বলিনি একটু জড়িয়ে ধরার কথা। কিস না দিলে অভিমান করবো বলিনি কোনো দিন। বন্ধুরা রুমডেট করে যখন বলতো আমি কেনো তোমার সাথে কিছু করিনা। তখন আমি বলতাম ও আমার কলিজা হয়।।। 

বিয়ে না করে কোনো দিন ওরে স্পর্শ করবো না। 

আর কি বললে আমার মুখ দেখলে বমি আসে তোমার, খুন করতে পারলে খুশি হতে। কিন্তু তুমিই তো বলতে আমাকে একদিন না দেখলে তোমার ঘুম হয় না। 

যার জন্য ঘুম না হতো সারাদিন অস্থিরতায় কাটতো আজ তাকে দেখলে বমি আসে, খুন করতে ইচ্ছে করে হুমম??(কেঁদে কেঁদে) 


রিয়াঃ দেখ তোর নেকামি ভালো লাগছে না আমার। তুই তো জানিস কেনো তোর মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না তারপরেও নেকামি করিস কেনো? তোর মুখ দেখলেও পাপ হবে আমাদের। দয়া করে তোর মুখটা দেখাবি না কোনোদিন আমাকে??


রিয়ার কথার মাঝখানে হঠাৎ করে ঠাসস ঠাসস করে জোরে শব্দ হলো। কি ভাবছেন নিহাল রিয়াকে চড় দিয়েছে। নাকি রিয়া নিহালকে চড় দিয়েছে। আসলে তেমন কিছুই না। হঠাৎ করে নাবিলা আমাদের মাঝে এসে নিহালের গালে চড় বসিয়ে দিলো।। আর বলতে শুরু করে.......... 


নাবিলাঃ কুত্তার বাচ্চা। তোর এতো বড় সাহস কি করে হলো আমাকে রেখে ওই মেয়ের সাথে প্রেম করার। রাত কাটাস আমার সাথে আর বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিস ওই মেয়েকে নিয়ে। তোকে আজ আমি খুন করে ফেলবো??


কথাটা বলেই নিহালকে চড় দিতে লাগলো। আর নিহাল চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। নিহালের এই অবস্থা দেখে রিয়া রুমে চলে গেলো। কারন যতই ঘৃণা করুক না কেনো এক সময় তো খুব ভালোবাসতো সে নিহালকে। 

তাই তার প্রাক্তনের এই অবস্থা তার দেখতে ইচ্ছে হয়নি একবারের জন্য। এদিকে আমিও ফিরাইনি নাবিলাকে। 

কারন দুজনেই আমাকে নিয়ে খেলা করেছে। আমি চাই তারা দুজনেই যেনো শাস্তি পায়। কিন্তু হঠাৎ করে নেহা এসে নিজালের কাছে গিয়ে নাবিলাকে বলতে থাকে,, আম্মু আম্মু মামাকে মেরো না প্লিজ। মামার খুব কষ্ট হচ্ছে। নেহা বারবার অনুরোধ করার পরেও নাবিলা থামছিলো না। এদিকে নিহালের এই অবস্থা দেখে কান্না করে দিলো। আমি নেহার কান্না সহ্য করতে পারিনি তাই ধমক দিয়ে বললাম............ 


আমিঃ তোমাদের এমন নাটক দেখতে ইচ্ছে করছে না আমার। রুমে গিয়ে যা করার করো। এখানে আমার মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে??


আমার ধমক শুনে নাবিলা চুপ হয়ে গেলো৷। তারপর সে রুমে চলে গেলো। আমি নেহাকে বুঝিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলাম। নয়তো শুধু শুধু আমার মেয়েটা কষ্ট পাবে। এদিকে নিহাল সেখানে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। আজ কেনো জানি ছেলেটার জন্য বড্ড মায়া হচ্ছে। কত সুন্দর একটা ছেলে এই বয়সে এমন অবস্থা ভাবা যায় না। আমি যখন শ্বশুর বাড়ি যেতাম তখন সে দৌঁড়ে আমার কাছে আসতো সবার আগে। এসেই বলতো দুলাভাই কি এনেছো আমার জন্য। আমি জানতাম ও লিচু খেতে খুব ভালোবাসতো তাই আলাদা করে ওর জন্য লিচু নিয়ে যেতাম। লিচু দেখলে কি যে খুশি হতো বলার বাহিরে। নিজের ভাই বানিয়েছিলাম। কারন আমার আর নাবিলার কোনো ভাই ছিলো না। যতদিন শ্বশুর বাড়ি থাকতাম ততদিন সে আমার সাথে থাকতো। আমাকে ওদের গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাতো। নদীতে এক সাথে গোসল করতে যেতাম। রাতে গল্প নয়তো 

লুডু খেলতাম। আর আজকে কত দুরত্ব হয়ে গেছে আমাদের মাঝে। আমার চোখে সবচেয়ে বড় শত্রু সে??


এরপর নিহালের কথায় আবার বাস্তবে ফিরে আসলাম।

নিহাল আমাকে বললো.......... 


অবস্থা ভালো নেই।। কিভাবে যে করোনা পজেটিভ হয়ে গেলো বুঝতে পারছি না😥😓। জানিনা আল্লাহ এই ভয়ংকর রোগ থেকে মুক্ত করবে কি না৷ সকলের দোয়া কামনা করছি। গল্পটা আগের লেখা ছিলো, তাই সম্পুর্ণ গল্পটা সমাপ্ত করে দিবো, জানিনা আর নতুন কোনো গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে আসতে পারবো কি না😷। 


চলবে কি?? 


এরপর নিহালের কথায় আবার বাস্তবে ফিরে আসলাম।

নিহাল আমাকে বললো.......... 


নিহালঃ দুলাভাই আমাকে মাফ করে দিও। জানিনা এই পাপের কোনো ক্ষমা হবে কিনা তবুও ক্ষমা চাচ্ছি। 

আর রিয়াকেও বলে দিও আমাকে মাফ করে দিতে??


আমিঃ ভুল করার আগে একবারও ভাবলে না আমি নেহা যখন জানবো এগুলো তখন আমাদের কি হবে। শুধু নিজের লোভ লালসার কথা ভাবলে। ছিহ ছিহ নিহাল তোমার কাছ থেকে এটা কখনো আশা করিনি৷ আর পারলে আল্লাহর কাছে তওবা করো বেশি বেশি করে। যেনো উনি তোমাকে ক্ষমা করে দেয়?? 


নিহালঃ জীবনে এই সময় ভালো একটা উপদেশ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দুলাভাই?? 


আমিঃ ধন্যবাদ না দিয়ে আল্লাহর কাছে তোমার পাপের জন্য ক্ষমা চাও??


নিহালঃ দুলাভাই একটা আবদার করবো রাখবে??


আমিঃ রাখার মতো হলে রাখবো??


নিহালঃ শেষ বারের মতো তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরবো প্লিজ না করো না?? 


আমিঃ দেখো.....??(পুরোটা বলতে না দিয়ে)


নিহালঃ শেষবারের মতো?? 


আমিঃ ওকে শেষবারের মতো??


সাথে সাথে নিহাল আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আর ওর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে নোনা জল বের হতে লাগলো। জড়িয়ে থাকা অবস্থায় বলতে লাগলো...........


নিহালঃ দুলাভাই মনে পড়ে তোমার যেদিন নাবিলা আপুর সাথে তোমার বিয়ে হয় সেদিন তোমাকে 

সবার সামনে জড়িয়ে ধরেছিলাম। জানো কেনো?


আমিঃ কেনো?? 


নিহালঃ কারন নাবিলা আপু ছিলো আমার চোখের মনি। আর সেই মনির দায়িত্ব তোমার থাকবে। তাই তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে চেয়েছিলাম, দুলাভাই আমার মনিটার কোনো অযত্ন করবে না কিন্তু। খুব ভালোবাসবে আমার আপুটাকে। কিন্তু সবার সামনে জড়িয়ে ধরলেও কথাটা বলা হয়ে উঠেনি?? 


আমিঃ তাহলে এমন নোংরামি করলে কেনো?? কেনো তোমার আপুর সংসারে তুমি সেই কাটা হয়ে দাঁড়ালে?


নিহালঃ সেগুলো খুব শীঘ্রই জানতে পারবে। এখন 

বলা সম্ভব নয়?? 


আমিঃ ছাড়ো??


নিহালঃ হুমমম??


তারপর জড়িয়ে ধরা অবস্থা থেকে ছেড়ে দেয় আমাকে।

আমি আর সেখানে দাঁড়াইনি। সোজা রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি রিয়া চোখ বুঝে শুয়ে আছে। নেহা বারবার কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু রিয়া কোনো কথাই বলছে না। আমি গিয়ে রিয়ার পাশে বসলাম। আর রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। রিয়া আমার স্পর্শ বুঝতে পেরে চোখ খুললো। তারপর আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আমি রিয়ার কষ্টটা বুঝি। মানুষ যখন তার প্রিয় মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা, ধোঁকা আর অভিনয় ছাড়া আর কিছু পায় না তখন মানুষ পাথর হয়ে যায়।। কষ্টের পাথর। যে পাথর আমি আর রিয়া দুজনেই হয়েছি। তারপর আমি রিয়াকে বললাম.......... 


আমিঃ কাঁদছো কেনো??


রিয়াঃ কেনো এমনটা হলো বলতে পারো। জীবনে যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম সে আমার সাথে এমনটা করতে পারলো৷ যাকে না দেখলে ঘুমাতে পারতাম না,, আজ তাকে দেখলে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারিনা? (কাঁদতে কাঁদতে) 


আমিঃ সবার জীবনে সব চাওয়া যাকে ঘিরে তাকে দিয়ে হয়তো পাওয়া হয় না। কিন্তু তুমি চাইলে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে পারো??


রিয়াঃ তা আর সম্ভব নয়??


আমিঃ কেনো সম্ভব নয়। আর তুমি তো নিহালকে বলছো কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। তাহলে আমাকে ঘিরে কি স্বপ্ন গুলো নতুন করে সাজানে 

যায় না?? 


রিয়াঃ মিথ্যে বলেছি নিহালকে?? 


আমিঃ মিথ্যে??


রিয়াঃ হুমম মিথ্যে??


আমিঃ ওহহ আমি ভেবেছিলাম কথা গুলো হয়তো সত্যি ছিলো?? 


আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।। আসলে রিয়ার প্রতি আমার মনে একটা জায়গা সৃষ্টি হয়েছে তাই আমি চাইনা রিয়া কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাক। ওর কথা গুলো শুনে ভেবেছিলাম রাগ করে আর যাই করে কথা গুলো বলুক না কেনো নিশ্চয়ই মন থেকে বলেছে। কিন্তু রিয়ার কথা শুনে সব আশা আবার শেষ হয়ে গেছে। তারপর রিয়া আবার বলে উঠলো.......... 


রিয়াঃ আমি তো বলে দিয়েছি আমি কয়েক মাসের জন্য তোমার কাছে আছি। তবুও মিথ্যা কল্পনা 

কেনো করো আমাকে নিয়ে। আর হ্যা আমি জানি আমাকে নিয়ে তোমার ভাবনা গুলো। কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব নয়.??


আমিঃ সরি আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমরা শুধু মাত্র নিজেদের প্রতিশোধের জন্য এক হয়েছি??


খুব কষ্ট লাগছে কথাটা বলতে। তারপর রিয়া বললো....


রিয়াঃ হুমম আমারও খুব ইচ্ছে করে স্বপ্ন দেখতে। কিন্তু অতীত মনে পড়তেই স্বপ্ন গুলো মন থেকে মুছে ফেলি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই দেশে আর থাকবো না?? 


আমিঃ আচ্ছা তোমার যা মন চায় তাই করিও। এখন রেডি হয়ে নাও, আামাদের বিয়ে উপলক্ষে একটা পার্টির আয়োজন করেছি??


রিয়াঃ পার্টির আয়োজন করছো? কই বাড়িতে তো কোনো কিছুই দেখতে পারছি না?? 


আমিঃ প্রথমত আমি বাড়িতে কিছুই করছি না। আর তোমার বাবা-মা সবাইকে বলা হয়ে গেছে। যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও?? 


রিয়াঃ আরে আগে বলবে তো পার্টি টা কোথায়?? 


আমিঃ একটা বিলাস বহুল রিসোর্ট বুক করেছি। সেখানেই হবে। এখন কি রেডি হবে??


রিয়াঃ ওকে আমি রেডি হয়ে আসছি। তুমিও রেডি হয়ে নাও। আর এই দেবদাস-এর মতো দাড়ি-গোঁফ গুলো পরিস্কার করে মানুষ হয়ে আসবে বুঝতে পারছো??


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে??


তারপর আমি নেহাকে সাথে নিয়ে সেলুনে চলে গেলাম।

নেহা ফোন চালাচ্ছে আর আমি মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। প্রথমে চুল দাড়ি কেটে তারপর নেহার চুল কেটে দিলো। আয়নার সামনে যেতেই নিজেকে ২২ বছরের যুবক মনে হচ্ছিলো। নিজেকে নিজেই বলতে লাগলাম,,

আরে ভাই তুই তো অনেক হ্যান্ডসাম☺☺। আমি শিওর আজকে রিয়া শুধু তোর দিকে তাকিয়ে থাকবে হাহাহা😁😁। 


তারপর বাসায় চলে গেলাম,গিয়ে দেখি রিয়া বারান্দায়। 

তাই ওখানে না গিয়ে গোসল করতে চলে গেলাম। প্রথমে নেহাকে গোসল করালাম তারপর বললাম........


আমিঃ বারান্দায় তোমার আম্মু দাঁড়িয়ে আছে যাও গিয়ে বলো তোমাকে সাজিয়ে দিতে। আমি গোসল 

করে আসতেছি??


তারপর নেহা চলে গেলো।। আমি গোসল করে বের হয়ে দেখি রুমে কেউ নেই। নিশ্চয়ই নিচে গেছে ওরা। তাই আমি দেড়ি না করে রেডি হয়ে নিলাম। চুল গুলো জেল দিয়ে স্পাইক করে নিলাম। তারপর রেডি হয়ে নিচে চলে গেলাম। আমি যেতেই দেখলাম রিয়া আর নেহা খুব সুন্দর করে সেজেছে। একজনকে ছোট পরী অন্য জনকে বড় পরীর মতো লাগছে। নেহা আমাকে দেখে পাপা বলে দৌঁড়ে আসতে লাগলো। কিন্তু রিয়া চেনার ট্রাই করলো।। কারন দেবদাস থেকে মানুষ হয়ে গেছি।।

নেহা আমার কাছে আসতেই তাকে কোলে তুলে নিলাম। তারপর দুই গালে দুইটা চুমু দিলাম আমার রাজকন্যা কে৷ সাদা ড্রেসে আমার মেয়েটাকে পরীর মতো সুন্দর লাগছিলো। নেহাকে কোলে নিয়ে রিয়ার কাছে গেলাম৷ রিয়া পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে আমাকে। কারন এর আগে আমি এতো স্মার্ট হয়ে ওর কাছে আসিনি। তারপর আমি রিয়াকে বললাম..........


আমিঃ কি দেখছো?? 


রিয়াঃ তোমাকে??


আমিঃ কেনো আগে কখনো দেখোনি বুঝি??


রিয়াঃ না??


আমিঃ মানে? গত দশ দিন ধরে তো তোমার সাথে বেশি সময় কেটেছে আমার তাহলে এই কথা বলার কারন??


রিয়াঃ আপনাকে দেখেছি। কিন্তু আজকে দেখে মনে হচ্ছে নতুন আরেক আপনাকে দেখছি??


আমিঃ হাহাহা?? 


রিয়াঃ খুব সুন্দর?? 


আমিঃ কি সুন্দর?? 


রিয়াঃ আপনার হাসি??


আমিঃ তাই??


রিয়াঃ হুমমম??(মাথা নিচু করে) 


তারপর আমি নেহাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে রিয়ার পিছন দিয়ে ওর কানের কাছে মুখটা রেখে বললাম......


আমিঃ এই যে মায়াবতী আমার প্রশংসা যে করলেন আপনি একবারও নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেখেছেন। আপনার সুন্দর্যের কাছে আমার সুন্দর্য তুচ্ছ?? 


রিয়াঃ ইশশ এভাবে বলবেন না??(লজ্জা মাখা কন্ঠে)


আমিঃ আমার যদি তোমার উপর অধিকার থাকতো তাহলে আজকে তোমার কাছ থেকে এক সেকেন্ডের জন্য সরতাম না??


রিয়াঃ যান তো সব সময় মজা ভালো লাগে না??


এই কথাটা বলে দৌঁড়ে গাড়ির কাছে চলে গেলো। আর আমি সেখানে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলাম। তারপর গন্তব্যে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠতে যাবো তখনই দেখলাম নাবিলাও সেজেগুজে আসছে৷ ওরে তো ইনভাইট করিনি৷ ফকিন্নির মতো এসে গেছে।। তারপর আমি নাবিলাকে বললাম........ 


আমিঃ কি ব্যাপার তুমি এমন সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো??


নাবিলাঃ এমা আমার একমাত্র স্বামী বিয়ে করছে। তার অনুষ্ঠানে আমি যাবো না। তা কি হয় কখনো??


আমিঃ দেখো তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আরে নেহা যদি না থাকতো তাহলে কবেই তোমাকে খুন করে কবর দিয়ে দিতাম। শুধু আমার কলিজার টুকরো মেয়েটার জন্য আজও তুমি এই পৃথিবীতে বেঁচে আছো??(রেগে)


নাবিলাঃ দেখেছো রিয়া কত সুন্দর করে সাজলাম কোথায় প্রশংসা করবে তা না করে শুধু রাগারাগি করতেছে??


রিয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কি বলি এটা শুনার জন্য। তারপর আমি বললাম.......


আমিঃ এই তোর কানে কথা যায় না। তুই তোর নাগরের কাছে যা। না হলে কিছু একটা করে ফেলবো আমি??


নাবিলাঃ দেখো আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি তাই আমি আবার তোমার কাছে ফিরে এসেছি??


কথাটা বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। রিয়া এটা দেখে আমাদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে নাবিলাকে গিলে খেয়ে ফেলবে। এরপর আমি নাবিলাকে কিছু বলতে যাবো এমন সময় নেহা বলে উঠলো......... 


নেহাঃ পাপা আম্মুকেও আমাদের সাথে নিয়ে চলো কতদিন আম্মুর সাথে কোথাও যাইনি?? 


নাবিলাঃ হুমম মামুনি আমারো খুব ইচ্ছে করছে আমরা আগের মতো গাড়িতে করে কোথাও যাবো??


নেহাঃ সত্যি মামুনি??


নাবিলাঃ সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি মামুনি??


নেহাঃ কি মজা কি মজা আমরা আবারো এক সাথে ঘুরতে যাবো??


আমিঃ না মামুনি তোমার আম্মু আমাদের সাথে যাবেনা?? 


নেহাঃ কেনো পাপা??


আমিঃ কারন তোমার ওই আম্মু যাবে তো আমাদের সাথে??(রিয়াকে দেখিয়ে)


নাবিলাঃ ড্রাইবারের পাশের সিট টা তো খালি আছে তাইনা মামুনি। তোমার সেই আন্টি টা না হয় সেই

সিটে বসে যাবে??


আমিঃ দরকার পড়লে তুমি সামনে বসবে। রিয়া এক পা-ও সরবে না এখান থেকে?? 


রিয়াঃ সমস্যা নেই আমি সামনের সিটে বসে যাবো??(মন খারাপ করে)


নেহাঃ আম্মু তাড়াতাড়ি উঠে আসো??


রিয়া দরজা খুলে বের হয়ে গেলো। আমি রিয়াকে বললাম............ 


আমিঃ রিয়া আমি বলছি বের হবে না তুমি??


রিয়া আমার কথা না শুনে মাথা নিচু করে সামনের সিটে গিয়ে বসলো। আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি নাবিলা আমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে।। কারন আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে নেহা। ওর জন্যই আমি এখনো নাবিলাকে কিছুই করতে পারছি না। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো। এদিকে রিয়া আর কোনো কথা বলেনি। বুঝতে পারলাম খুব কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু নেহার জন্য কিছুই করতে পারছি না আমি। তারপর নেহা আমাকে বললো............


নেহাঃ পাপা তুমি দূরে বসেছো কেনো। আরো এদিকে এসে বসো??


নাবিলাঃ তাইতো, আরো কাছে এসে বসো??(শয়তানি হাসি দিয়ে)


আমিঃ না মামুনি গরম লাগতেছে তো তাই??


নাবিলাঃ মামুনি তোমার পাপা ভুলে গেছে গাড়িতে

এসি চলছে??


নেহাঃ পাপা তোমার বুঝি আমার কাছে এসে বসতে খারাপ লাগছে??(মন খারাপ করে)


আমিঃ মামুনি তুমি কি বলো এসব।। আচ্ছা তোমার কাছে এসে বসছি??


কথাটা বলে আমি নেহার কাছে গিয়ে বসতে নিলাম এমন সময় নাবিলা নেহাকে মাঝখান থেকে উঠিয়ে কোলে তুলে নিলো।।তারপর আমার শরীরের সাথে ঘেঁষে বসলো। ওর কান্ড দেখে আমি বললাম.........


আমিঃ এটা কি হলো, নেহাকে মাঝখান থেকে সরালে কেনো?? 


নাবিলাঃ আমার মামুনিকে কতদিন কোলে নেই না তাই নিলাম। কি মামুনি খুশি হওনি তুমি?? 


নেহাঃ খুব খুশি হয়েছি আম্মু?? 


নাবিলা শুধু আমার শরীরের সাথে ঘেঁষছে আর ওদিকে রিয়া লুকিং গ্লাসে সব দেখছে৷ রাগে আর কষ্টে সিটে আঙুল দিয়ে খামছে ধরে আছে। কারন রিয়া যে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু অতীতের জন্য বলতে পারে না কিছু। আজকে রিয়া প্রচুর কষ্ট পাচ্ছে। 


কিছুক্ষণ পর আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। রিয়া তাড়াতাড়ি করে ভিতরে চলে গেলো। আমার 

দিকে একবারের জন্যেও তাকায়নি৷ আমিও কিছু বলিনি৷ নেহাকে কোলে নিয়ে ভিতরে চলে গেলাম। সব গেস্টদের সাথে কথা বলতে লাগলাম। 


ওদিকে রিয়া তার মা-বাবার কাছে চলে গেলো।। রিয়ার মা রিয়াকে দেখে কান্না শুরু করে দিলো। কারন রিয়া তাদের একমাত্র সন্তান। রিয়ার বাবা ভেবেছিলো রিয়ার বিয়ের পরে রিয়ার জামাইকে তাদের সাথে রেখে দিবেন। কেনো না রিয়াকে ছাড়া তারা থাকতে পারে না। 

এই কয়দিনে বেশ কয়েকবার খোঁজ খবর নিলেন রিয়ার। তারপর রিয়ার বাবা জানতে চায় রিয়ার কাছে আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় কেনো যেখানে আমার স্ত্রী সন্তান আছে। তারপর রিয়া সব খুলে বলে।। 


যদিও নিহালের প্রতিশোধের কথা বলেনি।। শুধু বলেছে নাবিলার প্রতারণার কথা। রিয়া নেহার কথা ভেবেই বিয়ে করেছে আমাকে। এতে যেনো নেহা একটা মা পায়। তারপর সবকিছু শুনে তারা আর কবছু বলেনি। আমি সেখানে গিয়ে ওনাদের সাথে কথা বলি। উনারা ভালো ব্যাবহার করায় বুঝতে পারলাম রিয়া সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলছে। রিয়ার বাবা-মা আমাকে বললেন, আমি যেনো কখনো রিয়াকে কষ্ট না দেই ইত্যাদি। আমিও কথা দিলাম যতদিন রিয়ার পাশে আছি ততদিন রিয়াকে কোনো কষ্ট দিবো না। তারা আমার কথায় আশ্বাস পেলেন এবং খুশি হলেন অনেক। 


তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করলাম। আর সবার সাথে রিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বলতে গেলে সবাই রিয়ার রুপের প্রশংসা করতে লাগলো। এদিকে রিয়ার বান্ধবীরা আসছে আমাকে দেখতে।। তাই আমি রিয়াকে বললাম............ 


আমিঃ তুমি তোমার ফ্রেন্ডদের কাছে যাও আমি দুই মিনিটের মধ্যে আসছি??


রিয়াঃ আচ্ছা??


তারপর রিয়া তার বান্ধবীদের কাছে চলে গেলো।। বলে রাখা ভালো, রিযার বান্ধবী ৩ জন এসেছে। নিপা, ইশিতা আর তিথি। যাদের মধ্যে সবচেয়ে কাছের মানে বেস্ট ফ্রেন্ড হচ্ছে তিথি। রিয়াকে একা দেখে ওর বান্ধবী নিপা বলে উঠলো.......  


নিপাঃ কিরে দুলাভাই কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস।

নাকি নিয়ে যাবো দেখে আমাদের সামনে আনিস নি?


রিয়াঃ দূরর কি বলিস এসব। ও এখুনি চলে আসবে??


ইশিতাঃ আরে ওর জামাইকে দেখার কি আছে। নিহাল ভাইকে তো আমরা আগেও দেখেখি??


তিথিঃ stop it..ইশিতা। নিহালের সাথে রিয়ার বিয়ে হয়নি কিন্তু?? 

 

নিপা-ইশিতাঃ what..কি শুনছি এসব রিয়া??


রিয়াঃ তোরা ঠিক শুনছিস??


তিথিঃ আরেকটা কথা শুনে রাখ রিয়ার স্বামীর আগেও একটা বিয়ে হয়েছে আর একটা বাচ্চাও আছে??


নিপাঃ বাহ রিয়া বাহ। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে তোর চয়েস ভালো ছিলো। আর সেই তুই একটা বুড়ো ছেলেকে বিয়ে করলি??


ইশিতাঃ আমার মনে হয় রিয়াকে জাদু করেছে ওই ছেলে, সরি আঙ্কেল??


কথাটা বলেই নিপা আর ইশিতা হাসাহাসি শুরু করলো। 

ঠিক তখনই তিথি বলে উঠলো........... 


তিথিঃ তোরা চুপ করবি। এই ফ্রেন্ড হলি তোরা। 

কোথায় ওর নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানাবি তা না করে ওকে নিয়ে মজা করছিস। আমার ভুল হয়েছে তোদের সাথে কথা গুলো শেয়ার করা।৷ সরি রিয়া আমাকে মাফ করে দিস??


রিয়াঃ আরে কি বলছিস তুই। এখানে মাফ চাওয়ার 

তো কিছুই নেই। ওরা তো ঠিকই বলতেছে তাই না। 

বলতে দে ওদেরকে??


নিপাঃ দেখ তিথি আমরা মন্দ কিছু বলছি না৷ রিয়ার মতো এতো সুন্দরী একটা মেয়ে এটলিস্ট ওই 

ছেলেটার মতো কাউকে ডিজার্ব করে?? 


তিথিঃ কোন ছেলে??


নিপাঃ আরে কানি সামনে তাকিয়ে দেখ কি হ্যান্ডসাম একটা ছেলে আসতেছে। এই ছেলের সাথে কথা বলতেছি। এই ছেলের যদি দশটা বউ থাকতো আর রিয়া এই ছেলেকে বিয়ে করতো তাহলে রিয়াকে কিছু বলতাম না। না জানি কোন বুইড়া বেডারে বিয়ে করে ফেলছে??


নিপার কথা শুনে রিয়া আর তিথি মুচকি মুচকি হাসছে। কারন ছেলেটা আর কেউ নয় আমি নিজেই। তিথি রিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার কারনে সব জানে। আর আমাকে দেখছেও। যদিও তিথি প্রথমে বুঝতে পারেনি এটা আমি কিন্তু রিয়া ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিলো। হুট করে ইশিতা রিয়াকে বলে উঠলো........ 


ইশিতাঃ রিয়া ছেলেটা কে রে??


রিয়াঃ আমি কি জানি তুই কথা বলে দেখ??(মুচকি হেসে) 


নিপাঃ খবরদার ইশিতা এটা আমার জিনিস নজর 

দিবি না। তোর দুলাভাই হবে??


ইশিতাঃ ইশশ বললেই হলো তুই কি কিনে নিয়েছিস নাকি??


নিপাঃ রিয়া ইশিতাকে বারন করে দে আমার মেজাজ গরম যেনো না করে??


রিয়া+তিথিঃ এই তোরা চুপ করবি। এখানে কত গেস্ট আছে তাদের সবার সামনে একটা ছেলের জন্য এমন ঝগড়া করবি??


আসলে আমি যখন ওদের কাছে যাবো তখন আমি ওদের সব কথা শুনছি তাই মজা নেওয়ার জন্য গিয়ে ওদের কাছে বসলাম। আমাকে বসতে দেখে নিপা 

আর ইশিতা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাে। তারপর আমি বললাম.............. 


আমিঃ আমি কি আপনাদের পাশে বসে আড্ডা দিতে পারি। আসলে আমার বউ আমাকে রেখে অন্য 

কোথাও আড্ডা দিতেছে তাই খুব বোরিং লাগছে??


আমার কথা শুনে নিপা আর ইশিতা দুজনে অবাক হয়ে বললো...........


নিপা+ইশিতাঃ বউ........


আমিঃ হুমমম বউ??


নিপাঃ আপনি বিবাহিত?? 


আমি একবার নিপার দিকে তাকালাম একবার ইশিতার দিকে তাকালাম। তারপর বললাম...........


আমিঃ আমার তো আপনাদের দুজনের মতো মেয়ে হলেই চলবে। কিন্তু আপনারা কি আমার মতো 

বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করবেন??


নিপাঃ করবো মানে ১০০ বার করবো??


ইশিতাঃ আমিও??


আমিঃ কিহহ ১০০বার করবেন??


নিপাঃ আরে কথার কথা বললাম আরকি?? 


এদিকে রিয়া আর তিথি আমাদের কান্ড দেখছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে। যতিও রিয়া মনে মনে কিছুটা জেলাস ফিল করছে। তারপর আমি বললাম............


আমিঃ মানে আপনাদের কোনো সমস্যা নেই আমাকে বিয়ে করতে??


নিপা+ইশিতাঃ না??


আমিঃ কিন্তু আমি দুজনের মধ্যে কাকে বিয়ে করবো??


নিপাঃ অবশ্যই আমাকে কারন আমি ওর থেকে বেশি সুন্দর?? 


ইশিতাঃ কেনো আমি কি কম সুন্দরী নাকি??


আমিঃ আরে কি করছেন আগে আমার কথাটা শুনেন??


নিপা+ইশিতাঃ কি বলেন??


আমিঃ আমার তো একটা মেয়েও আছে?? 


নিপা+ইশিতাঃ কিহহ মজা করছেন না তো??


আমিঃ এই যে বিশ্বাস হচ্ছে না তো wait আমি আমার মেয়েকে ডাকছি??


তারপর নেহাকে ডাক দিলাম। নেহা রিয়ার বাবা মায়ের কাছেই ছিলো। আমার ডাক শুনে দৌঁড়ে আমার কাছে চলে আসলো। এরপর নেহা আমাকে বললো......... 


নেহাঃ পাপা তুমি আমায় ডাকছো??


আমি নিপা আর ইশিতাকে বললাম,, কি এবার বিশ্বাস হলো তো।। তারপর নিপা আমাকে বললো..........


নিপাঃ হুমম??(মনটা খারাপ করে) 


ইশিতাঃ আপনার মেয়েটা তো খুব সুন্দর। আমি এমন একটা মেয়ে চাইছিলাম?? 


নিপা ইশিতার কথা শুনে বলে উঠলো........... 


নিপাঃ একটাই তো সমস্যা নেই আমি রাজি??


ইশিতাঃ দেখছেন কি বেহায়া মাইয়া। একটু আগে এমন একটা ভাব ধরছে। যখন শুনছে আমার প্রবলেম নাই, তাই রাজি হয়ে গেছে। আসল কথা কি জানেন আমি সুখে থাকি ওর এটা সহ্য হয় না?? 


তিথিঃ অনেক হয়েছে তোরা এবার অফ যা। আর দুলাভাই তুমিও কি ছোট হয়ে গেছো। আর একটু 

হইলে তোমাকে নিয়ে চুল চুলাচুলি হইতো??


নিপা+ইশিতাঃ দুলাভাই.....


রিয়া ওদের কথা শুনে হাসতে লাগলো। ঠিক তখনই নিপা বলে উঠলো........... 


নিপাঃ রিয়া তিথি কি বলছে এসব??


রিয়াঃ হিহিহিহি??(হেসে যাচ্ছে) 


ইশিতাঃ কুত্তী এভাবে না হেসে বল??


রিয়াঃ আমি তো উনাকে চিনি না। আর আমার জামাই তো বুইড়া, আঙ্কেল বয়সি??


নিপাঃ ওহহ সব বুঝতে পারছি তোরা আমাদের নিয়ে মজা নিচ্ছিস তাইতো?? 


আমিঃ সরি শালিকা তোমরা আমাকে নিয়ে আমার বউয়ের সাথে মজা করছিলে তাই আমিও একটু করলাম আরকি😁। কিছু মনে করো না। তবে তোমাদের বান্ধবী যদি ছেড়ে যায় কোনোদিন তবে তোমাদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করবো কেমন😁??


নিপাঃ দুলাভাই আমরা আমাদের ভুলটা বুঝতে পারছি প্লিজ মাফ করে দিন আমাদের??(মন খারাপ করে)


আমিঃ আরে chill... মন খারাপ করবে না একদম। তোমরা এসেছো যদি মন খারাপ করে থাকো রিয়া 

খুব কষ্ট পাবে??


রিয়াঃ তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?? 


আমিঃ হুমম বলো??


রিয়াঃ এখানে না আলাদা ভাবে??

 

আমিঃ ওকে। সালিকারা একটু অপেক্ষা করো আমি 

দুই মিনিটের মধ্যে আসছি?? 


তারপর রিয়াকে সাথে নিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় চলে আসলাম। আর বললাম...........


তারপর রিয়াকে সাথে নিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় চলে আসলাম। আর বললাম...........


আমিঃ হুমমম এবার বলো??


রিয়াঃ আমি চলে গেলে তুমি কি সত্যি সত্যি ওদেরকে বিয়ে করবে??


আমিঃ তুমি এটা বলার জন্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো। হাহাহা?? তুমি তো চলে যাবে ওদের 

কাউকে বিয়ে করলেও করতে পারি। তোমার তো 

কিছু আসে যায় না?? 


রিয়াঃ দেখো......


পুরোটা বলার আগে ফোন  বেজে উঠলো। আমি পকেট থেকে মোবাইল বাহির করতেই দেখলাম দারোয়ান চাচা কল দিয়েছে। ফোনটা রিসিভ করতেই উনি আতঙ্কের সাথে বলতে শুরু করলেন........ 


দারোয়ান চাচাঃ সাকিল কই তুমি??


আমিঃ চাচা ভুলে গেলেন। আজকে তো বিয়ের অনুষ্ঠান?? 


দারোয়ান চাচাঃ বাবা এক্ষুনি তুমি বাসায় আসো??


আমিঃ কেনো চাচা কিছু হয়েছে কি??


দারোয়ান চাচাঃ নিহাল ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে??


আমিঃ what...কি যা তা বলছেন চাচা??


দারোয়ান চাচাঃ হুম বাবা তাড়াতাড়ি আসো। পুলিশকে খবর দিয়েছে আসাদ স্যার, পাশের ফ্ল্যাটের বড় ভাই?? 


আমিঃ আমি এক্ষুনি আসছি চাচা??(আমি বিশ্বাস করতে পারছি না) 


রিয়াঃ কি হয়েছে এতো অস্থির হচ্ছো কেনো?? 


আমিঃ রিয়া চলো আমার সাথে। তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে?? 


রিয়াঃ বাসায় যেতে হবে কিন্তু অনুষ্ঠান তো এখনো 

শেষ হয়নি। আর আমি তোমাকে কিছু বলার জন্য এসেছি। আর তুমি এই কথা বলছো??


আসলে রিয়া তার মনের কথা গুলো বলতে এসেছিলো।

কিন্তু পরিস্থিতি আবারো রিয়ার বিপক্ষে। তারপর আমি রিয়াকে বললাম......... 


আমিঃ সব পরে শুনবো আগে বাসায় চলো তারপর??


রিয়াঃ ঠিক আছে চলো??(মন খারাপ করে) 


তারপর আমি দ্রুত রিয়াকে  নিয়ে গাড়িতে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। রিয়া আমার বুকে মাথা রাখলো। হয়তো আজকে সে আমাকে চায়। কিন্তু আমার এখন এসব কোনো কিছুতে মন নেই। নিহালের 

এসব শুনে আমি শকট খেয়ে বসে আছি। কি জবাব দিবো ওর বৃদ্ধ মা-বাবাকে। ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত দেখবে বলে আমার কাছে পাঠিয়েছিলো।।আর আজকে সেই ছেলে লাশ হয়ে যাবে বাড়ি। 


বলে রাখি নিহাল নাবিলার মতো বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। যদিও নিহালের জন্মের আগে আরেকজন 

ভাই ছিলো। একদিন নিহালের বাবা গরু নিয়ে নদীতে গিয়েছিলো গোসল করাতে। সেদিন রায়াদের বাবার পিছু পিছু ওর ভাই(৪বছরের) নদীতে  যায়। এদিকে নিহালের বাবা ছেলেকে কিনারায় বসিয়ে যখন গরু নিয়ে নদীতে নামে তখন নিহালের ভাই পিছনে পিছনে নেমে যায়। তারপর নিহালের বাবা যখন কিনারায় 

ফিরে আসে তখন আর তার ছেলেকে দেখতে পায়নি৷ ভেবেছিলো ছেলে বাড়িতে ফিরে গেছে তাই আর খোঁজাখুঁজি করা হয়নি৷ কিন্তু বাড়িতে এসে যখন ছেলেকে খুঁজে পায়নি তখন তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলেন তারা৷ কিন্তু ছেলেকে আর পায়নি। বিকেলের দিকে কেউ একজন খবর দেয় তাদের বাড়ির পাশে কোনো ছোট শিশুর লাশ ভেসে উঠেছে। এটা শুনে নিহালের বাবা-মা সেখানে যায়। আর গিয়ে দেখে তাদের ছোট বাবুর লাশ। ছেলের লাশ দেখে নিহালের মা সেন্সলেস হয়ে যায়। আর নিহালের বাবা ছেলের মৃত্যুর জন্য সারাজীবন নিজেকে দোষী মনে করেন।। 

তারপর থেকে নিহালের মায়ের মাথায় সমস্যা হয়। যদিও এখন কিছুটা ভালো আছে কিন্তু ছেলের কথা মনে পড়লেই মাথা বিগড়ে যায়। আর পাগলামো করে।


বাসার কাছে চলে আসছি প্রায়।। কিন্তু আরেকটা কথা ভাবতেছি, রিয়ার রিয়েকশনটা কি হবে। মুখে যতই বলুক না নিহালকে কষ্ট দিতে চায়, কিন্তু নিহালের মৃত্যু কি আজ সে মেনে নিতে পারবে। 


বাসার সামনে যেতেই দেখলাম আশে পাশে অনেক মানুষ। আশেপাশে অনেক মানুষ ছবি তুলছে। হয়তো ফেসবুকে এটা নিয়ে অনেক ঝড় তুলে ফেলছে। কিন্তু রিয়া বুঝার ট্রাই করলো বাসার সামনে এতো মানুষ কেনো। তাই রিয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলো.........


রিয়াঃ বাসার সামনে এতো মানুষ কেনো??


আমিঃ সামনে চলো বুঝতে পারবে??


রিয়াঃ সেই কখন থেকে তো এটাই বলে আসছো। কিন্তু.....??

 

আর বলতে পারলো না,চোখ গেলো মাটিতে পড়ে থাকা ক্ষত-বিক্ষত লাশের উপর৷ লাশটি দেখার সাথে সাথে রিয়া চিৎকার দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কেননা সাত তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর ছাদ থেকে পড়ে নিহালের 

মুখের অবস্থা এতো বাজে হয়েছিলো, যে কেউ 

দেখলে ভয় পাবে৷ তাইতো আমি নেহাকে আনিনি, রিয়ার মায়ের কাছে রেখে আসছি।। যেনো আজকের রাতটা তাদের সাথে থাকে।। অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তাদের উপর দিয়ে আসছি৷ তারপর রিয়াকে বললাম........... 


আমিঃ রিয়া লাশটা দেখো তো??


রিয়াঃ না..আমার ভয় করছে, প্লিজ আমাকে রুমে 

নিয়ে চলো??


আমিঃ রিয়া ভয় হলেও লাশটা দেখো। কারন লাশটা তোমার পরিচিত কারো??


রিয়াঃ পরিচিত কারো মানে??


আমিঃ দেখো তাহলে বুঝতে পারবে??


রিয়া আস্তে আস্তে করে চোখ টা লাশের দিকে ঘুরালো।। 

কিন্তু পরক্ষণেই ভয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো।  

তারপর আবার সাহস নিয়ে লাশটি দেখলো৷ মুখের অবস্থা দেখে চিনতে না পারলেও হাতের দিকে তাকিয়ে বুঝতে বাকি রইলো না দেহ টা কার। কারন নিহালের হাতে যে ঘড়ি ছিলো সেটা রিয়ার দেওয়া উপহার। রিয়া যেনো আর কিছুই বলতে পারছে না। মনে মনে ভাবতে লাগলো,আমি তো শুধু রাগ করে বলেছিলাম তোমাকে যেনো চোখের সামনে  কখনো না দেখি আর তুমি সারা দুনিয়ার মানুষের চোখের আড়াল হয়ে গেলে।


রিয়ার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে বৃষ্টি পড়ছিলো। সেখানে কিছু সাংবাদিক এসেছিলো যারা রিয়াকে প্রশ্ন করতে লাগলো........ 


সাংবাদিকঃ মিসেস রিয়া আমরা ঘঠনা সুত্রে জেনেছি যে মৃত ব্যাক্তির সাথে আপনার সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু আপনি নিহাল সাহেবকে বিয়ে না করে তার 

দুলাভাইকে বিয়ে করেন। যার নাকি আগেরও স্ত্রী 

সন্তান আছে। আর এটা মেনে নিতে না পেরেই নিহাল সাহেব আত্বহত্যা করেন?? 


আমিঃ কি যা তা বলতেছেন। আপনাদের কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে রিয়া এসবের জন্য দায়ী। পারলে ভালো কিছু জিজ্ঞেস করুন৷ নয়তো আজে বাজে কিছু জিজ্ঞেস করে অন্য কাউকে হেনস্তা করবেন না??


সাংবাদিকঃ আপনি কে??


আমিঃ আমি রিয়ার হাজবেন্ড। শাকিল আহমেদ??


সাংবাদিকঃ ohh i see...তা মিস্টার শাকিল আপনার তো স্ত্রী, সন্তান আছে তাহলে আপনি কেনো আপনার সালার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করলেন??


আমিঃ আমার ওয়াইফ ছিলো কিন্তু তার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর এখন দিতে পারবো না সময় হলে জানতে পারবেন??


কোথায় থেকে হুট করে নাবিলা এসে বলে উঠলো....... 

 

নাবিলাঃ সাংবাদিক ভাই আমি উনার স্ত্রী। উনার সাথে আমার কোনো ডিভোর্স হয়নি। উনি মিথ্যা বলছেন??


সাংবাদিকঃ মিথ্যা বলছেন আপনি। আপনার কাছে কোনো পেপারস আছে??


আমিঃ সব আছে। কিন্তু অবাক লাগছে যে আপনি সাংবাদিক হয়েও আমাদের গোপন প্রশ্ন গুলো 

এতো কনফিডেন্স এর সাথে কিভাবে বলছেন??


সাংবাদিকঃ একজন সাংবাদিক  হিসেবে সব জানতে হয়। আর আপনি প্রসঙ্গ পাল্টাচ্ছেন। আপনার কাছে পেপারস গুলো থাকলে দেখান??

 

আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি এই সাংবাদিক কে

কেউ টাকা দিয়ে আমাদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। 

প্রথমে রিয়াকে তারপর আমাকে। হুট করে নাবিল বলে উঠলো....... 


নাবিলাঃ শুধু শুধু কেনো মিথ্যা বলছো। এই মেয়েটাকে (রিয়াকে উদ্দেশ্য করে) বাঁচানোর জন্য শুধু শুধু কেনো মিথ্যা কথা বলা শুরু করছো??(শয়তানি হাসি দিয়ে)


আমিঃ 😠😠😠


সাংবাদিকঃ মিসেস রিয়া আপনাদের মতো মেয়েদের জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার ছেলে আত্বহত্যার 

পথ বেছে নেয়??


আমিঃ আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন। আপনি সাংবাদিক বলে এখনো কিছু বলছি না তার মানে এই না যে আপনার সব কথা মুখ বুঝে সহ্য করবো??


সাংবাদিকঃ কেনো মারবেন নাকি, তাহলে মারেন। একটাকে তো মারছেন এখন.??


আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। সাংবাদিক কে সজোরে নাক বরাবর ঘুষি দেই। রাগে মাথা বিগড়ে যায় আমার, পুলিশ ছিলো সেখানে তারা আমাকে আটকায়। আর এদিকে রিয়া প্রছন্ড ভেঙে পড়ে কারন সব দোষ এখন ওর গাড়ে পড়ে তাই। সাংবাদিক রিয়াকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে হেনস্তা করতে থাকে। এরপর সাংবাদিকদের মাঝখান থেকে রিয়াকে নিয়ে আসি আমি। কারন আর বেশিক্ষণ রিয়াকে এখানে রাখলে রিয়া আরো ভেঙে পড়বে। 


রিয়াকে রুমে নিয়ে গেলাম।। রিয়া প্রছন্ড কান্না করছে। 

আমাদের সাথে পুলিশও রুমে আসছে investigation করার জন্য। পুলিশ সহ সবাই নিহালের মৃত্যুটাকে আত্মহত্যা হিসেবে ধরে নিয়েছে। তার কারন হিসবে রিয়া আর আমার বিয়েটাকে কেন্দ্র করে। পুলিশ সুইসাইড নোট জাতীয় কিছু খুঁজতেছে। তারপর টেবিলের উপর দুইটা চিঠি খুঁজে পায়৷ একটা আমার নামে আরেকটা রিয়ার নামে। একজন কনস্টেবল 

এসে আমাদেরকে জানায়। আমি রিয়াকে নিয়ে নিহালের রুমে গেলাম। এবং আমার নামে লেখা চিঠি

টা পড়তে শুরু করলাম..........

~~

~~

প্রিয় দুলাভাই।


কি দুলাভাই খুব রাগ আমার উপর৷।যাকে নিজের ছোট ভাইয়ের স্থান দিছো সেই তোমাকে ঠকালো এভাবে। আসলে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুলাভাই জানো কি আমি কখনো চাইনি এমনটা হোক। দশম শ্রেণি থেকে তোমাদের বাসায় আসছি। কত আদর,স্নেহ ভালোবাসা পেয়েছি তোমার কাছ থেকে। কিন্তু আপুর কাছ থেকে পেয়েছি শুধুই নোংরামি। 


মনে আছে তুমি অফিসের  কাজে রাজশাহী গিয়েছিলে

তিন দিনের জন্য। তখন নেহার বয়স মাত্র ৯ মাস। 

আপু আমাকে বলে তার সাথে থাকতে। কারন বাবুকে একা রেখে নাকি মাঝে মাঝে ওয়াশ রুমে যেতে হয়। 

তাই বললো আমি যাতে আপুর সাথে থাকি। শুধু বাবুর কথা ভেবে আপুর সাথে থাকতাম। কিন্তু মাঝ রাতে আপু এমন কিছু করবে আমার সাথে এটা আমি কল্পনাও করিনি।। আপু আমাকে তার সাথে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। আমি না করে দেই কারন এগুলো আমি কখনো কল্পনাও করিনি। চাচাতো বোন হলেও নিজের মায়ের পেটের বোন ভাবতাম আমি। 

আমি মানা করে দিতেই আপু আমাকে ভয় দেখাতে লাগলো।। আমি যদি আপুর প্রস্তাবে রাজি না হই তাহলে নাকি তোমার কাছে বিচার দিবে যে, আমি 

নাকি জোর করে আপুর সাথে এসব করতে চাইছি।। 

আর বাবা-মাকেও বলবে এগুলো। 


আপুর কথা শুনে আমি প্রচুর পরিমাণ ভয় পেয়ে যাই।। আপুর হাতে পায়ে পর্যন্ত ধরেছি আমি। কিন্তু সেদিন আপুর লালসার হাত থেকে বাঁচতে পারিনি আমি। 

জোর করে আমাকে দিয়ে তার চাহিদা মিটিয়ে নেয়। আমি ভেবেছিলাম তোমাদের বাসায় আর থাকবো না। 


সকালে ব্যাগ নিয়ে রেডি হয়ে গেলাম এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এমন সময় আপু এসে আমাকে এমন কিছু দেখায় যেটা দেখে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো৷ কারন আপু গত রাতের সবকিছু ক্যামেরায় বন্ধী করে রেখেছে। সেগুলো দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে৷। তারপর আমি আর যেতে পারিনি।। 


তারপর থেকে যখন ইচ্ছে করতো তখন রুমে ডাকতো আমাকে। আমি মানা করলে আমাকে ভিডিওর কথা বলে ভয় দেখাতো। তাই বাধ্য হয়ে আমি নোংরামি করতে রাজি হতাম।। আর মাঝ রাত হলেই বারান্দায় বসে কান্না করতাম।। বাঁচার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে

আমার। কিন্তু তার কিছুদিন পর রিয়ার সাথে দেখা 

হয় আমার।। আর সেই দেখাতে চাওয়া স্বত্বেও দুজন দুজনের ভালোবাসায় জড়িয়ে যাই। সুন্দর করে বেঁচে থাকার জন্য আরেকটা রাস্তা পেয়ে যাই আমি। 


একদিন তো ভেবেছিলাম রিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যাবো। 

যাতে তোমাদের সামনে কোনোদিন না পড়ি৷ কিন্তু আবারো একবার ভাগ্য আমার সহায় হলো না।। তুমি রিয়াকে সব জানিয়ে দিলে। রিয়াও আমাকে ঘৃণা করতে লাগলো।। তারপর তুমি বললে আমাকে রিয়ার সাথে বিয়ে দিবে। কিন্তু সবটাই তোমার সাজানো পরিকল্পনা ছিলো, সেটা আমি আগে থেকে  জানতাম। 


বলতে পারো কিভাবে জানলাম। একদিন তোমার রুমে ঢুকতেই দেখলাম তোমার বিছানায় ল্যাপটপ রাখা 

আর সেটা অন করা ছিলো। তুমি সম্ভবত ওয়াশ রুমে ছিলে। আর সেদিন আমি সব জেনে গিয়েছিলাম। তোমাকে বলেছিলাম একদিন রিয়াকে না পেলে আমি সত্যি মরে যাবো। কেনো বলেছিলাম জানো, কারন রিয়াই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্ভল ছিলো। তোমরা প্ল্যান মোতাবেক বিয়ে করলে কিন্তু আমি কোনো রকম রিয়েকশন করিনি, খুব অদ্ভুত ছিলো না বিষয় টা। কারন আমি আগে থেকে তোমার সব 

প্ল্যান জানতাম।।আমিও ভেবে দেখলাম আমি তো পবিত্র না তাহলে রিয়ার মতো একটা পবিত্র মেয়েকে বিয়ে করে ঠকিয়ে কি লাভ।তাই তোমার হাতে আমার জীবনটা কে তুলে দিলাম। 


জানি আত্মহত্যা করা মহাপাপ। তারপরেও বলবো বেঁচে গেছি আমি এই দুনিয়ার নিষ্ঠুরতা থেকে। আর হ্যা যে আপুকে দুনিয়ার সবচেয়ে বেস্ট আপু মনে করতাম সে হলো একটা কাল শাপ। যার হাত থেকে তোমার বাবা-মা কেউই বাঁচতে পারেনি। তুমি এর শাস্তি অবশ্যই আপুকে দিবে। 


ইতি

নিহাল😥😥


চিঠিটা একটু জোরে পড়েছিলাম। আমার গলা আটকে গেছে কি পড়লাম এগুলো। একটা নিষ্পাপ ছেলেকে এতো কষ্ট দিলাম আমরা। নিহাল তো আমাকে সুখে দেখার জন্য রিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো আর আমরা তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিলাম।।


ওইদিকে রিয়া মাথায় হাত দিয়ে কান্না করতে লাগলো।

সে কি কিভাবে পারলো তার ভালোবাসার মানুষকে এতো কষ্ট দিতে। লাশটার দৃশ্য বারবার তার চোখের সামনে ভাসছে। কত সুন্দর একটা ছেলে আজ তার লাশের দিকে তাকাতেও ভয় করে। অথচ কোনো এক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতো রিয়া। একবার 

তো জিজ্ঞেস করতে পারতো কেনো নিহাল এমনটা করলো। নিশ্চয়ই নিহাল সবকিছু খুলে বলতো। কিন্তু রিয়া কোনো কিছু না জেনে ভুলক্রুটি না ভেবে কত বাজে কথা বলেছিলো নিহালকে। এবার রিয়ার নামে লেখে যাওয়া চিঠিটা বাহির করে রিয়ার হাতে দিলাম।

রিয়া পড়তে শুরু করলো............. 

~

~

প্রিয় রিয়া....


প্রিয় বলার অধিকার হারিয়ে ফেলছি সেইদিন। যেইদিন তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা দেখেছিলাম। জানো আমার এই অল্প জীবনে এতকিছুর মাঝে সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিলে তুমি। 


তোমার সাথে কথা বলা,, আমাদের ছোট সংসার নিয়ে দুজন দুজনের সাথে সবকিছু শেয়ার করা কতই না মধুর ছিলো সেই দিনগুলো।। সবকিছু শেয়ার করলেও মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা কষ্ট গুলো কখনো বলতে পারিনি তোমাকে। আর কিভাবেই বলতাম নিজের চাচাতো বোনের সাথে অশালীন কর্মের কথা। দুনিয়ার কোনো মেয়ে এটা শোনার পর সম্পর্ক রাখবে না এটা আমি জানি। তবে জানো তুমি কিন্তু অনেক লাকি, দুলাভাই এর মতো কাউকে পেয়ে। আমার দুলাভাই টা খুব ভালো। আশাকরি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে।। এটাই আমার শেষ ইচ্ছে তোমাদের কাছে৷ভালো থেকো সব সময়। শুভ কামনা রইলো তোমাদের জন্য। 


দুটি চিঠি পড়ার পর পুলিশ এগুলো নিয়ে গেলো৷। আমি আরো সব প্রমান আর ডিভোর্সের কাগজ পত্র পুলিশকে প্রমান হিসেবে দেখালাম। আর নাবিলকে জরুরি গ্রেফতার করার জন্য অনুরোধ করলাম। সারা মিডিয়াতে আমাদের মৃত্যুর খবর ভাইরাল হয়ে গেছে।। 

কিন্তু সাংবাদিক রিয়ার নামে বাজে কথা ছড়ায়। আর আমাদের দেশের মানুষ তো আছেই।। ছেলে যদি  সুইসাইড করে  সবার আগে জিজ্ঞেস করে ছেলের কোনো প্রেমিকা আছে কিনা।যদি প্রেমিকা থেকে থাকে তাহলে সব দোষ সেই মেয়ের উপর যায় ফলে আরেকটি আত্মহত্যা সৃষ্টি করে।। তাই গুজবে ছড়াবেন  না, গুজবে কান দিবেন না।। সত্যতা না জেনে কাউকে বাজে মন্তব্য করবেন না। Stop Bullying.......


ওইদিকে নাবিলাকে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না।। পুলিশ তন্নতন্ন করে নাবিলাকে খুঁজতে লাগলো। রিয়াও মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে না পেরে কানাডা চলে যায় কয়েকদিন পর৷ আমি অনেক রিকুয়েষ্ট করছি ওকে না যাওয়ার জন্য।। ওকে কথা দিয়েছিলাম সব ঠিক করে দিবো আমি কিন্তু সে আমার সিদ্ধান্তে আনড় ছিলো।

রিয়া আমাদের একা রেখে চলে যায়। কিন্তু সে কথা দেয় সারাজীবন আমার স্ত্রী হয়ে থাকবে।৷ কিন্তু রিয়ার প্রতি রাগ আর অভিমান দুইটাই জমে যায় আমার৷ 

তাই আমি আর ওকে আটকাইনি৷ 


রিয়া চলে যাওয়ার ০১ সপ্তাহের মধ্যে নাবিলাকে পুলিশ নাবিলাকে খুঁজে পায়। নাবিলা সবকিছু অস্বীকার করলে আদালত থেকে ১০ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। তারপর নাবিলা সব স্বীকার করে।। নিজের ভুল বুঝতে পারে৷ নাবিলার সবকিছু বিবেচনা করে তাকে যাবত জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।।


আপনাদের কিভাবে বুঝাবো,, সত্যি বলতে বিদেশে যদি আমি না আসতাম এসব কিছুই জানতাম না। বর্তমান সমাজে প্রচলিত একটা রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরকীয়া। 

যেটা আমার সাথে থাকা বন্ধুদের দেখে বুঝতে পারছি। 


আপুরা কেনো বুঝেন না,আপনারা কেনো এতো বোকা।

মনে রাখবেন, আপনি যতই একজন সুন্দর কিউট ২৩ বছরের যুবকের সাথে স্বামীর সম্পদ ইমু বা ম্যাসেঞ্জারে

দান করুন না কেনো, উনি আপনাকে কখনোই বিয়ে করবে না। উনি আপনাকে দিয়ে উনার যৌবনের চাহিদা মিটাবে, জাস্ট এতটুকুই। কিন্তু আপনাকে কখনো বউ করবে না। স্বামীর হক নষ্ট করবেন না প্লিজ🙏🙏।

আপনাদের কর্ম কান্ড দেখলে বিয়ে করার ইচ্ছে মরে যায় বোনু।। নিজেকে কেনো এতো সস্তা ভাবতেছেন। আপনি নিজেও জানেন না আপনার মুল্য কত।। কারো ছোট কারো বড় ভাই হিসেবে বলছি কখনো এসব কাজ করবেন না। 


মা-বাবাকে সম্মান করুন,, তাদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন। 

মনে রাখবেন আপনাকে নিয়ে আপনার মা-বাবার হাজারো স্বপ্ন জমে আছে। সেগুলোকে নষ্ট করবেন না।


ভয় মা-বাবাকে নয়,, ভয় করুন আল্লাহকে।। কারন ভয় যদি আপনার মা-বাবাকে করেন তাহলে আপনি খারাপ কাজে লিপ্ত হতে কোনো দ্ধিধাবোধ করবেন না। কারন আপনি যা করবেন সবকিছু কিন্তু আপনার মা-বাবা দেখেন না। আর ভয় যদি আল্লাহকে করেন তাহলে খারাপ কাজ করতে ১০ বার ভাবতে হবে আপনাকে। কারন আপনি পৃথিবীর যেই প্রান্তে থাকুন না কেনো নিঃশ্বন্দেহে আল্লাহ আপনার সবকিছু দেখতেছে। আর আল্লাহকে ভয় করলে আপনার মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম যেতে হবে না। কারন তখন আপনি জানবেন মা-বাবাকে কষ্ট দিলে পরকালে আপনার কি হতে পারে৷। আল্লাহ কাজগুলো সবাইকে করার তৌফিক দান করুন সাথে আমাকেও।।


আমরা শুধু আপনাদেরকে রোমান্টিক গল্প শুনাচ্ছি না। চরম বাস্তবতা আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করতেছি। ভালো লাগল গল্পটা শেয়ার করবেন৷ নয়তো আপনাদের নিজের নাম দিয়ে পোস্ট করবেন, এতে করে অন্তত নাবিলার মতো একজন বোন ভুল কাজ করা থেকে বিরত থাকবে।।  এবং পরবর্তী গল্পের জন্য পেইজে লাইক দিয়ে জয়িন করুন। যদি আপনাদের মতামত পাই তাহলে নতুন গল্প দিবো। 


সবার কাছে আবারো দোয়া চাচ্ছি, সবাই দোয়া করবেন 

আমাদের জন্য, আল্লাহ যেনো আমাদের সবাইকে সুস্থ করে দেয়। মালোয়শিয়ার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।

রোজ প্রায় ১৮-২২ হাজার আক্রান্ত হয়ে থাকে করোনা ভাইরাসে। সবাই দোয়া করবেন,, যেনো এই রোগ থেকে বের হয়ে সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারি। 


করোনা ভাইরাস যতটা  ভয়ংকর ঠিক ততটাই ভয়ংকর পরকীয়া। এই পরকীয়ার কারনে নষ্ট হয়ে যায় সুন্দর ও সাজানো একটা সংসার। আসুন আমরা সবাই হাতে হাত রেখে পরকীয়াকে না বলি,পরকীয়া মুক্ত দেশ গড়ি। 

মনে রাখবেন পরকীয়া কিন্তু আপনার ও আমার মতো মানুষের কারনেই🙂🙂


জীবন চলার পথে প্রথম সংসার ভেঙে গেলে সব মানুষ পরে আর সুখী হয় না। কিছু কিছু ভালোবাসা অসমাপ্ত থেকে যায়। আমার গল্পটাও অসমাপ্ত রয়ে গেলো💔


----------------------------->>সমাপ্ত<<------------------------------


ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। ভালো রিসপেন্স ফেলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিত্য নতুন আরো ১টা গল্প নিয়ে উপস্থিত হবো আপনাদের মাঝে। 


দেখতে দেখতে সম্পুর্ণ গল্পটা সমাপ্ত করলাম,এবার তো আর নেক্সট নেই। দয়া করে সবাই একটা করে গঠন মুলক কমেন্ট করবেন গল্পের উপর ভিত্তি করে। নতুন গল্প অতি দ্রুত শুরু করবো আপনাদের সাড়া পেলে৷ 

ততক্ষণ সকল পাঠক/পাঠিকা ঘরে থাকুন সুস্থ্য থাকুন শুভ কামনা রইলো সব সময়❤❤

আরো বড় গল্প গুলো পড়ুন।