বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প | বাস্তব স্ট্যাটাস

বাস্তব জীবনের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প

 বোনকে বিয়ে দিয়েছি ২ বৎসর হল। আমার কেন জানি মনে হয় বোন টা সুখে নাই।  ওদের সংসারে একটা মেয়ে বাচ্চা। বয়স ৩ মাস।  যেদিন বোনের বাচ্চা হয় সেদিন গিয়েছিলাম রাতে ওদের বাসায়। সাদিকের মন খারাপ মেয়ে বাচ্চা। এরমধ্যে বোনের চেহারা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ,সাদিকের সত্যি  পছন্দ হয়েছে কি না জানি না।সাদিকের পরিবার রাজি ছিল। পণ দেয়া হয়েছিল অনেক টাকা। একদিন রাতে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে মেসেজ এল।ঠিকানা বোনের শশুর বাড়ির।

মেসেজে লিখেছে- 

- আপনি দ্রুত আসুন, আপনার বোনের বাড়ি।

আমি কিছু না ভেবে গাড়ি টা বের করে চলে গেলাম।রাত বেশি তাই  বাড়ির কাছাকাছি নিয়ে রেখে দিলাম।বোনের বাড়ির দিক যেতে কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছি।। আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরন শুরু হয়েছে। আমি শব্দ ছাড়ায় হেটে হেটে ওদের বাসার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, যাতে কেউ দেখতে না পায় এভাবে। বোনটা কাঁদছে।   আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ঘটনা কিছুই বুঝলাম না। অপরিচিত নম্বরটায় মেসেজ দিলাম, বোরকা পরিহিতা এক মেয়ে বের হয়ে আসল।আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি।সেখানকার কথা বললাম। মেয়েটা কিছুদুর এগিয়ে আসল। কি জানি ভেবে চলে গেল.....।  আমি  কিছু বুঝতে না পেরে পিছু হটতে যাব ঠিক তখনি একটা অটো আসল। 

 আমি আড়াল হলাম গাছের নিচে।  একটা মেয়েকে বোনের ভিতর বাড়ি থেকে বের করে আনা হল। অটোয় তোলা হল। অটো চলতে শুরু করল।আমি দ্রুত গাড়ির কাছে গেলাম ।  গাড়ি স্টার্ট করে অটোর পিছু পিছু চলতে শুরু করলাম। আমি ভাবছি সেটা যেন আমার বোন না হয়। অটো হসপিটালে গেল।ইমারজেন্সিতে নেয়া হল।

আমি নার্সকে অনুসরন করলাম,নার্স কেবিনে ঢুকে গেলাম। নার্সকে নিজের কার্ড দেখালাম, নার্স বিস্তারিত খুলে বলল।  পেটে পিঠে মাইরের দাগ,কোমড় থেকে পা পর্যন্ত মাইরের দাগ,পাশবিক নির্যাতন, বাম পা ইঞ্জ্যুরড।  সেই অপরিচিত নম্বর থেকে টেক্সট এল- 

- এভাবেই আপনার বোন আজ প্রায় তিনমাস থেকে নির্যাতিত। বোনকে বাঁচানোর পন্থা অবলম্বন করুন।

আমি:- কৃতজ্ঞতা জানবেন। 

আমি নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। মিমির এ পরিস্থিতির জন্য আজ আমিই দায়ী।।  

সাদিকের মিমিকে পছন্দ ছিল না।পারিবারিক জোড়াজুরিতে সাদিক  বিয়েতে রাজি হয়েছিল।সাদিক নিজ ইচ্ছায় ২য় বিয়ে করেছে নতুন করে।বিয়ের আগেও নেশা করেছিল সাদিক,ভাবছিলাম এসব বিয়ের পরে কেটে যাবে। মধ্যবিত্ত পরিবার বলে মিমিকে বেশি টাকা পণ দিয়ে হলেও উচু ঘরে বিয়ে দিয়েছিলাম যাতে মিমি সুখে থাকতে পারে।পণের টাকা কিছু বাকি রেখেছিলাম।যা দেয়া হয়নি।

কিন্তু মিমের ভাগ্যে সুখের বদলে আজ দু:খ খেলা করছে।মিমি বিষয়টা কখনই ক্লিয়ার করে নি আমাদের কারো কাছে।হয়ত সেই অপরিচিতা না জানালে আজও কিছু জানতাম না। 

মিমি সুস্থ হওয়ার পর মিমিকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলাম। পরিবারে সবাই অত্যন্ত বিষণ্ণ। আমি চুপচাপ আছি। 

দু মাস হল মিমিকে তার শশুর বাড়ি পাঠায় নি। মিমির শশুর শাশুড়ি এসেছিল আমাদের বাড়িতে। তারা যেতেও বলেছে,আমি না করেছি। নিজের বোনকে ত আর যমের কাছে পাঠাতে পারি না।। বন্ধুদের বলে সাদিককে ধরে নিয়ে আসলাম।অন্ধকার ঘর। কোমর থেকে পা পর্যন্ত বেধরক পিটালাম। লাইট মেরে দেখলাম কতটুকু কি অবস্থা। ডান পায়ে হাটতে পারে না। গাড়ি করে সাদিককে বাসার কাছে দিয়ে আসলাম গভীর রাতে।সাদিকের নতুন বউকে সাদিকের ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথে প্রণয় করে দিয়ে ভাগিয়ে দিলাম।  যাতে আমি নির্দোষ থাকি। 

এরপর আরো ৬ মাস কেটে গেল। সাদিক ৪ বার নিতে এসেছিল।পাঠায় নি আর।সাদিকে মা বাবা এসে অনেজ হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছে,ক্ষমা করেছি।বোনকে পাঠায় নি। ডিভোর্স করে দিয়েছিলাম  ওদের।


মিমির আজ আবার বিয়ে। সদ্য প্রনয় হয়েছে ফাহিমের সাথে,বিয়ের কাজও দ্রুত। মিমি আমার নিজের মায়ের পেটের সন্তান  না হতে পারে,তাকে পোষ্য তে এনেছিল বাবা।তাই বলে ত কোন নারীর উপর অত্যাচারকে মেনে নিতে পারি না।।


গল্প: আপন  নীড়


এমন আরও বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।