গল্প: ভয়ংকর চাহনি | রহস্যময় ঘটনা ২০২৪

রহস্যময় গল্প

রহস্যময় গল্প

গল্প-ভয়ংকর চাহনি

পর্ব-০১

- প্লিজ আমার শাড়ী খুলবেন না।সর্বনাশ করবেন না আমার প্লিজ।


কে শুনে কার অনুরোধ। মিমকে একা পেয়ে সব বন্ধুরা এক সাথে ধর্ষণ করার জন্য রুমে বন্দি করেছে। মিম চিল্লাচ্ছে।কিন্তু লাভ নেই। মেহেদি নিজে তার প্রেমিকাকে বন্ধুদের হাতে তুলে দিয়েছে।


ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া মিম আজ বিপদে।এতো কিছু বুঝেনা।সহজ সরল এক মেয়ে। মেহেদি নামক একটা ছেলেকে পছন্দ করতো।কিন্তু কখনো কি ভেবেছিলো? এইভাবে প্রেমিক তার বন্ধুদের হাতে তাকে তুলে দিবে? আজ মিমের বার্থডে। উপহার দিবে বলে বন্ধুর বাসায় এনেছে মেহেদি। আর শুভ এবং রাকিবকে দিয়ে ধর্ষণ করাচ্ছে।


পাশের হোস্টেলের একটা রুমে আকাশ অনুরোধ করছে।

- প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে।আমি আজ থেকে আপনাদের সব কথা শুনবো। কিন্তু আমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করবেন না প্লিজ।


আকাশ এইবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে। সুমাইয়া এবং আখি আকাশকে রুমে বন্দি করেছে নিজেদের যৌনতা মিঠাবে বলে। আকাশ গ্রামের ছেলে।শহরের ভাব এখবো বুঝেনি।কিন্তু সুমাইয়া এবং আখি কয়েকদিন ধরেই একটা বলদ খুঁজতেছে। অর্থাৎ যাকে দিয়ে নিজের চাহিদা পূরণ করবে।সুমাইয়া কল দেয়, মেঘা,রশনী আর সাদিয়াকে।তাদের কে ও আসতে বলেছে।আজকে সবাই মিলে আকাশকে নিজেদের কাজে লাগাবে।


অন্যদিকে মেহেদির গফ মিম অনেক রিকুয়েস্ট করেই যাচ্ছে। ছেড়ে দেওয়ার কোনো নাম নেই। মেহেদি, রাকিব এবং শুভ মিমকে ফ্লোরে শুইয়ে দেয়। মেহেদি মিমের হাত নিজের কবজায় আনে।আর শুভ মিমের মুখ চেপে ধরে। রাকিব মিমের শাড়ির ভাজ খুলতে খুলতে পুরো শাড়ী ছিনিয়ে নেয়। হিংশ্র চাহনিতে তারা মিমের দিকে তাকিয়ে আছে।একটু পরেই শুরু করবে।


এদিকে আকাশ মেঘা,রশনী,সাদিয়া, আখি আর সুমাইয়ার হাতে আটক পড়েছে। ওরা আকাশকে বেধে ফেলে রেখেছে খাটে। আকাশের হাত পা বাধা। এমনিও রোগা পাতলা। তাই শক্তি খাটাতে পারেনি। মেঘা আকাশের শার্ট খুলে ফেলে।বিভিন্ন অঙ্গিভঙ্গি করে আকাশের প্যান্টাও ছিনিয়ে নেয়।আকাশ চিৎকার দিতে চাইলে তারা আকাশের মুখে নিজেদের আকাশের শার্ট ঢুকিয়ে দেয়।


দুই রুমে দুই কাহিনী। এক জায়গায় ছেলেরা ধর্ষণ করছে মেয়েকে।অন্য জায়গায় মেয়েরা ধর্ষণ করছে ছেলেকে। চলুন পরিচয়টা জেনে আসি।


মেহেদি, শুভ আর রাকিব হচ্ছে কোটিপতি বাবাদের বিগড়ে যাওয়া ছেলে। মানে টাকার গরমে তারা যা ইচ্ছে করতে পারে।যেমন এখন নিজের গফকে ধর্ষণ করছে ফ্রেন্ডদের দিয়ে।নিজেও সামিল হয়েছে।


সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আখি আর সাদিয়াও ধনী ব্যাক্তিদের সন্তান।মেয়ে পড়াশুনা করবে,তাই ছেড়ে দিয়েছে স্বাধীন করে। হুম,স্বাধীন তো আছেই।নইলে কি ছেলেকে রেপ করা যায়?

কলেজেও বেশ নামডাক ওদের। মেয়ে হয়েও ছেলেদের উপর বেশ অত্যাচার করে।মেয়ে বলে অনেকে সম্মান দিয়ে কিছু বলেনা। কিন্তু মনে মনে যেমন সবাই ভয় পায়,আবার তেমনি ঘৃণা করে।


এদিকে আকাশকে খাটে ফেলে একের পর এক কুকর্ম চালাচ্ছে সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আখি আর সাদিয়া। আকাশ অনিচ্ছাকৃত চোখ বন্ধ করে সয়ে যাচ্ছে।


অন্যদিকে মিমকে পুরো নগ্ন করে ধর্ষন চালাচ্ছে তারা। মিম নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে।অভাগীর মতো এতক্ষণ অনেক ঝড় সয়ে নিয়েছে।কিন্তু মেহেদি, শুভ আর রাকিব মিমকে ছেড়ে দিবেনা।জানে ছেড়ে দিলে মিম যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়?শুভ বলল,

- কিরে মেহেদি। তোর গফ তো একটা মা*। তুই একা কিভাবে সামলাইতি।

- যাই বলিস।এখন এই আপদের ব্যবস্থা করতে হবে।নয়তো বাহিরে গিয়ে মামলা করবে।

- যা বলেছিস। কিন্তু কিভাবে কি করবি?

- মেরে ফেলবি?

- কিহ,এইটা ঠিক হবে?

- বাচতে তো  হবে।

- ওকে,বালিশ দে। তাকে পরকালে পাঠাচ্ছি।


এদিকে আকাশকে দিয়ে কাজ চালাচ্ছে সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আখি আর সাদিয়া। আকাশকে জোর পূর্বক ট্যাবলেট সেবন করিয়ে উত্তেজিত করে তারা।

৪০ মিনিট বাদে ওরাও শান্ত হয়। নিজেদের বাচাতে হবে। করতে হবে খুন।তারাও প্লানিং করলো।আকাশকে খুন করবে।


রাত,২ টা বাজে।

মিমের লাশ নিয়ে বের হয় মেহেদি, শুভ আর রাকিব।

এদিকে সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আখি আর সাদিয়া আকাশের লাশ নিয়ে আসে। কলেজের পিছনেই একটা ময়লার ড্রেন আছে। মেঘা আকাশের লাশ ফেলার সময় দেখে,আরো একটি লাশ। মেঘা বলল,

- ব্যাপার কি। এই লাশ কার।

- আমাদের কলেজেরই মনে হচ্ছেনা?

- হুম। মিম নামের মেয়েটার মতো।

-এইটা মিমই। বাদ দে। চল এই আপদকে ফেলে দে। যেতে হবে।


সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আখি আর সাদিয়া চলে যায় নিজেদের হোষ্টেলে। আখি নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলে।এখন গোসলের সময়।শরীর নাপাক আছে। বাথরুমের দরজা খুলতেই আখি দেখে,আকাশ বাথরুমের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে।উলঙ্গ।


এদিকে মেহেদি গোসল করে বের হয়ে এসেছে। আর তখনি সে অনুভব করলো,তার লজ্জাস্থানে লিঙ্গ নেই। 


মেহেদি চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে শুয়ে যায়।নিজের দেহের এমন পরিবর্তন কেও মেনে নেবার নয়। রুমমেট শুভ আর রাকিব দৌড়ে আসে তার কাছে। এসে দেখে মেহেদির গামছা নেই,সাথে সেটাও নেই। ওরাও ভয়ে চিৎকার দিতে লাগলো। ধীরে ধীরে মেহেদির দেহ পচা শুরু করে। হাত পা ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। মেহেদি যেমন চিৎকার দিচ্ছে,তার সাথে শুভ আর রাকিবও চিৎকার দিতে লাগলো। হোস্টেলের বাকিরাও যার যার রুম থেকে দৌড়ে আসে। মেহেদি ফ্লোরে শুয়ে কাতরাচ্ছে।শরীর পচতে থাকে ওর। হাতের মাংস গুলো ধীরে ধীরে পচা শুরু করে। মেহেদি সহ্য করতে পারেনা। সবাই ভয়ে আতঙ্ক হয়ে আছে। পচতে পচতে অবশেষে মেহেদি স্থির হওয়া শুরু করেছে।মুখের মাংস ও ঝরতে লাগলো তার।কাঁপতে কাঁপতে পুরো স্থির হয়ে যায়।পুরো রুম নিস্তেজ। শুভ একটু একটু এগিয়ে মেহেদির দিকে আসে। এসে ওর  পাশে বসে। এরপর পচা হাতের রগ স্পর্শ করতেই শুভ পিছু হাটতে লাগলো।সবাই আবার চিৎকার দিতে লাগলো।মেহেদি আর নেই।মারা গেছে সে।


অন্যদিকে আখি ওয়াশরুমে আকাশের জিন্দা লাশ দেখেই আবার ওয়াশরুম ত্যাগ করে।দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করতেই আখি উপলব্ধি করে,হটাৎ দরজা বন্ধ হয়ে যায়।আখি চিৎকার দিতে যাবে,তখনি লাইট অফ হয়ে যায়।রুমের বাহিরের লাইটের আলোয় আখি বুঝতে পারে,তার রুমের কোনায় কেও দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন আগে যেহেতু আকাশকে দেখেছে, সেই হিসেবে এইটাও আকাশ হতে পারে। আখি বুঝতে পারেনা,মৃত ব্যাক্তি কিভাবে ফিরে আসবে।আখি ভয়ের মধ্যে বলতে লাগলো,

- আকাশ,যা হয়েছে হয়ে গেছে।আমি ক্ষমা চাচ্ছি।আমাকে মাফ করে দাও।আর করবোনা আমরা এমন।দয়া করে ছেড়ে দাও।

আখির কথার পর রুমের কোনায় থাকা লোকটি জবাব দিলো।তবে জবাবটা কোনো ছেলের নয়। একটা মেয়েলি কন্ঠে আসতে লাগলো।

- কিসের মাফ।আমি মারা গেছি।আমাকে তোমরা মেরে ফেলেছো।চলো,যে কারণে মেরেছো,সেই কাজটাই হোক।এদিকে আসো।আমার কাছে আসো।

- আকাশ,তোমার কন্ঠ মেয়েদের মত কেন? আর তুমি মারা গেলে এসেছো কিভাবে?

আর কোনো জবাব আসেনি। হটাৎ আখির জামা খোলে যায়।নিজে থেকেই জামা খোলা কোনো মামুলি কাজ নয়।আখি চিৎকার দিয়ে দরজার কাছে চলে আসে। এমন সময় আখির বাকি জামাও নিজে নিজে খুলে যায়।আখি আরো চিৎকার দিতে লাগলো।তখনি দরজা হুট করে খুলে গেছে।আখির চিৎকারে এতক্ষণে হোষ্টেলের সব মেয়েরা দরজার সামনে হাজির হয়ে গেছে। দরজা খুলতেই আখিকে খালি গায়ে দেখে সবাই হাসতে শুরু করে।আখি রুমের ভিতরেও আবার ঢুকার সাহস পায়নি। সবাইকে ঠেলে ভিড়ের ভিতর দিয়ে দৌড়াতে থাকে। সবাই আখির দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।কেও কেও ভিডিও করা শুরু করেছে।আখি না পেরে,দৌড়ে ছাদের দিকে চলে যেতে লাগলো। ভিড়ের ভিতর সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আর সাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে।তারাও অবাক হয়ে গেছে।এমন অর্ধউলঙ্গ হয়ে আখি দৌড়াচ্ছে কেন। আখি সোজা সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে যায়।আখির এমন দৌড় ফেসবুক লাইভে চলছে। কলেজের বাকি মেয়েদেরকে আখি কম জ্বালায় নি। প্রতিদিন একটা না একটা মেয়েকে আখি সহ বাকিরা র‍্যাগিং করাতো। জেদটা সবার মনেই ছিলো। সুযোগে সৎ ব্যবহার সবাই করে।ফেসবুক লাইভে আখির এই দৃশ্য অল্প কিছুক্ষনে ভাইরাল হয়ে গেছে। কেও লাইভ ভিডিও ডাউনলোড করে ইয়্যুটুইউবে আপলোড দিতে লাগলো।টাইটেল হচ্ছে," একি করলেন কলেজের পড়ুয়া এক ছাত্রী"। 


এদিকে সবাইকে এড়িয়ে আখি সোজা ছাদে চলে যায়। ছাদের দরজা বন্ধ করে দেয় আখি।আখির পিছন পিছন সুমাইয়া,মেঘা,রশনী, আর সাদিয়া চলে আসে। সাথে বাকিরাও আসতে লাগলো।সবাই ছাদের দরজা পেটাচ্ছে। আর এদিকে আখি দরজা খোলার নামই নিচ্ছেনা। ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় পাশের হোস্টেল থেকেও ছেলেরা দৌড়ে আসে। স্যার,দারোয়ান আর রাস্তার অনেক ছেলেরাও আসে। গাড়ির শব্দ শুনা যায় মাঠে,হয়তো সাংবাদিকও চলে এসেছে। আখি ছাদের দরজা বন্ধ করে আছে। সবাই ডাকছে,কিন্তু সাড়া নেই। ছেলেরা এসে দরজা ভাঙ্গার জন্য প্রস্তুতি নেয়।পিছনে শত শত ক্যামেরা প্রস্তুত, দরজা খোলার পর আখির অর্ধউলঙ্গ দেহ দেখানোর জন্য। লাইভ ভিডিও চলছে পুরো বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়াতে। ছেলে মেয়ে সবাই ঝট বেধে দেখছে কি হতে যাচ্ছে।এদিকে সাংবাদিকরা টিভিতে লাইভ শুরু করেছে।রাতারাতি এই ঘঠনাটাই ছড়িয়ে পড়েছে। 

ছেলেরা দরজায় আঘাত করতে করতে ভেঙ্গে ফেলে।সবাই আগ্রহ নিয়ে ছাদের উপর উঠতে লাগলো।হাজার হাজার মানুষ সিড়িতে লাইন বেধেছে।ছাদের মধ্যে সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখে,ছাদের উপরে পিলারের যে রড গুলো দাঁড়িয়ে আছে।সেই রড আখির পিঠ দিয়ে ঢুকে পেট দিয়ে বের হয়ে গেছে।পরনে গুধু ছোট ঝিমস।আর পুরো দেহে কিছু নেই তার। মৃত আখির এই দেহ, দেখে যাচ্ছে পুরো দেশ। মুখ দিয়ে রক্ত যাচ্ছে তার।গায়ের মধ্যে হাজারো নখের চিহ্ন।হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে।কিন্তু কে বা কারা মেরেছে,তা রহস্য রয়ে গেছে।


ছাদে কেও ছিলোনা।তবে কি এইটা আত্মহত্যা?  কিন্তু নখের দাগ কার? আর আখিকে কে উলঙ্গ করেছে? একই সময়ে পাশের হোস্টেলে মেহেদি নামক ছেলেটা খুন। এই খুনের যোগসূত্র এক নাতো? এরকম হাজার হাজার প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে স্ট্যাটাস হচ্ছে ফেসবুকে। কেও কেও পেজে আপলোড দিচ্ছে," আখি হত্যার বিচার চাইতে হলে ডান পাশে লাইক দিন। এরকম সচরাচর কাহিনী তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু সুমাইয়া,মেঘা,রশনী,আর সাদিয়া ব্যাপারটা অন্যভাবে নেয়। সাদিয়া বলল,

- এইটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। আখির বডি পোস্টমর্টেম করার পর অবশ্যই বুঝবে সে সেক্স করেছিলো। আকাশের লাশ তখন এমনিতেই বের হয়ে যাবে। আকাশের সাথে তানিয়ার কি হয়েছে, তা জানার জন্য আকাশের তথ্য শুরু হবে।এতে আমরাও ধরা খেতে পারি।কারণ আমাদেরও ডিএনএ ধরা খেতে পারে।

মেঘা বলল,

- এইখানে সি আই ডি এর ডক্টর আবিশেক আছে বলে তো মনে হয়না।আর এইভাবে নাও হতে পারে।যদিও মানলাম হয়েছে।কিন্তু এতে কি হবে? আমরা আকাশের সাথে যৌনমিলন করেছি এইটাই তো।আখির মৃত্যুর অপবাদ তো আর পাবোনা।

- কিন্তু আকাশের মৃত্যুর অপবাদ তো পাবো।সেও তো মৃত।

-আকাশের লাশ ড্রেনে ফেলেছি।এতক্ষনে ভাসতে ভাসতে নদীতে চলে গেছে। কিছু হবেনা।কিন্তু সাদিয়া একটা ব্যাপারে কনফিউজড আছি। আখি হটাৎ এমন করলো কেন? তার রুমে কি কেও ছিলো?

- সেটাই তো মাথায় ঢুকছেনা আমার।

রশনী বলল,

- আচ্ছা আত্মার ব্যাপার নেইতো এখানে?

- তুই এই ভয় নিয়েই থাক।এসব কিছু হয় নাকি ভিতুর ডিম।

- আরেহ,হতেও তো পারে।চল গুগোল ঘেটে দেখি।আত্মা হাজির করাতে পারি কিনা। এতে উত্তরও পাবো,আর আত্মা আছে কি নেই সেটাও জানবো।

সুমাইয়া বলল,

- আচ্ছা শুন,আমার জানামতে এক জ্যোতিষী আছে। সে এসব ভূত প্রেতের কাজ করে।তাকে ডাকি চল।

- সে সব জানতে পারলে?

- কিছুই হবেনা। আমরা তার কাষ্টমার।প্রকাশ করবেনা।

- ওকে,কাল চলি।এখন গেলে সন্দেহ বেড়ে যাবে অনেকের। 


কথাবলা শেষ করে সবাই ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। সুমাইয়া,মেঘা,রশনী,আর সাদিয়া আজ এক সাথেই ঘুমাচ্ছে।মেঘা সবার কিনারায় শুয়েছে।চোখ লেগে আসতে যাবে,তখন মেঘার কানে একটা শব্দ আসতে লাগলো।স্পষ্ট আখির কন্ঠ।ওয়াশরুম থেকে আখি কান্না করে বলছে,

- মেঘা,বোন আমার।এদিকে আয়না একটু।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। মেঘা বোন? আমাকে সাহায্য কর।আমি আর পারছিনা এই যন্ত্রণাময় কাজ করতে।

কথাটা শুনেই মেঘা লাফিয়ে উঠে যায়। পিছনে তাকিয়ে দেখে সবাই ঘুমে তলিয়ে গেছে।এদিকে ওয়াশরুম থেকে আবার শব্দ এলো,

- মেঘা আমাকে বাচা বোন।আমাকে মেরে ফেলবে এরা।

মেঘা আর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে যায় ওয়াশরুমে। দরজাটা খুলতেই মেঘা দেখে,আকাশ উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এইটা দেখেই মেঘা গলা ফাটিয়ে এক চিৎকার দেয়।


এদিকে শুভ আর রাকিব ভয়ের মধ্যে আছে প্রচুর। তাদের চোখের সামনে এতো বড় ঘঠনা ঘটেছে।শুভ অবশেষে চিন্তা করলো, গ্রামের বাড়িতে থাকা তার একটা ফ্রেন্ডকে জানাবে। সে রহস্য নিয়ে ব্যস্ত থাকে সবসময়। নাম রিয়াজ। ছোটবেলা তার সাথেই কাটানো।কিন্তু রিয়াজ গ্রামের এক কলেজে ভর্তি হয়।আর শুভ চলে আসে ঢাকায়।অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো,রিয়াজকে জানাবে এইটা।যদি সে তাদের বাচাতে পারে।কারণ মেহেদির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা যাতে তাদের সাথে না হয়।


এসব ভেবে শুভ রুমের বাহিরে আসে।এসেই দেখে, মেহেদি একটা ছুরি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ প্রচণ্ড লাল।মুখ পচাগলা হয়ে আছে।মেহেদির চোখ গুলো খুবি ভয়ংকর। এক ভয়ংকর চাহনি তার চোখে।শুভও জোরে এক চিৎকার দিয়ে উঠে।


ভয়ংকর চাহনি...👽

পর্ব-০২


মেহেদি একটা ছুরি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ প্রচণ্ড লাল।মুখ পচাগলা হয়ে আছে।মেহেদির চোখ গুলো খুবি ভয়ংকর। এক ভয়ংকর চাহনি তার চোখে।শুভও জোরে এক চিৎকার দিয়ে উঠে।


এদিকে মেঘা ওয়াশরুমে আকাশকে দেখে পিছু দৌড়াতে চেষ্টা করলো।আখির গলার কন্ঠে আকাশ কিভাবে ডাকতে পারে।মেঘা পালাতে চেয়েও পারেনি যেতে।পা দুটো যেনো কেও শক্ত করে বেধে দিয়েছে।মেঘা জোরে এক চিৎকার দেয়। মেঘার চিৎকারে জেগে যায়, সাদিয়া,রশনী,আর সুমাইয়া।ওরা বিছানা ছেড়ে সবাই ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে আসে।ওয়াশরুমে আসতেই ওরা দেখে মেঘার বুকে কেও শতশত ছুরির আঘাত করে রেখেছে।কেও যেনো মেঘার বুকে ছুরি মেরে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে মেঘার বডি। মেঘার এমন অবস্থা দেখে রশনী,সাদিয়া আর সুমাইয়া চিৎকার দিয়ে উঠে।তাদের চিৎকারের শব্দ পুরো গার্ল হোস্টেল কাপিয়ে দেয়।সবাই বরাবরের মতো তাদের দরজার সামনে চলে আসে। ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দহীন নেই। দরজায় বাহির থেকে আঘাত করতেই দরজা খুলে যায়। সবাই রুমের ভিতর ঢুকে দেখে,সবাই ফ্লোরে পড়ে আছে। কারো হাত-পা কাটা।কারো শরীর থেকে মাথা আলাদা। কারো বুকের উপর এলোপাথাড়ি ছুরির আঘাত।


এদিকে শুভ দরজার বাহিরে মেহেদিকে দেখে আবার দৌড়ে রুমে ঢুকে যায়। এরপর রাকিবকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে টেনে নামায়। শুভ কিছু বলার আগেই রাকিব বলল,

- আরেহ,গার্ল হোস্টেল থেকে কিসের হৈচৈ আসছে? চল জলদি গিয়ে দেখি।

শুভ আর কিছু না বলে রাকিবের কথায় সায় দেয়।রাকিব দরজা খুলে বের হয়।শুভ খেয়াল করে দরজায় মেহেদির আত্মা নেই।ওরাও সবার মতো দৌড়ে যায় গার্ল হোস্টেলে। রাকিব আর শুভ হোস্টেলে যেতে যেতে ওখানে লোকের ভিড় জমে গেছে। শুভ আর রাকিব লাশগুলো এক পলক দেখে আবার ফিরে আসে।এতো ভয়ংকর আর হিংশ্র কে হতে পারে।প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।পুলিশ হাজারো তদন্ত চালিয়ে ফলাফল শূন্য পাচ্ছে। কেস বন্ধ হয়ে যায় প্রমানের অভাবে।  এইটা নতুন কিছু নয়। এরকম হাজার কেস বন্ধ হয়ে এসেছে।কেও টাকার জোরে বেচে যায়,কেও পাওয়ার খাটিয়ে স্বাধীন হয়ে যায়। সঠিক বিচার পায়না অনেক অসহায় মানুষ।ধর্ষণের বিচার হয়না কোটিপতি বাবার ছেলেদের।খুনের বিচার হয়না পাওয়ার হাতে থাকা লোকদের।আদালত যেনো মনে মনে বলে," বিচার চাহিয়া লজ্জা দিবেন না"।


তাদের জন্য এরকম কেও নিশ্চয় দরকার।যারা অদৃশ্য, যারা ঝাপসা হয়ে থাকে।যাদের স্পর্শ করার সুযোগ থাকে কিন্তু করতে পারেনা।তারা ছায়া।তারা অন্ধকার জগতে কালোমানব।হোক তার সাইকো।বিচার তো করবে সঠিক।

- এই রাখ তো? কিসব বলে যাচ্ছিস। কথার আগামাথা কিছুই নেই তোর।তোর এই রহস্যময় কথাগুলো সব সময় আমার মাথার কোনদিক দিয়ে যেনো যায়।

- কেন। খারাপ কি বললাম।তোর হোস্টেলে মেহেদির সাথে যে কাজটা হয়েছে।হতে পারে সেটা কোনো এমনি মানব।যে আড়াল থেকে বিচার করে। মেহেদি অপরাধী ছিলো।সাথে তোরাও অপরাধী। তোদের সাহায্য করলে তো আমিও ফেসে যেতে পারি।

- রিয়াজ, এইভাবে কেনো বলছিস। তোকে গ্রাম থেকে এখানে এনেছি এসব বলার জন্য? আমরা মানছি আমাদের ভুল হয়েছে।কিন্তু মেহেদি তো ভুলের মাশুল দিয়েছে।আমার মনে হয় তুই আমাদের বাচাতে পারবি।

- আচ্ছা? আজ অব্দি আমাকে কোনো ভূত প্রেত বশ করতে দেখেছিস? আমি কি করে তোদের বাচাবো? এখানে এসে তো এখন আমার নিজেরি ভয় হচ্ছে।আমি জীবন নিয়ে যেতে পারবো কিনা কে জানে।

- তোকে ছোট বেলা থেকে চিনি আমি।খুবই সহজ সরল, কিন্তু রহস্যময়।তোর ছোটবেলার কথা মনে আছে? একটা পাখি তোর সাথে কথা বলেছিলো? তুই তোর আম্মুকে বলিস নি। সে পাখি তোকে বলেছিলো দরকার হলে ডাক দেওয়ার জন্য। আজ তো আমরা বিপদে।তাকে একটু স্বরণ কর ভাই প্লিজ।

-  ওহ শিট! এই কথা আমার মাথায় আগে কেনো আসেনি। তাহলে তো সেদিনের রহস্য খুজে পেতাম।

- কিসের রহস্য?

- কয়দিন আগে আমার সাথে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে।খুব অদ্ভুত ঘটনা। একটা অদ্ভুত মেয়ের সাথেও দেখা হয়।মেয়েটি অনেক রহস্যময়ী। 


- তো আমাকে খুলে বল? কি হয়েছিলো?

- বাদ দে না। এখন শুন। তোদের ঝামেলাটা নিয়ে কথা বল। গুগোল সার্চ করি চল।কোনো এক কবিরাজের কাছে গিয়ে আমরা মেহেদির আত্মাকে হাজির করাবো।এরপর তাকে জিজ্ঞেস করবো তার ইচ্ছে কি।সে কেনো ফিরে এসেছে।আর কেনো এসব করছে।

- এরকম কবিরাজ আদৌ কি আছে?

- আলী বাবা নামক এক জ্যোতিষী আছে।আমি উনার পেজ ফলো করি সব সময়।চল উনার কাছে যাই।যতদূর জানি গাজীপুর চৌ-রাস্তার উত্তরে উনার বাসা। গিয়ে কাওকে জিজ্ঞেস করে নিবো।

- তো এখুনি চল?

- কি বলিস। রাত ৮ টা বাজে এখন।

- এদিকে জীবনের ১২ টা বাজতে চলছে। চল।

- ওকে।


রিয়াজ, রাকিব আর শুভ রওনা হয় গা

জীপুর। যানজট অতিক্রম করে প্রায় ৩ ঘন্টা পর তারা গাজীপুর পৌঁছায়। রাত ১১:৪৭ মিনিট। অনেক কষ্টে তারা আলী বাবার ঠিকানা বের করে।বাসায় ঢুকতেই আলী বাবার এক কর্মচারী দরজা খোলে। এরপর রিয়াজ আলী বাবার সামনে গিয়ে বলল,

- ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এতো রাত বিরক্ত করার জন্য।আসলে আমি চাইনি এতো রাতে আসতে।কিন্তু পরিস্থিতি বাধ্য করছে।ক্ষমার চোখে দেখবেন।

- তোমার আসার কথা আমি আগেই জানতাম। ১০টায় ঘুমিয়ে যাই আমি।কি হয়েছে তোমাদের সব জানি আমি। বসো নিছে। 

রিয়াজ, শুভ আর রাকিব ফ্লোরে বসে পড়ে।অবাক হয়ে যায় তারা। এই আলী বাবা মিছে কোনো জ্যোতিষী নয়,তা বুঝা যাচ্ছে।কর্মচারী একটা মোমবাতি জ্বালায়।এদিকে লাইট অফ করে দেয় আরেকজন।রুম অন্ধকার। একটা মোমবাতির আলোয় রুমটা কোনোভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে। উনি চোখ বন্ধ করে রিয়াজদের উদ্দেশ্যে বলল।

- মোমবাতি নিভে গেলে পুরো রুম অন্ধকার হয়ে যাবে। এই রুমে মোট ৩ টা আত্মা আসবে। 

উনার কথা শুনে রিয়াজ বলল,

- ৩টা কেনো? আমরা তো শুধু মেহেদির আত্মার সাথে কথা বলতে চেয়েছি।

- আত্মারা আসলে বুঝে যাবে তোমরা। এখন সবাই সবার হাত ধরো শক্ত করে। আর হ্যা,আত্মার সাথে যেকোনো একজন কথা বলবে। 

- আমি নিজেই বলবো সমস্যা নেই।

- ঠিক আছে।


আলী বাবা বিড়বিড় করে কিছু পড়তে শুরু করে।রিয়াজ, শুভ আর রাকিব আলী বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।রুম ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করেছে।পরিস্থিতি বদলানো শুরু হয়েছে। এইবার সবার ফোকাস হচ্ছে মোমবাতি। মোমবাতি যেকোনো সময় নিভে যেতে পারে।আর রিয়াজের প্রশ্নের ঝুড়ি ছুড়তে হবে তখন।দেখতে দেখতে টুপ করে মোমবাতি নিভে যায়। রিয়াজ কিছুই দেখতে পায়না।তখনি রুমের কোনো কোনা থেকে মেহেদির গলার আওয়াজ ভেসে আসলো।

- আমাকে ডাকা হয়েছে কেনো?

রিয়াজ মেহেদির গলা শুনেই উত্তর দিলো,

- আপনার সাহায্য দরকার আমাদের।যদি আপত্তি না থাকে তাহলে বলবো?

- বলতে পারো।

- আপনি তো মারা গেছেন।তবে ফিরে এলেন কিভাবে?

- তোমরা ডেকেছো তাই।

- কিন্তু শুভ আর রাকিবকে বিরক্ত কেনো করেছেন?

- ওটা আমি নই।আমি কাওকে বিরক্ত করছিনা। মৃত্যুর পর কেও ফিরে আসতে পারেনা।আত্মাদের ডাকতে হয়।তারপর তারা হাজির হয়।

- তবে ওরা কাকে দেখেছে?

- তা একটা রহস্য। তোমাকে খুঁজতে হবে সেটা। 

- আত্মাদের আমি কিভাবে খুঁজবো।

- তারা আত্মা নয়। মৃত মানুষ কখনো ফিরে আসেনা। যারা আমাদের রুপ নিয়ে এসব করছে,তাদের খুঁজতে হবে তোমাকে।একটা কথা বলি তোমাকে।এই সব কিছু কারো ইশারায় হচ্ছে।আমাদের মাথায় ধর্ষনের চিন্তাটা আমাদের ইচ্ছেতে নয়।তা কারো ইশারায় হয়েছে।এখন যা কিছু হচ্ছে,সব তার ইচ্ছেতে হচ্ছে। আর আসল কথা এইটাই।তোমার জন্ম সাধারণ ভাবে হয়নি,আর তুমি সাধারণ কেও নাহে।তুমি এমন একজন লোক,যে ছদ্মবেশী এক ছায়া। 

- আমি আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না।

রিয়াজের কথায় আর মেহেদি উত্তর দেয়নি।এইবার একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।

- আমাকে কেনো ডাকা হয়েছে।

- আপনি কে আবার।

- আমি আখি।কয়দিন আগে মৃত্যু হয়েছে আমার।

- আপনি এসেছেন কেনো? আপনাকে দিয়ে কি করবো।

- কারণ তোমার সাথে জড়িত আমরা। তোমার সূত্র থেকে আমাদের জন্ম। 

- কিসের সূত্র?

- তোমার মুখে কোন কথাটা বেশি বিরাজ করে? 

রিয়াজ কিছু বলতে চেয়েও,বলতে পারেনি।অটোমেটিক তার মুখ থেকে সেই প্রবাদটা বের হয়ে যায়।

- কিছু মুহূর্তে এমন কিছু ঘটনা সামনে ভেসে উঠে,তা বুঝে নিতেই লাগে রহস্য। রহস্য দিয়ে শুরু কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে রহস্য দিয়েই।আবার রহস্য দিয়ে চলতে থেকে,হটাৎ রহস্য নিয়েই শেষ হয়। রহস্য নিয়ে শেষ হওয়া ঘটনা কোনো একদিন আবার রহস্যরুপে শুরু হয়। আবার চলতে থাকে রহস্য।নিয়তি এমনই।শেষ থেকে শুরু আর শুরু থেকে শেষ করে।তার অস্তিত্ব নামক একটা শব্দ হচ্ছে রহস্য।

- এইটাই।এই সূত্র থেকে আমাদের জন্ম।আর সূত্রের জন্মদাতা তুমি নিজেই।এই সব কিছু আমাদের নয়, বরং কারো ইশারায় হচ্ছে।

- কিন্তু সে কে? কে এমন ইশারা করছে।নাম কি তার? 

আগের মতো এইবারও মেয়েলী কন্ঠে অন্য আত্মা জবাব দিচ্ছে।

- আমাকে ডাকা হয়েছে কেন?

- আপনি কে আবার।

- আমি মিম। মেহেদি, শুভ আর রাকিব আমাকে ধর্ষণ করেছিলো।

- ও আচ্ছা! তারমানে সব আপনার ইশারায় হচ্ছে?

- না। আমার ধর্ষণটাও কারো ইশারায় হয়েছে। প্রতিশোধ আমি নিতে পারবোনা।কারণ আত্মারা প্রতিশোধ নিতে আসেনা। তুমি এগিয়ে যাও। তোমার বাড়িতে সব রহস্য লুকিয়ে আছে। তুমি চেষ্টা করো। আমাদের সাথের ঘটনা কিছু নয়।এইটা ছোট একটি নমুনা।  সব কিছু তোমাকে ইঙ্গিত করে হচ্ছে। তুমি মানুষ নয়। মানুষ রুপী এক ছায়া।

- কিন্তু কার ইশারায় হচ্ছে বলবেন তো।


আর কোনো জবাব আসেনি। হটাৎ আলী বাবা এক চিৎকার দেয়। সাথে সাথে কর্মচারী লাইট অন করে। লাইটের আলোয় রিয়াজ,রাকিব আর শুভ যা দেখেছে,তা কাল্পনাতেও ছিলোনা তাদের। আলী বাবার দেহে কেও নখের আছড় দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে।উনার নাক থেকে রক্ত ঝরছিল।  অনেক কষ্টে উনি বলল,

- রিয়াজ,তুমি জাগাও তোমার ভিতরের সত্বা টাকে।সে ঘুমিয়ে আছে। যতদিন সে ঘুমিয়ে থাকবে,ততদিন বিপদ বাড়তে থাকবে। বাচাতে হবে সবাইকে।তুমি জগিয়ে তোলো।জাগিয়ে তোলো তাকে।

বলেই আলী বাবা ফ্লোরে পড়ে মারায় যায়। ওরা তিনজন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।কর্মচারী রিয়াজের উদ্দেশ্যে বলল,

- আলী বাবা আজ সন্ধ্যা ৭ টায় মৃত্যুবরণ করেছে। কবর দেওয়ার সময় তিনি জেগে উঠেন হটাৎ করে।আর বলেছে আপনারা আসবেন,আর আপনাদের কাজ করে সে আবার মৃত্যুবরণ করবে।

- কিহহ,কেও জানেনা এইটা?

- না।উনি নিজেই বলেছিলো।উনি মোট দুইবার মৃত্যুবরণ করবে।আর প্রথম মৃত্যুর সংবাদ যেনো আমরা কর্মচারীরা ছাড়া কেও না জানে।তাই গোপন রেখেছিলাম আমরা।


ভয়ংকর চাহনি...👽

পর্ব-০৩ ও শেষ 


- রিয়াজ,তুমি জাগাও তোমার ভিতরের সত্বা টাকে।সে ঘুমিয়ে আছে। যতদিন সে ঘুমিয়ে থাকবে,ততদিন বিপদ বাড়তে থাকবে। বাচাতে হবে সবাইকে।তুমি জগিয়ে তোলো।জাগিয়ে তোলো তাকে।

বলেই আলী বাবা ফ্লোরে পড়ে মারায় যায়। ওরা তিনজন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।কর্মচারী রিয়াজের উদ্দেশ্যে বলল,

- আলী বাবা আজ সন্ধ্যা ৭ টায় মৃত্যুবরণ করেছে। কবর দেওয়ার সময় তিনি জেগে উঠেন হটাৎ করে।আর বলেছে আপনারা আসবেন,আর আপনাদের কাজ করে সে আবার মৃত্যুবরণ করবে।

- কিহহ,কেও জানেনা এইটা?

- না।উনি নিজেই বলেছিলো।উনি মোট দুইবার মৃত্যুবরণ করবে।আর প্রথম মৃত্যুর সংবাদ যেনো আমরা কর্মচারীরা ছাড়া কেও না জানে।তাই গোপন রেখেছিলাম আমরা।


হাজার রহস্য মাথায় নিয়ে চলে আসে রিয়াজ,রাকিব আর শুভ। বাসায় বসে রিয়াজ ভাবতে লাগলো পিছনের ঘটনাগুলো। গ্রামে হয়েছিলো এক অদ্ভুত ঘটনা। এর উপর রশনী নামক মেয়েটির সাথে দেখা।আবার সব ঠিক হলো। এসেছে ঢাকায়,এখানেও একই রহস্য।সব রহস্য যেনো রিয়াজকে ঘিরেই হচ্ছে। এখানে থাকলে শুভ আর রাকিবের বিপদ হতে পারে।আলী বাবার ওখানে একটা কথা তো স্পষ্ট। সব খুন সেই আত্মারা করছেনা। তবে করছে কে। দ্বিতীয় কোনো দল আছে এখানে? এমনও তো হতে পারে তৃতীয়, চতুর্থ দলও আছে।যতই থাকুক তাদের বের করতে হবে।রিয়াজ এইবার জেদ ধরেই বসেছে। কে বা কার ইশারায় সব ঘটে আসছে,সব জানবে রিয়াজ।তাকে জানতেই হবে। যেকোনো মূল্যে।


রাত ০৩:৩২ মিনিট। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রিয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রাতটা যেনো এই শেষ হতে লাগলো। লাইট অফ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয় রিয়াজ।বিছানা ছেড়ে উঠে যখনি লাইট অফ করবে,তখনি রিয়াজ আন্দাজ করে দরজার বাহিরে কেও আছে। সুইচের উপর আঙ্গুল রেখে আছে।সুইচ অফ না করে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। দরজা ভিতর থেকে লক করা।কিন্তু দরজার নিচ দিয়ে কারো পা দেখা যাচ্ছে। রিয়াজ বুদ্ধি করে সুইচ অফ করে দেয়।পুরো রুমে অন্ধকার। চাঁদের আলো চুঁইচুঁই করছে।চাঁদের আলো জানালা বেধ করে রুমে আসছে।কিন্তু বাহির থেকে পায়ের ছায়া এইবার স্পষ্ট রুমে আসছে। রিয়াজ ছায়ার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগুতে থাকে। ছায়াটা নড়াচড়া করছেনা। একই জায়গায় স্তবক হয়ে আছে। রিয়াজ দরজার কড়ায় হাত দিয়ে ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। বাহিরে যা আছে থাকুক, রিয়াজ হুট করে দরজা খুলে ফেলে। দরজা খুলে বাহিরে তাকিয়ে দেখে কেও নেই। নেই ছায়া,আর নেই কোনো মানুষত্ব অস্তিত্ব। রিয়াজ দৌড়ে দরজার বাহিরে আসে।এসে দেখে এখানেও কেও নেই। হোষ্টেল মাঠের ওপাড়ে একটা বটগাছ আছে। রিয়াজের চোখ আকর্ষণ করে সেই বটগাছ। রিয়াজ ভালো করে বটগাছের দিকে তাকিয়ে দেখে যান্ত্রীয় একটা মেশিন দেখা যাচ্ছে। লাইটের আলোয় যান্ত্রীয় মেশিনটা স্পষ্ট দেখা যায়। দেখতে গোল,কিন্তু অনেক বড়। রিয়াজ বারান্দায় এসে আরো খেয়ালী চোখে তাকায়। আর তখনি সেকেন্ডের মাথায় একটা সবুজ আলো রিয়াজের দিকে ধেয়ে আসতে লাগলো।রিয়াজ নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার আগেই আলোটা রিয়াজের গায়ে লেগে যায়।রিয়াজ উপলব্ধি করে তার দেহ অবশ হচ্ছে। শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। লুড়িয়ে পড়ে রিয়াজ বারান্দায়। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এসেছে। নিশ্বাস যেনো এখনি বন্ধ হয়ে যাবে। রিয়াজ অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। চোখ তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বন্ধ হয়ে আছে। রিয়াজ অনেক কষ্টে বিন্দুধারণ চোখ মেলে।আর ঐটুকু খেয়ালে রিয়াজ দেখে দুইজন যান্ত্রীয় মানব তার দিকে এগিয়ে আসছে।তাদের হাতে দুইটা অদ্ভুত যন্ত্র।পুলিশের হাতে যেমন রাইফেল থাকে,তেমনি কোনো অস্র।তবে তা ভিন্ন ধরণের। এইটুকু দেখে রিয়াজের চোখ আবার বন্ধ হয়ে যায়। আর কিছু মনে থাকেনা তার।


- আহহ কি ব্যাথা,ও মাগো।

- লিসেন মিষ্টার রিয়াজ।আপনি এখন কেমন অনুভব করছেন?

রিয়াজ চমকে উঠে।তার হাত পা বেধে শুইয়ে রেখেছে একটা বেডে। রুমের চারদিক বিভিন্ন ওষুধপাতি। সামনে আছে একজন অদ্ভুত লোক।সবাই চশমা পড়ে চোখে।উনার চশমা নাকের ডগায়।গায়ে সাদা একটা জামা।দেখতে ডক্টরের মতো। রিয়াজ উনাকে বলল,

- কে আপনি? আর আমি কোথায়?

- বিচলিত হবেন না। আগে বলুন আপনি এখন কেমন অনুভব করছেন।ঠিক আছেন আপনি? 

- রাখুন আপনার অনুভব। ব্যাথায় গলা জ্বলে যাচ্ছে। কি খাইয়েছেন আমায়?

- ওহহ,আপনাকে ড্রেপিক্সটন দেওয়া হয়নি।ওয়েট,ওষুধটা খেয়ে নিন।গলা ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে।

- এই ভাই দাঁড়ান। না না,আপনি তো বয়সে আমার দাদুর সমান।ভাই বলছি কেন।দেখুন,এসব পরে করুন,আগে বলুন আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন?

- দয়া করে ক্ষিপ্ত হবেন না মিষ্টার রিয়াজ। একটু পরে আপনাকে সব ক্লিয়ার করা হবে। নিন,এই ড্রেপিক্সটন টা খেয়ে নিন।আগে আপনার সুস্থ হওয়া জরুরী।

- কোরবানির গরুর মতো হাত পা বেধে রাখলে ওষুধ কিভাবে নিবো? 

- ও সরি। দাঁড়ান আমি এখনি খুলে দিচ্ছি।

লোকটি রিয়াজের হাত পা খুলে ফেলে। রিয়াজ তাকিয়ে দেখে ডক্টরের যন্ত্রপাতির বক্সে একটা ধারালো ছুরি দেখে যাচ্ছে।সুযোগ বুঝে রিয়াজ লাফ দিয়ে উঠে ছুরিটা নিজের আয়াত্তে নিয়ে আসে।এরপর ডক্টরের মুখের সামনে ছুরি ধরে বলল,

- আগে বলুন আমাকে এখানে কেনো এনেছেন।উদ্দেশ্য কি আপনার?

ডক্টর মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

- মিস্টার রিয়াজ।এই সামান্য অস্র আপনার হাতে মানায় না।আপনার হাতে থাকবে আরো শক্তিশালী অস্র।এই অস্রের থেকে তো আপনার দাত আরো মজবুত।

- মানে কি?

- ছুরিটা একটু জোরে চাপ দিন তো? দেখুন ছুরির কি হাল হয়।

রিয়াজ ডক্টরের কথায় ছুরিটা মুঠের মাঝে আরো শক্ত করে ধরে।আর অদ্ভুতভাবে ছুরিটা হাতের মধ্যেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।অদ্ভুত ঘটনা। রিয়াজ ছুরিটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে অবাক হয়ে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে রইলো।ডক্টর এইবার আরেকটা ছুরি নিয়ে হুট করে রিয়াজের বুকে ঢুকিয়ে দেয়।রিয়াজ চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে ডক্টরের দিকে। ডক্টর হেসে যাচ্ছে।রিয়াজ আবার তার বুকের দিকে তাকিয়ে দেখে ছুরিটা ভেঙ্গে নিছে পড়ে গেছে।অথচ রিয়াজের বুকে একটুও ক্ষত চিহ্ন হয়নি। নিজের দেহের চামড়া এতো মজবুত কখন হলো রিয়াজ নিজেও বুঝতে পারেনা।ডক্টর বলল,

- দেখলেন? আপনার শরীর কতটা মজবুত? এসব ছুরি চাপাতি আপনার দেহের কাছে কিছু না।

- আপনি আমার শরীরকে কি করেছেন? আমার শরীর এতো শক্ত কিভাবে হয়েছে? 

- ঠান্ডা হোন মিস্টার রিয়াজ।বসুন,আপনাকে সব বলা হবে।

রিয়াজ পাশ থেকে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। ডক্টর বলল,

- আপনার গলা ব্যাথার জন্য এই ড্রেপিক্সটনটা খেয়ে নিন।

- আমার কোনো গলা ব্যাথা নেই।হাতের বাঁধনি খোলার জন্য বাহানা ধরেছিলাম।

- আরেহ,আপনি তো আসতে না আসতেই ট্রেনিং এ জীতে গেলেন।শয়তান মারতে হলে শয়তান হতে হয়। 

- তারমানে কি আপনিও শয়তান? আমি তো আপনার সাথেও শয়তানি করলাম।

- হাহাহা,আপনি ভালো জোক্স বানাতে পারেন। 

- কোন এঙ্গেল থেকে জুকার দেখাচ্ছে আমাকে?

- না,তা কবে বললাম?

- তো আমার কথায় দাত কেলাচ্ছেন কেনো।

- হাহাহা,আপনার সাথে কথা বললেই হাসি পায়। যাইহোক, বাদ দিন। এইবার শান্ত গলায় বলুন আপনার কি কি জানতে ইচ্ছে।

- আগে বলুন আমি কোথায়।

- ডিওএমএম এর ল্যাবে! 

- কি বললেন,ডিওমেম? 

- আরে না,ডিওএমএম।

- হুম,ডিয়াইওমওম।

- বাদ দিন।ধীরে ধীরে হয়ে যাবে।

- এইটা কিসের ডিওমেম? এমন অদ্ভুত নাম কেনো এইটার? 

- এই ল্যাব হচ্ছে অশুভ শক্তির বিনাশ কারির বাসা। তুমি এখন ল্যাবে আছো। এই রাজ্য অনেক বড়। সব ঘুরে দেখাবো পরে।

- মাথায় ঢুকছেনা একটা বিষয়। আমাকে কেনো এখানে এনেছেন।আর আমার দেহ এতো মজবুত হলো কিভাবে?  

- শুধু তুমিই নও।তোমার মতো অনেক এজেন্ট আছে এই ডিওএমএম গ্রুপে।

- ডিওমেম গ্রুপের এজেন্ট হলাম কবে? 

- আপনি নামটিও ঠিকমতো বলতে পারছেন না। আপনাকে আসল রহস্য বলি। এই ডিওএমএম মানুষের উপকারে কাজ করে। অন্যায়ের বিচার করে। আইন আদালত কিছুই মানেনা ডিওএমএম। আমাদের এই গ্রুপ অনেক শক্তিশালী। 

- তারমানে মেহেদি, মেঘা,রশনী, সুমাইয়া আরো কে কে জেনো,তাদের আপনারা মেরেছেন?

- হুম,রাকিব আর শুভও কাল রাতে মৃত্যুবরণ করেছে।ওরা পাপ করেছে,আমরা শাস্তি দিয়েছি।


- ও আচ্ছা? তাহলে আপনাদের ইশারায় হচ্ছিলো সব?

- না,পাপ মানুষ নিজের ইচ্ছায় করে।আর শাস্তি আমরা নিজের ইচ্ছায় দেই। আপনার বন্ধুরা আপনাকে ডেকে আরো বড় ভুল করেছে। আপনাকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছিলো। কিন্তু ওদের জন্য আপনি আমাদের খুব কাছে চলে এসেছিলে।যার জন্য আপনার ট্রেনিং পুরোপুরিভাবে দেওয়া হয়নি।এখন থেকে আপনাকে এখানে ট্রেনিং দেয়া হবে।

- ট্রেনিং দিচ্ছিলেন আমাকে? তারমানে আমাকে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার রহস্যটা এই ডিওমেম করেছে?

- আপনি আবারো ভুল নাম উচ্চারণ কেনো করছেন?

- জিলাপির মতো একটা নাম দিয়েছেন।এইটা মুখ দিয়েও বের হয়না।আর কোনো নাম খুঁজে পাননি?

- হাহাহা,আচ্ছা বাদ দিন।হ্যা,আপনাকে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়াটা আমাদের ইশারায় হয়েছিলো।ট্রেনিং ছিলো।যেখানে আপনি সফল হয়েছেন।

- আর রশনী নামক সেই মেয়েটি?

- সেও আমাদের এজেন্ট। মিথ্যে বলেছিলো আপনাকে।সে এখানেই আছে।তাকে আপনার সাথে পাঠিয়েছিলাম যাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।কিন্তু মিশন শেষে সে নিজেই অবাক হয়ে এসেছে।আপনার দানবীয় রুপ দেখে।

- অর্থাৎ আমি সত্যি সত্যি দানব হয়েছিলাম?

- ল্যাবে আপনার পুরো শরীরের কাজ হয়েছে।আগে আপনি দানব হলে,সে অবস্থায় কি ঘটে না মনে রাখতে পারতেন না।এখন আপনি সব মনে রাখতে পারবেন? আপনার দেহ গ্রিণু ধাতু দ্বারা কাজ করা হয়েছে। যাতে সহজে দেহ ক্ষত না হয়। 

- আপনার নাম কি? 

- ডক্টর এস্টুম্যান।

- একেক নামের চেয়ে একেক নামের কি বাহার।

- হাহাহা। 

- আমি রাজ্য ঘুরে দেখতে চাই।


রিয়াজকে ডক্টর এস্টুম্যান ল্যাবের বাহিরে নিয়ে আসেন। রিয়াজ রুম থেকে বের হয়ে দেখে,একটা দ্বীপের পাড়ে এই রাজ্য। পিছনে ইয়া বড় পাথরের পাহাড়।পাথরের সাথে মিশ্রণ এই রাজ্য।সামনে হচ্ছে সাগর। রিয়াজ চারপাশে দেখতে দেখতে খেয়াল করে সাগরের মাঝে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। তৎক্ষণাৎ রিয়াজ ডক্টর এস্টুম্যানকে বলে।

- দেখুন, সাগরের মাঝে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে।

- আপনার চোখে ধ্রুবুল্যান্স লাগানো হয়েছে।দূরের বস্তু একমাত্র আপনিই দেখতে পারবেন স্পষ্ট। আমাদের সাধারণ চোখে দেখা যাবেনা। দাঁড়ান আমি যন্ত্রটা নিয়ে আসি। দেখি আপনি কাকে নোটিশ করলেন।


ডক্টর ল্যাবে গিয়ে বের হয় ২ মিনিট পর। এরপর হাতে করে একটা যন্ত্র নিয়ে আসে। একটা ক্যামেরা। লাঠির মতো তার আকার। ডক্টর এস্টুম্যান তা চোখের সামনে এনে দেখতে লাগলেন। হুট করে তিনি রিয়াজের হাত ধরে বললেন,

- ও মাই গড । আমাদের ডিওএমএম এর লোকেশন পেয়ে গেছে সে। জলদি চলুন।তাকে আটকাতে হবে। আর আপনাকেও লুকাতে হবে। আপনার ট্রেনিং শেষ হয়নি এখনো। পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত না আপনি।

ডক্টর এস্টুম্যান রিয়াজের হাত ধরে দৌড়াতে লাগলো রুমের দিকে। রিয়াজও উনার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে। দেওয়ালের একটা লাল সুইচে চাপ দিলেন ডক্টর এস্টুম্যান। তখনি দেওয়াল দুই ভাগ হয়ে একটা সুরঙ্গ তৈরি করে। রিয়াজকে নিয়ে ভিতরে নামতে লাগলো ডক্টর এস্টুম্যান। পুরো রাজ্যে একটা রেড সিগন্যাল দিচ্ছে। রাজ্যের বাকিরা প্রস্তুতি হচ্ছে যুদ্ধের জন্য। রিয়াজকে নিয়ে ডক্টর এস্টুম্যান রাজ্যের নিছে একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটায় অনেক কম্পিউটার। বাহিরের সিসিটিভি ফুটেজের সকল ইনফরমেশন এখানে জমা হয়। ডক্টর এস্টুম্যান সব কম্পিউটার চালু দিয়ে চেয়ারে বসে।কম্পিউটারে রিয়াজ দেখতে পায়,রাজ্য থেকে একটা যান্ত্রীয় রোবট, অর্থাৎ তাকে যারা হোস্টেল থেকে এনেছিলো।তারা উড়ে উড়ে যাচ্ছে সাগরের দিকে।কিছুক্ষন পর পর সাগরে বিস্ফারণ হয়। অর্থাৎ ডিওএমএম এর রোবট গুলো পেতে উঠেনা অদ্ভুত সেই মানবের সাথে। কিছুক্ষন পর সাগরে থাকা সেই মানব দ্বীপে চলে আসে। গায়ে কালো একটা সুট।বুকের মধ্যে যান্ত্রীয় একটা মেশিন।যার দ্বারা সে বুলেট নিক্ষেপ করে। রাজ্যের সামনে দ্বীপের উপর লড়াই শুরু হয়। ডিওএমএম এর অনেক সদস্য আহত আর নিহত হচ্ছে। রিয়াজ ডক্টর এস্টুম্যান এর দিকে তাকিয়ে আছে।উনাকে বেশ চিন্তিত দেখা যাচ্ছে। রিয়াজ আবার কম্পিউটারে তাকায়।দেখতে পায় রশনী এগিয়ে যাচ্ছে শত্রুর দিকে। রশনীর গায়ে অদ্ভুত পোষাক।লাল রঙ্গের টাইট একটা জামা। দেখতে তাকেও যান্ত্রীয় মানব মনে হয়। শত্রুর কাছাকাছি গিয়ে রশনী একটা তলোয়ার বের করে। সোজা গিয়ে শত্রুর বুকে তলোয়ারের চিহ্ন বসিয়ে দেয়। যান্ত্রীয় মানবটা তলোয়ার থাকা অবস্থায় বুক থেকে আগুনের একটা গোলা ছুড়ে দেয় রশনীর দিকে। ফায়ার বুলেটের আঘাতে রশনী ছিটিকে পড়ে দ্বীপের পাশে। ডক্টর এস্টুম্যান কপালে হাত দিয়ে উহ করে শব্দ করে। এরপর রিয়াজকে কিছু বলার জন্য তাকিয়ে দেখে,রিয়াজ রুমে নেই।


ডক্টরর এস্টুম্যান ভয় পেয়ে যায়।রিয়াজ গেলো কোথায়।উনিও রুম ছেড়ে ছুটে আসে উপরে। রাজ্যের সামনে আসতেই যান্ত্রীয় মানবটা দেখে ফেলে ডক্টর এস্টুম্যানকে। ডক্টর এস্টুম্যান শত্রুর নাগালে চলে এসেছে।যান্ত্রীয় মানবটার বুক লাল হয়ে আসছে। সম্ভবত ফায়ার বুলেট ছুড়বে এখন ডক্টর এস্টুম্যান এর দিকে। ডক্টরর এস্টুম্যান ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শত্রু হুট করেই ফায়ার বুলেট ছুড়ে মারে ডক্টর এস্টুম্যান এর দিকে। ফায়ার বুলেট ঝড়ের গতিতে ছুটে আসছে এস্টুম্যানের বরাবর। এস্টুম্যান চোখ বন্ধ করে ফেলে।মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নেয়। বুলেট এস্টুম্যান এর কাছে আসতেই গায়েব হয়ে গেলো।এস্টুম্যান চোখ মেলে দেখে ফায়ার বুলেট নেই। শত্রু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এস্টুম্যান নিছে তাকিয়ে দেখে,রিয়াজ পড়ে আছে। অর্থাৎ ফায়ার বুলেট রিয়াজ তার বুকে নিয়ে নিয়েছে। ডক্টর এস্টুম্যান আর শত্রু রিয়াজের দিকে তাকিতে আছে। বুলেটের তাপে রিয়াজের শার্ট ছিড়ে যায়। শুয়া থেকে রিয়াজ আবার এক লাফ মেরে দাঁড়ায়। ডক্টর এস্টুম্যান আর রশনী রিয়াজের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। রিয়াজের হাতের পেশিকোষ ভাজ হয়ে গেছে। দেহের পরিবর্তন এসেছে অনেক। দেখতে কোনো শক্তিশালী ফাইটারের মতো দেখাচ্ছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে রিয়াজের। মুখ খুলে রিয়াজ বলল,

- আমি বেচে থাকতে ডিওএমএম এর এক ফোটা ক্ষতি হতে দিবোনা। 

ডক্টর এস্টুম্যান চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল,

- সাব্বাস,নামটা ঠিক উচ্চারণ করেছেন।

- আগে বলুন আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?

- একেবারে হিরো। চলুন লেগে পড়ুন যুদ্ধে।


রিয়াজ এক ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে শত্রুর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কাছাকাছি যেতেই শত্রুটা ঘনঘন ফায়ার বুলেট ছুড়তে লাগলো রিয়াজের দিকে।রিয়াজ ফায়ার বুলেটের আঘাতে উড়ে এসে দ্বীপে পড়ে। রশনী মাথায় হাত দিয়ে বলল, পুরান পাগলের ভাত নেই, নতুন পাগলের আমদানি।

রিয়াজ শুয়া অবস্থায় রশনীর দিকে তাকিয়ে বলল," খেলা এখনো বাকি"।

রিয়াজ আবার শত্রুর দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। চোখটা বন্ধ করে রিয়াজ ভাবতে লাগলো। যান্ত্রীয় মানবটাও রিয়াজের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রিয়াজের দেহের ঘটন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো।শরীর থেকে লোম গজাচ্ছে। আকারে বড় হতে লাগলো সে। দানব রুপে পরিণত হতে লাগলো রিয়াজ। হুট করে চোখ মেলে রিয়াজ এক ভয়ংকর গর্জন আর ভয়ংকর চাহনি নিয়ে ছুটতে লাগলো শত্রুর দিকে। শত্রুটা রিয়াজের এমন দানবীয় দেহ দেখে নিজেই ভয় পেয়ে যায়।রিয়াজের ভয়ংকর চাহনি যেনো শত্রুটাকে ঘায়েল করে ফেলছে।শত্রুটা ফায়ার বুলেট ছুড়ে মারে রিয়াজের দিকে। রিয়াজ দানবীয় হাত দিয়ে বুলেটে উল্টো ঘুষি মারতে লাগলো। বুলেট ছিন্নভিন্ন হয়ে আশেপাশে ছিটকে পড়ছে। 

এক লাফ দিয়ে রিয়াজ যান্ত্রীয় মানবটার মুখে ঘুষি মারে। উড়ে গিয়ে শত্রু দ্বীপের কিনারায় ছিটকে পড়ে।এরপর রিয়াজ আবার এক লাফে তার কাছে চলে যায়। শত্রুটা ভয়ের চোখে ভয়ংকর চাহনির দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ শত্রুর বুকে এক ঘুষি দিয়ে যন্ত্রটা ভেঙ্গে ফেলে। নষ্ট হয়ে যায় মেশিন। শত্রু ধীরে ধীরে স্থির হতে লাগলো। রিয়াজ এক হাতে শত্রুর মাথা ধরে,অন্য হাতে শত্রুর পা ধরে এক টানে দুই টকরো করে ফেলে। শেষ হয়ে যায় শত্রু। রিয়াজ উপরের দিকে তাকিয়ে এক ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে বসে পড়ে। আবার দেহ ধীরে ধীরে মানুষের রুপে ফিরে আসতে লাগলো। কিছুক্ষন পর নিজের রুপে এসে হাটু গেড়ে বসে পড়ে রিয়াজ।


- আহ কি ব্যাথা, মাগো।

- কেমন অনুভব করছেন মিস্টার রিয়াজ?

- ক্লান্ত লাগছে।

- ট্রেনিং এর আগে যুদ্ধে নেমেছেন। ভালোই যুদ্ধ করেছেন ট্রেনিং ছাড়া।

- রশনী কোথায়?

- অন্য ল্যাবে চিকিৎসা চলছে। আমাদের ৩৬ জন এজেন্ট আহত আর ৭ জন নিহত হয়েছে।সবাই আপনার তারিপ করছে।

- তাদের সাথে দেখা করতে চাই আমি।

- এখন আপনার বাড়ি ফেরার সময়।আপনার মা খুব চিন্তিত আছে।তিনি আপনার অপেক্ষায় আছেন।

- সত্যিই তো? মায়ের সাথে দেখা করা জরুরী আমার। 

- আমাদের আকাশযান যন্ত্র দিয়ে আপনাকে দিয়ে আসবো একটু পর।আগে বিশ্রাম নিন।

- আমি ঠিক আছি। চলুন রওনা দেওয়া যাক।

- আপনার মর্জি।


ল্যাব থেকে বের হয়ে ডক্টর এস্টুম্যান রিয়াজকে ছাদে নিয়ে যায়। এরপর উনার পকেট থেকে একটা খেলবা প্লেন বের করে। রিয়াজ বলল,

- বাচ্চাদের মতো খেলতে ভালোবাসেন নাকি।

ডক্টর এস্টুম্যান মুচকি হেসে প্লেনটার উপরে একটা সুইচে চাপ দেয়।সাথে সাথে প্লেনটা শব্দ করতে লাগলো। এস্টুম্যান প্লেনটা ছুড়ে মারলো সামনে।আর সাথে সাথে প্লেনটা গোল একটা প্লেনের মতো হয়ে যায়। ডক্টর এস্টুম্যান বলল,

- চলুন,যাত্রা শুরু করা যাক।

- আরো কতো কি যে দেখবো। 


প্লেনে উঠার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ডক্টর এস্টুম্যান বলল,

- নামুন।

- কেনো।যাবেন না?

- চলে এসেছি।

- কোথায়।

- আপনার বাসার ছাদে।

- এ! এতো তাড়াতাড়ি?

- ডিওএমএম আপনাকে আরো অনেক কিছু দেখাবে।আর হ্যা,আপনি প্রস্তুতি নিন পরবর্তী মিশনের জন্য।

- কিসের মিশন? 

- আমাদের ডিওএমএম এর হাত অনেক লম্বা। কিছুক্ষন আগে খবর এসেছে মালদ্বীপ থেকে আমাদের ৬ জন এজেন্ট নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারা অনেক অদ্ভুত যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারে।আর আমি জানি কে নিয়েছে তাদের। ডিওএমএম এর একজন শত্রু আছে। যে গত ৩২ বছর ধরে আমাদের শেষ করতে চায়। আমরা অশুভ রহস্য( evil mystery) বিনাশ করি। আর তারা শুভ শক্তিকে বিনাশ করতে চায়। তাদের মেইন লিডারকে আজ অব্দি কেও দেখেনি। সে কোথায় থাকে,তাও কেও জানেনা। তার নাম ব্লাক ডেভিল। আজকে যার সাথে যুদ্ধ করেছেন,সে তার একজন পহরি।এইবার বুঝুন সে কতটা শক্তিশালী। ৫ দিন পর আপনাকে আবার নিয়ে যাবো আমরা। ডিওএমএম এর মেইন সদস্যরা মিলে মিটিং বসাবে সেদিন।তখন আপনাকে সকলের সাথে পরিচয় করানো হবে। আর আমাদের সেই ৬ জন নিখোঁজ হওয়া এজেন্টকে উদ্ধার করতে যেতে হবে আপনাকে।

- আমি পারবো?

- আপনার বাবা কে ছিলো জানেন?

- জন্মের পর আমি কোনোদিন বাবাকে দেখিনি।

- উনিও আমাদের ডিওএমএম এর সদস্য ছিলো।

- মানে?

- পরের বার সব জেনে যাবেন।নামুন,অনেক্ষন কথা বলে ফেলেছি।


রিয়াজ প্লেন থেকে নামতেই প্লেনটি চোখের পলকে হারিয়ে যায়। রিয়াজ রুমে এসে দেখে তার আম্মু ঘুমাচ্ছে। মায়ের পাশে গিয়ে রিয়াজ উনার কপালে একটা চুম্বন একে দেয়। এরপর নিজের রুমে চলে আসে।


৫দিন পর....

ছাদে রিয়াজ সিগারেট জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । হটাৎ চারপাশে বাতাস বইতে লাগলো। রিয়াজ বুঝতে পেরেছে ডক্টর এস্টুম্যান চলে এসেছে।কিছুক্ষন বাদেই ছাদের কিনারা থেকে এস্টুম্যান এর আওয়াজ।রিয়াজ সিগারেট ফেলে এস্টুম্যান এর দিকে এগিয়ে যায়।এরপর সোজা প্লেনে উঠে পড়ে। বের করতে হবে ব্লাক ডেভিলকে।উদ্ধার করতে হবে ৬জন এজেন্টকে।নিজের এই শক্তি আর তার বাবার ব্যাপারেও জানতে হবে। এই ৫ দিনে মেঘা রিয়াজকে অনেক কিছু বলেছে। ডক্টর এস্টুম্যান সুইচ চাপ দিতেই একটা যান্ত্রীয় মেয়ের ভয়েজ শুনা গেলো,


Now it's time to fly, get ready 3...2...1... go.....


......সমাপ্ত......


রহস্য জনক সব গল্প পড়ুন আমাদের ওয়েব সাইটে।