গল্প: ভাইরাল | বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

চরম বাস্তব কিছু তেতো কথা

চরম বাস্তব কিছু তেতো কথা

 আমাদের পাশের বাসার মৌমিতা আপুর একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।শুনেছি ভিডিওটাতে নাকি মৌমিতা আপুর অনেক অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ক্যামেরা বন্ধী করা আছে।বাসা থেকে বের হওয়ার পর চারদিকে শুধু একটা কথায় শুনা যাচ্ছে যে, মৌমিতা আপুর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।কেউ কেউ তো বিভিন্ন গ্রূপেও মৌমিতা আপুর ছবি দিয়ে বিভিন্ন ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট করেছে।সে ছবির নীচে কেউ কেউ লিংক হবে নাকি মামা এ টাইপ কমেন্ট ও করেছে।কেউ কেউ তো ছিঃ ছিঃ বলে মুখ বাকাচ্ছে।


খেয়াল করলাম সবাই শুধু দোষটা একচেটিয়া ভাবে মৌমিতা আপুকেই দিচ্ছে আর বলছে মেয়েটা নষ্টা।কিন্তু সাদেক ভাই??


(ওহ সাদেক ভাই কে সেটা আগে বলে নিই।সাদেক ভাই হল মৌমিতা আপুর বি এফ।আমার জানা মতে তাদের সম্পর্কের ৪ বছর চলে। কলেজে থাকাকালীন সময় মৌমিতা আপুর সাথে সাদেক ভাই এর সম্পর্ক হয়।আর এখন মোমিতা আপু অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে।উনাদের সম্পর্ক টা একটা আইডল এর মত ছিল।কারন বিভিন্ন গ্রূপগুলাতে উনারা বিভিন্ন কন্টেস্টে জয়ী হত বেস্ট কাপল হিসেবে।অনেকেই এ সম্পর্ক দেখে প্রচন্ড রকমের হিংসা করত।বলা চলে ছেলেরা চাইত মৌমিতা আপুর মত জি এফ আর মেয়েরা চাইত সাদেক ভাই এর মত বি এফ।)


এবার আসি ঘটনায়।ভিডিও টা ভাইরাল হওয়ার পর খেয়াল করলাম সবাই মৌমিতা আপুকে নিয়ে অনেক বাজে বাজে কথা বলছে কিন্তু সাদেক ভাইকে নিয়ে এমন কোন কথা শুনা যাচ্ছে না।তাই ভিডিও দেখার খুব ইচ্ছা জাগল।প্রথমত আমি সবে মাত্র আঠারোতে পা দিয়েছি।তাই কেন জানি না এসব ব্যাপার গুলোতে বেশ কৌতুহল জাগে।কেন জানি না সবার কথায় মনে হচ্ছে এ দোষটা একান্তই মৌমিতা আপুর।না হয় সবাই শুধু মৌমিতা আপুকে নিয়েই বাজে কথা কেন বলছে?প্রশ্নের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে কৌতুহলের মাত্রাও বেড়ে চলতে লাগল।মনে হতে লাগল ভিডিও টা দেখায় শ্রেয়।


তাই দেড়ি না করে বিভিন্ন গ্রূপ গুলোতে খুঁজতে লাগলাম। পোস্টের নীচে কমেন্ট গুলো চেক করলাম।খুব বোশি কষ্ট পোহাতে হল না।এই ফেসবুক,মেসেন্জােরের যুগে খুব সহজে লিংক টা পেয়েও গেলাম।ধুরুধুরু বুক নিয়ে ভিডিওটা ওপেন করলাম।ভডিওটা দেখার পর মনে হল যা হয়েছে দুজনের সম্মতিতে।তাই প্রথমেই আমার মনে প্রশ্ন জাগল তাহলে সবাই কেন মৌমিতা আপুকেই দোষ দিচ্ছে?সাদেক ভাইকে কেন সবাই কিছু বলছে না?দোষটা মৌমিতা আপু একা করে নি।চার বছরের সম্পর্ক। মেনে নিলাম তারা ভুল করেছে তবে কেন তার দায়টা মৌমিতা আপুকে দেওয়া হবে।ভাবতে ভাবতে একটা কথায় মনে হল "পুরুষ শাসিত সমাজে যতই নারী অধিকার আদায় করা হয় না কেন, মানুষ মন থেকে সব দোষের দায়টা নারীর উপর চাপিয়ে দিয় নিজের পুরুষত্ব জাহির করে।"


এ মুহুর্তে আমার শুধু কেন জানি না মৌমিতা আপুকে দেখতে মন চাচ্ছে।কারন ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সাদেক ভাইকে বেশ কয়েকবার গলির মোরটায় হাসি মাখা মুখে চা খেতে দেখলেও মৌমিতা আপুকে বাসার বাইরে একবার ও দেখিনি।সাদেক ভাই যেভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে মনে হচ্ছে সাদেক ভাই এর কিছুই হয় নি।বুঝায় যাচ্ছে বাসা থেকে খুব বেশি চাপ পায় নি।তাই হয়ত আরামসে ঘুরে বেড়াচ্ছে।মাঝে মাঝে গলির মোর দিয়া হেঁটে গেলে সাদেক ভাই এর কয়েকটা বন্ধুর কথা কানে আসে টুকিটাকি। কেউ কেউ তো সাদেক ভাইকে বলে "মামা সেই মাল খেলি" বডিটা না ওফফফফফফ..........।সাদেক ভাই একটা লাজুক হাসি দিয়ে সবার পিঠ চাপড়াতে থাকে।


আর অপরদিকে আমিও সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মৌমিতা আপুর বাড়ি গেলাম।যদিও মা,বাবা কড়া করে না করে দিয়েছিল মৌমিতা আপুর বাড়িতে যেন না যায় তবুও গেলাম।বাড়িতে ঢুকেই প্রথম খেয়াল করলাম সবাই জীর্ণ শীর্ণ হয়ে বসে আছে।মনে হচ্ছে একটা মরা বাড়ি।ভিতরে একটা কম্পন কাজ করতে লাগল আর ভাবতে লাগলাম তাহলে মৌমিতা আপু কি মারা গিয়েছে।চিন্তা করেই যেন আমার গা টা শিউরে উঠল।মৌমিতা আপুর রুমে যাওয়ার সাহস করতে পারছিলাম না।কিন্তু হুট করে খেয়াল করলাম মৌমিতা আপুর রুম থেকে একটা আত্ন চিৎকারের শব্দ ভেসে আসছে।বুঝতে পারলাম মৌমিতা আপুই চিৎকার করে কাঁদছে।মনে সাহস জুগিয়ে মৌমিতা আপুর রুমে গেলাম।গিয়ে দেখলাম আপু বিছানার এক পাশে বসে কাঁদছে।আপুর হাত পায়ে খেয়াল করে দেখলাম আঘাতের চিহ্ন।বুঝতে বাকি রইল না আপুর পরিবার আপুকে বেধরম পিটিয়েছে।আমি আপুকে ধরতেই আপু ওহ করে উঠল।আমাকে দেখে বলল


-তুই এখানে কেন এসেছিস?আমার মুখ দেখাও পাপ তুই রুম থেকে বের হয়ে যা।


আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম আপুর কথা শুনে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে জবাব দিলাম


-দোষ তো তুমি একা কর নি।দুজন করেছ।তাহলে একা নিজেকে শাস্তি কেন দিচ্ছ?আর সাদেক ভাই কেন এমন করল?তোমরা তো বেস্ট কাপল ছিলে।তাহলে কি এমন হল যে এ হাল হল।তুমি এখানে পড়ে আছ।আর সাদেক ভাই তো ঠিকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।কেন তুমি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ?


চিৎকার দিয়ে আপু বলল


-এই পুরুষ শাসিত সমাজে আমাদের মত মেয়েরা অপমান ছাড়া কিছু পায় না রে।আর সাদেক ভাই এর কথা বলছিস তো।ঠকেছি আমি চরম ঠকেছি তাকে বিশ্বাস করে।চার বছরের ভালোবাসা কুরবানী করে দিল।দিনের পর দিন ব্ল্যাকমিল করত শরীরের জন্য।না হয় ভাইরাল করে দিবে বলত।আমি না পেরে সব সহ্য করতাম।কিন্ত কত?আমিও তো মানুষ।আমার ও তো চাওয়া পাওয়া আছে।বিয়ের জন্য চাপ দিলে এড়িয়ে যেত।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আর যাব না এমন নোংরা কাজে।এর পরদিনেই ভিডিও ভাইরাল হল।সবাই তো আমাকে খারাপ বলছে।আর তাকে বাহবা বাহবা দিচ্ছে।ঘটনার পিছনের গল্প গুলা সবসময় আড়াল হয়ে যায় রে।মরে যেতে মন চাচ্ছে কিন্তু সাহস পাচ্ছি না রে।আমাকে মেরে ফেল।তাহলে যদি আমার একটু শান্তি হয়।


আপুর কথাগুলো শুনে খুব অস্বস্তি হতে লাগল।সাদেক ভাই ছেলে তাই এত বড় অপরাধ করার পরও সে হাসতেছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আপু মেয়ে তাই আপুর জন্য এ সমাজ কান্নাটাই বরাদ্ধ রেখেছে।শুধু সমাজের দোহাই দিলেও হয় না।মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার ও দোষ দেওয়া দরকার।দোষ একার ছিল না তবে কেন আপুই শাস্তি পাবে।আপুকে শাত্বণা দেওয়ার ভাষা আমার নাই।তবুও আপুকে শাত্বণা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করলাম আর বললাম


-আপু মনে শক্তি বাড়াও।মনকে শক্ত কর।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা কর।সমাজের নোংরা শাসনের কাছে হেরে যেও না।চাইলে সমাজ বদলানো সম্ভব না।তবে চাইলে নিজের পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব।


কথাগুলো শুনে আপু বেশ কাঁদতেছিল।আপুর কান্না দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না।ঐখান থেকে চুপিসারে বের হয়ে গেলাম।বের হওয়ার পর এক প্রতিবেশি বলল


-তুমি এ বাড়িতে গিয়েছ কেন?জান না এ বাড়ির মেয়ে নষ্টা।এ বাড়িতে গেলে নষ্টা হয়ে যাবা।তোমার মাকে সব বলব।এখনেই শাসন করা দরকার তোমার।


কথা গুলো শুনে অনেক রাগ হল।তবুও মুখ বুজে সব শুনে চলে আসলাম।বাসায় এসেই মা বাবার প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম যে ঐ বাড়িতে কেন গেলাম।আমি কি জবাব দিব বুঝতে পারছিলাম না।তবুও আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করা হচ্ছে।জবাব দিতে না পারায় আমার মা,বাবা আমাকে উত্তম মধ্যম প্রহার করল।আমিও রাগে বলে বসলাম


-আমি মৌমিতা আপুর বাড়িতে গিয়েছে এটা দোষ আর তোমার ছেলে যে সাদেক ভাই এর সাথে কথা বলে সেটার জন্য তো একবার ও শাসন করতে দেখি নি।কিন্তু কেন?


মা চেঁচিয়ে উঠে বললেন


-ও ছেলে আর তুই মেয়ে।আর মেয়েদের একটু গুছিয়ে চলতে হয়।না হয় বিয়ে দেওয়া যায় না।


-বাহ বাহ।ছেলে বলে সাত খুন মাফ।আর মেয়ে বলে দোষ না করে ও দোষী।


কথাটা শুনার পর আমার বাবা আমাকে কষিয়ে চড় দিয়ে মাকে বলল মেয়েকে সামলাও না হয় এ মেয়ে নিয়েও একসময় আমাদের গলা কাটা যাবে।কঠোর শাসনে রাখ মেয়েকে।এ কথা বলে চলে গেল।


আমি রুমে গিয়ে কাঁদতে লাগলাম।নিজের অন্যায় কি ছিল খুঁজতে লাগলাম।ভিতরে ভিতরে সমাজকে দোষ দিতে লাগলাম।সত্যিই নারী অধিকার আইন প্রণয়ন হলেও ঘরে ঘরে তা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নি। আইন অনুযায়ী নারী পুরুষ সমান হলেও ভেদাভেদ এখন যায় নি।এর মধ্যে কয়েকটা দিন পার হল।


বেশ কয়েকদিন মৌমিতা আপুর খুঁজ পায় নি।হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম মৌমিতা আপু...


গল্প : ভাইরাল

পর্ব : ০১

লেখিকা- শারমিন আঁচল


ভাইরাল (২য় /শেষ পর্ব)

লেখিকা - শারমিন আঁচল


হঠাৎ একদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম মৌমিতা আপু রাস্তায়।সম্ভবত ভার্সিটি যাবে।মৌমিতা আপুকে দেখে মনটা বেশ খুশি হল।যাক মেয়েটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।কিন্তু দেখে খুব অবাক হলাম মৌমিতা আপুকে সব ছেলেরা দেখে বাজে বাজে কথা বলছে।একজন আরেকজনকে বলছে 


"মামা দেখ সেই মাল টা না?বডি টা যা ছিল উম্মাহ।কি গো মেয়ে কত রেট তোমার?যাবে নাকি?মজা আমাদের ও কিছু দাও।সাদেক কে একা দিলে হবে নাকি?"


মৌমিতা আপু কথা গুলো শুনে কাঁদতে লাগল।মৌমিতা আপুর কান্না দেখে যেন ছেলে গুলার আরও আনন্দ হতে লাগল।কান্না দেখে বলতে লাগল।


"ওলে বাবুটা এভাবে কাঁদে না।সাদেক চলে গিয়েছে তাতে কি?আমরা তো আছি।এমন আদর দিব সাদেক কে ভুলে যাবে।আসবে নাকি আমার কাছে।চল না বাবু একটু চিপায় যাই তোমাকে আদর করে দিব"


আপু শুধু কথা গুলো শুনে নীচের দিকে তাকিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে লাগল।খেয়াল করলাম আশে পাশে, দোকানের মোরে যত ছেলে ছিল সবাই মৌমিতা আপুকে নিয়ে বাজে কথা বলছে।বারবার মাল সম্বোধন করছে আর কু প্রস্তাব দিচ্ছে।সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি এটা দেখে যে চাচার বয়সী লোকেরাও বাদ যায় নি।ইশ কতটা ঘৃনিত এ সমাজ।যেখানে বাপের বয়সী লোকেরাও যুবতী মেয়েকে কু প্রস্তাব দেয়।ভুল তো দুজনের ছিল।দোষটা দুজনেই করেছে তবে কেন শাস্তিটা আপুকে পেতে হচ্ছে।সাদেক ভাই যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটে কাউকে এটা বলতে দেখলাম 


"মামাঐ যে নষ্ট ছেলে হেঁটে যাচ্ছে।সালা একটা মাল।সালারে ধইরা কয়েকটা দিলে বুঝবে মেয়েদের সাথে এমন করার পরিণাম।সালারে বাইন্দা বাড়ি দে।এ সালা এখনও এলাকায় কেমনে ঘুরে?এ সালা এ এলাকায় থাকলে আরও মাইয়া নষ্ট হইব।সালারে ঝাটা দিয়ে বিদায় কর এ এলাকা থেকে।"


ইশ এ কথাগুলো বললে হয়ত কোন ছেলে অপমানের ভয়ে এমন কাজ করতে দুইবার ভাবত।কিন্তু এ কাজ করে নি কেউ।দোষটা একজনের উপরেই চাপিয়ে দিল।


এর মধ্যে আপু বাড়িতে চলে গেল।আমি আর আপুর বাড়িতে যাওয়ার সাহস পেলাম না।বেশ কিছুদিন কেটে গেল এ ঘটনার পর।প্রায় ৮ মাস।পাশাপশি বাড়ি থাকলেও মৌমিতা আপুর কোন খুঁজ পেলাম না।


৮ মাস পর হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম মৌমিতা আপুদের বাড়ির নীচে পুলিশ।দৌঁড়ে গেলাম ঘটনাস্থলে।গিয়ে দেখলাম একটা বাচ্চা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।সেখানে গিয়ে যা শুনলাম তা শুনে আমার ভিতরটা মুচরাতে লাগল।কারন মৌমিতা আপু তার বাচ্চাকে দোতলা থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।আমি দৌঁড়ে মৌমিতা আপুর কাছে গেলাম।গিয়ে দেখলাম আপু জীর্ণ শীর্ণ হয়ে বসে আছে।আপুকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম 


-আপু এরকম কেন করলে?বাচ্চাটা আগেই নষ্ট করে দিতে।


আপু চিল্লাতে চিল্লাতে বলল


-আমি আমার বাচ্চাকে খুন করেছি।আমার বাচ্চাটার কথা যখন জানতে পেরেছি তখন নষ্ট করার উপায় ছিল না।তা না হলে ওকে আগেই শেষ করে দিতাম।আমি যখন দেখেছি আমার মেয়ে হয়েছে আমি তখন ভাবলাম এ সমাজ আমার মেয়েকে মর্যাদা দিবে না।এ সমাজে আমার মেয়ে ধুকে ধুকে মরবে।সবাই তাকে জারজ বলবে তার মাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলবে।বড় হয়ে সে যখন তার বাবা, ময়ের ভিডিও দেখবে তখন সে ঘৃনায় মুখ লুকিয়ে নিবে।আমার সন্তান এত কষ্ট সহ্য করার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল।তাই মেরে দিয়েছি।ভালো করে নি বল।


এ বলে আপু হাসতে লাগল।আমার বুঝতে আর বাকি রইল না।আপু মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে।মূলত এজন্যই এমন একটা কাজ করেছে।


২য় বারের মত আপুর ছবি আবার ভাইরাল হল।ক্যাপশনে দিল ২ মিনিটের আবেগে একটা শিশুর প্রাণ হারাল।আপুকে সবাই গালি দিতে লাগল।মেয়েরাও গালি দিতে ছাড়ল না।কেউ পুরো ঘটনা জানার চেষ্টায় করল না।উল্টা আপুর ছবি ভাইরাল করে আপুকে নীচে নামাতে লাগল।কিন্তু একটা বারও তো কেউ সাদেক ভাই এর ছবি দিয়ে বলল না কেমন পিতা নিজের সন্তানের দায়িত্ব নিল না।ইশ ভাবতেই গা শিউরে উঠল। এ কোন সমাজে আমি বাস করি।মনে হয় একটা অসুস্থতার ভিতরে আছি।বিকারগ্রস্ত সমাজের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেও কেন জানি না লজ্জাবোধ হয়।ছেলেরা তো মেয়েদের সম্মান দেয় না সে জায়গায় কিছু মেয়েরাও মেয়েদের সম্মান দেয় না।


এর মধ্যে বেশ কিছুদিন পার হল।প্রায় তিন বছর।মৌমিতা আপুরা বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে।মাঝে মাঝে মৌমিতা আপুর কথা মনে হত।জানতে ইচ্ছা করত কেমন আছে।কারন এ দিকে সাদেক ভাই ঠিকেই বিয়ে করে সুখে সংসার করছে।


প্রায় তিন বছর পর ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ চোখ পড়ল মৌমিতা আপুকে নিয়ে একটা পোস্টের উপর।হুট করে মৌমিতা আপুকে এভাবে পোস্টে দেখব ভাবতে পারি নি।


আপু ৩য় বারের মত ভাইরাল হল।এবার ভাইরাল হল আপুর মৃত দেহ।ক্যাপশনে ছিল প্রেমের আঘাত সহ্য করতে না পেরে এক তরুণীর আত্নহত্যা।মৌমিতা আপুকে নিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদের জড় উঠল।এবার সবার মনে হয় টনক নড়েছে।সবাই শাস্তি দাবি করছে।মনে মনে বেশ শান্তি হতে লাগল।এবার মনে হয় আপু বিচার পাবে।


কিন্তু না।আন্দোলন আর ঝড় ফেসবুকে তোলপার করলেও বাস্তবে তা প্রতিষ্ঠিত হয় নি।সময়ের সাথে সাথে সব তোলপাড় ও কমে গেল।আর সাদেক ভাই এর ও কোন শাস্তি হল না।সাদেক ভাই বেশ সুখে আছে।আর আপু?থাক আর বলার ভাষা নেই।কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।


আমরা এতটাই সভ্য সমাজে বাস করি এখানে ধর্ষিতার ছবি ভাইরাল হয় ধর্ষকের না।এমন সমাজে বাস করি যেখানে ভাইরাল নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত সবাই।কোন কিছু পেলেই সেটার সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই ভাইরাল করতে আমরা বেশ উস্তাদ।আর আমাদের প্রতিবাদের ধরণটাও ঘরে বসে ফেসবুকের মাধ্যমে করে দায়সাড়া হয়ে যাই।ভাইরাল নামক ব্যাধি থেকে সবাইকে বেড়িয়ে আসা উচিত।কারন এ ভাইরাল বিষয়টা সবার জন্য সবসময় হিতকর না ও হতে পারে।ভাইরাল করতে নিষেধ নেই তবে সেটা যেন হয় দৃষ্টান্ত মূলক ভাইরাল।যে ভাইরাল মানুষের প্রাণ নিবে না সে ভাইরাল হবে মানুষের জন্য হিতকর।আমার কাছে কেন জানি না মনে হয় আধুনিক যুগে আমরা সবাই এ রোগে আক্রান্ত। কোন ইস্যু পেলেই হল।কিন্তু সমাজের জন্য সেটা কতটা স্বাস্থ্যকর সেটা আর ভাবি না।এভাবে সমাজকে আরও হূমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছি।কিছু কিছু মানুষের মানসিক বিকাশেও সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।আমাদের উচিত নিজেদের এসব ব্যাধি থেকে বের করে নিয়ে আসা।


এমন আরও বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।