রহস্যময় ভূতের গল্প
সিলিং ফ্যানের সাথে নিজের লাশটা ঝুলতে দেখে আর সামলাতে পারলাম না নিজেকে।
চিৎকার দিয়ে আম্মাকে ডাকতে লাগলাম.......
-আম্মা কোথায় আপনি... আম্মা... !!
আরে কী হলো, এতো রাতে এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি কেন করছিস??
-আম্মা।আম্মাজান....দেখুন আমার মাথার ওপরে কী?
-আরে পাগল হয়ে গেছিস। কী আছে তোর মাথার ওপরে??
-একটা লাশ!!! লাআআআআশ..... আম্মাজান.....!!
-কোথায় লাশ??
-ওপরে চেয়ে দেখ কিছু নেই.....
খুব ভয় করছিল ওপরের দিকে তাকাতে। তাও ভয়ে ভয়ে তাকাতে লাগলাম উপরের দিকে.....
কিছুটা ভরসা পাচ্ছিও বটে.......
কোনক্রমে ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখি কিছু নেই। একটু আগেই আমি নিজের লাশ সিলিং ফ্যানটার সাথে ঝুলতে দেখেছি.......
তবে কি পুরোটাই আমার মনের ভূল। আল্লাই জানেন কী হচ্ছে আমার সাথে......
-দেখ মা... তুই ছোটবেলা থেকেই সবকিছুতে একটু বেশিই ভয় পাস......
এখন শুয়ে পর..... আমি যাচ্ছি.....
-আমিও আপনার সাথে যাবো। খুব ভয় করছে আমার...!
-সেটা হয় না মা..... তুই এখন আমার সাথে থাকতে পারবি না....
-কেন পারবো না...... আমি যাবো আপনার সাথে। ওকে?!
আম্মাজান আমার দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিলেন।
আমার ভীষণ অবাক লাগছে ওনার এই অদ্ভুত আচরনে.....
মা মেয়ের সাথে থাকতে এতো প্রবলেম কিসের......
একটু পর আমার পুরো শরীর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে......
-হায় আল্লাহ!!!
এটা কার সাথে কথা বলছি আমি??!!
আম্মাজান তো বিগত একবছর আগে মারা গেছেন!!!!!
-ভয়ে দুপা পিছিয়ে আসলাম আমি।
যিনি এক বছর আগে মারা গেছেন তাকে নিজের চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেকে সামলে রাখা দায়।
আমাকে অবাক করে দিয়ে আম্মাজান রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি তার পিছু নিলাম।
-আম্মা,আম্মাজান কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
কিচ্ছু না বলে এভাবে চলে যেতে পারেন না আপনি??
আম্মাজান যেন আমার কথা শুনতে পেয়েও শুনতে পারছেন না......
আমার ডাক অগ্রাহ্য করে বাড়ির গেট পাড় হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন উনি......
আমিও না থেমে তার পিছু করলাম।
আমি এতো দ্রুত হাটছি তাও কিছুতেই ধরতে পারছিনা তাকে.......
একটা ব্যবধান থেকেই যাচ্ছে........
-আম্মাজান...... দয়া করে একটু দাড়িয়ে যান।
-আম্মাজান এবার সত্যি সত্যি দাড়িয়ে গেলেন ।আমিও আর সামনে পা বাড়ালাম না.......
ধীরে ধীরে উনি আমার দিকে ফিরে তাকাতে লাগলেন।
ওনার চোখ দুটো দেখে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। এই চোখে এক মায়ের তার সন্তানের জন্য স্নেহ, মমতা ,ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি না আমি।।।
আম্মাজানের চোখ আর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আমার প্রতি ওনার কতটা রাগ,অভিমান আর ঘৃনা জমে আছে।।।
-আম্মাজান আপনি এভাবে চেয়ে আছেন কেন আমার দিকে????
আমি কি এমন করেছি.....??
আম্মাজান আর কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন এক দৃষ্টিতে।!!
এরপর উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।।।
আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে পেছনে সরে যাচ্ছি ধীরে ধীরে.....
একটা একটা প্রচন্ড চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।
আব্বাজান রুমে ছুটে আসে আমার চিৎকার শুনে ......
-নিধি...... মা নিধি। কী হয়েছে তোর এতো রাতে??
উনি আমার পাশে এসে বসলেন।
-না.... কিছু হয়নি আব্বাজান....
-কিছু হয়নি বলে হয় কিকরে?
আমি স্পষ্ট তোমার চিৎকার শুনলাম...
না এই মুহুর্তে আব্বাজান কে কিছু বলা যাবে না।
বুঝতে পারলাম পুরোটাই আমার স্বপ্ন ছিল।কিন্তু আম্মাজান আমার স্বপ্নে এসেছিলেন এটা মিথ্যা নয়। আর উনি মারা গেছেন এটাও সত্যি!!!
ওনার আমার দিকে সেই বিশ্রী রকমের তাকানোর কথা মনে পড়তেই একটা অজানা আশংকায় বুকটা কেপে উঠলো.......
-হায় আল্লাহ!! তবে কি আম্মা জেনে গেলেন যে আমিই খুন করেছি তাকে। কিন্তু সেটা কিকরে সম্ভব????
আমি তো পেছন থেকে ছুড়ি মেরে খুন করেছিলাম......
আর উনি আমার মুখটা দেখতেও পাননি.....
তবে ওনার পক্ষে এটা জানা কিকরে সম্ভব?????
-আপনি নিজের ঘরে চলে যান আব্বাজান।
-কিন্তু মা....... তোমাকে এই অবস্থায় রেখে কিভাবে চলে চাই.....
- আমার কিচ্ছু হয়নি.... বল্লাম তো। শুধু শুধু টেনশন করছেন আমার জন্য।
আব্বাজান আমার কথা শুনে বিছানা ছেড়ে চলে গেলেন নিজের রুমের দিকে.............
উনি চোখের আড়াল হতেই আমি ধড়ফর করে বিছানা থেকে নেমে গেলাম...!
টেবিলের ওপরে রাখা জগটা থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিলাম।
পানিটা ঢকঢক করে গলধকরন করতে থাকি। মনে হচ্ছে পানিটাও গলা দিয়ে নিচে নামতে চাইছে না.....কিরকম একটা আটকে যাচ্ছে.....!!!
আবারো গিয়ে বিছানার ওপরে শুয়ে পড়লাম.......
কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছে না।অনেক টা সময় চোখ বন্ধ করে থেকেও কোন লাভ হলো না।
যাই হোক রাতটা এপাশ ওপাশ করে পাড় করে দিলাম.......।।
সকালে আব্বাজানের ডাকে ঘুম ভাঙে।
রাতে তেমন ঘুমাতে না পারার কারণে চোখজোড়া ফুলে লাল হয়ে আছে..... স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।।
আমার বড় ভাইজান আহিন আজ বিকেলে বাসায় ফেরার কথা......।
আব্বাজানের পুরোনো জায়নামাজ টা নষ্ট হয়ে
গেছে।তাই উনি একটা নতুন জায়নামাজ কেনার জন্য শহরের বাজারে গেছেন। বাড়িতে লোকজন বলতে আমি একা......।
নামাজ থেকে উঠে বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম। বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে...... সাথে হালকা বাতাসও বইছে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের প্রকৃতির রুপ অবলোকন করতে থাকি। একটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে নিজের ভেতর।।।
ঠিক আজ থেকে এক বছর আগে এই দিনে আমি আম্মাজানকে খুন করার মত মহৎ কাজটা করেছিলাম। যেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুণ্য।।।
অদ্ভুত ব্যাপার ঐ দিনের আবহাওয়াটাও অনেকটাই আজকের মত ছিলো।আজকের বৃষ্টিটা একটু হালকা, ঝিরঝির টাইপের। আর ঐ দিন চারিদিকে মুষল বৃষ্টি ছিলো।পরিবেশটা এতোটা স্বচ্ছ ছিল না। চারদিক ছিল কেবল ঝাপসা আর ঝাপসা......!!!!
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ঘোর কাটে আমার। ছুটে গিয়ে দরজাটা খুলি।
প্রথমে ভেবেছিলাম আব্বাজান এসেছেন হয়ত।
কিন্তু না........
দরজা খুলতেই দেখি আহিন হাস্বোজ্জ্বল মুখে বাইরে দাড়িয়ে আছে।
-কিরে ভাইয়া কেমন আছিস?
-আমি দিব্যি আছি। তোদের কী খবর?
-এইতো। আব্বাজান কোথায় রে?
ভাইয়া ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করে আর চারদিকে তাকাতে থাকে।
-উনি শহরের বাজারে গেছেন।
-ওহ। ফিরবে কখন?
-হয়ত এক্ষুনি...... তুই বস। আমি পানি নিয়ে আসছি।
আমি কিচেনের দিকে ভাইজানের জন্য পানি আনতে গেলাম।
পানি নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকতেই ভাইয়া একটা পার্সেল বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে।
-এটা কি রে?
-আরে খুলেই দেখ না......
আমি বক্স টা নিজের কাছে রেখে দিলাম। নিজের রুমে গিয়ে বরং খুলে দেখা যাবে।
ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
আমিও নিজের ঘরে গিয়ে বক্সটা খুলতে থাকি.......
নিশ্চয়ই কোন গিফট হবে.... তাছাড়া আর কি?????
বক্সটা খুলে প্রথমে একটু অবাকই হই!
এতো ভেতরে একটা ছুড়ি। ভাইয়া আনার আর কিছু পেলো না।
ছুড়িটা বের করে ভালোভাবে দেখতে থাকি।
---হায় খোদা!!! এটা কি দেখছি আমি চোখের সামনে.....???
এতো সেই ছুড়িটা যেটা দিয়ে আমি আম্মাজানের খুন করেছিলাম!!!!!!
ভয়ে গলা শুকিয়ে যেতে থাকে আমার......
ভাইয়া এটা পেলো কোথা থেকে??
না আর দেরি নয়। এক্ষুনি ওর রুমে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার হতে হবে.....
আমি ওর রুমের দিকে পা বাড়াতেই আবারো কলিং বেল বেজে ওঠে।
আব্বাজান আর আসার সময় পেলেন না......
তাড়া তাড়ি দরজার দিকে ছুটে যাই.....
দরজাটা খুলতেই দেখি আব্বা দাড়িয়ে আছেন।
আব্বাজান সরে যেতেই দেখি পেছনে আহিন ভাইজান দাড়িয়ে......!!
-কিরে... দরজা খুলতে এতো সময় লাগে।
দিনের বেলা যেন দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্বপ্ন দেখছি আমি.....!!
এটা হয় কিকরে?
এটা যদি ভাইয়া হয়ে থাকে তো ঘরে কে আছে.......!!!
লেখক: প্রদীপ চন্দ্র
আম্মাজনের আত্মা...👹
পর্ব: ০২
এটা যদি ভাইয়া হয়ে থাকে তো ঘরে কে আছে.......!!!
-কিরে কি হলো?এইভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে কি ভাবছিস?
-না..... কিছু না। আয় ভেতরে আয়।
ভয়ে আমার বুক ধুকধুক করছে। ভাইয়া বাসার ভেতরে ঢুকে নিজের রুমের দিকেই যাচ্ছে।
আমিও ওর পিছু পিছু গেলাম......
জানিনা আজ কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য!!!
রুমে ঢুকেই অবাক আমি।।।
নাতো,ভেতরে কাউকেই তো দেখছি না।
আমাকে ইতস্তত করতে দেখে ভাইয়া বলে ওঠে.......
-তোর হলোটা কি বলবি আমায়? এভাবে চারদিকে তাকিয়ে কী ভাবছিস!!
-কিছু না। তুই ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে যা। আমি খাবার রেডি করে আনছি.....
ভাইয়া একফালি হেসে হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ে।
আমি ঘুরে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই হঠাৎ একটা অদ্ভুত অনুভূতি বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে।।
পেছনে ফিরে আবারো চারপাশটা দেখতে থাকি......
ভূলক্রমে হলেও আমার চোখজোড়া মাথার ওপরে দেয়ালের দিকে পড়ে.......
হে খোদা এটা কী দেখছি আমি!!!!
ভাইজানের মত দেখতে লোকটা দেয়ালের ওপর হাতপা ছড়িয়ে শুয়ে আছে....!!
দেখতে অনেকটা টিকটিকির মত। এভাবে একটা খাড়া দেয়ালের ওপর কোন মানুষের পক্ষে ঝুলে থাকা সম্ভব নয়।।।
এটা নিশ্চয়ই কোন মানুষ নয়....
আর আমি এটা নিশ্চিত আম্মাজানের খুনের সাথে এর কোন না কোন যোগসূত্র আছে.....!!
আর সেটা কী আমাকে জানতে হবে। এই মুহূর্তে বিচলিত হলে চলবে না।
ভাইয়া এই ব্যাপারটা দেখতে পেলে খুব ঝামেলা হয়ে যাবে। তাই ভয় পাওয়া সত্ত্বেও ওকে বুঝতে না দিয়ে রুম থেকে চলে যাই........!!
ভাইয়া আর আব্বা ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে। আমি খাবার রেডি করে নিয়ে আসি ওদের জন্য। যথারীতি ভাইজানের আমার প্রতি এক্সট্রা তদারকি।।।
-তুইও আমাদের সাথে বসে পড়।
-না আমি এখন খাব না। একটু পরে খাবো।
-পরে খাবি মানে?? তার মানে কী এখন ক্ষুধা নিয়ে বসে থাকবি!
-আমি পড়ে খেয়ে নেবো বলছি তো।
আমি যে রহস্য ধাঁধার ভেতরে পড়ে আছি এই মূহুর্তে খাবার গলা দিয়ে পেট অবধি যায় কিকরে!কিন্তু এই কথাটা ভাইজানকে কে বোঝায়.....
আমার কাছে দাদাজানের দেয়া একটা পুরনো কিতাব আছে..... ঐ কিতাবটা খুলে বরং দেখা যাক। কোন না কোন ক্লু পেলেও পেয়ে যেতে পারি।।
খাবার খেয়ে ভাইজান আর আব্বা নিজেদের রুমে চলে যায়।
আমার একটাই ভয় আজব প্রানীটা আবার ভাইজানের কোন ক্ষতি না করে দেয়....!
না তার আগেই যে করেই হোক আমায় এর রহস্য উন্মোচন করতে হবে....।।
বাড়ির পুরনো লাইব্রেরী থেকে কিতাবটা খুজে নিয়ে সোজা ছাদের ওপরে চলে যাই। ছাদের দরজাটা লক করে রাখি যাতে কেউ এসে আমার কাজে ঝামেলা না করতে পারে।
কিতাবটা বহুদিন পরে ছিল বলে ধূলো জমে আছে। কোনভাবে ধূলোটা পরিষ্কার করে একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকি.........
কিতাবের একেবারে শেষের দিকটায় গিয়ে চোখজোড়া আটকে যায় আমার।
একটা মন্ত্র লেখা আর ওপরের হেডলাইনটা এইরকম---
"হোক সে কোন পতিত আত্মা, হোক সে জ্বীন, হোক সে ভিনগ্রহের কেউ......
এই মন্ত্র এর সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হবে সে"!!
নিচে কোন বিধি প্রনালী লেখা রয়েছে।
আমি আর এক মূহুর্ত দেরী করলাম না। বাসার ভেতরে গিয়ে একটা কাচের শিশি নিয়ে আসি।
মেঝেতে শুকনো কাঠ দিয়ে আগুন ধরিয়ে বোতলটা তার সামনে রাখি।
তারপর মন্ত্রগুলো উচ্চারণ করতে থাকি।।।।।
এরপর শুরু হলো তার আসল প্রভাব ।
একটা ধোয়ার মত কিছু উড়ে আসলো... কোথা থেকে বা কোন দিক দিয়ে আসলো খেয়াল করি নি.....
ধোয়াটা আগুনের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে শিশিটার ভেতরে ঢুকলো।
আমি বইয়ের লেখামত শিশিটার মুখটা ছিপি দিয়ে আটকে দেই।
একটু পর ধোয়ার কুণ্ডলী টা একটা দেহের আকার ধরতে থাকে......
আমি হা করে তাকিয়ে আছি শিশিটার দিকে....!!
এতো আহিন ভাইজানের মত দেখতে সেই বহুরূপীটা।
-আমায় এই শিশির ভেতরে বন্দী কেন করেছো??
-তো কী ছেড়ে দেবো। ঠিক আছে ছেড়ে দিচ্ছি।
-তুমি কিন্তু একদম ঠিক করছো না।
-তোমার তেজ তো কম না। এই আঙ্গুলের মত শরীর নিয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছে?
-তুমি জানো না। আমি কে??
-আমি জানি তুমি কোন মানুষ না। এবার ভালোয় ভালোয় নিজের পরিচয় দাও। আর হ্যাঁ,মিথ্যা বলার অপচেষ্টা একদম করবে না।
-আগে মুক্ত করো আমায়।
-না। আগে আমি যা বলছি তাই করো। বলো কে তুমি, কেন এসেছো আমাদের বাড়িতে??
-আমায় তোমার আম্মাজান পাঠিয়েছেন। যাকে আজ থেকে এক বছর আগে গলা কেটে হত্যা করেছো তুমি। আর আমার নাম বাজিগার। আমি তোমার মায়ের পালিত জ্বীন।
কথাগুলো শুনে আমি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলাম না।
আম্মাজান তার মানে সবটা জেনে গেছেন। আর এই জ্বীনটাকে উনিই পাঠিয়েছেন।
কিন্তু আমি তো কোন অন্যায় করিনি। সেদিন যা ঘটছে তাতে আমার বিন্দু মাত্র দোষ ছিল না। কিন্তু এই জ্বীনকে আমি কিকরে বুঝাব সেটা।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বাজিগার জ্বিন জনাবা বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে......
আমি অনুভব করি আমার পেছনে কেমন একটা পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে।
পেছনে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি আমি। অসাবধানবশত আমার শারীর আচলে আগুন ধরে গেছে।
কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। শিশির ভেতর থেকে বাজিগার জ্বীন আমায় উদ্দেশ্যে করে বলতে থাকে......
-জনাবা, বৃথা চেষ্টা কর
বেন না।এটা মন্ত্র পূত আগুন। এমনিতে নিভবে না। আপনি মুক্ত করুন আমায়।
-না কিছুতেই না। চুপ করে থাকতে পার তুমি।
-আপনি আমার কথা শুনুন জনাবা। নইলে মারা পড়বেন। যা বলছি তাই করুন।
আমি বাজিগার জ্বীনের চেহারা ভয়, আতংক আর ভালবাসার ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
কিন্তু ও বাচাতে চাইছে কেন আমায়??
কি উদ্দেশ্যে ওর??
আর আমার জন্য এই জ্বীনের চোখে মায়া মমতা ভালোবাসার উদ্রেক হয় কিকরে??
ও তো প্রতিশোধ নিতে এসেছে আমার ওপর।।।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বাজিগার জ্বিন জনাবা বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে......
আমি অনুভব করি আমার পেছনে কেমন একটা পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে।
পেছনে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি আমি। অসাবধানবশত আমার শারীর আচলে আগুন ধরে গেছে।
কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। শিশির ভেতর থেকে বাজিগার জ্বীন আমায় উদ্দেশ্যে করে বলতে থাকে......
-জনাবা, বৃথা চেষ্টা কর
বেন না।এটা মন্ত্র পূত আগুন। এমনিতে নিভবে না। আপনি মুক্ত করুন আমায়।
-না কিছুতেই না। চুপ করে থাকতে পার তুমি।
-আপনি আমার কথা শুনুন জনাবা। নইলে মারা পড়বেন। যা বলছি তাই করুন।
আমি বাজিগার জ্বীনের চেহারা ভয়, আতংক আর ভালবাসার ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
কিন্তু ও বাচাতে চাইছে কেন আমায়??
কি উদ্দেশ্যে ওর??
-আমি আজ মরে গেলেও তোমায় এই শিশি থেকে মুক্তি দেবো না।
-ঠিক আছে। আমার কথা এখন আপনাকে ভাবতে হবে না। যা বলছি তাই করুন। ঐ কিতাবের একান্ন নম্বর পৃষ্ঠায় যান। ওখানে এই আগুন নেভানোর উপায় লেখা আছে।
আমি বাজিগার জ্বীনের কথামত কাজ করতে লাগলাম।
হ্যাঁ, সত্যিই তো। একটা উপায় বইয়ের পাতায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ দেখতে পাচ্ছি।
আমি বইয়ের লেখাটা অনুসরণ করতে থাকি।
বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় গিয়ে তার আগের দুই পৃষ্ঠায় গেলাম। এবার এই কাগজটা ছিড়ে আগুনের ভেতরে ফেলতে হবে। আমি তাই করলাম।
আর সাথে সাথে আগুনটাও নিভে যায়।
বাজিগার জ্বীন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ওর বরাবর হাটু গেড়ে বসলাম।
-আমাকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ।
-কৃতজ্ঞতা বোধও আছে দেখছি আপনার।
-একদম চালাকি করার চেষ্টা করো না। ভেবোনা আমার প্রাণ বাঁচিয়েছো বলে মুক্ত করে দেবো তোমায়।
-তাই নাকি।
এই বলে বাজিগার জ্বীন হাসতে থাকে.....
-আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে।
-হ্যাঁ বলুন।
-জ্বীনরা বুঝি এরকম বোকা হয়ে? যেমন আপনি!
-আমাকে বোকা মনে হচ্ছে আপনার?
-যে নিজেকে এমন দূদর্শায় দেখেও হাসতে পারে তাকে বোকা না বলে কী বলবো বুঝতে পারছি না।
বাজিগার জ্বীন আমার কথা শুনে আবারো হাসতে শুরু করে।
-চুপ! একদম চুপ থাকো তুমি। আর একবার দাঁত বের করলেই একেবারে বোতল দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দেবো।
-আচ্ছা আপনার কী সত্যি মনে হয় একটা সামান্য মন্ত্র পাঠ করে আমায় কব্জা করে ফেলেছেন?
আমি কিছুটা ঘাবড়ে যাই জ্বীনটার কথা শুনে।
আমাকে অবাক করে দিয়ে বাজিগার জ্বীন বোতলটা ভেংগে বাইরে বেরিয়ে আসে।
লম্বা আলখেল্লা পরিহিত বিশাল আকৃতির একটা দেহ দাড়িয়ে আছে আমার সামনে। ওর মুখটা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে না। মাথায় একটা লম্বা ঘোমটার মত দেখতে টুপি দেয়া।
-আমি বাজিগার জ্বীন। আমায় কেউ বন্দী করতে পারে না। আর তুমি তো এক সামান্য ইনসান।
বাজিগারের কথা শুনে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কোথা থেকে কী হয়ে গেল বুঝতেই পারছি না।
-কী আমার ক্ষমতা দেখে ভয়ভীত হয়ে গেলে!!তবে দেখ এবার।
বাজিগার জ্বীন তার হাত দিয়ে ইশারা করতেই আমাদের বাড়িটা ক্রমাগত শূন্যে ওপরের দিকে উঠতে থাকে!!
মনে হচ্ছে যেন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি আমি.....
-এটা কি করছো,নিচে নামাও আমায়। আমার খুব ভয় করছে।
নিচের দিকে তাকাতেই বুকটা ভয়ে মোচড় দিয়ে উঠলো আমার। মনে হচ্ছিলো এক্ষুনি প্রানটা বোধহয় বেড়িয়ে যাবে!!
বাজিগার জ্বীন আবারো ইশারা করতেই ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসলো.....
সবকিছু স্বাভাবিক হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম...।।
এর মধ্যে সন্ধে হয়ে আসে। এখন নিচে না গেলে নিশানই আব্বা আর ভাইজান খোঁজ করবে। নানা রকম প্রশ্ন করবে।
নিচে গিয়ে নামাজটা সেরে নেই।।
তারপর কিচেনের দিকে যাই রাতের খাবারটা তৈরী করার জন্য।
রান্নাবান্না সেরে খেয়ে দেয়ে যে যার মতো শুতে চলে যায়।
রাতে দুশ্চিন্তায় আমার ঘুম আসছে না কিছুতেই। এমনিতেই জ্বীনটা ছাড়া পেয়ে গেল। না জানি আবার কখন চলে আসে। এই ভয়টাই তাড়া করে বেড়ায় আমায়।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি......!
.........................
চোখ জোড়া খুলতেই চোখের সামনে একটা ছুড়ি দেখতে পাই। কেউ ছুড়িটা আমার দিকে তাক করে ধরে আছে।
লক্ষ্য করলাম আমি নিজের রুমে নেই। পেছনের লম্বা বেলকনিতে দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে আছি। বাজিগার জ্বীন ছুড়িটা আমার গলা বরাবর ধরে আছি....
-আমি চাইলে আগেই মারতে পারতাম তোমায়। কিন্তু না তোমায় তোমার প্রতারনার অস্ত্র দিয়ে শেষ করবো।
-কি বলছো তুমি এটা? না এটা করতে পারো না তুমি। আমি কোন অন্যায় করি নি।
-এই ছুড়িটা চিনতে পারছো??
আমি ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখি এ তো সেই ছুড়িটা যা দিয়ে আমি আম্মাজানকে খুন করেছিলাম!!!!
আছ বোধহয় আর প্রানটা রক্ষা পেল না।
লেখক: প্রদীপ চন্দ্র
আম্মাজনের আত্মা...👹
পর্ব: ০৩ ও শেষ
চোখ জোড়া খুলতেই চোখের সামনে একটা ছুড়ি দেখতে পাই। কেউ ছুড়িটা আমার দিকে তাক করে ধরে আছে।
লক্ষ্য করলাম আমি নিজের রুমে নেই। পেছনের লম্বা বেলকনিতে দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে। বাজিগার জ্বীন ছুড়িটা আমার গলা বরাবর ধরে আছি....
-আমি চাইলে আগেই মারতে পারতাম তোমায়। কিন্তু না তোমায় তোমার প্রতারনার অস্ত্র দিয়ে শেষ করবো।
-কি বলছো তুমি এটা? না এটা করতে পারো না তুমি। আমি কোন অন্যায় করি নি।
-এই ছুড়িটা চিনতে পারছো??
আমি ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখি এ তো সেই ছুড়িটা যা দিয়ে আমি আম্মাজানকে খুন করেছিলাম!!!!
-আগে তুমি আমার কথাগুলো শোনো। তারপর যদি মনে হয় আমি কোন অন্যায় করেছি তবে আর কিছু বলবো না তোমায়।
-আর কি অজুহাত দেবে আমায়।যে নিজের জন্মদাত্রীকে হত্যা করার মত জঘন্য কাজ করতে পারে আমি তার কোন কথাই বিশ্বাস করি না। বুঝতে পেরেছো?
এই বলে বাজিগার জ্বীন আমায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। ছুড়িটা আবার গলার চামড়া স্পর্শ করে ফেলেছে।
সাক্ষাত মৃত্যু আমার দোরগোরায়!!
কাঁপা কাঁপা গলায় মুখ খুললাম আমি......
-তুমি যাকে আমার মা বলে জাহির করছো উনি বাস্তবে কোনদিন আমার মাই ছিলো না.....মা কথার অর্থ জানো তুমি ,তাৎপর্য জানা আছে তোমার??
-মিথ্যে বলো না।
-মৃত্যু পথযাত্রী কোন প্রাণী মিথ্যা বলে না। এটা তো জানো তুমি নিশ্চয়ই?
-তোমার বক্তব্যের অর্থ বুঝতে পারছি না আমি।
-তুমি বোঝার চেষ্টাই করোনি কোনদিন।
এবার আমি যা বলছি শোন।
-ঠিক আছে বলো।
বাজিগার জ্বীন আমায় ছেড়ে দিলো।
-আমার সাথে এসো।
-কোথায়?
-তোমায় একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা তুমি আমার হাতের ওপর নিজের হাতটা রাখো। তারপর চোখ বন্ধ করে যেখানে যেতে চাও সেই জায়গার নাম স্মরণ করো।
-কেন আমি এটা কেন করতে যাবো?
তোমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার।
-হ্যাঁ প্রয়োজন আছে কারণ তোমার হাতে সময় খুব কম।
অগ্যতা আমায় জ্বীনের কথাই শুনতে হলো।।।
আমি ওর হাতের ওপর হাতটা রেখে চোখ বন্ধ করি।
চোখ মেলেই দেখতে পাই আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে গেছি।
-এটা কোন জায়গা?
-এটা তারই কবর যাকে আমি নিজের হাতে খুন করেছি। আমার আম্মার কবর!!!
আজ থেকে বিশ বছর আগের ঘটনা। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে আম্মাজান আমায় মাঝেমধ্যেই একটা জায়গায় নিয়ে যেতেন।
একটা তান্ত্রিক টাইপের লোকের সাথে দেখা করতেন উনি। আম্মাজান আমায় বাইরে রেখে ঐ লোকটার সাথে একটা ঘরের ভেতর চলে যেতেন ।
উনি অনেক ক্ষন পর ফিরে আসতেন। কখনো এক ঘন্টা আবারো কখনো বা আধা ঘন্টা।
নিতান্তই শিশু ছিলাম বলে আমার অবচেতন মন এতো জটিলতা বুঝতো না।
এখন আমি বুঝতে পারি যে লোকটার সাথে তার ঠিক কী সম্পর্ক ছিল।
ধীরে ধীরে আমি বড় হতে থাকি......
এরপর আম্মাজান একাই যেতেন ঐ জায়গাটায়।
একদিন আমি চুপি চুপি আম্মাজানের পিছু নিলাম।
ঐ তান্ত্রিকের কুঠিতে গিয়ে ঐদিন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য উন্মোচিত হয়।
এই মহিলা আসলে আমার মা নন। আমার জন্মের সময় আমার মা মারা যান। আব্বাজান তারপর এই মহিলাটাকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন।
এই কপট মহিলার ব্যবহার কোনদিন আমার মনে সন্দেহের বীজ বপন করতে পারে নি।
এতোটাই ভালোবাসতেন উনি আমাদের।
যদিও আহান আর আব্বাজান সবটাই জানতেন।
তান্ত্রিকের সাথে আমার ফেইক মায়ের অবৈধ মেলামেশা মেনে নিতে পারি নি আমি।
সবথেকে দুঃখের ব্যাপার ছিল ঐ মহিলা আমার ফেরেশতার মত আব্বাজানের ওপর কালোজাদু করতে চেয়েছিলেন।
যাতে ওনাকে হত্যা করে আমার আর আহান ভাইজানের দ্বায়িত্ব থেকে মুক্তি হতে পারে।তার সাথে আমাদের সকল প্রোপারটির একচ্ছত্র মালকিন হবার বাসনা চেপে ধরে তাকে।
আমি কথাগুলো শুনেই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ি।
নিজের মা বলে যাকে এতদিন ধরে সম্মান করে এসেছি তাকে একটা অপর লোকের সাথে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না আমি। যদিও ওরা তখনো দেখতে পায়নি আমায়।
বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। সাথে ঝড়ো বাতাস।
আমি পেছন থেকে আম্মাজানের গলায় ছুড়ি বসিয়ে দেই।
তান্ত্রিক লোকটা এই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
সবার এটাই সন্দেহ ছিল তান্ত্রিকটা আম্মাজানকে খুন করে পালিয়ে গেছে। কিছুদিন পর তার সুইসাইডেড লাশ খুঁজে পায় পুলিশ। আর তার সাথে সাথে আমার সকল রহস্য মাটিচাপা পড়ে যায়।।।।
আর হ্যাঁ,আমার আম্মাজানের মৃত্যুর পেছনেও এই দুইজনের হাত ছিল। এদের কালোজাদুর প্রভাবেই আম্মাজান আমার জন্মের পর মারা যান.....!!
এবার যদি মনে হয় আমি কোন অন্যায় করেছি তবে হত্যা করো আমায়।
চালাও ছুড়ি..... শেষ করে দাও আমায়।।।।
এরপর ছয় বছর পর............
-
বেলকনিতে আরামকেদারায় বসে আছি। আমার কোলে ছয় মাসের একটা বাচ্চা।
আহান ভাইয়া আর ভাবির ছেলে । আমরা ওর নাম রেখেছি আমান। ভারি মিষ্টি দেখতে।
সেই দিন আমার কথাগুলো শোনার পর বাজিগার জ্বীন আমায় মুক্ত করে দিয়েছিল। ও আসলে আম্মাজানের কুকৃতির ব্যাপারে কিছুই জানতো না।
মানুষ মৃত্যুর পর কখনই তার আত্মা পুনরায় ফিরে আসতে পারে না।
তেমন আম্মাজানের আত্মাও ফিরে আসতে পারে নি।ফিরে এসেছিল বাজিগার জ্বীন।
যে এসেছিল সে নিজের অজ্ঞতা উপলদ্ধি করতে পেরে চলে যায়।
তবে সেখানেই সব শেষ হয়ে যায় নি। বাজিগার জ্বীন মাঝেমধ্যেই দেখা করতে আসে আমার সাথে।। এতদিনে
একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমাদের ভেতর।।
.......সমাপ্ত.......