গল্প:_আমার_ঘর_আমার_সংসার | সংসার জীবনের গল্প

 এই ঘর এই সংসার

এই ঘর এই সংসার

আমার বিয়ে হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি।কিন্তু আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্কটা তেমন ভালো না।বিয়ের রাত থেকে উনি আমাকে যতবার কাছে নিয়েছে তা শুধু শারিরীক চাহিদার জন্য।এর বাইরে উনি আমার সাথে ঠিক মত কথাও বলে না।আমাদের বিয়ে হয়েছে পারিবারিক সূত্রে।আমার স্বামী আমাদের পরিচিত ছিল।কিন্তু উনারা ঢাকায় থাকার কারনে তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না।


আমার শ্বাশুড়ি কিছুদিন আগে গ্রামে বেড়াতে আসে।আর সেখানে আমাকে দেখে উনার পছন্দ হয়।আর বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা মুটামুটি।আর আমি সবে মাত্র ১২ ক্লাসে পড়ি।পাত্রের তুলনায় আমি অনেক ছোট।কিন্তু পাত্র যোগ্য আর আর্থিক অবস্থা ভালো থাকার দরুণ আমার পরিবারও অমত করে নি।বিয়ের আগে আমি আমার স্বামীকে দেখে নি।আমার স্বামীও আমাকে দেখতে আসে নি।বিষয় টা নিয়ে আমি একটু আপত্তি জানালে আমার মা বাবা বলেছিল যে


-ছেলে হয়ত মায়ের কথা শুনে তাই মায়ের পছন্দের বাইরে বিয়ে করবে না।তাই মা যাকে পছন্দ করেছে তাকেই বিয়ে করবে।এজন্য হয়ত আলাদা করে দেখার কোন প্রয়োজন মনে করে নি।


-কিন্তু মা তবুও তো উনার মত আছে কি না।আর উনি তো শহরে থেকে বড় হয়েছে আর আমি গ্রামে।একটু দ্বিমত তো থাকতেই পারে।উনার সাথে কথা বললে হয়ত ভালো হত।


মা একটু রাগ হয়েই বলল


-অমত থাকলে তো ছেলের মা সব জানাত।আর বিয়ের ব্যাপারে তোর এত নাক গলাতে হবে না।এত ভালো পাত্র পাচ্ছিস তবুও মনে এত দ্বিধা কেন?


মায়ের কথাটা শুনে তখন খুব খারাপ লেগেছিল।হয়ত আমি যোগ্যতায় উনার কম।তবুও তো আমার একটা মতের মূল্য দেওয়া উচিত ছিল।তবুও মা বাবার কথাটাকে মেনে নিয়েছিলাম।তারা যা বলেছে তাই করেছি।বিয়ের দিন যখন বরকে প্রথম দেখি তখন মনটা বেশ আনন্দে নেচে উঠেছিল কারন মনে হয়েছিল আমি মা,বাবার কথা শুনে ঠকে নি।আমি উনাকে দেখে চোখ সরাতে পারছিলাম না।এত সুন্দর ছেলে আমার স্বামী হবে ভেবেই ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছিলাম।


কিন্তু সে খুশি আমার বেশিক্ষণ টিকল না।বাসর রাতে আমার বর প্রথমে এসেই আমাকে বলেছিল


-তোমার মত মেয়েকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না।মা পছন্দ করেছে আর মায়ের অসুস্থতার জন্য শুধু তোমাকে বিয়ে করেছি।


কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগল।মুখ ফুটে কোন জবাব দিতে পারলাম না।কষ্ট হতে লাগল খুব।চোখে একফোঁটা শিশিরবিন্দু নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।রাত তখন ২ টা।খেয়াল করলাম কেউ আমার শরীরের নরম মাংসে হাত বুলাচ্ছে।আমি চিৎকার দিয়ে উঠতে নিতেই আমার মুখটা চেপে ধরল।আদু আদু আলোতে আমি চোখ মেলে দেখতে লাগলাম এটা কে?খেয়াল করে দেখলাম এটা আমার স্বামী।বুঝে উঠার আগেই উনি আমাকে একের পর এক স্পর্শ করতে লাগল।কেন জানি না সে স্পর্শ টা আমার শরীরে কাটার মত লাগছিল।শারিরীক সেই সময়টায় আমার স্বামী আমাকে বেশ কয়েকবার জান ভালোবাসি তোমায়,এ কথাটা বলেছে।যখন শারিরীক চাহিদাটা শেষ হয়ে গেল তখন সে আমাকে রেখে চলে গেল।


একেই বুঝি স্বামীর ভালোবাসা বলে।বয়সটা খুব বেশি না আমার।তবে হাজার খানেক স্বপ্ন নিয়ে এ বাড়িতে ঢুকেছিলাম।কি চেয়েছি আর কি হচ্ছে।উনি আমার সাথে তেমন কোন কথা বলে না।শুধু রাতের ঐ সময়টুকুতেই বলে জান ভালোবাসি তোমায়।এছাড়া উনার মুখে আমি ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করতে দেখি নি।মা,বাবাকে সবটা বলার সাহস হল না।কারন তারা কষ্ট পাবে।


বেশ কিছুদিন পর খেয়াল করলাম আমার স্বামীর অনেক বাজে নেশাও রয়েছে।সে সাথে প্রধান ছিল মেয়ের নেশা।টাকা পয়সার অভাব আমার স্বামীর নেই।আমার শ্বশুর সাহেব মারা গিয়েছেন অনেক আগেই।আমার শ্বাশুড়ি সব কিছু সামলিয়েছেন এরপর।আমি কাঁদতে কাঁদতে আমার শ্বাশুড়িকে বললাম


-মা আপনি আপনার ছেলের সব বাজে নেশার কথা জানতেন।বিয়ের আগে একটু বলতে পারতেন।আমি কিভাবে এসব সহ্য করব আপনিই বলুন।একেক দিন একেক মেয়ের সাথে থাকে কিছু বললেই গায়ে হাত তুলে।আমাকে আপনিই বলেন কি করব।


আমার শ্বাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন


-প্রথম যেদিন দেখেছিলাম তখন বুঝে ছিলাম তুমি অনেক বুদ্ধিমতি মেয়ে।সংসার, ব্যাবস্যা সামলাতে গিয়ে আমার তুর্জকে বেশি সময় দিতে পারে নি।(আমার স্বামীর নাম তুর্জ আর আমার নাম ইশিতা)।কখন যে তুর্জ বিগড়ে গিয়েছে বুঝতে পারে নি।কাজের মানুষের কাছে বড় হয়েছে তাই ওর খেয়ালটা আমি নিতে পারে নি।আর বুঝতে যখন পেরেছি সেটা অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পর।তখন আমার করার কিছু ছিল না।মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।বিয়ে যেহুত হয়ে গিয়েছে একটু মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর।ভেবেছিলার বিয়ের পর হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ঠিক হয় নি।তুমি একটু বুঝাও।তোমার সংসার তুমি গুছিয়ে নাও মা।


মায়ের কথাগুলো শুনার পর আর কিচ্ছু বলতে মন চাইল না।কত সহজ করে উনি বলে দিলেন আমার সংসার আমি গুছিয়ে নিতে।অথচ কাকে নিয়ে সংসার গুছাব যে কিনা আমাকে ভালোবাসে না।শারিরীক চাহিদার বাইরে কিছু ভাবতে পারে না।মদ, সিগারেটের নেশার সাথেও মেয়ের নেশাও আছে।মনটা ভেঙ্গে গেল।আমি আমার মাকে বলার পরও আমার মাও বলল


-দেখ মা মেয়েদের বিয়ে একবারেই হয়।তুই আর অহেতুক ঝগড়া করিস না।মানিয়ে নে।

মানিয়েই সংসার করতে হয়।আমরাও মানিয়েই সংসার করেছি।


মায়ের কথাগুলো শুনেও আজকে নিজেকে বেশ পরগাছা মনে হতে লাগল।কেউ আমার মনের কথাটা ভাবল না।আমার পরিস্থিতি টা চিন্তা করল না।যে যার মত করে বলে দিল।বুঝে গিয়েছি অহেতুক আর সুখের স্বপ্ন দেখে লাভ নেই।এ স্বপ্ন আর আমার কপালে টিকবে না।


প্রতিরাতেরই একেই ঘটনা একেই কাজ।খুব কষ্ট হলেও সহ্য করে নিতে হবে।সেদিন আমার পিরিয়ড হয়েছিল।আমি খেয়াল করলাম আমার স্বামী নেশা করে ঘরে ফিরেছে।আমি আমার স্বামীকে ধরে ঘরে ঢুকালাম।খাবার দিতে চাইলাম।খাবার খাবে না বলে দিয়েছে।আমারও আর খেতে মন চাইল না।না খেয়েই শুয়ে পড়লাম।খানিকক্ষণ পর উনার স্পর্শ অণুভব করলাম উনাকে বললাম আমার তো এখন পিরিয়ড চলছে দয়াকরে এ সময়টায় আমাকে কষ্ট দিবেন না।এমনিতেও আমার অনেক কষ্ট হয়।উনি আমার কথায় কোন সাড়া না দিয়ে উনার মত যা করার করে নিল।আমার সেদিন মনে হয়েছিে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে।স্বামীরা বুঝি এমন হয়?তখন উনার মুখে ভালোবাসি শব্দটা আমাকে শুধু যন্ত্রণায় দিল।অমানসিক এ যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে সারারাত পার করলাম।সকালে উঠার শক্তি পাচ্ছিলাম না।কোন রকমে উঠে কাপড় চেন্জ করলাম।মনে মনে কষ্ট পেতে লাগলাম।কাকে বলব আমি এসব কথা।কাকে বলব আমি আমার স্বামীর কাছে প্রতিদিন রেইপ হচ্ছি।আইন তো এমন কোন কথা বিশ্বাস করবে না।সবাইকে বললে বলবে নিজের স্বামী চাইবে না তো কে চাইবে?কিন্তু কেউ আমার মানসিক অবস্থাটা বুঝতে চাইবে না।নিজেকে আজ বেশ অসহায় লাগছে।


এসব অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলাম না।একবার মনে হচ্ছিল নিজেকে শেষ করে দেই।কিন্তু সে সাহসটা আর পেলাম না।কয়েকদিন পর একটা বিষয় জানতে পেরে কষ্টে বুক ফেটে গেল।আমার বাবা,মা টাকার লোভে পড়ে ছেলের কোন খুঁজ খবর না নিয়েই আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল।হায়রে সমাজ। এ সমাজে মানুষ শুধু টাকাটাই দেখে।ভালো মানসিকতা আর কেউ দেখে না।আজকে নিজেকে অনেক অসহায় মনে হতে লাগল।মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াটায় যেন পাপ মনে হতে লাগল।কারন আমি জানতে পারি আমার স্বামী...


গল্প:-আমার_ঘর_আমার_সংসার

পর্ব : ০১

শারমিন


গল্প:_আমার_ঘর_আমার_সংসার (পর্ব : ০২)

শারমিন আঁচল 


কারন আমি জানতে পারি আমার স্বামীর এ আগেও একটা বিয়ে করেছে।আর সে বউ তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।কে বা থাকবে এমন মানুষের সাথে।আমি তো কষ্ট সহ্য করে বাধ্য হয়ে থাকতেছি।আমার ভিতরের কষ্টটা বুঝার মত ক্ষমতা কারও নেই।আমার বাবা, মা অর্থের লোভে পড়ে ছেলের খবরও ঠিক করে নেয় নি।আজকে আমার মত অসহায় আরও কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না।ইচ্ছা করছে শ্বাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করি কেন উনি সবটা লুকিয়েছেন?কিন্তু জিজ্ঞেস করলেই বা কি হবে? উনি উনার মতই মনগড়া কয়েকটা জবাব দিবে আর বলবে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে।আর আমার মাকে বললে বলবে বিয়ে তো হয়েই গিয়েছে এখন আর ঝামেলা করিস না। মানিয়ে নে আমরাও তো মানিয়ে নিয়েছি।কেউ আমার মনের দিকটা ভাববে না।তাই ওদের এসব ভিত্তিহীন নিতী কথা শুনে কাউকে কিছু বলার মত রুচি জাগল না।


সেদিন আর সব দিনের মতই ঘরে বসে ছিলাম।সারাদিন একা ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ আমার নেই।নিজেকে খুব বন্ধী পাখির মত মনে হয়।মনে হয় খাঁচার ভিতর থেকে উড়বার জন্য ছটফট করতেছি।ঠিক এসময় খেয়াল করলাম তুর্জ এসেছে।সাথে একটা মেয়েও এসেছে।মেয়েকে বেশ অন্তরঙ্গ ভাবে ধরে আছে। মেয়ের সাথে এরকম অন্তরঙ্গ ভাবে আছে দেখে মনটা বেশ অশান্ত হয়ে গেল।নিজেকে কেন জানি না সামলাতে পারলাম না।তুর্জের কাছে গিয়ে বললাম


-আপনি এত রাতে বাড়ি ফিরেছেন সাথে একটা অন্য মেয়ে নিয়ে।লজ্জা করল না ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েকে ঘরে তুলতে?রাতের পর রাত নেশা করে বাড়ি ফিরেন।কাপুরুষের মত ঘরে এসে বউ এর গায়ে হাত তুলেন।সাথে পর নারী নিয়ে ঘরে ফিরেন।আপনি কি মানুষ।


পাশ থেকে মেয়েটা তুর্জের দিকে তাকিয়ে বলল


-এ মেয়ে কে? আর এভাবে কথা বলছে কেন?আমাকে ইনসাল্ট করে কথা বলছে আর তুমি চুপ করে আছ।এরকম কথা শুনানোর জন্য তুমি আমাকে নিয়ে এসেছ।এরকম জানলে আমি তোমার সাথে আসতামেই না।আমি এখনেই চলে যাচ্ছি। 


তুর্জ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল


-ও আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।মা গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছে।ওর মাথায় ও সমস্যা আছে।মাইন্ড কর না প্লিজ।


মেয়ে অবাক হয়ে তুর্জকে বলল


-একটা কাজের মেয়ের এত বড় স্পর্ধা কি করে হয় এভাবে কথা বলার।


-আরে বল না।মা এর লাই পেয়ে একদম মাথায় চড়ে বসেছে।গাইয়া ক্ষেত মেয়ে মায়ের লাই পেয়ে আমাকে স্বামী করে পাবার স্বপ্ন দেখছে।তুমি ওর কথা সিরিয়াসলি নিও না।


মেয়েটা আমার দিকে তাকাল।তারপর একটু মুখটা বাঁকালো আর বলল


-সাহস কি করে হয় এভাবে কথা বলার?কাজের মেয়ে কাজের মেয়ের মত থাক।


-আমি কাজের মেয়ে?না জেনে উল্টা পাল্টা কথা বলতে লজ্জা লাগছে না।আপনাদের মত নিকৃষ্ট মেয়েদের জন্যই সমাজের এ হাল।লজ্জা লাগে না, একটা পরপুরুষের সাথে বিয়ে বহির্ভূত মেলামেশা করতে?তার বেডে চলে আসতে?নিজেকে কতটা নীচে নামাবেন?


-কি বলতে চাচ্ছ তুমি।বেয়াদব মেয়ে।গাইয়া ভূত, তুমি কি বুঝবা আধুনিক যুগের চালচলন।বড় তো হয়েছে গ্রামে থেকে।


আমি একটু হেসে জবাব দিলাম


-ভাগ্যিস শহরে থেকে বড় হয় নি।শহরে থেকে বড় হলে হয়ত নিজের সম্মান কি করে পরপুরুষের হাতে বিলিয়ে দিতে হয় খুব ভালো করে বুঝে যেতাম।নির্লজ্জ বেহায়াপনা শিখে যেতাম।আধুনিকতার নাম দিয়ে নোংরামি করে বেড়াতাম।ভাগ্যিস আমি স্মার্ট না।শার্ট প্যান্ট পড়ে ছেলেদের মত বেশ ধরে নাইট ক্লাবে যাওয়া আর বউ থাকা সত্ত্বেও পরপুরুষের সাথে ঢলাঢলি করা যদি স্মার্টনেস হয় তাহলে এমন স্মার্ট আমি না তার জন্য শুকরিয়া আদায় করি।


মেয়েটা আমার কথা শুনে আরও রেগে গেল।বুঝায় যাচ্ছিল কথাগুলো মেয়েটার গায়ে লাগছে।রেগে গিয়ে আমার উপর হাত তুলতে নিল গায়ে হাত দেওয়ার জন্য।আমি হাতটা ধরে মুচর দিয়ে বললাম


-ভুলেও এ কাজ করার সাহস দেখাবেন না।আমি কোন অযৌক্তিক কথা বলে নি যে আপনি গায়ে হাত তুলবেন, আর আমি মেনে নিব।হাতটা একদম ভেঙ্গে দিব।গ্রামে থেকে বড় হয়েছি।এর আগে অনেক গাছের ডালপালা ভেঙ্গেছি।এ কোমল হাত ভাঙ্গতে বেশিক্ষণ লাগবে না।ভুলেও গায়ে হাত তুলার দুঃসাহস দেখাবেন না।


খেয়াল করলাম মেয়েটা আমার কথা শুনে বেশ রাগান্বিত হল।কোন রকমে আমার হাত থেকে উনার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তুর্জকে বলল


-তুমি কি আমাকে অপমান করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছ?আমি আর এক মুহুর্ত ও এখানে থাকব না।


তুর্জ আমার দিকে তাকাল।তুর্জের চোখ রাগে রক্তলাল হয়ে আছে।আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে কষিয়ে একটা চড় দিয়ে বলল


-সাহস কি করে হয় তোমার ওর সাথে এমন আচরণ করার?আর বের হও রুম থেকে।


এ বলে আমার গলাটা ধাক্কা দিয়ে আমাকে বের করে দিল।যে জায়গায় নিজের স্বামীই ঠিক না সে জায়গায় আর কথা বলতে মন চাচ্ছিল না।কোনরকমে উঠলাম।খেয়াল করলাম মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর একটু হাসি দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল।কি যে কষ্ট হচ্ছিল তখন বলে বুঝাতে পারব না।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে, পাশের রুমে গেলাম।হায়রে কপাল আমার যে ভালবাসাটা পাওয়ার অধিকার ছিল সে ভালোবাসা পাচ্ছে অন্য একটা মেয়ে।আমার শ্বাশুড়ি তো দিব্যি আমার চিন্তা রেখে ব্যবস্যা করছে।আমাকে নিয়ে ভাবার মত কারও সময় নেই।


এত টাকা তো আমি চাই নি।কোন মেয়েই তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিবে না।আর আমার কি পুড়া কপাল নিজের চোখের সামনে এতকিছু করছে বলতে পারছি না।সবটা মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে।আজকে বড্ড অসহায় লাগছে আমার।মা কে ফোন দিলে সে একেই নিতী বাক্য শুনায়।আর কত সহ্য করব আমি।অসহায়ত্বের মত্রা কতটা তীব্র হলে এমন লাগে আজকে বুঝতে পারছি।প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা মানুষকে সব দিতে পারলেও ভালোবাসাটা দিতে পারে না।ভালোবাসার জন্য দরকার সুন্দর একটা মানসিকতার।যা সবার হয় না।


মেয়েটার সাথে যতক্ষণ তুর্জ এক রুমে ছিল।আমার বুকে ততক্ষণ একটা অজানা ঝড় বয়ে চলছিল।যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করতেছিল।কোনভাবেই মানতে পাড়ছিলাম না, নিজেকে সামলাতেও পারছিলাম না।এটা সহ্য করার মত ও না।কেন জানি না হুট করে আমার মধ্যে এক অজানা সাহস জাগল প্রতিবাদ করার।আমি মনে সাগস জুগিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।খানিকক্ষণ পর তুর্জ দরজা খুলল।আমাকে দেখে তুর্জের রাগ টা আরও দ্বিগুণ হল।আমি তুর্জকে চিৎকার করে বললাম


-আমি আপনার স্ত্রী। আমাকে রেখে আপনি এমন কাজ করতে পারেন না।কোন মেয়েই এটা সহ্য করবে না।আপনি শুধু শুধু কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন?আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?বিয়ে করতে না চাইলে বিয়ের আগে বলতেন।আমাকে কেন এভাবে বিয়ে করে কষ্ট দিচ্ছেন।অমানুষের মত এসব করতে লজ্জা লাগছে না আপনার।একটা নারীর মন নিয়ে খেলছেন আপনার ত লজ্জা হওয়া দরকার।বউ রেখে পরনারীর সাথে রাত কাটায় কাপুরুষেরা।


কথাগুলো শুনে তুর্জের রাগের মাত্রা আরও বেড়ে গেল।আমার চুলগুলো ধরে আছড়ে ফেলে দিয়ে বলল


-অনেক বেশি বলে ফেলছিস।না জেনে অনেক কথা বলেছিস।আরেক একবার দরজাটা ধাক্কা দিলে বুঝবি।


এ বলে দরজা লাগিয়ে দিল।আমার ভিতরেও ঝড়টা আরও বাড়তে লাগল।আমি পুনরায় দরজা ধাক্কা দিতে লাগলাম।এবার দরজা খুলল ঐ মেয়েটা। দরজা খুলে আমাকে বলল


-সমস্যা কি তোর?


-আমার সমস্যা কি মানে?ভদ্র ভাষায় কথা বলুন।


-সেন্স নেই তোর।এখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দরজা লগিয়ে প্রাইভেট টাইম পাস করছে আর তুই এভাবে চিল্লাছিস?লজ্জা নাই তোর।তুর্জ এত মারে ঘৃনা নাই তোর?


-আমাকে লজ্জা ঘৃনার চ্যাপ্টার পড়াতে হবে না।লজ্জা তো হওয়া দরকার আপনার।আপনি জানেন যে তুর্জের বউ আছে জেনেও কিভাবে নিজেরে বিলিয়ে দিচ্ছেন।প্রাইভেট টাইম পাস করছেন নাকি বেহায়াপনা করছেন একটু ভেবে দেখুন।বেহায়াপনা করবেন আর কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে জ্ঞান দিবেন।বেশ্যা মেয়ের মত চলাফেরা করে আধুনিকতার দোহাই দেন আপনার লজ্জা লাগে না।


এটা বলার পর মেয়েটা বেশ রাগ হয়ে তুর্জকে বলল


-আমি আর এখানে থাকব না।এ কোন মেয়েকে গ্রাম থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছ আমাকে অপমান করার জন্য।


তুর্জ মেয়েটার কথা শুনে দরজার সামনে এসে আমাকে বলল


-তুই যাবি নাকি এভাবে অশান্তি করবি?


-আমি অশান্তি করছি?অশান্তি ত করছেন আপনি?এর আগেও একটা বিয়ে করেছেন বউ রেখে চলে গিয়েছে এখন আমাকে বিয়ে করে নষ্টামি করতেছেন অন্য মেয়ের সাথে।আপনার মত অমানুষ কেউ আছে বলে মনে হয় না।আগের বউটা চলে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে।আর আমি তো বেঁচে থেকেও মরে আছি।


আমার একথাটা শুনার পর তুর্জের রাগের পরিমাণ তীব্র হতে তীব্র হতে লাগল।আমাকে বলল


-এখান থেকে যা।


আমিও বেশ জোড়ালো গলায় বললাম


-যাব না কি করবেন?এ মেয়েকে বিদায় না করলে যাব না।


একের পর এক তর্ক হতে লাগল।তর্কের এক পর্যায়ে তুর্জ.....


(৩)

তর্কের এক পর্যায়ে তুর্জ আমাকে কষিয়ে চড় দিতে নিল।আমি এবারও তুর্জের হাত ধরে বললাম


-অনেক সহ্য করেছি, সহ্যের মাত্রা অতিক্রম করলে আমিও আর সহ্য করব না।আমি বোকা না।নিজের অধিকার আদায় কিভাবে করতে হয় আমি জানি।আপনার আগের বউ এর মত অবলা না।আগেরটা পালিয়ে গিয়েছে বলে আমি আপনার মার খাওয়ার পর পালিয়ে যাব সেটা ভাববেন না।বউকে সম্মান দিতে পারবেন না তো বিয়ে কেন করেছেন?কাপুরুষের মত আচরণ করেন আবার মেয়েদের গায়ে হাত তুলে নিজের পুরুষত্ব ফলাতে চান।আপনার আগের বউ পালিয়ে গিয়ে ভালোই করেছে। কারন আপনার মত কাপুরুষের সাথে থাকার চেয়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক ভালো। আমি তো বাধ্য হয়ে আপনার কাছে থাকতেছি।


আরও কিছু বলতে নিব ঠিক এ মুহুর্তে তুর্জ আমার হাত থেকে ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আমার গালে জোরে একটা চড় দিল।আমি চড়টা খাওয়ার পর উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি বেশ গম্ভীর হয়ে গিয়েছে আমার একথা গুলো শুনে আর আমাকে চড়টা দিয়ে।আমাকে চড়টা দেওয়ার পর কেমন জানি দম ধরে বসে পড়ল।খেয়াল করলাম কিছুক্ষণের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।আমি বুঝতে পারছিলাম না তুর্জের কি হল?মুহুর্তের মধ্যে তুর্জ জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।আমার কলিজার পানি যেন শুকিয়ে যাচ্ছিল।হঠাৎ কি এমন হল যে তুর্জ এভাবে জ্ঞান হারাল।আমি তু্র্জকে ধরে ডাকতে লাগলাম।তু্র্জের কোন সেন্স কাজ করতেছিল না।আমি পানি এনে তুর্জের মুখে ঝাপটা দিতে লাগলাম।তুর্জের জ্ঞান ফিরতেছিল না তবুও।এর মধ্যে তুর্জের রুমে থাকা মেয়েটা চলে গেল।বাড়িতে শুধু আমি একা।আমার শ্বাশুড়ি মা বাইরে।এখন কি করব কোনভাবেই বুঝতে পারছিলাম না।অনেকটা অসহায়ের মত নিজেকে মনে হল।আমার কোন আলাদা মোবাইল ও নাই যে কাউকে কল দিব।আমার শরীরটা বেশ কাঁপতে লাগল।কোনভাবেই তুর্জের জ্ঞান ফিরছিল না।আমি কোন দিশা না পেয়ে তুর্জের মোবাইলটা খুঁজতে লাগলাম।তুর্জের মোবাইলটা দেখলাম ওয়ারড্রবের উপর পড়ে আছে।মোবাইলটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিলাম।এর আগে কখনও উনার মোবাইল আমি হাতে নেই নি।যতবার মায়ের সাথে কথা বলেছি সেটা শ্বাশুড়ি মায়ের ফোন দিয়ে।তাই মোবাইলটা নিতেও আমার বেশ ভয় লাগছে।তবুও সাহস করে মোবাইলটা হাতে নিলাম।মোবাইলটা একটা চাপ দেওয়ার সাথে সাথে লক স্ক্রিনে একটা মেয়ের ছবি ভেসে উঠল।বেশ সুন্দরী পরিপাটি একটা মেয়ে।মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগল এ মেয়ে কে?হতে পারে কোন বাইরের মেয়ে।উনার জীবনে তো মেয়ের অভাব নেই।এসব ভেবে লাভ নেই।কিন্তু মোবাইলটা লক করা খুলব কিভাবে?মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না।একের পর এক চেষ্টা করে যেতে লাগলাম।কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিল না।হুট করে মনে হল মোবাইলে তো ফিঙ্গার দেওয়া আছে তাই তারাহুরা করে উনার কাছে গেলাম।উনার হতটা দেওয়ার সাথে সাথে মোবাইলের লক টা খুলল।লকটা খুলার সাথে সাথে খেয়াল করলাম ঐ মেয়েটার আরেকটা ছবি।আমি বেশ চমকালাম।এটা কোন মেয়ে আর এ মেয়ের ছবি উনার ফোনে কেন?


সাত পাঁচ ভাবার সময় এখন না।তাই সাত পাঁচ না ভেবে আমি আমার শ্বাশুড়ি মাকে কল দিলাম।শ্বাশুড়ি মাকে সবটা খুলে বললাম।আমার শ্বাশুড়ি মা বললেন


-না জেনে এত কিছু না বললেও পারতে।আমি ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছাবে।তুমি ওকে পানির ঝাপটা দিতে থাক।দেখ জ্ঞান ফিরে কি না।


এই বলে উনি ফোনটা কেটে দিলেন।আমার শ্বাশুড়ি মা ফোনটা কাটার পর আমি উনার শরীরে হাত দিয়ে খেয়াল করলাম উনার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আমি উনার শরীরটা মালিশ করতে লাগলাম।খানিক্ষণ এর মধ্যে ডাক্তার চলে আসল।ডাক্তার তুর্জকে দেখে বলল


-রোগীর অবস্থা তো তেমন ভালো মনে হচ্ছে না।রোগীকে এখনি হাসপাতালে নিতে হবে।


কথাটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।মনে মনে নিজেকে বেশ অপরাধী মনে হতে লাগল।কেন জানি না মনে হতে লাগল এসবের জন্য আমিই দায়ী।আমার উচিত হয় নি উনাকে এভাবে কথা বলা।আজকে উনার কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।এর মধ্যে এম্বুলেন্স চলে আসল।উনাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম।আমার শ্বাশুড়ি মা তুর্জের এ অবস্থা শুনে বেশ স্তব্ধ হয়ে গেল।ফোনটা কেটে দিল।আমি এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে গেলাম।তু্র্জকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেল।আমি বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।আমার মনটা বেশ ছটফট করতে লাগল।এতটা বাড়াবাড়ি আমার করা উচিত হয় নি।কিন্তু কেন উনি এভাবে জ্ঞান হারাল আমার মাথায় সেটাও আসছে না।খানিকক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলল


-রোগীর ছোটখাট একটা এটাক হয়েছে।এক সাইড অবশ হয়ে গিয়েছে।প্রচন্ড মানসিক আঘাতে এমন হয়েছে।জ্ঞান ফিরতে আরও কিছুক্ষণ সময় লাগবে।আর হাঁটা চলা তেমন করতে পারবে না।কথাও বলতে পারবে না।থেরাপি এক্সারসাইজ করলে হয়ত ঠিক হতে পারে।তবে সেটাও সময় সাপেক্ষ। আপনার শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করেন কোথায় এসেছে।উনাকে সবটা বুঝিয়ে বলা হয়েছিল এর আগে।তবুও কেন সতর্ক হয় নি। 


আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম


-এর আগেও বলা হয়েছিল মানে?


-এর আগেও উনার এরকম এটাক হয়েছিল।তখনেই উনাকে না করে দেওয়া হয়েছিল যে কোনরকম উত্তেজিত যেন না করা হয়।তবে উনাকে এভাবে কি বিষয়ে উত্তেজিত করল সেটা জানা দরকার।আপনার শ্বাশুড়ি কোথায়?


-মা জ্যামে আটকে আছে।কাছাকাছি চলে এসেছে।এর আগে কিজন্য এমন হয়েছিল আমাকে বলুন প্লিজ।


-সেটা আপনি আপনার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে জেনে নিবেন।আপাতত কিছু টাকা একাউন্টে জমা দিতে হবে সেটার ব্যাবস্থা করুন।


আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম


-আমার হাতে তো এখন এত টাকা নেই।মা আসলেই সবটা দিবেন।আপনি চিকিৎসা করতে থাকুন


-আচ্ছা ঠিক আছে।চিকিৎসা চলেতেছে।আপনার শ্বাশুড়ি আসলে দ্রূত আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন।


-আচ্ছা।


তুর্জের এ অবস্থার জন্য আমিই দায়ী।কেন যে এমন হল।আল্লাহ আমার আর কত পরীক্ষা নিবেন জানি না।আমার ভিতটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।ভিতরটা বেশ শূন্য শূন্য লাগছে।কেন আমি এমন করতে গেলাম এ প্রশ্নটা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে।তবুও কাঁদতে পারছি না।হুট করে খেয়াল করলাম মা এসেছে।মাকে দেখে একটু ভরসা পেলাম।দৌঁড়ে মায়ের কাছে গেলাম


-মা ডাক্তার সাহেব বলেছে আপনাকে দ্রূত উনার সাথে যোগাযোগ করতে।


-আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেই এসেছি।এখন তুর্জ একটু ভালো আছে।তবে আবার এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে।এর আগে এমন হয়েছিল অনেক চিকিৎসা, থেরাপি নেওয়ার পর ভালো হয়েছিল।এখন আবার হয়েছে।কি হবে কে জানে।কে ওর দেখাশুনা করবে আমি সেই টেনশনে আছি।


-মা আপনি দেখাশুনার চিন্তা করবেন না সেটা আমিই করতে পারব।কিন্তু এর আগে উনার এরকম কেন হয়েছিল।


-এগুলো বলতে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে তবুও কথা শেষ হবে না।


-মা আমি উনার স্ত্রী । আমার জানার অধিকার অবশ্যই আছে।আপনি আমাকে বলুন।


-কি শুনবে মা?শুনলে কি তুমি সহ্য করতে পারবে?


-এতকিছু সহ্য করতে পেরেছি আরও কঠিন কিছু হলেও পারব।কপাল তো এমনেই ফাটা আর কত ফাটবে।আপনি বলুন।


-তাহলে শুন তুর্জ যখন.....


গল্প_আমার_ঘর_আমার_সংসার (পর্ব : ০৩)

 শারমিন আঁচল


(৪)

-তাহলে শুন।তুর্জ যখন ভার্সিটিতে পড়ত।তখন তুর্জের সাথে লামিসা নামের এক মেয়ের রিলেশন হয়।প্রথমে ভালো বন্ধুত্ব হয় পরে আস্তে আস্তে সে বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নেয়।তুর্জের তখন মদের নেশা, অন্য কোন মেয়ের নেশা ছিল না।তখন আমার সোনার টুকরা ছেলে ছিল তুর্জ।লামিসার সাথে বন্ধুত্বটা আস্তে আস্তে প্রেমে গড়ায়।বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সম্পর্ক।একদিন আমার ছেলে এসে আমাকে লাজুক মুখে বলল


-মা একটা কথা বলব।রাগ করবে না তো।


আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম


-কি কথা?রাগ কেন করব।টাকা লাগবে?


-আরে মা টাকা লাগবে না।তবে...


-কি রে আটকে গেলি যে।


-নাহ মানে।


-কি রে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিস মেয়েদের মত ঘটনা কি?


আমার ছেলে লজ্জা মাখা মুখে উত্তর দিল


-মা আমি লামিসাকে খুব পছন্দ করি।তুমি যদি চাও আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।


আমারও মনে মনে লামিসাকে বেশ পছন্দ ছিল।মেয়েটা সুন্দরীও ছিল আর শিক্ষিতাও ছিল।আচার ব্যাবহার ও অনেক ভালো ছিল।তাই আমি ছেলের প্রস্তাবে আর অমত করেনি।তুর্জকে হাসতে হাসতে বললাম


-এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?লামিসাকে আমার ও বেশ পছন্দ।কবে ওদের বাড়ি যাব আমাকে বলিস।


তুর্জ মাথা চুলকাতে চুলকাতে জবাব দিল


-তুমি যদি চাও কালকেই যাব ওর বাসা থেকেও অন্য জায়গায় বিয়ের প্রেসার দিচ্ছে।এজন্য যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততই ভালো।


-আচ্ছা। কালকেই যাব তাহলে।ওদেরকে জানাতে বল।


পরদিন সকালে আমি আর তুর্জ লামিসাদের বাসায় যাই।লামিসার মা,বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখি।তারাও অমত করে নি।তারাও হাসি মুখে বলেছিল


-ছেলে মেয়ে পছন্দ করেছে এখানে আমাদের অমতের কিছু নেই।


কিছুদিনের মধ্যেই লামিসা আর তুর্জের বিয়ে হয়।বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সংসার।কোন জগড়া বিবাদ কিছুই ছিল না।হাসি খুশি সুখী সংসার বলতে পার।


মা এবার কথাগুলো বলে একটু দম নিতে লাগলেন।আমি বুঝতে পারলাম না এত সুখী সংসার রেখে লামিসা কেন চলে গেল।তার মানে লামিসা কি পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়েছিল।আমি মাকে প্রশ্ন করলাম


-মা লামিসাকে কি তাহলে পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়েছিল?অন্য ছেলের সাথে কি চলে গিয়েছিল।


মা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল


-নাহ এমন কিছুই হয় নি।


-তাহলে?


-জানি না লামিসার কি হয়েছিল কোথায় গিয়েছে আর কেন গিয়েছে।লামিসাকে ৫ বছর যাবত পাওয়া যাচ্ছে না।বিয়ের ১ বছর পর যে কোথায় চলে গিয়েছিল বুঝতে পারে নি।জানতেও পারি নি।অনেক খুঁজ নিয়েছি খুঁজ পায় নি।সবাই তো বলে বসল পালিয়ে গিয়েছে কোন ছেলের সাথে।তুর্জ ও এখন ভাবে হয়ত লামিসা পালিয়ে গিয়েছে।এরপর থেকে তুর্জের বদঅভ্যাস গুলো বাড়তে থাকে।অনেকবার বিয়ের কথা বলেছি রাজি হয় নি।লামিসাকে কোনভাবেই তুর্জ ভুলতে পারে নি।লামিসার কথা শুনলেই তুর্জ রেগে যায়।লামিসা চলে যাওয়ার পর এমন একটা এটাক হয়েছিল।আর আজকে তুমি ওকে এসব নিয়ে বেশ কথা শুনিয়েছ তাই আবার এমন হল।


আমার ভিতরেও একটা প্রশ্ন জাগল তাহলে লামিসা কোথায় গেল?মনে মনে বেশ অপরাধবোধ ও হল। কারন না জেনে উনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।এমনটা করা আমার উচিত হয় নি।কথা শুনতে শুনতেই ভোর হয়ে গিয়েছে।মসজিদে ফজরের আযানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে।আমি অযু করে নামাজে দাঁড়ালাম।রবের কাছে আমার স্বামীর সুস্থতা কামনা করলাম।আমার দুই নয়নে শ্রাবনের মেঘ যেন বেয়ে চলেছে।নামাজ শেষ করে এসে দেখলাম ডাক্তার সাহেব এসেছে।ডাক্তার সাহেবকে উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞেস করলাম


-তুর্জের অবস্থা কেমন?


ডাক্তার সাহবে স্বস্তি ভরা গলায় জবাব দিলেন


-আমরা তো ভেবেছিলাম উনি হাঁটতে চলতে পারবে না।কিন্তু এটা তো ক্ষতি উনার হয় নি।হাঁটতে চলতে পারবে তবে কথা বলতে পারবে না।উনার মুখের ব্যায়াম গুলো বেশি বেশি করাতে হবে আর উনার সামনে বেশি বেশি কথা বলতে হবে।তাহলে হয়ত কথা বলতে পারবে আবার।আর আবারও সাবধান করে দিচ্ছি উনাকে কোনভাবে উত্তেজিত করা যাবে না।


আমি শান্ত সুরে জবাব দিলাম


-সেটা মাথায় থাকবে।আমি কি একটু দেখা করতে পারি উনার সাথে?


-হ্যা পারবেন।তবে যেকোন একজন যেতে পারবেন।আপনাদের মধ্যে কে যাবেন ভেবে একজন যান।


আমি কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।মনে হয় আমার শ্বাশুড়ি মা যেতে চাইবে।কিন্তু ঠিক এ মুহুর্তে আমার শ্বাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল


-মা তুমিই যাও।


কথাটা শুনে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না।দৌঁড়ে তুর্জের কাছে চলে গেলাম।দেখলাম উনি তাকিয়ে আাছে।আমি উনাকে ধরে কাঁদতে লাগলাম।উনি আমাকে ছাড়াতে চাইলেও আমি উনাকে ছাড়তে চাইলাম না।ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম


-আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি আর এমন করব না।আমি কিছু না জেনে এমন করেছি।আপনি যে সুস্থ আছেন এতেই আমি খুশি।


একের পর এক এসব বলতে লাগলাম।হঠাৎ করে খেয়াল করলাম তুর্জ আমায় চিমটি দিয়ে বসল।আমি তুর্জের চিমটি খেয়ে তুর্জের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তুর্জ কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।হাতে ইশারা দিয়ে যেন কি বুঝাতে চাচ্ছে।অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারলাম উনি খাতা কলম চাচ্ছে।আমি একটা খাতা আর কলম জোগাড় করে উনাকে দিলাম।উনি কি একটা যেন লিখছেন।লিখার পর আমাকে দেখালেন।আমি লিখাটা দেখে বেশ লজ্জা পেয়ে বসলাম।উনি লিখেছেন 


-তুমি আমার উপর এভাবে হামলে পড়েছ কেন?আর যা হয়েছে তো হয়েছেই এটা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।এত মাফ চাইতে হবে না।আর দয়াকরে আবার আমাকে ঝাপটে ধরে আমার উপর হামলে পড় না।


আমি লজ্জায় লাল মুখ হয়ে মাথা নেড়ে বললাম


-আচ্ছা।


দুইদিন হাসপাতালে থাকার পর উনাকে বাসায় নিয়ে গেলাম।ডাক্তারের কথা মত উনার সাথে অনেক কথা বলতে লাগলাম।বেচারা মাঝে মাঝে আমার কথা শুনে হাসে আবার বিরক্ত ও হয়।কিন্তু আমার কথার ফুলঝুরি আর থামে না।উনি বিরক্ত হয়ে খাতায় লিখল


-তুমি এত বক বক কেন করছ পাগলের মত।বেশ বিরক্ত লাগছে।আমার রাগ উঠার আগে এখান থেকে বের হও তো।


-হ্যা আপনার কথায় আমি বের হয়ে যাই।আর আপনি এভাবে পড়ে থাকেন।আমি বের হওয়ার পর আপনার সেবা কে করবে শুনি?ঐদিন বাসায় যে রুব্বানকে নিয়ে এসেছিলেন।যে রুব্বানের জন্য আমাকে ঘর থেকে বের করে উনার সাথে থেকেছিলেন।সে রুব্বান তো আপনার এ হাল দেখে চলে গিয়েছিল।ঐগুলা তো আসে টাকার জন্য।কেন আপনি এসব করবেন।আমি আপনার স্ত্রী। একজন মানুষের জন্য তো আপনি আরেকজনকে কষ্ট দিতে পারেন না।আর সবাই তো এক না।আর এটা ভাব্বেন না যে আমি চলে যাব।চলে যাওয়ার হলে এত কিছু সহ্য করতাম না।আপনি শুধু আমার থাকেন।আপনার এ অবস্থা না হলে জানতামেই না আমি আপনাকে কতটা ভালোবেসেছি।আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন উপলব্ধি করেছি যে আমি আপনাকে মনের অজান্তেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।আর শুনেন আজকে নাকি চকলেট ডে।তাই আপনার জন্য চকলেট এনেছি।


উনি আবারও বিরক্ত মাখা মুখে কাগজে লিখলেন


-তুমি যাও তো।আমি চকলেট খাব না।আর পরের বার ঘরে আসলে একটা কস্টেপ নিয়ে আসবা।


আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম


-আপনি কস্টেপ দিয়ে কি করবেন?


কাগজে লিখে জবাব দিলেন


-তেমার মুখে মারব।


আমি হাসি হাসি মুখে বললাম


-আপনি চকলেট টা না খেলে কিন্তু আমি আরও বক বক করব।জানেন তো কলেজে আমি অনেক বকবক করতাম।আমার পাশে কেউ বসত না আমার বকবকের জ্বালায়।


কাগজের গুটা গুটা অক্ষরে হাসি হাসি মুখে লিখে জবাব দিলেন


-সে তোমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আর চকলেট খানা দাও।আমি খাচ্ছি।আর তুমি এখন বিদায় হও।


আমি চকলেটটা দিয়ে চোখ টিপুনি দিয়ে বের হয়ে গেলাম।


(৫)

খানিকক্ষণ পর উনার রুমে এসে চমকে গেলাম কারন উনি একটা কাগজে লিখেছেন


-সরি তোমাকে এতদিন এভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য।তোমার সব ঠিক আছে।তবে তুমি বকবক টা একটু বেশি কর।বকবকানি আমার একদম ভালো লাগে না।


আমি উনার এ লিখাটা পড়ে এত খুশি হয়েছি যে কি বলব।আমি খাুশিতে নাচতে নাচতে বললাম


-বকবক তো একটু করতেই হবে।না হলে আপনি সুস্থ হবেন না।


কাগজে পুনরায় লিখলেন


-তোমার মত এরকম বকবক লামিসাও করত।কেমনে পার এত বকবক পকপক করতে?


লামিসার কথাটা শুনে কেন জানি না লামিসাকে বেশ হিংসা লাগল।হিংসার পাহাড় টা নাক ফুলে বের হল।নাক ফুলাতে ফুলাতে বললাম


-আপনি মনে হয় লামিসাকে খুব বেশি ভালোবাসেন তাই না।


উত্তরে উনি লিখলেন


-সত্যি বলতে লামিসাকে অনেক ভালোবাসি আর আগেও ভাসতাম।লামিসা যে কোথায় চলে গেল বুঝতে পারলাম না আজও।কোন টাকা পয়সা নেয় নি।টাকা পয়সা নিলে হয়ত ভাবতাম টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে।কিন্তু কোথায় যে গেল আজও তার হদিশ মিলল না।খুব কষ্ট হয় মাঝে মাঝে উত্তর খুঁজে না পেয়ে।


আমি বুঝতে পারলাম উনার ভিতরে বেশ কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু এখন কোনভাবেই উনাকে কষ্ট পেতে দেওয়া যাবে না।আমাকেই যা করার করতে হবে।আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম


-আমাকে কি লামিসা ভাবা যায় না।লামিসার মত আমাকে ভালো না বাসুন লামিসার ভালোবাসার থেকে একটু ভালোবাসা তো দিতে পারেন।আমি না হয় ঐটা নিয়েই থাকব।আমি তো আপনার স্ত্রী আমাকে কি ভালোবাসা যায় না।কাছে রাখা যায় না।আবার কি নতুন করে সব শুরু করা যায় না?


এবার ও উনি কথাগুলো শুনে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল।কিন্তু আমি নাছোড়বান্দার মত ধরেই ছিলাম।উনি হুট করে আমাকে চিমটি দিয়ে বসল।চিমটি খেয়ে আমি আহ করে বলে উঠলাম


- কি ব্যাপার চিমটি দিলেন কেন?


উনি কাগজে রাগ রাগ মুখে বললেন


-তুমি হুট করে এভাবে ঝাপটে ধর কেন।


আমি লজ্জা মাখা মুখে উত্তর দিলাম


-আমার মন চাইছে।আমার কথার উত্তর গুলো কিন্তু পাই নি।


উনি গজগজ করে কাগজে লিখলেন


-সব তো শুরু করা যায় তবে আমার যে অনেক বদঅভ্যাস সেগুলো একদিনে ঠিক হবে না।আর লামিসার জায়গা দিতে পারব না।ওকে আমি যে কতটা ভালোবাসি বলে বুঝাতে পারব না।ওর জায়গা না দিয়ে যতটা পারা যায় শুরু করব।


যাক উনি যে নতুন করে সব শুরু করতে রাজি হয়েছে এটাই অনেক।আমি একটু হেসে বললাম


-আমার শুধু একটা রিকুইস্ট আপনি কোন রুব্বান বাসায় আনবেন না।মানে মেয়ের নেশাটা বাদ দিতে হবে।


উনি মাথা ঝাকিয়ে বললেন আচ্ছা।


আমার যে কি খুশি লাগছে বলে বুঝাতে পারব না।এত খুশি আগে কখনও লাগে নি।আমিও এখন বলতে পারব এটা আমার ঘর আমার সংসার।তুর্জকে আবার ঝাপটে ধরে বললাম


-আমি অনেক খুশি হয়েছি।আমার এতেই হবে।আমি আপনাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। 


উনি আবারও আমাকে চিমটি দিয়ে বসল।চিমটি খেয়ে আমি উনাকে ছাড়লাম।উনি আবারও লিখলেন


-তোমার সমস্যা কি?আর এভাবে ঝাপটে ধর কেন?ঝাপটে ধরতে না করেছি না।হুট করে ঝাপটে ধরে দম বন্ধ করে দাও।তোমার মত পাগল কম দেখেছি।


আমি একটু কপালটা কুচকে কানটা ধরে জিহ্বায় কামড় দিয়ে জবাব দিলাম


-জানি না কেন এমন করে ফেলি।অটো হয়ে যায়।


-পড়া লিখা কতদূর করেছ?


-এইচ.এস.সি দিব।সামনে পরীক্ষা।


-এই মেয়ে তোমার সামনে পরীক্ষা আর তুমি এখানে এভাবে সময় নষ্ট করছ?


- না মানে আমি তো বই নিয়ে আসে নি।


উনি আবার কাগজে লিখে বললেন


-মাকে গিয়ে এটা দিয়ে আসবে।


কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলাম উনি লিখেছেন


-মা ইশিতার সামনে পরীক্ষা আমি না হয় জানতাম না।তুমি তো জানতে।তাহলে বই কেন কিনে দাও নি।আজকেই বই কিনে দিও।


আমি দৌঁড়ে লিখাটা মায়ের কাছে নিয়ে গেলাম।মা লিখাটা পড়ে হাসতে হাসতে বললেন


-তুর্জ একটু পড়া পাগল ছেলে ছিল।তোমাকে দেখো পড়ার জন্য কত প্রেসার দেয়।আজকে তোমার জন্য বই যদি না কিনে আনি দেখবে আমার উপর রাগ করে বসবে।আমি তোমার জন্য বই কনে আজকেই আনব।এখন তুমি তুর্জের গোসলের ব্যাবস্থা কর।


-আচ্ছা মা আমি যাচ্ছি।


এ বলে আমি তুর্জের রুমে গিয়ে তুর্জকে ধরে বাথরুমে নিয়ে যেতে লাগলাম।বেচারা জানি কি বলতে চাচ্ছে।বেচারার হাতে খাতা কলম ও নাই আর কিছু বলতেও পারছে না।আমি তুর্জকে জোর করে ধরে গোসল খানায় এনে গোসল করাতে লাগলাম।বুঝতে পারছিলাম উনি বেশ রেগে যাচ্ছে।তবুও গোসল করাতে লাগলাম।গোসল শেষে উনাকে বললাম


-হয়েছে এবার রুমে যান এ তোয়ালেটা পড়ে।আর খাটের উপর কাপড় রাখা আছে পড়ে নিবেন


তুর্জ আমার হাত থেকে তোয়ালে টা জোরে টান দিয়ে রুমে প্রবেশ করল।আমিও গোসল টা সেড়ে ফেললাম।।


গোসল থেকে বের হয়ে বেশ সারপ্রাইজ পেলাম।কারন এত অল্প সময়ে যে শ্বাশুড়ি মা বই নিয়ে আসবে বুঝতেই পারি নি।চক চকা তক তকা বই গুলো যেন টেবিলের উপর জলকাচ্ছে।আর তুর্জ সেগুলো হাত দিয়ে দেখছে।কি যে আনন্দ লাগছে।আমি আনন্দের চুটে তুর্জকে গিয়ে আবার ঝাপটে ধরে ছেড়ে দিলাম।জিহ্বায় কামড় দিয়ে কান ধরে বললাম


-ভুল করে ধরে ফেলেছি।আবেগে।রাগ করবেন না।প্লিজ।


উনি মুচকি হাসি দিয়ে হাতে ইশারা দিয়ে বললেন ঠিক আছে।আর আমাকে হাতে ইশারা দিয়ে বুঝালেন।এখন যেন খেয়ে পড়তে বসি।আমি মাথা নেড়ে হ্যা বলে দৌঁড়ে খাবার নিয়ে আসলাম।উনাকে খাবার দিলাম।নিজেও খেতে বসলাম।উনি আমাকে ভালো ভালো মাছের পিছ দিয়ে ইশারা করে খাওয়ার জন্য।আমি কত করে বললাম।আপনি খান। নাহ উনি কথা শুনলই না।উনি বুঝাল আমাকে অনেক পড়তে হবে আর খেতে হবে।খাওয়ার পর্ব শেষ করে পড়তে বসলাম।


আহ....কতদিন পড় বই হাতে নিলাম।নতুন বইয়ের গন্ধ যেন আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে।বইগুলো দেখে খুশিতে নাচতে লাগলাম।ঠিক এ সময় খেয়াল করলাম।তুর্জ আমার ঘাড়ে তার ঠোঁট দিয়ে সুরসুরি দিচ্ছে।আজকে তুর্জের স্পর্শ আমার কাছে অন্যরকম লাগছে।মনে হচ্ছে এ স্পর্শ পেয়ে আমি আবেগে ডুবে যাচ্ছি।নিজেকে সামলানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলাম।মুহুর্তের মধ্যেই কি যে অণুভুতি জাগল বুঝতে পারি নি।তুর্জের ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে ভালোবাসার সাগরে ডুবে গেলাম।শীতল অণুভুতিতে মনটা শান্ত হয়ে গেল।প্রবল জড় যেন সবকিছু তছনছ করে দিয়ে আবার থেমে গেল।এক পশলা ভালোবাসার মেঘ আমার চোখ দিয়ে নামল।ইশ এ ভালোবাসার ছোঁয়ায় তো আমি এতদিন খুঁজছিলাম।আজকে পেয়ে যেন আমার অশান্ত মন শান্ত হল।আমি স্বস্তি পেলাম।তুর্জকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলাম।আদো আদো হাতে তুর্জ আমার কপালে পড়ে থাকা চুল সরিয়ে একটা চুমু একে দিল।মনের গহীনে থাকা সব কষ্ট যেন নিমিষেই মিলিয়ে গেল।আমি এক আদুরে লজ্জাবতী লতা হয়ে গেলাম।খানিকক্ষণ পর তুর্জের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম কিন্তু তুর্জ ছাড়ল না।


মনে মনে ভাবতে লাগলাম এত ভালোবাসা আমার কাপলে সইবে তো।ভাবতে ভাবতে নিশ্চুপ হয়ে গেলাম।তুর্জের চিমটি খেয়ে ভাবনার ঘোর কাটল।আমি তুর্জকে ছেড়ে উঠলাম।আর বললাম


-হুট করে চিমটি দিলেন কেন।


তুর্জ ইশারা দিয়ে বলল আমি এত চুপ হয়ে আছি কেন।আমি বললাম।


-এমনি। 


পরের দিন সকালে খেয়াল করলাম তুর্জ কোথায় জানি যাচ্ছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম


-আপনি এ অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন।


তুর্জ কাগজের গুটা গুটা অক্ষরে লিখলেন


-আমি এখন ঠিক আছি।আর একটু বাইরে যাচ্ছি।আর এখন আবার ঝাপটে ধর না। আমি বাইরে থেকে এখনেই চলে আসব।আর মায়ের ফোনটা হাতে রেখ।মাঝে মাঝে মেসেজ দিব ওকে।আর তুমি এখন পড়তে বস।


এ বলে উনি চলে গেলেন।


আমি পড়তে বসলাম।খানিকক্ষণ পর উনি মেসেজ দিলেন


-তোমার বডি সাইজ কত?


মেসেজটা দেখে কেমন জানি লাগছিল।হুট করে উনি বডি সাইজ জিজ্ঞেস করল কেন?আমি একটু লজ্জাও পাচ্ছিলাম।মেসেজের রিপ্লাই এ সাইজটা বললাম।কিন্তু কিছুটা রাগ ও হল।কতটা শয়তান।কিসব জিজ্ঞেস করে।


বেশ কিছুক্ষণ পর কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে দৌঁড়ে গেলাম।বুঝতে পারলাম উনি এসেছে।দরজা খুলে দেখলাম উনি দাঁড়ানো হাতে কিছু জিনিস পত্র নিয়ে।আমি সব কিছু নিজ হাতে নিয়ে উনাকে সাথে করে রুমে ঢুকলাম।আর বললাম


-লজ্জা কি নাই আপনার কি সব মেসেজ দেন?


উনি হাসতে হাসতে ইশারা দিল।ব্যাগ গুলো খুল।আমি ব্যাগ গুলো খুলে অবাক হয়ে গেলাম।কারন উনি আমার জন্য অনেক গুলো জামা,ড্রেস আর শাড়ি এনেছে।


বেশ ভালোই কাটছিল আবার দিনগুলো।তুর্জকে নিয়ে কিছুদিন পর হাসপাতালে যাই।হুট করে তুর্জ....


গল্প-আমার_ঘর_আমার_সংসার (০৪/শেষ পর্ব) 

শারমিন আঁচল


(৬)

হুট করে খেয়াল করলাম তুর্জ কথা বলতে শুরু করেছে।তুর্জকে কথা বলতে দেখে আমার আনন্দের মাত্রাটা যেন বেড়ে গেল।মনে হচ্ছে খুশিতে আমার কথায় আটকে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে।তারপর ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে বললাম


-তুর্জ আপনি কথা বলছেন।আমার কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না।আমার খুশিতে কথা আটকে যাচ্ছে।


তুর্জ আমার হাত থেকে তার হাত টা ছাড়িয়ে জবাব দিল


-হ্যা কথা বলতে পারছি।আচ্ছা ইশিতা তুমি এখন চলে যাও।বাকিটা আমি সামলে নিতে পারব।তুমি বাসায় যাও আর পড়তে বস।বাসায় গিয়ে পড়া শেষ কর।আমি এসে সব দেখব।ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে আর আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে খাণিকক্ষন পর আসছি।


কিন্তু তুর্জকে ছেড়ে যেতে কেন জানি না আমার একটু ও ভালো লাগছে না।তাই তুর্জকে বললাম


-আমি থাকি না আপনার সাথে।পড়া আমি সারা রাত পড়ে কমপ্লিট করে দিব।প্লিজ থাকি।


তুর্জ গম্ভীর গলায় জবাব দিল


-তোমাকে যেতে বলেছি তুমি যাও তো।আর বিরক্ত কর না।যা বলছি তাই কর।


আমি চুপচাপ হয়ে মন খারাপ করে বললাম


-আচ্ছা যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু।


উনি শান্ত স্বরে বলল


-যাও আসব তো বলছি।এবার যাও।


আমি ঐ জায়গা থেকে চলে আসলাম।মাকে সবটা বললাম।মা ও বেশ খুশি হল।মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন


-সব তোমার জন্য হয়েছে মা।


আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম নিজের প্রসংশা শুনে।কিছুটা লজ্জা পেয়ে উনাকে বললাম


-মা আমি এখন যাই।পড়তে বসতে হবে।এসে যদি দেখে পড়া কমপ্লিট হয় নি তাহলে আমাকে মারবে।আমি যাই।


মা হাসতে হাসতে বলল


-যাও।


আমি চলে আসলাম আমার রুমে।আমার রুমে এসে পড়তে লাগলাম।কিন্তু মনটা পড়ে রইল তুর্জের কাছে।বারবার ওর কথা মনে পড়ছে।কখন যে আসবে এটা ভেবে মন আনচান করছে।ইশ কাউকে ভালোবাসলে বুঝি এমনেই হয়।বেশ অস্থির লাগছে।অস্থিরতা যেন কাটছে না।পড়তে ও পারছি না ঠিক করে।সময় যেন কাটছে না।অনেকক্ষণ পর তুর্জ আসল।তুর্জকে দেখে মনে অস্থিরতা যেন কাটল।মনের সব কষ্ট যেন দূর হল।আমার ভিতরের বয়ে যাওয়া জড় যেন থেমে শীতল হয়ে গেল।আমি তুর্জকে বলললাম


-আপনি এসেছেন।আমার আপনার জন্য মন কেমন করছে।


-হ্যা বুঝছি।যাও পড় গিয়া।


কিন্তু তুর্জ আসার পর থেকে কেমন জানি অস্থির ছিল।আমি বুঝতে পারলাম না তুর্জের কি হল।অনেক জিজ্ঞেস করলাম।তুর্জ কোন জবাব দিল না।তুর্জের জবাব না পেয়ে বেশ ব্যাহত হলাম।কিন্তু তুর্জ তবুও কোন জবাব দিল না।বেশ কষ্ট লাগল।সারাদিন এসবের মধ্যেই গেল।


পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তুর্জ পাশে নেই।তুর্জকে খুঁজে পলাম না কোথাও।কোথায় গেল এত সকালে।ফোন করেও পেলাম না।অনেকক্ষণ পর তুর্জ আসল।সাথে একটা মেয়েকে নিয়ে।আর আমার চিনতে বাকি রইল না এ মেয়েটাই লামিসা।আমি তুর্জকে বললাম


-লামিসাকে কোথায় পেলেন আপনি।


জবাবে তুর্জ বলল


-ঐদিন ওকে দেখেই আমার মুখে কথা ফুটেছিল। অনেক কষ্টে ওকে খুঁজে বের করে জোর করে ধরে আনি।


পাশে থাকা লামিসা আমাকে দেখে বলল


- এ কে?


তুর্জ উত্তরে বলল


-তোমার পরে ওকে বিয়ে করেছিলাম।


লামিসা তুর্জের গালে একটা কষিয়ে চড় দিয়ে বলল


-লজ্জা করে না ঘরে বউ থাকা সত্ত্বেও আরেক বাড়ির বউকে তুলে আন।


তুর্জ বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল


-আরেক বাড়ির বউ মানে?


-হ্যা আরেক বাড়ির বউ।আমি তো তোমাকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করেছি।আমার বাচ্চাও আছে।আমি আমার জায়গায় ভালো আছি।তুমিও তোমার বউকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা কর।আর আমি কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছি।তার মধ্যে তুমি এ কাহিনী করলে।


-আমি তোমাকে কতটা ভালোবেসেছিলাম সেটা তো তুমি জানতে তারপর ও এমন কাজ করতে তোমার বিবেকে আটকাল না।


-দেখ তুর্জ সব কিছু বিবেক বা আবেগ দিয়ে হয় না।আর আমি ভালো আছি।আমাকে ভালো থাকতে দাও।


মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল


-নিজের স্বামীকে সামলাও।আর আমার পিছু আসতে নিষেধ কর।আর তোমার নাম্বারটা দাও।তোমার স্বামী কোন ঝামেলা করলে যেন তোমাকে পাই।ইনফর্ম করতে পারি।


আমি নাম্বারটা দিলাম।উনি নম্বার টা নিয়ে চলে গেল।আর তুর্জ বেশ চুপ হয়ে গেল।বুঝতে পারছি ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে।ঘরে গিয়ে চুপ করে বসে রইল।খানিকক্ষণ পর তুর্জ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল


-চলো আমরা সব শুরু করি আগের মত।


আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম


-আমি তো শুরু করতে চাই।আপনি চাইলেই সব সম্ভব।


-আমি চাই আর তোমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করব।


খানিকক্ষণ পর একটা অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসল।মেয়েজটা পড়ে আমার মথাটা বেশ ঝিম ধরতে লাগল।কারন মেসেজটা দিয়েছে লামিসা আর মেসেজটাই লিখা ছিল।


আমি জানি তোমার নাম ইশিতা।আমি জানি তুমি আমার তুর্জকে ভালো রাখবে।তুর্জকে আমি অনেক ভালোবাসি।কিন্তু আমার বিয়ের ১ বছর পরেই জানতে পারি আমার ক্যান্সার হয়েছে আর বেশিদিন বাঁচব না।আমি এখন ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে আছি।বিদশেই চিকিৎসা করতেছি।হয়ত আর কিছুদিন বাঁচব।চেয়েছিলাম তুর্জ আমাকে ছাড়া ভালো থাকুক।আর আমি এখন নিশ্চিত সে সেটা পারবে।ওকে এসব বল না।তোমরা ভালো থাকো।কালকেই দেশের বাহিরে চলে যাব কোথায় যাব সেটা অজানায় রেখে গেলাম।কারন বললে হয়ত আবার ঝামেলা হবে তোমাদের মধ্যে।


লামিসা।


আমার চোখ দিয়ে অজোরে শ্রাবণের ধারা নামতে লাগল।একটা মেয়ে কতটা ভলোবাসলে এমন করতে পারে।তুর্জকে না বলে থাকতে পারলাম না।তুর্জকে বলার পর তুর্জ বেশ কষ্ট পেল।লামিসাকে অনেক খুঁজল কিন্তু লামিসাকে আর খুঁজে পেল না।কোথায় যে গেল ও।তবে লামিসা চেয়েছিল আমি আর তুর্জ যেন ভলো থাকি।তুর্জ লামিসার জন্য আমাকে মেনে নিল।লামিসার শূন্যতা তুর্জকে মাঝে মাঝে গ্রাস করলেও আমি সেটা ভালোবাসার পাহাড় দিয়ে থামিয়ে দেই।


মাস খানেক পর আমার পেটে তুর্জের বাচ্চা আসে।তুর্জ বেশ খুশি হয়।আমার যখন ৯ মাস চলে তখন আমার ঠিকানায় একটা চিঠি আর গিফট আসে।খুলে দেখে অবাক হয়ে যাই।এগুলা সব লামিসা পাঠিয়েছে।


চিঠিটা পড়ে নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।চিঠিতে লিখা ছিল


প্রিয় ইশিতা


তুমি যখন চিঠিটা হাতে পাবে তখন হয়ত আমি দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে যাব।তোমার বাচ্চা হবে শুনেছি।তোমার বাচ্চার জন্য আমার পক্ষ থেকে কিছু জিনিস দিয়ে গেলাম।তুর্জের কিছু পছন্দের জিনিস আমার কাছে ছিল সেগুলো আগলে রাখার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম।আর আমার তুর্জকে আগলে রেখো।সংসারটা মন দিয়ে কর।কারন এটা যে তোমার ঘর তোমার সংসার।আর শুনেছি মেয়ে হবে।মেয়ের নাম রেখ পরী।।আশা করি আমার কথাটা রাখবে।


ইতি লামিসা


আমি চিঠিটা পড়ে তুর্জকে চিঠিটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।তুর্জ ও চিঠিটা পড়ে কাঁদতে লাগল।একটা মেয়ে কতটা ভালোবাসতে পারে লামিসাকে না দেখলে বুঝতাম না।


কিছুদিন পর আমার পরী জন্ম নিল।লামিসার কথা মতেই ওর নাম পরী রাখি।ভলোই কাটতে লাগল আমাদের সংসার।মাঝে মাঝে লামিসাকে বেশ মনে হয়।কতটা ভালো মানুষ বাসতে পারে একজন কে।আমিও লামিসার দেওয়া সংসার টাকে বলতে পারি এটা "আমার ঘর আমার সংসার"


সমাপ্ত ---------- 


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।