তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রনা
গল্পঃ_না_বলা_ভালোবাসা
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
অনুঃ হ্যালো অভি?
অভিঃ শুনতেছি বল?
অনুঃ কোথায় তুই......?
অভিঃ বাসর ঘরে বউয়ের সাথে গল্প করি?
অনুঃ কিহহ? ভার্সিটিতে আসিস না কেনো?
অভিঃ আমি ভার্সিটিতে যাই না সকালে। বিকেল গেলো এখন রাত ১১ঃ ৪৫ এখন তুই আমার খোজ নিলি??
অনুঃ ফোনে ব্যালেন্স ছিলো না। সে জন্য ফোন করতে পারিনি। আর তুই ও তো একবারো ফোন দিলি না৷ নিজে দেয়না আবার অন্যকে বলে??
অভিঃ কোটিপতি বাবার মেয়ে যদি বলে, তার ফোনে ব্যালেন্স নাই। তাহলে আমার মতো মধ্যে পরিবারের ছেলের মোবাইলে ব্যালেন্স থাকবে কি করে?
অনুঃ এই তুই একটু বেশি কথা বলিস। রাতে খাবার খেয়েছিস?
অভিঃ হুম খেয়েছি। আচ্ছা ফোন রাখ,আমার একটু কাজ আছে?
কথাটা বলে কল কেটে দিলো অভি। আসলে তার এখন কোনো কাজ নেই। সে এখন ঘুমাবে আসলে অভি হচ্ছে ঘুম পাগল মানুষ। অভি গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ঢাকা এসেছে পড়াশোনা করার জন্য। হিসাব বিজ্ঞানে অর্নাস করছে/ অনু বড়লোক বাবার এক মাত্র মেয়ে। ভার্সিটিতে পরিচয় হয় দুজনের, তারপর বন্ধত্ব।
অনু অভিকে ভীষণ ভালোবাসে, কিন্তু বলে না। কারন অনু চায় অভি বলবে।
অনুঃ আজকে ক্লাস করবি অভি?
অভিঃ কেনো আজ কি তোর দাদার মৃত্যু বার্সিকি
নাকি, যে ক্লাস করবো না??
অনুঃ চুপ কর তুই বেশি কথা বলা বন্ধ কর। না হয় ভবিষ্যত অন্ধকার?আজকে আমার ভালো লাগছে
না।। তাই ভাবলাম আজকে ক্লাস না করে দুজনে ঘুড়বো৷ চল না দুজনে ঘুরি আজকে সারাদিন??
অভিঃ তাহলে এই জন্য এতো তাড়াতাড়ি
তলব করলি?
অনুঃ হুম চল এবার.....?
অভিঃ তাহলে এখন একটা গান শুনা আমায়?
অনুঃ এখন গান গাইতে পারবো না?
অভিঃ থাক লাগবে না তোর গান শুনানো?
অনুঃ শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করতেছিস?
অভিঃ বিয়ে আর আমি 😂😂আমাকে কোন মেয়ে বিয়ে করবে শুনি?
অনুঃ কেনো তুই কি বিয়ে করবি না?
অভিঃ এই তো আর ৪ বছর তারপর শেষ পড়াশোনা। জানি আমি চাকরি পাবো না। আর সঠিক সময়ে চাকরি না পেলে বউ ও পাবো না। তাছাড়া আমি তো আর মোটা অংকের ঘুষ দিতে পারবো না৷ বর্তমানে
ঘুষ ছাড়া চাকরি ও হয় না?
অনুঃ আগে তো পড়াশোনা শেষ কর, তারপর এই চিন্তা.....! চল আমরা ওই যায়গাতে গিয়ে বসি?
অভি সব সময় অনুর সাথে দুষ্টুমি করে থাকে৷ আর এখনো করছে। অভি অনুকে বললো......
অভিঃ অনু একটা কথা বলি?
অনুঃ হুম বল?
অভিঃ চল আমরা পালিয়ে বিয়ে করি?
অনুঃ দেশে কি ছেলের অভাব পড়েছে নাকি? যে তোকে বিয়ে করতে যাবো?
অভিঃ এহ আমার মতো ছেলে পাওয়া তোর ভাগ্যের ব্যাপার। তুই জানিস আমাদের বাসার পাশের কত মেয়ের বাবা মা তাদের মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য বসে আছে? কিন্তু আমি তাদের কে
বিয়ে করবো না??
অনুঃ করে ফেল তাড়াতাড়ি, না হয় পরে মেয়ে নাও পেতে পারিস?
অভিঃ না আমি তোকে বিয়ে করবো।। আমি একশত সন্তানের বাবা হবো, আর তুই হবি মা। আমরা
দুজনে বিশ্ব রেকর্ড করবো, চারদিকে আমাদের নাম ছড়িয়ে যাবে?
অনুঃ তোর মতো বানরকে আমি বিয়ে করবো
মাথা নষ্ট?
অভিঃ আমাকে বাংলা ছবির পরিচালক সাহিন সুমন একবার বলেছিলো..তোমার চেহারা তো অনেক
সুন্দর। তুমি চাইলে নায়ক হতে পারবা। আমি বলেছি না, আমি নায়ক হবো না! তাহলে বাংলা ছবির হিরো গুলো ফকির হয়ে যাবে??
অনুঃ হাহাহাহা😁😁। আয়নায় কখনো নিজেকে দেখছিস। তোকে তো ভিলেন হিসেবেও নিবে না?
অভিঃ ধ্যাত তোর সাথে কথাই বলবো না?
অনুঃ হাহাহাহা, অভি প্রচুর ক্ষুদা লাগছেরে কিছু নিয়ে আয়........?
অভিঃ টাকা নাই, আর তোকে খাওয়ানোর কোনো ইচ্ছাও নেই আমার?
অনুঃ কোন দিন তোর টাকা ছিলো। আর কোন দিন তুই আমাকে খাওয়ালি.....?
হুমম আজ পর্যন্ত অভি অনুকে ১০ টাকার বাদাম ছাড়া আর কোনো কিছুই খাওয়ানি। যাই হোক না কেনো প্রতিদিন অনুই বিল দেয় তারপরেও তার মাঝে
কোনো বিরক্তির ছাপ নেই, কোনো হিংসার ছাপ নেই,, হয়তো এটাই ভালোবাসার রুপ। এরপর অনু বললো..
অনুঃ এই নে টাকা, ভালো দেখে বার্গার চমুছা স্প্রীড নিয়ে আয়?
তারপর অভি গিয়ে নিয়ে আসলো। অনু খাচ্ছে কিন্তু অভি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। অনু সেটা কিছুক্ষণ
পর খেয়াল করলো। আর বললো......
অনুঃ কি ব্যাপার নায়ক সাহেব, আপনি খাচ্ছেন না কেনো?
অভিঃ খাবো না আমি?
অনুঃ কেনো রাগ করেছেন। নাকি খাইয়ি দিতে হবে?
এই বলে তার অর্ধেক খাওয়া চমুছা টা আমার মুখের ভিতর দিয়ে দিলো। তারপর অভি অনুকে বললো......
অভিঃ আচ্ছা অনু তুই কি আমাকে সত্যি ভালোবাসিস?
অনুঃ কেনো.? হটাৎ এই প্রশ্ন কেনো?
অনুঃ না! আমি তোকে ভালোবাসি না?
অভিঃ আমার ও তাই মনে হয়েছিলো। আচ্ছা আমি যদি ধুরে চলে যাই, তুই কি কষ্ট পাবি। যেখান থেকে আসার আর কোনো সুযোগ থাকবে না?
অনুঃ তুই চলে গেলে আমি কষ্ট পাবো কেনো?
অভিঃ হ্যা সেটাই তো!! জানিস আমি একদিন চলে যাবো অনেক ধুরে। আর আসবো না, তুই বহু চেষ্টা করেও আনতে পারবি না আমাকে। এবং সেই
দিনটা বেশি দুরে না?
অনুঃ তোকে কোথাও যেতে হবে না। সারা জীবন আমার কাছে রেখে দিবো৷ এখন চল বাসায়
যাবো ১ টা বাজে?
তারপর দুই জনে বাসায় চলে গেলো।। বিকেলে অনুর কেনো জানি অভি কে কল দিতে ইচ্ছে করে, একটু
কথা বলবে তার সাথে।
অভিকে কেনো জানি বলতে ইচ্ছে করে...তোকে অনেক ভালোবাসি অভি। অনু ফোন দিলো কিন্তু অভি ফোন তুলছে না। প্রায় ২০ মিনিট পরে ফোন রিসিভ করলো। রিসিভ করলো অভির বন্দু রিদয়। রিসিভ করতেই অনু বললো......
অনুঃ ওই কুত্তা, হারামি, শয়তান, বান্দর ফোন রিসিভ করিস না কেনো?
হৃদয়ঃ সরি আমি অভি না, আমি তার বন্ধু। দুপুরে হটাৎ অভির কি যেনো হয়েছে। দুপুরে কোথায় থেকে এসেই হটাৎ বিছানায় পড়ে যায়। আর প্রচুর রক্ত ভুমি হয়। আমরা এখন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি?
অনুঃ কি, আপনি কি বলছেন এসব 😰😰
হৃদয়ঃ হ্যা ঠিক বলছি। আপনিও হাসপাতালে
চলে আসেন?
অনু কাঁদতে কাঁদতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো..। বের হয়ে সি এন জি নিয়ে চলে গেলো হাসপাতালে। বার বার চোখের পানি মুচছে,আর বলছে অভির কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না😥😥। কি নিয়ে বাঁচবো কাকে নিয়ে বাঁচবো😥😥
ততক্ষণে অভি চলে গেছে না ফেরার দেশে 😢। অভির এই রোগ টা সেই ছোট বেলা থেকে। কোনো সমাধান দিতে পারেনি ডাক্তার৷
আজও পারলো না অভিকে বাঁচিয়ে রাখতে। তার বন্ধুরা তার বেডের চার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই..। সবার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। অনু দৌড়ে এলো রুমে। এসে বললো.......
অনুঃ অভি কোথায়? কি ব্যাপার চুপ করে আছেন কেনো আপনারা৷ অভি কোথায়?
তারপর একজন হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো। অনু দেখলো সাদা কাপড় দিয়ে ডাকা একটা লাশ😥😥। অনু বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে😥😥। সাদা কাপড় টা উঠিয়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো 😭😭। আর বললো........
কি হয়েছে তোর।। এই অভি দেখ আমি এসেছি৷। তোর কিছু হবে না। তুই ওঠ অভি আমার সাথে কথা বলবি না৷ আমাকে আর রাগাবি না, আমি যে তোকে খুব মিচ করছি। এই আমি দুপুরে যাওয়ার সময় তোর জন্য একটা শার্ট কিনছি দেখ না প্লিজ ।
আমার উপর রাগ করে থাকিস না প্লিজ। আমি যে আর পারছি না। তুমি ভীহনে আমি শুন্য। তোকে ছাড়া আমি আমাকে ভাবতে পারিনা।তুমি ছাড়া আমার ভালোবাসা পুর্ণতা পাবেনা।
তুই জানতে চেয়েছিলি না আমি তোকে ভালোবাসি কি না৷ আমি তোকে অনেক ভালোবাসি অভি।। আর রাগ করিস না অভি, আমি যে আর পারছি না।
তুই এতো নিষ্ঠুর আমার সাথে কথাও বলছিস না। এতো অভিমান তোর,, কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে বললো অনু 😥😥
তোকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখিরে। আর তুই আমার উপর রাগ করে আছিস৷ অভি রাগ করিস না..উঠে আয়। আমরা গল্প করবো 😪😪।
অভি তুই একশত সন্তানের বাবা হবি না৷ আমি রাজিরে তোর বউ হতে৷ আমি তোকে আর রাগাবো না। অভিকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে যাচ্ছে😥😥। অভির বন্ধুদের চোখে বৃষ্টির মতো পানি নামছে৷
অনুর এই অবস্থা দেখে নার্স এসে অনুকে টেনে আনার চেষ্টা করলো৷ কিন্তু অভিকে ছাড়ছে না অনু৷ শুধু চিৎকার করে করে বলছে........
কিরে তুই এতো স্বার্থপর হয়ে গেলি। আমার কথা শুনছিস না।
অনুর চিৎকারে মানুষের ভীড় জমে গেলো৷ অনুর চোখে কান্না শেষ হয়ে হাসি চলে আসলো.....। আনু শুধু এখন হাসছে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসছে৷
তিন দিন পর থেকে অনুকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয় রুমের ভিতরে৷ অনু শুধু হাসে আর বলে......
আমি তোর বউ হবো রে। আমি তোর একশত সন্তানের মা হবো 😥😥।
এভাবেই হেঁড়ে যায়...না বলা ভালোবাসা গুলো। বয়ে বেড়াতে হয় সারাজীবন না পাওয়া ভালোবাসার কষ্ট।
*********সমাপ্ত **********