বাবা মায়ের ভালোবাসা | বাবা মাকে নিয়ে স্ট্যাটাস

বাবা মাকে নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস

বাবা মাকে নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস

 অফিস থেকে বের হয়ে রেহানাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে রেস্টুরেন্টের সামনে বাবাকে দেখে অবাক হলাম। 


বাবা আমাকে বললো, " মেয়েটা কে অর্নব? "


আমি কিছু বলার আগেই রেহানা বললো, " আঙ্কেল আমার নাম রেহানা, আপনি কেমন আছেন? "


" আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি ভালো আছো মা? " 


" জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আমি অর্নবের কাছে শুনেছি আপনারা গ্রাম থেকে এসেছেন। ভেবেছিলাম সামনের শুক্রবার বাসায় যাবো, কিন্তু তার আগেই হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল। " 


আমি বললাম, " বাবা তুমি এখানে কি করো? বাসায় মাকে একা একা রেখে চলে আসছো তাই না? " 


" তোর মা ঘুমাচ্ছে, আমি ভাবলাম একটু চারিদিকে ঘুরে আসি। সকাল বেলা তুই ই তো বলে গেলি যদি কোথাও যাই তাহলে বাসার পাশের মসজিদের কথা বললে সবাই চিনবে। তাছাড়া তোর মোবাইল নাম্বার আর ঠিকানা ও আমার কাছে আছে। " 


" ঠিক আছে, তুমি এখন আমাদের সঙ্গে চলো আমরা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি। তারপর একসঙ্গে বাসায় যাবো। " 


বাবা সামান্য অস্বস্তি প্রকাশ করলেও রেহানা তাকে জোর করে আমাদের সঙ্গে ভিতরে নিয়ে গেল। আমি বাবা আর রেহানা রেস্টুরেন্টের মধ্যে একটা টেবিল দেখে বসে গেলাম। 


মেনু দেখে রেহানা কেএফসি চিকেন অর্ডার করলো। তারপর আমাকে দর্শক ও শ্রোতা বানিয়ে তারা দুজন মিলে গল্প করতে লেগে গেল। রেহানার বাসায় কে কে আছে, সে কি করে ইত্যাদি ইত্যাদি সবকিছু জিজ্ঞেস করতে লাগলো বাবা। আমি একবার বাবাকে নিষেধ করতে চাইলাম কিন্তু রেহানা টেবিলের নিচ থেকে পা দিয়ে খোঁচা মেরে আমাকে চুপ করতে বললো। 


খাবার আসার আগ পর্যন্ত তাদের দুজনের মধ্যে আমি আর কথা বলতে পারলাম না। তবে বাবা যখন আমার বিষয় বলতে শুরু করলেন তখন আমার সত্যিই লজ্জা পাচ্ছিল। ছোটবেলায় কখন কি করছি সেগুলো বলতে বলতে বেশ মজা পাচ্ছিল বাবা। 


খাবার চলে এলো। বাবা বেশ কিছুক্ষণ খাবারের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বললেন, 


" খুব স্পেশাল খাবার তাই না? "


রেহানা বললো, " আঙ্কেল আমরা দুজন মিলে যখনই আসি তখন শুধু এটাই খাই। সেটা যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তেই হোক, এটা ছাড়া কিছু খাই না। " 


" তাহলে প্রথমে মেনু দেখলে কেন? " 


" ভাবলাম আপনার জন্য আলাদা কিছু আনা যায় কিনা তাই। " 


" খাবারটা খুব ভালো হয়েছে। " 


" আপনি আস্তে আস্তে খেতে থাকুন। " 


আমরা মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছিলাম, আমি এখন কিছু বলতে পারছি না। বাহিরে মাগরিবের আজান দিচ্ছে, বাবা বলে উঠলেন, 


" আজানা দিয়ে দিচ্ছে রে, নামাজ পড়তে হবে। " 


" তুমি খাবার শেষ করে তারপর বাসায় গিয়ে নামাজ পড়ে নিও বাবা। " 


" না রে, আমি বরং খাবারটা সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যাই। বাসায় গিয়ে নামাজ পড়ে খেয়ে নেবো। " 


" ঠিক আছে আঙ্কেল, আমি খাবার প্যাক করে দিতে বলছি আপনি তাহলে একটা রিক্সা নিয়ে চলে যান। এখান থেকে পাঁচ মিনিটের বেশি লাগবে না। " 


আমি একজন ওয়েটারকে ডাক দিয়ে বাবার খাবারটা প্যাকেট করে দিতে বললাম। বাবা হাসতে হাসতে উঠে গেল। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম, বাবা তখন ওয়েটার ছেলেটার সঙ্গে কি যেন বলছে। আমরা দুজন নিজেদের খাবারের দিকে মনোযোগ দিলাম। আমি জানি যে বাবা নিশ্চয়ই যেতে পারবে বাসায়, তাই আমি আর রেহানা আরো কিছুক্ষণ বসতে চাইলাম। 


" আঙ্কেল খুব সহজসরল তাই না? " 


" হুম, গ্রামের মানুষ তো তাই। বাবা কোনদিন শহরে আসেনি, এটাই মা-বাবা দুজনেরই প্রথম শহরে আসা। তাও মায়ের চিকিৎসার জন্য। " 


" এমন শশুর শাশুড়ী পেলে আমি তো নিজের মা-বাবার কথা ভুলে যাবো হাহাহা। " 


বিল দেখে আমি খানিকটা অবাক হলাম। আমরা তো তিনজনের খাবার অর্ডার করেছি কিন্তু এখানে চারজন মানুষের বিল দেওয়া হয়েছে। 


রেহানা বললো, " ভাইয়া আঙ্কেল তো তার নিজের খাবারটা প্যাক করে নিয়ে গেছে। তাহলে এখানে ডাবল খাবার বিল কেন? " 


লোকটা বললো, " আপু আঙ্কেল তো বাড়তি আরেকটা খাবার নিয়ে গেছে সঙ্গে করে। আমাকে বললো যে আপনাদের বললেই হবে। " 


আমি আর রেহানা দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমাদের দেখে ওয়েটার ছেলেটা বললো, 


" আঙ্কেল হাসতে হাসতে বললেন যে বাসায় তোমার আন্টি আছে তো। তাকে একা রেখে এতো ভালো খাবার কীভাবে খাই বলো? তুমি আরেকটা খাবার সঙ্গে দাও বাসায় গিয়ে তোমার আন্টির সঙ্গে একসাথে বসে খাবো। " 


রেহানার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। মানিব্যাগ বের করে আমি টাকা দিয়ে দুজনেই বের হয়ে এলাম। রিক্সা নিয়ে যখন একসঙ্গে পাশাপাশি বসলাম তখন রেহানা আমার একটা হাত জড়িয়ে ধরে বললো, 


" আজ থেকে অনেক বছর পরে যখন একসঙ্গে থাকবো তখন তুমিও আঙ্কেলের মতো আমার জন্য খাবার নিয়ে বাসায় যাবে তো অর্নব? " 


আমি সামান্য হাসলাম। মা-বাবার এমন ভালোবাসা দেখে অবাক হয়েছি খুব। তবে এটাও সত্যি যে গ্রামে থাকতেও বাবা ঠিক এমনটি করতেন। 

আমি রেহানার হাতটা শক্ত করে ধরে ব্যস্ত শহরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আল্লাহর কাছে বললাম, 

" বেঁচে থাকুক সকল মা-বাবার এমন ভালোবাসা। পার করুক চোখে চোখ, হাতে হাত আর সুখ দুঃখের সঙ্গী হয়ে জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত। " 


-সমাপ্ত 


অণুগল্পঃ- মা-বাবার ভালোবাসা। 

মোঃ আবীদ আবরার।


এমন আরও অনেক অনেক গল্প হয়েছে আমাদের ওয়েব সাইটে পড়ুন ভালো লাগবে।


এমন আরও একটি গল্পের ওয়েব সাইট ভিজিট করুন ও গল্প পড়ুন।