স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক | স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

 স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত

মোহনা আর তার স্বামী আসিফ আর তার শাশুড়ী সুফিয়া বেগম, টেবিলে বসে সকালের নাস্তা করছে। 


ওদের মেয়ে তুবা নাস্তা করছে। আজ ছুটির দিন। অন্য দিন দুজনেই অফিসে থাকে। একটা কাজের মেয়ে আছে।আর বাকিটা সুফিয়া বেগম দেখে। আসিফের বাবা ছোট বেলায় মারা গিয়েছে। 


সুফিয়া বেগম নাস্তা কর‍তে করতে বলল, 


 - এই মাসের বাজার টা এখনো করলি না খোকা?  


-হ্যাঁ মা, কাল বেতন হবে। পরশু নিয়ে আসবো।  


সুফিয়া বেগম চা খেতে খেতে মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল, 

সুফিয়া বেগমঃ বৌমার তো বেতন হয়েছে। তা বৌমা করলে তো পারে। তুই সব করবি বলে কি কথা আছে? সে ও চাকরি করছে। 


মোহনা কিছু বলতে যাবে তার আগে অসিফ হেসে বলল, 

- তোমার বৌমা হলো আমার ইমার্জেন্সি ব্যাংক যেখান থেকে আনলিমিটেড লোন নেওয়া যায়। উইথ আউট এনি ইন্টারেস্ট। তাই আগে থেকে ব্যাংক খালি হলে কীভাবে হবে বলো? 


আসিফ এমন ভাবে হেসে বলল, সুফিয়া বেগম আর কোন কথা বলতে পারলো না। 


মোহনা উঠে চলে গেল। আসিফ মেয়েকে নিয়ে টিউশনে যাওয়ার সময় বলল, 


- মোহনা তোমার থেকে দুই হাজার টাকা দাও তো। তুবার টিউশনের ফি টা দিয়ে আসি। 


- আচ্ছা ঠিক আছে নাও। আর শোন, কিছু নাস্তা নিয়ে এসো।  


- তাহলে আরো টাকা দিয়ে দাও আমি নিয়ে আসবো। 


সুফিয়া বেগম দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, ছেলের বউয়ের কাছ থেকে এইভাবে টাকা খুজে নেওয়াটা উনি কখনো মানতে পারেন না। 

দুজনের সংসার, দুজনে খরচ করবে। খুজতে হবে কেন? একা খরচ চালাতে গিয়ে অনেক কষ্ট হয় ছেলের তা উনি জানেন। 


আসিফ মায়ের দিকে তাকাতে বুঝলো মা আবার মন খারাপ করেছে। কিন্তু বলছে না। মা টা চিরকালেই এমন। মুখ ফুটে কিছু বলে না। 


তুবাকে টিউশনে দিয়ে এসে আসিফ বসলো। মোহনা রান্না শেষ করে গোসল করতে গেল। 

সুফিয়া বেগম সোফায় বসে ছিলেন। আসিফ মায়ের কোলে মাথা রাখতেই ওর মা আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, 


- পুরো সাপ্তাহ তো কি খাটুনি করিস। একা ঘর চালাস। বৌমা যখন চাকরি করে, তার পুরো বেতন টা ও তো তোদের। এক সাথে খরচ করলে তো আরো ভালো ভাবে চলতে পারতি। গাড়ি নিতে পারতি। 


মোহনা যখন গোসল সেড়ে বের হলো রুমের দরজা থেকে বের হতে গিয়ে সে থেমে গেলো। আসিফ কি বলে সে শুনতে চায়। মোহনা নিজেই অনেকবার আসিফ কে বেতনের টাকাটা তুলে দিয়েছে। সে নেয় নি। শুধু বলে তুমি আমার ব্যাংক। তোমার কাছে থাকলে তো জমাই আছে।


আসিফ মুখ তুলে বলল, 

-মা তোমার কি মনে হয়, আমি তোমাদের অভাবে রেখেছি? 


- না, আমি সেটা বলছি না। তোর কষ্ট হয়- 


আসিফঃ মা আমার কষ্ট হয় না। এইটাই আমার কাজ। মোহনা কাজ না করলে আমাকে আরো বেশি কষ্ট করতে হতো। আমার চেয়ে বেশি অনেকেই কাজ করে। কিন্তু তাদের মাস শেষে লোন। আমার তো মোহনার জন্য লোন করতে হয় না।


- সেটা তো অল্প নিস। বৌমা তো ভালোই বেতন পায়। 

 

আসিফঃ দেখ মা। দুজনেই কষ্ট করে ইনকাম করি। আমি যখন পারছি তখন কেন আমি ওর বেতন টা নেব?


- তোর হাতে দিতে হবে তো কথা নেই। নিজে খরচ করলেই তো পারে। 


-মা তুমি তো জানো, মোহনার আরো ছোট দুইটা ভাই বোন আছে। ওর বাবা চাকরি করে কিন্তু ভাই বোনেদের ভালো পড়াশোনার খরচ চালানোর মতো না। মোহনা ওদের পড়াশোনার খরচ দেয়। বাকি টা ও সেইভ করে। 

ওরাও তো মোহনার ইনকামের হকদার বলো। আমি যদি সংসারের খরচের জন্য ওকে চাপ দিই ও হয়ত বাপের বাড়ি দিয়ে বাকিটা সংসারে দিয়ে দেবে কিন্তু ও সেইভিং টা হবে না। 

বাবা মারা যাওয়ার পর আমি, তুমি, আপু যে কষ্ট টা পেয়েছি। মামার বাড়ির অপমান সহ্য করেছি। আমি চাই না আমার যদি এমন কিছু হয়ে যায়, তোমাকে, মোহনাকে আর তুবাকে এমন কিছু সহ্য করতে হোক। 

তাই আমি চাই মোহনার টাকাটা ও নিজে খরচ করুক। নিজে সেইভ করুক ওর ফ্যামিলি কে দিক। 


সুফিয়া বেগম ছেলের মাথায় আবার হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।বললেন,


-আমি তাহলে আমার ছেলেকে শুধু ছেলে নয়। মানুষ বানাতে পেরেছি। 

কারণ স্ত্রীর সম্মান স্বামীকে রক্ষা করতে হয়। স্বামী রক্ষা না করলে অন্যরা খুবড়ে খায়। 


দরজায় দাঁড়িয়ে মোহনা ওদের মা ছেলে কথা শুনে কান্না করতে লাগলো। এই কান্না তার সুখের কান্না। তার প্রতি তার স্বামী সম্মানের কান্না।মোহনার ওর স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দুটোই বেড়ে গেল।  


মেয়েদের মনে শ্রদ্ধা আসলে সম্মান দিয়ে পাওয়া যায়। আপনি জোর করে তা নিতে পারবেন না। 

সংসারে স্বামীকেই স্ত্রীকে বুঝতে হবে আর সম্মান করতে হবে তাহলে অন্য কেউ সাহস পাবে না তাকে অসম্মান করার জন্য।

  


গল্প_স্ত্রীর_সম্মান

দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।